Tuesday, August 29, 2023

বাগ্‌ধারাগুলোর উতপত্তি

 হাটে হাঁড়ি ভাঙা

আজও অধিকাংশ গ্রামগঞ্জে সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে হাট বসে। আগে প্রায় সব গ্রামগঞ্জেই বসত। হাটের দিন লোকের ভিড় হতো জিনিস কেনাবেচার জন্য। আর হাঁড়ি রান্নাঘরের উপকরণ। আগে মূলত মাটির হাঁড়িতেই রান্না হতো। এখন কেউ যদি অন্দরমহল বা ভেতরবাড়ির হাঁড়ি হাটে নিয়ে ভাঙে, তবে সেই ঘটনা হাটের সবাই দেখতে পাবে। এমনকি এ কান–ও কান হয়ে বাকিরাও জেনে যাবে। এখান থেকে ‘হাটে হাঁড়ি ভাঙা’র অর্থ দাঁড়িয়েছে, কোনো গোপন কথা সবার সামনে ফাঁস করে দেওয়া।
ধোপে টেকা
‘ধোপে টেকা’ কথাটিকে অন্যভাবে বলা যায়—ধোয়ার পরও টিকে থাকা। আগের দিনে রঙিন কাপড় কেনার সময় ক্রেতাকে কাপড়ের রং নিয়ে ভাবতে হতো। কারণ, রং পাকা না হলে ধোয়ার পর কাপড় থেকে রং উঠতে শুরু করত। অর্থাত কাপড়ের রং যাচাইয়ের জন্য ধোয়ার কাজটিই ছিল আসল পরীক্ষা। এখান থেকে ‘ধোপে টেকা’ বাগ্‌ধারাটি এসেছে। এর অর্থ হলো, কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া বা বাধাবিঘ্ন পার হয়ে টিকে থাকা।
ছিনিমিনি খেলা
মাটির হাঁড়ি বা কলসির ভাঙা ছোট টুকরাকে বলা হয় খাপরা। এই খাপরা বা ছিন্ন টুকরা পুকুরে বিশেষভাবে ছুড়ে মারার খেলাকে বলা হয় ছিনিমিনি। ছিনিমিনি খেলার সময় খাপরা এমনভাবে পানিতে ছোড়া হয়, যাতে সেটা ব্যাঙের মতো লাফ দিয়ে দিয়ে অনেক দূর পর্যন্ত যায়। এ ধরনের খেলা মূলত শিশুরাই খেলে। গুরুত্বপূর্ণ কোনো কিছু নিয়ে এ রকম ছেলেখেলা করলে তখন বলা হয় ‘ছিনিমিনি খেলা’ বা যেমন খুশি তেমন ব্যবহার করা।
মানিকজোড়
মানিক এক রকম রত্ন, যার রং লাল। কিন্তু এই বাগ্‌ধারার সঙ্গে মানিকজোড় নামের জলচর পাখির সম্পর্ক আছে। মানিকজোড় বকের মতো দেখতে, বেশ বড় পাখি। এদের পা দুটি হয় লম্বা ও লালরঙা। দূর থেকে মনে হয় যেন একজোড়া মানিক। একইভাবে দুজন মানুষকে যদি বেশির ভাগ সময় একসঙ্গে চলতে–ফিরতে বা কাজকর্ম করতে দেখা যায়, তখন তাদেরকে বলে মানিকজোড়। মানিকজোড় পরস্পর ভালো কাজের সঙ্গী, খারাপ কাজেরও সঙ্গী হতে পারে।
মেকি কান্না
ফারসি ‘মেখ’ অর্থ গোঁজ বা ভেজাল। বাংলায় ‘মেকি’ শব্দের অর্থ কৃত্রিম, নকল বা কপট। সুদূর অতীতে রুপার মুদ্রাব্যবস্থা চালু ছিল। তখন আসল রুপার মুদ্রার মধ্যে অনেক সময় একই রকম করে বানানো লোহা বা অন্য ধাতুর নকল মুদ্রা চালিয়ে দেওয়া হতো। এসব নকল বা জাল মুদ্রাকে বলা হয় মেকি। মেকি মুদ্রার কোনো দাম নেই। তেমনি লোক দেখানো কান্না বা নকল কান্নাকে বলে মেকি কান্না। কিছু লোক অন্যের ক্ষতি করে কিংবা অন্যের ক্ষতিতে খুশি হয়েও মেকি কান্না কাঁদে।
পেটে বোম মারা
এ রকম কথা হরহামেশা শুনতে পাই, ‘পেটে বোম মারলেও কথা বের হবে না।’ এই বোম কোনো বোমা বা বিস্ফোরক নয়। এটি লোহার তৈরি একধরনের লম্বা সুচালো কাঠির মতো জিনিস। এটা দিয়ে খোঁচা দিয়ে মুখ বন্ধ করা বস্তা থেকে চাল বের করা হয়। বস্তায় বোম মেরে চাল বের করা যায়, কিন্তু কোনো মানুষ যদি মুখ বন্ধ করে থাকে এবং তার জানা বিষয়টিও গোপন করে রাখে, তখন বলা হয় পেটে বোম মারলেও কথা বের হবে না।
বিন্দুবিসর্গ
‘বিন্দুবিসর্গ’ বাগ্‌ধারার অর্থ একটু, কিছুমাত্র, অণুমাত্র। অর্থাত কোনো কিছুর সামান্যতম আভাস বা ইঙ্গিতকে বলে বিন্দুবিসর্গ। বিন্দু বলতে বোঝানো হয় অনুস্বার (ং)। একসময় লিপি যখন হাতে লেখা হতো, তখন অনুস্বার লেখার জন্য কেবল বিন্দু বা ফোঁটা চিহ্ন ব্যবহার করার চল ছিল। বিন্দুর নিচে রেখার মতো কোনো টানা দাগ ছিল না। এই বিন্দু বা অনুস্বারের পরের বর্ণ বিসর্গ (ঃ)। দুইয়ে মিলে হয়েছে বিন্দুবিসর্গ। সংস্কৃত ভাষার অনেক শব্দের শেষে বিন্দু ও বিসর্গ আছে। এই ব্যাপারটিও যখন কারও অজানা থাকে, তখন সাধারণভাবে বলা যায়, সে বিন্দুবিসর্গও জানে না।
বানচাল করা
‘বান’ বা ‘বাইন’ শব্দটি এসেছে ‘বয়ন’ থেকে। নৌকার নিচের দুই তক্তার সন্ধি বা জোড়ার মুখকে বলে বান বা বাইন। বাইন শক্ত না হলে নৌকার তক্তার জোড়া দিয়ে পানি ঢোকে। বান বিচ্ছিন্ন হলে নৌকা ডুবে যায়। অর্থাৎ ‘বানচাল’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ—নৌকার জোড়া বা তক্তা ফাঁক হয়ে যাওয়া। আর তাই কোনো পরিকল্পনা বা উদ্দেশ্য পণ্ড করে দেওয়াকেও আমরা বলি বানচাল করা। সব মিলিয়ে ‘বানচাল’ করা বাগ্‌ধারাটির অর্থ দাঁড়ায় ভন্ডুল করা, ভেস্তে যাওয়া, ফাঁসিয়ে দেওয়া।
তুবড়ি ছোটা
কারও মুখ থেকে যখন একটানা কথা বের হতে থাকে, তখন বলা হয়, মুখ দিয়ে কথার তুবড়ি ছুটছে! ‘তুবড়ি’ শব্দটি হিন্দিতে তুমড়ি। এটি একধরনের আতশবাজি। মাটির খোলে বারুদ পুরে তুবড়ি বানানো হয়। দেখতে হয় অনেকটা পেটমোটা পেঁয়াজের মতো। তারপর এর চিকন মাথার দিকে আগুন দিলেই চারদিকে বারুদের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে। শেষ না হওয়া পর্যন্ত আলো ছড়িয়ে তুবড়ি জ্বলতে থাকে। তাই কারও মুখ থেকে তুবড়ির মতো অনর্গল কথা ছুটতে থাকলে এই বাগ্‌ধারা ব্যবহার করা হয়।
