ছোট্ট
চারুর ইচ্ছে হলো সে আল্লাহকে দেখবে। সে এইনা ভেবে তার ছোট্ট সুটকেসটির ভেতর কাপড়
গুছিয়ে নিলো। সুটকেসটির ভেতরে একটি পাত্রে সে কয়েক পিস কেক নিলো। এবার তার যাত্রা শুরু
করলো। সে বাড়ী থেকে অনেক দূরে একটি বাগানে পৌছলো। বেশ ক্লান্ত বোধ করলো সে।
বাগানের গাছের ছায়ায় সে একটি বেঞ্চের ওপর বসে পড়লো। ভাবলো, ক্লান্ত লাগছে- এবার
কেক খাই। এদিক ওদিক তাকিয়ে নিলো চারু। দেখলো তার কাছেই এক বৃদ্ধা বসে আছে আরেকটি
বেঞ্চের ওপর। সে ছিল ক্লান্ত, দুঃখিত আর মনে হলে সে কিছুই খায়নি অনেক সময় ধরে।
চারু তাকে কেক দিতে চাইলো। মহিলাটিও কেক নিতে চাইলো। চারু তাকে দিলো। মহিলাটি বেশ “কৃতজ্ঞ”
হলো চারুর প্রতি। সে চারুর দিকে তাকিয়ে “সুন্দর হাসি” দিলো। এমন হাসি দিলো যে চারু
কোনদিনই এমন সুন্দর হাসি দেখেনি। চারু ভাবলো এই মহিলাকে যেন বার বার দেথতে পাই।
চারু আবার তাকে কেক দিলো। কেক নিয়ে আবারো সে চারুর দিকে তাকিয়ে আবারো সুন্দর হাসি
দিলো।
এভাবেই
চারু আর বৃদ্ধা মহিলা বাগানে অনেকটা সময় এক সাথে কাটিয়ে দিলো । দুপুর গড়িয়ে বিকাল
হলো। কিন্ত এতটা সময় দু’জনেই কারো সাথে কোন কথা বলেনি।
গোধুলী
বেলায় চারু বাড়ীর দিকে চললো। কারণ, ওর বেশ দূরে যেতে হবে। বৃদ্ধা মহিলা চারুকে
একটি “চুমু” দিলো। এতে সে আরো আনন্দিত হয়ে চললো বাড়ীর পানে।
বাড়ীর
দরজায় টোকা দিতেই চারুর মা দরজা খুললো। চারুর মুখটি হাসিতে উজ্জল। মা বল্লো “কি
রে, আজ এতটা আনন্দিত যে তুই”। কি হয়েছে বলতো শুনি। সে বল্লো, আজ বাগানে আল্লাহর অস্তিত্ব অনুভব করেছি। তাই
এতটা আনন্দিত।” মা বল্লো,
“কিভাবে?” চারু বল্লো মা, বাগানে আজ এক বৃদ্ধা মহিলার সাথে কেক শেয়ার করি। সে
ছিল ক্লান্ত, দুঃখিত আর মনে হলে সে কিছুই খায়নি অনেক সময় ধরে। কেক শেয়ার করবার সময় আল্লাহর অস্তিত্ব অনুভব করলাম।
আল্লাহ তো আমাদের কাছেই থাকেন। সাথেই থাকেন। তুমি আমাকে আল্লাহ বিষয়ে বলতে, “আন্যকে
সাহায্য করলে আল্লাহকেই সাহায্য করা হয়।”
এদিকে
বৃদ্ধা মেয়েটিও বাড়ীতে গেল। সে ও ছিল
চারুর মতই আনন্দিত। তার ছেলে বল্লো, “মা, আগে তোমাকেতো এতটা আনন্দিত দেখিনি?” কি
হলো আজ যে তুমি এতটা আনন্দিত। বৃদ্ধা বল্লো বাবা, বাগানে আজ এক ছোট্ট বাবুর সাথে কেক শেয়ার করবার সময়
আল্লাহর অস্তিত্ব অনুভব করলাম। আল্লাহ তো আমাদের কাছেই থাকেন। সাথেই থাকেন। আমি তোকে
