Saturday, August 27, 2022

মুসলিম নারীর পবিত্রতাবিষয়ক আট বিধান

 ইসলামে নামাজসহ একাধিক ইবাদতের জন্য পবিত্রতার শর্তারোপ করা হয়েছে। তাই প্রতিটি ইবাদতের আগে সে সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা সবার ওপর ফরজ। আল্লাহ তাআলা পুরুষকে যেমন জ্ঞানার্জনের নির্দেশ দিয়েছেন, তেমনি নারীকেও জ্ঞানার্জনের নির্দেশ দিয়েছেন। জ্ঞানার্জনের অন্যতম দিক হলো, প্রয়োজনীয় মাসআলা-মাসায়েল সম্পর্কে জানা। এখানে নারীদের পবিত্রতা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় কিছু মাসয়ালা নিয়ে আলোচনা করা হলো—

ইসলামের নিয়ম হলো, টয়লেটে শেষে নারী-পুরুষ উভয় ঢিলা বা টিস্যু ও পানি ব্যবহার করবে। নারীদের মলমূত্র ত্যাগের পর পানি ও টিস্যু উভয়টি ব্যবহার করা উত্তম। আর পেশাবের পর শুধু পানি ব্যবহার করে নিলেই চলবে। এ ক্ষেত্রে ঢিলা বা টিস্যু ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। তবে পুরুষের জন্য টয়লেট শেষে টিস্যু ও পানি উভয়টি নেওয়াই উত্তম। (রদ্দুল মুহতার ১/৩৩৭,আলমুহিতুল বুরহানি ১/৪৩)
লিপস্টিক ও নেইলপলিশ অবস্থায় অজুর বিধান
ইসলামে মহিলাদের জন্য মেহেদি ব্যবহার করা জায়েজ এবং মেহেদি থাকাবস্থায় অজু করা জায়েজ। কারণ তা চামড়ার মাঝে পানি প্রবেশ করতে বাধা দেয় না। এ ব্যাপারে সব ফিকাহবিদ একমত। তবে লিপস্টিক ও নেইলপলিশ এর বিপরীত। কারণ এগুলো চামড়ায় পানি প্রবেশ করতে বাধা প্রদান করে থাকে। অথচ শরীরে পানি প্রবেশ না করলে অজু-গোসল বৈধ হয় না। তবে মেহেদির মতো যদি পলিশের কোনো প্রলেপ না থাকে তাহলে অজু শুদ্ধ হবে। (খোলাসাতুল ফাতওয়া : ৪/৩৭৭, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/২)
মাছের রক্ত মাখা কাপড়ের বিধান
সাধারণত নারীরা ঘরে রান্নার কাজ করে থাকেন। তাই প্রায় বাসায় ছোট-বড় মাছ কাটতে হয়। অনেক সময় কাপড়ে মাছের রক্ত লেগে যায়। তখন সন্দেহ হয় কাপড় নাপাক হয়ে গেল কি না। এ ক্ষেত্রে বিধান হলো, যেহেতু মাছের রক্ত অপবিত্র নয়, তাই মাছের রক্ত কাপড়ে লাগলে কাপড় অপবিত্র হবে না। সুতরাং মাছের রক্ত মাখা কাপড়ে সব ধরনের ইবাদত করতে কোনো বাধা নেই। তবে উত্তম হলো কাপড় পরিবর্তন করে ইবাদত করা। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ২০৩৬, আলমাবসুত, সারাখসি: ১/৮৭)
ফরজ গোসলে চুল ধোয়ার বিধান
ফরজ গোসলে মহিলাদের চুল খোলা থাকলে পুরো চুল ধোয়া ফরজ। আর বাঁধা থাকলে পুরো চুল ধোয়া ফরজ নয়। শুধু চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানোই যথেষ্ট। (শরহু মুশকিলিল আসার, হাদিস : ৩৮৫৪)
ফরজ গোসলে মহিলাদের লজ্জাস্থানের বহিরাংশে পানি পৌঁছালে ফরজ আদায় হয়ে যায়। অভ্যন্তরীণ অংশে পানি পৌঁছানো জরুরি নয়। আর রোজা অবস্থায় নারীদের ভেতরাংশে যেন পানি না পৌঁছে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কেননা ভেতরে যাওয়ার দ্বারা রোজা ভেঙে যাবে। (রদ্দুল মুহতার ১/১৫২)।
বোরকা বা শাড়িতে রাস্তার কাদা লাগার বিধান
নারীদের যেহেতু টাখনুর নিচে কাপড় পরার বিধান, তাই বৃষ্টির দিনে অনেক সময় রাস্তায় বের হলে রাস্তার কাদা বোরকা, শাড়ি ও জামা-কাপড়ে লেগে যায়। তখন অনেকের ধারণা হয় যে কাপড় অপবিত্র হয়ে গেছে। অথচ বিষয়টি এমন নয়। কারণ রাস্তার কাদা নাপাক নয়; কিন্তু কাদামাটির মধ্যে নাপাকি দৃশ্যমান হলে কাদার ওই অংশ অপবিত্র বলে গণ্য হবে এবং কাপড়ে এ ধরনের কাদা বেশি পরিমাণে লেগে গেলে তা নিয়ে নামাজ শুদ্ধ হবে না। তা ধুয়ে নিতে হবে। তবে ধোয়ার সুযোগ থাকলে এমন ময়লা কাপড়ে নামাজসহ অন্য ইবাদত না করাই ভালো। (কিতাবুল আসল : ১/৫২, আলমাবসুত, সারাখসি : ১/২১১)
ছোট বাচ্চার বমি ও নাকফুলের বিধান
দুগ্ধপায়ী ছোট বাচ্চা মুখ ভরে বমি করলে তা বড় মানুষের মতোই নাপাক এবং তা কাপড়ে পড়লে ধৌত করতে হবে। মুখ ভরে বমি না করলে তা নাপাক হবে না। (আদ্দুররুল মুখতার : ১/১৩৭)
আর অজু-গোসল করার সময় নারীদের নাকফুলের ছিদ্রে পানি পৌঁছানো জরুরি। (আল মুহিতুল বুরহানি : ১/৮০)
ছোট বাচ্চার বমি ও নাকফুলের বিধান
দুগ্ধপায়ী ছোট বাচ্চা মুখ ভরে বমি করলে তা বড় মানুষের মতোই নাপাক এবং তা কাপড়ে পড়লে ধৌত করতে হবে। মুখ ভরে বমি না করলে তা নাপাক হবে না। (আদ্দুররুল মুখতার : ১/১৩৭)
আর অজু-গোসল করার সময় নারীদের নাকফুলের ছিদ্রে পানি পৌঁছানো জরুরি। (আল মুহিতুল বুরহানি : ১/৮০)
সূত্র: ইবরাহিম সুলতান

