Tuesday, November 24, 2020

কষ্টের সাথে সুখ

 আমার বন্ধুকে লেখা

No pain No gain
"কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা আর সাহস নিয়ে মানুষকে জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতময় পথ অতিক্রম করতে হয়। কষ্ট -বিপদের সাথে লড়াই না করে এবং বিপদকে মোকাবেলা না করে কখনই জীবনে সাফল্য অর্জিত হয় না।"
অন্যের কষ্টের কথা চিন্তা করলে সহনশীলতা পাবেন। সহনশীলতা অর্জন করতে হয়। আর এ পথ অতিক্রম করা দুঃসাধ্য। নীচের লেখা মশহুর কবিতগুলো পড়ুন। সহনশীলতা বা এনডিউরেন্সকে সামনে রেখেই কবিতাগুলো লেখা।
১. “একদা ছিল না জুতা চরণ যুগলে
দহিল হৃদয় মম সেই ক্ষোভানলে।
ধীরে ধীরে চুপি চুপি দুঃখাকুল মনে
গেলাম ভজনালয়ে ভজন কারণে।
দেখি সেথা এক জন পদ নাহি তার
অমনি জুতার খেদ ঘুচিল আমার।
পরের দুঃখের কথা করিলে চিন্তন
আপনার মনে দুঃখ থাকে কতক্ষণ।”
পাবিহীন দুঃখিজনের কথা চিন্তা করলে কারো পায়ে জুতা না থাকার দৈন্য মনে স্থান পায় না। আসলে পরের দুঃখ কষ্টকে উপলব্ধি করার মাঝেই জীবনের প্রকৃত সার্থকতা আর সহনশীলতা নিহিত।
২. দণ্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে
সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার। যার তরে প্রাণ
ব্যথা নাহি পায় কোন, তারে দণ্ড দান
প্রবলের অত্যাচার। যে দণ্ড বেদনা
পুত্রেরে পার না দিতে, সে কারেও দিও না।
যে তোমার পুত্র নহে, তারও পিতা আছে,
মহাঅপরাধী হবে তুমি তার কাছে।
বিচারের সময় অপরাধীর প্রতি সহানুভূতিশীর হলে সে বিচার হয় আদর্শ বিচার। কারণ অপরাধ নিন্দনীয়, অপরাধী নয়। তাই একমাত্র সহানুভূতিশীল বিচারই পারে অপরাধীর মনের পরিবর্তন করাতে ও চরিত্রের সংশোধন ঘটাতে।
৩. দৈন্য যদি আসে, আসুক, লজ্জা কিবা তাহে,
মাথা উঁচু রাখিস।
সুখের সাথী মুখের পানে যদি নাহি চাহে,
ধৈর্য ধরে থাকিস।
রুদ্র রূপে তীব্র দুঃখ যদি আসে নেমে
বুক ফুলিয়ে দাঁড়াস,
আকাশ যদি বজ্র নিয়ে মাথায় পড়ে ভেঙে
ঊর্ধ্বে দু'হাত বাড়াস।
জীবনের দুঃখ-দারিদ্রের মধ্যে কোনো লজ্জা নেই, বরং কারও মুখাপেক্ষী হওয়ার মধ্যেই লজ্জা। বিপদে ধৈর্য ধারণ করে দুঃখ-দারিদ্র্যকে সাহস ও মনোবল দিয় প্রতিহত করতে পারলে জীবনে সফল হওয়া যায়।
৪. পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি
এ জীবন মনে সকলি দাও,
তার মত সুখ কোথাও কি আছে?
আপনার কথা ভুলিয়া যাও।
পরের কারনে মরণেও সুখ,
'সুখ-সুখ' করি কেঁদো না আর;
যতই কাঁদিবে যতই ভাবিবে,
ততই বাড়িবে হূদয়-ভার।
আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেউ অবনী পরে
সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।
ব্যক্তিগত দুঃখ সন্তাপে হা-হুতাশ না করে বরং নিজের স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে পরের উপকার করার মধ্যেই প্রকৃত সুখ নিহিত। মানব জীবন ব্যক্তিস্বার্থকেন্দ্রিক নয়, একে অন্যের কল্যাণে ব্রতী হওয়াই মনুষ্যত্বের পরিচয়।
৫. কি কারণ, দীন! তব মলিন বদন?
যতন করহ লাভ হইবে রতন ৷
কেন পান্থ! ক্ষান্ত হও হেরে দীর্ঘ পথ?
উদ্যম বিহনে কার পূরে মনোরথ?
কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে,
দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে?
মনে ভেবে বিষম-ইন্দ্রিয়-রিপু-ভয়,
হাফেজ! বিমুখ কেন করিতে প্রণয়?
কি কারণে হে অভাবী/দরিদ্র! তোমার মলিন মুখ? যদি যত্ন কর তবেই পাবে রত্ন। ভ্রমণকারী কেন তুমি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে হও বিরত? জান না উৎসাহ ছাড়া কারও ইচ্ছা হয় না পূরণ? কাঁটা দেখে পদ্ম তুলতে কেন বিরত? দুঃখ ছাড়া সুখ কি আসে এ পৃথিবীতে? মনে ভাব সাংঘাতিক-ইন্দ্রিয়ের শত্রু আর ত্রাস? হাফেজ! কেন স্পৃহাহীন তুমি করতে ভালবাসা বা প্রেম?
৬. খোঁজো নতুন পথ! দেখো নতুন কিছু। বসে বসে সময় ক্ষয় করে কি লাভ?
If you walk the same path every day, how will you ever see anything new?
৭. বর্ষায় বাড়িযা বনলতা
উচ্চে উঠে দেবদারু বাহি
“কত হলো বয়ঃক্রম তব”
জিজ্ঞাসে তরুর মুখ চাহি।
তরু কহে, “বর্ষ ২ শত
মাস ৬ এ দিক সে দিক।”
লতা বলে এতে বৃদ্ধি এই!
সপ্তাহে যা ছিল মোর ঠিক!
তরু বলে, “আগে বাঁচো শীতের তুষারে,
আয়ু ও বৃদ্ধির কথা হবে তার পরে।”
আমার জ্ঞানে এটা সহনীয়তার ওপর সেরা একটি লেখা।
তুমি আল্লাহকে বাদ দিয়ে কিছুতেই সহনশীল হতে পারবে না। কারণ আল্লাহ অবশ্যই আপনাকে সব কিছু এমনিতেই দেবেন না। তাই সহনশীল হতে হলে আল্লাহর ওপর আপনার স্থির বিশ্বাস অবশ্যই থাকতে হবে। নীচের কবিতাটি যখন আমি প্রথম পাঠ করি তখন বিষয়টি পুরোপুরি বুঝতে পেরে আমি অনেকক্ষণ অশ্রুসজল ছিলাম। আমি জানিনা, আপনারও এমন হবে কি না!
৮. “কিসে শুভ কিসে অশুভ কিছুই বুঝিনে প্রভু!
প্রার্থনা করি তবু!
তুমি সব জানো, এইটুকু জেনে আমি আছি আশা ধরি,
তাই প্রার্থনা করি;
যাহা দিতে চাও তাই শুধু দাও,-তাতেই আমার শুভ,
একথা জেনেছি ধ্রুব,
তোমার অর্থে সার্থক করো মোর প্রার্থনাচয়,
প্রভু! মঙ্গলময়!”
আল কুরআনের সূরা ‘আদ দুহা’তে আল্লাহ অসম্ভব সহনশীলতা আর মোটিভেশন দিয়েছেন প্রিয় নবী(সা.)কে। সূরাটির কবিতারূপ নীচে-
৯. “মধ্য-দিনের আলোর দোহাই, নিশির দোহাই, ওরে!
প্রভু তোরে ছেড়ে যাননি কখনো, ঘৃণা না করেন তোরে।
অতীতের চেয়ে নিশ্চয় ভাল হবেরে ভবিষ্যৎ,
একদিন খুশী হবি তুই লভি’ তাঁর কৃপা সুমহৎ।
অসহায় যবে আসিলি জগতে তিনি দিয়েছেন ঠাই,
তৃষ্ণা ও ক্ষুধা দুঃখ যা ছিল ঘুচায়ে দেছেন তাই,
পথ ভুলে ছিলি, তিনিই সুপথ দেখায়ে দেছেন তোরে,
সে কৃপার কথা স্মরনে রাখিস,- অসহায় জনে ওরে !
দলিসনে কভু; ভিখারী আতুর বিমুখ না যেন হয়,
তাঁর করুণার বার্তা ঘোষণা কর রে জগতময়।”
১০. আল কুরআন কী বলে সহনীয়তা নিয়ে?
আল্লাহ ﷻ সূরা ইনশিরাহ-তে বলেছেন:
“ফা ইন্না মা’আল ‘উসরি ইউসরান, ইন্না মা’আল ‘উসরি ইউসরা”
অর্থ: অবশ্যই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে, অবশ্যই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে।
(আল-কুরআন ৯৪:৫-৬)
এখানে কয়েকটা ব্যাপার লক্ষণীয়:
১। আল্লাহ ﷻ কিন্তু বলেননি কষ্টের পরে স্বস্তি আছে, আল্লাহ ﷻ বলেছেন কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে। প্রতিটা কষ্টই আসলে আমাদের জন্য স্বস্তি, কষ্টের মূহুর্তটা itself আমাদের জন্য স্বস্তি। কারণ, কষ্টের ঐ মুহুর্তগুলিতে যদি ধৈর্য্য ধরতে পারি, তাহলে সেই কষ্টের বিনিময়ে আল্লাহ ﷻ আমাদের গুনাহ মাফ করে দিবেন, সহজ পতটাও বের করে দেবেন।
২। কষ্টটাই স্বস্তি, কারণ আমাদের জীবনের সবচেয়ে ভালো পরিবর্তনগুলো, সবচেয়ে বড় পরিবর্তনগুলো, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগুলি আমরা শিখি কষ্টকর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে। তাই, কষ্ট আর স্বস্তি যেন একে অপরের সমার্থক।
৩। কষ্টটা স্বস্তি হওয়া মানে এই না যে কষ্টের মূহুর্ত কখনো শেষ হবে না, বরং তা শেষ হবে এবং তখন আমরা relieved (স্বস্তি) feel করব। ৫ নং আয়াতের স্বস্তি যদি হয় কষ্টের সময়কার স্বস্তি, ৬ নং আয়াতের স্বস্তি হলো কষ্ট মুক্তির পরের স্বস্তি।
৪। ৬ নং আয়াতে আল্লাহ কষ্টের পরে (after) স্বস্তি আছে না বলে কষ্টের সাথে (with) স্বস্তি আছে বললেন কেন? কারণ, পরকালের অনন্ত-অসীম জীবনের কাছে ইহকালের কষ্টের দিনগুলি এতটাই ক্ষণিকের যে, তখন চিন্তা করলে মনে হবে – পৃথিবীতে যতদিন ছিলাম, কষ্টের সাথে সাথেই তো স্বস্তি ছিল!
এ সূরা থেকে বোঝা যায় স্পষ্ট করে যে আল্লাহ কেন কন্ট্রা বা বিপরীতধর্মী জিনিস তৈরী করে রেখেছেন। এ থেকে কষ্ট অবশ্যই আঁচ করা যায় আরো আঁচ করা যায় সহনশীলতাকে।
একটি কোটেশন তোমাকে লক্ষ্য করতে বলিঃ
১১. “তপনের ছটা না ফুরাতো যদি পুরালে দিনের নাট,
তবে কি প্রদোষে ফুটিয়া উঠিত ফুল্ল তারার হাট?”
মানে দিনের আলোটা যদি নিভে না যেতো তবে রাতের তারাগুলোকে আমরা দেখতে পেতাম না।
তাই সহনীয়তাকে পেতে হলে কষ্টের ভেতর দিয়ে পার হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই।
উপসংহারে আরো একটি বিখ্যাত লেখা দিয়ে রাখি তোমার জন্যঃ এটাও সইবার ক্ষমতাকে বিপুলভাবে উষ্কে দেয়-
১২. Lord!
Keep me from the habit of thinking I must say something
on every occasion on every subject.
Release me from craving to straighten out everybody’s affair.
Keep my mind free from the recital of endless detail – give me wings to get the points.
I ask for grace enough to listen to the tales of other’s pains. Help me to endure them with patients. But seal my lips on my own aches and pains- they are increasing and my love of rehearsing them is becoming sweeter as the years go by.
Teach me the glorious lesson that occasionally it is possible that I may be mistaken.
Keep me reasonably sweet. I don’t want to be a saint. Some of them are so hard to live with- but a sour old person is one of the crowning works of the Devil.
Give me the ability to see good things in unexpected places and talents in unexpected people. And give me O Lord! The grace to tell them so.
Make me thoughtful but not moody, helpful, but not bossy.
With my vast store of wisdom, it seems a pity not to use it all but thou
Knowest, Lord! That I want a few friends at the end.
এটি কে কবে কোথায় আর কি জন্য লিখেছিলেন আমি জানি না। ১৯৭৬এ এটি প্রথম পড়ার পর আমি বিমোহিত হয়েছিলাম। তাই লেখাটি হাত ছাড়া করিনি। আমি সত্যিই সহনশীল হয়েছি প্রথমে আল কুরআন পাঠের পর আর দ্বিতীয়টি হলো এই ইংরেজী লেখাটি। আর অন্যান্যগুলো তো আছেই। আমার সহনশীলতা আমার লেখাপড়ার ওপর অসম্ভব বিপুল প্রভাব ফেলেছিল আর আমৃত্যু এটা রইবে।
সূত্রগুলোঃ
১. কবিতাসমূহ
২. আল কুরআন
৩. বিবিধ
৪.ওয়র্ডপ্রেসডটকম