শশব্যস্ত
‘শশ’ শব্দের অর্থ শশক বা খরগোশ। এদের চলাফেরা দেখে মনে হয়, এরা বুঝি খুব ব্যস্ত। অত্যন্ত সতর্ক ও চঞ্চল প্রাণী হিসেবেই খরগোশ পরিচিত। এই সতর্কতার কারণ এদের কান। খরগোশের কান অনেক লম্বা ও বাঁকানো হয়। ফলে সামান্য শব্দও এরা ভালো শুনতে পায়। আর এদের চঞ্চল মনে হয় এদের চলা ও লাফানোর ভঙ্গি দেখে। শিকারির হাত থেকে বাঁচার জন্য এরা এঁকেবেঁকে দৌড়াতে থাকে। মানুষের মধ্যে খরগোশের মতো ব্যস্ততা দেখা গেলে তাকে বলা হয় শশব্যস্ত।
কূপমণ্ডূক
‘কূপ’ মানে কুয়া, আর ‘মণ্ডূক’ মানে ব্যাঙ। ‘কূপমণ্ডূক’ শব্দের সাধারণ অর্থ কুয়ার ব্যাঙ। কুয়ার ব্যাঙ কুয়ার ভেতরে থাকে; সেখান থেকে সে বাইরে আসতে পারে না। ফলে তার কাছে মনে হয়, ওইটুকুই বুঝি জগৎ। ওইটুকু জগতের খবরই সে জানে, কুয়ার বাইরের দুনিয়ার কোনো খবর সে জানে না। একইভাবে কোনো মানুষ যদি কুয়ার ব্যাঙের মতো সীমাবদ্ধ জ্ঞানবিশিষ্ট হয়, সে যদি জ্ঞানবিজ্ঞানের বিশাল দুনিয়ার খবর না রাখে, তখন তাকে কূপমণ্ডূক বলা হয়।
বুজরুকি কাণ্ড
‘বুজুর্গ’ ফারসি শব্দ। এর অর্থ দরবেশ বা সাধু। বুজুর্গ শব্দ থেকে ‘বুজরুকি’ শব্দটি এসেছে। দরবেশ বা সাধুদের অলৌকিক ক্ষমতা ছিল। এসব ক্ষমতা দেখে মানুষ অবাক হয়ে যেত। সাধারণভাবে বুজরুকি কাণ্ড বলতে বোঝানো হয় অলৌকিক কাজ বা অবিশ্বাস্য ঘটনা। কিন্তু বাগ্‌ধারায় এর অর্থ প্রতারণা বা চাতুরী। সাধারণ মানুষের পক্ষে অলৌকিক কাণ্ড দেখানো সম্ভব নয়। তাই কোনো লোক যদি অবিশ্বাস্য কাজ করে ফেলেছে বলে দাবি করে, তখন তাকে বলা হয় প্রতারণা বা বুজরুকি কাণ্ড।
হন্যে হয়ে খোঁজার এই ‘হন্যে’টা কী?
হনন করা যায় বা মেরে ফেলা যায় এমন জন্তুকে বলা হয় ‘হন্য’। শিকারি কোনো প্রাণী পেছনে ধাওয়া করলে ওই প্রাণী জীবন বাজি রেখে ছুটতে থাকে। ওই সময় শিকারের কোনো হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। একইভাবে কোনো মানুষ যখন ভালো–মন্দ জ্ঞান হারিয়ে কোনো কিছু খোঁজে, তখন তাকে বলা হয় হন্যে হয়ে খোঁজা। অন্যভাবে বলা যায়, হন্যে হয়ে খোঁজা মানে কিছু করা বা পাওয়ার জন্যে ব্যাকুল হয়ে চেষ্টা করা।
হেস্তনেস্ত করা
হেস্তনেস্ত করা মানে ভালো বা মন্দ যেকোনো ধরনের নিষ্পত্তি করা। এটাই তখনকার মতো ওই কাজের শেষ সমাধান বা চরম ফয়সালা। ‘হেস্তনেস্ত’ শব্দটি এসেছে ফারসি ‘হস্ত’ ও ‘নিস্ত’ থেকে। এখানে, হস্ত বা হেস্ত শব্দের অর্থ হওয়া, আর নিস্ত বা নেস্ত শব্দের অর্থ না–হওয়া। দীর্ঘদিন ধরে কোনো কাজে হওয়া না–হওয়ার দ্বিধা থাকলে চূড়ান্ত সমাধান চাওয়া হয়। হয় এটা, নয় ওটা—এ রকম বোঝাতেও হেস্তনেস্ত শব্দের ব্যবহার আছে।
হাবুডুবু খাওয়া
‘হাঁপ’ ও ‘ডুব’—এ দুটি শব্দের সঙ্গে উ–প্রত্যয় যোগ করে হয়েছে হাবুডুবু। এই শব্দের মধ্যে আছে ‘হাঁপ’ অর্থাতশ্বাসের কষ্ট এবং ‘ডুব’ অর্থাত ডুবে যাওয়ার কষ্ট। প্রতিদিনের অনেক সমস্যায় আমাদের হিমশিম খেতে হয়। একবার মনে হয়, সমস্যা থেকে ওঠা সম্ভব হয়েছে, একবার মনে হয়, সমস্যার মধ্যেই ডুবে আছি। এ রকম ভাসা আর ডোবার সঙ্গে মিল থাকায় কোনো কাজে কূলকিনারা না পেলে বলা হয় হাবুডুবু খাওয়া।
ফোড়ন কাটা
সবজি বা ডাল রান্নার একপর্যায়ে ফোড়ন দিতে হয়। গরম তেলে ভেজে নেওয়া শুকনা মরিচ, জিরা, তেজপাতা ও অন্যান্য মসলাকে বলা হয় ফোড়ন। রান্না কিছু সময়ের জন্য থামিয়ে ফোড়ন তৈরি করে সেখানে ঢেলে দিতে হয় সবজি বা ডাল। ফোড়ন দেওয়ার সময় ছ্যাঁত করে শব্দ হয়। একইভাবে দুজনের কথার মাঝখানে তাদের থামিয়ে মন্তব্য করাকে বলা হয় ফোড়ন কাটা। আলাপের মাঝখানে তৃতীয় ব্যক্তির কথা বলা বা ফোড়ন কাটা ওই দুজনের জন্য বিরক্তির কারণ হয়।
ঢুঁ মারা
‘ঢুঁ মারা’ বাগ্‌ধারার অর্থ অতি সামান্য সময়ের জন্য কোথাও যাওয়া। এ ধরনের যাওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণত কোনো উদ্দেশ্য বা কারণ থাকে না। ঢুঁ মারা বাগ্‌ধারাটি এসেছে ছাগলের ঢুস্ মারা থেকে। ছাগল কখনো কখনো মানুষ দেখে কারণ ছাড়াই তেড়ে এসে মাথা দিয়ে ঢু্‌ মারে। একইভাবে কোনো কোনো সময় আমরা কারণ ছাড়াই কোনো জায়গায় মাথা ঢুকিয়ে উঁকি দিই এবং দেরি না করেই সেখান থেকে চলে আসি।
পাততাড়ি গোটানো
‘পাততাড়ি’ শব্দের সাধারণ অর্থ পাতার তাড়ি বা পাতার গুচ্ছ। কাগজ উদ্ভাবনের আগে তালপাতা বা কলাপাতায় লেখা হতো। ছাত্ররা পাঠশালায় তালপাতা বা কলাপাতার গোছা নিয়ে যেত এবং সেই পাতায় লেখাজোখা করত। পাঠশালার পাঠ শেষ হলে তারা পাতার তাড়ি গুছিয়ে বেঁধে নিয়ে বাড়ি ফিরত। এখান থেকে পাততাড়ি গোটানো বাগ্‌ধারাটি এসেছে। এর অর্থ দাঁড়িয়েছে কাজ হয়ে যাওয়ার পর সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে সরে পড়া বা পালিয়ে যাওয়া।
বিড়ালতপস্বী
