মানুষ কেন দুঃখিত হয়? আর মানুষ কেনই-বা
নিজের থেকে এই দুঃখ বোধ করে?
নিজের এই জিজ্ঞাসাসূচক কোনো প্রশ্ন কিংবা তার উত্তরটার ভিতরে
আমরা কেউ কি কখনো নিজেকে প্রশ্ন করে দেখেছি?
আর ‘আমি-তুমি’ এমনকি অন্যায়, অপরাধ বোধ করেছি?
যার যন্ত্রণাদায়ক কাতরতায় নিজেদের মাঝে এমন করে যে ধুঁকছি!
হয়তোবা নিজেরই রক্ত-মাংসময় সহজ অনুভূতিটাকে
নিজেরই ঐ-প্রভাবিত সে মনুষ্যত্বের লাঞ্ছনা বোধ থেকে
এই পৃথিবীর কোনো চরিতার্থ ক্ষমতা আর ঐশ্বর্য দিয়ে
যেন মনের সুখটাকে কোনো মতে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
সৃষ্টিলগ্ন থেকে তাই তো বুঝি মানুষ নিজেরই বিবেক পীড়িত আত্মশুদ্ধি থেকে
করে আসছে তার এক আত্ম-সমালোচনা!
Ref: Daily Sangram
প্রতিটি দিনের শেষে নিজের মূল্যায়ন এবং নিজের কাজকর্মের হিসাব নেয়ার লক্ষ্যে একটু সময় দেয়া ব্যক্তি হিসেবে মানুষের জন্য প্রয়োজন। তখন তার ভেবে দেখা দরকার সারা দিনে তিনি কী করেছেন, যা করেছেন এর কারণ কী, করণীয় কোন কোন কাজ বাদ পড়েছে, আর বাদ পড়ে গেলই বা কেন।
রাতে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়ার আগে এই আত্মসমালোচনা করা হলে তা কত চমতকার ব্যাপারই না হবে। নিজের মূল্যায়ন ও সমালোচনার এই সময়টুকুকে আত্মোন্নতির মধ্যেই ধরতে হবে। এটা এমন একটা সময় যখন একজন মানুষ নিরপেক্ষভাবে নিজের বিচার করে এবং পর্যালোচনা করে দেখে নিজেরই আকাক্সক্ষা ও সেই সাথে কার্যকলাপের কারণ বা উদ্দেশ্য। এটা এমন এক মুহূর্ত যখন ঈমানদার ব্যক্তি (তিনি পুরুষ বা নারী যিনিই হোন না কেন) নিজের কার্যকলাপ সম্পর্কে তদন্তের জন্য বিবেকের ডাকে একজন তদন্তকারী নিয়োগ করেন। তদুপরি নিয়োগ করেন একজন বিচারক যিনি তাকে শাস্তি দেবেন অথবা বেকসুর খালাস বলে ঘোষণা করবেন। এভাবে মানুষ আত্মার এক অবস্থা থেকে আরেক অবস্থায় উন্নীত হয়ে থাকে। প্রথম অবস্থা হলো ‘মন্দ কাজের উসকানিদাতা’। পরেরটি হচ্ছে ‘নিজেকে তিরস্কারকারী।’
যখনি মানুষ পাপে লিপ্ত হয় কিংবা বঞ্চিত প্রত্যাশা পূরণে হয় ব্যর্থ, উন্নতমানের এই আত্মা তখনি তাকে তিরস্কার করে।
হাদিস শরিফে আছে, যেকোনো জ্ঞানী ব্যক্তির জীবনে চার ধরনের সময় থাকা সমীচীন এবং এর একটি হলো সে সময়, যখন তিনি আত্মসমালোচনায় নিয়োজিত থাকেন।
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা: বলেছেন, ‘শেষ বিচারের দিনে সমালোচনা ও মূল্যায়নের সম্মুখীন হওয়ার আগেই নিজের সমালোচনা ও মূল্যায়ন করো। তোমার কাজের হিসাব নেয়ার আগেই সেগুলো খতিয়ে দেখো।’ তিনি রাতের বেলায় নিজের পায়ে বেত দিয়ে আঘাত করতেন; আর নিজেকে বলতেন, ‘বলো, আজ তুমি কী করেছ?’