Saturday, November 21, 2020

মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধির কিস্সা

 

প্রথমে ভাল করে পড়ে নিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া স্বাস্থ্যের সংজ্ঞা। এর পর সেটাকে ভাল করে বুঝুন। আপনি নিজেই অনুমান অথবা বাস্তবে প্রমাণ করতে পারবেন কিসে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি সম্ভব।  

WHO definition of health

Health is a state of complete physical, mental and social well-being and not merely the absence of disease or infirmity.

ইসলাম ধর্মে একটি মশহুর হাদীস রয়েছে সেটা হলো, হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে লোক তার রিজিক প্রশস্ত ও আয়ু বাড়াতে চায় সে যেন তার আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে।’ (বুখারি)

বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যা রয়েছে। তারপরও  বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধির গুরুত্ব অপরিসীম। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রনালয়ের মতে বাংলাদেশের জনগণের গড় আয়ু একদশক আগেও ৬০ বছর ছিল। বর্তমানে গড় আয়ু বেড়ে দাঁড়িয়াছে ৭৩ বছর। লক্ষণীয় বিষয় হলো যে, পুরুষের চাইতে নারীর গড় আয়ু বৃদ্ধির হার বেশি। ২০১৬ সালে নারীর গড় আয়ু ছিল ৭২ বছর ১০ মাস ২০ দিন। ২০১৭ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৩ বছর ০৬ মাস। অর্থাৎ বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পাচ্ছে। আশাবাদ অনুযায়ী ২০৪০ সালে বৈশ্বিকভাবে মানুষের গড় আয়ু ৮৫ বছর ছেড়ে যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে জ্ঞানী-গুণী গবেষক, ডাক্তার ও বিজ্ঞানীদের তথা বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশু ও মাতৃমৃত্যু, বাল্যবিবাহ হ্রা, শিক্ষা, টিকা দেয়া, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্য সচেতনতা, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার, রোগজীবাণু সম্পর্কে সজাগ ও জ্ঞাত হওয়া ইত্যাদি আমাদের গড় আয়ু বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়াও নিম্নলিখিত উপায়ে গড় আয়ু বৃদ্ধি করা সম্ভব:

১। বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। তবে তা নিশ্চয় পুষ্টিকর, সুষম, ভেজালমুক্ত ও নিরাপদ হওয়া প্রয়োজন। শুধু স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ খাদ্যই জীবনকে দীর্ঘক্ষণ বাঁচাতে ও রোগমুক্ত রাখতে পারে। খাবার খেতে হবে পরিমাণমতো ও নিয়ম মতো।

