Thursday, November 29, 2018

হাত দিয়ে খাওয়া কি ভাল?


হাতের পাঁচ আঙুল দিয়ে খাওয়া স্বাস্থ্যকর। উপকারিতাগুলো দেখুন ভাল করেঃ
১. হজমে সুবিধা হয়
হাত দিয়ে খাবার খেলে একাধিকবার পেশীর সঞ্চালন হয়। চামচ দিয়ে খাওয়ার ক্ষেত্রে এই পেশী সঞ্চালন এতটা পরিমাণে হয় না। খাওয়ার সময় যত বেশি পেশী সঞ্চালন হবে, তত রক্ত সঞ্চালন বেশি হবে শরীরে, খাবার হজমেও সুবিধা হবে।

২. বিপাকক্রিয়া উন্নত হয়
আমরা যখন হাত দিয়ে খাবার খাই তখন আঙুলের মাধ্যমেই মস্তিষ্কের বার্তা পাকস্থলীতে গিয়ে পৌঁছায়। ফলে বিপাকক্রিয়া উন্নতমানের হয়।

৩. রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন নিঃসরণ হয়
চামচ দিয়ে খেলে ধাতুর স্পর্শ পাওয়ায় খাবারের স্বাদ বোঝা যায় না। এছাড়া রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনও কম নিঃসরন হয়।

৪. জিভের উপকার হয়
হাত দিয়ে খাওয়ার সময় হাতের ছোঁয়া জিভে লাগায় স্বাদকোরক বেশি উদ্দীপ্ত হয়, ফলে খাবার বেশি স্বাদু লাগে ও মানসিক তৃপ্তি ঘটে।

আরো কারণসমুহঃ
১. হাত হলো বিভিন্ন কাজের জন্য দরকারী একটি মূল্যবান অংগ। হাতের আঙ্গুলের মাথায় যে স্নায়ুর প্রান্ত(নার্ভ এন্ডিং) থাকে সেগুলো হজমের জন্য দরকারী রাষায়নিককে উদ্দিপ্ত করে।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র বলে হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুল দিয়ে “ক্ষিতি” বা মাটির সারবস্তু শরীরে ঢোকে।
অনামিকা বা রিং ফিঙ্গার দিয়ে “আব” বা পানি শরীরে ঢোকে।
মধ্যমা আঙ্গুল দিয়ে “তেজ” বা আগুন শরীরে ঢোকে।
তর্জনী দিয়ে শরীরে ঢোকে “মরুত” বা বায়ু।
আর বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে শরীরে ঢোকে “ব্যোম” বা উর্দ্ধালোকের শূন্যতা।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে ক্ষিতি, আব, তেজ, মরুত এবং ব্যোম এই পঞ্চভূতে মানব দেহ তৈরী।    

২. হাত হলো মাল্টি টাস্কার বা এটা দিয়ে অনেকগুলো কাজ একসাথে করা যায়। যেমনঃ হাত দিয়ে খাবার ছেঁড়া যায়, অনুভব করা যায়, ছোঁয়া যায়, সবগুলো আঙ্গুল এক সাথে করে খাবার তোলা যায়, খাবারের টুকরো ছোট বা বড় করা যায় এমনকি পানিও ধরে রাখা যায়। তাই এই হাত অবশ্যই একটা খাঁটি মাল্টি টাস্কার।
৩. হাত দিয়ে সহজেই খাবার ভাগ করা যায়(পোরশন)। হাত দিয়ে খাবারগুলো ধীরে ধীরে খাওয়া যায়। হাত দিয়ে খাবারের ছোট ছোট পোরশনগুলো মুখে দিলে দাঁত সেগুলো ভাল করে চিবাতে সাহায্য করে। এভাবে আমরা খাবারের ভাল অভিজ্ঞতা পেতে পারি।   
৪. হাত দিয়ে খাওয়া একটা ব্যায়ামও বটে। হাত দিয়ে খেলে হাতে এবং আঙ্গুলের মাথায় রক্তের প্রবাহ বেড়ে যায়। তাছাড়া খাবার নাড়াচাড়া করলে হাতের মাংসপেশীগুলোও সচল থাকে।
৫. হাত দিয়ে খেলে খাবারগুলো সহজে হজম হয়। হাতে বা আঙ্গুলের মাথায় যে সব উপকারী বা বেনিফিশিয়্যাল ব্যাক্টেরিয়া থাকে, খাবারের সাথে সেগুলো আমাদের পাকস্থলী বা অন্ত্রে ঢুকে যায়। এগুলোই পরবর্তীতে হজমে সহায়তা করে।     

