Effectiveness of story-telling to your children
২০১০এর দিকে বিবিসিতে এ রকম একটি লেখা পড়েছিলাম। সেটা ছিল লুলাবী ও এর উপকারীতা নিয়ে।(Lullaby & its usefulness)। সেখানে একটা জিনিস লক্ষ্যণীয় ছিল যে লুলাবী বা ঘুমপাড়ানী (Cradle song)গানের কথাগুলো গোটা দুনিয়াতে একই। কেবল ভাষাগত পার্থক্যটা এখানে। গল্পের থীম সবই এক। এটা আরো জেনেছিলাম প্রখ্যাত সাহিত্যিক ড. আশরাফ সিদ্দিকী স্যারের লেখা থেকে। অরো আগে ড. মু. শহীদুল্লাহ স্যারের পল্লী সাহিত্য নামের গল্প থেকে। পল্লী সাহিত্য লেখাটি ছিল খুবই সমৃদ্ধ যা এখনো আমাকে বিপুলভাবে আন্দেলিত করে।
শিশুকে গল্প শোনানোর উপকারিতা যে রয়েছে তা প্রথম টের পাই আমাদের মেয়ে মুমুকে আর ছেলে রোজেনকে যখন শোবার সময় গল্প শুনাতাম। ওরা ছোট সময় গল্প শুনে শুনে, কবিতা শুনে শুনে মুখস্ত বলতো অমাকে। মুমু সব ছড়া বা গল্প এখনো আমাকে বলতে পারে।
আজকে সেই রকম একটি উপস্থাপনা যা পেয়েছি কোরা.কম থেকে।
শিশুকে গল্প শোনানোর উপকারিতা
১. শব্দভান্ডার বৃদ্ধি পাবে: Vocabulary increased
অনুকরণ, অনুসরণ করেই নানা কিছু শিখে নেয় শিশু। আপনি যখন ওকে গল্প পড়ে শোনাবেন, সেটাও সে অনুকরণ করারই চেষ্টা করবে। আপনি যে ভাষার প্রয়োগ করছেন, মিষ্টি মিষ্টি যে শব্দগুলো ওর সামনে উচ্চারণ করবেন, সেগুলোই আত্মস্থ করবে ও। গল্পের বইয়ের রুচিশীল ও শিশুদের বোঝার উপযোগী ভাষাই ধীরে ধীরে ওর মনে শব্দের ভান্ডার তৈরি করে দেবে!
২. শোনার দক্ষতা বৃদ্ধি পায়: Increase ability of learning
ছোট্ট শিশুরা মোটেই কিছু শুনতে ভালোবাসে না। তার চেয়ে দুষ্টুমি করা, সদ্য শেখা শব্দগুলো আওড়ে যেতেই বেশি স্বচ্ছন্দ তারা। আপনি যদি রোজ নিয়ম করে গল্প শোনান ওকে, তাহলে গল্পের প্রতি আগ্রহ তৈরি হবে ওর এবং মন দিয়ে কিছু শোনার দক্ষতাও তৈরি হবে। এরই সাথে কোনও কিছু সহজে বোঝার ক্ষমতাও তৈরি হবে ওর।
৩. সৃজনশীলতা ও কল্পনাশক্তি বাড়ায়: Increase creativity and imagination
গল্প শুনতে শুনতেই মনে মনে কল্পনার দুনিয়া তৈরি করতে থাকে শিশুর মন। শোনার সাথে সাথেই একটা ঘটনা মনে মনে এঁকে ফেলতে চায় সে। এভাবে গল্পের দৃশ্য, প্লট সবই ছকে যায় ওর মনে। যার ফলে ধীরে ধীরে বিকাশ হয় কল্পনাশক্তির এবং তারই সাথে বিকাশ ঘটে শিশুর সৃজনশীলতারও।
৪. স্মৃতিশক্তি ধারালো হয়: Sharpens memory
সন্তানকে গল্প শোনানোর মাধ্যমে ওর কতটা মনে রাখার ক্ষমতা তৈরি হয়েছে, ওর স্মৃতিশক্তিই বা কতটা প্রখর হচ্ছে, তাও যাচাই করতে পারবেন আপনি। আজ একটা গল্প শুনিয়ে তার মানে ভালো করে বুঝিয়ে দিন। কিছুদিন যাক, পুঁচকেটাকেই বলুন সেই গল্পটা আপনাকে শোনাতে, মানে বোঝাতে!
