Tuesday, November 24, 2020

কষ্টের সাথে সুখ

 আমার বন্ধুকে লেখা

No pain No gain
"কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা আর সাহস নিয়ে মানুষকে জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতময় পথ অতিক্রম করতে হয়। কষ্ট -বিপদের সাথে লড়াই না করে এবং বিপদকে মোকাবেলা না করে কখনই জীবনে সাফল্য অর্জিত হয় না।"
অন্যের কষ্টের কথা চিন্তা করলে সহনশীলতা পাবেন। সহনশীলতা অর্জন করতে হয়। আর এ পথ অতিক্রম করা দুঃসাধ্য। নীচের লেখা মশহুর কবিতগুলো পড়ুন। সহনশীলতা বা এনডিউরেন্সকে সামনে রেখেই কবিতাগুলো লেখা।
১. “একদা ছিল না জুতা চরণ যুগলে
দহিল হৃদয় মম সেই ক্ষোভানলে।
ধীরে ধীরে চুপি চুপি দুঃখাকুল মনে
গেলাম ভজনালয়ে ভজন কারণে।
দেখি সেথা এক জন পদ নাহি তার
অমনি জুতার খেদ ঘুচিল আমার।
পরের দুঃখের কথা করিলে চিন্তন
আপনার মনে দুঃখ থাকে কতক্ষণ।”
পাবিহীন দুঃখিজনের কথা চিন্তা করলে কারো পায়ে জুতা না থাকার দৈন্য মনে স্থান পায় না। আসলে পরের দুঃখ কষ্টকে উপলব্ধি করার মাঝেই জীবনের প্রকৃত সার্থকতা আর সহনশীলতা নিহিত।
২. দণ্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে
সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার। যার তরে প্রাণ
ব্যথা নাহি পায় কোন, তারে দণ্ড দান
প্রবলের অত্যাচার। যে দণ্ড বেদনা
পুত্রেরে পার না দিতে, সে কারেও দিও না।
যে তোমার পুত্র নহে, তারও পিতা আছে,
মহাঅপরাধী হবে তুমি তার কাছে।
বিচারের সময় অপরাধীর প্রতি সহানুভূতিশীর হলে সে বিচার হয় আদর্শ বিচার। কারণ অপরাধ নিন্দনীয়, অপরাধী নয়। তাই একমাত্র সহানুভূতিশীল বিচারই পারে অপরাধীর মনের পরিবর্তন করাতে ও চরিত্রের সংশোধন ঘটাতে।
৩. দৈন্য যদি আসে, আসুক, লজ্জা কিবা তাহে,
মাথা উঁচু রাখিস।
সুখের সাথী মুখের পানে যদি নাহি চাহে,
ধৈর্য ধরে থাকিস।
রুদ্র রূপে তীব্র দুঃখ যদি আসে নেমে
বুক ফুলিয়ে দাঁড়াস,
আকাশ যদি বজ্র নিয়ে মাথায় পড়ে ভেঙে
ঊর্ধ্বে দু'হাত বাড়াস।
জীবনের দুঃখ-দারিদ্রের মধ্যে কোনো লজ্জা নেই, বরং কারও মুখাপেক্ষী হওয়ার মধ্যেই লজ্জা। বিপদে ধৈর্য ধারণ করে দুঃখ-দারিদ্র্যকে সাহস ও মনোবল দিয় প্রতিহত করতে পারলে জীবনে সফল হওয়া যায়।
৪. পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি
এ জীবন মনে সকলি দাও,
তার মত সুখ কোথাও কি আছে?
আপনার কথা ভুলিয়া যাও।
পরের কারনে মরণেও সুখ,
'সুখ-সুখ' করি কেঁদো না আর;
যতই কাঁদিবে যতই ভাবিবে,
ততই বাড়িবে হূদয়-ভার।
আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেউ অবনী পরে
সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।
ব্যক্তিগত দুঃখ সন্তাপে হা-হুতাশ না করে বরং নিজের স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে পরের উপকার করার মধ্যেই প্রকৃত সুখ নিহিত। মানব জীবন ব্যক্তিস্বার্থকেন্দ্রিক নয়, একে অন্যের কল্যাণে ব্রতী হওয়াই মনুষ্যত্বের পরিচয়।
৫. কি কারণ, দীন! তব মলিন বদন?
যতন করহ লাভ হইবে রতন ৷
কেন পান্থ! ক্ষান্ত হও হেরে দীর্ঘ পথ?
উদ্যম বিহনে কার পূরে মনোরথ?
কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে,
দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে?
মনে ভেবে বিষম-ইন্দ্রিয়-রিপু-ভয়,
