Saturday, January 13, 2018

হাট

দূরে দূরে গ্রাম দশ-বারোখানি মাঝে একখানি হাট
সন্ধ্যেয় সেথা জ্বলেনা প্রদীপ, প্রভাতে পড়েনা ঝাঁট
বেচা কেনা সেরে বিকেল বেলায়
যে যাহা সবে ঘরে ফিরে যায়;
বকের পাখায় আলোক লুকায় ছাড়িয়া পুবের মাঠ;
দূরে দূরে গ্রাম জ্বলে ওঠে দীপ- আঁধারেতে থাকে হাট
নিশা নামে দূরে শ্রেণীহারা এক ক্লান্ত বকের পাখে;
নদীর বাতাস ছাড়ে প্রশ্বাস পার্শে পাকুড় শাখে।
হাটের দোচালা মুদিল নয়ান,
কারো তরে তার নাহি আহ্বান;
বাজে বায়ু আসি বিদ্রুপ বাঁশী জীর্ণ বাঁশের ফাঁকে,
নির্জন হাটে রত্রি নামিল একক কাকের ডাকে।
দিবসেতে সেথা কত কোলাহল চেনা অচেনার ভীড়ে
কতনা ছিন্ন চরণচিহ্ন ছড়ানো সে ঠাঁই ঘিরে
মাল চেনাচিনি দর জানাজানি
কানাকড়ি নিয়ে কত টানাটানি
হানাহানি ক‘রে কেউ নিলো ভরে কেউ গেল খালি ফিরে,
দিবসে থাকেনা কথার অন্ত চেনা অচেনার ভীড়ে।
কত যে আসিল, কত না আসিছে কত না আসিবে হেথা
ওপারের লোক নামালে পসরা ছোটে এপারের ক্রেতা
শিশির বিমল প্রভাতের ফল
শত হাতে সহি পরখের ফল
বিকাল বেলায় বিকায় হেলায় সহিয়া নীরব ব্যথা
হিসাব নাহি রে-এল আর গেল কত ক্রেতা বিক্রেতা
নতুন করিয়া বসা আর ভাঙ্গা পুরোনো হাটের খেলা
দিবস রাত্রি নতুন যাত্রী নিত্য নটের খেলা
খোলা আছে হাট মুক্ত বাতাস
বাধা নাই ওগো- যে যায় যে আসে
কেহ কাঁদে, কেহ গাঁটে কড়ি বাঁধে ঘরে ফিরিবার বেলা
উদার আকাশে মুক্ত বাতাসে চিরকাল একই খেলা
-যতীন্দ্র নাথ সেনগুপ্ত

“হাট”কে কবি কীভাবে জীবনের সাথে তার মেলবন্ধ ঘটালেন, ভাবতে অবাক লাগে। সত্যিই কবির কল্পণা কী অসাধারণ কবিতাটি না পড়লে বোঝা যায় না। 

No comments:

Post a Comment