এক অমাবষ্যার রাতের গভীরে আমি আমার বিবেকের দিকে ফিরে তাকালাম। ওকে বলালাম, “জেগে আছো নাকি মরে গেছ।” ও কিছুই বল্লো না। কারণ আমি জানি নিত্যদিন আমার বিবেক মৃত্যুর দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে!
আমি দামী হোটেলে খেতে যাচ্ছি। এখানে যে টাকা আমি খরচ করবো সেটা ওই হোটেলের দারোয়ান যে দরজা খুলে তার হ্যান্ডল ধরে আছে আমাকে ভেতরে নেয়ার জন্য- আমার টাকা ওর এক মাসের বেতনের সমান হবে হয়তো। আর আমি নিমেষেই তা্ উড়িয়ে দিচ্ছি!
আমার বিবেক এখানে একবার মরলো।
আমার বিবেক এখানে একবার মরলো।
বাজারে গেলাম। দেখলাম নিত্যদিনের মত আমার ছেলের বয়সী আজও ওই “পিচ্চি” যে আমাকে রোজ্ আলু পটল মেপে দেয়। আজও ও হেসে হেসে সেই কাজটিই করলো। মনে মনে বিড় বিড় করি আমার ছেলের মত ওর স্কুলে যাওয়ার কথা। আমার উদাস দৃষ্টি ফেরালাম অন্য দিকে। “পিচ্চি” বল্লো, স্যার! কি ভাবছেন। বল্লাম “না রে! কিচ্ছু না।”
আমার বিবেক এখানে একবার মরলো।
আমার বিবেক এখানে একবার মরলো।
দামী ডিজাইনের ড্রেস পরছি। অনেক দাম। এ টাকা কেন খরচ করলাম, মনকে শুধাই। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি জীর্ণ পোশাক পরা বেআব্রু ভিখারীনী হেঁটে হেঁটে রাস্তা পার হচ্ছে। নিজের আব্রু ঢাকবার ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছে সে। দেখেও না দেখার ভান করে জানালাটা বন্ধ করে দিই। পোশাকগুলো আর পরতে ইচ্ছে করলো না।
আমার বিবেক এখানে একবার মরলো।
আমার বিবেক এখানে একবার মরলো।
নিজের ছেলে মেয়ের জন্য দামী খেলনা কিনে সন্ধ্যায় বাড়ী ফিরছি। দেখলাম এক দঙ্গল ছেলে ক্ষুধাতুর চোখ নিয়ে রাস্তরা নিওন সাইনের নীচে বসে কম দামী খেলনা বিক্রি করছে। আর আমি অনেক দাম দিয়ে নিজের ছেলে মেয়ের জন্য দামী খেলনা নিয়ে ফিরছি। নিজের বিবেককে প্রবোধ দিই। নজরুলের কবিতা মনে হয়,
“ক্ষুধাতুর শিশু চায়না স্বরাজ, চায় দুটি ভাত একটু নুন
তিন দিন হতে খায়ননিকো বাছা
কচি পেটে তার জ্বলে আগুন।”
তিন দিন হতে খায়ননিকো বাছা
কচি পেটে তার জ্বলে আগুন।”
আবারো নচিকেতার “আদিত্য সেনের” কথা মনে হয়-
আদিত্য সেন এক রাজনীতিবিদ
কলোনির ঘরে যার বাস
আদিত্য সেন এক সত মানুষ
আধপেটা খেয়ে বারোমাস
আদিত্য সেন পিঠ সোজা রাখেন
পার্টির হোলটাইমার
আধপেটা খেয়ে থাকবেন তবু
মুদির দোকানে নেই ধার
আদিত্য সেন আদিত্য সেন
সূর্যের মত যার নাম
আদিত্য সেন আদিত্য সেন
আজ প্রয়োজন বড় আপনার।
আদিত্য সেন ভাঙে প্রোমোটার রাজ
আদিত্য পুকুর বাঁচায়
আদিত্য সেন যেন সয়ং লেনিন
বিপদকে আঙুলে নাচায়
আদিত্য সেন বলে স্পষ্ট কথা
তত্বের কী বা প্রয়োজন
মানুষের প্রয়োজনে যিনিই দাঁড়ান
তার আগে কি তত্ব কথন
আদিত্য সেন আদিত্য সেন
সূর্যের মত যার নাম
আদিত্য সেন আদিত্য সেন
আজ প্রয়োজন বড় আপনার।
আদিত্য সেন লাল স্বপ্ন দ্যাখেন
