প্রতি ৪০ সেকেন্ডে
পৃথিবীতে একজন ব্যক্তি আত্মহত্যা করে। যারা নিজের জীবন এভাবে শেষ করে দেন এবং
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা পুরুষ। নিজেদের সমস্যা নিয়ে কথা বলা অথবা কোন বিশেষজ্ঞের
কাছে যাওয়ার প্রবণতা সম্ভবত তাদের কম।
এক্ষেত্রে জেনে নেয়া
জরুরি যে পাঁচটি বিষয় নিয়ে পুরুষদের কথা বলা দরকার।
১. নিঃসঙ্গতা নিয়ে কথা বলুন
বিবিসি নিজে ওয়েলকাম কালেকশন নামে একটি সংস্থার সাথে নিঃসঙ্গতা নিয়ে জরিপ চালিয়েছিল। তাতে দেখা গেছে ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি নিঃসঙ্গতা অনুভব করে। খুব দীর্ঘ সময়ের নিঃসঙ্গতা একজন মানুষের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।
বিবিসি নিজে ওয়েলকাম কালেকশন নামে একটি সংস্থার সাথে নিঃসঙ্গতা নিয়ে জরিপ চালিয়েছিল। তাতে দেখা গেছে ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি নিঃসঙ্গতা অনুভব করে। খুব দীর্ঘ সময়ের নিঃসঙ্গতা একজন মানুষের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।
গবেষণায় দেখা গেছে, সহজে
নিরাময় হয় না শরীরে এমন রোগের জন্ম দেয় নিঃসঙ্গতা। তা মানুষের মধ্যে বেপরোয়া
আচরণের জন্ম দেয়।
একাকীত্বের সাথে
স্মৃতিভ্রংশ জনিত রোগেরও সম্পর্ক রয়েছে।
২০১৭ সালে অক্সফোর্ড
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা বলছে, বিশেষ করে পুরুষদের জন্য এই নিঃসঙ্গতা থেকে
বেরিয়ে আসা মুশকিল।
এই গবেষণার প্রধান রবিন
ডানবার বলছেন, যোগাযোগ ও বন্ধুত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে
বিশাল ফারাক তারা দেখতে পেয়েছেন।
পুরুষরা নিজেদের একাকীত্ব
স্বীকারও করেন না। ২০১৭-১৮ সালে যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, 'একা বোধ
করি না' এই কথাটিই বরং পুরুষরা মেয়েদের তুলনায় বেশি বলেন।
২. কান্না ও পুরুষালী ধারনা
সমাজের প্রচলিত একটি কথাই রয়েছে যে 'ছেলেদের কাঁদতে নেই'।
সমাজের প্রচলিত একটি কথাই রয়েছে যে 'ছেলেদের কাঁদতে নেই'।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা
প্রতিষ্ঠান ইউগভ-এর ২০১৮ সালের এক হিসেব অনুযায়ী দেশটির ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী
পুরুষদের ৫৫ শতাংশ মনে করেন কান্না পুরুষের আচরণের সাথে যায় না বা কান্না
পুরুষালী বিষয় নয়।
আত্মহনন প্রবণতায় ভোগে
এমন মানুষদের সহায়তা করে অস্ট্রেলিয়ান দাতব্য প্রতিষ্ঠান লাইফলাইন। সংস্থাটির
নির্বাহী পরিচালক কোলম্যান ওড্রিসকল বলছেন, "আমরা খুব ছোটবেলা থেকে ছেলেদের
এমনভাবে তৈরি করি যেন তাদের আবেগ প্রকাশ করতে নেই। সমাজ সেভাবেই ছেলেদের বড় করে
তোলে। তাদের ধারনা দেয়া হয় যে আবেগ প্রকাশ করা দুর্বলতার লক্ষণ।"
অথচ বহু গবেষণায় দেখা
গেছে নিজের মন হালকা করার জন্য কান্না খুব কাজে আসে।
৩. পরিবারের জীবিকার প্রধান দায়িত্ব পুরুষের জন্য বড় চাপ
যুক্তরাজ্যে এক গবেষণায় দেখা গেছে ৪২ শতাংশ পুরুষরা মনে করে তাদের নারী সঙ্গীদের তুলনায় তাদের আয় বেশি হওয়া উচিত।