ইবাদতের স্বাদ আস্বাদন

 নবী (সা.) বলেছেন, ‘নামাজে রাখা হয়েছে আমার নয়নের প্রশান্তি।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩৯৩৯)

বান্দার প্রতি আল্লাহ তাআলার অন্যতম একটি নিয়ামত হচ্ছে, ইবাদতেই স্বাদ অনুভব করা। আমাদের অনেকেরই অনেক সময় এমন হয় যে নামাজ, রোজা ইত্যাদি ভালো কাজ সবই করা হচ্ছে। কিন্তু ইবাদতে কোনো স্বাদ অনুভব হয় না। বুকের জমিনটা যেন শুষ্ক মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। যাতে কোনো কিছুই উর্বর হচ্ছে না। প্রিয় নবী (সা.) ইবাদতের মাঝেই স্বাদ অনুভব করতেন। এ জন্য তিনি বলেছেন, ‘নামাজে রাখা হয়েছে আমার নয়নের প্রশান্তি।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩৯৩৯)
যেভাবে ইবাদতে স্বাদ অনুভব হবে
এক. যেসব কারণে ইবাদতে স্বাদ অনুভব হয় এর মধ্যে একটি হচ্ছে, ইবাদতের জন্য সাধনা করা। এর জন্য এমনভাবে পরিশ্রম করা যে এক সময় মন ইবাদতেই শান্তি খুঁজে পায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনরা, সবর অবলম্বন করো, মোকাবেলার সময় অবিচলতা প্রদর্শন করো এবং সীমান্ত রক্ষায় স্থিত থাকো। আর আল্লাহকে ভয় করে চলো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।’ (সুরা : আল-ইমরান, আয়াত : ২০০)
দুই. সব ধরনের পাপাচার থেকে বিরত থাকা। পাপের একটি নগদ শাস্তি হচ্ছে ইবাদতের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হওয়া। পাপের কারণে বান্দা এবং আল্লাহর মধ্যে এক প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়ে যায়। ফলে অন্তর কঠোর হয়ে যায়। সে জন্য সে আর ইবাদতের স্বাদ অনুভব করে না। বিশেষ করে দৃষ্টিকে সংযত রাখা। অসুস্থ শরীর যেভাবে খাবারের স্বাদ অনুভব করে না তেমনি পাপাসক্ত ব্যক্তি ইবাদতের স্বাদ অনুভব করে না। কারণ তার শরীর অসুস্থ হয়ে আছে। ইরশাদ হয়েছে, কোনো মুসলিম যখন প্রথমবার কোনো নারীর সৌন্দর্যের প্রতি দৃষ্টি পড়ার পর, দৃষ্টি অবনত করে, আল্লাহ তাআলা তাকে ইবাদতে বিশেষ স্বাদ আস্বাদন করান। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২১৭৮৪)
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘তুমি যদি আমলের স্বাদ অনুভব না কোরো, তাহলে তুমি নিজের আমলকেই দোষারোপ কোরো।’ (মাদারিজুস সালিকিন : ২/৯০)
তিন. অহেতুক জিনিসকে বর্জন করে চলা। অহেতুক কথাবার্তা অতিরিক্ত পানাহার—এসব বিষয় ইবাদতের মাঝে প্রভাব সৃষ্টি করে। আল্লাহ বলেন, ‘হে আদমের সন্তান!...খাও ও পান করো; কিন্তু অপব্যয় করো না। আল্লাহ অপব্যয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩১)
মারুফ কার্খি (রহ.) বলেন, ‘অহেতুক কথাবার্তা বলার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর কাছ থেকে দূরে সরে যায়।’ (জামেউল উলুম ওয়াল হিকাম, পৃষ্ঠা ৩১৭)
চার. মনে মনে এ কথার দৃঢ় বিশ্বাস রাখা যে আল্লাহ তাআলার ইবাদত, নামাজ, রোজা, হজ, সদকা ইত্যাদি আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়ার মাধ্যম। এবং এগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে ভালোবাসবেন। আর বান্দা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করবে। আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, ‘ওই ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ পেয়েছে, যে রব হিসেবে আল্লাহকে, দ্বিন হিসেবে ইসলামকে এবং রাসুল হিসেবে মুহাম্মাদ (সা.)-কে সন্তুষ্টচিত্তে স্বীকার করেছে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৭)
-কালের কন্ঠ সূত্র