হাফেজ! বিমুখ কেন করিতে প্রণয়?
কি কারণে হে অভাবী/দরিদ্র! তোমার মলিন মুখ? যদি যত্ন কর তবেই পাবে রত্ন। ভ্রমণকারী কেন তুমি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে হও বিরত? জান না উৎসাহ ছাড়া কারও ইচ্ছা হয় না পূরণ? কাঁটা দেখে পদ্ম তুলতে কেন বিরত? দুঃখ ছাড়া সুখ কি আসে এ পৃথিবীতে? মনে ভাব সাংঘাতিক-ইন্দ্রিয়ের শত্রু আর ত্রাস? হাফেজ! কেন স্পৃহাহীন তুমি করতে ভালবাসা বা প্রেম?
৬. খোঁজো নতুন পথ! দেখো নতুন কিছু। বসে বসে সময় ক্ষয় করে কি লাভ?
If you walk the same path every day, how will you ever see anything new?
৭. বর্ষায় বাড়িযা বনলতা
উচ্চে উঠে দেবদারু বাহি
“কত হলো বয়ঃক্রম তব”
জিজ্ঞাসে তরুর মুখ চাহি।
তরু কহে, “বর্ষ ২ শত
মাস ৬ এ দিক সে দিক।”
লতা বলে এতে বৃদ্ধি এই!
সপ্তাহে যা ছিল মোর ঠিক!
তরু বলে, “আগে বাঁচো শীতের তুষারে,
আয়ু ও বৃদ্ধির কথা হবে তার পরে।”
আমার জ্ঞানে এটা সহনীয়তার ওপর সেরা একটি লেখা।
তুমি আল্লাহকে বাদ দিয়ে কিছুতেই সহনশীল হতে পারবে না। কারণ আল্লাহ অবশ্যই আপনাকে সব কিছু এমনিতেই দেবেন না। তাই সহনশীল হতে হলে আল্লাহর ওপর আপনার স্থির বিশ্বাস অবশ্যই থাকতে হবে। নীচের কবিতাটি যখন আমি প্রথম পাঠ করি তখন বিষয়টি পুরোপুরি বুঝতে পেরে আমি অনেকক্ষণ অশ্রুসজল ছিলাম। আমি জানিনা, আপনারও এমন হবে কি না!
৮. “কিসে শুভ কিসে অশুভ কিছুই বুঝিনে প্রভু!
প্রার্থনা করি তবু!
তুমি সব জানো, এইটুকু জেনে আমি আছি আশা ধরি,
তাই প্রার্থনা করি;
যাহা দিতে চাও তাই শুধু দাও,-তাতেই আমার শুভ,
একথা জেনেছি ধ্রুব,
তোমার অর্থে সার্থক করো মোর প্রার্থনাচয়,
প্রভু! মঙ্গলময়!”
আল কুরআনের সূরা ‘আদ দুহা’তে আল্লাহ অসম্ভব সহনশীলতা আর মোটিভেশন দিয়েছেন প্রিয় নবী(সা.)কে। সূরাটির কবিতারূপ নীচে-
৯. “মধ্য-দিনের আলোর দোহাই, নিশির দোহাই, ওরে!
প্রভু তোরে ছেড়ে যাননি কখনো, ঘৃণা না করেন তোরে।
অতীতের চেয়ে নিশ্চয় ভাল হবেরে ভবিষ্যৎ,
একদিন খুশী হবি তুই লভি’ তাঁর কৃপা সুমহৎ।
অসহায় যবে আসিলি জগতে তিনি দিয়েছেন ঠাই,
তৃষ্ণা ও ক্ষুধা দুঃখ যা ছিল ঘুচায়ে দেছেন তাই,
পথ ভুলে ছিলি, তিনিই সুপথ দেখায়ে দেছেন তোরে,
সে কৃপার কথা স্মরনে রাখিস,- অসহায় জনে ওরে !
দলিসনে কভু; ভিখারী আতুর বিমুখ না যেন হয়,
তাঁর করুণার বার্তা ঘোষণা কর রে জগতময়।”
১০. আল কুরআন কী বলে সহনীয়তা নিয়ে?
আল্লাহ ﷻ সূরা ইনশিরাহ-তে বলেছেন:
“ফা ইন্না মা’আল ‘উসরি ইউসরান, ইন্না মা’আল ‘উসরি ইউসরা”
অর্থ: অবশ্যই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে, অবশ্যই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে।
(আল-কুরআন ৯৪:৫-৬)
এখানে কয়েকটা ব্যাপার লক্ষণীয়:
১। আল্লাহ ﷻ কিন্তু বলেননি কষ্টের পরে স্বস্তি আছে, আল্লাহ ﷻ বলেছেন কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে। প্রতিটা কষ্টই আসলে আমাদের জন্য স্বস্তি, কষ্টের মূহুর্তটা itself আমাদের জন্য স্বস্তি। কারণ, কষ্টের ঐ মুহুর্তগুলিতে যদি ধৈর্য্য ধরতে পারি, তাহলে সেই কষ্টের বিনিময়ে আল্লাহ ﷻ আমাদের গুনাহ মাফ করে দিবেন, সহজ পতটাও বের করে দেবেন।
