'তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক তো অবশ্যই থাকা উচিত, যারা মানুষকে নেকি ও কল্যাণের দিকে ডাকবে, সতকাজের আদেশ করবে এবং অসতকাজ থেকে বিরত রাখবে। যারা এমন কাজ করবে, তারাই সফলকাম হবে।' (সূরা আলে ইমরান: ১০৪)।
ইসলামে দাওয়াতের গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামী জীবনাদর্শের ভিত্তি দাওয়াত। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, 'বাল্লিগু আন্নি ওয়ালাও আয়াহ'। অর্থাত 'আমার পক্ষ থেকে একটি বাণী হলেও প্রচার করো।' (বুখারি: ৩৪৬১)। হাদিস বিশেষজ্ঞরা বলেন, 'বাল্লিগু' প্রচার করো এটি নির্দেশসূচক ক্রিয়া। নবীর পক্ষ থেকে আয়াত পৌঁছানো উম্মতের ওপর আবশ্যকীয় কর্তব্য। প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ আল্লামা মোবারকপুরী (রহ.) বলেন, 'কোরআনের ছোট্ট আয়াত হলেও রাসুলের পক্ষ থেকে তাঁর উম্মতের কাছে পৌঁছে দেয়া কর্তব্য।' (তুহফাতুল আহওয়াজি)।
আল্লাহ তায়ালা সব নবীকে দাওয়াতে তাবলিগের মহান দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ বলেন, 'হে রাসুল! যা কিছু আপনার রবের পক্ষ থেকে আপনার ওপর নাজিল করা হয়েছে, তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিন। যদি তা না করেন তবে আপনি তাঁর রিসালাতের দায়িত্ব পালন করলেন না।' (সূরা মায়েদা: ৬৭)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, 'হে নবী! প্রজ্ঞা ও চমতকার উপদেশের মাধ্যমে আপনার রবের পথে ডাকুন। আর সুন্দরভাবে-উত্তমপন্থায় বিতর্ক করুন। আপনার রব খুব ভালো করে জানেন, কে ভুল পথে আছে, আর কে সঠিক পথে আছে।' (সূরা নাহল: ১২৫)। এ কারণেই প্রত্যেক নবী তাঁর উম্মতকে আল্লাহর আনুগত্য ও দাসত্বের দিকে দাওয়াত দিয়েছেন। কোরআনের ভাষায়, '(হে নবী!) আপনি তাদের স্পষ্ট বলে দিন, আমার পথ তো এটাই, আমি আল্লাহর দিকে ডাকি। আমি ও আমার সাথীরা স্পষ্ট আলোতে আমাদের পথ দেখতে পাচ্ছি। আল্লাহ পূতপবিত্র। যারা শিরক করে, তাদের সঙ্গে আমার দূরতম সম্পর্ক নেই।' (সূরা ইউসুফ: ১০৮)। আল্লাহর দিকে দাওয়াতের প্রতিক্রিয়ায় কাফেররা নবীদের মানব রচিত বিধান ও ধর্মের দিকে আহ্বান করত। জবাবে নবীরা বলতেন, 'হে আমার সম্প্রদায়! এটা কেমন কথা! আমি তোমাদের মুক্তির পথে ডাকছি, আর তোমরা আমাকে জাহান্নামের পথে ডাকছ?' (সূরা গাফির/মু’মিন: ৪১)।
আল্লাহর পথে ডাকার শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা উল্লেখ করে আল্লাহ বলেন, 'কথায় তার চেয়ে উত্তম আর কে হতে পারে, যে আল্লাহর পথে ডাকে, সতকাজ করে এবং ঘোষণা করে আমি আত্মসমর্পণকারী মুসলমান।' (সূরা সিজদা: ৩৩)।
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) লিখেন, 'প্রখ্যাত তাবেঈ হাসান বসরি (রহ.) এ আয়াত তিলাওয়াত করে বলেন, এরা আল্লাহর বন্ধু। এরা আল্লাহর অলি। আল্লাহর কাছে এরাই সবচেয়ে প্রিয় ও পছন্দনীয় বান্দা। তারা মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকে এবং নিজেরা সতকাজ করে। আর নিজেদের আত্মসমর্পণকারী হিসেবে ঘোষণা করে। এরাই খলিফাতুল্লাহ-আল্লাহর প্রতিনিধি।' (ইবনে কাসির: ৪৮৫)।
