নামাযের
আধ্যাত্মিক প্রভাব কি?
মানুষের
আধ্যাত্মিক জীবনে নামায বা সালাতের ৫টি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে।
ক.
সকল মানুষেরই তার চাইতে শক্তিশালী সও্বার বন্দনা করবার সহজাত প্রবৃত্তি বা Instinct
রয়েছে। তাই দেখা যায় যে, যে সকল মানুষ দ্বীনের শিক্ষা পায় না তারা প্রকৃতি, আগুন, পাহাড়,
পর্বত, নদী, সাধু ব্যক্তি-এদের পূজা করে। এ সব কিছুই মানুষকে বিভ্রান্তির দিকে নিয়ে
যায়। নামায বা সঅরাত এমন এক ‘ঈবাদাত যা আল্লাহর সাথে মানুষের সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন
করে। এতে তার সহজাত আধ্যাত্মিক চাহিদা পূরণ হয়।
খ.
নামায বা সালাত আল্লাহর প্রতি বান্দাহর ভালবাসার বাস্তব প্রয়োগ। দিনে ৫ বার সালাতে দাঁড়ানো
এবং এই অনুভুতি লাভ যে আল্লাহ বান্দাহর কথা শুনছেন যা বান্দাহর মনে এক অনির্বচনীয় প্রভাব
ফেলে।
গ.
মানুষ যখন সালাত বা নামাযে দাঁড়ায়-তখন যে পৃথিবীর ওপর দাঁড়ায়। মাুষ এই মাটি তেকেই সৃষ্ট।
আবার মৃত্যুর পরে যে এই মাটিতেই মিশে যাবে। আবার ক্কিয়ামতের পর হাশরের ময়দানে সে এই
মাটির ওপরই দাঁড়াবে। এই মাটিতেই সে কপাল ঠেকিয়ে মানুষ আল্লাহর প্রতি তার সর্বোচ্চ আনুগত্য
প্রকাশ করে।
ঘ.
নামায মানুষকে বারবার তার প্রতি আল্লাহর অগণিত রহমতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। সেই আল্লাহর
প্রশংসা মানুষের অন্তরে অনাবিল প্রশান্তি এনে দেয়।
ঙ.
যারা সালাত বা নামায নিষ্ঠার সাথে আদায় করে তাদের অন্তরে আখিরাতের জন্য প্রস্তুত হওয়ার
অনুভূতি আসে। আল্লাহকে পাওয়ার অনুভূতি তাদের মনে অসীম সাহস জোগায়।
রেফারেন্সঃ ১. আল কুরআন থেকেঃ
১. আমিই আল্লাহ, আমি ছাড়া আর কোন ইলাহ
নেই, কাজেই তুমি আমার ইবাদত করো এবং আমাকে স্মরণ করার জন্য নামায কায়েম করো৷
Innaneee Anal laahu
laaa ilaaha illaa Ana fa'budnee wa aqimis-salaata lizikree
এখানে
নামাযের মূল উদ্দেশ্যের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে৷ মানুষ যেন আল্লাহ থেকে গাফেল না হয়ে
যায়৷ দুনিয়ার চোখ ধাঁধানো দৃশ্যাবলী যেন তাকে এ সত্য বিমুখ না করে দেয় যে, সে কারো
বান্দা এবং সে স্বাধীন ক্ষমতা সম্পন্ন নয়৷ এ চিন্তাকে জীবন্ত ও তরতাজা রাখার এবং আল্লাহর
সাথে মানুষের সম্পর্ক জড়িত করার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হচ্ছে নামায৷ প্রতিদিন কয়েকবার মানুষকে
দুনিয়ার কাজ-কারবার থেকে সরিয়ে নামায তাকে আল্লাহর দিকে নিয়ে যায়৷ (সূরা ত্ব
হা আয়াত ১৪)
২. হে ঈমানদারগণ! সবর ও
নামাযের দ্বারা সাহায্য গ্রহণ করো, আল্লাহ সবরকারীদের সাথে আছেন।
Yaaa ayyuhal laazeena
aamanus ta'eenoo bissabri was Salaah; innal laaha ma'as-saabireen
মানুষকে নেতৃত্ব পদে আসীন করার পর এবার এই উম্মাতকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ ও