২। দেশে প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে দু'জন দাঁতের রোগে আক্রান্ত। অথচ নিয়মিত দাঁত ব্রাশের মাধ্যমে ৮০ শতাংশ দাঁতের রোগ দূর করা সম্ভব। খুব ভালো হয়, রাতে ঘুমের আগে ব্রাশ করা।

৩। শরীর সুস্থ রাখতে দৌড় ও যোগব্যায়াম অনস্বীকার্য। কথায় বলে, করো ব্যায়াম ও যোগ, থাকো নিরোগ। প্রতিদিন সামান্য সামান্য হলেও নিজের স্বাস্থ্যকে ফিট রাখার জন্য যোগব্যায়াম করা প্রয়োজন। এর ফলে শরীর ও মন ভালো থাকে। দেহে রক্ত সঞ্চালনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। দেহ ও মস্তিষ্ককে কর্মক্ষম করে তোলে। হাঁটা, দৌড়ানো, জগিং করা, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো ইত্যাদি শারীরিক ব্যায়ামের উদাহরণ।

৪। গত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (২০১৯)-এর রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। ২০টি দূষিত শহরের মধ্যে ভারতের ১৫টি ও ঢাকা অষ্টম অবস্থানে রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী দূষণ কমাতে পারলে বাংলাদেশের গড় আয়ু বাড়বে ১ দশমিক ৩ বছর, ভারতীয়দের বাড়বে ১ বছর করে।

৫। বিয়ে নিয়ে মার্কিন একদল গবেষক এক চমকপ্রদ তথ্যের অবতারণা করেছেন সম্প্রতি। তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে বৈবাহিক সম্পর্ক দীর্ঘদিন লাভের অন্যতম পূর্বশর্ত। মাঝ বয়সটিকে দুশ্চিন্তামূলকভাবে পার করতে একজন সঙ্গী বা সঙ্গিনী অপরিহার্য। আর সেটা মৃত্যুঝুঁকিতেও অনায়াসে কমিয়ে দিতে পারে। আলিঙ্গন অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। গবেষকরা বলেছেন, প্রতিদিন ও রাতে অন্তত ৮ বার আপনার প্রিয়তমের সঙ্গে আলিঙ্গন করুন। আলিঙ্গন শরীরের অসুখ সারায়, একাকিত্ব দূর করে হতাশা, দুশ্চিন্তা ও স্ট্রোক কমায়। পরিবারের সঙ্গেই মিল মহব্বত থাকলে দুশ্চিন্তা থাকে না। পরিবারের কোন্দল, অশান্তি ও সন্দেহপ্রবণ হলে আযু বৃদ্ধি রোধ করে দেয়।

৬। বায়ু দূষণের কারণে মানুষের আয়ু প্রায় ৩ বছর কমে যায়। এই দূষণের কারণে বছরে প্রায় ৮৮ লাখ মানুষের অকাল-মৃত্যু হয়। নতুন এক গবেষণার ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা এসব তথ্যে বলেন, যদি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার শূন্যের কোঠায় আনা সম্ভব হয়, তবে হারিয়ে যাওয়া এই ৩ বছর থেকে ১ বছর ফিরে পাওয়া সম্ভব হবে, অর্থাৎ আয়ু বৃদ্ধি হবে।

৭। বর্তমান উন্নত বিশ্বে যে সমস্ত রোগ মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে তার মধ্যে আলঝেইমার, ক্যান্সার, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, ওবেসিটি, ডায়াবেটিস, বিষণ্নতা, উদ্বেগ এবং আত্মহত্যা অন্যতম। এসব কিছুর সঙ্গে রয়েছে ঘুমহীনতার গভীর সম্পর্ক। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, কম ঘুমের কারণে কমছে মানুষের আয়ু। এ কারণে সুস্থ থাকা এবং দীর্ঘজীবনের জন্য ভালো ঘুমের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

৮। বিজ্ঞানীরা মানুষকে ভালো রাখতে 'হাসি' হাসতে পরামর্শ দেন, তা যে করেই হোক। কেউ বলেছেন, দুই ঘণ্টা ঘুমালে শরীরে যে সুস্থতা আসে, পনেরো মিনিট হাসলে তার চেয়ে বেশি সুস্থতা আসবে। হৃদকম্পন ১০ থেকে ২০ শতাংশ বেড়ে হার্টে রক্ত সঞ্চালনের নালি পরিষ্কার হবে। আর্টারিতে বিশুদ্ধ রক্তবাহী নাল ব্লকের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়। দশ থেকে ১৫ ক্যালরি খরচ হয়ে শরীর হালকা করে দেবে।

৯। যদি শীর্ষ ধনীদের আয়ের ১ শতাংশ সম্পদ করারোপ করা হয় তাহলে বছরে ৪১ বিলিয়ন ডলার আসতো। এই অর্থ দিয়ে স্কুলে যাচ্ছে না এমন শিশুদের শিক্ষা দেয়া এবং স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে ৩০ লাখ মৃত্যু এড়ানো যেতো।

১০। রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা মানুষের বুড়িয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া টেনে ধরার পদ্ধতির সন্ধান পাওয়ার দাবি করেছেন। তারা এমন এক ট্যাবলেট আবিষ্কার করেছেন, যা মানুষের বয়স বাড়ার প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করবে। এটি প্রয়োগ করে মানুষের আয়ু ১২০ বছর পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। ১৩ জুলাই, ২০২০ ইং তারিখের 'দৈনিক যুগান্তর' পত্রিকা শিরোনাম ছিল- 'মানুষের আয়ু বাড়ানোর ওষুধ আবিষ্কারের পথে বিজ্ঞানীরা।'

১১। গ্রীসের ছোট্ট দ্বীপ ইকারিয়া যেখানে মানুষ মরতে ভুলে যায়। এই দ্বীপের আয়তন মাত্র ২৫৪ বর্গকিলোমিটার। বাস করেন হাজার দশেক মানুষ। এই দ্বীপের মানুষ অমরত্বের স্বাদ নিয়ে বাস করছে পৃথিবীতে। কারণ সেখানকার মানুষের গড় আয়ু ১০০ বছর। রোগ-ব্যাধি বলতে তাদের কিছুই নেই। এখানকার বাসিন্দারা ১০০ বছরেও লাঠিনির্ভর নন বা কারো মাথা তিনটে নয়। তাই এ দ্বীপের বাসিন্দারা ভুলতে বসেছেন 'মৃত্যুকে।' ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ইং দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা থেকে জানা যায় যে, উন্নত দেশের যে ২০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করেছে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। এতে ২০১৪ সালে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। এছাড়া মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ুষ্কাল বেড়ে দাঁড়াবে ৮০ বছরে।

১২। মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনকরণের ফলে আয়ু বৃদ্ধি করা যায়। যেমন- কিডনি, লিভার, চোখ ইত্যাদি। এছাড়া অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মতো মানুষের মাথাও প্রতিস্থাপন সম্ভব! বিশেষজ্ঞদের বড় অংশ মনে করেন, কখনই জীবিত মানুষের মাথা প্রতিস্থাপন সম্ভব নয়। তবে যুক্তরাজ্যের নিউরোসার্জন ক্লস ম্যাথুর দাবি- এটা সম্ভব এবং তা হতে পারে আগামী ১০ বছরের মধ্যে। আইসিডিডিআরবি পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়- শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষ শারীরিক অসুস্থতার কারণে চিকিৎসাসেবা নিতে হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে যান এবং মাত্র শতকরা ১৫% ভাগ মানুষ শারীরিক অসুস্থতার কারণে চিকিৎসাসেবা নিতে এমবিবিএস ডাক্তারের কাছে যান।

১৩. মানুষকে দান করুন। স্বাস্থ্যের ওপর এর ইতিবাচক ফল রয়েছে।

১৪. রাগ থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন। স্বাস্থ্যের ওপর এর ইতিবাচক ফল রয়েছে।

১৫. সব সময় ইতিবাচক থাকুন। স্বাস্থ্যের ওপর এর ইতিবাচক ফল রয়েছে।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একটি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঠিকভাবে কাজ করার জন্য ছয়টি বিষয় নিশ্চিত করা জরুরি। এটা হলো- প্রয়োজনীয় অর্থায়ন, চিকিৎসাসহ পর্যাপ্ত জনবল, চিকিৎসা সরঞ্জাম, তথ্য-উপাত্ত, সেবাদানের সঠিক নির্দেশিকা ও যথাযথ ব্যবস্থাপনা।