যুক্তরাজ্যে এক গবেষণায় দেখা গেছে ৪২ শতাংশ পুরুষরা মনে করে তাদের নারী সঙ্গীদের তুলনায় তাদের আয় বেশি হওয়া উচিত।
সেরকম একজন নাইজেরিয়ান
ফুটবলার অলুমাইড ডরুযাইয়ে। তিনি বলছেন, "আমি দেখেছি আমার বাবা ছিলেন
পরিবারের প্রধান রুটির যোগানদাতা। দিনরাত খাটতেন। আমিও সেরকমই হয়েছি। যেকোনভাবেই
হোক আমাকে অর্থ উপার্জন করতে হয়েছে কারণ আমাকে সেই পুরুষের ভূমিকাটি নিতে
হয়েছে।"
পরিবারের সবার রুটির
যোগান দেয়া পুরুষের দায়িত্ব এই ধারনার কারণে পুরুষরা অনেকেই বাড়তি চাপের মধ্যে
থাকেন।
পুরুষদের জন্য এই
দায়িত্ব বাড়তি বোঝা বলে মনে করা হয়। অর্থনৈতিক বোঝা মানসিক স্বাস্থ্যের উপর
প্রভাব ফেলে।
বেকারত্বের সাথে
আত্মহত্যার সম্পর্ক রয়েছে বলে ২০১৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে।
৪. সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ও বাস্তবতা
গবেষকরা বলছেন, মানসিক
স্বাস্থ্যের উপর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম সম্ভবতঃ খুব গভীর প্রভাব ফেলছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা বলছে সামাজিক
যোগাযোগের মাধ্যমে আমরা যত বেশি সময় কাটাই তাতে আমরা আরও বেশি নিঃসঙ্গ ও বিষণ্ণ
হয়ে পড়ি।
এই গবেষণার লেখক মেলিসা
হান্ট বলছেন, "সামাজিক যোগাযোগের ব্যবহার কমিয়ে দিলে সাধারণত বিষণ্ণতা ও
নিঃসঙ্গতার মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসে।"
কিন্তু সামাজিক যোগাযোগের
মাধ্যমে এমন কি আছে যা আসলে ক্ষতিকর?
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের
মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক অস্কার ইয়াবারা বলছেন, "সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে যা
দেখা যায় তা খুব কম ক্ষেত্রেই বাস্তব জীবনের প্রতিফলন। আপনি এতে ঢুকে যা দেখছেন
তা সচরাচর খুবই বাছাই করা বিষয়াদি। কিন্তু মানুষ তবুও নিজের জীবনের সাথে তার
তুলনা করে।"
৫. নিজের শরীর সম্পর্কে ধারনা
যুক্তরাজ্যে গত বছর লাভ
আইল্যান্ড নামে টেলিভিশনে একটি রিয়ালিটি শোতে অংশ নিয়ে কিছুটা খ্যাতি অর্জন
করেছিলেন এমন একজন জশ ডেনজেল।
তিনি বলছেন, এই অনুষ্ঠানে
অংশ নেয়ার আগে তিনি সারাদিন জিমে কাটাতেন। তারপরও আয়নায় নিজের দিকে তাকাতেন এবং
নিজের শরীর নিয়ে সংকোচ বোধ করতেন।
তিনি বলছেন, "এখনো
সৈকতে হয়ত আমার পাশ দিয়ে দারুণ সিক্স প্যাক শরীর নিয়ে কেউ হেঁটে যাচ্ছে, আমি
তখন নিজের দিকে তাকিয়ে নিজেকেই খুব হীন পুরুষ মনে হয়েছে।"
তরুণ প্রজন্মের মধ্যে
একটি দারুণ ফিগার নিয়ে এখন অনেকেই খুব চিন্তা করেন। তাই স্থূল হয়ে যাওয়া বা
শরীরের কোন খুঁতের সাথেও মানসিক স্বাস্থ্যের যোগসূত্র রয়েছে বলে মনে করা হয়।
এই সকল বিষয় নিয়ে
পুরুষদের খোলাখুলি আলাপ করাকেই এখন উতসাহিত করা হচ্ছে।
নিজের আবেগকে দূরে ঠেলে না দিয়ে,
বোতল বন্দি করে না রেখে তার সংস্পর্শে এলেই বরং মানসিক স্বাস্থ্যের উপকার হয়- সেই
বার্তা দেয়া হচ্ছে পুরুষদের।সূত্র: বিবিসি
No comments:
Post a Comment