বিধান দেয়া হচ্ছে ৷ কিন্তু সবার আগে যে কথাটির প্রতি এখানে দৃষ্টি আর্কষণ করা
হচ্ছে সেটা হচ্ছে এই যে, তোমাদের জন্য যে বিছানা পেতে দেয়া হয়েছে সেটা কোন ফুলের
বিছানা নয় ৷ একটি বিরাট , মহান ও বিপদ সংকুল কাজের বোঝা তোমাদের মাথায় চাপিয়ে দেয়া
হয়েছে ৷ এই বোঝা মাথায় ওঠাবার সাথে সাথেই তোমাদের ওপর চতুর্দিক থেকে বিপদ-আপদ
ঝাঁপিয়ে পড়তে থাকবে ৷ কঠিন পরীক্ষার মধ্যে তোমাদের ঠেলে দেয়া হবে৷ অগণিত ক্ষতির
সম্মুখীন হতে হবে৷ সবর, দৃঢ়তা, অবিচলতাও দ্বিধাহীন সংকল্পের মাধ্যমে সমস্ত
বিপদ-আপদের মোকাবিলা করে যখন তোমরা আল্লাহর পথে এগিয়ে যেতে থাকবে তখনই তোমাদের ওপর
বর্ষিত হবে তাঁর অনুগ্রহরাশি৷
এই কঠিন দায়িত্বের বোঝা বহন করার জন্য তোমাদের দু'টো আভ্যন্তরীন
শক্তির প্রয়োজন ৷ একটি হচ্ছে, নিজের মধ্যে সবর, ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতার শক্তির লালন
করতে হবে৷ আর দ্বিতীয়ত নামায পড়ার মাধ্যমে নিজেকে শক্তিশালী করতে হবে৷ -সূরা আল
বাক্কারাহ আায়াত ১৫৩
৩. তারাই এ ধরনের লোক যারা (এ নবীর দাওয়াত) গ্রহণ করেছে এবং আল্লাহর
স্মরণে তাদের চিত্ত প্রশান্ত হয়৷ সাবধান হয়ে যাও৷ আল্লাহর স্মরণই হচ্ছে এমন জিনিস
যার সাহায্যে চিত্ত প্রশান্তি লাভ করে৷ –সূরা আর রাদ আয়াত ২৮
Allazeena aamanoo wa
tatma'innu quloobuhum bizikril laah; alaa bizikril laahi tatma'innul quloob
৪. হে ঈমানদারগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত
অবস্থায় নামাজের কাছে যেয়ো না৷ নামায সেই সময় পড়া উচিত যখন তোমরা যা বলছো তা জানতে
পারো৷ অনুরূপভাবে অপবিত্র অবস্থায়ও গোসল না করা পর্যন্ত নামাযের কাছে যেয়ো
না ৷ তবে যদি পথ অতিক্রমকারী হও, তাহলে অবশ্যি স্বতন্ত্র কথা৷ আর যদি কখনো তোমরা
অসুস্থ হয়ে পড়ো, সফরে থাকো বা তোমাদের কেউ মলমূত্র ত্যাগ করে আসে অথবা তোমরা নারী সম্ভোগ
করে থাকো এবং এরপর পানি না পাও, তাহলে পাক –পবিত্র মাটির সাহায্য গ্রহণ করো এবং
তা নিজেদের চেহারা ও হাতের ওপর বুলাও ৷ নিসন্দেহে আল্লাহ কোমলতা অবলম্বনকারী
ও ক্ষমাশীল৷ -সূরা নিসা আয়াত ৪৩
yaaa aiyuhal lazeena aamanoo laa taqrabus
Salaata wa antum sukaaraa hatta ta'lamoo ma taqooloona wa la junuban illaa
'aabiree sabeelin hatta taghtasiloo; wa in kuntum mardaaa aw 'alaa safarin aw
jaaa'a ahadum minkum minal ghaaa'iti aw laamastumun nisaaa'a falam tajidoo
maaa'an fatayam mamoo sa'eedan taiyiban famsahoo biwujoohikum wa aideekum;
innal laaha kaana 'Afuwwan Ghafooraa
রেফারেন্সঃ ২. হাদীস
থেকেঃ
হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণনা করা হয়েছেঃ নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
"কোন
ব্যক্তি কোন সময় নামায পড়তে ভুলে গিয়ে থাকলে যখন তার মনে পড়ে যায় তখনই নামায পড়ে
