Thursday, August 23, 2018

অমাবষ্যার রাতে বিবেকের কাছে আমার প্রশ্ন ও আমার দায়ঃ

এক অমাবষ্যার রাতের গভীরে আমি আমার বিবেকের দিকে ফিরে তাকালাম। ওকে বলালাম, “জেগে আছো নাকি মরে গেছ।” ও কিছুই বল্লো না। কারণ আমি জানি নিত্যদিন আমার বিবেক মৃত্যুর দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে!
আমি দামী হোটেলে খেতে যাচ্ছি। এখানে যে টাকা আমি খরচ করবো সেটা ওই হোটেলের দারোয়ান যে দরজা খুলে তার হ্যান্ডল ধরে আছে আমাকে ভেতরে নেয়ার জন্য- আমার টাকা ওর এক মাসের বেতনের সমান হবে হয়তো। আর আমি নিমেষেই তা্ উড়িয়ে দিচ্ছি!
আমার বিবেক এখানে একবার মরলো।
বাজারে গেলাম। দেখলাম নিত্যদিনের মত আমার ছেলের বয়সী আজও ওই “পিচ্চি” যে আমাকে রোজ্ আলু পটল মেপে দেয়। আজও ও হেসে হেসে সেই কাজটিই করলো। মনে মনে বিড় বিড় করি আমার ছেলের মত ওর স্কুলে যাওয়ার কথা। আমার উদাস দৃষ্টি ফেরালাম অন্য দিকে। “পিচ্চি” বল্লো, স্যার! কি ভাবছেন। বল্লাম “না রে! কিচ্ছু না।”
আমার বিবেক এখানে একবার মরলো।
দামী ডিজাইনের ড্রেস পরছি। অনেক দাম। এ টাকা কেন খরচ করলাম, মনকে শুধাই। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি জীর্ণ পোশাক পরা বেআব্রু ভিখারীনী হেঁটে হেঁটে রাস্তা পার হচ্ছে। নিজের আব্রু ঢাকবার ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছে সে। দেখেও না দেখার ভান করে জানালাটা বন্ধ করে দিই। পোশাকগুলো আর পরতে ইচ্ছে করলো না।
আমার বিবেক এখানে একবার মরলো।
নিজের ছেলে মেয়ের জন্য দামী খেলনা কিনে সন্ধ্যায় বাড়ী ফিরছি। দেখলাম এক দঙ্গল ছেলে ক্ষুধাতুর চোখ নিয়ে রাস্তরা নিওন সাইনের নীচে বসে কম দামী খেলনা বিক্রি করছে। আর আমি অনেক দাম দিয়ে নিজের ছেলে মেয়ের জন্য দামী খেলনা নিয়ে ফিরছি। নিজের বিবেককে প্রবোধ দিই। নজরুলের কবিতা মনে হয়,
“ক্ষুধাতুর শিশু চায়না স্বরাজ, চায় দুটি ভাত একটু নুন
তিন দিন হতে খায়ননিকো বাছা
কচি পেটে তার জ্বলে আগুন।”
আবারো নচিকেতার “আদিত্য সেনের” কথা মনে হয়-
আদিত্য সেন এক রাজনীতিবিদ
কলোনির ঘরে যার বাস
আদিত্য সেন এক সত মানুষ
আধপেটা খেয়ে বারোমাস
আদিত্য সেন পিঠ সোজা রাখেন
পার্টির হোলটাইমার
আধপেটা খেয়ে থাকবেন তবু
মুদির দোকানে নেই ধার
আদিত্য সেন আদিত্য সেন
সূর্যের মত যার নাম
আদিত্য সেন আদিত্য সেন
আজ প্রয়োজন বড় আপনার।
আদিত্য সেন ভাঙে প্রোমোটার রাজ
আদিত্য পুকুর বাঁচায়
আদিত্য সেন যেন সয়ং লেনিন
বিপদকে আঙুলে নাচায়
আদিত্য সেন বলে স্পষ্ট কথা
তত্বের কী বা প্রয়োজন
মানুষের প্রয়োজনে যিনিই দাঁড়ান
তার আগে কি তত্ব কথন
আদিত্য সেন আদিত্য সেন
সূর্যের মত যার নাম
আদিত্য সেন আদিত্য সেন
আজ প্রয়োজন বড় আপনার।