মানবদেহে টেস্টোস্টেরনের ভূমিকাঃ

 ১) এনার্জি দেয়

২) স্মৃতি শক্তি বাড়ায়
৩) মনোযোগ বাড়ায়
৪) আত্নমর্যাদাবোধ জাগায়
৫) আত্মনিয়ন্ত্রণ করে
৬) সুগঠিত পেশি তৈরীতে সহায়তা দেয়
৭) দৈহিক শক্তি বাড়ায়
৮) কাজ করার ক্ষমতা বাড়ায়
৯) মানসিক প্রশান্তি আনে
১০) পুরুষালি আচরণ ঠিক রাখে
১১) লোহিত রক্তকণিকা বাড়ায়
১২) হাড়ের স্বাভাবিক গঠন সঠিক রাখে
১৩) দীর্ঘস্থায়ী যৌনক্রিয়াতে সক্ষমতা দেয়
১৪) লিভারের কার্যবলি সঠিক রাখে
১৫) সুগঠিত প্রস্টেট গ্রন্থি গঠন করে

একা একা লাগবেনা আর

 একা একা লাগবেনা আর-

বই পড়
কবিতা আবৃত্তিকর, কুরআন পড়ো
উপদেশমূলক মুভি দেখো
ছবি আঁকো
বাইরে ঘুরতে যাও
কোর্স করো, করাও
লেখালেখি করো
প্রতিদিনের মনের কথা ডাইরিতে লিখতে পারো। লেখার পর নিজেকে হালকা মনে হবে, তখন আর একা একা লাগবে না। যারা খুব বেশি ডিপ্রেশনে আছো তাদের বলবো তোমরা প্রতিদিন লেখো। লেখার জাদু আছে। তোমার সমস্ত খারাপ লাগাকে ভাল লাগায় রূপান্তর করবে। তোমার মনে প্রশান্তি আসবে, নিজেকে জানতে পারবে, সুখের সাথে পরিচিত হতে পারবে।

আল্লাহকে বুঝতে না পারার কারণ কি?

 আল্লাহকে বোঝার জন্য মানুষকে বানানো হয় নি!!!!

আল্লাহকে বুঝতে না পারার কারণ কি?
শত বছর আগের মানুষ যদি স্মার্ট-ফোন দেখতো, তাহলে তারা আমাদের যুগকে যাদুর যুগ বলতো
আজকের প্রজন্মের অনেকই ছবির এই ইলেকট্রনিক যন্ত্রগুলো চিনবে না। রেডিও, ক্যাসেট প্লেয়ার, ওয়াক-ম্যান ইত্যাদি হয়তো কখনো দেখেনি। মজার ব্যাপার, আজকের দিনে এই সবগুলো জিনিসই আপনার পকেটের স্মার্ট-ফোনের ভেতরে আছে !! ২০০০ সালের আগে, এগুলো কিনতে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হতো, এগুলো রাখতে একটা টেবিল ভরে যেতো। অথচ, এখন মাত্র ১৫ হাজার টাকার স্মার্ট-ফোনের ভেতরে এগুলো সবই পাওয়া যায়। মাত্র ২০ বছরেই এত উন্নতি !!!
মাত্র ৫০ বছর আগেও এমন অবস্থা কল্পনা করা যায়নি। ভবিষ্যতে আরো কত উন্নতি হবে, সেটা আমরা এখন বুঝতে পারছি না। ভবিষ্যতে এমনও হতে পারে যে, পকেটের স্মার্ট-ফোনটি পোষা পশু-পাখির মতন মানুষের সাথে চলাফেরা করতে পারবে। আপনার ছবি তোলার প্রয়োজন হলে স্মার্ট-ফোন পাখির মতন উড়ে গিয়ে দূর থেকে ছবি তুলবে। এমনও হতে পারে, আপনার ফোন নিজেই আপনার বন্ধুর ফোনের সাথে কথা, বলে সব খবর আগেই জেনে রাখবে। পরে, আপনাকে সেই খবর জানাবে।
এভাবে স্মার্ট-ফোনের উন্নতি হতে হতে, ভবিষ্যতে অনেক আশ্চর্য বিষয় দেখা যাবে। তবে যতই উন্নতি হোক না কেন, স্মার্ট-ফোন কি কখনো মানুষকে বুঝতে পারবে? ছোটবেলায় মায়ের বকা শুনে আপনি মনের দুঃখে ঘরের কোনায় গিয়ে বসে থাকতেন। সেই দুঃখটা কি স্মার্ট-ফোন বুঝবে? স্কুলের স্যার কোন কঠিন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবে, সেটা ভেবে কতটা ভয় পেতেন। সেই ভয়টা কি স্মার্ট-ফোন বুঝবে? অনেক উচ্চ নম্বর পেয়ে এসএসসি পাশ করে কত আনন্দ পেয়েছেন। সেই আনন্দটা কি স্মার্ট-ফোন বুঝবে? ভালবাসার মানুষ ছেড়ে চলে গেছে। সেই বেদনাটা কি স্মার্ট-ফোন বুঝবে? ভালো একটা চাকরী পাওয়ার আনন্দটা কি স্মার্ট-ফোন বুঝবে? আপনজনের মৃত্যুর খবর শুনে যে কষ্ট লাগে, সেই কস্টটা কি স্মার্ট-ফোন বুঝবে?
মানুষকে বোঝার জন্য স্মার্ট-ফোন বানানো হয়নি। স্মার্ট-ফোন বানানো হয়েছে মানুষের আদেশ পালন করার জন্য। স্মার্ট-ফোন আজীবন সেই আদেশ পালন করতে থাকবে। সেটা না করতে পারলে, সেই স্মার্ট-ফোন ডাস্টবিনে চলে যাবে। মানুষকে বোঝার প্রয়োজনীয়তা, অধিকার, ক্ষমতা, এসব কোনটাই স্মার্ট-ফোনের নেই।
আল্লাহকে বোঝার জন্য মানুষকে বানানো হয় নি। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন ইবাদত করার জন্য, আল্লাহর আদেশ পালন করার জন্য। মানুষ আজীবন আল্লাহর আদেশ পালন করতে থাকবে। সেটা না করতে পারলে, সেই মানুষ জাহান্নামে চলে যাবে। আল্লাহকে বোঝার প্রয়োজনীয়তা, অধিকার, ক্ষমতা, এসব কোনটাই মানুষের নেই।