সকলের সমান অধিকার
আদিত্য মানষের খিদের শমন
যার ঘরেতে ঘোর অনাহার
আদিত্য তার শিশু সন্তানকে
লেনিনের গল্প শোনান
’উই শেল ওভারকাম সামে ডে’
দৃঢ়তার সাথে যিনি গান
আদিত্য সেন আদিত্য সেন
সূর্যের মত যার নাম
আদিত্য সেন আদিত্য সেন
আজ প্রয়োজন বড় আপনার।
ঔযে দূরে যাকে দেখছো বসে
পাত্র হাতে ভিক্ষার
বহিষ্কৃত তিনি পার্টি থেকে
আদিত্য সেন নাম তার
অনেক অনেক টাকা তছরুপের
অভিযোগ তার মাথায়
তবে কেন অদিত্য ভিক্ষা করেন
পাঁচ বছর আমার পাড়ায়
রাজনীতি করতেন তার সাথে যারা
গাড়ি বাড়ি করে তারা সত
রাজনীতিতে নেই সততার ঠাই
একথার নেইকো দ্বিমত
তবুও আদিত্য ভোলেনি কিছুই
আমরা প্রতীক্ষায়
এই নপুংশকের রাজনীতি ছেড়ে
কবে আপনার হবে উদয়
আদিত্য সেন আদিত্য সেন
সূর্যের মত যার নাম
আদিত্য সেন আদিত্য সেন
আজ প্রয়োজন বড় আপনার।
আদিত্য সেন এক রাজনীতিবিদ
কলোনির ঘরে যার বাস
আদিত্য সেন এক সত মানুষ
আধপেটা খেয়ে বারোমাস
আদিত্য সেন পিঠ সোজা রাখেন
পার্টির হোলটাইমার
আধপেটা খেয়ে থাকবেন তবু
মুদির দোকানে নেই ধার
আদিত্য সেন আদিত্য সেন
সূর্যের মত যার নাম
আদিত্য সেন আদিত্য সেন
আজ প্রয়োজন বড় আপনার।
আদিত্য সেন ভাঙে প্রোমোটার রাজ
আদিত্য পুকুর বাঁচায়
আদিত্য সেন যেন সয়ং লেনিন
বিপদকে আঙুলে নাচায়
আদিত্য সেন বলে স্পষ্ট কথা
তত্বের কী বা প্রয়োজন
মানুষের প্রয়োজনে যিনিই দাঁড়ান
তার আগে কি তত্ব কথন
আদিত্য সেন আদিত্য সেন
সূর্যের মত যার নাম
আদিত্য সেন আদিত্য সেন
আজ প্রয়োজন বড় আপনার।
আদিত্য সেন লাল স্বপ্ন দ্যাখেন
সকলের সমান অধিকার
আদিত্য মানষের খিদের শমন
যার ঘরেতে ঘোর অনাহার
আদিত্য তার শিশু সন্তানকে
লেনিনের গল্প শোনান
’উই শেল ওভারকাম সামে ডে’
দৃঢ়তার সাথে যিনি গান
আদিত্য সেন আদিত্য সেন
সূর্যের মত যার নাম
আদিত্য সেন আদিত্য সেন
আজ প্রয়োজন বড় আপনার।
ঔযে দূরে যাকে দেখছো বসে
পাত্র হাতে ভিক্ষার
বহিষ্কৃত তিনি পার্টি থেকে
আদিত্য সেন নাম তার
অনেক অনেক টাকা তছরুপের
অভিযোগ তার মাথায়
তবে কেন অদিত্য ভিক্ষা করেন
পাঁচ বছর আমার পাড়ায়
রাজনীতি করতেন তার সাথে যারা
গাড়ি বাড়ি করে তারা সত
রাজনীতিতে নেই সততার ঠাই
একথার নেইকো দ্বিমত
তবুও আদিত্য ভোলেনি কিছুই
আমরা প্রতীক্ষায়
এই নপুংশকের রাজনীতি ছেড়ে
কবে আপনার হবে উদয়
আদিত্য সেন আদিত্য সেন
সূর্যের মত যার নাম
আদিত্য সেন আদিত্য সেন
আজ প্রয়োজন বড় আপনার।
এর পরও আমার বিবেক এখানে একবার মরলো।
গতকাল কাজের মেয়েটি আসেনি আমার বাড়ীতে। পাঠিয়েছে ওর মেয়েকে তার স্কুল কামাই করে। বেসিন ও সিঙ্কে তাকিয়ে দেখি অনেক ময়লা আর এঁটো বাসন-কোসন। নিজেকে বললাম, কাজের মেয়ে আসেনি তো কি হয়েছে- নিজেই তো করতে পারতে? কাজের মেয়ের ছোট মেয়েটার স্কুল কামাই হলো কিছু ভাবলে না। তোমার ছেলে মেয়ের বেলায় হলে কি হতো?
আমার বিবেক এখানে একবার মরলো।
আমার বিবেক এখানে একবার মরলো।
যখন কোন হত্যাকান্ড বা ধর্ষনের খবর শুনি আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাই যে আমার কেউই বা ছেলে মেয়েরা ঘটনার শিকার হয় নি।
কিন্তু যে মরলো বা ধর্ষনের শিকার হলো সে তো কারো ছেলে বা মেয়ে!
আমি আয়নায় নিজের মুখ দেখতে যাই। আবার আয়না থেকে নিজের মুখ ফিরাই।
আমার বিবেক এখানে একবার মরলো।
কিন্তু যে মরলো বা ধর্ষনের শিকার হলো সে তো কারো ছেলে বা মেয়ে!
আমি আয়নায় নিজের মুখ দেখতে যাই। আবার আয়না থেকে নিজের মুখ ফিরাই।
আমার বিবেক এখানে একবার মরলো।
জাতি ধর্ম নির্বিশেষে আজ-কাল হানাহানি লেগেই আছে। নিজের দেশ নিয়ে ভাবি। রাজনীতিবিদদের নিয়ে ভাবি। এদের কারণে দেশটি উচ্ছন্নেই যাচ্ছে। কিন্তু আমারও যে দায় আছে সেটা ভুলে গেছি।
আমার বিবেক এখানে একবার মরলো।
আমার বিবেক এখানে একবার মরলো।
পরিবেশ দূষণে ধুঁকছে আমার শহর। শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়াই কষ্টকর হয়েছে। নিত্য দিনই আমি আমার গাড়ী নিয়ে অফিস করছি। জনতার কাতারে এসে চড়ছিনা বাসে বা রিকশায় বা স্কুটারে। আমি আরামেই আছি। কিন্তু আমার একটা গাড়ী কি কোন ব্যতিক্রম কিছু এনে দিতে পারবে?
আমার বিবেক এখানে একবার মরলো।
আমার বিবেক এখানে একবার মরলো।
অমাবষ্যার রাতের গভীর আধাঁরে উদাস দৃষ্টি নিয়ে তাকাই। স্পষ্ট করে দেখা যায় দূর আকাশের ছায়াপথ। খেয়াল করি রাতের কালো বেনারসি শাড়ীতে জড়োয়া তারার কাজ। খুবই চমতকার সে কারুকাজ। ঘুম অসেনা। বিবেকের কাছে হেরেই গেছি আমি।
আবারো বিবেককে ডাকি। ও বলে জেগে আছি।
আঁতকে উঠি।
আমি কি নিজের হাতে নিজের বিবেককে প্রতিদিনই গলা টিপে মারছি না?
আবারো বিবেককে ডাকি। ও বলে জেগে আছি।
আঁতকে উঠি।
আমি কি নিজের হাতে নিজের বিবেককে প্রতিদিনই গলা টিপে মারছি না?
No comments:
Post a Comment