যারা ভালো মানুষের ভাব ধরে থাকে এবং সুযোগ বুঝে খারাপ কাজ করে, তাদের বলা হয় বিড়ালতপস্বী। বিড়াল সাধারণত চুপিসারে শিকার ধরে। ধীরে ধীরে এবং সতর্কতার সঙ্গে তারা শিকারের কাছে যায়। এগিয়ে আসার সময়ে পেটে হামাগুড়ি দেয় এবং সব শেষে শিকারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাই সাধু বা ভালো মানুষের বেশ থেকে হঠাত আক্রমণকারীর ভূমিকা যারা নেয়, তাদের জন্যই তৈরি হয়েছে এই বাগ্‌ধারা।
ঢাকের কাঠি
চামড়া দিয়ে মুখ আঁটা ঢোলজাতীয় বড় বাদ্যযন্ত্রকে ঢাক বলে। এটি ঘাড়ে ঝুলিয়ে, কোমরে বেঁধে কিংবা মাটিতে বা কোলে রেখে বাজানো হয়। ঢাক বাজাতে দুটি সরু কাঠি লাগে। ঢাকের মতো বড় জিনিসের নিত্যসঙ্গী এই কাঠি। মানে ঢাক যেখানে যায়, কাঠিও সেখানে যায়। গ্রামের মাতবর বা ক্ষমতাসীন লোকের সঙ্গেও সব সময় তার চাটুকার থাকে। চাটুকার বা তোষামোদকারী ব্যক্তি বোঝাতে ঢাকের কাঠি বাগ্‌ধারাটি ব্যবহার করা হয়।
ডুমুরের ফুল
ডুমুরের ফুল থাকে ফলের ভেতরে। অতি ছোট ছোট কীটপতঙ্গ সেই ফলের মধ্যে ঢুকে পরাগায়ন ঘটায়। ডুমুর ভাঙলে ভেতরে গর্ভকেশর, পুংকেশর সবই পাওয়া যাবে। ডুমুর ফুল গর্ভাশয় দ্বারা পুরোপুরি আবৃত হয়ে ফলের আকার ধারণ করে। অন্য ফুলের মতো ডুমুরের ফুল তাই সহজে দেখা যায় না। কোনো লোককে যদি সহজে দেখা না যায়, এরপর হঠাত একদিন তার দেখা মেলে, তখন তাকে ডুমুরের ফুল হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
চোখের বালি
চোখে বালুকণা পড়লে চোখ খচখচ করে, চোখে পীড়া অনুভূত হয়। একইভাবে, কোনো কোনো মানুষ চোখের সামনে পড়লে বিরক্তি তৈরি হয়। যেসব মানুষকে দেখলে অস্বস্তি লাগে কিংবা চোখে বালিকণা পড়ার মতো পীড়া অনুভব হয়, তাদের বলে চোখের বালি। একই অর্থে চক্ষুশূল শব্দেরও প্রয়োগ আছে। অর্থাত যাকে দেখলে চোখে শূল বা বেদনার অনুভূতি হয়।
চোখের পর্দা
চোখের পর্দা অর্থ লজ্জা বা সংকোচ। চোখের পর্দা, চোখের পাতা, চোখের চামড়া—এগুলো সব অনুরূপ অর্থে প্রয়োগ করা হয়। চোখের ওপর পাতা বা নেত্রপল্লব সবারই থাকে। লজ্জা পেলে মানুষের চোখের পাতা এমনিতেই নেমে আসে। চোখে পাতা বা পর্দা থাকার কারণে লজ্জাজনক কাজ করতে মানুষ সংকোচ বোধ করে। কিন্তু বাগ্‌ধারায় বলা হয়, যে মানুষের চোখে পর্দা নেই, তার লজ্জা বলেও কিছু নেই।
চোখ ফোটা
বিড়াল, কুকুর, বাঘ, সিংহ ইত্যাদি প্রাণী জন্মের পর দেখতে পায় না। এদের চোখের ওপর একধরনের পাতলা আবরণ থাকে। কয়েক দিন পর ওই আবরণ সরে গেলে চারপাশের সবকিছু দেখতে পায়। এভাবে চোখ ফুটতে প্রাণীভেদে ছয় দিন থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগে। মানবশিশু অবশ্য জন্মের পর থেকেই সবকিছু দেখতে পায়। তবে কোনো মানুষ যখন প্রকৃত অবস্থা জানতে পারে বা বুঝতে পারে, তখন বলা হয়, এত দিনে চোখ ফুটেছে।
কলকে পাওয়া
নারকেলের খোল, মাটির পাত্র ও কাঠের নল দিয়ে তৈরি তামাক খাওয়ার বিশেষ উপকরণকে বলা হয় হুঁকা বা কলকে। গ্রামগঞ্জে অবসরে তামাক খাওয়ার সময় একটি কলকেই এক হাত থেকে আরেক হাতে ঘুরতে থাকে। কারও হাতে কলকে না এলে মনে করা হয়, সে সম্মান পেল না বা উপেক্ষিত থেকে গেল। তাই কলকে পাওয়া বাগ্‌ধারার অর্থ সম্মান পাওয়া বা উপেক্ষিত না হওয়া।
কাকতালীয়
পরস্পর সম্পর্কহীন দুটি ঘটনা একসঙ্গে ঘটলে তাকে বলা হয় কাকতালীয় ব্যাপার। এ ক্ষেত্রে মনে হয়, একটির কারণে যেন আরেকটি ঘটনা ঘটেছে! কাকতালীয় শব্দের মধ্যে আছে ‘কাক’ ও ‘তাল’—এই দুটি শব্দ। ধরা যাক, একটি কাক উড়ে এসে তালগাছে বসল; আর তখনই তালগাছ থেকে তাল পড়ল। এই আকস্মিক ঘটনা দুটির মধ্যে আদৌ কোনো সম্পর্ক বা কার্যকারণ নেই। একইভাবে, কাকতালীয় ব্যাপারেও দুটি ঘটনা সম্পর্ক ছাড়াই একত্রে ঘটে।
আক্কেল গুড়ুম
আরবি ‘আকল’ থেকে আক্কেল শব্দটি এসেছে। এর অর্থ বুদ্ধি, বিবেচনা, কাণ্ডজ্ঞান। আর ‘গুড়ুম’ হলো কামান থেকে গোলা বের হওয়ার শব্দ। আকস্মিক কোনো ঘটনায় আমাদের বুদ্ধি, বিবেচনা মাঝেমধ্যে লোপ পায় বা হারিয়ে যায়। হতবুদ্ধি হয়ে যাওয়ার এই পরিস্থিতিকে বলা হয় আক্কেল গুড়ুম অবস্থা। কামানের গোলা লেগে বুদ্ধি হঠাত উড়ে গেলে যে অবস্থা হয়, আরকি!
টিপ্পনী কাটা
অনেকে অন্যের কথার মাঝখানে বাড়তি কথা বলে কিংবা মন্তব্য যোগ করে। এভাবে কথার মাঝখানে কথা বলাকে টিপ্পনী কাটা বলে। কোনো বিষয়ের ব্যাখ্যা দিতে কিংবা বাড়তি তথ্য যোগ করার জন্য বিভিন্ন লেখায় টীকা–টিপ্পনী যোগ করা হয়। টীকা হলো কোনো শব্দ বা বিষয়ের ব্যাখ্যা। আর টিপ্পনী হলো যে বিষয়ের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, তার ওপরে ব্যবহৃত বিশেষ চিহ্ন
ঘোল খাওয়ানো
দুধ জ্বাল দিয়ে ঘন করা হয়। এরপর সেটিকে ৮–১০ ঘণ্টা জমিয়ে রাখলে দই হয়ে যায়। এই দই ফেটিয়ে মাখন আলাদা করা হয় ঘি বানানোর জন্য। আর বাকি অংশে পানি মিশিয়ে ভালো করে ঘুঁটে তৈরি করা হয় ঘোল। ঘোলে দুধের মূল উপাদান ননি বা মাখন থাকে না। ফলে ঘোল খাওয়ানো বলতে কাউকে ঠকানো বোঝায়।
খেই হারানো
সুতা ও এ–জাতীয় জিনিসের মুখ বা প্রান্তকে বলা হয় খেই। অনেক সময় সুতার প্রান্তভাগ বা আগা খুঁজে পাওয়া যায় না। তখন কাটিম থেকে সুতা বের করতে সমস্যা হয়। আবার মানুষ কথা বলার সময় কিংবা গল্প করার সময় অনেক ক্ষেত্রে বিষয় বা প্রসঙ্গ হারিয়ে ফেলে। কাটিমের সুতার মতো এভাবে কথার সূত্র হারিয়ে ফেললে বলা হয় খেই হারানো।