রাসূলুল্লাহ সা:-এর বিখ্যাত সাহাবী মাইমুন ইবনে মাহরান বলতেন, ‘একজন পরহেজগার ব্যক্তি কোনো অত্যাচারী শাসক এবং কৃপণ সঙ্গীর কাজের চেয়ে নিজের কাজকর্মের মূল্যায়ন করবেন বেশি সতর্কতার সাথে।’
আল হাসান বলেছেন, ‘একজন ঈমানদার ব্যক্তি নিজের প্রহরী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তিনি আল্লাহর স্বার্থে নিজের সমালোচনা ও মূল্যায়ন করেন। প্রকৃতপক্ষে, (শেষ বিচারের দিনে) কিছু লোকের চূড়ান্ত হিসাব দেয়ার কাজ সহজ হয়ে যেতে পারে কেবল এ কারণে যে, তারা ইহজীবনে ছিলেন নিজের হিসাব নেয়ায় অভ্যস্ত। অপর দিকে যারা এই জীবন হেলায় ফেলায় কাটিয়ে দিয়েছে, তাদের জন্য নিজের হিসাব দেয়া কষ্টকর হয়ে দাঁড়াতে পারে। এরা মনে করত, তাদের কার্যকলাপের কোনো হিসাব নেয়া হবে না।’
বাস্তবে কিভাবে আত্মসমালোচনা বাস্তবায়িত হয়ে থাকে, সে প্রসঙ্গে আল-হাসান বলেন, মুমিন ব্যক্তিকে এমন চিন্তা বা ধারণা প্রলুব্ধ করতে পারে, ‘আল্লাহর কসম, এই কাজটা তো চমতকার। আমি করতে চাই। কিন্তু না, কক্ষনো না। মন্দ কাজ, দূর হও! মন্দ কিছু করা যে আমার জন্য হারাম।’ এটা আত্মসমালোচনা এবং কাজ করে ফেলার আগের দরকারি ভাবনা।
কোনো ঈমানদার অসাবধানতাবশত কিছু একটা করে ফেলতে পারেন। তখন তিনি নিজেকে বলেন, ‘তুমি এটা কী করলে? আল্লাহর কসম, এ কাজের কোনো কারণই খুঁজে পাচ্ছি না। আমি ইনশাআল্লাহ আর কখনো এটা করব না।’ এটাও আত্মসমালোচনা এবং এটা কাজ করার পরের মূল্যায়ন।
যদি কোনো ঈমানদার লোক আত্ম অনুসন্ধানের জন্য প্রতিদিন সামান্য সময় না পান, তিনি অন্তত কয়েক দিন পরপর কিংবা সপ্তাহে একবার হলেও এ কাজ করার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত। এই পন্থায়, মানুষ তার আধ্যাত্মিক সম্পদ ও দায় তুলে ধরে নিজ জীবনের ব্যালেন্স শিট তৈরি করতে পারে।
প্রতি মাসের শেষে নিজের হিসাব নেয়ার জন্য একজন মুমিনের আরো দীর্ঘ সময় থাকা উচিত। এর চেয়েও বেশি সময় তার দেয়া দরকার বর্ষশেষে আত্মসমালোচনার জন্য। তখন একটি বছরকে বিদায় জানিয়ে আরেকটির প্রস্তুতি নিতে হয়। পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে অতীতের মূল্যায়ন এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করার সময় এটাই। একজনের ‘চূড়ান্ত বার্ষিক আধ্যাত্মিক হিসাব’ বলা যায় এটাকে।