২। কষ্টটাই স্বস্তি, কারণ আমাদের জীবনের সবচেয়ে ভালো পরিবর্তনগুলো, সবচেয়ে বড় পরিবর্তনগুলো, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগুলি আমরা শিখি কষ্টকর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে। তাই, কষ্ট আর স্বস্তি যেন একে অপরের সমার্থক।
৩। কষ্টটা স্বস্তি হওয়া মানে এই না যে কষ্টের মূহুর্ত কখনো শেষ হবে না, বরং তা শেষ হবে এবং তখন আমরা relieved (স্বস্তি) feel করব। ৫ নং আয়াতের স্বস্তি যদি হয় কষ্টের সময়কার স্বস্তি, ৬ নং আয়াতের স্বস্তি হলো কষ্ট মুক্তির পরের স্বস্তি।
৪। ৬ নং আয়াতে আল্লাহ কষ্টের পরে (after) স্বস্তি আছে না বলে কষ্টের সাথে (with) স্বস্তি আছে বললেন কেন? কারণ, পরকালের অনন্ত-অসীম জীবনের কাছে ইহকালের কষ্টের দিনগুলি এতটাই ক্ষণিকের যে, তখন চিন্তা করলে মনে হবে – পৃথিবীতে যতদিন ছিলাম, কষ্টের সাথে সাথেই তো স্বস্তি ছিল!
এ সূরা থেকে বোঝা যায় স্পষ্ট করে যে আল্লাহ কেন কন্ট্রা বা বিপরীতধর্মী জিনিস তৈরী করে রেখেছেন। এ থেকে কষ্ট অবশ্যই আঁচ করা যায় আরো আঁচ করা যায় সহনশীলতাকে।
একটি কোটেশন তোমাকে লক্ষ্য করতে বলিঃ
১১. “তপনের ছটা না ফুরাতো যদি পুরালে দিনের নাট,
তবে কি প্রদোষে ফুটিয়া উঠিত ফুল্ল তারার হাট?”
মানে দিনের আলোটা যদি নিভে না যেতো তবে রাতের তারাগুলোকে আমরা দেখতে পেতাম না।
তাই সহনীয়তাকে পেতে হলে কষ্টের ভেতর দিয়ে পার হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই।
উপসংহারে আরো একটি বিখ্যাত লেখা দিয়ে রাখি তোমার জন্যঃ এটাও সইবার ক্ষমতাকে বিপুলভাবে উষ্কে দেয়-
১২. Lord!
Keep me from the habit of thinking I must say something
on every occasion on every subject.
Release me from craving to straighten out everybody’s affair.
Keep my mind free from the recital of endless detail – give me wings to get the points.
I ask for grace enough to listen to the tales of other’s pains. Help me to endure them with patients. But seal my lips on my own aches and pains- they are increasing and my love of rehearsing them is becoming sweeter as the years go by.
Teach me the glorious lesson that occasionally it is possible that I may be mistaken.
Keep me reasonably sweet. I don’t want to be a saint. Some of them are so hard to live with- but a sour old person is one of the crowning works of the Devil.
Give me the ability to see good things in unexpected places and talents in unexpected people. And give me O Lord! The grace to tell them so.
Make me thoughtful but not moody, helpful, but not bossy.
With my vast store of wisdom, it seems a pity not to use it all but thou
Knowest, Lord! That I want a few friends at the end.
এটি কে কবে কোথায় আর কি জন্য লিখেছিলেন আমি জানি না। ১৯৭৬এ এটি প্রথম পড়ার পর আমি বিমোহিত হয়েছিলাম। তাই লেখাটি হাত ছাড়া করিনি। আমি সত্যিই সহনশীল হয়েছি প্রথমে আল কুরআন পাঠের পর আর দ্বিতীয়টি হলো এই ইংরেজী লেখাটি। আর অন্যান্যগুলো তো আছেই। আমার সহনশীলতা আমার লেখাপড়ার ওপর অসম্ভব বিপুল প্রভাব ফেলেছিল আর আমৃত্যু এটা রইবে।
সূত্রগুলোঃ
১. কবিতাসমূহ
২. আল কুরআন
৩. বিবিধ
৪.ওয়র্ডপ্রেসডটকম

No comments:

Post a Comment