যে ছবি আঁকা যায়না
হালকা গড়ন, চওড়া কাঁধ, প্রশস্ত বক্ষ, সবল মেরুদন্ড ও সুদৃঢ় পেশী, স্বাস্থ্যবান, শক্তিশালী, সুঠাম ও সুন্দর দেহ। মাঝারি উচ্চতা, ঈষত
কোঁকড়ানো ঘন কালো চুল গুচ্ছাকারে প্রায় কাঁধ পর্যন্ত ছুঁয়ে থাকতো। পরিণত বয়সেও মাত্র গোটা বিশেক পাকা চুল দেখা গেছে। মুখমন্ডল ছিল ডিম্বাকার। প্রশস্ত ও উঁচু কপালের নীচে সুন্দর, সুদীর্ঘ বাঁকানো ভ্রুযুগল। গভীর কালো চোখ দুটো টানা দীপ্তিময়। নাক বড় আকারের ঈগল পাখীর ঠোঁটের মত। তাঁর বাঁকানো দাঁত ছিল সুগঠিত আর ঝকঝকে সাদা। মুখ ভর্তি পৌরুষদীপ্ত শ্মশ্রু। গায়ের ত্বক ছিল স্বচ্ছ ও কোমল; রঙ উজ্বল রক্তিমাভ গোলাপী। ঘাম দেখা দিলে তা মুক্তোর মত আভা ছড়াতো। হাত দুটো ছিল রেশম কোমল। মোলায়েম। পদক্ষেপ ছিল দৃঢ় ও স্প্রিংয়ের মত স্থিতিস্থাপক। যখন হাঁটতেন তখন মনে হতো তিনি কোন উঁচু জায়গা থেকে নীচে নামছেন। মুখ ঘুরাবার সময় গোটা শরীর ঘুরাতেন। তাঁকে দেখে মনে হতো চিন্তাশীল, ধ্যানমগ্ন এবং গম্ভীর; একই সঙ্গে সদা সচেতন। তিনি হাসতেন কিন্তু সেই হাসি কখনো মুচকি হাসির সীমা ছাড়িয়ে যেত না।
সূত্রঃ
-দ্য বেনিফ্যাক্টর থেকেঃ লেখকঃ সৈয়দ ওয়াহিদ উদ্দিন,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
প্রিয় নবী (সা.)-এর দৈহিক গঠন, হাদিসের আলোকে
চেহারা
প্রিয় নবী (সা.) ছিলেন অত্যন্ত সুন্দর মানুষ। যাঁর সৌন্দর্যের কাছে আকাশের চাঁদও হার মানত। আবদুল্লাহ ইবনে কাআব (রহ.) বলেন, ‘আমি আমার পিতা কাআব ইবনে মালিক (রা.)-কে তাঁর তাবুক যুদ্ধে না যাওয়ার ঘটনা বর্ণনা করতে শুনেছি। তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে সালাম করলাম, খুশি ও আনন্দে তাঁর চেহারা ঝলমল করে উঠল। তাঁর চেহারা আনন্দে এমনই উদ্বেল থাকতো, মনে হতো যেন চাঁদের একটি টুকরো। তাঁর মুখমণ্ডলের এ অবস্থা থেকে আমরা তা বুঝতে পারতাম।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৫৫৬)। অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.)-এর দুই পা ছিল মাংসপূর্ণ। চেহারা ছিল সুন্দর। আমি তাঁর পরে তাঁর মতো কাউকে দেখিনি।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৯০৯)
যে নবীর সঙ্গে রাসুল (সা.)-এর চেহারায় মিল ছিল
রাসুল (সা.)-এর চেহারা মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর সঙ্গে মিল ছিল।
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) বলেছেন, মিরাজের রাতে আমার সম্মুখে নবীদের হাজির করা হয়। সে সময় মুসা (আ.)-কে আমি দেখলাম, তিনি যেন শানুআহ গোত্রের একজন পুরুষ। আমি ঈসা ইবনে মারিয়াম (আ.)-কেও লক্ষ্য করেছি, আমার দেখা লোকদের মাঝে তিনি উরওয়াহ ইবনে মাসউদের মতো।
আমি ইবরাহিম (আ.)-কেও লক্ষ্য করেছি, আমার দেখা লোকদের মাঝে তিনি তোমাদের বন্ধুর মতো, অর্থাত আমার মতো। জিবরাঈল (আ.)-কেও আমি লক্ষ্য করেছি, তিনি আমার দেখা লোকদের মাঝে দিহয়া ইবনে খলিফা আল ক্বালবির মতো।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৬৪৯)
