Tuesday, December 22, 2020

অনুপ্রেরণা

 মুসলিম মনীষীদের মায়েরা

মানব সভ্যতা বিনির্মাণে নারীর অবদান অনস্বীকার্য। সভ্যতার উন্নয়নে মানবজাতির পদচারণে পুরুষের পাশাপাশি আছে নারীরও শাশ্বত অবদান। তাই আদর্শ সমাজ ও জাতি গঠনে পুরুষের পাশাপাশি নারীরও অগ্রণী ভূমিকা থাকা জরুরি। একজন সভ্য নারী একটি শিক্ষিত প্রজন্ম উপহার দিতে পারে। তাই মুসলিম ইতিহাসের মহামনীষীদের বেড়ে ওঠার পেছনে মায়েদের সর্বাধিক ভূমিকা ছিল। যুগে যুগে মুসলিম মনীষীদের মায়ের ভূমিকা নিম্নে তুলে ধরা হলো।
সুফিয়ান সাওরি (রহ.)-এর মা : সুফিয়ান সাওরি একজন জগদ্বিখ্যাত হাদিসবিশারদ ও ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞ। ব্যক্তিত্ব গঠনের পেছনে তাঁর মায়ের অবদান ছিল। মা তাঁর লেখাপড়া ও ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন। সুফিয়ান সাওরি (রহ.) বলেন, ‘আমি ইলম অর্জন করতে গিয়ে তীব্র অর্থ সংকটে পড়ি। সমস্যা সমাধানের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি। এরপর মা আমাকে বলল, হে আমার বতস! তুমি ইলম অর্জন করো, আমি তোমার খরচের দায়িত্ব নিলাম। কাপড় সেলাই করে আমি তোমার খরচ সরবরাহ করব।’
মালেক ইবনে আনাস (রহ.)-এর মা : মালেক ইবনে আনাস (রহ.)-এর মায়ের ব্যাপারে ইবনে আবু উওয়াইস বলেন, ‘আমার মামা মালেক ইবনে আনাস বলেন, ছোটবেলায় মা আমাকে সাজিয়ে দিতেন। সুন্দর কাপড় পরাতেন। মাথায় পাগড়ি বেঁধে দিতেন। ইলম শেখার জন্য আমাকে মা রাবিয়া ইবনে আবু আবদুর রহমানের দরবারে পাঠাতেন। আর বলতেন, হে বতস! রাবিয়ার দরবারে যাও। তাঁর থেকে হাদিস ও ফিকহ শেখার আগে তাঁর কাছে শিষ্টাচার শেখো।’
ইমাম শাফেয়ি (রহ.)-এর মা : জন্মের দুই বছর পর ইমাম শাফেয়ি (রহ.)-এর বাবা মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর মা তাঁকে নিয়ে গাজা থেকে মক্কায় চলে আসেন। সাত বছর বয়সে তাঁকে কোরআন শিক্ষা দেন। বিশুদ্ধ আরবি ভাষা শিখতে মা তাঁকে আরবের বেদুইন গ্রামে পাঠান। এরপর মা তাঁকে তীর নিক্ষেপ ও অশ্ববিদ্যা শিক্ষা দেন। ইমাম শাফেয়ি (রহ.) নিজ মা সম্পর্কে বলেন, ‘আমার মা আমার বেড়ে ওঠার তত্ত্বাবধান করেন। শিক্ষকের বেতন দেওয়ার সামর্থ্যও মায়ের ছিল না। মক্তবে পড়তাম আর শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে ছাত্রদের পড়াতাম। সাত বছরে কোরআন হিফজ করি। ১০ বছর বয়সে ‘মুওয়াত্তা’ হাদিস গ্রন্থ মুখস্থ করি। অতঃপর মসজিদে বড় আলেমদের মজলিসে যাতায়াত শুরু করি। কিন্তু তখন লেখার জন্য কাগজ কেনার সামর্থ্যও আমাদের ছিল না। হাড্ডি বা সরকারি পরিত্যক্ত কাগজে লিখতাম। একদিন মাকে আমি বললাম, ‘মা! আমি এখন ইলমের জন্য বিনয় ও শিক্ষকের কাছে শিষ্টাচারী হওয়া শিখেছি।’ মায়ের নিবিড় পরিচর্যা ও পরিশ্রমের ফলে মাত্র ১৫ বছর বয়সে ফতোয়া প্রদানের অনুমতি পান।
ইমাম বুখারি (রহ.)-এর মা : ইমাম বুখারি শৈশবেই বাবাকে হারান। তাঁর মা ছিলেন অত্যন্ত খোদাভীরু ও দ্বিনদার। মায়ের তত্ত্বাবধানে তিনি পড়াশোনা শুরু করেন। ঐতিহাসিকরা বলেন, শৈশবে ইমাম বুখারি (রহ.) দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। তাঁর মা আল্লাহর কাছে অনবরত দোয়ার ফলে আল্লাহ তাআলা তাঁর দৃষ্টি ফিরিয়ে দেন। ১৬ বছর বয়সে মায়ের সঙ্গে হজ করেন।