আদিত্য সেন লাল স্বপ্ন দ্যাখেন
সকলের সমান অধিকার
আদিত্য মানষের খিদের শমন
যার ঘরেতে ঘোর অনাহার
আদিত্য তার শিশু সন্তানকে
লেনিনের গল্প শোনান
’উই শেল ওভারকাম সামে ডে’
দৃঢ়তার সাথে যিনি গান
আদিত্য সেন আদিত্য সেন
সূর্যের মত যার নাম
আদিত্য সেন আদিত্য সেন
আজ প্রয়োজন বড় আপনার।
ঔযে দূরে যাকে দেখছো বসে
পাত্র হাতে ভিক্ষার
বহিষ্কৃত তিনি পার্টি থেকে
আদিত্য সেন নাম তার
অনেক অনেক টাকা তছরুপের
অভিযোগ তার মাথায়
তবে কেন অদিত্য ভিক্ষা করেন
পাঁচ বছর আমার পাড়ায়
রাজনীতি করতেন তার সাথে যারা
গাড়ি বাড়ি করে তারা সত
রাজনীতিতে নেই সততার ঠাই
একথার নেইকো দ্বিমত
তবুও আদিত্য ভোলেনি কিছুই
আমরা প্রতীক্ষায়
এই নপুংশকের রাজনীতি ছেড়ে
কবে আপনার হবে উদয়
আদিত্য সেন আদিত্য সেন
সূর্যের মত যার নাম
আদিত্য সেন আদিত্য সেন
আজ প্রয়োজন বড় আপনার।
এর পরও আমার বিবেক এখানে একবার মরলো।
গতকাল কাজের মেয়েটি আসেনি আমার বাড়ীতে। পাঠিয়েছে ওর মেয়েকে তার স্কুল কামাই করে। বেসিন ও সিঙ্কে তাকিয়ে দেখি অনেক ময়লা আর এঁটো বাসন-কোসন। নিজেকে বললাম, কাজের মেয়ে আসেনি তো কি হয়েছে- নিজেই তো করতে পারতে? কাজের মেয়ের ছোট মেয়েটার স্কুল কামাই হলো কিছু ভাবলে না। তোমার ছেলে মেয়ের বেলায় হলে কি হতো?
আমার বিবেক এখানে একবার মরলো।
যখন কোন হত্যাকান্ড বা ধর্ষনের খবর শুনি আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাই যে আমার কেউই বা ছেলে মেয়েরা ঘটনার শিকার হয় নি।
কিন্তু যে মরলো বা ধর্ষনের শিকার হলো সে তো কারো ছেলে বা মেয়ে!
আমি আয়নায় নিজের মুখ দেখতে যাই। আবার আয়না থেকে নিজের মুখ ফিরাই।
আমার বিবেক এখানে একবার মরলো।
জাতি ধর্ম নির্বিশেষে আজ-কাল হানাহানি লেগেই আছে। নিজের দেশ নিয়ে ভাবি। রাজনীতিবিদদের নিয়ে ভাবি। এদের কারণে দেশটি উচ্ছন্নেই যাচ্ছে। কিন্তু আমারও যে দায় আছে সেটা ভুলে গেছি।
আমার বিবেক এখানে একবার মরলো।
পরিবেশ দূষণে ধুঁকছে আমার শহর। শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়াই কষ্টকর হয়েছে। নিত্য দিনই আমি আমার গাড়ী নিয়ে অফিস করছি। জনতার কাতারে এসে চড়ছিনা বাসে বা রিকশায় বা স্কুটারে। আমি আরামেই আছি। কিন্তু আমার একটা গাড়ী কি কোন ব্যতিক্রম কিছু এনে দিতে পারবে?
আমার বিবেক এখানে একবার মরলো।
অমাবষ্যার রাতের গভীর আধাঁরে উদাস দৃষ্টি নিয়ে তাকাই। স্পষ্ট করে দেখা যায় দূর আকাশের ছায়াপথ। খেয়াল করি রাতের কালো বেনারসি শাড়ীতে জড়োয়া তারার কাজ। খুবই চমতকার সে কারুকাজ। ঘুম অসেনা। বিবেকের কাছে হেরেই গেছি আমি।
আবারো বিবেককে ডাকি। ও বলে জেগে আছি।
আঁতকে উঠি।
আমি কি নিজের হাতে নিজের বিবেককে প্রতিদিনই গলা টিপে মারছি না?