চুনোপুঁটি
পুঁটি মাছ এমনিতেই আকারে ছোট হয়। জাতভেদে পূর্ণবয়স্ক একটি পুঁটির আকৃতি আড়াই থেকে ছয় ইঞ্চি হয়ে থাকে। কোনো কোনো পুঁটি মাছের
প্রজাতি দুই ইঞ্চির বড় হয় না। খালে–বিলে অল্প পানিতে এই মাছ বাস করে।
চুনো মানে ছোট; ফলে চুনোপুঁটি বলতে ছোট পুঁটি মাছকে বোঝানো হয়।
আর তাই নগণ্য বা গুরুত্বহীন কোনো মানুষকে বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয় চুনোপুঁটি বাগ্‌ধারাটি।
কই মাছের প্রাণ
কই মাছ পানি থেকে তোলার পরও ছয় থেকে আট ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকে। সাধারণ মাছেরা পানিতে ফুলকার সাহায্যে শ্বাসকাজ চালায়।
কই মাছের শ্বাস নেওয়ার জন্য ফুলকা ছাড়াও বিশেষভাবে অভিযোজিত কানকো রয়েছে। মাথার দুই পাশে থাকা এই কানকোর সাহায্যে সে বায়ুমণ্ডল থেকেও দীর্ঘ সময় ধরে অক্সিজেন নিতে পারে। কঠিন প্রাণ কিংবা যা সহজে মরে না—এমন কোনো ব্যক্তি ও প্রাণী বোঝাতে কই মাছের প্রাণ বাগ্‌ধারাটির প্রয়োগ হয়।
রাঘববোয়াল
রামের বাবার নাম দশরথ। রাজা দশরথের ঠাকুরদাদার নাম রঘু। রঘু বংশে জন্ম যাদের, তাদের বলা হয় রাঘব। এই অর্থে রামের আরেক নাম রাঘব। ‘রাম’ শব্দটি বাংলায় বড় অর্থে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। যেমন, রামছাগল বলতে বড় ছাগল, রামদা বলতে বড় বা বিশাল আকারের দা বোঝানো হয়। একইভাবে, ‘রাঘব’ শব্দটিও বড় অর্থে ব্যবহৃত হয়। রাঘববোয়াল মানে তাই বড় আকারের বোয়াল মাছ। কিন্তু বাগ্‌ধারায় প্রভাবশালী বা ক্ষমতাধর ব্যক্তিকে রাঘববোয়াল বলে।
শ্বেতহস্তী পোষা
শ্বেতহস্তী শব্দের সাধারণ অর্থ সাদা হাতি। মিয়ানমার, থাইল্যান্ড—এসব দেশে সাদা হাতিকে পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এসব হাতিকে কোনো পরিশ্রম করানো হয় না। মনে করা হয়, সাদা হাতি রাজ্যে শান্তি ও সমৃদ্ধি বজায় রাখে। রাজার ন্যায়বিচার ও ক্ষমতার চিহ্নও এগুলো। সাদা হাতিকে বিপুল অর্থ ব্যয় করে প্রতিপালন করা হয়। কোনো কাজে যদি অনেক খরচ হয়, অথচ কোনো অর্থকরী লাভ হয় না, তখন শ্বেতহস্তী পোষার সঙ্গে তুলনা করা হয়।
ষোলোকলা
ষোলোকলা অর্থ পুরোপুরি। অমাবস্যার পর চাঁদ একটু একটু করে বাড়তে থাকে। প্রাচীন ভারতীয়রা মনে করত, চাঁদের আকার পরিবর্তন করেন ষোলোজন দেবী। এঁরা থাকেন সূর্যে। প্রতিরাতে একজন করে চাঁদে আসতে থাকেন। ফলে চাঁদের আকারও বাড়তে থাকে। চাঁদের একেকটি আকারকে বলা হয় কলা। যেদিন ষোলোজন দেবীর সবাই চাঁদে এসে পৌঁছান, সেদিন পূর্ণিমা হয়। আর চাঁদের ষোলোকলাও পূর্ণ হয়। চাঁদের এই ষোলোকলার নাম—পূষা, যশা, সুমনসা, রতি, প্রাপ্তি, ধৃতি, ঋদ্ধি, সৌম্যা, মরীচি, অংশুমালিনী, অঙ্গিরা, শশিনী, ছায়া, সম্পূর্ণমণ্ডলা, তুষ্টি ও অমৃতা।
হাতের পাঁচ
একসময় জমিদারেরা স্ত্রীদের সঙ্গে তাসের বিন্তি খেলতেন। অন্দরমহলের নারীরাও নিজেরা বিন্তি খেলতেন। সাত ফোঁটা থেকে শুরু করে বড় তাসগুলো নিয়ে বিন্তি খেলা হয়। একই ক্রমের পরপর তিনটি তাস দেখাতে পারলে বিন্তি হয়। তখন প্রতিপক্ষকে ৬৭ ফোঁটা দেখাতে হয়। বিন্তি খেলায় যে শেষের পিঠ পায়, তার পাওনা হয় পাঁচ ফোঁটা। এই পাঁচ ফোঁটা থেকে হাতের পাঁচ বা শেষ সম্বল বাগ্‌ধারা এসেছে।
বাজখাঁই
অত্যন্ত কর্কশ ও উচ্চকণ্ঠকে বলা হয় বাজখাঁই। ষোলো শতকে উত্তর ভারতে বাজবাহাদুর খান বা সংক্ষেপে বাজ খাঁ নামে একজন শাসক ছিলেন। তিনি উঁচু গলায় গান গাইতে পারতেন।
মোগল সম্রাট আকবরের কাছে তিনি যুদ্ধে পরাজিত হন। তারপর তাঁর জায়গা হয় আকবরের দরবারে। সংগীতশিল্পী হিসেবে তিনি বিশেষ পরিচিতি পান। চাপা গলায় অস্বাভাবিক উঁচু সুর তৈরি করতে পারতেন এই বাজ খাঁ। তাঁর নাম থেকেই বাজখাঁই বাগ্‌ধারাটি এসেছে।
ঢিমেতাল
তবলার অনেক রকম তাল আছে। এর মধ্যে ধীরগতির তাল আছে, দ্রুতগতির তালও আছে। ‘ঢিমে’ শব্দের অর্থ ধীর বা মন্থর। তেতাল বা তিনতাল একটি ধীরগতির তালের নাম। তবলার ধীরলয়ের তেতালের মতো কিছু লোকের কাজকর্মও হয় অতি ধীরগতির। অলস ও উদ্যমহীন লোকের চলাফেরা বা কাজকর্ম দেখে বলা হয় ঢিমেতাল। এ রকম লোক ঢিমেতালে চলে বা ঢিমেতালে কাজ করে।
ডানপিটে
‘ডান’ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত দণ্ড বা বাংলা ‘ডান্ডা’ থেকে। এর অর্থ লাঠি। আর ‘পিটে’ এসেছে পেটানো থেকে। যে ডান্ডা বা লাঠি দিয়ে কিছু পেটায়, তাকে ডানপিটে বলে। ডাংগুলি খেলার ‘ডাং’ অর্থও লাঠি। একসময় গ্রামাঞ্চলে ডাংগুলি খেলার খুব প্রচলন ছিল। দুরন্ত ছেলেরা কাজ ফেলে, পড়াশোনা না করে সারা দিন ডাংগুলি খেলে বা ডাং দিয়ে গুলি পিটিয়ে সময় কাটাত। এখান থেকে ডানপিটে বাগ্‌ধারার জন্ম। দুরন্ত স্বভাবের কিংবা শাসন মানে না, এমন ছেলেমেয়েদের ডানপিটে বলা হয়।
সূত্র: তারিক মনজুর: শিক্ষক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Monday, August 28, 2023