পাশ্চাত্য একটি নিন্দনীয় প্রথা চালু করেছে, যা দুর্ভাগ্যজনকভাবে কিছু মুসলমানও পালন করে থাকে। তা হচ্ছে জন্মবার্ষিকী উদযাপন। এ উপলক্ষে লোকজনকে দাওয়াত করে উপাদেয় খাদ্য-পানীয় পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠানে কয়েকটি মোমবাতি জ্বালানো হয়। যার জন্মদিবস, তার যত বছর বয়স হলো, ততটা মোমবাতি জ্বালানো হয়। তদুপরি, উপহার দেয়া হয় তাকে। এর সাথে চলে হাসি-তামাশা। পাশ্চাত্যের এমন অন্ধ ও অপ্রয়োজনীয় অনুকরণের চেয়ে বেশি প্রয়োজন হলো, জ্ঞানী ব্যক্তিরা উপলক্ষটির সদ্ব্যবহার করবেন। জন্মবার্ষিকী মানে আয়ু থেকে একটি বছর ফুরিয়ে যাওয়া। তাই জন্মদিবসে নিজ জীবন নিয়ে চিন্তাভাবনা এবং নিজের কর্মকাণ্ড পুনর্বিবেচনা করে দেখাই আবশ্যক।
প্রতি বছরের শেষে একজন সাবধানী ব্যবসায়ী একটু বিরতি দেন। বিগত বছরের ততপরতার হিসাব-নিকাশ করে নিজের সর্বশেষ আর্থিক অবস্থান নির্ণয় করাই এর উদ্দেশ্য। তিনি জানতে চান, তার লাভক্ষতি, দায় ও সম্পদের বিষয়ে। একইভাবে, ঈমানদারদের উচিত নিজ নিজ জীবনের গত এক বছরের হিসাব নেয়া। আর এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা তাদের জিজ্ঞেস করবেন।
একটি বছর কম সময় নয়। বারো মাসে এক বছর। সাধারণত ত্রিশ দিনে এক মাস। প্রতিটি দিনে থাকে চব্বিশ ঘণ্টা। ষাট মিনিট নিয়ে একেকটি ঘণ্টা এবং ষাট সেকেন্ডে একেক মিনিট গঠিত হয়। আর প্রত্যেক সেকেন্ডকে গণ্য করা উচিত আল্লাহর পক্ষ থেকে আশীর্বাদ ও অনুগ্রহ হিসেবে। একেক সেকেন্ড একেকটি আমানত।
আল্লাহ হাসান আল বসরির প্রতি করুণা বর্ষণ করুন, যখন তিনি বলেন, ‘হে আদম সন্তান! তুমি হলে কিছু দিনের সমষ্টি। একেকটি দিন চলে যাওয়া মানে তোমার একেক অংশ হারিয়ে যাওয়া।’
আবু আলী আদ দাককাক এই দু’টি পঙ্ক্তি আবৃত্তি করতেন:
একেক দিবস হয় বিগত,
একাংশ মোর যায় নিয়ে;
উড়ে যায় সে,
হৃদয় মাঝে তিক্ত বিস্বাদ যায় দিয়ে।
মূল: ড. ইউসুফ আল কারাযাভী
“Self-criticism and negative thoughts about yourself will attract people who reflect this back to you, showing critical behavior and can abuse you physically.”
― Hina Hashmi, Your Life, a Practical Guide to Happiness Peace and Fulfillment
“যে সত হয় নিন্দা তার কোন অনিষ্ট করতে পারে না!”-শেখ সা’দী
নিজের থেকে এই দুঃখ বোধ করে?
নিজের এই জিজ্ঞাসাসূচক কোনো প্রশ্ন কিংবা তার উত্তরটার ভিতরে
আমরা কেউ কি কখনো নিজেকে প্রশ্ন করে দেখেছি?
আর ‘আমি-তুমি’ এমনকি অন্যায়, অপরাধ বোধ করেছি?
যার যন্ত্রণাদায়ক কাতরতায় নিজেদের মাঝে এমন করে যে ধুঁকছি!
হয়তোবা নিজেরই রক্ত-মাংসময় সহজ অনুভূতিটাকে
নিজেরই ঐ-প্রভাবিত সে মনুষ্যত্বের লাঞ্ছনা বোধ থেকে
এই পৃথিবীর কোনো চরিতার্থ ক্ষমতা আর ঐশ্বর্য দিয়ে
যেন মনের সুখটাকে কোনো মতে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
সৃষ্টিলগ্ন থেকে তাই তো বুঝি মানুষ নিজেরই বিবেক পীড়িত আত্মশুদ্ধি থেকে
করে আসছে তার এক আত্ম-সমালোচনা!