নেয়া উচিত৷ এছাড়া এর আর কোন কাফ্ফারা নেই"৷ (বুখারী, মুসলিম, আহমদ)। এ অর্থে
হযরত আবু হুরাইরার (রা) একটি হাদীসও বর্ণিত হয়েছে৷ মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ প্রমুখ
মুহাদ্দিসগণ এটি তাঁদের হাদীসগ্রন্থে উদ্ধৃত করেছেন৷ আবু কাতাদাহ (রা) বর্ণিত একটি
হদীসে বলা হয়েছেঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়, যদি আমরা
নামাযের সময় ঘুমিয়ে থাকি তাহলে কি করবো" জবাবে তিনি বলেন, "ঘুমের মধ্যে
কোন দোষ নেই৷ দোষের সম্পর্ক তো জেগে থাকা অবস্থার সাথে৷ কাজেই যখন তোমাদের মধ্যে
কেউ ভুলে যাবে অথবা ঘুমিয়ে পড়বে তখন জেগে উঠলে বা মনে পড়লে ততক্ষণাত নামায পড়ে
নেবে"৷ (তিরমিযী, নাসাঈ, আবু দাউদ)
রেফারেন্স
৩: ড. জামাল আল বাদাবী: (ইসলামী শিক্ষা সিরিজ: প্রকাশনা: বাংলাদেশ ইন্সটিট্যুট অব ইসলামিক
থ্যট-বিআইআইটি: পৃষ্ঠা ১৩৩)
রেফারেন্স: ৪: বিভিন্ন
বইয়ের লেখা থেকে
১. পৃথিবীর প্রতিটি
অণু-পরমাণূ গোপনে
তোমার সাথে কথা বলে দিবারাত্রি
সচেতন আমরা তার সবই দেখি এবং শুনি
তোমার সাথে অচেনা আমরা তাই চুপচাপ
পার্থিব জগতের মোহে ছুটছো শুধু
খোদায়ী জ্ঞানের অধিকারী হবে কবে।-মাওলানা রুমি
তোমার সাথে কথা বলে দিবারাত্রি
সচেতন আমরা তার সবই দেখি এবং শুনি
তোমার সাথে অচেনা আমরা তাই চুপচাপ
পার্থিব জগতের মোহে ছুটছো শুধু
খোদায়ী জ্ঞানের অধিকারী হবে কবে।-মাওলানা রুমি
২. পরম সত্ত্বার সাথে
যিনিই করবেন নিরাপত্তা চুক্তি
ভ্রান্ত উপাস্যের শৃঙ্খল থেকে নিশ্চিত পাবেন মুক্তি।
ভ্রান্ত উপাস্যের শৃঙ্খল থেকে নিশ্চিত পাবেন মুক্তি।
-কবির নাম জানা যায়নি
৩. নামাজের পাখায় চড়ে যাব আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্যে
চাইব খোদার কাছে সফরের অনুমতি নামাজের রহস্যে
"আমি" আবার কে? তাই তো বলি:
তাঁর স্মরণ বা জিকির রয়েছে ঠোটে আমার,
এ ঠোট বা জিহবা তো তাঁরই দান
(কোনো কিছুতেই) নেই আমার কোনো অবদান,
এ নামাজ নয় আমার বা তোমার,
বরং তিনিই তো মালিক নামাজের ।
চাইব খোদার কাছে সফরের অনুমতি নামাজের রহস্যে
"আমি" আবার কে? তাই তো বলি:
তাঁর স্মরণ বা জিকির রয়েছে ঠোটে আমার,
এ ঠোট বা জিহবা তো তাঁরই দান
(কোনো কিছুতেই) নেই আমার কোনো অবদান,
এ নামাজ নয় আমার বা তোমার,
বরং তিনিই তো মালিক নামাজের ।
-কবির নাম জানা যায়নি
৪. মসজিদে ঐ শোনরে আযান, চল নামাজে চল।
দুঃখে পাবি সান্ত্বনা তুই, বক্ষে পাবি বল।
ওরে চল নামাজে চল।।
তুই হাজার কাজের অসিলাতে নামাজ করিস কাজা,
খাজনা তারি দিলিনা, যে দ্বীন দুনিয়ার রাজা।
তারে পাঁচবার তুই করবি মনে তাতেও এত ছল।
ওরে চল নামাজে চল।
দুঃখে পাবি সান্ত্বনা তুই, বক্ষে পাবি বল।
ওরে চল নামাজে চল।।
তুই হাজার কাজের অসিলাতে নামাজ করিস কাজা,
খাজনা তারি দিলিনা, যে দ্বীন দুনিয়ার রাজা।
তারে পাঁচবার তুই করবি মনে তাতেও এত ছল।
ওরে চল নামাজে চল।
-নজরুল
৫.