রাসুল (সাঃ) এর অনেক হাদিস আমরা ভুলেই যাচ্ছি

 ১। মাঝে মাঝে বৃষ্টিতে ভেজা।

📖(সহীহ মুসলিম- ৮৯৮)
২। রাতে স্ত্রীকে সাথে নিয়ে নির্জনে হাঁটা।
📖(বুখারী- ৫২১১)
৩।বৃষ্টি আসলে দোয়া করা।
📖(সহীহ বুখারী- ১০৩২)
৪। স্ত্রীর রান্না করা হালাল খাবারের দোষ না ধরা।
খেতে মন না চাইলে চুপ থাকা।
📖(মুসলিম- ২০৬৪)
৫। কোনো কিছু জানা না থাকলে স্বীকার করা যে, আমি জানি না।
📖(বায়হাকী- ১৭৫৯৫)
৬। মাঝে মাঝে বিপদে আকাশের দিকে মাথা তোলা।
আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজের কষ্টগুলো আল্লাহকে বলা।
📖(মুসলিম- ২৫৩১)
৭। খুব খুশি হলে সিজদায় লুটিয়ে পড়া।
📖(মুখতাসার যাদুল মা' আদ- ১/২৭)
৮। ধোঁয়া ওঠা গরম খাবার ঠান্ডা না হওয়া পর্যন্ত না খাওয়া।
📖(বায়হাকি-৪২৮)
৯। নফল ও সুন্নাহ সালাতগুলো নিজের ঘরে পড়া।
📖(বুখারী- ৭৩১)
১০। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় এবং বাসা ফিরে দুই রাকাআত সালাত আদায় করা।
📖(মুসনাদে বাযযার- ৮৫৬৭)
১১। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে জুতা না পরা।
বিশেষ করে শু জুতা ( স্যান্ডেল না)।
📖(আবু দাউদ- ৪১৩৫)
১২। যতই ভালো খাবার হোক ভরা পেটে না খাওয়া।
📖(তিরমিযী- ২৪৭৮)
১৩। ফজরের সালাতের পর সালাতের স্থানে বসে তসবি পড়া।
অতঃপর সূর্য উঠার পর দুই রাকাআত সালাত আদায় করা।
📖(আরশিফু মুলতাকা- ৪৫৬৯)
১৪। দ্বীনের দাওয়াত সহজ করার উদ্দেশ্যে নতুন একটি ভাষা শিখা।
📖(মুসনাদে আহমাদ- ২১৬১৮)
১৫। বাড়িতে অজু করে রুমাল দিয়ে হাতপা মুছে মসজিদে জামায়াতে যাওয়া।
📖(তাবরানী- ৬১৩৯)
১৬। মানুষের মাঝে বিবাদ মিটিয়ে দেয়া।
📖(মুসনাদে আহমাদ- ২৭৫০৮)
১৭। রাতে অজু অবস্থায় ঘুমানো।
📖(ফাতহুল বারি- ১১/১১০)
১৮। মাঝে মাঝে খালি পায়ে হাঁটা।
📖(আবু দাউদ- ৪১৬০)
১৯।যদি কারো উপর কোনো কষ্ট আসে, আল্লাহ তাআলা এর কারণে তার গুনাহসমূহ ঝরিয়ে দেন; যেমনভাবে গাছ থেকে পাতা ঝরে পড়ে।
📖(বুখারি, হাদিস নং: ৫৬৮৪)
২০।রাসুলুল্লাহ(সাঃ) বলেনঃ
আমি ঠেস(হেলান) লাগানো অবস্থায় কোনো কিছু ভক্ষণ করি না।
📖(বুখারি, হাদিস নং: ৫১৯০)
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে আমল করার তৌফিক দান করুক।
___(আমিন)___