Wednesday, August 22, 2018

Successful & unsuccessful people


01. The successful people are always adaptive to situations.

02. For any challenge they face, they take a step back, asses it logically, consider alternate options and set their new direction to reach their goal. Regardless of temporary distractions, their power of focus helps them perform consistently until they succeed.

03. They reprogram themselves according to all situations.
They always look for new ways of doing things to manage uncertain situations.

04. They treat each moment as the moment of courage, the moment of opportunity, the moment of action and the moment of progress!

On the contrary, unsuccessful people permanently shut down themselves as soon as they meet a challenge.

Successful people has got 7 Super Powers: They believe in Almighty Allah.

1. The Power of Focus. Focus means to insert all of your energies on one goal and do not let any obstacles change your attention. Remember, you see problems when you move your eyes away from your target. Don't let your mind distracted from your goal. Don't let impure thoughts spoil your plans. 
2.  The Power of Vision. A fast pace horse running in the wrong direction will never reach its destination. Instead it will cause misleading. Building the Power of Vision starts with your thinking style, awareness about your field, your comprehension capabilities and your caliber to imagine the future. 
3. The Power of Now. The right moment is now. The best way to make your dreams come true is to wake up and act. This is understood that planning is important. People make plans people forget plans people fail. Why? They don't execute. They keep thinking and they keep waiting for the 'right' moment to kick off their plans. This 'right' moment never comes if they keep waiting for it. 
4. The Power of Positivity. Successful people posses a positive mindset. Remember that being positive will give you the freedom to look forward instead of looking in past. If you keep wandering in past with negative thoughts you will not be able to proceed with your goals.  Positive people are part of solutions not part of problems. Positive people convert risks into opportunity. They have the sense of gratitude.
5.  The Power of Analytics. Being analytical helps in many ways, for example, breaking down bigger problem in to smaller tasks, considering the issue from more wider and multiple angles, evaluating the options from Needs and Wants perspective.
6.  The Power of Flexibility. Being flexible doesn't mean being weak instead it portrays your powerful personality trait that you care about others and respect the difference of opinion.
7. The Power of 'Implosiveness. Great people are not explosive at all. They are cool at mind and heart.

Sourcedailytenminutes.com & other.

Tuesday, August 14, 2018

7 things parents expect from son & daughter but never ask for


1. Some quality time.
This is the most important thing that our parents need from us and it’s also the only thing that we are not giving them at all.
2. To have dinner with them.
Make an effort to have at least one meal of the day with the people who genuinely care about you.
3. Go out with them.
While in childhood your parents were your true companions for a happy outing, you now enjoying going out with your friends more.
Your parents are still hoping for you to make a plan with them one day.
4. A family trip.
If you can plan so many trips with your friends every year, what will it take for you to plan one with your parents?
5. The truth.
Every time your parents ask you where you were and when will you come home, why don’t you just tell them the truth?
6. Smile when you are at home.
They hate when you are upset or angry. They want to see their child as the happiest person on this planet.
7. Don’t forget them on your birthday.
Remember, your parents wait for your birthday more than you and it’s more special for them.

Plant and Reap


সত হওয়ার চারা লাগাও বিশ্বাসের ফসল ঘরে তোলো।
ভালোর চারা লাগাও আর বন্ধুত্বের ফসল তোল
অধ্যাবসায়ের চারা লাগাও বিজয়ের ফসল তোল
বিবেচনার বীজ লাগাও, সম্প্রীতির ফসল তোল
কঠোর পরিশ্রমের চারা লাগাও, সাফল্যের ফসল ঘরে তোল
ক্ষমার চারা লাগাও, সমঝোতার ফসল তোল
দিলখোলা হওয়ার চারা লাগাও, নিবিড় হওয়ার ফসল ঘরে তোল
ধৈর্যের চারা লাগাও উন্নতির ফসল তোল
বিশ্বাসের বীজ লাগাও, অলৌকিক ফসল ঘরে তোল