বলতাম, গল্প শোনাতাম, “গৃহহীনে গৃহ দিলে আমি থাকি ঘরে!” সেই চারু যখন আমাকে কেক খাওয়াচ্ছিল
তখনই আল্লাহকে অনুভব করলাম। (সুরা ক্কাফ-আয়াত ১৬ “ওয়া না্হ্নু আক্করাবু ইলাইহি মিন
হাব্লিল ওয়ারীদ..-আমি তোমাদের ঘাড়ের শিরার চাইতেও কাছে থাকি।”
আসুন
আমরাও আল্লাহকে আমাদের মনের ভেতরে স্থায়ী আসন দিই। তখন দেখবেন “আপনাকে এই জানা
আমার ফুরাবেনা।” আপনি আল্লাহর অস্তিত্ব অনুভব করতে পারবেন।
রিফ্লেকশানঃ
আমরা
বেশীরভাগ সময়ই “স্পর্শের” (টাচ) শক্তিকে অবহেলা করি
“হাসির”
(স্মাইল) শক্তিকে অবহেলা করি
“দয়ার
(কাইন্ডনেস) উদ্রেক করে এমন কথার শক্তি”কে অবহেলা করি
“ভাল
কথা শোনার (গুড হেয়ারিং) শক্তি”কে অবহেলা করি, ভাল কথা হলে উপেক্ষার ছলে চলে যাই
“ভাল
প্রশংসার (প্রেইজ) শক্তি”কে অবহেলা করি
উতসাহের
(এনথুসিয়েজম) “শক্তি”কে অবহেলা করি (উতসাহ কথাটার গ্রীক সংস্করণ এনথুসিয়েজম-যার
মানে “ভেতরে আল্লাহ আছেন”)
“খুব
ছোট একটি যত্নের (স্মল কেয়ার) শক্তি”কে অহেলা করি-তুচ্ছ ভাবি।
কিন্তু
না। মনোবিজ্ঞান বলছে-ওপরের সবগুলো “শক্তি”ই অসাধারন। এগুলো আমাদের সবার জীবনে অনেক
গভীর ও স্থায়ী চিহ্ন রেখে যায়। স্মৃতির পাতা থেকে সেগুলো কোন দিনই মুছে যায় না।এর
নাম “ইপিসোডিক মেমোরী” বা ঘটনাক্রমে যা মনে লাখা হয়।
আমাদের
মনে রাখা দরকার যে “আল্লাহ”কে আমরা কেউই দেখিনি। আল কুরআনের ভাষায় তিনি আমাদের
নিকটতম দূরত্বেই থাকেন। তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন যেটা তাঁর অন্যতম সেরা সৃষ্টি। “আল্লাহ”
মানুষ সৃষ্টি করেছেন অবশ্যই একটি মহান উদ্দেশ্য নিয়ে। ওপরে লেখা মানুষের সব “শক্তি”র্
কোন না কোন স্থায়ী ভাল “প্রভাব”তো প্রত্যেক মানব জীবনে তথা প্রত্যেক প্রাণীর জীবনে
রয়েছেই, অস্বীকার করার জো নেই।
আমাদের
সবারই উচিত হবে প্রতিদিন এমন কোন না কোন কাজ করা যা মানুষের বা কোন প্রাণীর মনে
দয়ার উদ্রেক করে একটি স্থায়ী ছাপ রেখে যায়। পরীক্ষা করে দেখুন আপনার বাড়ীর আশে
পাশের বিড়াল ছানাটিকে যদি “আদর” দেন-সে ও আপনার ভালবাসার জবাব দেবেই।
মানুষ
মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে্
একটু
সহানুভূতি কী মানুষ পেতে পারে না?
বলো
কী তোমার ক্ষতি, জীবনের অথৈ নদী-
পার হয় তোমাকে ধরে-দুর্বল
মানুষ যদি?
No comments:
Post a Comment