আল-কুরআন-একটি পূর্ণাঙ্গ বিধান। বুঝে নেইঃ

 ইসলাম পূর্ণাঙ্গ দ্বীন। কুরআন জীবনের পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। জীবন ধারনের সকল নিয়ম,সকল কিছু লেখা আছে এই কিতাবে। কেন আমাদের প্রেরণ করেছেন এবং কোথা থেকে আসলাম, কোথায় যাব, পরিণতি কী হবে সকল বিষয় লিপিবদ্ধ করে এই কিতাব নাযিল হয়েছে যা কিয়ামত পর্যন্ত আমাদের পথ দেখাবে।

কুরআনের আয়াতসমূহ লক্ষ্য করলে আমরা পূর্ণাঙ্গ ধারণা পেতে পারিঃ
সুরা মায়িদা নং ৫ আয়াত ৩ : আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি, আমার নিয়ামত তোমাদের প্রতি সম্পূর্ণ করেছি এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে তোমাদের দীন হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছি।
সুরা সফ নং ৬১ আয়াত ৯ : তিনিই তাঁহার রাসুলকে প্রেরণ করিয়াছেন পথ নির্দেশ ও সত্য দ্বীনসহ সকল দ্বীনের উপর উহাকে শ্রেষ্ঠত্ব দানের জন্য, যদিও মুশরিকগণ উহা অপছন্দ করে ।
সুরা ফাতহ্ নং ৪৮ আয়াত ২৮: তিনিই তাঁহার রাসুলকে পথ নির্দেশ ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করিয়াছেন, অপর সমস্ত দ্বীনের উপর ইহাকে জয়যুক্ত করিবার জন্য । সাক্ষী হিসাবে আল্লাহ্ই যথেষ্ট ।
সুরা তাওবা নং ৯ আয়াত ৩৩ : অংশীবাদীগণ অপ্রীতিকর মনে করিলেও অপর সমস্ত দ্বীনের উপর জয়যুক্ত করিবার জন্য তিনিই পথনির্দেশ ও সত্য দ্বীনসহ তাঁহার রাসুল প্রেরণ করিয়াছেন ।
সুরা মায়িদা নং ৫ আয়াত ৬৭ : হে রাসুল ! তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে তোমার প্রতি যাহা অবতীর্ণ হইয়াছে তাহা প্রচার কর ; যদি না কর তবে তো তুমি তাহার বার্তা প্রচার করিলে না । (কাহার ও নিকট অপ্রীতিকর হইলেও উহা প্রচারে তিনি আদিষ্ট হইয়াছেন ) আল্লাহ তোমাকে মানুষ হইতে রক্ষা করিবেন । আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না ।
সুরা আরাফ নং ৭ আয়াত ১৫৮ : বল, ‘হে মানুষ ! আমি তোমাদিগের সকলের জন্য রাসুল, আল্লাহর, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সার্বোভৌমত্তের অধিকারী ; তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নাই ; তিনিই জীবিত করেন ও মৃত্যু ঘটান ; সুতরাং তোমরা ঈমান আন আল্লাহর প্রতি তাহার বার্তাবাহক নিরক্ষর নবীর প্রতি যে আল্লাহ ও তাঁহার বাণীতে ঈমান আনে এবং তোমরা তাহার অনুসরণ কর যাহাতে তোমরা পথ পাও ।
মুসলিম জাতি নবী ভিত্তিক এক আদর্শ জাতি । ইসলাম এই জাতির এক ও অভিন্ন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কর্তৃক মনোনীত পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান । মানব জাতির জন্ম থেকে মৃত্যুর পূর্বমুহুর্ত পর্যন্ত সকল পার্থিব কর্মকাণ্ড যথা ব্যক্তির, পরিবারের, প্রতিবেশীর, সমাজের, শিল্প সংস্কৃতির, অর্থনীতির, শিক্ষানীতির, শ্রমনীতির, রাজনীতির ও রাষ্ট্র পরিচালনার বিধিবিধানসহ প্রতিটি অঙ্গণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা প্রদত্ত দ্বীনি বিধিবিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রীত হবে যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক দীর্ঘ ২৩ বৎসরে কঠোর পরিশ্রম ও সঠিক নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যামে মুসলিম সমাজে প্রবর্তন করেন ও যার ধারাবাহিকতা তাঁর অনুসারীরা একের পর একে তা চালু রাখবে ।
মুসলিম জনগোষ্ঠির জন্য পূর্ণাঙ্গ দ্বীন ইসলাম ব্যতীত বিকল্প কোন ব্যবস্থা আল্লাহ পক্ষ থেকে নির্ধারিত হয় নাই । পৃথিবী ধ্বংশের পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত জীবন বিধান ইসলাম ব্যতীত কোন মানুষ রচিত জীবনবিধান যেমন মানুষ আবিষ্কৃত পুজিবাদতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষবাদ , জাতিয়তাবাদ , সমাজতন্ত্র , গণতন্ত্র ইত্যাদির কোন অনুমোদন মুসলিম জনগোষ্ঠির জন্য দেয়া হয় নাই ।
সুরা আলে ইমরানের আয়াতে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং সতর্কবাণী জারী করে ঘোষিত হয়েছে যে কেহ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করিতে চাহিলে তাহা কখনও কবুল করা হইবে না এবং সে হইবে পরলোকে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত। দ্বীন বলতে ব্যক্তি পরিবার সমাজ প্রতিবেশী রাষ্ট্র সহ সকল ক্ষেত্রে ইসলামীদিক নির্দেশনায় পরিচালিত হইবে যেভাবে মুসলিম জাতির প্রশিক্ষক নবী ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রশিক্ষণ দিয়ে একটি মুসলিম জাতি প্রতিষ্ঠা করে পৃথিবীতে এক আদর্শ মাপকাঠি ও দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন যার একনিষ্ট অনুকরণ অনুসরণ ও সঠিক নির্দেশিত অনুশীলনের উপর মানুষের পার্থিব কর্মকাণ্ডের ফলাফলে বরকত শান্তি ও পরকালের মুক্তি নির্ভরশীল
১) আল কুরআনে আল্লাহ প্রদত্ত মুসলিম উম্মাহর শ্রেষ্টত্বের মর্যাদা ও দায়িত্ব :
সুরা আল ইমরান নং ৩ আয়াত ১১০ : তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মাত, মানবজাতির জন্য তোমাদের আবির্ভাব হইয়াছে; তোমরা সৎকার্যের নির্দেশ দান কর, অসৎকার্যে নিষেধ কর এবং আল্লাহে বিশ্বাস কর ।
সুরা বাকারা নং ২ আয়াত ১৪৩ : এইভাবে আমি (আল্লাহ) তোমাদিগকে এক মধ্যমপন্থী জাতিরূপে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছি যাহাতে তোমরা মানবজাতির জন্য সাক্ষীস্বরূপ এবং রাসুল তোমাদের জন্য সাক্ষীস্বরূপ হইবে ।
২) দায়িত্ব পালনে আল্লাহ প্রদত্ত নিয়মে দল গঠনের নির্দেশ :
সুরা আলে-ইমরান নং ৩ আয়াত ১০৪ : এমন এক দল হউক যাহারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করিবে এবং সৎকার্যের নির্দেশ দিবে ও অসৎকার্যে নিষেধ করিবে; ইহারাই সফলকাম।
৩) সুসংগঠিত দল গঠনপূর্বক কুরআন ও ইসলামের আলোকে সংগঠিত থাকার নির্দেশ :
সুরা আলে ইমরান নং ৩ আয়াত ১০৩ : এবং তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইও না (এই স্থলে আল্লাহর রজ্জু অর্থে কুরআন ও ইসলাম) ।
৪) সুসংগঠিত দল গঠনপূর্বক দ্বীন ইসলামকে প্রতিষ্ঠার নির্দেশ :
সুরা শুরা নং ৪২ আয়াত ১৩ : তিনি (আল্লাহ্) তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করিয়াছেন দ্বীন (ইসলাম) যাহার নির্দেশ দিয়াছিলেন তিনি নূহকে -আর যাহা আমি প্রত্যাদেশ করিয়াছি তোমাকে এবং যাহার নির্দেশ দিয়াছিলাম ইব্রাহীম মুসা ও ঈসাকে, এই বলিয়া যে তোমরা দ্বীনকে (ইসলামকে) প্রতিষ্ঠিত কর এবং উহাতে মতভেদ করিও না ।
৫) ইসলাম ব্যতীত কোন দ্বীন আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য নহে :
সুরা আলে-ইমরান নং ৩ আয়াত ১৯ : ইসলাম আল্লাহর নিকট একমাত্র দ্বীন ।
৬) ইসলামকে বিজয়ী করার দায়িত্ব সুসংগঠিত মুমীনদের উপর অর্পিত :
সুরা তাওবা নং ৯ আয়াত ৩৩ : অংশীবাদীগণ অপ্রীতিকর মনে করিলেও অপর সমস্ত দ্বীনের উপর জয়যুক্ত করিবার জন্য তিনিই পথনির্দেশ ও সত্য দ্বীনসহ তাঁহার রাসুল প্রেরণ করিয়াছেন ।
