Monday, August 25, 2025

কানাডায় একশো আট দিনঃ হাঁটাহাঁটি ও আরও কিছু

আল্লাহ্ পাক পরওয়ারদিগার মানুষকে বেড়াতে উতসাহিত করে বলেছেনঃ 
قُلۡ سِيرُواْفِي ٱلۡأَرۡضِ'কুল সিরু ফিল আর
‘তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো' ( আয়াতাংশ সূরা আনকাবুত আয়াত ২০)

হাঁটাহাঁটি হলো এমন এক কায়িক শ্রম, যা প্রতিদিনই করা যায়। হাঁটতে কোনো সরঞ্জাম লাগে না, দিনের যেকোনো সময় হাঁটতে বের হওয়া যায়। প্রতিদিন অল্প সময় হাঁটলেও তা শরীরের জন্য উপকার বয়ে আনে। 
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন দৈনিক কমপক্ষে ৮ কিলোমিটার হাঁটার পরামর্শ দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ হলো, সপ্তাহে একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির অন্তত দেড় ঘণ্টা মাঝারি মাত্রার অ্যারোবিক ব্যায়াম করা উচিত। অ্যারোবিক ব্যায়াম হলো সেই ধরনের ব্যায়াম, যার ফলে হৃৎস্পন্দন দ্রুত হয় এবং শরীর ঘামতে শুরু করে। যেমন জোরে হাঁটা, সাইকেল চালানো, জগিং, দড়িলাফ, দৌড়ানো, অ্যারোবিক ড্যান্স, সাঁতার ইত্যাদি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শে আরও বলা হয়েছে, সপ্তাহে কমপক্ষে পাঁচ দিন আধা ঘণ্টা করে জোরে হাঁটলেই নিয়মটা মানা হয়।

উল্লিখিত নিয়ম অনেকটা মেনে আমি ঢাকায় হাঁটি রোজ কমপক্ষে ৬ হাজার স্টেপ। পয়লা জুন ২০২৫ কানাডায় ভ‍্যানকুভারের সারেতে মেয়ের বাড়িতে আসার পরে এ অভ‍্যাস জারি রাখতে সচেষ্ট হই। প্রথম দু'দিন শুয়ে বসে কাটানোর পর জেট ল‍্যাগ কাটানোর চেষ্টা করি মেয়ের বাড়ির ব‍্যাকইয়ার্ডে নরম ঘাসের ওপর হেঁটে। এতে শরীরে জিওম‍্যাগনেটিক ইফেক্ট কাজ করে। ঘাসের ওপর খালি পায়ে হাঁটার সময় শরীর পৃথিবীপৃষ্ঠ মানে মাটি থেকে নেগেটিভ চার্জ বা ঋণাত্মক আয়ন শোষণ করতে পারে যা মুঠোফোনের মতো বৈদ‍্যুতিক যন্ত্র থেকে জমে থাকা পজেটিভ চার্জ বা ধনাত্মক আয়ন নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে। এর ফলে শরীরের প্রদাহজনিত সমস্যা যেমন কমে, ঘুমের মান বাড়াতে পারে এবং সামগ্রিক সুস্থতা বাড়ায়। এটি শরীরের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক (তড়িৎ চৌম্বকীয়) ভারসাম্য ঠিক রাখতেও  যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। শরীর ঠিক রাখতে হাঁটাহাঁটি খুবই দরকারি আর সঙ্গী পেলে উতসাহ বাড়ে। জামাই প্রকৌশলী হুমায়ুন বল্লো আমি রোজ হাঁটি। ট্রেডমিলেও হাঁটি আবহাওয়ার সাথে সামঞ্জস্য রেখে। আমি আপনার হাঁটার সঙ্গী হবো। আমি বিষয়টি পজিটিভভাবে নেই। কারণ, হাঁটার সময় অনেক কথা হবে, অনেক প্রশ্নেরও সমাধান পাওয়া যাবে। আমরা সিলেক্ট করি বাড়ির কাছেই সারে বেয়ার ক্রিক পার্ক  ও সেখানকার স্টেডিয়াম। 
বেয়ার ক্রিক পার্ক (Bear Creek Park) সারে এর একটি জনপ্রিয় পার্ক। মোট আয়তন ১৫২ একর।এটি একটি বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এবং বিভিন্ন ধরণের বিনোদন ও প্রকৃতির সান্নিধ্য উপভোগ করার সুযোগ রয়েছে।এখানে বাচ্চাদের জন্য ট্রেন, মিনি-গল্ফ, ওয়াটার পার্ক, আউটডোর পুল, হাঁটার পথ, বিশাল স্টেডিয়াম এবং বাগান রয়েছে। এছাড়া, এখানে পিকনিক করার জন্য সুন্দর জায়গা এবং পাবলিক আর্টও দেখতে পাওয়া যায়। 
বেয়ার ক্রিক পার্কের কিছু আকর্ষণ:
এমন সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবশে হাঁটতে বা বেড়াতে বা বনভোজন করতে মন চাইবেই। মজার ব‍্যাপার হলো এ পার্কে উঠতি বয়সের নারী পুরুষের অবাধ বিচরণ বা Philandering Nuisance একেবারেই নেই।
Bear Creek নামটি এলো কি করে?
Bear হলো নদীর নাম Creek হলো (a natural stream of water, typically smaller than a river)
নামকরণ করেন স্কটিশ উদ্ভিদ বিজ্ঞানী David Douglas
Bear Creek Park in Surrey, Canada, is named after the Bear Creek (formerly known as Bear River) that flows through it. The creek itself was named by David Douglas in 1833. It was labeled "Rivera la Ours" (Bear River) on a map in 1867 and "Bear River" on a later map in 1871. The park encompasses 152 acres and features the creek as a prominent natural element. 
সূত্রঃ surrey.ca
নিজ অনুসন্ধান
Dictionary of Canadian Biography, vol. 6, 
Publisher:  University of Toronto/Université Laval

Tuesday, August 19, 2025

খাদ‍্য ও তৃপ্ততা

 খাদ্য ও তৃপ্তি, এই দুটি শব্দ একে অপরের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। খাদ্য আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে এবং তৃপ্তি আমাদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। 


খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে শরীর তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় এবং এটি আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। অন্যদিকে, তৃপ্তি হলো একটি মানসিক অনুভূতি যা আমাদের খাদ্য গ্রহণের সময় আনন্দ ও সন্তুষ্টি এনে দেয়। একটি সুষম খাদ্য গ্রহণ করলে শরীর যেমন প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায়, তেমনি মনও শান্ত ও প্রফুল্ল থাকে। 

খাদ্য ও তৃপ্তির মধ্যে সম্পর্ক: 
শারীরিক তৃপ্তি:
  • পর্যাপ্ত এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করলে শরীর প্রয়োজনীয় শক্তি পায় এবং সুস্থ থাকে।
  • মানসিক তৃপ্তি:
    পছন্দের খাবার খেলে বা সুস্বাদু খাবার খেলে মানসিক তৃপ্তি আসে।
  • সচেতন খাদ্য গ্রহণ:
    খাদ্য গ্রহণের সময় প্রতিটি কামড় উপভোগ করা এবং খাবারের প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া মানসিক তৃপ্তি এনে দেয়।
  • সুষম খাদ্য:
    সুষম খাদ্য গ্রহণ করলে শরীর ও মন উভয়ই ভালো থাকে।
খাবারের মাধ্যমে তৃপ্তি লাভের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অনুসরণ করা যেতে পারে: 
সুষম খাদ্য গ্রহণ:
  • খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ফল, সবজি, শস্য, প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
  • ধীরে ধীরে খাওয়া:
    তাড়াহুড়ো করে না খেয়ে ধীরে ধীরে প্রতিটি কামড় উপভোগ করে খাওয়া উচিত।
  • উপযুক্ত পরিবেশে খাওয়া:
    শান্ত ও আনন্দময় পরিবেশে খাবার গ্রহণ করা উচিত।
  • ধন্যবাদ দেওয়া:
    খাবারের জন্য প্রথমে সৃষ্টিকর্তা পরে পরিবেশকে ধন্যবাদ জানানো উচিত।
সুতরাং, খাদ্য ও তৃপ্তি একে অপরের পরিপূরক।খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে শরীরকে সুস্থ রাখা এবং পছন্দের খাবার খেয়ে মানসিক তৃপ্তি অর্জন করা উভয়ই আমাদের সামগ্রিক সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। 

একই সঙ্গে পুষ্টিকর ও পেট ভরা রাখে এরকম খাবার বেছে নেওয়া ‍উপকারী।

সব খাবার সমানভাবে শক্তি দেয় না। কিছু খাবার দীর্ঘস্থায়ী শক্তি সরবরাহ করে। এতে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হয়।

এই ধরনের খাবার চেনা থাকলে সারাদিনের পুষ্টি জোগানোর পাশাপাশি ও অনেকক্ষণ পেট ভরা রাখতে খাদ্য-তালিকায় যুক্ত করা যায়।

খাবারের যে গুণে তৃপ্তি বৃদ্ধি পায়

রিয়েলসিম্পল ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারলিনা’তে অবস্থিত ‘টপ নিউট্রিশন কোচিং’য়ের প্রধান নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ জর্ডান হিল বলেন, “কোনো খাবারের পরিতৃপ্তি দানের ক্ষমতা নির্ভর করে এর পুষ্টিমানের ওপর।”

“সাধারণত যেসব খাবারের প্রোটিন, আঁশ, চর্বি ও পানির মাত্রা বেশি সেগুলো দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সহায়তা করে”- বলেন তিনি।

প্রোটিন, চর্বি ও আঁশ- হজম হতে বেশি সময় নেয়, বিপাকীয় প্রক্রিয়া ধীর করে দেয়। ফলে পুষ্টি শোষণ বিলম্বিত হয় এবং পুষ্টিগুণ খাবার খাওয়ার পর অনেকক্ষণ পর্যন্ত পেট ভরা রাখতে বা পরিতৃপ্তির অনুভূতিতে দিতে পারে।

এই ধরনের খাবার রক্তে ধীরে ধীরে শর্করার নিঃসরণ করে। তাই অনেকক্ষণ পেট ভরা অনুভূত হয়।

টাইপ টু ডায়াবেটিসের মতো যাদের বিপাক সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে তাদের মাঝারি রক্তের শর্করা ওঠানামার পাশাপাশি সামগ্রিক পরিপূর্ণতা বা পেট ভরা অনুভূতি বাড়ায়।


কারণ যে খাবার রক্তের শর্করা দ্রুত হ্রাস বৃদ্ধি করে, সেগুলো খাওয়ার পরে দ্রুত পেট ভরা ও দ্রুত ক্ষুধার অনুভূতি দেয়।

খাবার কেনার সময় এর পুষ্টি মূল্যের বিবেচনায় প্রোটিন, চর্বি ও আঁশ বেশি এমন খাবার বাছাই করা উচিত।

পরিতৃপ্তির নির্দেশক

ব্যস্ত জীবনে পুষ্টিকর খাবার খুঁজতে প্রোটিন, চর্বি, আঁশ ইত্যাদি গণনা করার বিষয়টা বাস্তবসম্মত নয়।

১৯৯৫ সালে অস্ট্রেলিয়া’র ‘ইউনিভার্সিটি অফ সিডনি’র বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের গবেষকরা ম্যাট্রিক পদ্ধতিতে খাবারের পরিতৃপ্তি পরিমাপের জন্য একটি মান নির্ধারক নিয়ে আসেন যা ‘স্যাটাইটি ইনডেক্স’ বা ‘পরিতৃপ্তির নির্দেশক’ হিসেবে পরিচিত।

ব্যাখ্যা করে হিল বলেন, “স্যাটাইটি ইনডেক্স’ হল একটি পদ্ধতি যা বিভিন্ন খাবারের পরিতৃপ্তিমূলক প্রচেষ্টাকে পরিমাপ করে।”

অত্যন্ত ক্ষুধার্ত, ক্ষুধার্ত, আধা ক্ষুধার্ত, অনুভূতিহীন, আধা সন্তুষ্ট, সন্তুষ্ট বা অত্যন্ত সন্তুষ্ট ইত্যাদি থেকে তারা কীভাবে তৃপ্ত বোধ করবেন এর ওপর ভিত্তি করে খাবারগুলোর ‘স্কোর’ বা সূচক নির্ধারণ করা হয়।

গবেষণার জন্য ৩৮টি বিভিন্ন খাবার বিশ্লেষণ করে। প্রতিটিকে ২৪০ ক্যালোরি অংশের ওপর ভিত্তি করে এর পরিতৃপ্তি সূচক বা ‘এসআই স্কোর’ নির্ধারণ করেন।

শতভাগ ‘এসআই’য়ের মান নিয়ন্ত্রণ হিসাবে সাদা রুটি ব্যবহার করা হয়েছিল। সর্বনিম্ন এসআই খাদ্য ৪৭ শতাংশ যা পাওয়া যায় ক্রসান্টে।

সর্বোচ্চ পরিতৃপ্তি দায়ক খাবারের স্কোর ছিল ৩২৩ শতাংশ যা পাওয়া গিয়েছিল আলুতে।

সীমিত সংখ্যক খাদ্য বিশ্লেষণ এবং প্রায় ৩০ বছরের পুরানো সময়ের কারণে এই সূচক দৈনন্দিন স্বাস্থ্য-সেবা ও ‘ডাইটেটিক্স’ বা খাদ্য-নির্বাচন-বিদ্যায় অনুশীলণ করা হয় না।

তবে এর পিছনে কিছু ধারণা রয়েছে যেমন- পুষ্টির ঘনত্ব বা পুষ্টির পরিমাণ ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ।

সব চেয়ে বেশি পরিতৃপ্তিকর খাবার হল

বাদাম ও বীজ: নানানভাবে শরীরের জন্য উপকারী। এটা পেট ভরা রাখে। পুষ্টির যোগান দেয়। এতে রয়েছে প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও আঁশ যা পেট ভরা রাখে। এই খাবার তালিকার শীর্ষ অবস্থান করে।

সুপ: নানান রকম উপাদান যোগ করা যায়। এই খাবার স্বাস্থ্যকর প্রোটিন (প্রাণিজ, উদ্ভিজ্জ), উচ্চ আশ (সবজি) ও প্রয়োজনীয় পানির যোগান দেয়।

ডিম: সকালের শুরুটা ডিম দিয়ে করলে সারাদিনের পর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় শক্তি পাওয়া যায়। এই খাবার প্রোটিন ও চর্বি উপাদান সমৃদ্ধ যা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সহায়তা করে।

রিতৃপ্তির নির্দেশক

ব্যস্ত জীবনে পুষ্টিকর খাবার খুঁজতে প্রোটিন, চর্বি, আঁশ ইত্যাদি গণনা করার বিষয়টা বাস্তবসম্মত নয়।

১৯৯৫ সালে অস্ট্রেলিয়া’র ‘ইউনিভার্সিটি অফ সিডনি’র বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের গবেষকরা ম্যাট্রিক পদ্ধতিতে খাবারের পরিতৃপ্তি পরিমাপের জন্য একটি মান নির্ধারক নিয়ে আসেন যা ‘স্যাটাইটি ইনডেক্স’ বা ‘পরিতৃপ্তির নির্দেশক’ হিসেবে পরিচিত।

ব্যাখ্যা করে হিল বলেন, “স্যাটাইটি ইনডেক্স’ হল একটি পদ্ধতি যা বিভিন্ন খাবারের পরিতৃপ্তিমূলক প্রচেষ্টাকে পরিমাপ করে।”

অত্যন্ত ক্ষুধার্ত, ক্ষুধার্ত, আধা ক্ষুধার্ত, অনুভূতিহীন, আধা সন্তুষ্ট, সন্তুষ্ট বা অত্যন্ত সন্তুষ্ট ইত্যাদি থেকে তারা কীভাবে তৃপ্ত বোধ করবেন এর ওপর ভিত্তি করে খাবারগুলোর ‘স্কোর’ বা সূচক নির্ধারণ করা হয়।

গবেষণার জন্য ৩৮টি বিভিন্ন খাবার বিশ্লেষণ করে। প্রতিটিকে ২৪০ ক্যালোরি অংশের ওপর ভিত্তি করে এর পরিতৃপ্তি সূচক বা ‘এসআই স্কোর’ নির্ধারণ করেন।

শতভাগ ‘এসআই’য়ের মান নিয়ন্ত্রণ হিসাবে সাদা রুটি ব্যবহার করা হয়েছিল। সর্বনিম্ন এসআই খাদ্য ৪৭ শতাংশ যা পাওয়া যায় ক্রসান্টে।

সর্বোচ্চ পরিতৃপ্তি দায়ক খাবারের স্কোর ছিল ৩২৩ শতাংশ যা পাওয়া গিয়েছিল আলুতে।

সীমিত সংখ্যক খাদ্য বিশ্লেষণ এবং প্রায় ৩০ বছরের পুরানো সময়ের কারণে এই সূচক দৈনন্দিন স্বাস্থ্য-সেবা ও ‘ডাইটেটিক্স’ বা খাদ্য-নির্বাচন-বিদ্যায় অনুশীলণ করা হয় না।

তবে এর পিছনে কিছু ধারণা রয়েছে যেমন- পুষ্টির ঘনত্ব বা পুষ্টির পরিমাণ ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ।

সব চেয়ে বেশি পরিতৃপ্তিকর খাবার হল

বাদাম ও বীজ: নানানভাবে শরীরের জন্য উপকারী। এটা পেট ভরা রাখে। পুষ্টির যোগান দেয়। এতে রয়েছে প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও আঁশ যা পেট ভরা রাখে। এই খাবার তালিকার শীর্ষ অবস্থান করে।

সুপ: নানান রকম উপাদান যোগ করা যায়। এই খাবার স্বাস্থ্যকর প্রোটিন (প্রাণিজ, উদ্ভিজ্জ), উচ্চ আশ (সবজি) ও প্রয়োজনীয় পানির যোগান দেয়।

ডিম: সকালের শুরুটা ডিম দিয়ে করলে সারাদিনের পর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় শক্তি পাওয়া যায়। এই খাবার প্রোটিন ও চর্বি উপাদান সমৃদ্ধ যা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সহায়তা করে।

লক্ষণীয়, ডিমে থাকা অধিকাংশ চর্বি কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ। যদিও আগে বিবেচনা করা হত কোলেস্টেরল হৃদরোগের সাথে সম্পর্কিত।

তবে সম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে খাদ্য তালিকায় কোলেস্টেরল গ্রহণ হৃদরোগের সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত নয়।

স্মুদি: পুষ্টিগুণে ভরপুর, একই সাথে পেট ভরবে এমন খাবার খেতে চাইলে স্মুদি খুব ভালো পছন্দ।

স্মুদিতে প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও আঁশ যোগ করতে বাদামের মাখন, প্রোটিন পাউডার, দই, দুধ, ফল, সবজি, হ্যাম্প, চিয়া বীজ, সন বীজ ইত্যাদি যোগ করা যায়।


কমলা: গবেষকদের ২০২ শতাংশ পরীক্ষার ভিত্তিতে দেখা গেছে, কমলার ‘স্যাটাইটি ইনডেক্স’ সবচেয়ে বেশি।

কমলা উচ্চ আঁশ ও পানীয় উপাদান সমৃদ্ধ। তাজা, সালাদ ও ফলের রস তৈরি করেও কমলা গ্রহণ করা যায়।

রাতের খাবারে এটা রাখতে চাইলে বাদাম ও নোনতা পনির দিয়ে পরিবেশন করা যায়।

সামুদ্রিক খাবার: সামুদ্রিক খাবার প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর চর্বির ভালো উৎস। সাদা মাছে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ এসআই থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে এর মান ২২৫ শতাংশ ।

চর্বিবহুল মাছ যেমন- স্যামন, টুনা, সার্ডিন এক্ষেত্রে বাছাই করা যেতে পারে।

পপকর্ন: পেট পরিপূর্ণ রাখে এমন আঁশ সমৃদ্ধ খাবার। এর এসআই স্কোর ১৫৪ শতাংশ। মাখন এবং লবণ দিয়ে পপকর্ন সবসময়ই মজাদার। তবে ভালো পুষ্টি গ্রহণ করতে চাইলে পপকর্নের সাথে অসম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত জলপাই তেল বা ভিটামিন এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ পুষ্টিকর ইস্ট যোগ করা যেতে পারে।