Ref: Daily Sangram
প্রতিটি দিনের শেষে নিজের মূল্যায়ন এবং নিজের কাজকর্মের হিসাব নেয়ার লক্ষ্যে একটু সময় দেয়া ব্যক্তি হিসেবে মানুষের জন্য প্রয়োজন। তখন তার ভেবে দেখা দরকার সারা দিনে তিনি কী করেছেন, যা করেছেন এর কারণ কী, করণীয় কোন কোন কাজ বাদ পড়েছে, আর বাদ পড়ে গেলই বা কেন।
রাতে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়ার আগে এই আত্মসমালোচনা করা হলে তা কত চমতকার ব্যাপারই না হবে। নিজের মূল্যায়ন ও সমালোচনার এই সময়টুকুকে আত্মোন্নতির মধ্যেই ধরতে হবে। এটা এমন একটা সময় যখন একজন মানুষ নিরপেক্ষভাবে নিজের বিচার করে এবং পর্যালোচনা করে দেখে নিজেরই আকাক্সক্ষা ও সেই সাথে কার্যকলাপের কারণ বা উদ্দেশ্য। এটা এমন এক মুহূর্ত যখন ঈমানদার ব্যক্তি (তিনি পুরুষ বা নারী যিনিই হোন না কেন) নিজের কার্যকলাপ সম্পর্কে তদন্তের জন্য বিবেকের ডাকে একজন তদন্তকারী নিয়োগ করেন। তদুপরি নিয়োগ করেন একজন বিচারক যিনি তাকে শাস্তি দেবেন অথবা বেকসুর খালাস বলে ঘোষণা করবেন। এভাবে মানুষ আত্মার এক অবস্থা থেকে আরেক অবস্থায় উন্নীত হয়ে থাকে। প্রথম অবস্থা হলো ‘মন্দ কাজের উসকানিদাতা’। পরেরটি হচ্ছে ‘নিজেকে তিরস্কারকারী।’
যখনি মানুষ পাপে লিপ্ত হয় কিংবা বঞ্চিত প্রত্যাশা পূরণে হয় ব্যর্থ, উন্নতমানের এই আত্মা তখনি তাকে তিরস্কার করে।
হাদিস শরিফে আছে, যেকোনো জ্ঞানী ব্যক্তির জীবনে চার ধরনের সময় থাকা সমীচীন এবং এর একটি হলো সে সময়, যখন তিনি আত্মসমালোচনায় নিয়োজিত থাকেন।
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা: বলেছেন, ‘শেষ বিচারের দিনে সমালোচনা ও মূল্যায়নের সম্মুখীন হওয়ার আগেই নিজের সমালোচনা ও মূল্যায়ন করো। তোমার কাজের হিসাব নেয়ার আগেই সেগুলো খতিয়ে দেখো।’ তিনি রাতের বেলায় নিজের পায়ে বেত দিয়ে আঘাত করতেন; আর নিজেকে বলতেন, ‘বলো, আজ তুমি কী করেছ?’
রাসূলুল্লাহ সা:-এর বিখ্যাত সাহাবী মাইমুন ইবনে মাহরান বলতেন, ‘একজন পরহেজগার ব্যক্তি কোনো অত্যাচারী শাসক এবং কৃপণ সঙ্গীর কাজের চেয়ে নিজের কাজকর্মের মূল্যায়ন করবেন বেশি সতর্কতার সাথে।’
আল হাসান বলেছেন, ‘একজন ঈমানদার ব্যক্তি নিজের প্রহরী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তিনি আল্লাহর স্বার্থে নিজের সমালোচনা ও মূল্যায়ন করেন। প্রকৃতপক্ষে, (শেষ বিচারের দিনে) কিছু লোকের চূড়ান্ত হিসাব দেয়ার কাজ সহজ হয়ে যেতে পারে কেবল এ কারণে যে, তারা ইহজীবনে ছিলেন নিজের হিসাব নেয়ায় অভ্যস্ত। অপর দিকে যারা এই জীবন হেলায় ফেলায় কাটিয়ে দিয়েছে, তাদের জন্য নিজের হিসাব দেয়া কষ্টকর হয়ে দাঁড়াতে পারে। এরা মনে করত, তাদের কার্যকলাপের কোনো হিসাব নেয়া হবে না।’
বাস্তবে কিভাবে আত্মসমালোচনা বাস্তবায়িত হয়ে থাকে, সে প্রসঙ্গে আল-হাসান বলেন, মুমিন ব্যক্তিকে এমন চিন্তা বা ধারণা প্রলুব্ধ করতে পারে, ‘আল্লাহর কসম, এই কাজটা তো চমতকার। আমি করতে চাই। কিন্তু না, কক্ষনো না। মন্দ কাজ, দূর হও! মন্দ কিছু করা যে আমার জন্য হারাম।’ এটা আত্মসমালোচনা এবং কাজ করে ফেলার আগের দরকারি ভাবনা।
কোনো ঈমানদার অসাবধানতাবশত কিছু একটা করে ফেলতে পারেন। তখন তিনি নিজেকে বলেন, ‘তুমি এটা কী করলে? আল্লাহর কসম, এ কাজের কোনো কারণই খুঁজে পাচ্ছি না। আমি ইনশাআল্লাহ আর কখনো এটা করব না।’ এটাও আত্মসমালোচনা এবং এটা কাজ করার পরের মূল্যায়ন।
