“This early piece of the morning is mine.” – Wallace Stegner
খুব ভালো হয় যদি এটা আপনি নিজে পরীক্ষা করে দেখেন। একদিন ভোরবেলা হেঁটে আসবেন। তারপরের দিন ভোরবেলা পড়তে বসেন। পার্থক্যটা নিজে বুঝতে পারবেন। অন্য কারো কথায় অভিজ্ঞতাটা ঠিক বোঝা যাবেনা এক্ষেত্রে।যেটা আপনার ভালো লাগবে, আপনি সেটাই বেছে নেবেন।
ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, সুবিখ্যাত বিজ্ঞানী " মিসাইল ম্যান" ডঃ এ পি জে আব্দুল কালাম " My Journey Transforming Dreams into Actions" বইয়ে এই বিষয়ে তাঁর বাবার প্রাতঃভ্রমনের অভ্যাস সম্পর্কে কিছু বক্তব্য লিখেছেন। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী তাঁর বাবা প্রাতঃভ্রমনের ফলে নিজের এক উন্নত ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলেছিলেন। যে উন্নত ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন রাষ্ট্রপতির জীবন দর্শনে অনেকাংশেই প্রভাব ফেলে।সুতরাং তাঁর মতে প্রাতঃভ্রমনের উপকারীতা অনস্বীকার্য।
ছোট থেকে বেশ কিছু কথা শুনে আসছি। যেমন ভোরবেলা পড়াশোনা করলে সেটাই নাকি আসল পড়াশোনা হয়। কারণ সকালে মাথা পরিষ্কার থাকে, পরিবেশ শান্ত থাকে, যা পড়া হয়,সেটাই একেবারে মস্তিষ্কের অন্তঃস্থলে প্রবেশ করে পাকাপোক্ত বাসা বেঁধে ফেলে। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা হল (ভুল হতে পারে) - ভোরবেলা পড়তে বসলেই ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে , হাঁই তুলে তুলে গাল-গলা ব্যাথা করে সময়ই শুধু নষ্ট করতাম। একবাক্যও পড়া হত না। আমি রাতভোর পড়তাম। কারণ নিশুতি রাতে শান্ত নিরিবিলিতে পড়তে সুবিধা হত। এটা যদিও যার যার নিজস্ব পছন্দ ও সুবিধার ব্যাপার। কিন্তু আমার মতে বই পড়ার সদিচ্ছা থাকলে, সারাদিনের যে কোনো সময়েই পড়া যায়। প্রাতঃভ্রমণ নির্দিষ্ট সময়ে ভোরবেলা করতে পারলে তা জীবনযাত্রায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
সারারাত ঘুমের পরে, সকালে সমস্ত ক্লান্তি দুর হয়ে আমাদের যে শারীরিক শক্তি সঞ্চিত হয়, তা প্রাতঃভ্রমণের জন্য অনুকূল অবস্থা তৈরি করে।
সকালের সদ্যজাগ্রত প্রকৃতি আমাদের অন্যপ্রকারের মানসিক শক্তির যোগান দেয়। ভোরবেলার পাখির কলতান, হালকা সূর্যের আলো, ঠাণ্ডা নরম হাওয়ার স্পর্শে শরীর ও মনে সুস্থতার বোধ হয়।
সকালে ভ্রমণ সারাদিন কাজ করার উৎসাহ ও শক্তি বৃদ্ধি করে। কিন্তু দিনশেষে সারাদিনের কাজকর্মের ক্লান্তি ভ্রমণের ইচ্ছা নষ্ট করে দেয়। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আর ভ্রমণ করাই হয় না।
বর্তমানে আমরা বড় বেশী কূপমণ্ডূকতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছি। সামাজিকতাহীন হয়ে পড়ছি। এই পরিস্থিতিতে সকাল বেলা কিছু চেনা পরিচিত মানুষের মুখ দর্শনও জীবনে নতুন আলোর সঞ্চার করে। সারাদিন একটা ভালোলাগায় ভরে থাকে।
এছাড়া একমাত্র ভোরবেলাতেই আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি সংশ্লেষিত হয়। দিনের অন্য সময় এটা সম্ভব নয়।
সকালে ভ্রমণের সময় আমি একটা জিনিস করি। যেটা মন তরতাজা করে দেয়।প্রথমে খালি পায়ে কাঁকরের ওপর দিয়ে খানিকক্ষণ হাঁটি। তারপর খালি পায়ে নরম শিশিরে ভেজা ঘাসের ওপর হাঁটি।খুব আরাম লাগে। এটা মন ভালো করার একধরনের থেরাপিও বলা যায়। এটা দিনের অন্য কোনো সময়ে আর করা যায় না।
তাই সকালে একঘণ্টা বই পড়া আর সকালে একঘণ্টা প্রাতঃভ্রমণের মধ্যে আমি প্রাতঃভ্রমণকেই বেছে নেব।
ধার: পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়
নিজ পাঠ
No comments:
Post a Comment