Thursday, August 2, 2018

দুনিয়ার ১ম হত্যাকান্ড, ১ম কুরবানী এবং অগ্নিপূজার শুরু , কিভাবে কবর দিতে হয় তা মানুষ শেখে কাকের কাছ থেকে

২৭) পবিত্র কুরআনের সূরা মায়েদার ২৭ নম্বর আয়াতের বাংলা তর্জমা হলো, “(হে মুহাম্মদ!) তুমি তাদের প্রতি হকভাবে তিলাওয়াত করো (আদমের দুই পুত্র হাবিল ও কাবিলের সংবাদ)। তারা দু’জন কুরবানী করলে তাদের একজনের কুরবানী কবুল করা হলো, অন্য জনেরটা কবুল করা হলো না৷ সে বললো, আমি তোমাকে মেরে ফেলবো৷ সে জবাব দিল, আল্লাহ তো মুত্তাকিদের নজরানা কবুল করে থাকে অর্থাত তোমার কুরবানী কবুল না হয়ে থাকলে এতে আমার কোন দোষ নেই৷ বরং তোমরা কুরবানী কবুল না হওয়ার কারণ হচ্ছে এই যে, তোমার মধ্যে আল্লাহভীতি বা তাকওয়া নেই৷ কাজেই আমাকে হত্যা না করে বরং তোমরা নিজের মধ্যে তাকওয়া সৃষ্টির চিন্তা করা উচিত৷

২৮) তুমি আমাকে মেরে ফেলার জন্য হাত উঠালেও আমি তোমাকে মেরে ফেলার জন্য হাত উঠাবো না৷ আমি বিশ্ব জাহানের প্রভু আল্লাহকে ভয় করি৷
এর অর্থ এ নয় যে, তুমি আমাকে হত্যা করতে এলে আমি হাত বেঁধে তোমার সামনে নিহত হবার জন্য তৈরী হয়ে যাবো এবং নিজের প্রতিরক্ষা করবো না৷ বরং এর অর্থ হচ্ছে, তুমি আমাকে হত্যা করতে চাও করো কিন্তু আমি তোমাকে হত্যা করতে চাইবো না ৷ তুমি আমাকে হত্যা করার জন্য কলা-কৌশল অবলম্বন ও ফন্দি ফিকির করতে চাও, তা করতে পারো, এ ব্যাপারে তোমরা পূর্ণ ইখতিয়ার আছে৷ কিন্তু তুমি আমাকে হত্যা করার প্রস্তুতি চালাচ্ছো, একথা জানার পরও আমি তার আগেই তোমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করবো না৷ এখানে এতটুকু কথা অবশ্যি মনে রাখতে হবে, কোন ব্যক্তির নিজেকে অবলীলায় হত্যাকারীর সামনে পেশ করে দেয়া এবং জালেমের আক্রমণ প্রতিহত না করা কোন সওয়াবের কাজ নয়৷ তবে যদি আমি জেনে থাকি, কোন ব্যক্তি আমাকে হত্যা করার ফিকিরে লেগে আছে এবং এ জন্য ওঁত পেতে বসে আছে আর এরপরও আমি তাকে হত্যা করার চিন্তা না করি এবং প্রথম অন্যায় আক্রমণ আমার পক্ষ থেকে না হয়ে বরং তার পক্ষ থেকে হোক, এটাকে অগ্রাধিকার দিই, তাহলে এতে অবশ্যি সওয়াব আছে৷ এটিই ছিল আদম আলাইহিস সালামের সত ছেলেটির বক্তব্যের অর্থ ও মূল কথা৷
২৯) আমি চাই, আমার ও তোমার পাপের ভার তুমি একাই বহন করো৷ এবং তুমি জাহান্নামী হয়ে যাও৷ জালেমদের জুলুমের এটিই সঠিক প্রতিফল৷
অর্থাত আমাদের পরস্পরকে হত্যা করার প্রচেষ্টায় আমাদের দু’জনের গুনাহগার হবার পরিবর্তে আমি বরং ভাল মনে করছি আমাদের উভয়ের গুনাহ তোমার একার ভাগে পড়ুক৷ তোমার নিজের পক্ষ থেকে হত্যার উদ্যোগের গুনাহ এবং তোমরা আক্রমণ থেকে আমার আত্মরক্ষার চেষ্টার কারণে তোমার যা ক্ষতি হয় তার গুণাহও৷
৩১) তারপর আল্লাহ একটি কাক পাঠালেন৷ সে মাটি খুঁড়তে লাগলো, যাতে তাকে দেখিয়ে দেয় তার ভাইয়ের লাশ কিভাবে লুকিয়ে ফেলবে৷ এ দৃশ্য দেখে সে বললো, হায় আফসোস! আমি এ কাকটির মতোও হতে পারলাম না যাতে নিজের ভাইয়ের লাশটিও লুকাতে পারি৷ এরপর নিজের কৃতকর্মের জন্য সে খুবই অনুতপ্ত হলো৷