যদি কোনো ঈমানদার লোক আত্ম অনুসন্ধানের জন্য প্রতিদিন সামান্য সময় না পান, তিনি অন্তত কয়েক দিন পরপর কিংবা সপ্তাহে একবার হলেও এ কাজ করার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত। এই পন্থায়, মানুষ তার আধ্যাত্মিক সম্পদ ও দায় তুলে ধরে নিজ জীবনের ব্যালেন্স শিট তৈরি করতে পারে।
প্রতি মাসের শেষে নিজের হিসাব নেয়ার জন্য একজন মুমিনের আরো দীর্ঘ সময় থাকা উচিত। এর চেয়েও বেশি সময় তার দেয়া দরকার বর্ষশেষে আত্মসমালোচনার জন্য। তখন একটি বছরকে বিদায় জানিয়ে আরেকটির প্রস্তুতি নিতে হয়। পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে অতীতের মূল্যায়ন এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করার সময় এটাই। একজনের ‘চূড়ান্ত বার্ষিক আধ্যাত্মিক হিসাব’ বলা যায় এটাকে।
পাশ্চাত্য একটি নিন্দনীয় প্রথা চালু করেছে, যা দুর্ভাগ্যজনকভাবে কিছু মুসলমানও পালন করে থাকে। তা হচ্ছে জন্মবার্ষিকী উদযাপন। এ উপলক্ষে লোকজনকে দাওয়াত করে উপাদেয় খাদ্য-পানীয় পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠানে কয়েকটি মোমবাতি জ্বালানো হয়। যার জন্মদিবস, তার যত বছর বয়স হলো, ততটা মোমবাতি জ্বালানো হয়। তদুপরি, উপহার দেয়া হয় তাকে। এর সাথে চলে হাসি-তামাশা। পাশ্চাত্যের এমন অন্ধ ও অপ্রয়োজনীয় অনুকরণের চেয়ে বেশি প্রয়োজন হলো, জ্ঞানী ব্যক্তিরা উপলক্ষটির সদ্ব্যবহার করবেন। জন্মবার্ষিকী মানে আয়ু থেকে একটি বছর ফুরিয়ে যাওয়া। তাই জন্মদিবসে নিজ জীবন নিয়ে চিন্তাভাবনা এবং নিজের কর্মকাণ্ড পুনর্বিবেচনা করে দেখাই আবশ্যক।
প্রতি বছরের শেষে একজন সাবধানী ব্যবসায়ী একটু বিরতি দেন। বিগত বছরের ততপরতার হিসাব-নিকাশ করে নিজের সর্বশেষ আর্থিক অবস্থান নির্ণয় করাই এর উদ্দেশ্য। তিনি জানতে চান, তার লাভক্ষতি, দায় ও সম্পদের বিষয়ে। একইভাবে, ঈমানদারদের উচিত নিজ নিজ জীবনের গত এক বছরের হিসাব নেয়া। আর এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা তাদের জিজ্ঞেস করবেন।
একটি বছর কম সময় নয়। বারো মাসে এক বছর। সাধারণত ত্রিশ দিনে এক মাস। প্রতিটি দিনে থাকে চব্বিশ ঘণ্টা। ষাট মিনিট নিয়ে একেকটি ঘণ্টা এবং ষাট সেকেন্ডে একেক মিনিট গঠিত হয়। আর প্রত্যেক সেকেন্ডকে গণ্য করা উচিত আল্লাহর পক্ষ থেকে আশীর্বাদ ও অনুগ্রহ হিসেবে। একেক সেকেন্ড একেকটি আমানত।
আল্লাহ হাসান আল বসরির প্রতি করুণা বর্ষণ করুন, যখন তিনি বলেন, ‘হে আদম সন্তান! তুমি হলে কিছু দিনের সমষ্টি। একেকটি দিন চলে যাওয়া মানে তোমার একেক অংশ হারিয়ে যাওয়া।’
আবু আলী আদ দাককাক এই দু’টি পঙ্ক্তি আবৃত্তি করতেন:
একেক দিবস হয় বিগত,
একাংশ মোর যায় নিয়ে;
উড়ে যায় সে,
হৃদয় মাঝে তিক্ত বিস্বাদ যায় দিয়ে।
মূল: ড. ইউসুফ আল কারাযাভী
“Self-criticism and negative thoughts about yourself will attract people who reflect this back to you, showing critical behavior and can abuse you physically.”
― Hina Hashmi, Your Life, a Practical Guide to Happiness Peace and Fulfillment
“যে সত হয় নিন্দা তার কোন অনিষ্ট করতে পারে না!”-শেখ সা’দী