দাঈ অবশ্যই মানুষকে আল্লাহর পথে দাওয়াত দেবেন। কোনো দল, গোষ্ঠী, সম্প্রদায়, এমনকি মাজহাবের দিকেও দাওয়াত দেবেন না। দাওয়াতের প্রথমেই ধর্মের সহজ বিষয়গুলো সরলভাবে উপস্থাপন করতে হবে। মানুষ যেন সাদরে গ্রহণ করতে পারে। দাঈ কখনোই কঠিন ও ভীতিকর পন্থা অবলম্বন করবে না। আল্লাহ বলেন, 'আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, কঠিন করতে চান না।' (সূরা বাক্কারা: ১৮৫)। রাসুল (সা.) এর একান্ত সেবক আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, 'সহজ করো, কঠিন করো না। প্রশান্তি দাও, বিদ্বেষ ছড়িও না।' (বুখারি: ৬১২৫)। আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) যখন আমাকে এবং মুয়াজ বিন জাবাল (রা.)কে ইয়েমেনে পাঠান, তখন আমাদের উদ্দেশে বলেন, 'সহজ করবে, কঠিন করবে না। সুসংবাদ দেবে, বিদ্বেষ ছড়াবে না। (বুখারি: ২৮৭৩)।
আল্লাহর পথে দাওয়াতের ফলে বাতিল শক্তির বিরোধিতা মোকাবিলায় অন্যায়-অবিচারের পথ গ্রহণ করা যাবে না। এ পথ কাঁটা বিছানো। তাই কাঁটার ঘা সহ্য করে এগিয়ে যেতে হবে। পাথরের বিনিময় ফুল ছুড়তে হবে। যে ফুল বিরোধী হৃদয়ে সুঘ্রাণ ছড়াবে, অন্তর আলোকিত করবে, বিবেক নাড়িয়ে দেবে, সত্যের বিরোধীকে ঘোর সমর্থক বানাবে। দাওয়াতের শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি বর্ণনা করে আল্লাহ বলেন, 'ভালো ও মন্দ সমান নয়।
তুমি মন্দ আচরণের পরিবর্তে সবচেয়ে ভালো আচরণ করো। তাহলে দেখবে তোমার ঘোর শত্রুও অন্তরঙ্গ বন্ধুতে পরিণত হয়েছে। চরম ধর্যশীল ছাড়া এ গুণ কারো ভাগ্যে জোটে না। আর পরম সৌভাগ্যবান ছাড়া এ মর্যাদা কেউ লাভ করতে পারে না।' (সূরা সিজদা: ৩৪-৩৫)।
দাওয়াতের সময় দাঈ যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা উপলব্ধি করে, হৃদয়ে চরমপন্থার বাসনা জাগে, কাদার পরিবর্তে কাদা ছুড়তে ইচ্ছে করে, পাথরের পরিবর্তে ফুলের কথা ভুলে যায়, তবে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে। আল্লাহ বলেন, 'যদি তোমরা শয়তানের পক্ষ থেকে কোনো প্ররোচণ আঁচ করতে পারো তাহলে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করো। আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও জানেন।' (সূরা সিজদা: ৩৬)
সূত্র: https://www.alokitobangladesh.com/
ইসলামে দাওয়াতের গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামী জীবনাদর্শের ভিত্তি দাওয়াত। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, 'বাল্লিগু আন্নি ওয়ালাও আয়াহ'। অর্থাত 'আমার পক্ষ থেকে একটি বাণী হলেও প্রচার করো।' (বুখারি: ৩৪৬১)। হাদিস বিশেষজ্ঞরা বলেন, 'বাল্লিগু' প্রচার করো এটি নির্দেশসূচক ক্রিয়া। নবীর পক্ষ থেকে আয়াত পৌঁছানো উম্মতের ওপর আবশ্যকীয় কর্তব্য। প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ আল্লামা মোবারকপুরী (রহ.) বলেন, 'কোরআনের ছোট্ট আয়াত হলেও রাসুলের পক্ষ থেকে তাঁর উম্মতের কাছে পৌঁছে দেয়া কর্তব্য।' (তুহফাতুল আহওয়াজি)।
আল্লাহ তায়ালা সব নবীকে দাওয়াতে তাবলিগের মহান দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ বলেন, 'হে রাসুল! যা কিছু আপনার রবের পক্ষ থেকে আপনার ওপর নাজিল করা হয়েছে, তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিন। যদি তা না করেন তবে আপনি তাঁর রিসালাতের দায়িত্ব পালন করলেন না।' (সূরা মায়েদা: ৬৭)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, 'হে নবী! প্রজ্ঞা ও চমতকার উপদেশের মাধ্যমে আপনার রবের পথে ডাকুন। আর সুন্দরভাবে-উত্তমপন্থায় বিতর্ক করুন। আপনার রব খুব ভালো করে জানেন, কে ভুল পথে আছে, আর কে সঠিক পথে আছে।' (সূরা নাহল: ১২৫)। এ কারণেই প্রত্যেক নবী তাঁর উম্মতকে আল্লাহর আনুগত্য ও দাসত্বের দিকে দাওয়াত দিয়েছেন। কোরআনের ভাষায়, '(হে নবী!) আপনি তাদের স্পষ্ট বলে দিন, আমার পথ তো এটাই, আমি আল্লাহর দিকে ডাকি। আমি ও আমার সাথীরা স্পষ্ট আলোতে আমাদের পথ দেখতে পাচ্ছি। আল্লাহ পূতপবিত্র। যারা শিরক করে, তাদের সঙ্গে আমার দূরতম সম্পর্ক নেই।' (সূরা ইউসুফ: ১০৮)। আল্লাহর দিকে দাওয়াতের প্রতিক্রিয়ায় কাফেররা নবীদের মানব রচিত বিধান ও ধর্মের দিকে আহ্বান করত। জবাবে নবীরা বলতেন, 'হে আমার সম্প্রদায়! এটা কেমন কথা! আমি তোমাদের মুক্তির পথে ডাকছি, আর তোমরা আমাকে জাহান্নামের পথে ডাকছ?' (সূরা গাফির/মু’মিন: ৪১)।
