নানাভাইয়ের লাগানো ২টি গাছ ও চারুর প্রশ্ন
১০ বছরের চারু তার নানা ভাইকে বললো, “নানা ভাই আমি অদুর ভবিষ্যতে একজন সাকসেসফুল
লেডী হয়ে যাবো দেখে নিও। আর আমি এ নিয়ে খুবই গর্বিত, হ্যাঁ! আর নানা ভাই, আমাকে অরো
কিছু টিপস দাও তো যাতে করে আমি আমার জায়গায় পৌছতে পারি।
নানা ভাই মাথা নাড়লো। কিন্তু মুখে কিছুই বল্লো না। বরং সে চারুর হাত ধরে
পাশের
প্লান্ট নার্সারীতে চলে গেল।
তারা
২জনেই সেখান থেকে ২টি চারা কিনলো। তারা বাড়ী ফিরে এলো আর ২টি চারার ১টি রোপন করলো বাড়ীর
পেছনে খোলা জায়গায় আর আরেকটি রোপন করলো বাড়ীর ভেতরের বারন্দাতে একটি টবের মধ্যে।
এবার নানাভা্ই চারুকে বল্লো আচ্ছা নানাভাই বলতো, “অদূর ভবিষ্যতে কোন চারাটি
বেশী সাকসেসফুল হবে?”
চারু মাথা চুলকিয়ে বল্লো, “নানাভা্ই, ভেতরেরটাই বেশী সাকসেসফুল হবে।”
নানাভা্ই বল্লো, কেন?
চারু বল্লো ভেতরেরটাতো কোন ঝামমেলায় পড়ছেনা। না ঝড়, না ঝঞ্ঝা, না পোকামাকড়ের
উপদ্রব। তাই সেটা সাকসেসফুল হবে। ঝুঁকি নেই ওর।
নানাভাই এবার তার কাঁধ ঝাঁকিয়ে নিয়ে বল্লো, “আচ্ছা সে দেখা যাবে।”
নানাভাই গাছ দুটির খুবই যত্ন করলো বছর ধরে। গাছ দুটি বাড়ছে আর চারুও বড় হয়েছে।
সে এখন টিনএজার। এবার তারা ২ জনে গাছ দুটি দেখতে এলো।
চারু বল্লো, নানাভাই, “তুমি কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর এখোনো দাওনি। আর আমিও
ভুলিনি।”
এবার নানাভাই চারুকে বাড়ীর ভেতরের গাছটি দেখালো। আর তাকে বাইরে নিয়ে বড় হয়ে
ওঠা গাছটও দেখালো। বাইরের গাছটি বেশী বেড়েছে। ডালপালা বড় বড় হয়ে একটা মহীরুহে পরিণত
হয়েছে।
নানাভাই এবার মুখ খুললো। চারুকে বল্লো দেখোতো কোন গাছটি বড়? চারু বল্লো, “বাইরেরটা।” চারু আবারো বল্লো, “ঠিক বুঝলাম না। বাইরেরটা এতসব চ্যালেঞ্জ নিয়েও কিভাবে এত্ত বেড়ে উঠলো।” চারুর বিষ্ময়!
নানাভাই এবার হাসলেন, বল্লো, আসলে চ্যালেঞ্জটাই বেশী মূল্যবান। আর গাছটা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই বাতাসে তার ডালপালা ছড়াতে পেরেছে আর মূলগুলোও মাটির গভীরে দিতে পেরেছে।
নানাভাই এবার মুখ খুললো। চারুকে বল্লো দেখোতো কোন গাছটি বড়? চারু বল্লো, “বাইরেরটা।” চারু আবারো বল্লো, “ঠিক বুঝলাম না। বাইরেরটা এতসব চ্যালেঞ্জ নিয়েও কিভাবে এত্ত বেড়ে উঠলো।” চারুর বিষ্ময়!