৫. প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা আরও সহজ হবে: Institutional learning become easier
অনেক বাচ্চারই মুখস্থ করার ক্ষমতা থাকে প্রবল। কোনও কিছু না বুঝেই সেটা ঝরঝরে মুখস্থ করে ফেলে পরীক্ষায় দারুণ ফল সে করে ফেলে। কিন্তু আপনার সন্তানের যদি ছোট থেকেই শোনার মানসিকতা ও অভ্যাস থাকে তা হলে আগামীদিনে স্কুলের পড়া আরও সহজ হয়ে যাবে ওর কাছে। যা-ই পড়ুক না কেন, সেটা অনেক সহজ হবে তার কাছে। যে কোনও জিনিসই সহজে রপ্ত করতে পারবে সে!
৬. যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি: Communication skill increased
স্বভাবগতভাবেই শিশুরা বড্ড লাজুক ও নরম হয়। কোনও কিছু নিয়ে প্রশ্ন করতে সংকোচ হয় তাদের। আপনার সন্তানের যদি গল্প শোনার অভ্যাস থাকে, তাহলে এই সমস্যা কাটিয়ে উঠবে সে। যে কোনও কিছুই বিশ্বাসের সাথে প্রশ্ন করতে পারবে। এভাবে যোগযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে তার!
এতো গেল গল্পের বই পড়ে শোনানোর উপকারিতার সাতকাহন। কিন্তু জানেন কি, গল্প পড়ারও একটা ধরন-ধারণ আছে? নীচে রইল তার টিপস।
কোন সময়ে গল্প বলবে মা-বাবারা: Time of story telling
গল্প পড়ে শোনানোর আবার সময় হয় নাকি! ঘুমের আগে হোক, পড়া শেষ করার পর হোক, বাসে হোক, ট্রেনে হোক- রোজ নির্দিষ্ট সময় আপনার সন্তানটিকে গল্প শোনান। এতে ওর ভিতর শৃঙ্খলাও তৈরি হবে ধীরে ধীরে। কাহিনিগুলো শুনে ওর চোখ-মুখের অভিব্যক্তি কী হচ্ছে, তা-ও নজর রাখুন। যখন দেখবেন ওর মনোযোগ সরে গিয়েছে, জোর করবেন না। মনে রাখবেন, জোর করতে গেলে গল্পের প্রতিই বিরক্তি তৈরি হতে পারে ওর! গল্পের বই পড়ে শোনানোর সময় টিভি, কম্পিউটারও বন্ধ রাখুন। এতে ওর মনোযোগে ঘাটতি হতে পারে!
কীভাবে গল্প বাছাই করবেন: Selection of books
গল্প-কাহিনির মধ্য দিয়েই শিশুর নৈতিকতা, মূল্যবোধ তৈরি হয়। এমন গল্পই তাই বেছে নিন, শিশু যেটা শুনে মজা পাবে সেই সাথে তাতে শিক্ষণীয় বার্তাও থাকবে। বই বাছাই করার আগে দেখে নিন সেটি যাতে রঙিন-ছবিওয়ালা হয়। পপ আপ বই পেলে তো কথাই নেই! কথা দিতে পারি, চোখ ফিরবে না আপনার সন্তানের। যদি বাচ্চা একটু বড় হয়, তাহলে ওকে সঙ্গে নিয়েই বই কিনতে যান!
সুর করে, ছড়া কেটে শোনান: Poem recitation with musical voice
একঘেয়েভাবে একটা গল্প শোনার চেয়ে সুর করে, ছড়া কেটে তা বললে অনেক বেশি উপভোগ করে শিশুরা। তাই যে গল্পই পড়ুন না কেন, সেটাকে শিশুর কাছে আকর্ষণীয় করে তুলুন। গল্পে যদি পশু-পাখির কোনও চরিত্র পান, তাদের ডাক নকল করে শিশুকে শোনান। এগুলো ওর মনোযোগ ধরে রাখবে। রাজা-রানির গল্প হলে দুটো পুতুল বসিয়েই গল্প শোনান। এতে গল্পের মধ্যে অনেক তাড়াতাড়ি ঢুকতে পারবে আপনার শিশু।
এক গল্প বারবার বলুন: Repeat the same story
ছোটরা একই গল্প বারবার শুনতে পছন্দ করে। আর মজার বিষয় হলো, প্রতিবারই একই রকম উতসাহ নিয়ে গল্পটা আত্মস্থ করে তারা। এই কারণেই আপনার কাছে পুরনো গল্প শোনারই আবদার করতে পারে ও। বিরক্ত হবেন না, বরং আপনিও চেষ্টা করুন আগের বারের মতোই গল্পটা মজা-রস মাখিয়ে আবার পরিবেশন করার। শিশুর মনে থাকছে কি না পরখ করে নিতে গল্পের খানিক অংশ আপনি বললেন, খানিকটা বলতে দিলেন ওকে!
তথ্য ও ছবি: ইন্টারনেট
No comments:
Post a Comment