সুরা সফ নং ৬১ আয়াত ৯ : তিনিই তাঁহার রাসুলকে প্রেরণ করিয়াছেন পথ নির্দেশ ও সত্য দ্বীনসহ সকল দ্বীনের উপর উহাকে শ্রেষ্ঠত্ব দানের জন্য, যদিও মুশরিকগণ উহা অপছন্দ করে ।
৭) ইসলাম ব্যতীত কোন দ্বীন গ্রহণ করিলে পরলোকে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিধান জারী করা হয়েছে :
সুরা আলে ইমরান নং ৩ আয়াত ৮৫ : কেহ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করিতে চাহিলে তাহা কখনও কবুল করা হইবে না এবং সে হইবে পরলোকে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত ।
৮) আল্লাহ ও তাঁহার রসুলের নির্দেশ মোতাবেক মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী পার্থিব জীবন যাপন করবে :
সুরা নিসা আয়াত ৫৯ : হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস কর তবে আনুগত্য কর আল্লাহর, আনুগত্য কর রাসুলের, এবং তাহাদের যাহারা তোমাদের মধ্যে ক্ষমতার অধিকারী; কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটিলে উহা উপস্থিত কর আল্লাহ ও রাসুলের নিকট । ইহাই উত্তম এবং পরিণামে প্রকৃষ্টতর।
সুরা নাহল নং ১৬ আয়াত ৩৬ : আল্লাহর ইবাদত করিবার ও তাগুতকে বর্জন করিবার নির্দেশ দিবার জন্য আমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসুল পাঠাইয়াছি । (তাগুতের আভিধানিক অর্থ সীমালঙ্গনকারী, দুস্কিৃতির মূল বস্তু, যাহা মানুষকে বিভ্রান্ত করে ইত্যাদি । শয়তান, কল্পিত দেবদেবী এবং যাবতীয় বিভ্রান্তিকর উপায়-উপকরণ তাগুতের অন্তর্ভুক্ত )
সুরা আহযাব আয়াত ৩৬ : আল্লাহ ও তাঁহার রসুল কোন বিষয়ে নির্দেশ দিলে কোন মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্তের অধিকার থাকিবে না । কেহ আল্লাহ এবং তাঁহার রসুলকে অমান্য করিলে সে তো পথভ্রষ্ট হইবে ।
সুরা নিসা আয়াত ৬৫ : কিন্তু না তোমার প্রতিপালকের শপথ! তাহারা মুমিন হইবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তাহারা তাহাদের বিবাদ বিসম্বাদের বিচার ভার তোমার উপর অর্পন না করে, অতঃপর তোমার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তঃকরণে উহা মানিয়া না লয় ।
সুরা মায়িদা আয়াত ৪৪ : আল্লাহ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তদনুসারে যাহারা বিধান দেয় না তাহারা সত্য প্রত্যাখ্যানকারী ।
সুরা যুমার ৩৯ নং আয়াত ৫৬ : যাহাতে কাহাকেও বলিতে না হয় ,‘হায় আল্লাহর প্রতি আমার কর্তব্যে আমি যে শৈথিল্য করিয়াছি তাহার জন্য আফসোস । আমি তো ঠাট্টাকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম ।’
সুরা যুমার নং ৩৯ আয়াত ৫৭ : অথবা কেহ যেন না বলে, ‘“কতই না ভাল হতো যদি আল্লাহ আমাকে হিদায়াত দান করতেন৷ তাহলে আমিও মুত্তাকীদের অন্তরভুক্ত থাকতাম ৷”
সুরা যুমার নং ৩৯ আয়াত ৫৮ : অথবা শাস্তি প্রত্যক্ষ্য করিলে যেন কাহাকে বলিতে না হয় আহা যদি একবার পৃথিবীতে আমার প্রত্যাবর্তন ঘটিত তবে আমি সৎকর্মপরায়ণ হইতাম
সুরা যুমার নং ৩৯ আয়াত ৫৯ : প্রকৃত ব্যাপার তো এই যে,আমার নিদর্শন তোমার নিকট আসিয়াছিল, কিন্তু তুমি এইগুলিকে মিথ্যা বলিয়াছিলে;আর তুমি তো ছিলে কাফিরদিগের একজন
উপসংহারে বন্ধুদের নিকট দ্বীনি অনুরোধ রইল, মহান আল্লাহ প্রদত্ত বর্ণিত নির্দেশের প্রতি আন্তরিকতা প্রদর্শনপূর্বক অনুসরণ করি।
সোর্সঃ https://bn.quora.com/

মা'রুফ আল-কারখি

 তাঁর পূর্ণ নাম আবু মাহফুজ মারূ'ফ ইবনে ফিরোজ আল-কারখী।

মারূ’ফ বাগদাদের ওয়াসিত বা কারখ নামক জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল ফিরোজ, যা নির্দেশ করে তিনি ফরাসি বংশোদ্ভুত ছিলেন। তিনি মূলত খ্রিস্টান ধর্মালম্বী। আর্মেনীয় ইসলামিক প্রচারক ফারকাদ সাবাখি খুব সম্ভবত তার পরামর্শদাতা ছিলেন। আত্তার তার বিখ্যাত গ্রন্থ তাজকিরাতুল আউলিয়া নামক অলিদের জীবনী গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে, বহু-ঈশ্বরবাদের সকল মতবাদ ত্যাগ করার পর মারূ’ফ, আলী ইবনে মুসার হাত ধরেই তরুণ বয়সেই ইসলাম ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন। তার পিতা মাতা যখন শুনলেন তিনি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছেন তখন তারা মারূ’ফের উপর বিরক্ত ও ক্ষুদ্ধ হলেন। মারূ’ফ যখন ঘরে ফিরল, তার পিতা মাতা তার পরিবর্তিত আচার আচরণ দেখে খুবই প্রভাবিত হলেন এবং তার পুরো পরিবারটি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়ে যায়।
শহরের এক গভর্নর মা'রুফকে একবার কুকুরের সাথে রুটি খেতে দেখেছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন:
কুকুরের সঙ্গে রুটি খেতে তোমার লজ্জা হয় না?
উত্তর দিলেন: 'অভাবগ্রস্তদের সঙ্গে রুটি ভাগাভাগি করতে আমার কি লজ্জা হওয়া উচিত? তারপর তিনি উপরের দিকে তাকালেন এবং তার উপরে উড়ন্ত একটি পাখিকে ডাকলেন। নির্দেশ পালন করে, পাখিটি নেমে এসে তার হাত ধরে স্থির হয়ে গেল। বন্য পাখিরা সাধারণত মানুষকে ভয় পায়, তারা তাকে ভয় পাওয়ার মতো প্রাণী হিসাবে দেখেনি। পাখিটি উড়ে এসে তার হাতের উপর বসে ছিল, তার ডানা দিয়ে তার মাথা এবং চোখ ঢেকে রেখেছিল। মারুফ বলেন, "যে ব্যক্তি আল্লাহর সামনে লজ্জিত হয়, তার সামনে সবকিছুই লজ্জিত।"
তিনি মারুফ আল কারখি নামে সুপরিচিত ছিলেন। গরীব ও এতিমদের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা ছিল।
তার পিতা ও মাতা ছিলেন খ্রিষ্টান, যারা তার পরে ইসলাম গ্রহণ করেন। ছোটবেলায়ও ইসলামের প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা ছিল। তিনি সব সময় মুসলিম শিশুদের সান্নিধ্যে সময় কাটাতেন এবং প্রায়ই তার বাবা-মায়ের সাথে ইসলাম গ্রহণ করার বিষয়ে কথা বলতেন। তার বাবা এতে সন্তুষ্ট হননি এবং তাকে একজন খ্রিস্টান যাজকের অধীনে অধ্যয়নের জন্য তালিকাভুক্ত করেছিলেন।
অতঃপর যখন তারা তাকে স্কুলে পাঠাল, তখন তার শিক্ষক তাকে বললেন, "বল, আল্লাহ তিনজনের মধ্যে তৃতীয়। "না," মা'রুফ আল কারখি (রাঃ) উত্তর দিলেন, "বিপরীতভাবে, তিনি আল্লাহ , এক। শিক্ষক তাকে মারধর করলেও কোনো লাভ হয়নি।
মা'রুফ আল কারখি (রাঃ) বলেন, তিনি যত বেশি আমাকে মারধর করেছিলেন, ততই আমি তার শিক্ষাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। অবশেষে তিনি আমার ক্লান্ত হয়ে পড়েন। আমাকে তিন দিনের জন্য একটি ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল এবং প্রতিদিন আমাকে একটি করে রুটি দেওয়া হত, যা আমি স্পর্শও করিনি। আমাকে বের করে নিয়ে গেলে আমি পালিয়ে যাই। অতঃপর আমি আলী রিদার (রাঃ) কাছে গেলাম এবং তার হাতে ইসলাম গ্রহণ করলাম। এরপর আমি ইসলামের এই মূল্যবান উপহার নিয়ে বাড়ি ফিরে যাই এবং আমার বাবা-মা ও ইসলাম গ্রহণ করেন।
খ্রীষ্টধর্ম থেকে তার ধর্মান্তরিত হওয়ার কাহিনীর সত্যতা নিয়ে কিছু লোক সন্দেহ করার অন্যতম কারণ হল, অনেক খ্রিষ্টান (এবং ইহুদিও) এবং বিপুল সংখ্যক মুসলমান, তার মৃত্যুতে প্রকাশ্যে শোক প্রকাশ করেছেন এবং তাকে তাদের নিজের বলে দাবি করেছেন।
মোহাম্মদ ইবনে মনসুর আল-তুসি (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে তিনি বাগদাদে মা'রুফ আল-কারখি (রাঃ) এর সাথে সাক্ষাত করেছিলেন। "আমি তার মুখে একটি দাগ দেখেছি। আমি তাকে বললাম, 'আমি গতকাল তোমার সাথে ছিলাম এবং তখন এই চিহ্নটি লক্ষ্য করিনি। এটা কি?' "এমন কিছু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন না যা আপনার সাথে সম্পর্কিত নয়," তিনি উত্তর দিয়েছিলেন। আমি অনুরোধ করলাম, অতঃপর তিনি বললেন, 'গতরাতে আমি প্রার্থনা করছিলাম এবং আমি আশা করেছিলাম যে, আমি যেন মক্কায় গিয়ে কাবা পরিক্রমা করতে পারি। আমি জমজমের কূপের কাছে গিয়ে পানি পান করলাম। আমার পা পিছলে গেল, এবং আমার মুখকূপে আঘাত করল। এভাবেই আমি এই দাগটি পেয়েছি।
তিনি তার ধার্মিকতার জন্য ইসলামী বিশ্ব জুড়ে ব্যাপকভাবে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন, কিন্তু বিশেষ করে বাগদাদ শহরে যেখানে তিনি বসতি স্থাপন করেছিলেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক ব্যক্তিত্ব এবং তাঁর সময়ের অন্যতম বিশিষ্ট সুফি। তিনি দীর্ঘ রাত কাটিয়ে দিতেন উপাসনায়, ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করতেন। অনেক ছাত্র ছিল সেখানে। তিনি ৮১৫ সালে (২০২ হিজরি) মারা যান।
কৃতজ্ঞতা: https://bn.quora.com/
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ

উমর (রা.)-এর ব্যতিক্রমী বিচার

 উমর (রা.)-এর ব্যতিক্রমী বিচার

আমিরুল মুমিনিন উমর (রা.) মদিনা থেকেই সব কিছু দেখাশোনা করতেন। খেলাফতের রাজধানী ছিল তখন মদিনা।
তিনি যখন কোনো সেনাবাহিনী প্রেরণ করতেন, তখন তাদের নির্দেশ দিতেন, যেন যুদ্ধের যাবতীয় তথ্য মদিনায় পাঠানো হয় এবং যুদ্ধের ফলাফল যা-ই হোক না কেন, সেটা যেন কেন্দ্রে পৌঁছানো হয়।
একবারের ঘটনা, আহনাফ ইবনে কায়েস (রা.) বলেন, আমরা কিছু লোক একবার মহান সুসংবাদ নিয়ে আমিরুল মুমিনিন উমর (রা.)-এর কাছে উপস্থিত হলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা এখন কোথায় অবস্থান করছ?’ আমরা বললাম, অমুক স্থানে। এরপর তিনি আমাদের সেই তাঁবুর দিকে হাঁটা ধরলেন, যেখানে আমরা আমাদের উটগুলো বেঁধে রেখেছিলাম। আমাদের উটগুলো অনেক সময় ধরে ক্ষুধার্ত থাকার কারণে খুব ক্লান্ত ছিল। উটের অবস্থা দেখে তিনি বললেন, ‘তোমরা কি এই আরোহী প্রাণীর ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় পাও না? তোমরা কি জানো না যে এদেরও তোমাদের ওপর হক আছে? তোমরা এই উটগুলোকে কেন ছেড়ে দাওনি? তাহলে ওরা জমিনে ঘাস খেতে পারত।’ আমরা বললাম, হে আমিরুল মুমিনিন! মহান বিজয়ের সুসংবাদ নিয়ে আপনার কাছে চলে এসেছি, যাতে আপনাকে এবং মুসলিমদের তাড়াতাড়ি সুসংবাদ দিতে পারি। এ জন্য আমরা রাস্তায় থামিনি। আহনাফ ইবনে কায়েস (রা.) বলেন, আমাদের কথা শুনে আমিরুল মুমিনিন উমর (রা.) ফিরে যেতে লাগলেন এবং আমরাও তাঁর সঙ্গে চলতে লাগলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি অভিযোগ নিয়ে এলো এবং বলল, হে আমিরুল মুমিনিন! অমুক ব্যক্তি আমার প্রতি অন্যায়-অত্যাচার করেছে। আপনি তার বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য করুন। তার অভিযোগ শুনে আমিরুল মুমিনিন নিজের চাবুক বের করে তার মাথায় আঘাত করলেন এবং বললেন, ‘আশ্চর্য ব্যাপার! যখন উমর মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ব্যস্ত, তখন তোমরা অভিযোগ করতে থাকো এবং বলতে থাকো, আমাকে সাহায্য করুন।’ তাঁর কণ্ঠ থেকে যেন উষ্মা ঝরে পড়ল। তখন সেই অভিযোগকারী নিজের প্রতি দোষারোপ করে ফিরে গেল। কিন্তু একটু পরেই উমর (রা.) সেই অভিযোগকারীকে ডেকে নিয়ে আসতে নির্দেশ দিলেন। যখন সে ফিরে এলো, তিনি সেই ব্যক্তির সামনে নিজের চাবুক রেখে বললেন, ‘তুমি তোমার প্রতিশোধ নাও।’ লোকটা বলল, ‘না, আমি প্রতিশোধ নেব না। বরং আমি এটা আল্লাহ ও আপনার ওপর ছেড়ে দিচ্ছি। কিন্তু উমর (রা.) নাছোড়বান্দার মতো হয়ে বললেন, ‘না, এমনটি হবে না। তুমি হয়তো আল্লাহর ওয়াস্তে মাফ করবে এবং এর প্রতিদান আল্লাহর কাছে চাইবে। অথবা বিষয়টি আমার ওপর ছেড়ে দেবে। তার চেয়ে তুমি তোমার বদলা নিয়ে নাও।’ কিন্তু লোকটি কোনোভাবেই বদলা নিতে সম্মত হলো না; বরং সে বলতে থাকল, ‘আমি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য আপনাকে মাফ করে দিয়েছি।’ অতঃপর উমর (রা.) সেখান থেকে প্রস্থান করে বাড়িতে চলে গেলেন। আমরাও সঙ্গে ছিলাম। তিনি দুই রাকাত নামাজ আদায় করে নিজেকে ধিক্কার দিয়ে বলতে লাগলেন, ‘হে খাত্তাবের সন্তান! তুমি একসময় কত নীচ ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তোমাকে মর্যাদা দান করেছেন। তুমি পথভ্রষ্ট ছিলে, আল্লাহ তোমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করেছেন। তুমি মর্যাদাহীন ছিলে, আল্লাহ তোমাকে সম্মানিত করেছেন। অতঃপর আল্লাহ তোমাকে মানুষের শাসক নিযুক্ত করেছেন। আর এখন যেই এক মাজলুম ব্যক্তি তোমার কাছে সাহায্যের আবেদন নিয়ে এলো, তখন তুমি তাকে মারলে? বলো! যখন তুমি কিয়ামতের দিন উপস্থিত হবে, তখন তোমার রবের কাছে এর কী জবাব দেবে?’ বর্ণনাকারী ইবনু কায়েস (রা.) বলেন, তিনি নিজেকে এমনভাবে দোষারোপ করতে লাগলেন, আমার পূর্ণ বিশ্বাস হলো যে তিনি দুনিয়াবাসীর মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি। (উসদুল গাবাহ : ৩/৬৫৩-৬৫৪)
এই ছিল ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমর (রা.)-এর আদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ার উত্কৃষ্ট উদাহরণ।