উচ্চতা
উচ্চতার দিক থেকে তিনি ছিলেন মাঝারি গড়নের। বেশি লম্বাও না, আবার একদম খাটো না। যে উচ্চতা ও শারীরিক গঠন একজন মানুষকে আকর্ষণীয় করে তোলে, তিনি ছিলেন ঠিক সেই গঠনেরই। বারাআ ইবনে আজিব (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ছিলেন মাঝারি গড়নের। (বুখারি, হাদিস : ৩৫৫১)
চোখ
তাঁর চোখ দুটি ছিল অত্যন্ত সুন্দর। একজন বীরপুরুষের চোখ যেমন হওয়া প্রয়োজন ঠিক তেমনই। তাঁর চোখের শুভ্রাংশের রক্তিমতা তাঁর চোখের সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছিল।
জাবির ইবনে সামুরাহ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)-এর মুখ ছিল বেশ দীর্ঘ (প্রশস্ত), চোখ দুটি ছিল লাল (শুভ্রাংশে রক্তিমতা ছিল) এবং পায়ের জঙ্ঘা ছিল শীর্ণকায়। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৬৪৬)
দাড়ি
জাবির ইবনে সামুরাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চুল এবং দাড়ির সামনের অংশ সাদা হয়ে গিয়েছিল। তিনি যখন তেল দিতেন (সাদা) চুল তখন দেখা যেত না, আর যখন চুল অগোছালো হতো তখন দেখা যেত। তাঁর দাড়ি প্রচুর ঘন ছিল। জনৈক লোক বলল, তাঁর চেহারা ছিল তরবারির মতো। জাবির (রা.) বলেন, না, তাঁর চেহারা ছিল সূর্য ও চন্দ্রের মতো (উজ্জ্বল) গোলাকার। আমি তাঁর পিঠের উপরিভাগে কবুতরের ডিমসদৃশ নবুয়তের মোহর দেখেছি। এটির রং ছিল তাঁর গায়ের রঙের মতো। (মুসলিম, হাদিস : ৫৯৭৮)
হাত
তিনি ছিলেন অত্যন্ত সুন্দর দেহের অধিকারী। তাঁর হাতগুলো ছিল গোশতে ভরপুর। সুঠাম বাহু ও হাত পাওয়ার জন্য মানুষকে যেমন বছরের পর বছর জিম করতে হয়, নবী (সা.) সৃষ্টিগতভাবেই ছিলেন এর চেয়ে বেশি সুন্দর দেহের অধিকারী। আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)-এর হাত গোশতে পূর্ণ ছিল। তাঁর পরে আমি কোনো লোককে এমন দেখিনি। আর রাসুল (সা.)-এর চুল ছিল মাঝারি ধরনের, অধিক কোঁকড়ানোও না, অধিক সোজাও না। (বুখারি, হাদিস : ৫৯০৬)
তাঁর হাতের পেশিগুলো দেখে শক্তপোক্ত মনে হলেও সেগুলো ছিল অত্যন্ত নরম। নবীজির সেবক আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ছিলেন শুভ্র উজ্জ্বল বর্ণের। তাঁর ঘাম যেন মুক্তার মতো। তিনি চলার সময় সম্মুখপানে ঝুঁকে চলতেন। আমি নরম কাপড় বা রেশমকেও তাঁর হাতের তালুর মতো নরম পাইনি এবং মিশক ও আম্বরের মধ্যেও রাসুল (সা.)-এর শরীরের চেয়ে অধিক সুগন্ধ পাইনি। (মুসলিম, হাদিস : ৫৯৪৮)
পা
হাতের মতো তাঁর পাও ছিল সুন্দর। তাঁর মাথা থেকে পা পর্যন্ত পুরো দেহই যেমনটা মানানসই হওয়া প্রয়োজন, ঠিক তেমনই ছিল। আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)-এর মাথা ও দুই পা ছিল মাংসপূর্ণ। তাঁর আগে ও তাঁর পরে আমি তাঁর মতো অন্য (কাউকে অধিক সুন্দর) দেখিনি। তাঁর হাতের তালু ছিল চওড়া। (বুখারি, হাদিস : ৫৯০৭)
-সূত্র: মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা