Saturday, August 27, 2022

আল-কুরআন-একটি পূর্ণাঙ্গ বিধান। বুঝে নেইঃ

 ইসলাম পূর্ণাঙ্গ দ্বীন। কুরআন জীবনের পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। জীবন ধারনের সকল নিয়ম,সকল কিছু লেখা আছে এই কিতাবে। কেন আমাদের প্রেরণ করেছেন এবং কোথা থেকে আসলাম, কোথায় যাব, পরিণতি কী হবে সকল বিষয় লিপিবদ্ধ করে এই কিতাব নাযিল হয়েছে যা কিয়ামত পর্যন্ত আমাদের পথ দেখাবে।

কুরআনের আয়াতসমূহ লক্ষ্য করলে আমরা পূর্ণাঙ্গ ধারণা পেতে পারিঃ
সুরা মায়িদা নং ৫ আয়াত ৩ : আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি, আমার নিয়ামত তোমাদের প্রতি সম্পূর্ণ করেছি এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে তোমাদের দীন হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছি।
সুরা সফ নং ৬১ আয়াত ৯ : তিনিই তাঁহার রাসুলকে প্রেরণ করিয়াছেন পথ নির্দেশ ও সত্য দ্বীনসহ সকল দ্বীনের উপর উহাকে শ্রেষ্ঠত্ব দানের জন্য, যদিও মুশরিকগণ উহা অপছন্দ করে ।
সুরা ফাতহ্ নং ৪৮ আয়াত ২৮: তিনিই তাঁহার রাসুলকে পথ নির্দেশ ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করিয়াছেন, অপর সমস্ত দ্বীনের উপর ইহাকে জয়যুক্ত করিবার জন্য । সাক্ষী হিসাবে আল্লাহ্ই যথেষ্ট ।
সুরা তাওবা নং ৯ আয়াত ৩৩ : অংশীবাদীগণ অপ্রীতিকর মনে করিলেও অপর সমস্ত দ্বীনের উপর জয়যুক্ত করিবার জন্য তিনিই পথনির্দেশ ও সত্য দ্বীনসহ তাঁহার রাসুল প্রেরণ করিয়াছেন ।
সুরা মায়িদা নং ৫ আয়াত ৬৭ : হে রাসুল ! তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে তোমার প্রতি যাহা অবতীর্ণ হইয়াছে তাহা প্রচার কর ; যদি না কর তবে তো তুমি তাহার বার্তা প্রচার করিলে না । (কাহার ও নিকট অপ্রীতিকর হইলেও উহা প্রচারে তিনি আদিষ্ট হইয়াছেন ) আল্লাহ তোমাকে মানুষ হইতে রক্ষা করিবেন । আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না ।
সুরা আরাফ নং ৭ আয়াত ১৫৮ : বল, ‘হে মানুষ ! আমি তোমাদিগের সকলের জন্য রাসুল, আল্লাহর, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সার্বোভৌমত্তের অধিকারী ; তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নাই ; তিনিই জীবিত করেন ও মৃত্যু ঘটান ; সুতরাং তোমরা ঈমান আন আল্লাহর প্রতি তাহার বার্তাবাহক নিরক্ষর নবীর প্রতি যে আল্লাহ ও তাঁহার বাণীতে ঈমান আনে এবং তোমরা তাহার অনুসরণ কর যাহাতে তোমরা পথ পাও ।
মুসলিম জাতি নবী ভিত্তিক এক আদর্শ জাতি । ইসলাম এই জাতির এক ও অভিন্ন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কর্তৃক মনোনীত পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান । মানব জাতির জন্ম থেকে মৃত্যুর পূর্বমুহুর্ত পর্যন্ত সকল পার্থিব কর্মকাণ্ড যথা ব্যক্তির, পরিবারের, প্রতিবেশীর, সমাজের, শিল্প সংস্কৃতির, অর্থনীতির, শিক্ষানীতির, শ্রমনীতির, রাজনীতির ও রাষ্ট্র পরিচালনার বিধিবিধানসহ প্রতিটি অঙ্গণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা প্রদত্ত দ্বীনি বিধিবিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রীত হবে যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক দীর্ঘ ২৩ বৎসরে কঠোর পরিশ্রম ও সঠিক নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যামে মুসলিম সমাজে প্রবর্তন করেন ও যার ধারাবাহিকতা তাঁর অনুসারীরা একের পর একে তা চালু রাখবে ।
