Friday, March 9, 2018

আল কুরআনের আলোকে রোগ-ব্যাধি ও নিরাময়


আল কুরআনের আলোকে রোগ-ব্যাধি ও নিরাময়
১. হে লোকেরা! তোমাদের কাছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে নসীহত এসে গেছে৷ এটি এমন জিনিস যা অন্তরের রোগের নিরাময় এবং যে তা গ্রহণ করে নেয় তার জন্য পথনির্দেশনা ও রহমত৷(সূরা ইউনূস আয়াত ৫৭) 
Yaaa aiyuhan naasu qad jaaa'atkum maw 'izatum mir Rabbikum wa shifaaa'ul limaa fis sudoori wa hudanw wa rahmatul lilmu'mineen

২. আমি এ কুরআনের অবতরণ প্রক্রিয়ায় এমন সব বিষয় অবতীর্ণ করছি যা মুমিনদের জন্য নিরাময় ও রহমত এবং জালেমদের জন্য ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই বৃদ্ধি করে না৷(সূরা বণী ইসরাঈল আয়াত ৮২)
অর্থাযারা এ কুরআনকে নিজেদের পথপ্রদর্শক এবং নিজেদের জন্য আইনের কিতাব বলে মেনে নেয়, তাদের জন্য তো এটি আল্লাহর রহমত এবং তাদের যাবতীয় মানসিক, বুদ্ধিবৃত্তিক নৈতিক ও তামাদ্দুনিক রোগের নিরাময় ৷ কিন্তু যেসব জালেম একে প্রত্যাখ্যান করে এবং এর পথনির্দেশনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নিজেরাই নিজেদের ওপর জুলুম করে এ কুরআন তাদেরকে এর নাযিল হবার বা একে জানার আগে তারা যে অবস্থায় ছিল তার ওপরও টিকে থাকতে দেয় না ৷ বরং তাদেরকে আরো বেশী ক্ষতির মধ্যে ঠেলে দেয় ৷ এর কারণ, যতদিন কুরআন আসেনি অথবা যতদিন তারা কুরআনের সাথে পরিচিত হয়নি ততদিন তাদের ক্ষতি ছিল নিছক মূর্খতা ও অজ্ঞতার ক্ষতি ৷
কিন্তু যখন কুরআন তাদের সামনে এসে গেলো এবং সে হক ও বাতিলের পার্থক্য সুস্পষ্ট করে দেখিয়ে দিল তখন তাদের ওপর আল্লাহর দাবী অকাট্যভাবে সঠিক প্রমাণিত হয়ে গেলো ৷ এখন যদি তারা তাকে প্রত্যাখ্যান করে গোমরাহীর ওপর অবিচল থাকার জন্য জোর দেয় ৷ তাহলে এর অর্থ হয় তারা অজ্ঞ নয় বরং জালেম ও বাতিল পন্থী এবং সত্যের প্রতি বিরূপ ৷ এখন তাদের অবস্থা হবে এমন ব্যক্তির মতো যে বিষ ও বিষের প্রতিশেধক উভয়টি দেখে বিষকে বেছে নেয় ৷ নিজেদের গোমরাহী ও ভ্রষ্টতার জন্য এখন তারা নিজেরাই হয় পুরোপুরি দায়ী এবং এরপর তারা যে কোন পাপ করে তার পূর্ণ শাস্তির অধিকারীও তারাই হয় ৷ এটি অজ্ঞতার নয় বরং জেনে শুনে দুষ্টামি ও দুষ্কৃতিতে লিপ্ত হওয়ার ক্ষতি এবং অজ্ঞতার ক্ষতির চাইতে এর পরিমাণ বেশী হওয়া উচিত ৷ একথাটিই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি ছোট তাতপর্যবহ বাক্যের মধ্যে বর্ণনা করেছেন ৷
Wa nunazzilu minal quraani maa huwa shifaaa'unw wa rahmatul lilmu;mineena wa laa yazeeduz zaalimeena illaa khasaaraa

৩. এবং রোগাক্রান্ত হলে তিনিই আমাকে রোগমুক্ত করেন৷(সূরা আশ শুয়ারা আয়াত ৮০)
একমাত্র আল্লাহর বন্দেগী করার স্বপক্ষে এটি হচ্ছে দ্বিতীয় যুক্তি(প্রথম যুক্তি হলো যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর তিনিই আমাকে পথ দেখিয়েছেন৷)৷ যদি তিনি মানুষকে কেবল সৃষ্টি করেই ছেড়ে দিতেন এবং সামনের দিকে তার দুনিয়ার জীবন যাপনের সাথে কোন প্রকার সম্পর্ক না রাখতেন তাহলেও মানুষের তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য কারো সহায়তা চাওয়ার কোন যুক্তিসংগত কারণ থাকতো৷ কিন্তু তিনি তো সৃষ্টি করার সাথে সাথে পথনির্দেশনা, প্রতিপালন, দেখাশুনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রয়োজন পূর্ণ করার দায়িত্ব নিজেই নিয়েছেন৷ যে মুহূর্তে মানুষ দুনিয়ায় পদার্পণ করে তখনই তার মায়ের বুকে দুধের ধারা সৃষ্টি হয়৷ অন্যদিকে কোন অদৃশ্য শক্তি তাকে স্তন চোষার ও গলা দিয়ে দুধ নিচের দিকে নামিয়ে নেবার কায়দা শিখিয়ে দেয়৷ তারপর এ প্রতিপালন, প্রশিক্ষণ ও পথ প্রদর্শনের কাজ প্রথম দিন থেকে শুরু হয়ে মৃত্যুর শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বরাবর চালু থাকে৷ জীবনের প্রতি পর্যায়ে মানুষের নিজের অস্তিত্ব, বিকাশ , উন্নয়ন ও স্থায়ীত্বের জন্য যেসব ধরনের সাজ-সরঞ্জামের প্রয়োজন হয় তা সবই তার স্রষ্ট পৃথিবী থেকে আকাশ পর্যন্ত সর্বত্রই সঠিকভাবে যোগান দিয়ে রেখেছেন৷ এ সাজ-সরঞ্জাম থেকে লাভবান হবার এবং একে কাজে লাগাবার জন্য তার যে ধরনের শক্তি ও যোগ্যতার প্রয়োজন তা সবও তার আপন সত্তায় সমাহিত রাখা হয়েছে৷ জীবনের প্রতিটি বিভাগে তার যে ধরনের পথনির্দেশনার প্রয়োজন হয় তা দেবার পূর্ণ ব্যবস্থাও তিনি করে রেখেছেন৷ এর সংগে তিনি মানবিক অস্তিত্বের সংরক্ষণের এবং তাকে বিপদ-আপদ, রোগ-শোক , ধ্বংসকর জীবাণু ও বিষাক্ত প্রভাব থেকে রক্ষা করার জন্য তার নিজের শরীরের মধ্যে এমন শক্তিশালী ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন মানুষের জ্ঞান এখনো যার পুরোপুরি সন্ধান লাভ করতে পারেনি৷ আল্লাহর এ শক্তিশালী প্রাকৃতিক ব্যবস্থা যদি না থাকতো, তাহলে সামান্য একটি কাঁটা শরীরের কোন অংশে ফুটে যাওয়াও মানুষের জন্য ধ্বংসকর প্রমাণিত হতো এবং নিজের চিকিতসার জন্য মানুষের কোন প্রচেষ্টাই সফল হতো না৷ স্রষ্টার এ সর্বব্যাপী অনুগ্রহ ও প্রতিপালন কর্মকাণ্ড যখন প্রতি মুহূর্তে সকল দিক থেকে মানুষকে সাহায্য করছে তখন মানুষ তাকে বাদ দিয়ে অন্য কোন সত্তার সামনে মাথা নত করবে এবং প্রয়োজন পূরণ ও সংকট উত্তরণের জন্য অন্য কারো আশ্রয় গ্রহণ করবে, এর চেয়ে বড় মূর্খতা ও বোকামী এবং এর চেয়ে বড় অকৃতজ্ঞতা আর কি হতে পারে ?
Wa izaa mardtu fahuwa yashfeen