ইবনে তায়মিয়া (রহ.)-এর মা : শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) ইসলামী ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মনীষীদের অন্যতম। মায়ের নিবিড় পরিচর্যা ও নির্দেশনায় ইতিহাসের পাতায় তিনি চিরস্মরণীয়। ইতিহাসে তিনি শায়খুল ইসলাম নামে পরিচিত। সিত্তুন নাইম বিনতে আবদুর রহমান ছিলেন তাঁর মা। মা তাঁকে এক চিঠিতে লেখেন, ‘ইসলাম ও মুসলিমদের সেবার জন্য আমি তোমাকে তিলে তিলে গড়েছি। তোমাকে দ্বিন শিক্ষা দিয়েছি। আমার কাছে থাকার চেয়ে তুমি দেশ-বিদেশে সফর করে ইসলাম ও মুসলিমের সেবা করো। এটাই আমার কামনা। তুমি দ্বিনের সেবা করলে তোমার প্রতি আমি পুরোপুরি সন্তুষ্ট। কিন্তু তুমি ইসলাম ও মুসলিমদের সেবা না করলে আল্লাহর কাছে আমি তোমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করব।’
মুহাম্মদ আল ফাতিহ (রহ.)-এর মা : মুহাম্মদ আল ফাতিহ (রহ.) কনস্টান্টিনোপলের বিজেতা। রাসুল (সা.)-এর সুসংবাদপ্রাপ্ত সেনাপতি। শৈশবে ফজরের সময় মা তাঁকে ঘুম থেকে তুলে কনস্টান্টিনোপলের দেয়াল দেখিয়ে বলতেন, হে মুহাম্মদ! একদিন তুমি এই অঞ্চল জয় করবে। রাসুল (সা.) তোমার সম্পর্কে সুসংবাদ দিয়েছেন। তুমিই হবে রাসুল (সা.)-এর সুসংবাদপ্রাপ্ত আমির। তখন তিনি প্রশ্ন করেন, এত বড় অঞ্চল কিভাবে আমি জয় করব? তার মা উত্তরে বলেন, কোরআন, ক্ষমতা, অস্ত্র এবং মানুষের ভালোবাসা দিয়ে তা জয় করবে। মা তাঁকে শুধু আশা দেখিয়ে থেমে যাননি, বরং তাঁকে যোগ্যতর করে গড়ে তুলেছেন। অন্তরে রোপণ করেছেন কোরআন ও মানবতার ভালোবাসা। তাকে শিক্ষা দিয়েছেন ধৈর্য ও অবিচলতা।
বদিউজ্জমান সাইদ নুরসি (রহ.)-এর মা : বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সংস্কারক বদিউজ্জমান সাইদ নুরসি। তাঁর জীবন ও ব্যক্তিত্ব গঠনে তাঁর মায়ের অবদান ছিল। মায়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘তাঁর মা কখনো সন্তানকে অজু ছাড়া দুধ পান করাতেন না।’ নুরসি বলেন, ‘আল্লাহর শপথ! আমি মায়ের কাছে জীবনের মৌলিক শিক্ষা গ্রহণ করি। তা আমার হৃদয়জুড়ে গেঁথে আছে। চিন্তার প্রতিটি শাখায় মিশে আছে আমার মায়ের দেওয়া শিক্ষা। ৮০ বছর বয়সে জীবনের পড়ন্ত বেলায়ও মায়ের শিক্ষা আমাকে পথ দেখায়।’
আহমদ শাহ আবদালির মা : আহমদ শাহ আবদালির মা ছিলেন জরগুনা খাতুন। আহমদ শাহ আবদালিকে আধুনিক আফগানিস্তানের জনক বলা হয়। পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে মায়ের কাছে তাঁর কনিষ্ঠ ভাইয়ের পরাজয় ও বন্দি হওয়ার খবর আসে। তখন আবদালিকে মা বলেন, ‘অসম্ভব, আমার ছেলে পরাজিত ও বন্দি হতে পারে না। হয় সে গাজি হবে, না হয় শহীদ হবে। কেননা আমি তোমাদের দুই ভাইকে কখনো অজু ছাড়া বুকের দুধ পান করাইনি।’ অবশেষে জরগুনা খাতুনের ধারণা সত্য হয়। দুই ভাই বিজয়ী হয়ে ফেরেন।
(ইসলামিক স্টোরি ডটকম অবলম্বনে)