মুসলিম জনগোষ্ঠির জন্য পূর্ণাঙ্গ দ্বীন ইসলাম ব্যতীত বিকল্প কোন ব্যবস্থা আল্লাহ পক্ষ থেকে নির্ধারিত হয় নাই । পৃথিবী ধ্বংশের পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত জীবন বিধান ইসলাম ব্যতীত কোন মানুষ রচিত জীবনবিধান যেমন মানুষ আবিষ্কৃত পুজিবাদতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষবাদ , জাতিয়তাবাদ , সমাজতন্ত্র , গণতন্ত্র ইত্যাদির কোন অনুমোদন মুসলিম জনগোষ্ঠির জন্য দেয়া হয় নাই ।
সুরা আলে ইমরানের আয়াতে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং সতর্কবাণী জারী করে ঘোষিত হয়েছে যে কেহ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করিতে চাহিলে তাহা কখনও কবুল করা হইবে না এবং সে হইবে পরলোকে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত। দ্বীন বলতে ব্যক্তি পরিবার সমাজ প্রতিবেশী রাষ্ট্র সহ সকল ক্ষেত্রে ইসলামীদিক নির্দেশনায় পরিচালিত হইবে যেভাবে মুসলিম জাতির প্রশিক্ষক নবী ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রশিক্ষণ দিয়ে একটি মুসলিম জাতি প্রতিষ্ঠা করে পৃথিবীতে এক আদর্শ মাপকাঠি ও দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন যার একনিষ্ট অনুকরণ অনুসরণ ও সঠিক নির্দেশিত অনুশীলনের উপর মানুষের পার্থিব কর্মকাণ্ডের ফলাফলে বরকত শান্তি ও পরকালের মুক্তি নির্ভরশীল
১) আল কুরআনে আল্লাহ প্রদত্ত মুসলিম উম্মাহর শ্রেষ্টত্বের মর্যাদা ও দায়িত্ব :
সুরা আল ইমরান নং ৩ আয়াত ১১০ : তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মাত, মানবজাতির জন্য তোমাদের আবির্ভাব হইয়াছে; তোমরা সৎকার্যের নির্দেশ দান কর, অসৎকার্যে নিষেধ কর এবং আল্লাহে বিশ্বাস কর ।
সুরা বাকারা নং ২ আয়াত ১৪৩ : এইভাবে আমি (আল্লাহ) তোমাদিগকে এক মধ্যমপন্থী জাতিরূপে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছি যাহাতে তোমরা মানবজাতির জন্য সাক্ষীস্বরূপ এবং রাসুল তোমাদের জন্য সাক্ষীস্বরূপ হইবে ।
২) দায়িত্ব পালনে আল্লাহ প্রদত্ত নিয়মে দল গঠনের নির্দেশ :
সুরা আলে-ইমরান নং ৩ আয়াত ১০৪ : এমন এক দল হউক যাহারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করিবে এবং সৎকার্যের নির্দেশ দিবে ও অসৎকার্যে নিষেধ করিবে; ইহারাই সফলকাম।
৩) সুসংগঠিত দল গঠনপূর্বক কুরআন ও ইসলামের আলোকে সংগঠিত থাকার নির্দেশ :
সুরা আলে ইমরান নং ৩ আয়াত ১০৩ : এবং তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইও না (এই স্থলে আল্লাহর রজ্জু অর্থে কুরআন ও ইসলাম) ।
৪) সুসংগঠিত দল গঠনপূর্বক দ্বীন ইসলামকে প্রতিষ্ঠার নির্দেশ :
সুরা শুরা নং ৪২ আয়াত ১৩ : তিনি (আল্লাহ্) তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করিয়াছেন দ্বীন (ইসলাম) যাহার নির্দেশ দিয়াছিলেন তিনি নূহকে -আর যাহা আমি প্রত্যাদেশ করিয়াছি তোমাকে এবং যাহার নির্দেশ দিয়াছিলাম ইব্রাহীম মুসা ও ঈসাকে, এই বলিয়া যে তোমরা দ্বীনকে (ইসলামকে) প্রতিষ্ঠিত কর এবং উহাতে মতভেদ করিও না ।
৫) ইসলাম ব্যতীত কোন দ্বীন আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য নহে :
সুরা আলে-ইমরান নং ৩ আয়াত ১৯ : ইসলাম আল্লাহর নিকট একমাত্র দ্বীন ।
৬) ইসলামকে বিজয়ী করার দায়িত্ব সুসংগঠিত মুমীনদের উপর অর্পিত :
সুরা তাওবা নং ৯ আয়াত ৩৩ : অংশীবাদীগণ অপ্রীতিকর মনে করিলেও অপর সমস্ত দ্বীনের উপর জয়যুক্ত করিবার জন্য তিনিই পথনির্দেশ ও সত্য দ্বীনসহ তাঁহার রাসুল প্রেরণ করিয়াছেন ।