নানাভাই এবার হাসলেন, বল্লো, আসলে চ্যালেঞ্জটাই বেশী মূল্যবান। আর গাছটা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই বাতাসে তার ডালপালা ছড়াতে পেরেছে আর মূলগুলোও মাটির গভীরে দিতে পেরেছে।
আমার ছোট্ট নানাভাই,
তুমি এটা মনে রেখ। তোমাকে বড় হতে হলে অবশ্যই নিরাপদ থাকলে চলবে না ওই বাড়ীর ভেতরের
গাছটার মত। তোমাকে বাড়ীর বাইরে এসে সব চ্যালেঞ্জ নিতে হবেই্। তা না হলে তুমি বেড়ে উঠতে
পারবে না।
বাড়ীর ভেতরের গাছটার
উচ্চতা ছাদ পর্যন্ত। আর বাইরের গাছটার উচ্চতা আকাশ পর্যন্ত। তাহলে কি বাইরের গাছটার
অবস্থা ভাল নয়, নানাভাই?
চারু এবার বড় করে নিঃশ্বাস
নিলো। নানাভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বল্লো নানাভাই আসলে তুমিই ঠিক। ভাবলো আমার নানাভাই খুবই
জ্ঞান রাখে।
এ্টি আমাদের সবার জীবনেই
সত্যি।
আমরা যদি সেইফ অপশনে
থাকি, নিরপদ দূরত্বটাই বেছে নিই, সেটা আমাদের জন্য খুবই বিড়ম্বনা নিয়ে আসবে। কারণ সেইফ
জোনে থাকা মানেই সব সময়ই বিপদের ঝুঁকি। এখানে থাকলে আমাদের বেড়ে ওঠার সম্ভাবনা একেবারেই
নেই। আমরা কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করলাম না, আমরা কোন ঝুঁকি্ নিলাম না তা হলে আমরা
কি নিলাম আর কিই বা পেলাম।
চ্যালেঞ্জ নেয়া মানেই
নিজেকে বাড়িয়ে তোলা। ঝুঁকি নেয়া মানেই ঝুঁকে থেকে মুক্ত থাকা। চ্যালেঞ্জ না নিয়ে কোন
কিছুর সমাধান চাওয়াটা একেবারেই বোকামী।
এ দুনিয়ার তাবত লীড়াররা
সব সময় চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। তারা নিরাপদ কোন পথ বেছে নেন নি। তাই তারা মানুষের মনে ঠাঁই
নিয়েছেন। তুমি ব্যবসাতে যাও সেখানে ঝুঁকি আছে, পলিটিক্সে যাও সেখানে ঝুঁকি আছে, সমুদ্রে
যাও সেখানে ঝুঁকি আছে, পাহাড়ে উঠতে যাও, সেখানে ঝুঁকি আছে। তাহলে ঝুঁকি নেই কোথায়?
আর
এ সকল বাধা পেরিয়ে গেলেই আমরা অবাধে চলতে ফিরতে পারবো, সব জায়গাতেই আমাদের চলা খুবই
সহজ হবে।
এবার নানাভাই চারুকে তার জানা একটি কবিতা শোনালো আর কবিতাটির মানেও
বলে দিল-
“কি কারণ, দীন! তব মলিন বদন?
যতন করহ লাভ হইবে রতন ৷
কেন পান্থ! ক্ষান্ত হও হেরে দীর্ঘ পথ?
উদ্যম বিহনে কার পূরে মনোরথ?
কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে,
দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে?”
যতন করহ লাভ হইবে রতন ৷
কেন পান্থ! ক্ষান্ত হও হেরে দীর্ঘ পথ?
উদ্যম বিহনে কার পূরে মনোরথ?
কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে,
দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে?”
নানাভাই আরো বলে দিলো চারুকে-
NO PAIN NO GAIN-কষ্ট ছাড়া প্রাপ্তি নেই
TO TAKE NO RISK IS TO TAKE HIGHEST RISK-রিস্ক না নিলে সবচেয়ে
বেশী রিস্কে থাকতে হবে
চারু খুবই খুশী হলো নানাভাইয়ের কাছ থেকে তার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে।