Tuesday, December 25, 2018

নানাভাইয়ের লাগানো ২টি গাছ ও চারুর প্রশ্ন


নানাভাইয়ের লাগানো ২টি গাছ ও চারুর প্রশ্ন
১০ বছরের চারু তার নানা ভাইকে বললো, “নানা ভাই আমি অদুর ভবিষ্যতে একজন সাকসেসফুল লেডী হয়ে যাবো দেখে নিও। আর আমি এ নিয়ে খুবই গর্বিত, হ্যাঁ! আর নানা ভাই, আমাকে অরো কিছু টিপস দাও তো যাতে করে আমি আমার জায়গায় পৌছতে পারি।
নানা ভাই মাথা নাড়লো। কিন্তু মুখে কিছুই বল্লো না। বরং সে চারুর হাত ধরে
পাশের প্লান্ট নার্সারীতে চলে গেল।

তারা ২জনেই সেখান থেকে ২টি চারা কিনলো। তারা বাড়ী ফিরে এলো আর ২টি চারার ১টি রোপন করলো বাড়ীর পেছনে খোলা জায়গায় আর আরেকটি রোপন করলো বাড়ীর ভেতরের বারন্দাতে একটি টবের মধ্যে।

এবার নানাভা্ই চারুকে বল্লো আচ্ছা নানাভাই বলতো, “অদূর ভবিষ্যতে কোন চারাটি বেশী সাকসেসফুল হবে?”
চারু মাথা চুলকিয়ে বল্লো, “নানাভা্ই, ভেতরেরটাই বেশী সাকসেসফুল হবে।”  
নানাভা্ই বল্লো, কেন?
চারু বল্লো ভেতরেরটাতো কোন ঝামমেলায় পড়ছেনা। না ঝড়, না ঝঞ্ঝা, না পোকামাকড়ের উপদ্রব। তাই সেটা সাকসেসফুল হবে। ঝুঁকি নেই ওর।  

নানাভাই এবার তার কাঁধ ঝাঁকিয়ে নিয়ে বল্লো, “আচ্ছা সে দেখা যাবে।”
নানাভাই গাছ দুটির খুবই যত্ন করলো বছর ধরে। গাছ দুটি বাড়ছে আর চারুও বড় হয়েছে। সে এখন টিনএজার। এবার তারা ২ জনে গাছ দুটি দেখতে এলো।

চারু বল্লো, নানাভাই, “তুমি কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর এখোনো দাওনি। আর আমিও ভুলিনি।”  
এবার নানাভাই চারুকে বাড়ীর ভেতরের গাছটি দেখালো। আর তাকে বাইরে নিয়ে বড় হয়ে ওঠা গাছটও দেখালো। বাইরের গাছটি বেশী বেড়েছে। ডালপালা বড় বড় হয়ে একটা মহীরুহে পরিণত হয়েছে।  

নানাভাই এবার মুখ খুললো। চারুকে বল্লো দেখোতো কোন গাছটি বড়? চারু বল্লো, “বাইরেরটা।” চারু আবারো বল্লো, “ঠিক বুঝলাম না। বাইরেরটা এতসব চ্যালেঞ্জ নিয়েও কিভাবে এত্ত বেড়ে উঠলো।” চারুর বিষ্ময়!

নানাভাই এবার হাসলেন, বল্লো, আসলে চ্যালেঞ্জটাই বেশী মূল্যবান। আর গাছটা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই বাতাসে তার ডালপালা ছড়াতে পেরেছে আর মূলগুলোও মাটির গভীরে দিতে পেরেছে।
আমার ছোট্ট নানাভাই, তুমি এটা মনে রেখ। তোমাকে বড় হতে হলে অবশ্যই নিরাপদ থাকলে চলবে না ওই বাড়ীর ভেতরের গাছটার মত। তোমাকে বাড়ীর বাইরে এসে সব চ্যালেঞ্জ নিতে হবেই্। তা না হলে তুমি বেড়ে উঠতে পারবে না।
বাড়ীর ভেতরের গাছটার উচ্চতা ছাদ পর্যন্ত। আর বাইরের গাছটার উচ্চতা আকাশ পর্যন্ত। তাহলে কি বাইরের গাছটার অবস্থা ভাল নয়, নানাভাই?   
চারু এবার বড় করে নিঃশ্বাস নিলো। নানাভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বল্লো নানাভাই আসলে তুমিই ঠিক। ভাবলো আমার নানাভাই খুবই জ্ঞান রাখে।
এ্টি আমাদের সবার জীবনেই সত্যি।
আমরা যদি সেইফ অপশনে থাকি, নিরপদ দূরত্বটাই বেছে নিই, সেটা আমাদের জন্য খুবই বিড়ম্বনা নিয়ে আসবে। কারণ সেইফ জোনে থাকা মানেই সব সময়ই বিপদের ঝুঁকি। এখানে থাকলে আমাদের বেড়ে ওঠার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। আমরা কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করলাম না, আমরা কোন ঝুঁকি্ নিলাম না তা হলে আমরা কি নিলাম আর কিই বা পেলাম।
চ্যালেঞ্জ নেয়া মানেই নিজেকে বাড়িয়ে তোলা। ঝুঁকি নেয়া মানেই ঝুঁকে থেকে মুক্ত থাকা। চ্যালেঞ্জ না নিয়ে কোন কিছুর সমাধান চাওয়াটা একেবারেই বোকামী।
এ দুনিয়ার তাবত লীড়াররা সব সময় চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। তারা নিরাপদ কোন পথ বেছে নেন নি। তাই তারা মানুষের মনে ঠাঁই নিয়েছেন। তুমি ব্যবসাতে যাও সেখানে ঝুঁকি আছে, পলিটিক্সে যাও সেখানে ঝুঁকি আছে, সমুদ্রে যাও সেখানে ঝুঁকি আছে, পাহাড়ে উঠতে যাও, সেখানে ঝুঁকি আছে। তাহলে ঝুঁকি নেই কোথায়?
আর এ সকল বাধা পেরিয়ে গেলেই আমরা অবাধে চলতে ফিরতে পারবো, সব জায়গাতেই আমাদের চলা খুবই সহজ হবে।
এবার নানাভাই চারুকে তার জানা একটি কবিতা শোনালো আর কবিতাটির মানেও বলে দিল-

“কি কারণ, দীন! তব মলিন বদন?
যতন করহ লাভ হইবে রতন ৷
কেন পান্থ! ক্ষান্ত হও হেরে দীর্ঘ পথ?
উদ্যম বিহনে কার পূরে মনোরথ?
কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে,
দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে?

নানাভাই আরো বলে দিলো চারুকে-

NO PAIN NO GAIN-কষ্ট ছাড়া প্রাপ্তি নেই
TO TAKE NO RISK IS TO TAKE HIGHEST RISK-রিস্ক না নিলে সবচেয়ে বেশী রিস্কে থাকতে হবে

চারু খুবই খুশী হলো নানাভাইয়ের কাছ থেকে তার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে।

Monday, December 17, 2018

স্মৃতিশক্তি বাড়াতে: ইসলামী কায়দা কানুন:


স্মৃতিশক্তি বাড়াতে: ইসলামী কায়দা কানুন:
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ৯টি কাজ করতে বলেছেন। সেগুলো হলো-
১. ইখলাস বা আন্তরিকতাঃ যে কোনো কাজে সফলতা অর্জনের ভিত্তি হচ্ছে ইখলাস বা আন্তরিকতা। আর ইখলাসের মূল উপাদান হচ্ছে বিশুদ্ধ নিয়ত। নিয়তের বিশুদ্ধতার গুরুত্ব সম্পর্কে উস্তাদ খুররাম মুরাদ বলেন, “উদ্দেশ্য বা নিয়ত হল আমাদের আত্মার মত অথবা বীজের ভিতরে থাকা প্রাণশক্তির মত। বেশীরভাগ বীজই দেখতে মোটামুটি একইরকম, কিন্তু লাগানোর পর বীজগুলো যখন চারাগাছ হয়ে বেড়ে উঠে আর ফল দেওয়া শুরু করে তখন আসল পার্থক্যটা পরিস্কার হয়ে যায় আমাদের কাছে।
২. দু’আ ও যিকর করাঃ আমাদের উচিত সর্বদা আল্লাহর কাছে দু’আ করা যাতে তিনি আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে দেন এবং কল্যাণকর জ্ঞান দান করেন। আমরা নিন্মোক্ত দু’আটি পাঠ করতে পারি, “হে আমার পালনকর্তা, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।” [সূরা ত্বা-হাঃ ১১৪]
তাছাড়া যিকর বা আল্লাহর স্মরণও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “…যখন ভুলে যান, তখন আপনার পালনকর্তাকে স্মরণ করুন…” [সূরা আল-কাহ্‌ফঃ ২৪] তাই আমাদের উচিত যিকর, তাসবীহ (সুবহান আল্লাহ), তাহমীদ (আলহামদুলিল্লাহ), তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ও তাকবীর (আল্লাহু আকবার) – এর মাধ্যমে প্রতিনিয়ত আল্লাহকে স্মরণ করা।
৩. পাপ থেকে দূরে থাকাঃ প্রতিনিয়ত পাপ করে যাওয়ার একটি প্রভাব হচ্ছে দুর্বল স্মৃতিশক্তি। পাপের অন্ধকার ও জ্ঞানের আলো কখনো একসাথে থাকতে পারে না। ইমাম আশ-শাফি’ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “আমি (আমার শাইখ) ওয়াকীকে আমার খারাপ স্মৃতিশক্তির ব্যাপারে অভিযোগ করেছিলাম এবং তিনি শিখিয়েছিলেন আমি যেন পাপকাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখি। তিনি বলেন, আল্লাহর জ্ঞান হলো একটি আলো এবং আল্লাহর আলো কোন পাপচারীকে দান করা হয় না।”
যখন কোনো মানুষ পাপ করে এটা তাকে উদ্বেগ ও দুঃখের দিকে ধাবিত করে। সে তার কৃতকর্মের ব্যাপারে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে তার অনুভূতি ভোঁতা হয়ে যায় এবং জ্ঞান অর্জনের মতো কল্যাণকর ‘আমল থেকে সে দূরে সরে পড়ে। তাই আমাদের উচিত পাপ থেকে দূরে থাকার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা।
৪. বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা করাঃ আমাদের সকলের মুখস্থ করার পদ্ধতি এক নয়। কারো শুয়ে পড়লে তাড়াতাড়ি মুখস্থ হয়, কারো আবার হেঁটে হেঁটে পড়লে তাড়াতাড়ি মুখস্থ হয়। কেউ নীরবে পড়তে ভালোবাসে, কেউবা আবার আওয়াজ করে পড়ে। কারো ক্ষেত্রে ভোরে তাড়াতাড়ি মুখস্থ হয়, কেউবা আবার গভীর রাতে ভালো মুখস্থ করতে পারে। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিজ নিজ উপযুক্ত সময় ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ঠিক করে তার যথাযথ ব্যবহার করা।