সুরা সফ নং ৬১ আয়াত ৯ : তিনিই তাঁহার রাসুলকে প্রেরণ করিয়াছেন পথ নির্দেশ ও সত্য দ্বীনসহ সকল দ্বীনের উপর উহাকে শ্রেষ্ঠত্ব দানের জন্য, যদিও মুশরিকগণ উহা অপছন্দ করে ।
৭) ইসলাম ব্যতীত কোন দ্বীন গ্রহণ করিলে পরলোকে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিধান জারী করা হয়েছে :
সুরা আলে ইমরান নং ৩ আয়াত ৮৫ : কেহ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করিতে চাহিলে তাহা কখনও কবুল করা হইবে না এবং সে হইবে পরলোকে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত ।
৮) আল্লাহ ও তাঁহার রসুলের নির্দেশ মোতাবেক মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী পার্থিব জীবন যাপন করবে :
সুরা নিসা আয়াত ৫৯ : হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস কর তবে আনুগত্য কর আল্লাহর, আনুগত্য কর রাসুলের, এবং তাহাদের যাহারা তোমাদের মধ্যে ক্ষমতার অধিকারী; কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটিলে উহা উপস্থিত কর আল্লাহ ও রাসুলের নিকট । ইহাই উত্তম এবং পরিণামে প্রকৃষ্টতর।
সুরা নাহল নং ১৬ আয়াত ৩৬ : আল্লাহর ইবাদত করিবার ও তাগুতকে বর্জন করিবার নির্দেশ দিবার জন্য আমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসুল পাঠাইয়াছি । (তাগুতের আভিধানিক অর্থ সীমালঙ্গনকারী, দুস্কিৃতির মূল বস্তু, যাহা মানুষকে বিভ্রান্ত করে ইত্যাদি । শয়তান, কল্পিত দেবদেবী এবং যাবতীয় বিভ্রান্তিকর উপায়-উপকরণ তাগুতের অন্তর্ভুক্ত )
সুরা আহযাব আয়াত ৩৬ : আল্লাহ ও তাঁহার রসুল কোন বিষয়ে নির্দেশ দিলে কোন মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্তের অধিকার থাকিবে না । কেহ আল্লাহ এবং তাঁহার রসুলকে অমান্য করিলে সে তো পথভ্রষ্ট হইবে ।
সুরা নিসা আয়াত ৬৫ : কিন্তু না তোমার প্রতিপালকের শপথ! তাহারা মুমিন হইবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তাহারা তাহাদের বিবাদ বিসম্বাদের বিচার ভার তোমার উপর অর্পন না করে, অতঃপর তোমার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তঃকরণে উহা মানিয়া না লয় ।
সুরা মায়িদা আয়াত ৪৪ : আল্লাহ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তদনুসারে যাহারা বিধান দেয় না তাহারা সত্য প্রত্যাখ্যানকারী ।
সুরা যুমার ৩৯ নং আয়াত ৫৬ : যাহাতে কাহাকেও বলিতে না হয় ,‘হায় আল্লাহর প্রতি আমার কর্তব্যে আমি যে শৈথিল্য করিয়াছি তাহার জন্য আফসোস । আমি তো ঠাট্টাকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম ।’
সুরা যুমার নং ৩৯ আয়াত ৫৭ : অথবা কেহ যেন না বলে, ‘“কতই না ভাল হতো যদি আল্লাহ আমাকে হিদায়াত দান করতেন৷ তাহলে আমিও মুত্তাকীদের অন্তরভুক্ত থাকতাম ৷”
সুরা যুমার নং ৩৯ আয়াত ৫৮ : অথবা শাস্তি প্রত্যক্ষ্য করিলে যেন কাহাকে বলিতে না হয় আহা যদি একবার পৃথিবীতে আমার প্রত্যাবর্তন ঘটিত তবে আমি সৎকর্মপরায়ণ হইতাম
সুরা যুমার নং ৩৯ আয়াত ৫৯ : প্রকৃত ব্যাপার তো এই যে,আমার নিদর্শন তোমার নিকট আসিয়াছিল, কিন্তু তুমি এইগুলিকে মিথ্যা বলিয়াছিলে;আর তুমি তো ছিলে কাফিরদিগের একজন
উপসংহারে বন্ধুদের নিকট দ্বীনি অনুরোধ রইল, মহান আল্লাহ প্রদত্ত বর্ণিত নির্দেশের প্রতি আন্তরিকতা প্রদর্শনপূর্বক অনুসরণ করি।
সোর্সঃ https://bn.quora.com/

No comments:

Post a Comment