বেশি হতাশাগ্রস্ত

 যে লক্ষণগুলো প্রকাশ করে আপনি অনেক বেশি হতাশাগ্রস্ত

হতাশাগ্রস্ত মানুষের মনস্তাত্ত্বিক লক্ষণগুলো
উচ্চমাত্রার হতাশায় ভুগলেঃ
১. সামাজিকতাকে এড়িয়ে চলবে
২. শারীরিকভাবে নানা রকমের অসুস্থতা দেখা দেবে
৩. ঘুমে পরিবর্তন ঘটবে
৪. দ্রুত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়বে
৫. একই কাজ বারবার করবে (নিষ্কৃতি কবিতা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
৬. কাজ হতে পারে হতাশার সোপান
৭. মন মেজাজ খারাপ থাকবে
৮. পরিবারে হতাশাগ্রস্ত কেউ থাকবে
হতাশা কেন?
• দীর্ঘদিন ধরে নেতিবাচক অবস্থার মধ্য দিয়ে গেলে হতাশা কাজ করতে পারে।
• কারো কারো ব্যক্তিত্বের ধরনই নেতিবাচক থাকে। তারা হতাশবোধ করে।
• সমস্যা মোকাবিলা করার দক্ষতা কম থাকলে ভয় পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ে।
• সমস্যা সমাধানের দক্ষতা কম থাকলেও সমস্যার মধ্যে আটকে যায়, ঘুরপাক খেতে থাকে হতাশার ভেতর।
• কারো কারো চিন্তার মধ্যে ত্রুটি থাকে। কোনো কোনো ঘটনায় সে ব্যর্থ হলে, সে ভাবে সারা জীবন সে ব্যর্থ হবে। একবার একটি কাজ না পারলে দ্রুত উপসংহারে পৌঁছে যায়, ভাবে কিছু হবে না। এসব ভেবে হতাশ হয়।
• অনেকে তুচ্ছ ঘটনাকে বড় করে দেখে। আর এগুলো ভাবতে ভাবতে হতাশার মধ্যে ডুবে যায়।
• কখনো কখনো একাকীত্বের কারণে মানুষ হতাশবোধ করে।
• অনুভূতি শেয়ার করার মতো কাউকে পায় না, পারিবারিক সাহায্য থাকে না, তখন হতাশ হয়ে যায়।
• পরিবার থেকে যদি সারাক্ষণ দোষারোপ করতে থাকে, বিপদে পড়লে ব্যক্তিকে সাহায্য না করে, তখন ব্যক্তির মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব হয়, তখন উদ্যোগ নেওয়া ছেড়ে দেয় এবং হতাশ হয়।
• অনেক সময় বেকারত্বের কারণে মানুষ হতাশবোধ করে।
• অর্থনৈতিক অসুবিধার কারণে মানুষ হতাশ হয়।
• সম্পর্কের টানাপড়েনের কারণেও অনেক সময় মানুষ হতাশ হয়ে পড়ে।
• লেখাপড়ায় অকার্যকারিতার জন্য মানুষ হতাশ হয়।
হতাশ হলে ব্যক্তির মানসিক সমস্যাঃ
• ব্যক্তি মনমরা হয়ে থাকে।
• কোনো বিষয়ে আনন্দ খুঁজে পায় না।
• মনোযোগের অভাব ঘটে।
• ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
• খাওয়ার সমস্যা হতে পারে।
• আবেগের তারতম্য হতে পারে।
• অনেক সময় দুর্বল লাগে।
• মাথা ঘোরে।
• পেট গুলায়।
• কাজের গতি কমে যায়।
• ব্যক্তি অন্যমনষ্ক থাকে।
• কাজের গতি কমে যায়।
• নিজেকে অন্যদের কাছ থেকে গুটিয়ে নেওয়ার ইচ্ছে হয়।
আমেরিকান সাইক্রিয়াটিক সেন্টারের মতে, ডিপ্রেশনের কিছু লক্ষণঃ