এভাবে মহান আল্লাহ একটি কাকের মাধ্যমে আদমের বিভ্রান্ত ও অসত পুত্রটিকে তার মূর্খতা ও অজ্ঞতা সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন ৷ আর একবার যখন সে নিজের মনের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করার সুযোগ পেয়েছে তখন তার লজ্জা কেবলমাত্র এতটুকু বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি যে, সে লাশ লুকাবার কৌশল বের করার ব্যাপারে কাকের থেকে পেছনে থেকে গেলো কেন বরং তার মনে এ অনুভূতিও জন্ম নিয়েছে যে, নিজের ভাইকে হত্যা করে সে কত বড়ই না মূর্খতার পরিচয় দিয়েছে ৷ পরবর্তী বাক্য "সে নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হলো"-থেকে এ অর্থই সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে৷
-সূরা আল মায়িদাহ আয়াত ২৭-৩১
প্রথম মানুষ এবং প্রথম নবী হযরত আদম (আ.) আর প্রথম মানবী হযরত হওয়া (আ.) মানব জাতির আদি পিতা এবং আদি মাতা হলেন হযরত আদম এবং হযরতহাওয়া (আ.) হযরত আদম এবং হাওয়া (আঃ)-এর এক পুত্রের নাম ছিল হাবিল এবং অন্য এক পুত্রের নাম ছিল কাবিল। কাবিল তার সহোদর হাবিলকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছিলেন। আর এ হত্যাকান্ড ছিল পৃথিবীতে আদম সন্তানের মধ্যে প্রথম হত্যাকান্ড আর এ হত্যাকান্ডের শিকার হলেন আদম পুত্র হাবিল। এ কারণে পৃথিবীর প্রথম মৃত মানুষ হলেন হাবিল এবং আদম সন্তানের মধ্যে প্রথম হত্যাকারী কাবিল। হাবিল এবং কাবিলের ঘটনা মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনের সূরা মায়িদার ২৭-৩১নং আয়াতে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া ও বহু বিশুদ্ধও শক্তিশালী সনদ সম্পন্ন হাদীসে ও এঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে। যখন হযরত আদম ও হাওয়া (আ.) পৃথিবীতে আগমন করেন এবং তাদের সন্তান প্রজনন ও বংশ বিস্তার শুরু হয় তখন কেবল ভাই ও বোন ছাড়া আদমের সন্তানদের মধ্যে অন্য কোন লোক ছিলনা। মহান রাব্বুল আলামীন বাস্তব প্রয়োজনে আদম (আ.)-এর শরিয়াতে হাওয়া (আ.)-এর এক গর্ভের ছেলে ও অন্য গর্ভের মেয়ের মধ্যখানে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন বৈধ করে দিলেন। কাবিলের সহোদরা একটি বোন ছিল পরমা সুন্দরী এবং হাবিলের সহোদরা একটি বোন ছিল কুশ্রী। আদম (আ.) এর শরিয়তের বিধান অনুসারে কাবিলের সহোদরা সুন্দরী বোনটিকে হাবিল বিবাহ করবে এবং হাবিলের সহোদরা কুশ্রী বোনটিকে কাবিল বিবাহ করবে। কিন্তু কাবিল আদম (আ.) এর শরিয়তের বিধান লঙ্গন করে তার সহোদরা সুন্দরী বোনটিকে বিবাহ করতে চাইল। যে বোনকে নিয়ম অনুসারে হাবিল বিবাহ করতে পারে। হযরত আদম (আ.) তাঁর শরিয়তের