Tuesday, September 4, 2018

পরের ঘরে দৃষ্টি দান করা বা উঁকি মারা হারাম

অনুমতি লাভ করতে গিয়ে ঘরের ভেতরে তাকানো অথবা যে কোন অবস্থায় বাইরে থেকে কারো ঘরের ভেতর দৃষ্টি দান করা বা উঁকি মারা অবৈধ ও হারাম। এ ব্যাপারে আল কুরআনের সূরা আল হুজুরাতের ৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে, হে নবী! যারা তোমাকে গৃহের বাইরে থেকে ডাকাডাকি করতে থাকে তাদের অধিকাংশই নির্বোধ৷ আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলাল্লাহ সা. বলেছেন, “দৃষ্টি যখন ঘরের ঘরের ভেতর চলে যায় তখন অনুমতি চাওয়া অনর্থক হয়ে পড়ে। –আবু দাউদ, হাদীস নং ৫১৭৫। 
আনাস ইবনু মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সা. ঘরের কোনো এক ছিদ্র দিয়ে ঊঁকি মেরে দেখছিলেন। ইত্যবসরে তিনি তাকে দেখে একটি ছুরি নিয়ে তার দিকে এগিয়ে যান। তখন আমার মনে হচ্ছিল যে রাসুলুল্লাহ সা. তাকে মারার জন্য সুযোগ খুঁজছেন। সূত্রঃ সহীহ আল বুখারী, হাদীস নং ৫৮৮৮, আল ইস্তি’যান মিন আজালিল বাছার; সহীহ আল মুসলিম, হাদীস নং ৫৭৬৭, তাহরীমুন নাযার ফি বাইতি গায়রিহি। 
সাহল ইবনু মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সা. এর দরজার এক ছিদ্র দিয়ে উঁকি মেরে দেখছিলেন। এ সময় রাসুলুল্লাহ সা. চিরুনী দিয়ে মাথা আঁচড়াচ্ছিলেন। যখন তিনি লোকটিকে দেখতে পেলেন, তখন তিনি তাকে বল্লেন, “যদি আমি জানতাম তুমি আমার দিকে দৃষ্টি দান করেছো, তাহলে আমি অবশ্যই আমি এই চিরুনী দিয়ে তোমার চোখ ফুটো করে দিতাম্।” তিনি আরো বলেন, অনুমতি চাওয়ার হুকুম তো এজন্য যে, ভেতরে যেন দৃষ্টি না পড়ে। সূত্রঃ সহীহ আল বুখারী, হাদীস নং ৫৮৮৭।
এই হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন, এ হাদীস থেকে জানা যায় যে, কেউ যদি এ ধরনের অপরাধ করে, তার শাস্তি হলো কংকর বা চিরুনী দিয়ে তার চোখ ফুটো করে দেয়া। 
হানাফী ইমামগণের মতে, যে ব্যক্তি অনুমতি ছাড়া অপরের গৃহে অন্যায়ভাবে দৃষ্টি দান করে বা উঁকি মেরে দেখে আর তখন গৃহবাসী যদি পাথর ছুঁড়ে বা অন্য কিছুর সাহায্যে তার চোখ ফুটো করে বা উপড়ে ফেলে তা তাহলে তাকে কোন রকম খেসারত দিতে হবে না, যদি তার এছাড়া অন্য কোন উপায় না থাকে। আর যদি তাকে বারণ করার জন্য এছাড়া আর কোন উপায় থাকে, তা হলে তাকে খেসারত দিতে হবে। আর যদি কেউ ঘরের ভেতর নিজের মাথা ঢুকিয়ে দিয়ে দেখার সময় ঘরের মালিক তাকে পাথর ছুঁড়ে তার চোখ ফুটো করে দেয় বা উপড়ে ফেলে তখন সর্বসম্মতভাবে তাকে খেসারত দিতে হবে না। কারণ, সে অপরের অধিকারে হস্তক্ষেপ করেছে। যেমন কেউ যদি কারো কাপড় ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে আর কাপড়ের মালিক তা প্রতিহত করতে গিয়ে তাকে হত্যা করে ফেলে তা হলে তাকে কোন প্রকার খেসারত দিতে হবে না। 
শাফি‘ঈ ও হাম্বলী ইমামগণের মতে, যদি কেউ অনুমতি ছাড়া অপরের ঘরের কোনো ছিদ্র দিয়ে বা ফটক দিয়ে উঁকি মেরে দেখে আর ঘরের মালিক কংকর ছুঁড়ে বা লাঠি দিয়ে খোঁচা দিয়ে তার চোখ উপড়ে ফেলে, তা হলে তাকে কোন খেসারত দিতে হবে না। তদ্রুপ আঘাতে যদি চোখের পাশ আক্রান্ত হয় এবং তা ক্রমে প্রসারিত হয়ে মৃত্যুবরণ করে, তা হরেও তার রক্ত বৃথা যাবে। এতে ঘরের মালিকের ওপর কোন ধরনের কিসাস বা দিয়াত বর্তাবে না। 
আবু হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুল সা. বলেছেন, “যে ব্যক্তি অপরের গৃহে তাদের অনুমতি ছাড়া উঁকি মেরে দেখবে, তাদের জন্য তার চোখ ফুটো করে দেয়া বিধেয় হবে।” -ঈমাম মুসলিম, আস সহীহ, আল আদাব পরিচ্ছেদ: তাহরীমুন নাযার ফি বাইত গাইরহি। হাদীস নং ৫৭৬৮ 
বিস্তরিত সূত্র: ইসলামী আইন ও বিচার, ত্রৈমাসিক গবেষাণা পত্রিকা, জুলাই- সেপ্টেম্বর সংখ্যা ২০১৪, প্রকাশক: বাংলাদেশ ইসলামিক ল’ রিসার্চ অ্যান্ড লিগ্যাল এইড সেন্টার

No comments:

Post a Comment