খোসাসহ আলু: জটিল কার্বোহাইড্রেইট সমৃদ্ধ আঁশ বেশি থাকে। খোসাসহ আলু খাওয়া হলে আঁশের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

‘স্যাটাইটি ইন্ডেক্স’ সমীক্ষার ওপর ভিত্তি করে বলা যায়, পরিতৃপ্তির দিক থেকে আলু সেরা।

মটর: অন্যান্য ডাল ও মটরের মতো মটরশুঁটিতে আছে প্রোটিন ও আঁশ যা পেট ভরা রাখতে সহায়তা করে। সুপ, সালাদ, টাকোস, পাস্তা ও অন্য যে কোনো খাবারে এগুলো যোগ করা যায়।

সচেতন খাদ্যতালিকা: মনের উপর খাদ্যের প্রভাব


অজীর্ণতা থেকে শুরু করে দীর্ঘমেয়াদী  রোগও সৃষ্টি হতে পারে।  

খাদ্যবিন্যাস : হালকা বনাম ভারী

আয়ুর্বেদ খাবারকে হজমক্ষমতার ভিত্তিতে দুই ভাগে ভাগ করে – হালকা ও ভারী। যেমন, মুগ ডাল ও বাসমতি চাল সহজপাচ্য এবং বেশি পরিমাণেও ক্ষতিকর হয় না। অন্যদিকে, কালো ছোলা ও কাঁচা সবজি হজমের জন্য অধিক শক্তিশালী জঠরাগ্নির প্রয়োজন হয়। তাই এগুলো সংযত পরিমাণে গ্রহণ করাই শ্রেয়।  

হজম সহায়ক খাদ্য নির্বাচন ও শ্রেণীবিন্যাস

আয়ুর্বেদের মৌলিক গ্রন্থ “চরক সংহিতা” খাবারকে বিভিন্ন উপায়ে শ্রেণীবদ্ধ করেছে—  
  • উৎপত্তি অনুযায়ী: শস্য, ডাল, সবজি, ফল ইত্যাদি। 
  • আকার অনুযায়ী: যা খাওয়া যায়, পান করা যায়, চেটে খাওয়া যায় এবং চিবিয়ে খাওয়া যায়। 
  • প্রভাব অনুযায়ী: স্বাস্থ্যকর (হিতকর) বা অস্বাস্থ্যকর (অহিতকর)।  

স্বাস্থ্যকর বনাম অস্বাস্থ্যকর খাবার

একটি সুস্থ জীবনের জন্য এমন খাবার নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ, যা শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং অসামঞ্জস্য দূর করে। লাল চাল, সবুজ মুগ ডাল ও গরুর দুধ হিতকর খাদ্যের মধ্যে পড়ে, যা শরীরের জন্য উপকারী। অন্যদিকে, বন্য যব ও ভেড়ার দুধ অহিতকর হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো।  

সুস্থ জীবনের জন্য খাদ্যাভ্যাসে আয়ুর্বেদ ও ন্যাচারোপ্যাথির সমন্বয়

এই নীতিগুলো বুঝতে পারলে আমরা খাদ্য নিয়ে বিভ্রান্ত না হয়ে সুস্থতার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারব। তাই আয়ুর্বেদ ও প্রকৃতিশাস্ত্রের জ্ঞান গ্রহণ করে এমন খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন, যা শরীরকে পুষ্টি দেয় এবং সামগ্রিক সুস্থতা নিশ্চিত করে।

সঠিক খাদ্যাভ্যাস শুধু আমাদের শরীরকে পুষ্টি দেয় না, বরং সামগ্রিক সুস্থতা ও ভারসাম্য বজায় রাখতেও সাহায্য করে। একটি সুস্থ, ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপনের জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিজের শরীরের কথা ভেবে খাদ্য নির্বাচন করুন, সুস্থ থাকুন!