৪. এদের বলো, এ কুরআন মু’মিনদের জন্য হিদায়াত ও রোগ মুক্তি বটে৷ কিন্তু যারা ঈমান আনে না এটা তাদের জন্য পর্দা ও চোখের আবরণ৷ তাদের অবস্থা হচ্ছে এমন যেন দূর থেকে তাদেরকে ডাকা হচ্ছে৷ (সূরা হামীম আস্ সাজদা আয়াত ৪৪)

অর্থাদূর থেকে যখন কাউকে ডাকা হয় তখন তার কানে একটা আওয়াজ প্রবেশ করে ঠিকই তবে আওয়াজ দাতা কি বলছে তা সে বুঝতে পারে না৷ এটা এমন একটা নজির বিহীন উপমা যার মাধ্যমে হঠকারী বিরোধীদের পুরো মনস্তাত্ত্বিক চিত্র চোখের সামনে ফুটে ওঠে৷ বিদ্বেষ বা পক্ষপাত দোষ মুক্ত লোকের সামনে যদি আপনি কথা বলেন, তাহলে সে তা শোনে, বুঝার চেষ্ট করে এবং যুক্তিসংগত কথা হলে খোলা মনে তা গ্রহণ করে৷ এটাই স্বভাবিক৷ পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আপনার বিরুদ্ধে শুধু বিদ্বেষই পোষণ করেনা, বরং শত্রুতাও পোষণ করে তাকে আপনি আপনার কথা যতই বুঝাতে চেষ্টা করবেন সে আদৌ সে কথার প্রতি মনোযোগী হবে না৷ আপনার সব কথা শোনার পরও এত সময় ধরে আপনি তাকে কি বললেন তা সে বুঝবে না৷ আপনিও মনে করবেন যেন আপনার কথা তার কানের পর্দায় ধাক্কা খেয়ে বাইরে দিয়েই চলে গেছে, মন ও মগজে প্রবেশ করার মত কোন রাস্তাই খুঁজে পায়নি৷ 
qul huwa lillazeena aamanoo hudanw wa shifaaa'unw wallazeena la yu'minoona feee aazaanihim waqrunw wa huwa 'alaihim 'amaa; ulaaa'ika yunaadawna mim maakaanim ba'eed

৫. আমরা রোগাক্রান্ত হই। আমরা রোগের চিকিতসার জন্য চিকিতসকের দ্বারস্থ হই ও চিকিতসা করি। আল্লাহর রহমতে আমরা রোগমুক্ত হই। মূলত: আল্লাহ পাক হচ্ছেন আমাদের রোগনিরাময়কারী। মহান আল্লাহপাক সকল রোগ নিরাময়ের ব্যবস্থা করে রেখেছেন।
‘তিনি মুমিনদের অন্তরের রোগ নিরাময়কারী’ (সূরা তওবা: আয়াত ১৪) ।
Qaatiloohum yu'az zibhumul laahu bi aideekum wa yukhzihim wa yansurkum 'alaihim wa yashfi sudoora qawmim mu 'mineen

৬. ‘উহার উদর হতে নির্গত হয় বিবিধ বর্ণের পানীয় যাতে মানুষের জন্য রয়েছে আরোগ্য’ (সূরা নাহল: আয়াত ৬৯) ।
yakhruju mim butoonihaa sharaabum mukh talifun alwaanuhoo feehi shifaaa'ul linnaas,
৭. রোগ মুমিনের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ। আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের বিভিন্ন প্রকার রোগের মাধ্যমে পরীক্ষা করেন। আল্লাহ বলেন: “আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করব ভয়-ভীতি, ক্ষুধা, জান-মাল ও ফসলের স্বল্পতা দ্বারা, (হে রাসূল!) তুমি ধৈর্য্যশীলদের সুসংবাদ দাও।” (সূরা আল-বাকারাহ: ১৫৫)
Wa lanablu wannakum bishai'im minal khawfi waljoo'i wa naqsim minal amwaali wal anfusi was samaraat; wa bashshiris saabireen

০৮.  আর (এ একই বুদ্ধিমত্তা, প্রজ্ঞা ও জ্ঞান) আমি আইয়ুবকে দিয়েছিলাম৷  স্মরণ করো, যখন সে তার রবকে ডাকলো, “আমি রোগগ্রস্ত হয়ে গেছি এবং তুমি করুণাকারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ করুণাকারী৷” (সূরা আল আম্বিয়া আয়াত ৮৩)
Rabbahooo annee massaniyad durru wa Anta arhamur raahimeen
দোয়ার ধরন অত্যন্ত পবিত্র, সূক্ষ্ম ও নমনীয়! সংক্ষিপ্ত বাক্যের সাধ্যমে নিজের কষ্টের কথা বলে যাচ্ছেন এবং এরপর একথা বলেই থেমে যাচ্ছেন- "তুমি করুণাকারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ৷" পরে কেন অভিযোগ ও নালিশ নেই, কোন জিনিসের দাবী নেই৷ দোয়ার এই ভংগিমা যে উন্নত মর্যাদা সম্পন্ন চিত্রটি তুলে ধরে তা হচ্ছে এই যে, কোন পরম ধৈর্যশীল, অল্পে তুষ্ট, ভদ্র ও আত্মমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি দিনের পর দিন অনাহার ক্লিষ্টতার দুঃসহ জ্বালায় ব্যাকুল হয়ে কোন পরমদাতা ও দয়ালু ব্যক্তির সামনে কেবলমাত্র এতটুকু বলেই ক্ষান্ত হয়ে যায়, "আমি অনাহারে আছি এবং আপনি বড়ই দানশীল৷" এরপর সে আর মুখে কিছুই উচ্চারণ করতে পারে না৷
০৯. আমি তার দোয়া কবুল করেছিলাম, তার যে কষ্ট ছিল তার দূর করে দিয়েছিলাম।-(সূরা আল আম্বিয়া আয়াত ৮৪)
Fastajabnaa lahoo fakashaf naa maa bihee min durrinw wa aatainaahu ahlahoo wa mislahum ma'ahum rahmatam min 'indinaa wa zikraa lil'aabideen

সম্ভবত: হযরত আইয়ূব কোন কঠিন চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। বাইবেলও একথাই বলে যে, তাঁর সারা শরীর ফোঁড়ায় ভরে গিয়েছিল। এ রোগে আক্রান্ত হবার পর হযরত আইয়ূবের স্ত্রী ছাড়া আর সবাই তাঁর সঙ্গ ত্যাগ করেছিল, এমন কি সন্তানরাও তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল।
রোগের প্রচণ্ডতা, ধন-সম্পদের বিনাশ এবং আত্মীয়-স্বজনদের মুখ ফিরিয়ে নেবার কারণে তিনি যে কষ্ট ও যন্ত্রণার মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন তার চেয়ে বড় কষ্ট ও যন্ত্রণা ছিল এই জন্য এই যে, শয়তান তার প্ররোচনার মাধ্যমে তাঁকে বিপদগ্রস্ত করছে। এ অবস্থায় শয়তান, আইয়ূব (আ.)কে মহান রব থেকে হতাশ করার চেষ্টা করে, মহান রবের প্রতি অকৃতজ্ঞ করাতে চায় এবং তিনি যাতে অধৈর্য্য হয়ে উঠেন সে প্রচেষ্টায় রত থাকে। কিন্তু আইয়ূব আ. শয়তানের প্ররোচনার ফাঁদে পা দেন নি। তিনি নিজের শারীরিক কষ্টের কোন অভিযোগ করেন নি। অবৈধ বা শির্কের পথে পা বাড়াননি।
এখনও শয়তান আমাদের অনেকের জীবনের অসুস্থতা বা বিপদের সুযোগ নিয়ে শির্কের পথে (মাজার, অবৈধ পীর বা তাবিজ, শরীয়ত বিরোধী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে) সহজে নিয়ে যেতে প্রচেষ্টা চালায়। অনেক মুসলিম ভাই বোনেরা অজ্ঞতার কারনে বা অধৈর্যের বশবর্তী হয়ে শয়তানের ফাঁদে পা বাড়িয়ে ফেলেন। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

Wednesday, March 7, 2018

শাফায়াত বা সুপারিশ, কুরআনের আলোকে


শাফায়াত বা সুপারিশ, কুরআনের আলোকে
দুনিয়ার মানুষের গোমরাহীর বড় কারণগুলোর ভেতর একটি হলো শাফায়াত বা সুপারিশ বিষয়ে অস্পষ্ট ধারনা তথা ভুল ধারনা। তাই আল কুরআন এটাকে শাফায়াত সম্পর্কে কুরআন মজীদের বহু স্থানে এত স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, কে শাফায়াত করতে সক্ষম আর কে সক্ষম নয়, কোন অবস্থায় শাফায়াত করা যায় আর কোন অবস্থায় যায় না৷ কার জন্য করা যায় আর কার জন্য যায় না এবং কার জন্য তা কল্যাণকর আর কার জন্য তা কল্যাণকর নয় তা জানা কারো জন্য কঠিন নয়৷ পৃথিবীতে মানুষের গোমরাহীর বড় বড় কারণের মধ্যে একটি হলো শাফায়াত সম্পর্কে ভ্রান্ত আকীদা-বিশ্বাস পোষণ৷ তাই বিষয়টি কুরআন এত খোলামেলা ও স্পষ্ট করে বর্ণনা করেছে যে, এ ক্ষেত্রে সন্দেহের আর কোন অবকাশই বাকী রাখেনি৷
১. সূরা আল বাক্কারাহ আয়াত ২৫৫
man zallazee yashfa'u indahooo illaa be iznih
কে আছে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করবে?
এখানে এক শ্রেণীর মুশরীকদের চিন্তার প্রতিবাদ করা হয়েছে, যারা বুযুর্গ ব্যক্তিবর্গ, ফেরেশস্তা বা অন্যান্য সত্তা সম্পর্কে এই ধারণা পোষণ করে যে, আল্লাহর ওখানে তাদের বিরাট প্রতিপত্তি ৷ তারা যে কথার ওপর অটল থাকে, তা তারা আদায় করেই ছাড়ে৷ আর আল্লাহর কাছ থেকে তারা যে কোন কার্যোদ্ধার করতে সক্ষম৷ এখানে তাদেরকে বলা হচ্ছে, আল্লাহর কাছ থেকে তারা যে কোন কার্যোদ্ধার করতে সক্ষম৷ এখানে তাদেরকে বলা হচ্ছে, আল্লাহর ওখানে প্রতিপত্তির তো কোন প্রশ্নই ওঠে না, এমনকি কোন শ্রেষ্ঠতম পয়গম্বর এবং কোন নিকটতম ফেরেশতাও এই পৃথিবী ও আকাশের মালিকের দরবারে বিনা অনুমতিতে একটি শব্দও উচ্চারণ করার সাহস রাখে না৷ 
২. সূরা ইউনূস আয়াত ০৩.
maa min shafee'in illaa mim ba'di iznih
কোন শাফায়াতকারী (সুপারিশকারী) এমন নেই, যে তার অনুমতি ছাড়া শাফায়াত করতে পারে৷
অর্থাত দুনিয়ার পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় অন্য কারোর হস্তক্ষেপ করা তো দূরের কথা, কারোর আল্লাহর কাছে সুপারিশ করে তার কোন ফায়সালা পরিবর্তন করার অথবা কারোর ভাগ্য গড়ার ইখতিয়ারও নেই৷ বড়জোর সে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারে৷ কিন্তু তার দোয়া কবুল হওয়া না হওয়া পুরোপুরি আল্লাহর ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল৷আল্লাহর এ একচ্ছত্র কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার রাজ্যে নিজের কথা নিশ্চিতভাবে কার্যকর করিয়ে নেবার মতো শক্তিধর কেউ নেই৷ এমন শক্তি কারোর নেই যে, তার সুপারিশকে প্রত্যাখ্যাত হওয়া থেকে বাঁচতে পারে এবং আল্লাহর আরশের পা জড়িয়ে ধরে বসে থেকে নিজের দাবী আদায় করে নিতে পারে৷
৩. সূরা আল আনয়াম আয়াত ৫১
Wa anzir bihil lazeena yakhaafoona ai yuhsharooo ilaa Rabbihim laisa lahum min doonihee waliyyunw wa laa shafee'ul la'allahum yattaqoon

আর হে মুহাম্মাদ! তুমি এ অহীর জ্ঞানের সাহায্যে তাদেরকে নসিহত করো যারা ভয় করে যে, তাদেরকে তাদের রবের সামনে কখনো এমন অবস্থায় পেশ করা হবে যে, সেখানে তাদের সাহায্য-সমর্থন বা সুপারিশ করার জন্য তিনি ছাড়া আর কেউ (ক্ষমতা ও কর্তৃত্বশালী) থাকবে না৷ হয়তো ( এ নসিহতের কারণে সতর্ক হয়ে) তারা আল্লাহভীতির পথ অবলম্বন করবে৷
এর অর্থ হচ্ছে, যারা দুনিয়ার জীবনে এমন ভাবে নিমগ্ন হয়েছে যে, তাদের মৃত্যুর চিন্তাই নেই এবং কখনো আল্লাহর সামনে হাযির হতে হবে এমন কথা ভাবেও না, তাদের জন্য এ নসীহত কখনো ফলপ্রসূ হবে না৷ অনুরূপভাবে যারা এই ভিত্তিহীন ভরসায় জীবন যাপন করছে যে, দুনিয়ার তারা যাই কিছু করুক না কেন আখেরাতে তাদের সামান্যতম ক্ষতিও হবে না, কারণ তারা অমুকের সাথে সম্পর্ক পাতিয়ে রেখেছে৷ অমুক তাদের জন্য সুপারিশ করবে অথবা অমুক তাদের সমস্ত পাপের প্রায়শ্চিত্ত করেছে, তাদের ওপরও এর কোন প্রভাব পড়বে না৷ কাজেই এ ধরনের লোকদেরকে বাদ দিয়ে তুমি এমন লোকদেরকে সম্বোধন করো যাদের মনে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবার ভীতি বিরাজমান এবং তাঁর ব্যাপারে কোন মিথ্যা আশ্বাসবাণীতে বিশ্বাস করে না৷ কেবলমাত্র এ ধরনের লোকদের ওপরও এ নসীহতের প্রভাব পড়তে পারে এবং তাদের সংশোধনের আশা করা যেতে পারে৷
৪. সূরা আল আনয়াম আয়াত ৯৪
Wa laqad ji'tumoonaa furaadaa kamaa khalaqnaakum awwala marratinw wa taraktum maa khawwalnaakum waraaa'a zuhoorikum wa maa naraa ma'akum shufa'aaa' akumul lazeena za'amtum annahum feekum shurakaaa'; laqat taqatta'a bainakum wa dalla 'annkum maa kuntum taz'umoon 
(আর আল্লাহ বলবেনঃ) ‘‘দেখো এবার তোমরা ঠিক তেমনি নিঃসংগ ও একাকী আমার সামনে হাযির হয়ে গেছো যেমনটি তোমাদের প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম, যা কিছু তোমাদের দুনিয়ায় দিয়েছিলাম তা সব তোমরা পেছনে রেখে এসেছো এবং এখন তোমাদের সাথে তোমাদের সে সব সুপারিশকারীদেরকেও দেখছি না যাদের সম্পর্কে তোমরা মনে করতে তোমাদের কার্য সম্পাদান করার ব্যাপারে তাদেরও কিছুটা অবদান আছে৷ তোমাদের মধ্যকার সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে এবং তোমরা যেসব ধারণা করতে তা সবই তোমাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেছে৷’’
৫. সূরা আল মুদ্দাস্সির আয়াত ৪৮
Famaa tanfa'uhum shafaa'atush shaafi'een
সে সময় সুপারিশকারীদের কোন সুপারিশ তাদের কাজে আসবে না৷  
অর্থাত যারা মৃত্যু পর্যন্ত এ নীতি অনুসরণ করেছে তাদের জন্য শাফায়াত করলেও সে ক্ষমা লাভ করতে পারবে না৷
৬. সূরা আল মুদ্দাস্সির আয়াত ৪০-৪৭
Fee jannaatiny yata saaa'aloon
'Anil mujrimeen
Maa salakakum fee saqar
Qaaloo lam naku minal musalleen
Wa lam naku nut'imul miskeen
Wa kunnaa nakhoodu ma'al khaaa'ideen
Wa kunnaa nukazzibu bi yawmid Deen
Hattaaa ataanal yaqeen