১। সবসময় বিরক্ত, অশান্তি বা অস্বস্তি কিংবা ক্লান্তিবোধ করা
২। চিন্তা চেন্তনা বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দূর্বল হয়ে পড়া
৩। ইনসমনিয়া বা নিদ্রাহীনতা অথবা অতিরিক্ত ঘুম
৪। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন। খুব বেশি খাওয়া কিংবা খাওয়া একেবারে কমিয়ে দেওয়া
৫। নিজের ভেতর দূর্বলতা অনুভব করা
৬। কারণ ছাড়াই প্রচন্ড কান্না পাওয়া
৭। কারণ ছাড়াই প্রচন্ড মাথাব্যাথা বা শারীরিক অসুস্থতা
৮। প্রচন্ড নিরাশায় থাকা
৯। নিজেকে সামাজিক এবং নিজস্ব ব্যক্তিগত জীবন থেকে গুটিয়ে নেওয়া
১০। সবশেষে মৃত্যু কিংবা আত্মহত্যা নিয়ে চিন্তা শুরু করা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নিষ্কৃতি‘ কবিতায় হতাশার এক বিশাল চিত্র পাবেন পড়লে।
পারিবারিক জীবনে হতাশার এক সুবিশাল চিত্র এই কবিতায় রয়েছে। সমাধানও আছে সেখানে।
কবি আলফ্রেড টেনিসন তার Tears, Idle Tears কবিতার প্রথম দিকে হতাশার কথা বলেছেনঃ
Tears, idle tears, I know not what they mean,
Tears from the depth of some divine despair
Rise in the heart, and gather to the eyes,
In looking on the happy Autumn-fields,
And thinking of the days that are no more.
ইসলাম মানুষকে হতাশ হতে বারন করেছে।
আল কুরআন বলেঃ
আর নিশ্চয়ই আমরা ভীতি, অনাহার, প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে এবং উপার্জন ও আমদানী হ্রাস করে তোমাদের পরীক্ষা করবো ৷ এ অবস্থায় যারা সবর করে। - সূরা আল বাকারাহ আয়াত ১৫৫
এবং যখনই কোন বিপদ আসে বলেঃ “আমরা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর দিকে আমাদের ফিরে যেতে হবে। সূরা আল বাকারাহ আয়াত ১৫৬
“A great novel could be written about each one of us. We all have wondrous tales written across our faces. Some are epic, some are tragic, some are hilarious, some elegiac and of course some are spare, but none could be uninteresting”.
মানুষের জন্য প্রযোজ্য এ সংজ্ঞাটি মনে রাখলে হতাশা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভবঃ
A MAN IS A PHYSICO-CHEMICAL SYSTEM WITH A SPECIFIC AND VARYING LEVEL OF ORGANISAION PATTERN, SELF REGULATIVE, SELF PERPETUATING IN CONTINUOUS ADJUSTMENT WITH THE ENVIRONMENT. - C.P. HICKMANN
সূত্রগুলোঃ
পিন্টারেস্ট
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আলফ্রেড টেনিসন
বিভিন্ন পত্রিকা
মনোবিজ্ঞান বিভাগ, ঢা.বি
নিজ মাথা
আল কুরআন