দেশের সিংহভাগ মানুষ গ্রামে ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস করেন। ধাবমান শ্রেণি শহরের মানুষগুলোর মতো তারা কাঙ্ক্ষিত সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্ত হয় না। তারা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরিবর্তনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এমনকি অভিজ্ঞ ডাক্তারের সানি্নধ্যেই যেতে পারে না। মানুষেরা ভালো চিকিৎসা ও নিয়ম-কানুন সঠিকভাবে পালন করলে, দলিত ও বঞ্চিতদের এবং প্রান্তিক জনগণ প্রাপ্ত হলে বেশিদিন বেঁচে রাখা সম্ভব হবে বলে অনেকে মনে করেন।

চলমান সময়ে-
১। ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখুন। ঘরের মধ্যে প্রচুর আলো-বাতাস প্রবেশ করতে দিন। বাড়ির আশপাশে বদ্ধ ড্রেন, ছোট ডোবা না রাখাই উত্তম। যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না যাতে অস্বাস্থ্যকর দুর্গন্ধ ছড়াতে পারে।

২। নিয়মিত গোসল/স্নান করুন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জামা-কাপড় পরুন। অন্যের ব্যবহৃত জিনিসপত্র যেমন- চিরুনি, টুথব্রাশ, টুপি, রুমাল, গামছা বা তোয়ালে, জামা-কাপড় প্রভৃতি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

৩। মাছি বসা খাবার, পচা ও বাসি খাবার, অনেকক্ষণ বাইরে রেখে দেয়া খোলা খাবার, অপরিষ্কার হাতে পরিবেশন করা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। হাত সাবান পানি দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধৌত করে খাবার গ্রহণ করলে বহু রোগ-জীবাণু থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। টয়লেট ব্যবহারের পর যেকোনো খাবার বা নাক-মুখ ও ঠোট স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকলে এবং হাত ও পায়ের নখ যথাযথভাবে কেটে ফেলতে হবে।

৪। মানুষের শরীরকে ভালো রাখার আরো একটি পন্থা হলো- সময়মতো প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়া। মল-মূত্র চাপ পড়লেই স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিনে যাওয়া। শরীরের মধ্যে আটকিয়ে রাখা মানেই রোগ-বালাইকে আমন্ত্রণ জানানো।

স্বাস্থ্যই সম্পদ ও স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। স্বাস্থ্যকে যদি ভালো রাখতে পারি, তাহলে শরীরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে ও দীর্ঘায়ু লাভ করা সম্ভব। রোগ হয়ে গেলে তার চিকিৎসা করার চেয়ে, রোগ যেন না হয়, সে চেষ্টা করাই ভালো। অর্থাৎ রোগ নিরাময়ের চেয়ে রোগ প্রতিরোধই শ্রেয়। কিছু উপরোক্ত উদাহরণ সাধারণ স্বাস্থ্যকর অভ্যাস অনেক রোগ প্রতিরোধ করতে পারে এবং মানুষ দীর্ঘসময় আয়ু নিজেই তৈরি করতে এবং বেশদিন বাঁচতে পারে।

দেখি কী করলে আরও কিছু বছর বেশি বাঁচা যায়?

১.গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইংল্যান্ডের বিজ্ঞানীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে, নিয়মিত ব্যায়ামে বার্ধক্য-প্রক্রিয়ার গতি কমানো যায়। ব্যাপক পরিসরে পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী, দিনে মাত্র পাঁচ মিনিট (১০ মিনিটে প্রতি মাইল গতিতে) দৌড়ালে অস্বাভাবিক মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা যায়। তাঁদের অকাল মৃত্যুঝুঁকি অন্তত এক-তৃতীয়াংশ কমে। তাঁদের আয়ু যাঁরা মোটেও ব্যায়াম করেন না, তাঁদের চেয়ে গড়ে অন্তত তিন বছর বেশি বলে নিরীক্ষায় জানা গেছে (নিউইয়র্ক টাইমস, জুলাই ৩০, ২০১৪)।
২.ওজন বাড়তে দেবেন না। সহজ হিসাব হলো, সেন্টিমিটারে উচ্চতা বের করে ১০০ বিয়োগ করলে প্রাপ্ত সংখ্যাটিই হবে আপনার আদর্শ ওজন। আর দেখতে হবে আপনার পেটের পরিসীমা (ভুঁড়ির বেড়) যেন উচ্চতার অর্ধেকের বেশি না হয়।
৩.পরিমিত খাবার খাবেন। শাকসবজি থাকবে বেশি। দিনে অন্তত পাঁচ রঙের পাঁচ রকমের ফল খাবেন পরিমিত মাত্রায়। রান্নার জন্য সূর্যমুখী বা সয়াবিন তেলের সঙ্গে জলপাই তেল (অলিভ অয়েল) সমান অনুপাতে মিশিয়ে ব্যবহার করুন। এটা অসম্পৃক্ত চর্বির আদর্শ সংমিশ্রণ। ভাজা-পোড়া খাবারে ক্ষতিকর চর্বি (ট্রান্সফ্যাট) থাকে, যা স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে (হার্ভার্ড মেডিকেল পাবলিকেশন্স)। সম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত প্রাণিজ গোশতের চেয়ে মাছ ভালো। চিনির চেয়ে গুড় ভালো।
৪.প্রতিদিন অন্তত সাত ঘণ্টার ঘুম দরকার। দুপুরে অন্তত ১৫-২০ মিনিটের হালকা ঘুম খুব উপকারী। এতে আয়ু বাড়ে। কয়েক বছর আগে ইউনিভার্সিটি অব এথেন্স ও হার্ভার্ডের স্কুল অব পাবলিক হেলথের একদল গবেষক দুপুরে সামান্য ঘুমান এমন ২৩ হাজার গ্রিক নাগরিকের ওপর দীর্ঘ ছয় বছর ধরে পর্যবেক্ষণ চালিয়ে দেখেছেন, তাঁদের কারও হৃদরোগ, ক্যানসার বা স্ট্রোক হয়নি। তাঁদের সিদ্ধান্ত দুপুরের সামান্য ঘুম আপনার জীবন রক্ষা করতে পারে, আয়ু বাড়াতে পারে। মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ শত কাজের মধ্যেও প্রতিদিন দুপুরে ১৫ মিনিটের জন্য হলেও ঘুমিয়ে নেন। তাঁর বয়স এখন প্রায় ৯৫।
৫. সিগারেট পান একেবারে নিষেধ। ধূমপানে অভ্যস্ত ব্যক্তিদের ধূমপান ছাড়ার বছর দুয়েকের মধ্যে হৃদরোগের আশঙ্কা প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে, ধূমপানের সঙ্গে যুক্ত ক্যানসারের আশঙ্কা প্রতিবছর কমতে থাকে। ১৫ বছরের মধ্যে ধূমপানের সব ধরনের ক্ষতি দূর হয়ে যায়। সুতরাং আজই ধূমপান বাদ দিন।



শেষে বলি-

পৃথিবীতে কুসংস্কার ও বিজ্ঞানের মধ্যে লড়াই চলতেই থাকবে এটিই বাস্তব সত্য। বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কার তথা তথ্যপ্রযুক্তি, জ্ঞান, ওষুধ, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি প্রকৃতি ও জীবনের কল্যাণে মানুষের আয়ু বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে। বাস্তবাদীরা বলেন, বিজ্ঞানের সুফল বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসী সকলেই পাচ্ছেন। অপরদিকে কুসংস্কার, অবাস্তব, বিজ্ঞানবিরোধী প্রচার ও অন্ধবিশ্বাসীদের প্রথা ভবিষ্যতে ভেঙে পড়বে। বিজ্ঞানের জয়যাত্রা একদিন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাবে এবং বিশ্বের সকল মানুষের অবাস্তব ধ্যান-ধারণা পাল্টে দিবে বলে আমাদের ধারণা। বিজ্ঞান যেহেতু সকলের কল্যাণে নিয়োজিত, তাই বিজ্ঞান পড়া ও বিজ্ঞান মনস্ক হওয়া আবশ্যক। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা সকল মানুষের কল্যাণে ও মঙ্গলে দীর্ঘায়ু প্রাপ্তিতে ভবিষ্যতে ব্যয়িত হবে।

তথ্য সূত্র:

বিভিন্ন পত্রিকা

https://www.bangladiet.com/

ইসলামডটনেট

Thursday, November 5, 2020

সতকর্মশীলরা খুবই দামী জিনিস

 জান্নাতে প্রবেশের নিশ্চিত চাবি কোনটি?

আমরা কি কখনো গুরুত্বসহকারে ভেবে দেখছি, কার্যত ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একদম ভুল ব্যাখ্যা সাধারণ জনমনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে। প্রচলিত ধারণা সৃষ্টি হয়েছে, পাঁচটি কাজ বা দায়িত্ব পালনের নাম ইসলাম। আসলে হাদিসে উপমাটি দিয়ে ইসলামকে একটি বাড়ির সাথে তুলনা করে ধারণা দেয়া হয়েছে : স্তম্ভ ছাড়া যেমন কোনো বাড়ির কল্পনাও সম্ভব নয়, তেমনি ইসলাম পাঁচ (ঈমান, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত) স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে।
প্রশ্ন আসে : শুধু স্তম্ভ থাকলেই কি বাড়ির অস্তিত্ব বাস্তবে কখনো কল্পনা করা সম্ভব? বাড়ির পরিপূর্ণতার জন্য দরকার ছাদ, দেয়াল, জানালা-দরজা, আসবাবপত্র, রান্নাঘর, শোবার ঘর আরো কত কী? এ সব কিছু মিলেই না হয় একটা বাড়ি! তবে সব কিছুর আগে দরকার স্তম্ভ, যার ওপর গড়ে উঠবে বাড়িটি। ঈমান, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত সামগ্রিক ইসলামের বুনিয়াদ বা ভিত। কুরআনে একটি আয়াতও পাওয়া যাবে না যেখানে বলা হয়েছে, এই পাঁচটি কাজের মাধ্যমে জান্নাত পাওয়া যাবে?
কুরআন পাকে জান্নাতে যাওয়ার শর্ত হিসেবে যত আয়াত দেখা যায়, সেগুলোতে বলা হয়েছে মূলত দুটি গুণের অধিকারী হতেই হবে জান্নাতের জন্য। না হলে জান্নাত কারো কপালে কখনো জুটবেই না। জান্নাত লাভের জন্য তাকে অবশ্যই ঈমানের সাথে সাথে সতকর্মশীল হতেই হবে। মূলত নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে সতকর্মশীল হিসেবে তৈরি করা। জান্নাত লাভের শর্ত হিসেবে বিশ্বাসের সাথে সর্বত্র সতকর্মের কথা জুড়ে দেয়া হয়েছে। জান্নাত লাভের সব আয়াতেই বিশ্বাসের সাথে সতকর্মশীল হওয়াটা একান্ত আবশ্যকীয় ধরা হয়েছে। এটা ছাড়া কোনো অবস্থাতেই আর কোনোভাবে ফাঁকি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ রাখা হয়নি।
এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা বা বিষয় হচ্ছে সতকর্মশীল ব্যক্তিকে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে এবং কাজে সত হতে হবে। সতকর্মশীলতার প্রতিযোগিতা সারাজীবন করে যেতে হবে। দিনের আংশিক কিছু সময় সত থেকে অন্য সময় অসত থাকলে সতকর্মশীল হিসেবে পরিচয় দেয়ার সুযোগ নেই। দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই সত হতে হবে। সতকর্মশীল মানুষ সারাজীবন সতকর্মের ওপর অবিচল থাকবে। শেষ বিচারের দিন সব ফাঁস হয়ে পড়বে।
মসজিদের দেশ যার প্রতিটি জায়গায় আজানের ধ্বনি শোনা যায়, সে দেশ যদি কখনো দুর্নীতিতে বিশ্ব শিরোপা লাভের সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে, তার অর্থ দাঁড়ায় বিশ্বের সব দেশ থেকে বেশি অসতকর্মশীল মানুষ এ দেশে। অবাক কাণ্ড : মসজিদের দেশ কী করে দুর্নীতিবাজদের ঘাঁটি হয়? জান্নাতে যাওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে সতকর্ম। আর সব গুণ থাকলেও অসতকর্মশীল ব্যক্তি জান্নাতের সীমানার ধারেকাছেও ঘেঁষতে পারবে না। নামাজি, দ্বীনদার হওয়ার মূল কথা হচ্ছে সতকর্মশীল হওয়া। বাহ্যিকভাবে যত বড় বুজুর্গ, পীর, মস্তবড় দ্বীনদার হোক না কেন একমাত্র ঈমানদার ও সতকর্মশীলরাই জান্নাতে জায়গা পাবে।
জান্নাতে যাওয়ার শর্ত হচ্ছে সারাজীবন সতকর্মশীল হতে হবে। কারণ প্রতিটি কাজের, মুহূর্তের এবং নিয়তের ওপরই নির্ভর করবে সে কোন ধরনের সতকর্মশীল। সুবিধাবাদী সতকর্মশীল না মন-মানসিকতা আর কাজে ও কর্মে প্রকৃত অর্থে জীবনের সব সময়ে ও ততপরতায় সার্বক্ষণিকভাবে সতকর্মশীল : শেষ বিচার দিবসে এ সবই পরখ করে দেখা হবে।
অসত ব্যক্তির ইবাদত মূল্যহীন আর জান্নাত লাভের জন্য ঈমানের সাথে সতকাজ করার দৃঢ় মানসিকতা অবশ্য থাকতেই হবে যেটা কুরআন পাকে বিভিন্ন আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। প্রশ্ন আসে বিশ্বের অন্যান্য জাতির চেয়ে মুসলমানরা কী করে ক্ষেত্র বিশেষে অধিকতর অসত ও দুর্নীতিপরায়ণ হতে পারে? এর একটি সহজ ব্যাখ্যা হতে পারে : সাধারণ মুসলমানরা কুরআন আবৃত্তি করে কিন্তু বুঝে পড়ার সংস্কৃতি সমাজে গড়ে ওঠেনি। ইমাম হাসান আল বসরী (৬৪২-৭২৮ খ্রি:) বলেন : ‘কুরআনকে নাজিল করা হয়েছে এর নির্দেশনাবলির ভিত্তিতে কাজ করার জন্য কিন্তু তা না করে তারা এর আবৃত্তিকে কাজ হিসেবে ধরে নিয়েছে।’ দুনিয়ার বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, তুলনামূলকভাবে পশ্চিমা বিশ্বের লোকদের মুসলিম সমাজের চেয়ে অধিক সামাজিক এবং সতকর্মশীল হিসেবে মনে করা হয়ে থাকে।
যারা ইউরোপ, আমেরিকা গিয়েছেন বা থাকেন, তাদের ধারণাও নিঃসন্দেহে এমনটিই হয়ে থাকার কথা। প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক, আমাদের চলমান ধর্ম বিশ্বাস ও সংস্কৃতি কেন আমাদেরও সেভাবে তৈরি করতে আপাত ব্যর্থ প্রমাণিত হচ্ছে, কোনোভাবেই কেন যেন পাশ্চাত্যের সাথে প্রতিযোগিতায় পারছি না। গভীর বিশ্লেষণে দেখা যাবে মূল কারণ কিন্তু অতি সূক্ষ্ম এক স্থানে : বেহেশত লাভের ত্রুটিপূর্ণ গতানুগতিক ভুল ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, শিক্ষা, প্রথা ও নির্দেশনা।
ফলে প্রচলিত সংস্কৃতির ঘূর্ণিপাকে যেন হাবুডুবু খাচ্ছে সমাজের সবাই। অসত কর্মশীল হয়ে জান্নাত লাভের কোনো রকম সুযোগ ইসলামে না থাকার পরেও কেন যেন এক শ্রেণীর মুসলিমদের ভেতরে চলে আসছে দাড়ি, টুপি, নামাজি, হাজি সেজে অঘোষিত এই দুর্নীতির প্রতিযোগিতায় নামতে। জীবনে একবার হজ করলেই যেন কেল্লাহ ফতেহ। আসমান উঁচু পরিমাণ নেকি অর্জন করেও সঠিক কথা হচ্ছে, সারা জীবন যাদের হক নষ্ট করা হয়েছে নিজের অর্জিত মূলধন নেকি দিয়ে তাদের সাথে বিনিময় করতে হবে। আর এভাবে পরিশোধ করতে করতে আগেই নেকি সব শেষ হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে প্রাপকের গুনাহ নিজের কাঁধে নিয়ে দোজখে যেতে হবে। প্রথমে দেখা যাক কুরআনের আলোকে সতকাজের ব্যাখ্যা।
পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারা আয়াত ১৭৭ তে বলা হয়েছে : ‘সতকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ করবে, বরং বড় সতকাজ হলো এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর ওপর, কিয়ামত দিবসের ওপর, ফেরেশতাদের ওপর এবং সব নবী-রসূলের ওপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্মীয়স্বজন, এতিম-মিসকিন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্য। আর যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য ধারণকারী তারাই হলো সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেজগার।’
এখন আমরা স্পষ্ট ধারণা লাভের জন্য বিশ্লেষণ করতে পারি, আমাদের কি বার্তা পরিবেশন করছে জান্নাত লাভের আয়াতসমূহ? সব আয়াতেই কিন্তু পরিষ্কারভাবে নির্দেশনা রয়েছে : ঈমানদার সতকর্মশীলদের জন্যই শুধু জান্নাত। ঈমানের সাথে সতকর্মশীল না হলে আর সব গুণ থাকলেও কিন্তু কারো কপালে কস্মিনকালেও জান্নাত জুটবে না।
-অন্যএকদিগন্ত

রাতে মাছ খাবেন না

 হাইলাইটস

মাছ আর মাংস প্রোটিনে ভরপুর থাকলেও তা হজম করতে বেশ সময় লাগে।
বিশেষত তা যদি হয় বড় মাছ। কারণ মাছ মশলা ছাড়া একদম রান্না করাই যায় না।
আর মশলা বলতে থাকে পেঁয়াজ, আদা, রসুন, টমেটো। যা রাতে হজম করা কঠিন।
সারাদিন তেল-মশলাদার খাবার যতই খাওয়া হোক না কেন রাতের খাবার সবসময় হালকা খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। আর সেই সঙ্গে ৮টার মধ্যেই রাতের খাবার সেরে ফেলতে পরামর্শ দিয়েছেন সেই সঙ্গে রাতের মেনুতে মাছ-মাংস বাদ রাখার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। মাছ আর মাংস প্রোটিনে ভরপুর থাকলেও তা হজম করতে বেশ সময় লাগে। বিশেষত তা যদি হয় বড় মাছ। কারণ মাছ মশলা ছাড়া একদম রান্না করাই যায় না। আর মশলা বলতে থাকে পেঁয়াজ, আদা, রসুন, টমেটো। রাতে এই কোনও উপকরণই হজম হতে চায় না। এছাড়াও মাছের মধ্যে থাকা তেলও হজম হতে বেশ খানিকক্ষণ সময় লাগে। যে কারণে মাছ খেলে অনেকবার ঢেকুর দেয়, অস্বস্তি হয়। কিছুতেই হজম হতে চায় না। আর হজম না হলে যে শরীরকে বেশ বেগ পেতে হয় একথা কে আর না জানে!
কিন্তু দুপুরে আবার মাছ-ভাত খুব ভালো হজম হয়। তাই বয়স্ক হোক বা শিশু রাতে মাছ এড়িয়ে চলাই ভালো। যে কারণে ফিশ কাটলেট, ফিশ ফিঙ্গার এই সব স্ন্যাকস হিসেবেই খাওয়া হয়। কথায় বলে মাছ-ভাতে বাঙালি। কিন্তু সব খাবারেরই নির্দিষ্ট কিছু সময় রয়েছে। এছাড়াও আরও বেশ কিছু কারণ রয়েছে। সসুস্থ থাকতে ফিল্মস্টার থেকে খেলোয়াড় সকলেই কিন্তু নিরামিষ আহার পছন্দ করেন। এমনকী অনেকে দুধ, পনিরও খাদ্য তালিকা থেকে বাদ রাখেন। বিজ্ঞান বলে মাছ, মাংস কিংবা ডিম বাদে প্রয়োজনীয় প্রোটিনের চাহিদা মিটবে না এই ধারণা এবার ভাঙার সময় এসেছে। পেটের রোগ এড়াতে, দীর্ঘদিন নীরোগ থাকতে হলে অবশ্যই নিয়ম মেনে খান।
আর দেখা গিয়েছে, যাঁরা নিরামিশাষী তাঁদের গড় আয়ু কিন্তু মাংশাসীদের দেখে ১০ বছর বেশি। বাঙালির যাবতীয় অসুস্থতা তাদের খাদ্যাভাসকে ঘিরেই। আর তাই চিংড়ি, মাটন থেকে লোলুপ দৃষ্টি সরালে অনেকটাই ভালো থাকা যায়। এবার অনেকেই হয়তো ভাববেন একরকম খাবারে অভ্যস্ত আপনার শরীর। হঠাত করে শরীরে যদি প্রোটিনের ঘাটতি হয় তাহলে নানা সমস্যা আসতে পারে। বিষয়টি কিন্তু সেরকম নয়। বরং দিনে-রাতে মাছ-মাংস খেলে আপনি অনেক বেশি করেই শারীরির সমস্যাকে আহ্বান জানাচ্ছেন। এতে শরীরের অন্য অঙ্গ প্রতঙ্গে অনেক বেশি ক্ষতিকর প্রভাবও পড়ে। আর বয়স ৩৫ পেরোলেই এই অভ্যাসে আনুন বদল।
কারণ, ৩৫ বছরের পর থেকে শরীর নানা দিক থেকে দুর্বল হতে থাকে। পুরুষদের ক্ষেত্রে হার্টের অসুখ ও ওজন বৃদ্ধির প্রবণতা বাড়তে থাকে। মেয়েদের ক্ষেত্রে সন্তানধারণের পর বা ৩০-৩৫ বছর বয়সের পর ওজন প্রায় ১০-১৫ কেজি বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে প্রেগন্যান্সির পর শরীর সম্পর্কে খুবই সচেতন হওয়া জরুরি। আর এই সময় সন্তানের প্রতি বেশি নজর থাকায় নিজের শরীর সম্পর্কে খুব কম মহিলাই সচেতন হতে পারে। তাই সবচেয়ে সহজ উপায় খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ঘটিয়ে শরীর ঠিক রাখা। এছাড়া কর্মরত পুরুষ-মহিলা সকলেরই শরীরচর্চার সময় আজ প্রায় নেই বললেই চলে, তার উপর খাওয়ার ব্যাপারে কোনও রাশ নেই। তাই এই বয়সে যদি কেউ ভেজ ডায়েটে চলে আসেন সেক্ষেত্রে সুস্থ থাকা যায় অনেক বেশি। এতে মহিলাদের মেনোপজ শুরুর সময় অনেকদিন পর্যন্ত আটকে রাখা সম্ভব। ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা ও নানান অপ্রত্যাশিত অসুখের প্রকোপ দূর করা সম্ভব। এছাড়া ফল, সবজি বেশি করে খেলে তা ক্যানসারের মতো মারণরোগ অনেক অংশেই রোধ করে।
মাছের মধ্যে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। যা হার্টের জন্য ভালো। মাছ না খেলে রাতে এক কাপ দুধের সঙ্গে দুটি আমন্ড খান। আর দুধ না খেলে একসঙ্গে চারটে আমন্ড ও দুটো আখরোট খেয়ে ঘুমোতে যান।

খাই খাই ভাব? সারাক্ষণ?

 হাইলাইটস

খাবারে দরকার পর্যাপ্ত প্রোটিন
খাবার থেকে প্রসেসড ফুড হটানো
ঘুমোনোর চেষ্টা
সাবস্টিটিউট খাবার
খাবার সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান
খাওয়াদাওয়ায় খুব বেশি মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ না থাকলে মুশকিল আছে। কিন্তু যাদের খাই খাই ভাব বেশি, তারা তা করে উঠতে পারেন না।
কোভিডের মৌসুমে গৃহবন্দি থাকার ফলে একঘেয়েমি থেকেও খাওয়া বেড়ে গিয়েছে। ফাস্ট ফুড- জাঙ্ক ফুড হাবিজাবি খেয়ে ওজন বাড়িয়ে ফেলেন। কমে যায় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা। বিপদ বাড়ে।
কী ভাবে এই বিপদ কাটানো যায়, সে পথ দেখিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ওবেসিটি জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত প্রবন্ধ থেকে জানা গিয়েছে খাবারের মোট ক্যালোরির ২৫ শতাংশ প্রোটিন থেকে এলে ভুলভাল খাবার খাওয়ার প্রবণতা প্রায় ৬০ শতাংশ কমে যায়। কাজেই দিনের প্রতিটি খাবারের সঙ্গে পর্যাপ্ত প্রোটিন যেন থাকে, এটি খেয়াল রাখতে হবে।
হরমোন বিশেষজ্ঞদের কথায়, ‘‘খুব খিদে পেলে ভাজা বা প্রসেসড ফুডের আসক্তি বেড়ে যায়। কাজেই খিদে চেপে রাখবেন না। অল্প খিদে পেলেই স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে নেবেন কিছুটা।’’
খাবারে আসক্তি কাটানোর উপায় কী
• চিউয়িং গাম মুখে রাখলে মিষ্টি এবং নোনতা খাবারের আসক্তি কিছুটা কমে বলছে গবেষণা। তবে চিউয়িং গাম যেন সুগার–ফ্রি হয়। না হলে ক্যালোরি বেড়ে গিয়ে সমস্যা আসবে। শরীরে জলের ঘাটতি না হলে খাই খাই ভাব একটু কমই হয়। কাজেই দিনে কম করে আড়াই–তিন লিটার জল খান। অল্প করে, বারে বারে।
• ঘুম কম হলে ভাজা বা মিষ্টি খাবারের প্রতি আসক্তি বাড়তে পারে। কাজেই ভাল করে ঘুমোনোর চেষ্টা করুন। কখনও যদি কম ঘুমের ক্লান্তি গ্রাস করে চিনি ছাড়া কালো চা বা কফি খান দু–এক কাপ।
• মানসিক চাপ বাড়লে গ্লুকোজসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা হয়। তবে তার স্থায়িত্ব থাকে ৩–৫ মিনিট। সে সময় আড্ডায়-কাজে কাটিয়ে দিতে পারলে বিপদ কমে যায়।
পুষ্টিবিদদের মত, “বিপদ বাড়ে ঘরে হাই-ক্যালোরি খাবার মজুত করে রাখলে। তীব্র খিদের মুহূর্তে হাতের কাছে খাবার পেলে সামলানো যায় না। কাজেই ওরকম করবেন না। তার চেয়ে বরং কোন খাবারের বদলে কোনটা খেলে খাওয়ার ইচ্ছে কমে অথচ ক্ষতি হয় না, সেটা বুঝে সেই ধরনের খাবার রাখুন ঘরে।”
কোনটার বদলে কোনটা
হরমোন বিশেষজ্ঞদের মতে, কোন খাবারের বদলে কোনটা খাবেন তা জানা খুব জরুরি। যেমন ধরুন, চিনির বদলে সুগার সাবস্টিটিউট খেয়ে ভাবলেন হাই ক্যালোরির ধাক্কা সামলেছেন, আসলে হল ঠিক এর উল্টো। চিনির গ্লুকোজ মস্তিষ্কের উদ্দীপনা নিয়ে আসে বলেই মিষ্টি খেয়ে তৃপ্তি হয়। কিন্তু সুগার সাবস্টিটিউটে তো গ্লুকোজ নেই, ফলে তা খাওয়ার পরও অতৃপ্ত থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা।
মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে সারাদিন ধরে তাড়া করল। সেই তাড়নায় উল্টো-পাল্টা ক্যালোরি শরীরে ঢুকল অনেক। সে জন্যই যারা চিনি ছাড়া চা–কফি খেতে পারেন না, তাঁদের আমরা সুগার সাবস্টিটিউটের বদলে অল্প করে চিনি দিয়ে খেতে হরমোন বিশেষজ্ঞরা। খুব মোটা মানুষ বা ডায়াবেটিকদেরও। এতে দিনভর মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে কম থাকে।
এমনভাবে চলতে হয় যাতে খাওয়ার ইচ্ছে মেটে, ক্ষতিও হয় না শরীরের। যেমন–
• চিপ্সের বদলে খান স্বাস্থ্যকর কাজু, চিনাবাদাম বা আখরোট। তাতে মন না ভরলে অল্প করে পপকর্ন খেতে পারেন।
• চকোলেট আসক্তি মাত্রা ছাড়ালে ম্যাগনেসিয়াম-সমৃদ্ধ অ্যামন্ড খেয়ে দেখুন। কাজ না হলে মিল্ক চকোলেটের বদলে খান ৭০ শতাংশ কোকাসমৃদ্ধ ডার্ক চকলেট।
• ক্যান্ডি বা পেস্ট্রির বদলে খান ফল। কিসমিস বা খেজুর খেলেও কাজ হবে।
হরমোন বিশেষজ্ঞরা বলেন, “ঠান্ডা পানীয়ের তেষ্টা মেটাতে তার সঙ্গে জিরো ক্যালোরি অর্ধেক অর্ধেক মিশিয়ে খান। ক্যালোরি কিছুটা কম ঢুকবে, মস্তিষ্কও তৃপ্ত থাকবে। ফলের রস মিশিয়ে স্পার্কলিং ওয়াটার খাওয়া যেতে পারে।”

একাকীত্ব? তাহলে বন্ধু বেছে নাও

 The language of friendship is not words but meanings.

A real friend is one who walks in when the rest of the world walks out.
Man’s best support is a very dear friend.
শিশুদের মধ্যে নতুন বন্ধু তৈরির একটা প্রাকৃতিক দক্ষতা থাকে। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় যেটা হয়ে পড়ে দুরূহ। কারণ আপনি চাইলেই কাউকে বলতে পারবেন না, "আপনি আমার বন্ধু হবেন?" বিষয়টা এতোটা সহজ না বলেই হয়তো বিশ্বে প্রাপ্তবয়স্কদের একাকীত্বের সমস্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান দফতরের তথ্যানুযায়ী, দেশটির ২৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তীব্র একাকীত্ব সমস্যায় ভুগছে।
আপনিও যদি এমন একাকীত্বে ভোগেন তাহলে নিচের ১০টি টিপসের মাধ্যমে জেনে নিতে পারেন কীভাবে আপনিও সহজে বন্ধু বানাতে পারেন।
১. ক্লাব বা সংগঠনে যোগ দিন :
কোনো একটি দল, সংগঠন, বা পছন্দের কোনো বিষয়ের ওপর ক্লাস-ভিত্তিক কোর্সে যোগদানের মাধ্যমে নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়। সেখান থেকেই হয়তো পেয়ে যেতে পারেন আপনার প্রিয় বন্ধুকে।
একসাথে থাকার কারণে আপনার সহকর্মী বা সহপাঠীরা জানতে পারবেন আপনার কিসের প্রতি উতসাহ রয়েছে।
আপনার এমন কয়েকটি বিষয় যখন আরেকজনের আগ্রহের সঙ্গে মিলে যাবে তখনই বন্ধুত্বের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
যদি কোনো মিল নাও থাকে, তাহলে নতুন কিছু চেষ্টা করতেও তো দোষ নেই। তা সে তাইকন্দো হোক বা পেইন্টিং।
এর মাধ্যমে আপনি যেমন আপনার নিজের দক্ষতার দিকগুলো যাচাই করতে পারবেন। তেমনি জানতে পারবেন কে হতে পারেন আপনার কাছের একজন বন্ধু।
২. স্বেচ্ছাসেবক :
স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করা মানে, মানুষের প্রতি আপনার মমত্ববোধ আছে। এখন এই সেবা আপনার স্থানীয় কমিউনিটির প্রতি হোক বা আরো বড় পরিসরে সেটা বিষয় না।
বিষয় হলো, এই কাজের মাধ্যমে আপনার নতুন মানুষের সাথে পরিচয় হবে। এবং এই মানুষগুলো তারাই হবে যাদের মন উদার। একজন বন্ধুর ভেতরে এই গুনটাই সবচেয়ে বেশি থাকা চাই।
৩. যোগাযোগ তৈরি করুন :
কোনো বিয়ের পার্টিতে বা জিমে অথবা খেলতে গিয়ে যদি নতুন কারো সাথে আপনার পরিচয় হয় যার সঙ্গে কিনা আপনি মিল পাচ্ছেন তাহলে তার ফোন নম্বর বা ইমেইল ঠিকানাটি চেয়ে নিন। কারণ তার সাথে আপনার আবার দেখা হবে কিনা সেটার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
এজন্য তার সাথে যোগাযোগের একটা মাধ্যম বের করা জরুরি।
আপনি তার সাথে দেখা হওয়ার পরের দিন একটি লাইন লিখে জানান যে তার সঙ্গে সময় কাটানোটা আপনি কতো উপভোগ করেছেন।
এরপর তাকে কোথাও খেতে যাওয়ার জন্য অথবা কোথাও ঘুরতে বা হাটতে যাওয়ার জন্য ডাকতে পারেন।
নিজ থেকে এই একটা পদক্ষেপের কারণেই হয়তো আপনি পেয়ে যেতে পারেন প্রাণ প্রিয় বন্ধুকে।
৪. 'হ্যাঁ' বলতে শিখুন :
যদি নতুন পরিচিত কেউ আপনাকে রাতের খাবারের জন্য আমন্ত্রণ জানান বা আপনাকে থিয়েটার টিকিট অফার করে তাহলে 'হ্যাঁ' বলুন।
এতে আপনি সাময়িক স্নায়ুচাপের মুখে পড়তে পারেন। মনে হতে পারে যে আপনি আপনার গণ্ডির বাইরে গিয়ে কিছু করছেন। কিন্তু জেনে রাখবেন, সাহস না রাখলে, কিছুই অর্জন করা যায় না।
যদি আপনি সত্যিকার অর্থে সেই সাহস যোগাতে না পারেন, অথবা সে আপনাকে যেখানে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছে সেটা আপনার ঠিক পছন্দ না, তাহলে আপনি তাকে ভদ্রভাবে 'না' বলুন। তবে সেই 'না' বলার মধ্যে এটাও পরিষ্কারভাবে বলুন যে ভবিষ্যতে সে যদি আপনাকে আমন্ত্রণ জানান তাহলে আপনি সেটা সাদরে গ্রহণ করবেন।
৫. প্রত্যাখ্যানের ভয় কাটিয়ে উঠুন :
সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আপনার প্রতিটি প্রচেষ্টা যে কাজে লাগবে, এমন কোনো কথা নেই। কিন্তু আপনি যদি প্রতিনিয়ত প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয়ে থাকেন তাহলে আপনার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব হবে না।
সাহসী হন এবং নিজের প্রতি আস্থার জায়গাটা একটু মজবুত করুন।
আপনি যদি নতুন কারো সাথে পরিচয়ের পর তার সঙ্গে আবারো দেখা করার প্রস্তাব দেন এবং তাদের উত্তর যদি "না" সূচক হয়, তাহলে ভেঙে পড়বেন না। কেননা এটাই পৃথিবীর শেষ নয়।
সম্ভবত সেই ব্যক্তি আপনার জন্য ছিল না। আপনার বন্ধু হওয়ার জন্য হয়তো আরো ভাল কোনো মানুষ অপেক্ষা করছে।
৬. সহকর্মীদের বন্ধু বানান :
বর্তমান ব্যস্ত সমাজে পরিবারের চাইতে আমাদের বেশি সময় কাটানো হয় কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সাথে। তাই এই সহকর্মীদের বন্ধু বানানোর চেষ্টা করা যৌক্তিক।
এটা ঠিক যে অফিসের অনেক কথায় আপনি হয়তো কষ্ট পেতে পারেন।
এক্ষেত্রে আপনি বিশ্বস্ত কোন সহকর্মীর কাছে নিজেকে একটু প্রকাশ করতে পারেন। হয়তো সেও আপনাকে এর প্রতিদানে হয়তো ভাল কিছু দেবে।
কাজের পর কোথাও খেতে যাওয়ার পরিকল্পনাগুলোয় যোগ দিন। এমনকি আপনি ক্লান্ত হলেও 'হ্যাঁ' বলুন।
অথবা লাঞ্চ বিরতিতে আপনি কলিগদের কাউকে নিয়ে স্থানীয় স্যান্ডউইচ দোকানে যেতে পারেন।
অফিস ডেস্কের থেকে দূরে কোথাও গেলে সহকর্মীর সাথে কাজের বাইরে আরো নানা বিষয়ে কথা বলা সহজ হবে।
এতে সহকর্মীদের, প্রকৃত বন্ধুতায় বদলে ফেলাও হয়ে যাবে অনেক সহজ।
৭. কৌতূহলী হন :
আপনি যদি লাজুক স্বভাবের হন বা কিছু বলতে গিয়ে আটকে যান, তাহলে সেই জড়তা কাটিয়ে ওঠার সহজ উপায় হলো অপর পাশের মানুষের বিষয়ে জানতে চাওয়া।
কেননা অধিকাংশ মানুষই নিজের বিষয়ে কথা বলাটা উপভোগ করে। আপনি যদি ভাল শ্রোতা হন এবং ভবিষ্যতে তার সেই বিষয়গুলো টেনে আনেন। তাহলে বুঝে নিন যে আপনি খুব দ্রুত বন্ধু পেতে যাচ্ছেন।
৮. প্রয়োজনের সময় এগিয়ে আসুন :
জন্ম তারিখ মনে রাখা বা তার প্রয়োজনীয় কোনো কিছু কিনে দেয়ার মতো ছোট ছোট বিষয়গুলো মনে রাখা, বন্ধুত্ব গড়ে তোলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি।
একইসাথে নিজের গুরুত্ব প্রমাণ করার মোক্ষম সুযোগ পাওয়া যায় খারাপ সময়গুলোতে।
যদি আপনার পছন্দের মানুষটি কঠিন সময় মধ্যে দিয়ে যান তাহলে তার সাহায্যে এগিয়ে আসুন।
সে অসুস্থ থাকলে তার প্রিয় কোনো খাবার নিজ হাতে তৈরি করে পাঠিয়ে দিতে পারেন। অথবা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলতে পারেন - এই ছোট্ট বিষয়গুলোর মাধ্যমে আপনি বোঝাতে পারবেন, আপনি বন্ধু হিসেবে কতোটা দারুণ।
৯. খোলা মনের মানুষ হন :
একজন নতুন বন্ধুর প্রকৃতি বিভিন্ন রকম হতে পারে। যে ১৭ বছরের হতে পারে আবার সত্তরও হতে পারে, তার বিড়াল পছন্দ হতে পারে আবার শুধু কুকুর পছন্দ হতে পারে। তার পছন্দের গান হতে পারে মেটাল বা ক্লাসিক্যাল।
মনে রাখবেন যে, ভিন্ন ব্যক্তিত্ব আমাদের আকর্ষণ করে বেশি। তাই প্রথম দেখাতেই কাউকে বিচার করা ঠিক হবে না - প্রত্যেকেই একটা সুযোগ দিন।
সেইসব মানুষদের কথা ভাবুন যাদের আপনি প্রথম দেখায় ভীষণ বিরক্তিকর ভেবেছিলেন, অথচ যারা এখন কিনা আপনার ভীষণ প্রিয়।
১০. পর্যাপ্ত সময় দিন :
রাতারাতি কারো বন্ধু হয়ে ওঠার সম্ভাবনা খুব কমই থাকে।
বন্ধুত্বকে লালন করতে হয়। এজন্য নতুন কারো সাথে বন্ধুতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে, সেটাকে বাড়িয় তুলতে এর পেছনে আপনার সময় আর যত্ন বিনিয়োগ করতে হবে।
কেননা বিশ্বাস ও ভরসার ভিত্তি সময়ের সাথে সাথে মজবুত হয়ে ওঠে।
নতুন বন্ধু তৈরির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হোন আপনি তাকে যা দিতে পারবেন, সেটার প্রতি বিশ্বাস রাখা।
ইতিবাচকভাবে ভাবার চেষ্টা করুন। নিজের প্রতিও যত্ন নিন।
সূত্র: বিবিসি