যারা জান্নাতে অবস্থান করবে৷  
সেখানে তারা অপরাধীদের জিজ্ঞসা করতে থাকবে
জান্নাত জাহান্নামের অধিবাসীরা পরস্পর থেকে লাখ লাখ মাইল দূরে অবস্থান করা সত্ত্বেও যখনই ইচ্ছা করবে কোন যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই একে অপরকে দেখতে পাবে এবং সরাসরি কথাবার্তাও বলতে পারবে
কিসে তোমাদের দোযখে নিক্ষেপ করলো৷  
তারা বলবোঃ আমরা নামায পড়তাম না
যেসব মানুষ আল্লাহ, তাঁর রসূল এবং তাঁর কিতাবকে মেনে নিয়ে মানুষের কাছে আল্লাহর প্রাথমিক হক অর্থাত নামায ঠিকমত আদায় করেছে আমরা তাদের মধ্যে অন্তরভুক্ত ছিলাম না৷ ক্ষেত্রে একথাটি খুব ভাল করে বুঝে নেয়া দরকার যে,কোন ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত নামায পড়তেই পারে না যতক্ষণ না সে ঈমান আনে৷তাই নামাযী হওয়ার অনিবার্য অর্থ হচ্ছে ঈমানাদার হওয়া৷ কিন্তু নামাযী না হওয়াকে দোযখে যাওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করার মাধ্যমে স্পষ্ট করে একথাই বলা হয়েছে যে,কোন ব্যক্তি নামায না পড়লে ঈমানদার হওয়া সত্ত্বেও সে দোখয থেকে বাঁচতে পারবে না৷
অভাবীদের খাবার দিতাম না৷
এ থেকে জানা যায় কোন মানুষকে ক্ষুধার্ত দেখার পর সামর্থ থাকা সত্ত্বেও খাবার না দেয়া ইসলামের দৃষ্টিতে কত বড় গোনাহ যে, মানুষের দোযখে যাওয়ার কারণসমূহের মধ্যে এটাকেও একটা কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে৷ 
সত্যের বিরুদ্ধে অপবাদ রটনাকারীদের সাথে মিলে আমরাও রটনা করতাম
প্রতিফল দিবস মিথ্যা মনে করতাম৷ 
শেষ পর্যন্ত আমরা সে নিশ্চিত জিনিসের মুখোমুখি হয়েছি৷
মৃত্যু পর্যন্ত আমরা নীতি কর্মপন্থা অনুসরণ করেছি৷ শেষ পর্যন্ত সে নিশ্চিত বিষয়টি আমাদের সামনে এসে হাজির হয়েছে যে সম্পর্কে আমরা গাফিল হয়ে পড়েছিলাম৷ নিশ্চিত জিনিসের মুখোমুখি বলে মৃত্যু আখেরাত উভয়টিকেই বুঝানো হয়েছে৷

৭. সূরা হুদ আয়াত ১০৫
Yawma yaati laa takallamu nafsun illaa bi iznih; faminhum shaqiyyunw wa sa'eed
সেদিন যখন আসবে তখন কারোর কথা বলার সামর্থ থাকবে না, তবে আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে কেউ কথা বলতে পারবে৷ তারপর আবার সেদিন কিছু লোক হবে হতভাগ্য এবং কিছু লোক ভাগ্যবান৷ 
এ নির্বোধরা নিজেদের মনে এ ধারণা নিয়ে বসে আছে যে, অমুক হুযুর আমাদের পক্ষে সুপারিশ করে আমাদের বাঁচিয়ে দেবেন, অমুক বুযর্গ জিদ ধরে বসে যাবেন এবং নিজের সাথে সম্পর্কিত প্রত্যেক গুনাহ মাফ করিয়ে না নিয়ে নিজের জায়গা থেকে উঠবেন না৷ অমুক হুযুর, যিনি আল্লাহর প্রিয়পাত্র, জান্নাতের পথে গোঁ ধরে বসে পড়বেন এবং নিজের অনুসারীদের বখশিশের পরোয়ানা আদায় করিয়ে নিয়েই ছাড়বেন৷ অথচ জিদ করা ও গোঁ ধরাতো দূরের কথা সেদিনের সেই আড়ম্বরপূর্ণ মহিমান্বিত আদালতে অতি বড় কোন গৌরবান্বিত ব্যক্তি এবং মর্যাদাসম্পন্ন ফেরেশতাও টু শব্দটি করতে পারবে না৷ আর যদি কেউ সেখানে কিছু বলতে পারে তাহলে একমাত্র বিশ্ব জাহানের সর্বময় ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের মহান অধিকারীর নিজের প্রদত্ত অনুমতি সাপেক্ষেই বলতে পারবে৷ কাজেই যারা একথা বুঝেই গায়রুল্লাহর বেদীমূলে নযরানা ও ভেঁট চড়ায় যে, এরা আল্লাহর দরবারে বড়ই প্রভাবশালী এবং তাদের সুপারিশের ভরসায় নিজেদের আমলনামা কালো করে যেতে থাকে, তাদের সেখানে চরম হতাশার সম্মুখীন হতে হবে৷
৮. সূরা আন নাহ্ল আয়াত ৭৪
Falaa tadriboo lillaahil amsaal; innal laaha ya'lamu wa antum laa ta'lamoon
কাজেই আল্লাহর জন্য সদৃশ তৈরি করো না, আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না৷
'আল্লাহর জন্য সদৃশ তৈরী করো না" বা আল্লাহকে দুনিয়ার রাজা-মহারাজা ও বাদশাহ- শাহানশাহদের সমপর্যায়ে রেখে বিচার করো না৷ রাজা- বাদশাহদের অনুচর, সভাসদ ও মোসাহেবদের মাধ্যম ছাড়া তাদের কাছে কেউ নিজের আবেদন নিবেদন পৌঁছাতে পারে না৷ ঠিক তেমনি আল্লাহর ব্যাপারেও তোমরা এ ধারণা করতে থাকো যে, তিনি নিজের শাহী মহলে ফেরেশতা, আউলিয়া ও অন্যান্য সভাসদ পরিবৃত হয়ে বিরাজ করছেন এবং এদের মাধ্যমে ছাড়া তাঁর কাছে কারোর কোন কাজ সম্পন্ন হতে পারে না ৷ 
৯. সূরা মারিয়াম আয়াত ৮৭
Laa yamlikoonash shafaa'ta illaa manittakhaza 'indar Rahmaani 'ahdaa
সে সময় রহমানের কাছ থেকে পরোয়ানা হাসিল করেছে তার ছাড়া আর কারো সুপারিশ করার ক্ষমতা থাকবে না৷
অর্থাত যে পরোয়ানা হাসিল করে নিয়েছে তার পক্ষেই সুপারিশ হবে এবং যে পরোয়ানা পেয়েছে সে-ই সুপারিশ করতে পারবে৷ আয়াতের শব্দগুলো দু'দিকেই সমানভাবে আলোকপাত করে৷
সুপারিশ কেবলমাত্র তার পক্ষেই হতে পারবে যে রহমান থেকে পরোয়ানা হাসিল করে নিয়েছে, একথার অর্থ হচ্ছে এই যে, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় ঈমান এনে এবং আল্লাহর সাথে কিছু সম্পর্ক স্থাপন করে নিজেকে আল্লাহর ক্ষমার হকদার বানিয়ে নিয়েছে একমাত্র তার পক্ষেই সুপারিশ হবে৷ আর সুপারিশ একমাত্র সে-ই করতে পারবে যে পরোয়ানা লাভ করবে, একথার অর্থ হচ্ছে এই যে, লোকেরা যাদেরকে নিজেদের সুপারিশকারী মনে করে নিয়েছে তাদের সুপারিশ করার ক্ষমতা থাকবে না বরং আল্লাহ নিজেই যাদেরকে অনুমতি দেবেন একমাত্র তারাই সুপারিশ করার জন্য মুখ খুলবেন৷

১০. সূরা ত্বা হা আয়াত ১০৯
Yawma 'izil laa tanfa'ush shafaa'atu illaa man azina lahur Rahmaanu wa radiya lahoo qawlaa
সেদিন সুপারিশ কার্যকর হবে না, তবে যদি করুণাময় কাউকে অনুমতি দেন এবং তার কথা শুনতে পছন্দ করেন৷ 
৮৫. এ আয়াতের দুটি অনুবাদ হতে পারে৷ একটি অনুবাদ আমরা অবলম্বন করেছি৷ দ্বিতীয়টি হচ্ছে, "সেদিন সুপারিশ কার্যকর হবে না, তবে যদি কারো পক্ষে করুণাময় এর অনুমতি দেন এবং তার জন্য কথা শুনতে রাজি হয়ে যান"৷ এখানে এমন ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যা উভয় ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আর প্রকৃত ব্যাপারও এই যে, কিয়াতমের দিন কারো সুপারিশ করার জন্য স্বতপ্রণোদিত হয়ে মুখ খোলা তো দূরের কথা, টুঁ শব্দটি করারও কারোর সাহস হবে না৷ আল্লাহ যাকে বলার অনুমতি দেবেন একমাত্র সেই-ই সুপারিশ করতে পারবে৷

১১. সূরা আল আম্বিয়া আয়াত ২৮
Ya'lamu maa baina aideehim wa maa khalfahum wa laa yashfa'oona illaa limanir tadaa wa hum min khash yatihee mushfiqoon
যাকিছু তাদের সামনে আছে এবং যাকিছু আছে তাদের অগোচরে সবই তিনি জানেন৷ যাদের পক্ষে সুপারিশ শুনতে আল্লাহ সম্মত তাদের পক্ষে ছাড়া আর কারো সুপারিশ তারা করে না এবং তারা তাঁর ভয়ে ভীত৷
মুশরিকরা দু'টি কারণে ফেরেশতাদেরকে মাবুদে পরিণত করতো৷ এক, তাদের মতে তারা ছিল আল্লাহর সন্তান, দুই তাদরকে পূজা (খোশামোদ তোশামোদ) করার মাধ্যমে তারা তাদেরকে আল্লাহর কাছে নিজেদের জন্য শাফায়াতকারীতে (সুপারিশকারী) পরিণত করতে চাচ্ছিল৷
১২. সূরা সাবা আয়াত ২৩
Wa laa tanfa'ush shafaa'atu 'indahooo illaa liman azina lah; hattaaa izaa fuzzi'a 'an quloobihim qaaloo maazaa qaala Rabbukum; qaalul haqq, wa Huwal 'Aliyul Kabeer

আর যে ব্যক্তির জন্য আল্লাহ শাফায়াত করার অনুমতি দিয়েছেন আল্লাহর কাছে তার জন্য ছাড়া আর কার জন্য কোন শাফায়াত উপকারী হতে পারে না৷ এমনকি যখন মানুষের মন থেকে আশংকা দূর হয়ে যাবে তখন তারা (সুপারিশকারীদেরকে) জিজ্ঞেস করবে, তোমাদের রব কি জবাব দিয়েছেন? তারা বলবে, ঠিক জবাব পাওয়া গেছে এবং তিনি উচ্চতম মর্যাদা সম্পন্ন ও শ্রেষ্ঠতম৷ 
কিয়ামতের দিন কোন সুপারিশকারী যখন কারো পক্ষে সুপারিশ করার অনুমতি চাইবে তখনকার চিত্র এখানে তুলে ধরা হয়েছে৷ সে চিত্রে আমাদের সামনে যে অবস্থা ফুটে উঠছে তা হচ্ছে এই যে, অনুমতি চাওয়ার আবেদন পেশ করার পর সুপারিশকারীও যার পক্ষে সুপারিশ করা হবে তারা দুজনই অত্যন্ত অস্থিরভাবে ভীতি ও উদ্বেগের সাথে জবাবের জন্য প্রতীক্ষারত৷ শেষ পর্যন্ত যখন ওপর থেকে অনুমিত এসে যায় এবং সুপারিশকারীর চেহারা দেখে যার পক্ষে সুপারিশ করা হবে সে ব্যাপারটা আর উদ্বেগজনক নয় বলে অনুমান করতে থাকে তখন তার ধড়ে যেন প্রান ফিরে আসে৷ সে এগিয়ে গিয়ে সুপারিশকারীকে জিজ্ঞেস করতে থাকে, কি জবাব এসেছে? সুপারিশকারী বলে, এই যে, নির্বোধের দল! এ হচ্ছে যে দরবারের অবস্থা সে সম্পর্কে তোমরা কেমন করে এ ধারণা করতে পারলে যে সেখানে কেউ নিজের বল প্রয়োগ করে তোমাদেরকে ক্ষমা করিয়ে দেবে অথবা কারো সেখানে ধর্ণা দিয়ে বসে পড়ে আল্লাহকে একথা বলার সাহস হবে যে, এ ব্যক্তি আমার প্রিয়পাত্র এবং আমার লোক, একে মাফ করতেই হবে?
১৩. সূরা আয যুমার আয়াত ৪৩-৪৪
Amit takhazoo min doonillaahi shufa'aaa'; qul awalaw kaanoo laa yamlikoona shai'aw wa laa ya'qiloon
Qul lillaahish shafaa'atu jamee'aa; lahoo mulkus samaawaati wal ardi summa ilaihi turja'oon
সব লোক কি আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে সুপারিশকারী বানিয়ে রেখেছে? তাদেরকে বলো, তাদের ক্ষমতা ও ইখতিয়ারে যদি কিছু না থাকে এবং তারা কিছু না বুঝে এমতাবস্থায়ও কি সুপারিশ করবে ?
অর্থাত এসব লোক নিজের পক্ষ থেকেই ধরে নিয়েছে যে, কিছু সত্তা এমন আছে যারা আল্লাহর দরবারে অত্যন্ত ক্ষমতাধর৷ তাদের সুপারিশ কখনো বিফলে যায় না৷ অথচ তারা যে সুপারিশকারী এ ব্যাপারে না আছে কোন প্রমাণ , না আল্লাহ তা'আলা কখনো বলেছেন যে, আমার দরবারে তাদের এ ধরনের মর্যাদা রয়েছে, না ঐ সব সত্তা ও ব্যক্তিবর্গ দাবী করেছেন যে আমরা নিজেদের ক্ষমতায় তোমাদের সকল প্রয়োজন পূরণ করে দেবো৷ তাদের আরো নির্বুদ্ধিতা এই যে, তারা প্রকৃত মালিককে বাদ দিয়ে সব অনুমানকৃত সুপারিশকারীদেরই সবকিছু মেনে নিয়েছে এবং এদের সকল সবিনয় প্রার্থনা ও আকুতি তাদের জন্যই নিবেদিত ৷
বলো, সুপারিশ সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর ইখতিয়ারাধীন৷ আসমান ও যমীনের বাদশাহীর মালিক তিনিই৷ তোমাদেরকে তারই দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে৷ 
অর্থাত সুপারিশ গ্রহণ করানোর ক্ষমতা তো দূরের কথা নিজে নিজেই আল্লাহর দরবারে সুপারিশকারী হিসেবে যাবে সে শক্তিও করো নেই৷ যাকে ইচ্ছা সুপারিশের অনুমতি দেয়া ও যাকে ইচ্ছা না দেয়া এবং যার জন্য ইচ্ছা সুপারিশ করতে দেয়া আর যার জন্য ইচ্ছা করতে না দেয়া সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর ইখাতিয়ারে ৷    
১৪. সুরা আন নাজম আায়াত ২৬
Wa kam mim malakin fissamaawaati laa tughnee shafaa'atuhum shai'an illaa mim ba'di anyyaazanal laahu limany yashaaa'u wa yardaa
আসমানে তো কত ফেরেশতা আছে যাদের সুপারিশও কোন কাজে আসতে পারে না যতক্ষণ না আল্লাহ নিজ ইচ্ছায় যাকে খুশী তার জন্য সুপারিশ করার অনুমতি দান করেন৷ 

১৫. সূরা আল মু’মিন আায়াত ১৮
Wa anzirhum yawmal aazifati izil quloobu ladal hanaajiri kaazimeen; maa lizzaalimeena min hameeminw wa laa shafee'iny-yutaa'
সব লোকদের সেদিন সম্পর্কে সাবধান করে দাও যা সন্নিকটবর্তী হয়েছে৷ যেদিন কলিজা মুখের মধ্যে এসে যাবে আর সব মানুষ ভীত সন্ত্রস্ত ও দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকবে৷ জালেমদের জন্য না থাকবে কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু, না থাকবে কোন গ্রহণযোগ্য শাফায়াতকারী৷ 

কাফেরদের সাফায়াত সম্পর্কিত আকীদা বিশ্বাসের প্রতিবাদ করে অবরোহমূলক ভাবে একথাটি বলা হয়েছে৷ প্রকৃতপক্ষে জালেমদের জন্য সেখানে আদৌ কোন শাফায়তকারী থাকবে না ৷ কারণ, শাফায়াতে অনুমতি লাভ করলে কেবল আল্লাহর নেক বান্দারাই করবে৷ আর আল্লাহর নেক বান্দারা কখনো কাফের , মুশরিক এবং কাফেস ও পাপাচারীদের বন্ধু হতে পারে না যে, তারা তাদের বাঁচানোর জন্য শাফায়াত করে চিন্তা করবে৷ তবে যেহেতু কাফের, মুশরিক ও পথভ্রষ্ট লোকদের সাধারণ আকীদা - বিশ্বাস অতীতেও এই ছিল এবং বর্তমানেও আছে যে, আমরা যে বুযর্গদের অনুসরণ করে চলেছি তারা কখনো আমাদেরকে দোযখে যেতে দেবেন না৷ তারা বরং বাধা হয়ে সামনে দাঁড়াবেন এবং ক্ষমা করিয়েই ছাড়বেন৷ তাই বলা হয়েছে সেখানে এ রকম শাফায়াতকারী কেউ থাকবে না, যার কথা মেনে নেয়া হবে এবং আল্লাহকে যার সুপারিশ অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে৷

১৬. সূরা আন নাবা আয়াত ৩৭
Rabbis samaa waati wal ardi wa maa baina humar rahmaani laa yam likoona minhu khitaaba
সেই পরম করুণাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে যিনি পৃথিবী ও আকাশসমূহের এবং তাদের মধ্যবর্তী প্রত্যেকটি জিনিসের মালিক, যার সামনে কারো কথা বলার শক্তি থাকবে না৷ 
অর্থাত হাশরের ময়দানে আল্লাহর দরবারের শান শওকত, প্রভাব ও প্রতিপত্তি এমন পর্যায়ের হবে যার ফলে পৃথিবী বা আকাশের আধিবাসী কারোর আল্লাহর সামনে কথা বলার অথবা তাঁর আদালতের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করার সাহস হবে না৷