৫. মুখস্থকৃত বিষয়ের উপর ‘আমল করাঃ আমরা সকলেই এ ব্যাপারে একমত যে, কোনো একটি বিষয় যতো বেশিবার পড়া হয় তা আমাদের মস্তিষ্কে ততো দৃঢ়ভাবে জমা হয়। কিন্তু আমাদের এই ব্যস্ত জীবনে অতো বেশি পড়ার সময় হয়তো অনেকেরই নেই। তবে চাইলেই কিন্তু আমরা এক ঢিলে দু’পাখি মারতে পারি। আমরা আমাদের মুখস্থকৃত সূরা কিংবা সূরার অংশ বিশেষ সুন্নাহ ও নফল সালাতে তিলাওয়াত করতে পারি এবং দু’আসমূহ পাঠ করতে পারি সালাতের পর কিংবা অন্য যেকোনো সময়। এতে একদিকে ‘আমল করা হবে আর অন্যদিকে হবে মুখস্থকৃত বিষয়টির ঝালাইয়ের কাজ।
৬. মস্তিষ্কের জন্য উপকারী খাদ্য গ্রহণঃ পরিমিত ও সুষম খাদ্য গ্রহণ আমাদের মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্যের জন্য একান্ত আবশ্যক। অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ আমাদের ঘুম বাড়িয়ে দেয়, যা আমাদের অলস করে তোলে। ফলে আমরা জ্ঞানার্জন থেকে বিমুখ হয়ে পড়ি। তাছাড়া কিছু কিছু খাবার আছে যেগুলো আমাদের মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারী। সম্প্রতি ফ্রান্সের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যয়তুনের তেল চাক্ষুস স্মৃতি (visual memory) ও বাচনিক সাবলীলতা (verbal fluency) বৃদ্ধি করে। আর যেসব খাদ্যে অধিক পরিমাণে Omega-3 ফ্যাট রয়েছে সেসব খাদ্য স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্কের কার্যকলাপের জন্য খুবই উপকারী। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য অনেক ‘আলিম কিছু নির্দিষ্ট খাদ্য গ্রহণের কথা বলেছেন। ইমাম আয-যুহরি বলেন, “তোমাদের মধু পান করা উচিত কারণ এটি স্মৃতির জন্য উপকারী।”
মধুতে রয়েছে মুক্ত চিনিকোষ যা আমাদের মস্তিষ্কের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া মধু খুবই দ্রুত সময়ের মধ্যেই রক্তে মিশে গিয়ে কাজ শুরু করে দেয়। ইমাম আয-যুহরি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি হাদীস মুখস্থ করতে চায় তার উচিত কিসমিস খাওয়া।” সবুজ লম্বা কুমড়া স্মৃতি শক্তি বাড়ায়্ এটা রাসুল(সা.) পছন্দ করতেন।
৭. পরিমিত পরিমাণে বিশ্রাম নেয়াঃ আমরা যখন ঘুমাই তখন আমাদের মস্তিষ্ক অনেকটা ব্যস্ত অফিসের মতো কাজ করে। এটি তখন সারাদিনের সংগৃহীত তথ্যসমূহ প্রক্রিয়াজাত করে। তাছাড়া ঘুম মস্তিষ্ক কোষের পুণর্গঠন ও ক্লান্তি দূর করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৮. জীবনের অপ্রয়োজনীয় ব্যাপারসমূহ ত্যাগ করাঃ বর্তমানে আমাদের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া ও জ্ঞান অর্জনে অনীহার একটি অন্যতম কারণ হলো আমরা নিজেদেরকে বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় কাজে জড়িয়ে রাখি।  তাই আমাদের উচিত এগুলো থেকে যতোটা সম্ভব দূরে থাকা।
৯. হাল না ছাড়াঃ যে কোনো কাজে সফলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো হাল না ছাড়া। যে কোনো কিছু মুখস্থ করার ক্ষেত্রে শুরুটা কিছুটা কষ্টসাধ্য হয়। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আমাদের মস্তিষ্ক সবকিছুর সাথে মানিয়ে নেয়।