গোসল শব্দটি কোথা থেকে এলো?
উইকিপিডিয়া বলছে, 'গুসল' একটি আরবি শব্দ।
আপনি কি সকালে স্নান করার একেবারেই সময় পান না? দিনের শেষে বাড়ি ফিরে স্নান করাই আপনার অভ্যাস, নাকি সকালে স্নান না করে বাড়ি থেকে বেরনোর কথা ভাবতেই পারেন না?
আবার হয়তো যতোই সকালে স্নান করুন না কেন রাতে বাড়ি ফিরে ভালো করে স্নান না করলে আপনার ঘুমই আসে না। অভ্যাস অনুযায়ী আমরা একেক জন দিনের একেক সময় স্নান করতে পছন্দ করেন। জানেন কি সকালে, রাতে যে কোনও সময়ই স্নানের কিছু উপকারিতা রয়েছে? নিজের কাজ ও প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী আপনি ঠিক করুন কখন স্নান করবেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, স্বাস্থ্যের জন্য দিনের কোন সময় স্নান করা বেশি উপযুক্ত?
কোন সময় স্নান করা বেশি উপকারী
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্নান করার জন্য কোনও ধরাবাঁধা সময় নেই। নিজের পছন্দমতো যে কোনও সময়ই স্নান করা যেতে পারে। সে সকাল হোক বা বিকেল। সকালে বা রাতে স্নান করার মধ্যে বিশাল কোনও পার্থক্য নেই। দুটি স্নানেরই নিজস্ব উপকারিতা রয়েছে। কাদের কোন সময় স্নান করা উচিত, তা জেনে নিন এখানে।
আপনার ত্বক যদি তৈলাক্ত ত্বক হয়, তাহলে ঘুম থেকে ওঠার পরই স্নান করে নেওয়া ভালো। ডার্মাটোলজিস্টদের মতে রাতে ঘুমনোর সময় আমাদের ত্বকের ওপরের স্তরে অতিরিক্ত তেল জমা হয়। সকালে উঠে স্নান করে না নিলে অ্যাকনে এবং ওপেন পোরসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আপনার যদি সকালে সহজে চোখ থেকে ঘুম না ছাড়ে, তাহলে স্নান করে নেওয়া ভালো। কারণ ঘুম তাড়াতে এক কাপ কফির থেকেও উপযোগী ভালো করে স্নান করে নেওয়া। সকালে স্নান করলে মেটাবলিজম রেট বাড়ে এবং নিজেকে ফ্রেশ লাগে।
সকালে যাঁদের ওয়ার্ক আউট করার অভ্যেস, তাঁরা ব্যায়াম করার পরই স্নান করে নিন। না হলে ওয়ার্ক আউটের পরের ঘাম শরীরে বসে যাবে। এই ঘাম থেকে ব্যাকটিরিয়ার জন্ম নিতে পারে।
যদি ক্রিয়েটিভ কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন তাহলে মনকে তরতাজা করার জন্য সকাল সকাল স্নান করে নেওয়া খুবই ভালো।
যদি আপনার ঘুমের সমস্যা থাকে, তাহলে রাতে ঘুমনোর আগে স্নান করা প্রয়োজন। ভালো করে স্নান করে ঘুমোতে গেলে ঘুম ভালো হয় বলে সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে।
আপনার ত্বক যদি শুষ্ক হয়, তাহলে সকালে নয়, রাতে স্নান করুন। সারাদিনের পর কাজের পর বাড়ি ফিরে স্নান করলে আপনার ত্বক ভালো থাকবে। সকালে স্নান করলে আপনার ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে।
আপনি যদি নিয়মিত বিছানার চাদর পরিষ্কার করতে না পারেন, তাহলে রাতে শোওয়ার আগে স্নান করে নিন। এতে আপনার বিছানা সহজে নোংরা হবে না।
আপনি যদি হাসপাতাল, নার্সিংহোম, ডায়াগনস্টিক ল্যাবে কাজ করেন বা সারাদিন বাইরে ঘুরে কাজ করতে হয়, তাহলে রাতে বাড়ি ফিরে স্নান করে নিন। কারণ সারাদিনে বহু মানুষ এবং নানা ধরনের জীবাণুর মধ্যে কাটাতে হয় আপনাকে। তাই বাড়ি ফিরে ভালো করে স্নান করে নেওয়া আপনার জন্য খুবই গুরুত্পূর্ণ।
আপনার যদি বিকেলে ওয়ার্ক আউট করার অভ্যেস থাকে, তাহলে রাতে স্নান করে নিন। না হলে ওয়ার্ক আউটের ঘাম শরীরে বসে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। ব্যায়াম করে স্নান সেরে ঘুমোতে গেলে ঘুম ভালো হবে।
-এইসময়
কতদিন পরপর গোসল করা উচিত?