১৭. সূরা আন নাবা আয়াত ৩৮
Yauma yaqoo mur roohu wal malaa-ikatu saf-fal laa yata kalla moona illa man azina lahur rahmaanu wa qaala sawaaba
যেদিন রূহ (জিব্রীল আলাইহিস সালামের কথা বলা হয়েছে৷ আল্লাহর দরবারে তিনি উন্নত মর্যাদার অধিকারী হবার কারণে এখানে অন্যান্য ফেরেশতাদের থেকে আলাদাভাবে তাঁর কথা বলা হয়েছে৷) ও ফেরেশতারা সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবে৷ পরম করুণাময় যাকে অনুমতি দেবেন এবং যে ঠিক কথা বলবে, সে ছাড়া আর কেউ কথা বলবে না৷
এখানে কথা বলা মানে শাফায়াত করা বলা হয়েছে, কেবলমাত্র দু'টি শর্ত সাপেক্ষে সেদিন এ শাফায়াত সম্ভব হবে৷ এক, যে ব্যক্তিকে যে গুনাহগারের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে শাফায়াত করার অনুমতি দেয়া হবে একমাত্র সে ই তার জন্য শাফায়াত করতে পারবে৷ দুই, শাফায়াতকারীকে সঠিক ও যথার্থ সত্য কথা বলতে হবে৷ অন্যায় সুপারিশ করতে পারবে না৷ দুনিয়ায় কমপক্ষে সত্যের কালেমার সমর্থক অর্থা নিছক গুনাহগার ছিল, কাফের ছিল না, এমন ব্যক্তির পক্ষে সুপারিশ করতে হবে৷ 

১৮. সূরা আল ইনফিতার আয়াত ১৯
Yawma laa tamliku nafsul linafsin shai'anw walamru yawma'izil lillaah
এটি সেই দিন যখন কারোর জন্য কোন কিছু করার সাধ্য কারোর থাকবে না ৷ ফায়সালা সেদিন একমাত্র আল্লাহর ইখতিয়ারে থাকবে৷ 
অর্থাত কাউকে সেখানে তার কর্মফল ভোগ করার হাত থেকে নিস্কৃতি দান করার ক্ষমতা কারোর থাকবে না৷ কেউ সেখানে এমন প্রভাবশালী বা আল্লাহর প্রিয়ভাজন হবে না যে , আল্লাহর আদালতে তাঁর রায়ের বিরুদ্ধে বেঁকে বসে একথা বলতে পারে, উমুক ব্যক্তি আমার আত্মীয়, প্রিয় বা আমার সাথে সম্পর্কিত, কাজেই দুনিয়ায় সে যত খারাপ কাজ করে থাকুক না কেন তাকে তো মাফ করতেই হবে৷ 
১৯. সূরা আল আরাফ অয়াত ৫৩
hal yanzuroona illaa taa weelah; yawma yaatee taaweeluhoo yaqoolul lazeena nasoohu min qablu qad jaaa'at Rusulu Rabbinaa bilhaqq; fahal lanaa min shufa'aaa'a fa yashfa'oo lanaaa aw nuraddu fana'mala ghairal lazee kunnaa na'mal; qad khasirooo anfusahum wa dalla 'anhum maa kaanoo yaftaroon
এখন এরা কি এর পরিবর্তে এ কিতাব যে পরিমাণের খবর দিচ্ছে তার প্রতীক্ষায় আছে ( বিষয়বস্তুটিকে অন্য কথায় এভাবে বলা যেতে পারে, এক ব্যক্তিকে অত্যন্ত যুক্তিসংগত পদ্ধতিতে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয়া হয় কিন্তু এরপরও সে তা মানতে প্রস্তুত হয় না৷ তারপর তার সামনে কিছু লোক সঠিক পথে চলে দেখিয়েও দেয় যে, ভূল পথ চলার সময় তারা কেমন ছিল এবং এখন সঠিক পথ অবলম্বন করার পর তাদের জীবনে কত ভাল পরিবর্তন এসেছে৷ কিন্তু এ থেকেও ঐ ব্যক্তি কোন শিক্ষা গ্রহণ করে না তাহলে এর অর্থ এ দাঁড়ায় যে এখন ঐ ব্যক্তি নিজের ভুল পথে চলার শাস্তি লাভ করার পরই কেবল একথা মেনে নেবে যে, সে ভুল পথে ছিল৷ যে ব্যক্তি ডাক্তারের জ্ঞানগর্ভ পরামর্শ গ্রহণ করে না এবং নিজের মত অসংখ্য রোগীকে ডাক্তারের পরামর্শ মত চলে রোগমুক্ত হতে দেখেও তা থেকে কোন শিক্ষা গ্রহণ করে না, সে এখন মৃত্যু শয্যায় শায়িত হয়েই কেবল একথা স্বীকার করবে যে, যেভাবে ও যে পদ্ধতিতে সে জীবন যাপন করে আসছিল তা সত্যিই তার জন্যে ধ্বংসকর ছিল৷)? যেদিন সেই পরিনাম সামনে এসে যাবে সেদিন যারা তাকে উপেক্ষা করেছিল তারাই বলবেঃ “যথার্থই আমাদের রবের রসূলগণ সত্য নিয়ে এসেছিলেন৷ এখন কি আমরা এমন কিছু সুপারিশকারী পাবো যারা আমাদের পক্ষে সুপারিশ করবে? অথবা আমাদের পুনরায় ফিরে যেতে দেয়া হবে, যাতে পূর্বে আমরা যা কিছু করতাম তা পরিবর্তে এখন অন্য পদ্ধতিতে কাজ করে দেখাতে পারি(অর্থাত তারা পুনর্বার এ দুনিয়ায় ফিরে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করবে৷ তারা বলবে, আমাদের যে সত্যের খরব দেয়া হয়েছিল এবং তখন আমরা যে সত্যটি মেনে নেইনি, এখন চাক্ষুষ দেখার পর আমরা সে ব্যাপারে জেনে গেছি৷ কাজেই এখন যদি আমাদের আবার দুনিয়ায় পাঠিয়ে দেয়া হয় তাহলে এখন আমাদের কর্মপদ্ধতি আর আগের মত হবে না৷)?” তারা নিজেরাই নিজেদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং যে মিথ্যা তারা রচনা করেছিল তাদের সবটুকুই আজ তাদের কাছ থেকে উধাও হয়ে গেছে৷