জান্নাতের বিভিন্ন নাম যা আছে আল কুরআনে

জান্নাত হলো কিয়ামতের দিন আল্লাহর নেক বান্দাদের প্রাপ্ত পুরস্কারের নাম, যা অসংখ্য নিয়ামতে ভরপুর থাকবে। সেখানে কোনো অভাব থাকবে না, কোনো হতাশা থাকবে না। কারো বার্ধক্য আসবে না, কারো রোগব্যাধি হবে না। যারা সেখানে যাবে তাদের কোনো কিছুরই অপূর্ণতা থাকবে না। জান্নাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ বলেছেন, আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্য এমন জিনিস তৈরি করে রেখেছি, যা কোনো চক্ষু দেখেনি, কোনো কান শোনেনি এবং যার সম্পর্কে কোনো মানুষের মনে ধারণাও জন্মেনি। তোমরা চাইলে এ আয়াতটি পাঠ করতে পারো, ‘কেউ জানে না, তাদের জন্য তাদের চোখ শীতলকারী কী জিনিস লুকানো আছে।’ (সুরা : আস সাজদাহ, আয়াত : ১৩)। (বুখারি, হাদিস : ৩২৪৪)

পবিত্র কোরআনের বহু আয়াতে মহান আল্লাহ জান্নাতের কথা উল্লেখ করেছেন। সেখানে জান্নাতকে অবহিত করা হয়েছে বিভিন্ন নামে। আজ আমরা সেই নামগুলো জানার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
দারুস সালাম (শান্তির আবাস) : পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, তাদের রবের কাছে তাদের জন্য রয়েছে শান্তির আবাস এবং তারা যা করত তার জন্য তিনিই তাদের অভিভাবক। (সুরা : আনআম, আয়াত : ১২৭)
এই আয়াতে মহান আল্লাহ ‘দারুস সালাম’ নামে জান্নাতের কথা উল্লেখ করেছেন, যার অর্থ শান্তির আবাস।
দারুল মুত্তাকিন (মুত্তাকিদের আবাসস্থল) : মহান আল্লাহ তাঁর মুত্তাকি বান্দাদের ভীষণ ভালোবাসেন, তাই তিনি পবিত্র কোরআনে জান্নাতকে ‘দারুল মুত্তাকিন’ বা মুত্তাকিদের ঘর বলে অবহিত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, আর যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছিল তাদেরকে বলা হলো, তোমাদের রব কী নাজিল করেছেন? তারা বলল, মহাকল্যাণ। যারা সৎ কাজ করে তাদের জন্য আছে এ দুনিয়ায় মঙ্গল এবং আখিরাতের আবাস আরো উৎকৃষ্ট। আর মুত্তাকিদের আবাসস্থল কত উত্তম! (সুরা : নাহল, আয়াত : ৩০)
আল হুসনা (শুভ পরিণাম) : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ভালো কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম (জান্নাত) এবং আরো বেশি। আর ধুলোমলিনতা ও লাঞ্ছনা তাদের চেহারাগুলোকে আচ্ছন্ন করবে না। তারাই জান্নাতবাসী। তারা তাতে স্থায়ী হবে। (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ২৬)
দারুল মুকামাহ (স্থায়ী আবাস) : মহান আল্লাহ বলেন, যিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদেরকে স্থায়ী আবাসে প্রবেশ করিয়েছেন, যেখানে কোনো ক্লেশ আমাদেরকে স্পর্শ করে না এবং কোনো ক্লান্তিও স্পর্শ করে না। (সুরা : ফাতির, আয়াত : ৩৫)
এই আয়াত মহান জান্নাতকে ‘দারুল মুকামাহ’ বা স্থায়ী আবাস বলে অভিহিত করেছেন, যেহেতু জান্নাতে প্রবেশকারীরা সেখানে স্থায়ী হবে।
আল গুরফাহ (সুউচ্চ কক্ষ) : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, তারাই, যাদের প্রতিদান হিসেবে দেওয়া হবে জান্নাতের সুউচ্চ কক্ষ, যেহেতু তারা ছিল ধৈর্যশীল। আর তারা প্রাপ্ত হবে সেখানে অভিবাদন ও সালাম। (সুরা : আল-ফুরকান, আয়াত : ৭৫)
এই আয়াতে মহান আল্লাহ ধৈর্যশীলদের পুরস্কার হিসেবে ঠিক করা জান্নাতকে ‘জান্নাতুল খুলদ’ নামে অভিহিত করেছেন।
জান্নাতুল খুলদ (স্থায়ী জান্নাত) : মহান আল্লাহ বলেন, বলুন, এটাই শ্রেয়, না স্থায়ী জান্নাত, যার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে মুত্তাকিদেরকে? তা হবে তাদের প্রতিদান ও প্রত্যাবর্তনস্থল। (সুরা : আল-ফুরকান, আয়াত : ১৫)
জান্নাতুল ফিরদাউস : এই জান্নাতের নাম আমরা সবাই জানি। হাদিসের ভাষ্যমতে এটি এমন জান্নাত যা আরশের কাছাকাছি অবস্থিত। ঈমান ও সৎকর্মশীলদের জন্য মহান আল্লাহ যে জান্নাত সাজিয়ে রেখেছেন। পবিত্র কোরআনের ভাষায় সেই জান্নাতকে জান্নাতুল ফিরদাস নামে অভিহিত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎ কাজ করেছে তাদের আতিথেয়তার জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফিরদাউস। (সুরা : কাহফ, আয়াত : ১০৭)
জান্নাতু আদন : আল্লাহ মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জান্নাতের, যার নিচে নদীসমূহ প্রবাহিত, সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আরো (ওয়াদা দিচ্ছেন) স্থায়ী জান্নাতসমূহে উত্তম বাসস্থানের। আর আল্লাহর সন্তুষ্টিই সর্বশ্রেষ্ঠ এবং এটাই মহা সাফল্য। (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৭২)
এই আয়াতে মহান আল্লাহ ‘জান্নাতু আদন’ নামে একটি জান্নাতের কথা উল্লেখ করেছেন।
জান্নাতুন নাঈম (নিয়ামতে ভরপুর জান্নাত) : পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎ কাজ করেছে তাদের রব তাদের ঈমান আনার কারণে তাদেরকে পথনির্দেশ করবেন; নিয়ামতে ভরপুর জান্নাতে যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত হবে। (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৯)
দারুর কারার : মহান আল্লাহ বলেন, হে আমার সম্প্র্রদায়! এ দুনিয়ার জীবন কেবল অস্থায়ী ভোগের বস্তু, আর নিশ্চয় আখিরাত, তা হচ্ছে স্থায়ী আবাস। (সুরা : গাফির, আয়াত : ৩৯)
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রকৃত ঈমানদার হওয়ার তাওফিক দান করুন। এবং যেসব কাজ করলে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়, জান্নাতিদের তালিকায় নাম লেখানো যায়, সেই কাজগুলো করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সূত্রঃ মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

বিয়ের শুভ মাস

বিয়ের শুভ মাস সত্যি কি আছে?

কিসে শুভ
কিসে অশুভ
কিছুই বুঝিনা প্রভু
প্রার্থনা করি তবু
যাহা দিতে চাও
তাই শুধু দাও
তাতেই আমার শুভ
একথা জেনেছি ধ্রুব----
ইসলামের দৃষ্টিতে সব মাস পবিত্র ও শুভ। কোনো মাসই অশুভ নয়। কোনো মাস, দিন বা রাতকে অশুভ মনে করা, বিশেষ কোনো সময়কে বিশেষ কাজের জন্য অশুভ ও অলক্ষুনে মনে করা কুসংস্কার। এর সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। যেমন—ইসলামপূর্ব যুগের কোনো কোনো লোকের এই ধারণা ছিল যে, শাওয়াল মাসে বিয়েশাদির অনুষ্ঠান অশুভ ও অকল্যাণকর। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) এই ভিত্তিহীন ধারণা এই বলে খণ্ডন করেছেন, ‘রাসুল (সা.) আমাকে শাওয়াল মাসেই বিবাহ করেছেন এবং শাওয়াল মাসেই আমার রুখসতি (স্বামীর ঘরে আসা) হয়েছে। অথচ তাঁর অনুগ্রহ লাভে আমার চেয়ে বেশি সৌভাগ্যবতী স্ত্রী আর কে আছে?’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৪২৩)
আমাদের সমাজে সময়সংক্রান্ত শুভ ও অশুভ হওয়ার ধারণাগুলো প্রধানত ভিন্ন ধর্মের প্রভাবে সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া সামাজিক জীবনাচার ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য থেকেও কিছু বিষয়ের জন্ম হয়েছে। যে সময়ে কৃষকের ঘরে খাবার থাকে না, অতিবর্ষণের কারণে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়, ফসল ফলানো ও ওঠানো হয়—এমন সময়ে বিয়ে না করার রীতি রয়েছে সমাজে এবং এ সময় বিয়ে থেকে নিরুতসাহ করতে নানা কথার সৃষ্টি হয়েছে। এটি নিতান্তই আঞ্চলিক ধারণা ও কুসংস্কার। এর সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। আল্লাহ তাআলা সবাইকে সব ধরনের কুসংস্কার থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
দোহাই: মুফতি আবদুল্লাহ নুর

সম্পর্ক: উপহার সম্পর্ক মজবুত করে

 জীবন চলার ক্ষেত্রে অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়। কোনো সম্পর্ক রক্তের, কোনো সম্পর্ক আত্মার। এই সম্পর্কগুলো কখনো ভাঙে, কখনো বা মজবুত হয়। দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয়। সম্পর্ক ভাঙা যাবে না। যত সম্পর্ক হয় তা আরো মজবুত করতে হবে। সম্পর্কগুলো টিকিয়ে রাখতে বা আরো মজবুত করতে নিজেদের মধ্যে কিছুর আদান-প্রদান হওয়া জরুরি। দেওয়া-নেওয়ার মাধ্যমে সম্পর্ক সুন্দর হয়, মহব্বত বাড়ে। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা পরস্পর হাদিয়ার আদান-প্রদান করো, তাহলে মহব্বত বৃদ্ধি পাবে। (ইমাম বুখারি রচিত আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৫৯৪)

নিস্বার্থভাবে, বিনিময় ছাড়া, চাওয়া ছাড়া ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজেদের মধ্যে যে আদান-প্রদান হয় তা-ই হাদিয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা যদি খুশি হয়ে তোমাদের দিয়ে দেয়, তাহলে তোমরা তা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ করো।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৪)
আল্লাহ তাআলা এখানে খুশি হয়ে দিলে তা ভোগ করার জন্য বলেছেন। এটিই হাদিয়া। হাদিয়া অল্প হলেও রাসুল (সা.) গ্রহণ করার জন্য বলেছেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, হে মুসলিম রমণীরা! তোমাদের প্রতিবেশীর জন্য সামান্য উপহার বা হাদিয়াও তুচ্ছ জ্ঞান কোরো না। যদিও তা বকরির পায়ের খুর হয়। (বুখারি, হাদিস : ২৪২৭)
কারণ আগেই বলা হয়েছে, হাদিয়ার দ্বারা নিজেদের মধ্যে মহব্বত বাড়ে। হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়। যেমন—রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা পরস্পরে হাদিয়া বিনিয়ম করো, এর দ্বারা অন্তরের সংকীর্ণতা ও হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়ে যায়। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৯২৫০)
ওপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায়, ইসলামে হাদিয়া জায়েজ, বৈধ। শুধু বৈধ নয়, বরং তাতে রয়েছে সওয়াব বা পুণ্য। হাদিয়া দেওয়া-নেওয়া উভয়টি মুস্তাহাব বা সুন্নত। রাসুল (সা.) হাদিয়া দিয়েছেন এবং নিয়েছেন। রাসুল (সা.)-এর জন্য হাদিয়া হালাল ছিল আর সদকা হারাম ছিল।
পরস্পর মহব্বত সৃষ্টি হয়, হাসাদ দূর হয় হাদিয়ার মাধ্যমে। তাই আমাদের মাঝে হাদিয়ার প্রসার ঘটানো উচিত। এ হাদিয়া বৈধ হওয়ার ক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত রয়েছে—(ক) যা হাদিয়া দেবে তা হালাল হতে হবে। হারাম জিনিস হাদিয়া দেওয়া যাবে না। (খ) হাদিয়া সম্পূর্ণ নিজের সম্মতিতে দিতে হবে। কেননা কোনো মুসলিমের সম্মতি ছাড়া সম্পদ ব্যবহার করা হালাল হবে না। (সুনানে বায়হাকি, হাদিস : ১১৩২৫)
(গ) পার্থিব উদ্দেশ্য সামনে রেখে হাদিয়া দেওয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে এটি ঘুষ হিসেবে বিবেচিত হবে। এই শর্তগুলোর প্রতি লক্ষ রেখে হাদিয়া দিলে এর দ্বারা সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন আরো সৌহার্দপূর্ণ হবে।
সত্র: কালের কন্ঠ