কে ওই শোনাল মোরে আযানের
ধ্বনি।
মর্মে মর্মে সেই সুর, বাজিল কি সুমধুর
আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনী।
কি মধুর আযানের ধ্বনি!
আমি তো পাগল হয়ে সে মধুর তানে,
কিযে এক আকর্ষণে, ছুটে যাই মুগ্ধমনে
কি নিশীথে, কি দিবসে মসজিদের পানে।
হৃদয়ের তারে তারে, প্রাণের শোণিত-ধারে,
কিযে এক ঢেউ উঠে ভক্তির তুফানে-
কত সুধা আছে সেই মধুর আযানে।
নদীও পাখির গানে তারই প্রতিধ্বনি।
ভ্রমরের গুণ-গানে সেই সুর আসে কানে
কি এক আবেশেমুগ্ধ নিখিল ধরণী।
ভূধরে, সাগরে জলে নির্ঝরণী কলকলে,
আমি যেন শুনি সেই আযানের ধ্বনি।
আহা যবে সেই সুর সুমধুর স্বরে,
ভাসে দূরে সায়াহ্নের নিথর অম্বরে,
প্রাণ করে আনচান, কি মধুর সে আযান,
তারি প্রতিধ্বনি শুনি আত্মার ভিতরে।
নীরব নিঝুম ধরা, বিশ্বে যেন সবই মরা,
এতটুকু শব্দ যবে নাহি কোন স্থানে,
মুয়াযযিন উচ্চৈঃস্বরে দাঁড়ায়ে মিনার ‘পরে
কি সুধা ছড়িয়ে দেয় উষার আযানে!
জাগাইতে মোহমুদ্ধ মানব সন্তানে।
আহা কিমধুর ওই আযানের ধ্বনি।
মর্মে মর্মে সেই সুর বাজিল কি সমধুর
আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনী।
মর্মে মর্মে সেই সুর, বাজিল কি সুমধুর
আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনী।
কি মধুর আযানের ধ্বনি!
আমি তো পাগল হয়ে সে মধুর তানে,
কিযে এক আকর্ষণে, ছুটে যাই মুগ্ধমনে
কি নিশীথে, কি দিবসে মসজিদের পানে।
হৃদয়ের তারে তারে, প্রাণের শোণিত-ধারে,
কিযে এক ঢেউ উঠে ভক্তির তুফানে-
কত সুধা আছে সেই মধুর আযানে।
নদীও পাখির গানে তারই প্রতিধ্বনি।
ভ্রমরের গুণ-গানে সেই সুর আসে কানে
কি এক আবেশেমুগ্ধ নিখিল ধরণী।
ভূধরে, সাগরে জলে নির্ঝরণী কলকলে,
আমি যেন শুনি সেই আযানের ধ্বনি।
আহা যবে সেই সুর সুমধুর স্বরে,
ভাসে দূরে সায়াহ্নের নিথর অম্বরে,
প্রাণ করে আনচান, কি মধুর সে আযান,
তারি প্রতিধ্বনি শুনি আত্মার ভিতরে।
নীরব নিঝুম ধরা, বিশ্বে যেন সবই মরা,
এতটুকু শব্দ যবে নাহি কোন স্থানে,
মুয়াযযিন উচ্চৈঃস্বরে দাঁড়ায়ে মিনার ‘পরে
কি সুধা ছড়িয়ে দেয় উষার আযানে!
জাগাইতে মোহমুদ্ধ মানব সন্তানে।
আহা কিমধুর ওই আযানের ধ্বনি।
মর্মে মর্মে সেই সুর বাজিল কি সমধুর
আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনী।
-কায়কোবাদ
৬.
ঘুমাইয়া কাজা করেছি ফজর,
তখনো জাগিনি যখন যোহর,
হেলা ও খেলায় কেটেছে আসর
মাগরিবের আজ শুনি আজান।
জামাত শামিল হওরে এশাতে
এখনো জমাতে আছে স্থান।
তখনো জাগিনি যখন যোহর,
হেলা ও খেলায় কেটেছে আসর
মাগরিবের আজ শুনি আজান।
জামাত শামিল হওরে এশাতে
এখনো জমাতে আছে স্থান।
-নজরুল
৭.
নামাযের নূরে করো সুন্দর মুখমন্ডলকে
কেবলার দরজাকে করো উন্মুক্ত করো তোমার দিকে
যদি হারিয়ে থাকো নিজ আত্মাকে
প্রেমময় নামাযের দর্পনে
খুঁজে পাবে হারানো আত্মাকে।
-কবির নাম জানা যায়নি
No comments:
Post a Comment