ইমান নষ্ট হয়ে যায় যে কারণে

 ১. আল্লাহর সঙ্গে কারও শরিক করা

যদি কোনো মুমিন-মুসলমান উপাস্য বা ইলাহ হিসেবে বা ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করেন, তাহলে তাঁর ইমান নষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহ–তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোনো উপাস্য স্থির করো না।’ (সুরা ইসরাইল, আয়াত: ২২)
বিষয়ে পবিত্র কোরআনে সুরা নিসার ৪৮, সুরা মায়িদার ৭২, সুরা আনআমের ৮২, সুরা শুআরার ৯৭-৯৮, সুরা জুমারের ৬৫, সুরা তাওবার ৫, সুরা ইউনুসের ১৮ এবং সুরা আনকাবুতের ৬৫: আয়াতেও এ ধরনের আলোচনা রয়েছে।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুলুল্লাহকে (সা.) আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কোন অপরাধটি আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বড়? তিনি বললেন, তুমি আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার সাব্যস্ত করবে অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। (বুখারি, হাদিস: ৩৩৬০, মুসলিস, হাদিস: ১২৪)
২. আল্লাহ ও বান্দার মাঝখানে কাউকে মাধ্যম বানানো
যদি কোনো মুমিন-মুসলমান আল্লাহকে ডাকা বা তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করার ক্ষেত্রে কোনো মাধ্যম গ্রহণ করেন এবং সে মাধ্যমকে শাফায়াতের যোগ্য মনে করেন, তাহলে তাঁর ইমান নষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহ–তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘বলুন! সমস্ত সুপারিশ একমাত্র আল্লাহর আওতাধীন। আসমান ও জমিনে তাঁরই সাম্রাজ্য। (সুরা জুমার, আয়াত: ৪৪)
এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে সুরা জুমারের ৩, সুরা ইউনুসের ১৮, সুরা সাবার ২২-২৩, সুরা মরিয়মের ৮১-৮২, সুরা শুআরার ১০০-১০১, সুরা আম্বিয়ার ২৮ এবং সুরা বাকারার ২৫৫: আয়াতেও আলোচনা রয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ–তাআলার কাছে প্রার্থনা করে না, তিনি তার ওপর রাগান্বিত হন।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩৩৭৩)
৩. কাফির-মুশরিকের মতবাদকে সঠিক মনে করা
যদি কোনো মুমিন-মুসলমান কাফির বা মুশরিককে কাফির–মুশরিক মনে না করেন এবং তাদের মতবাদকে সঠিক মনে করেন, তাহলে তাঁর ইমান নষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহ–তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আহলে কিতাবিদের মাঝে যারা কুফরি ও শিরক করে; তারা চিরস্থায়ী জাহান্নামি এবং তারাই সৃষ্টির মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট সৃষ্টি। (সুরা বাইয়্যিনাহ, আয়াত: ৬)
এ ছাড়া এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ১৩০-২৫৫, মুমতাহিনার ৪: আয়াতে আলোচনা রয়েছে।
আবু মালিক (রা.)-এর পিতা বলেছেন, আমি রাসুলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলল এবং আল্লাহর ছাড়া বাকি সব উপাস্যকে অস্বীকার করল, তার সম্পদ ও রক্ত অন্য মুসলিমের জন্য নিষিদ্ধ। আর তার প্রকৃত হিসাব-নিকাশ আল্লাহর দায়িত্বে। (মুসলিম, হাদিস: ২৩)
৪. রাসুলুল্লাহ (সা.) আনা আদর্শ ছাড়া অন্য কোনো আদর্শকে উত্তম মনে করা
যদি কোনো মুমিন-মুসলমান রাসুলুল্লাহ (সা.) আনীত জীবনবিধান বা হুকুমত বা আদর্শ ছাড়া অন্য কোনো জীবনবিধান বা হুকুমত বা আদর্শকে উত্তম মনে করেন, তাহলে তাঁর ইমান নষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহ–তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুল কোনো কাজের আদেশ করলে, কোনো ইমানদার নারী-পুরুষের জন্য সে বিষয়ে ভিন্ন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো অধিকার নেই। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আদেশ অমান্য করে, সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে।’ (সুরা আহজাব, আয়াত: ৩৬)
এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে সুরা নাজমের ৩-৪, সুরা মায়িদার ৩-৪৪, সুরা আলে ইমরানের ৮৫, সুরা আনআমের ৫৭ এবং সুরা নিসার ৬০-৬৫: আয়াতেও আলোচনা আছে।
জাবির (রা.) বর্ণনা করেছেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সবচেয়ে উত্তম আলোচনা হলো আল্লাহর কিতাব এবং সবচেয়ে উত্তম আদর্শ হলো মুহাম্মাদ (সা.)-এর আদর্শ। (মুসলিম, হাদিস: ৮৬৭)
৫. শরিয়তের কোনো অংশকে অপছন্দ বা অস্বীকার করা
যদি কোনো মুমিন-মুসলমান ইসলামি জীবনবিধান বা শরিয়ত অনুসরণ করার পর এ জীবনবিধান বা শরিয়তের কোনো অংশকে অপছন্দ বা অস্বীকার করেন তাহলে তাঁর ইমান নষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহ–তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আর যারা কাফির তাদের জন্য রয়েছে দুর্গতি এবং তিনি (আল্লাহ) তাদের কর্ম বিনষ্ট করে দেবেন। এটা এ জন্য যে আল্লাহ যা নাজিল করেছেন, তারা তা অপছন্দ করে। সুতরাং আল্লাহ তাদের নিষ্ফল করে দেবেন’ (সুরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ৮-৯)
আল্লাহ–তাআলা আরও ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা পূর্ণাঙ্গভাবে ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাঙ্কসমূহ অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২০৮)
৬. শরিয়তের কোনো সওয়াব বা শাস্তির বিধান নিয়ে ঠাট্টা করা
যদি কোনো মুমিন-মুসলমান ইসলামি শরিয়তের কোনো সওয়াবের বা শাস্তির বিধান নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেন, তাহলে তাঁর ইমান নষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহ–তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আপনি বলুন! তোমরা কি আল্লাহর সঙ্গে তাঁর হুকুম-আহকামের সঙ্গে এবং তাঁর রাসুলের সঙ্গে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করছিলে? ছলনা কোরো না। ইমান আনার পর তোমরা কাফির হয়ে গেছ।’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ৬৫-৬৬)
এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে সুরা জাসিয়ার ৯, সুরা ফুরকানের ৪১-৪২, মুতাফফিফীনের ২৯-৩৩ এবং আলে ইমরানের ১০৬: আয়াতেও আলোচনা করা হয়েছে।
এক ব্যক্তির ঠাট্টা-মশকরার জবাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তাদের বলো! তোমাদের হাসি-তামাশা কি আল্লাহ, তাঁর আয়াত এবং তাঁর রাসুলের সঙ্গে ছিল? এখন আর ওজর পেশ কোরো না। তোমরা ইমান আনার পর কুফুরি করেছ।’ (তাফসিরে তারাবি, খণ্ড ১০, পৃষ্ঠা ১৭২)
৭. জাদু বা তন্ত্র-মন্ত্রের প্রয়োগে কিছু করার চেষ্টা
যদি কোনো মুমিন-মুসলমান জাদুর মাধ্যমে ভালো কিছু অর্জন ও মন্দ কিছু বর্জন করেন এবং প্রকাশ্য ও গোপন তন্ত্র-মন্ত্র বা জাদুর মাধ্যমে মানুষের ক্ষতি সাধন করেন, তাহলে তাঁর ইমান নষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহ–তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘কিন্তু শয়তানরাই কুফুরি করেছিল এবং তারা মানুষকে জাদু শিক্ষা দিত। তারা ভালোভাবেই জানে, যে জাদু অবলম্বন করে; পরকালে তার কোনো অংশ নেই।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১০২)
এ ছাড়া এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনের সুরা ত্বহার ৬৬, সুরা নামলের ৬৫: আয়াতে আলোচনা আছে।
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ধ্বংসাত্মক সাতটি কাজ বা বস্তু থেকে বেঁচে থাকো। সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করল, সেগুলো কী? রাসুল (সা.) বললেন, ‘আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা, জাদু করা।’ (বুখারি, হাদিস: ২৭৬৬, মুসলিম, হাদিস: ৮৯)
৮. মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফির বা মুশরিকদের সাহায্য করা
যদি কোনো মুমিন-মুসলমান কোনো কাফির বা মুশরিককে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সাহায্য-সহযোগিতা করেন, তাহলে তাঁর ইমান নষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহ–তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা তাদের (বিধর্মী) সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে, তারা তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিমদের পথপ্রদর্শন করেন না।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৫১)
এ ছাড়া এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনের সুরা নিসার ১৩৮-১৩৯, সুরা মায়েদার ৬২-৬৩, সুরা হাশরের ১১, সুরা নাহলের ১০৭ এবং সুরা মুজাদালাহর ২২: আয়াতে আলোচনা বিবৃত হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য গ্রহণ করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত বিবেচিত হবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪০৩১)
৯. ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো জীবনবিধান গ্রহণ বা সেটাকে উত্তম ভাবা
যদি কোনো মুমিন-মুসলমান ইসলাম বা রাসুল (সা.) আনীত জীবনবিধান ছাড়া অন্য কোনো জীবনবিধান গ্রহণ করেন বা সেটাকে উত্তম ভাবেন, তাহলে তাঁর ইমান নষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহ–তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম গ্রহণ করবে, তার কোনো আমল গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮৫)
এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে সুরা সাবার ২৮, সুরা আরাফের ১৫৮, সুরা ফুরকানের ১ এবং সুরা আলে ইমরানের ১৯: আয়াতেও আলোচনা রয়েছে।
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! এই উম্মতের কোনো ব্যক্তি, হোক সে ইহুদি বা নাসারা; যদি সে আমার আগমনের কথা শোনার পরও আমি যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছি তার ওপর ইমান না এনে মারা যায়, তাহলে সে জাহান্নামিদের দলর্ভুক্ত হবে।’ (মুসলিম, হাদিস: ১৫৩)
১০. আল্লাহর মনোনীত দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া
যদি কোনো মুমিন-মুসলমান আল্লাহর মনোনীত দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে তার ইমান নষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহ–তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘যখন কোনো ব্যক্তিকে আল্লাহর আয়াতসমূহ দ্বারা উপদেশ প্রদান করা হয়। অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তার চেয়ে জালিম আর কে হতে পারে? নিশ্চয়ই আমি (আল্লাহ) অপরাধীদের শাস্তি দেব। (সুরা সিজদাহ, আয়াত: ২২)
এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে সুরা আহকাফের ৩, সুরা আলে ইমরানের ৩২, লাইলের ১৪-১৬ এবং সুরা নুরের ৪৭: আয়াতেও আলোচনা রয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলামের পরিবর্তে অন্য কোনো ধর্মের ওপর শপথ করবে, সে ওই ধর্মের অনুসারী বলে গণ্য হবে।’ (বুখারি, হাদিস: ১৩৬৪, মুসলিম, হাদিস: ১১০)

বিট লবণ

 খাবারের স্বাদ বাড়াতে লবণ অতুলনীয়। তবে আমরা সবাই রান্নায় সাধারণ লবণই ব্যবহার করে থাকে। যা পরিমিত খাওয়া স্বাস্থ্যকর। তবে খাবারে বিট লবণের ব্যবহার খুব কম সংখ্যক মানুষই করে থাকেন। অনেকেই বিট লবণ খেতে পছন্দ করেন না। জানলে অবাক হবেন যে, বিট লবণ খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। বিট লবণ খাওয়ার ফলে নিজের অজান্তেই শরীরের অনেক রোগ থেকে মুক্তি মেলে।

আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বিট লবণ অনেক মারাত্মক রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে। অ্যাসিডিটি বা কোষ্ঠকাঠিন্যতা ও বমি বমি ভাবের মতো সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়।
ভারতের আয়ুর্বেদ চিকিত্সক আবরার মুলতানির মতে, বিট লবণ বা কালো লবণ গ্যাসের সমস্যা দূরে অনেক সহায়তা করে। সেই সঙ্গে কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, অবসাদ এবং পেট সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান এই লবণ। এ জন্য প্রতিদিন সকালে গরম জলে বিট লবণ মিশিয়ে খাওয়ার ফলে শরীর সুস্থ থাকবে।
বিট লবণের উপকারিতা
>> যারা সুগারের রোগী তাদের সাদা লবণের পরিবর্তে বিট লবণ খাওয়া উচিত। রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে বিট লবণ।
>> অনেকেই আছেন অনাকাঙ্ক্ষিত বেড়ে যাওয়া ওজন কমাতে চান। তাদের জন্য এই লবণ খুব সহায়ক। এই লবণে উপস্থিত খনিজগুলো অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল হিসেবে কাজ করে থাকে। ফলে শরীরে উপস্থিত বিপজ্জনক ব্যাকটেরিয়া দূর হয়। এছাড়াও এ লবণে সোডিয়ামের উপাদান বেশি রয়েছে। তাই শরীর সতেজ ও চাঙা রাখতে বিট লবণ অনেক উপকারী।
>> হজমজনিত সমস্যা এবং শরীরের কোষে পুষ্টি সরবরাহ করে বিট লবণ। এমনকি স্থূলতা নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে থাকে। পুষ্টি এবং খনিজ সমৃদ্ধ হওয়ায় নিয়মিত খাওয়ার ফলে শরীরের হাড় অনেক মজবুত থাকে।
Self Study