২০১৯ সালে হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল প্রকাশিত এক জার্নালে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের দুই তৃতীয়াংশ নাগরিক প্রতিদিন গোসল করেন।
অস্ট্রেলিয়ার ৮০ শতাংশ বাসিন্দা প্রতিদিন গোসল করেন, কিন্তু চীনের অর্ধেক জনগোষ্ঠী সপ্তাহে মাত্র দুইবার গোসল করেন।
কিন্তু মানুষ গোসল কেন করে?
এই প্রশ্নের সোজাসাপ্টা উত্তরে হয়ত বেশিরভাগ মানুষ বলবেন, এটি স্বাস্থ্যকর এবং আরামদায়ক বলে তারা বিশ্বাস করেন।
তবে সেই সঙ্গে শরীরের ময়লা, ও দুর্গন্ধ দূর করা, সবগুলো স্নায়ু একসঙ্গে সজাগ হয়ে ওঠাসহ নানা করণ এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, কেবল মানুষ নয়, পৃথিবীর প্রায় সকল প্রাণী গোসল করে।
ডার্মাটোলজিস্ট ডা. নাহিদ সুলতানা বলেছেন, গোসল সপ্তাহে কতদিন করতে হবে তার নির্দিষ্ট কোন হিসাব নেই।
এটি নির্ধারিত হতে হবে একজন মানুষের শারীরিক গঠন, বয়স, পরিবেশ এবং প্রয়োজন অনুযায়ী।
ডা. সুলতানা বলেন, "স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যকর ত্বকে সাধারণত নির্দিষ্ট স্তরের তেল, ভালো ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য মাইক্রো-অরগার্নিজমের একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান থাকা জরুরী।
ভালো ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রোটিন উৎপাদনে সাহায্য করে।"
তিনি বলেছেন, "কিন্তু বেশি গোসল করলে সেটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যে কারণে বেশিরভাগ মানুষের জন্যই সপ্তাহে কয়েকবার গোসল যথেষ্ট। সবচেয়ে ভালো হয় একদিন পর একদিন গোসল করতে পারলে।"
বেশি গরম পানিতে গোসল করলে, বেশি ক্ষারজাতীয় সাবানের অতিরিক্ত ব্যবহারে শরীরে তেল ও ভালো ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
আবার সংক্ষিপ্ত গোসল হতে পারে। সেক্ষেত্রে বগল এবং কুচকি পরিষ্কার করে অল্প পানিতে অল্প সময় গোসল যথেষ্ট হবে।
পানি ছাড়া কি গোসল করা যায়?
উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ যায়। কিন্তু সাধারণত গোসলের কথা ভাবলে জলে ভেজা কোন ছবিই চোখের সামনে ভেসে উঠবে।
কিন্তু পৃথিবীর অনেক দেশে যেখানে আবহাওয়া ঠাণ্ডা, অথবা পানির সংকট আছে, সেখানে মানুষ যতটা সম্ভব কম পানি ব্যবহার করে গোসল করে।
কখনো কখনো পানি ছাড়া গোসলের নানা পদ্ধতির কথাও শোনা যায়।
যুদ্ধক্ষেত্রে মোতায়েন সামরিক বাহিনীর সদস্য কিংবা নভোচারীদের মধ্যে পানি ছাড়া গোসলের নানা পদ্ধতির কথা শোনা যায়।
-বিবিসি সূত্র