বিধান বলবত রাখার নিমিত্তে কাবীলের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন। এতে কাবীল অসন্তুষ্ট হয়ে হাবীলের শত্রুতে পরিণত হল এবং সিদ্ধান্ত নিল যে, আমার সহজাত ভগিনীকেই আমার সাথে বিবাহ দিতেই হবে। অতঃপর হযরত আদম (আ.) এ বিষয়টার সুন্দর সমাধানের জন্য হাবিল ও কাবিলকে আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে কুরবানী পেশ করার পরামর্শ দিলেন। আর বলে দিলেন যে, যার কুরবানী গ্রহণযোগ্য হবে সে সুন্দরী মেয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে অবদ্ধ হবে। হযরত আদম (আ.)-এর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, সত্যপন্থীর কুরবানীই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। সে সময়ের কুরবানী গৃহিত হওয়ার নিদর্শন এই ছিল যে, আকাশ থেকে একটি অগ্নি শিখা এসে কুরবানীর বস্তুকে ভস্মিভূত করে উধাও হয়ে যেত। যে কুরবানী অগ্নি ভস্মিভূত করত না, তা কবুল হয়নি বলে ধরে নেয়া হত। হাবিল ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি পশু পালন করতেন। তিনি একটি উতকৃষ্ট দুম্বা কুরবানীর জন্য পেশ করলেন। আর কাবিল কৃষি কাজ করতেন বলে তিনি কিছু শস্য, গম ইত্যাদি কুরবানীর জন্য পেশ করলেন। অতঃপর নিয়মানুযায়ী আকাশ থেকে অগ্নিশিখা এসে হাবিলের কুরবানীটি ভস্মিভূত করে দিল। পক্ষান্তরে কাবিলের কুরবানীর বস্তু গুলো যেমন ছিল তেমনই পড়ে থাকল। এতে কাবিলের দুঃখ-ক্ষোভ আর বহুগুণে বেড়ে গেল। সে অন্তর্জ্বালায় জ্বলতে জ্বলতে তার ভাইকে লক্ষ্য করে ঘোষনা দিল, ‘আমি অবশ্যই তোমাকে হত্যা করব’। হাবীল তখন ক্রোধের জবাবে ক্রোধ প্রদর্শন না করে অত্যন্ত ভদ্র ও মার্জিত ভাষায় বললেন, ‘যদি তুমি আমাকে হত্যা করার জন্য আমার দিকে হস্ত প্রসারিত কর, তাহলে আমি তোমাকে হত্যা করার জন্য তোমার দিকে হস্ত প্রসারিত কবর না। কারণ আমি বিশ্ব জগতের পালন কর্তা আল্লাহকে ভয় করি।’ এসব কথায় কাবিলের অন্তর্জ্বালা নিবৃত হয়নি। অবশেষে সে হাবিলকে হত্যা করেই বিভিন্ন কিতাবে উল্লেখ আছে যে, তখন হাবিল ও কাবিলের বয়স ছিল ত্রিশের ভিতরে। হযরত আদম (আ.) পুত্রদ্বয়কে কুরবানী করার নির্দেশ দিয়ে হজ্জে চলে যান। বর্ণিত আছে যে, হযরত আদম (আ.) তার আবাসস্থল ভারত উপমহাদেশ থেকে পায়ে হেটে চল্লিশ বার হজ্জব্রত পালন করেছেন। হজ্জে যাওয়ার সময় তিনি তাঁর পরিবার বর্গ ও সন্তানদের দেখাশোনা করার জন্য পাহাড়কে অনুরোধ করেন, কিন্তু পাহাড় এতে অপারগতা প্রকাশ করে। অথচ কাবিল এ দায়িত্ব গ্রহণ করে। হযরত আদম (আ.) হজ্জ থেকে ফিরে এসে যখন এ হত্যাকান্ডের খবর পেলেন তখন তিনি খুবই মর্মাহত হলেন। অতঃপর হাওয়া (আ.)