সাহায্য-সহযোগিতা করা ইসলামের শিক্ষা

 রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তুমি তোমার ভাইকে সাহায্য করো, চাই সে জালিম হোক অথবা মাজলুম; এ কথা বলার পর এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! সে যদি মাজলুম হয়, আমি তাকে সাহায্য করব—এটা বুঝতে পারলাম। সে জালিম হলে আমি তাকে কিভাবে সাহায্য করব—সে ব্যাপারে আপনার অভিমত কী? তখন তিনি বলেন, তাকে জুলুম করা থেকে বিরত রাখো, বাধা দাও; এটাই হলো তাকে সাহায্য করা। (বুখারি, হাদিস : ৬৫৫২; মুসলিম, হাদিস : ৬৭৪৭)

কোনো মুসলমান গরিব হলেও তাকে তুচ্ছ জ্ঞান করা যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এক মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই; সে তার প্রতি জুলুম করবে না, তাকে অপমান করবে না এবং তাকে তুচ্ছ জ্ঞান করবে না। (বুখারি, হাদিস : ৬৫৫১)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের মান-সম্মান নষ্ট করা থেকে নিজে বিরত থাকবে বা কাউকে বিরত রাখবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে জাহান্নামে দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৩১)

‘অজু’

 ‘অজু’

‘অজু’ আরবি শব্দ। এর অর্থ পরিচ্ছন্ন, সুন্দর ও স্বচ্ছ। পারিভাষিক অর্থে বিশেষ নিয়মে বিভিন্ন অঙ্গ ধৌত করাকে অজু বলা হয়। অজু নামাজের অপরিহার্য শর্ত।
অজুতে আছে বহুবিধ উপকার
কথা সর্বজনস্বীকৃত যে আল্লাহ তাআলার সৃজিত ঔষধে যেমন একাধিক উপকার ও কল্যাণ থাকে, অনুরূপ তাঁর বিধানের মধ্যেও বিভিন্ন হিকমত ও রহস্য লুক্কায়িত থাকে।
একেকটি লতা-পাতা ও ঔষধে তিনি হাজারো গুণাগুণ ও বৈশিষ্ট্য রেখেছেন। এমনকি একটি ঔষধ দ্বারা অনেক অনেক রোগ প্রতিহত হয়ে যায়। সুতরাং উল্লিখিত নিয়ম অনুযায়ী নিচে আমরা অজুর যতগুলো হিকমত ও রহস্য উল্লেখ করেছি। অজুর মধ্যে আরো বহু হিকমত আছে, যেগুলোর জ্ঞান আমাদের কাছে নেই।
অজু অলসতা দূর করে : অজু মানুষকে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ গুনাহ ও অলসতা বর্জন করার প্রতি প্রেরণা সৃষ্টি করে। যদি অজু ছাড়া নামাজ পড়া স্বীকৃত হতো, তাহলে মানুষ অলসতার মাঝে উন্মাদের মতো বিচরণ করত এবং অলসতা অবস্থায়ই নামাজে প্রবেশ করত। যেমন—পার্থিব চিন্তা-ফিকির ও ব্যস্ততায় লিপ্ত হয়ে মানুষ নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির মতো হয়ে যায়। তাই অলসতার নেশাকে দূর করার জন্য অজুর বিধান প্রবর্তন করা হয়েছে, যেন মানুষ একাগ্রচিত্তে ও নিবিষ্টমনে আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান হয়।
অজু আগত কষ্ট থেকে রক্ষা করে : চিকিতসাবিদদের অভিজ্ঞতা এ কথা চাক্ষুষ প্রমাণ বহন করে যে মানুষের দেহের অভ্যন্তরীণ বিষাক্ত পদার্থ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে বের হতে থাকে এবং তা হাত-পা, মুখ ও মাথার ওপর অবস্থান করে।
অতঃপর বিভিন্ন প্রকারের বিষাক্ত পদার্থ ফোঁড়া-পাঁচড়ার আকৃতিতে দেহে প্রকাশ পায়। আর দেহের অঙ্গগুলো ধৌত করার দ্বারা এসব দূষিত বস্তু দূর হয়ে যায়। হয়তো দেহের ভেতর এগুলোর উত্তপ্ততা পানির মাধ্যমে ঠাণ্ডা হয়ে যায় অথবা দেহ থেকে বের হয়ে যায়।
অজুর মাধ্যমে আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন : আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের নিয়তে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ পরিচ্ছন্নতা আল্লাহ তাআলার প্রিয় বান্দা বানিয়ে দেয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ (বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ) পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২২২)
অজু ফেরেশতাসুলভ স্বভাব তৈরি করে : যখন পবিত্রতার গুণ অন্তরে বদ্ধমূল হয়ে যায় তখন সর্বদা ফেরেশতাসুলভ গুণের জ্যোতি (নুর) ব্যক্তির মধ্যে অবস্থান করে এবং পশুত্বের অন্ধকার দূর হয়ে যায়।
অজু জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়ক : অজুর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন হয়। আর পবিত্রতা চরিত্রের মধ্যে জ্ঞানের উপকরণ বৃদ্ধি করে। আর জ্ঞান যখন পরিপূর্ণ হবে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কও তখন পরিপূর্ণ হবে।
অজু প্রশান্তি ও জ্যোতি ফিরিয়ে আনে : গুনাহ ও অলসতার কারণে আত্মার যে প্রশান্তি ও জ্যোতি দেহের অঙ্গ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে অজুর মাধ্যমে তা পুনরায় ফিরে আসে। এ আধ্যাত্মিক জ্যোতিই কিয়ামতের দিন অজুর অঙ্গগুলোতে উজ্জ্বল দীপ্তিমান হয়ে প্রকাশিত হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কিয়ামতের দিন যখন আমার উম্মত আগমন করবে তখন অজুর কারণে তাদের হাত, পা ও চেহারা জ্যোতিতে চমকাতে থাকবে। এ জন্য তোমাদের মধ্যে যার ইচ্ছা সে যেন তার জ্যোতি বৃদ্ধি করে নেয়।’ (বুখারি, হাদিস : ১৩৬)
অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘অজুর মাধ্যমে মানুষের অন্তরে নুর বা জ্যোতি সৃষ্টি হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে স্থান পর্যন্ত অজুর পানি পৌঁছবে সে স্থান পর্যন্ত মুমিন ব্যক্তির ঔজ্জ্বল্য বা সৌন্দর্য পৌঁছবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৪৭৪)
অজুর কারণে ফেরেশতাদের নৈকট্য লাভ হয় : পবিত্রতার কারণে ফেরেশতাদের সঙ্গে মানুষের নৈকট্য ও সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। কেননা, ফেরেশতারা নাপাক ও অপরিচ্ছন্ন লোকদের ঘৃণা করেন এবং পবিত্র লোকদের পছন্দ করেন। ফলে আল্লাহ তাআলার দরবারের নৈকট্যলাভের সৌভাগ্য হয়। অন্যদিকে পবিত্রতার কারণে মানুষের সঙ্গে শয়তানের দূরত্ব সৃষ্টি হয়।
অজু বিশেষ ইবাদতে প্রবেশের মাধ্যম : নামাজ আল্লাহর বিশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত, তাই সেই ইবাদতে প্রবেশ করার জন্য অজু আবশ্যক করা হয়েছে। এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘পবিত্রতা নামাজের চাবি।’ (মুসলিম, হাদিস : ২২৩)
আবেদন পেশ করার জন্য অজু : বাদশাহর কাছে আবেদন পেশ করা ও বাদশাহর আদেশ শোনার জন্য শাহি দরবারে যেতে হয়। দরবারে উপস্থিত হওয়ার জন্য সেসব শিষ্টাচার ও নিয়মের প্রতি দৃষ্টি রাখা হয়, তা আবেদনের মধ্যেই গণ্য করা হয়; কিন্তু আবেদনের জন্য যেভাবে মুখ এবং হুকুম শোনার জন্য কান প্রয়োজন, তেমনি দরবারে উপস্থিতির জন্য হাত, মুখ ও পা ধোয়া এবং পরিচ্ছন্ন পোশাক পরা আবশ্যক। এসব কিছু আবেদনের মধ্যে গণ্য করা হয়।
এ জন্য কোনো রাজা-বাদশাহর দরবারে গমন করলে বা কোনো উত্তম কাজের ইচ্ছা করলে এসব অঙ্গগুলোকে ধৌত করে। কেননা, এসব অঙ্গ উন্মুক্ত থাকায় ধুলাবালি পতিত হয়, তা ছাড়া পরস্পর সাক্ষাতের সময় এসব অঙ্গের প্রতি দৃষ্টি পড়ে। অজুর বিষয়টিও তেমনি। অজু নামাজের আনুষ্ঠানিকতা আল্লাহর দরবারে পেশ করার প্রাথমিক প্রস্তুতিস্বরূপ।
অজু দেহের প্রধান অঙ্গে শক্তি আনে : অভিজ্ঞতার আলোকে এ কথা প্রমাণিত যে হাত-পা ধৌত করা, চেহারা ও মাথার ওপর পানি ঢালার দ্বারা অন্তরের ওপর বিরাট প্রভাব পড়ে এবং দেহের প্রধান অঙ্গে শক্তি ও সচেতনতা সৃষ্টি হয়। এর দ্বারা অলসতা, অবহেলা এবং উন্মাদনা দূর হয়ে যায়। এ অভিজ্ঞতার সত্যতা বিচক্ষণ চিকিৎসক থেকে প্রমাণিত। কেননা, যে অচৈতন্য হয়েছে অথবা অনেক ডায়রিয়া হয়েছে অথবা যার শিঙ্গা লাগানো হয়েছে তার ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গে তারা পানি ঢালতে বলে থাকেন।
আল্লামা কুরশি (রহ.) তাঁর গ্রন্থে এবং অন্য চিকিতসকরা লিখেছেন : মুখ, হাত ও পায়ের ওপর পানি ছিটানো স্বভাবজাত উষ্ণতাকে সতেজ ও শক্তিশালী করে তোলে এবং ডায়রিয়া ও অন্য কষ্টের কারণে যে অচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে তাতে এ কাজ উপকার সাধন করে। এ কারণেই মানুষকে আদেশ করা হয়েছে যে নিজের আত্মার অলসতা, নিস্তেজতা ও অপরিচ্ছন্নতাকে অজুর মাধ্যমে দূর করো, যেন আল্লাহ তাআলার সামনে দাঁড়ানোর যোগ্যতা তৈরি হয়। কেননা, তিনি সদা জাগ্রত ও সতর্ক। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘...আল্লাহকে অলসতা ও নিদ্রা আচ্ছাদন করতে পারে না...।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৫৫)
সুতরাং অলস ও অসচেতন ব্যক্তি তাঁর সম্মুখে দাঁড়ানোর যোগ্যতা রাখে না, এ কারণেই নেশা অবস্থায় নামাজ আদায় করা স্বীকৃত নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তোমরা নামাজের কাছে যেয়ো না...।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৪৩)
আহকামে ইসলাম আকল কি নজর মে অবলম্বনে
সূত্র: মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ

খেজুর খাওয়ার অভ্যাস হোক

মরুঅঞ্চলের ফল খেজুর। পুষ্টিমানে যেমন এটি সমৃদ্ধ, তেমনি এর রয়েছে অসাধারণ কিছু ঔষধিগুণ। চিকিত্সাবিজ্ঞানে বলা হয়েছে, সারা বছর খেজুর খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়া, এই ফলটিতে রয়েছে প্রাণঘাতী রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা। চলুন জেনে নেই খেজুরের কিছু ঔষধি গুণাগুণ।

১. রুচি বাড়াতে খেজুরের কোন তুলনা হয় না। অনেক শিশুরা তেমন একটা খেতে চায় না, তাদেরকে নিয়মিত খেজুর খেতে দিলে রুচি ফিরে আসবে।

২. তুলনামূলকভাবে শক্ত খেজুরকে জলে ভিজিয়ে (সারা রাত) সেই জল খালি পেটে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। তাজা খেজুর নরম এবং মাংসল যা সহজেই হজম হয়।

৩. হৃদপিণ্ডের সমস্যা দূর করতে প্রতিদিন খেজুর খাওয়া অত্যন্ত জরুরী। গবেষণায় দেখা যায়, পুরোরাত খেজুর জলে ভিজিয়ে সকালে পিষে খাওয়ার অভ্যাস হার্টের রোগীর সুস্থতায় কাজ করে।

৪. ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ এই ফল দৃষ্টিশক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল বিদ্যমান থাকায় অনেক রোগ নিরাময় করা সম্ভব। সাথে সাথে আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে সহায়তা করে।

৫. খুব দুর্বল লাগছে অথবা দেহে এনার্জির অভাব হচ্ছে? তাহলে ঝটপট খেয়ে নিন খেজুর। তাত্ক্ষণিকভাবে দেহে এনার্জি সরবরাহের ক্ষেত্রে খেজুরের তুলনা নেই।

৬. খেজুর বিভিন্ন ক্যান্সার থেকে শরীরকে সুস্থ রাখতে অনেক ভূমিকা পালন করে থাকে। যেমন খেজুর লাংস ও ক্যাভিটি ক্যান্সার থেকে শরীরকে দূরে রাখতে সাহায্য করে।

৭. খেজুরের মধ্যে রয়েছে স্যলুবল এবং ইনস্যলুবল ফাইবার ও বিভিন্ন ধরণের অ্যামিনো অ্যাসিড যা সহজে খাবার হজমে সহায়তা করে। এতে করে খাবার হজম সংক্রান্ত সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

৮. খেজুরে আছে ডায়েটারী ফাইবার যা কলেস্টোরল থেকে মুক্তি দেয়। ফলে ওজন বেশি বাড়ে না, সঠিক ওজনে দেহকে সুন্দর রাখা যায়।

৯. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। পক্ষঘাত এবং সব ধরনের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অবশকারী রোগের জন্য খেজুর খুবই উপকারী।

১০. খেজুরের চূর্ণ মাজন হিসেবে ব্যবহার করলে দাঁত পরিষ্কার হয়।

১১. খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার অভ্যাস দেহের আয়রনের অভাব পূরণ করে এবং রক্তস্বল্পতা রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। যাদের এই রক্তস্বল্পতার সমস্যা রয়েছে তাদের প্রতিদিন খেজুর খাওর অভ্যাস করা উচিত। কারণ, রক্তস্বল্পতা ও শরীরের ক্ষয়রোধ করতে খেজুরের রয়েছে বিশেষ গুণ।

১২). খেজুর প্রসবোত্তর স্রাব বা পিরিয়ড বা LOCHIA থেকে নারীদের দ্রুত মুক্তি দেয়। আল্লাহ পাক আর কুরআনের সূরা মারিয়ামের ২৫ ও ২৬ নং আয়াতে তা স্পষ্ট করেছেন।
وَهُزِّي إِلَيْكِ بِجِذْعِ النَّخْلَةِ تُسَاقِطْ عَلَيْكِ رُطَبًا جَنِيًّا
এবং তুমি এ গাছের কাণ্ডটি একটু নাড়া দাও, তোমার ওপর তরতাজা খেজুর ঝরে পড়বে৷
Wa huzzeee ilaiki bijiz 'in nakhlati tusaaqit 'alaiki rutaban janiyyaa

فَكُلِي وَاشْرَبِي وَقَرِّي عَيْنًا
তারপর তুমি খাও, পান করো এবং নিজের চোখ জুড়াও৷

Fakulee washrabee wa qarree 'ainaa


Source: Al Quran
https://bn.quora.com/profile/Rashed-Khan-Gain