৬. হাত দিয়ে খেলে মনে হবে যেন তৃপ্তিসহকারে খেলাম। কিন্তু চামচ দিয়ে খেলে খাবারের এই যে অপার আনন্দ সেটা উপভোগ করা যায় না।  


৭. হাত দিয়ে খেলে টাইপ-টু ডায়াবেটিসে ভোগা রোগীরা উপকার পায়। এর কারণ হলো যারা এই রোগে ভোগে তাদের বেশীরভাগ মানুষ চামচ দিয়ে দ্রুত খেয়ে নেয়। দ্রুত খাওয়ার ফলে শরীরের শর্করা জাতীয় খাবারগুলো চিনির ভারসাম্য নিয়ন্ত্রনে অবদান রাখতে পারে না।  

৮. হাত দিয়ে খাওয়াটা বেশী স্বাস্থ্যসম্মত। এর কারণ হলো আমরা যতবারই খেতে বসি ততবারই হাত ভাল করে ধুই। আর এই পরিষ্কার হাত দিয়ে খাবার খেলে রোগ বালাই দূরে রয়। বিজ্ঞানীরা বলেন, দৈনিক অনেকবার হাত ধুলে অন্ততঃ ৮০% অসুখ শরীরে ভীড়তে পারে না। কারণ, হাত হলো বাইরের জগতের সাথে মিশে যাবার বা মিশে থাকার ক্ষেত্রে শরীরের প্রথম অঙ্গ।  
৯. হাত দিয়ে খেলে মনযোগ সহকারে খাবার খাওয়া যায় (Mindful Eating) । আর খাবার মনযোগ দিয়েই খাওয়া দরকার। তা না হলে শরীরে প্রোটিন-ক্যালরীর ভারসাম্য বজায় থাকে না। এমন হলে কেউ দ্রুত মোটা হয়ে যেতে পারে আবার কেউ বা শুকিয়ে যেতে পারে।  
১০. হাত দিয়ে খেলে বি.ই.ডি বা বিঞ্জ ইটিং ডিজঅর্ডার বা দ্রুত খাবার খাওয়া থেকে মুক্তি মেলে। যারা দ্রুত খাবার খায় তারা খাবারগুলো ভাল করে চিবায় না। ফলে তারা দ্রুতই স্থুলকায় হতে থাকে। মণীষীরা বলেন, কম খাও, চিবাও বেশী। বেশী চিবানো খাবার দ্রুত হজম হয় আর পুষ্টিও শরীরে দ্রুত সরবরাহ হয়। আর যারা এ কাজটি করেন, তারা সারা জীবনধরেই স্লিম থেকে যান।  
১১. মুসলমানদের জন্য হাত দিয়ে খাওয়া সুন্নাত। আমাদের নবী (সা.) তাঁর উম্মতদেরকে হাত দেয়ে খেতে উতসহিত করেছেন।

১২. হাত দিয়ে খেলে(রাসুল(সা.)এঁর সুন্নাত তিন আঙ্গুলে খাওয়া-অনামিকা আর কনিষ্ঠাকে বাদ রেখে-তবে অবশ্য প্রয়োজন হলে এ ২টিও ব্যবহার করা যাবে) স্লিম থাকা যায় (Sure way to stay slim) ।

No comments:

Post a Comment