আল্লাহর পথে ডাকার শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা উল্লেখ করে আল্লাহ বলেন, 'কথায় তার চেয়ে উত্তম আর কে হতে পারে, যে আল্লাহর পথে ডাকে, সতকাজ করে এবং ঘোষণা করে আমি আত্মসমর্পণকারী মুসলমান।' (সূরা সিজদা: ৩৩)।
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) লিখেন, 'প্রখ্যাত তাবেঈ হাসান বসরি (রহ.) এ আয়াত তিলাওয়াত করে বলেন, এরা আল্লাহর বন্ধু। এরা আল্লাহর অলি। আল্লাহর কাছে এরাই সবচেয়ে প্রিয় ও পছন্দনীয় বান্দা। তারা মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকে এবং নিজেরা সতকাজ করে। আর নিজেদের আত্মসমর্পণকারী হিসেবে ঘোষণা করে। এরাই খলিফাতুল্লাহ-আল্লাহর প্রতিনিধি।' (ইবনে কাসির: ৪৮৫)।
দাঈ অবশ্যই মানুষকে আল্লাহর পথে দাওয়াত দেবেন। কোনো দল, গোষ্ঠী, সম্প্রদায়, এমনকি মাজহাবের দিকেও দাওয়াত দেবেন না। দাওয়াতের প্রথমেই ধর্মের সহজ বিষয়গুলো সরলভাবে উপস্থাপন করতে হবে। মানুষ যেন সাদরে গ্রহণ করতে পারে। দাঈ কখনোই কঠিন ও ভীতিকর পন্থা অবলম্বন করবে না। আল্লাহ বলেন, 'আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, কঠিন করতে চান না।' (সূরা বাক্কারা: ১৮৫)। রাসুল (সা.) এর একান্ত সেবক আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, 'সহজ করো, কঠিন করো না। প্রশান্তি দাও, বিদ্বেষ ছড়িও না।' (বুখারি: ৬১২৫)। আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) যখন আমাকে এবং মুয়াজ বিন জাবাল (রা.)কে ইয়েমেনে পাঠান, তখন আমাদের উদ্দেশে বলেন, 'সহজ করবে, কঠিন করবে না। সুসংবাদ দেবে, বিদ্বেষ ছড়াবে না। (বুখারি: ২৮৭৩)।
আল্লাহর পথে দাওয়াতের ফলে বাতিল শক্তির বিরোধিতা মোকাবিলায় অন্যায়-অবিচারের পথ গ্রহণ করা যাবে না। এ পথ কাঁটা বিছানো। তাই কাঁটার ঘা সহ্য করে এগিয়ে যেতে হবে। পাথরের বিনিময় ফুল ছুড়তে হবে। যে ফুল বিরোধী হৃদয়ে সুঘ্রাণ ছড়াবে, অন্তর আলোকিত করবে, বিবেক নাড়িয়ে দেবে, সত্যের বিরোধীকে ঘোর সমর্থক বানাবে। দাওয়াতের শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি বর্ণনা করে আল্লাহ বলেন, 'ভালো ও মন্দ সমান নয়।
তুমি মন্দ আচরণের পরিবর্তে সবচেয়ে ভালো আচরণ করো। তাহলে দেখবে তোমার ঘোর শত্রুও অন্তরঙ্গ বন্ধুতে পরিণত হয়েছে। চরম ধর্যশীল ছাড়া এ গুণ কারো ভাগ্যে জোটে না। আর পরম সৌভাগ্যবান ছাড়া এ মর্যাদা কেউ লাভ করতে পারে না।' (সূরা সিজদা: ৩৪-৩৫)।
দাওয়াতের সময় দাঈ যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা উপলব্ধি করে, হৃদয়ে চরমপন্থার বাসনা জাগে, কাদার পরিবর্তে কাদা ছুড়তে ইচ্ছে করে, পাথরের পরিবর্তে ফুলের কথা ভুলে যায়, তবে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে। আল্লাহ বলেন, 'যদি তোমরা শয়তানের পক্ষ থেকে কোনো প্ররোচণ আঁচ করতে পারো তাহলে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করো। আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও জানেন।' (সূরা সিজদা: ৩৬)
সূত্র: https://www.alokitobangladesh.com/
No comments:
Post a Comment