-এর গর্ভে হযরত শীষ (আ.) জন্মগ্রহণ করেন। আল্লামা ইমাম সা’লাবী (রহ.) উলেখ করেন, যখন কাবিল ক্রোধের বশবর্তী হয়ে হাবিলকে হত্যা করল, তখন সে জানতনা যে, কিভাবে লাশ দাফন করতে হয়। সে আপন ভাইয়ের লাশ কাপড়ে পেঁচিয়ে চল্লিশ দিন পর্যন্ত নিজের পিঠে নিয়ে এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করতে থাকে। কারণ এটা ছিল বনী আদমের মধ্যে পৃথিবীতে প্রথম হত্যাকান্ড। আর হাবিল ছিলেন পৃথিবীর প্রথম মৃত মানুষ। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, এক বছর পর্যন্ত সে এভাবে ঘুরতে থাকে। এদিকে হাবিলের লাশ পঁচে গলে দুর্গন্ধ ছুটে যাচ্ছিল। পশু পাখীরা কাবীলের উপর হামলে পড়ছিল। শব দেহ দাফন করার পদ্ধতি জানা না থকায় কাবিল মহা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল যে, এ লাশ সে কি করবে। পরিশেষে আল্লাহ তায়ালা একটা কাক প্রেরণ করেন। সে কাকটি অপর একটি কাকের সাথে লড়াই করে তাকে মেরে ফেলে এবং নিজের ঠোঁট দ্বারা যমীনে গর্ত করে তাতে মৃত কাকটি রেখে তাতে মাটি চাপা দেয়। এটা দেখে কাবিল লাশ দাফন করার পদ্ধতি শিখতে পারে এবং সে পদ্ধতিতে আপন ভ্রাতার লাশ দাফন করে। কেউ কেউ বলেন, হাবীলকে হত্যা করার পর কাবীলের দেহ কালো হয়ে গিয়েছিল এ কারণে সে লজ্জিত হয়েছিল। কাবীল আপন ভ্রাতাকে হত্যা করার পর পিতার ভয়ে ও পরিবারের অন্যান্য স্বজনদের তিরস্কারের কারণে সে ইয়ামানের দিকে চলে যায়। সেখানে কিছুটা মানষিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় বসবাস করতে থাকে। একসময় শয়তান তাকে এসে বলল, আগুন তোমার কুরবানী গ্রহণ করে নাই, আগুন তোমার উপর ক্রুদ্ধ। সুতরাং তুমি আগুনকে সন্তুষ্ট কর। এভাবে সে দুনিয়াতে প্রথম আগুনের পুজা করা শুরু হলো। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, হাবিলকে হত্যার কারণে কাবিল চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আল্লামা কাজী ছানাউলাহ পানিপথী (রহ.) বলেন যে, কাবিল দুনিয়াতে যতদিন ছিল ততদিন চিন্তিত ও ঘৃণিত অবস্থায় বেঁচে ছিল। আর পরকালে তার ঠিকানা জান্নাতের পরিবর্তে জাহান্নামে হবে। ফলে তার দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জাহানই বরবাদ হয়েছে। বর্ণিত আছে যে, এ ঘটনার পর হযরত আদম (আ.) ১০০ বছর জীবিত ছিলেন, কিন্তু এরপর তার মুখে আর কেউ হাসি দেখতে পায়নি। আর হাবীলকে হত্যা করার পর কাবীলের দেহ কালো বর্ণ ধারণ করে অথচ হত্যাকান্ডের পূর্বে সে ছিল গৌরবর্ণের। আর কাবিল কোন আদম সন্তানের প্রথম হত্যাকারী হওয়ার কারণে তার পর পৃথিবীতে যত হত্যাকান্ড সংঘটিত হবে; তার প্রত্যেকটির একটি পাপের অংশ তার ভাগ্যে পৌছতে থাকবে।
সূত্রঃ আল কুরআন ও বিবিধি