জীবনের ২টি বড় যোদ্ধার নাম ১. ধৈর্য আর ২. সময়। তাই মনে রাখবে বড় কিছু পেতে গেলেই সময় লাগবে। রাতরাতি কখনোই সফলতা আসেনা।
কু’রআনে এমন কিছু আয়াত রয়েছে যেগুলো আমাদেরকে জীবনের বাস্তবতা মনে করিয়ে দেয়। কিছু আয়াত রয়েছে যা আমাদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়: আমরা কীভাবে নিজেরাই নিজেদের জীবনটাকে কষ্টের মধ্যে ফেলে দিই। আর কিছু আয়াত রয়েছে যা আমাদেরকে জীবনের সব দুঃখ, কষ্ট, ভয় হাসিমুখে পার করার শক্তি যোগায়।
কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ইয়া আইয়ুহাল্লাজিনা আমানুছতাঈনু বিছছবরি ওয়াছ ছলাতি; ইন্নাল্লাহা মাআছ ছাবিরিন।’ অর্থ: হে মুমিনগণ! ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। (পারা: ২, সূরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৫৩)।
ধৈর্যের গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআন মজিদে বলেছেন, ‘মহাকালের শপথ, মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্তু তারা
নয়, যারা ইমান আনে ও সতকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়। (পারা: ৩০, সূরা-১০৩
আসর, আয়াত: ১-৩)।
নয়, যারা ইমান আনে ও সতকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়। (পারা: ৩০, সূরা-১০৩
আসর, আয়াত: ১-৩)।
হিলম তথা সহিষ্ণুতা সম্পর্কে মহাগ্রন্থ আল কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ওয়া ইন্নাল্লাহা লাআলিমুন হালিম’ অর্থাত এবং আল্লাহই তো সম্যক প্রজ্ঞাময়, পরম সহনশীল। (পারা: ১৭, সূরা-২২ হজ, আয়াত: ৫৯)। ছবর, অর্থাত ধৈর্য সম্পর্কে কোরআন মজিদে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ইন্না ওয়াজাদনাহু ছাবিরা; নিমাল আবদু, ইন্নাহু আউওয়াব’। অর্থ: আমি তো তাকে পেলাম ধৈর্যশীল। কত উত্তম বান্দা সে! সে ছিল আমার অভিমুখী। (পারা: ২৩, সূরা-৩৮ সাদ, আয়াত: ৪৪)। ‘ইন্না ফি জালিকা লাআতিল লিকুল্লি ছব্বারিন শাকুর’ অর্থ: নিশ্চয় এতে তো নিদর্শন রয়েছে প্রত্যেক পরম ধৈর্যশীল ও পরম কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য। (পারা: ১৩, সূরা-১৪ ইবরাহিম, আয়াত: ৫)।
ধৈর্য মানবজীবনে পরীক্ষাস্বরূপ। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জাত কোরআনুল আজিমে বলেন, ‘তাবারকাল্লাজি বিইয়াদিহিল মুলকু ওয়া হুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কদির। আল্লাজি খলাকাল মাওতা ওয়াল হায়াতা, লিইয়াবলুওয়াকুম আইয়ুকুম আহ্ছানু আমালা; ওয়া হুওয়াল আজিজুল গফুর।’ অর্থ: মহামহিমান্বিত তিনি সর্বময় কর্তৃত্ব যাঁর করায়ত্ত; তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদিগকে পরীক্ষা করার জন্য—কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল। (পারা: ২৯, সূরা-৬৭ মুলক, আয়াত: ১-২)।
তাদের ওপর বিপদ আপতিত হলে বলে, (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) ‘আমরা তো আল্লাহর এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী’। (পারা: ২, সূরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৫৫-১৫৭)।
আজও আমরা বিপদ-আপদে পড়লে পড়ি, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ (নিশ্চয় আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে আমরা তাঁর নিকটেই প্রত্যাবর্তনকারী)। কিন্তু এটি আমরা পড়ি অধৈর্য হয়ে পড়লে তখনই। মূলত আমরা এর দর্শন ভুলে গিয়ে এটিকে প্রথায় পরিণত করেছি।
আজও আমরা বিপদ-আপদে পড়লে পড়ি, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ (নিশ্চয় আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে আমরা তাঁর নিকটেই প্রত্যাবর্তনকারী)। কিন্তু এটি আমরা পড়ি অধৈর্য হয়ে পড়লে তখনই। মূলত আমরা এর দর্শন ভুলে গিয়ে এটিকে প্রথায় পরিণত করেছি।
হজরত মুহাম্মদ (সা.)কে উদ্দেশ করে কোরআন কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ফাছবির লিহুকমি রব্বিকা ওয়া লা তাকুন কাছাহিবিল হুত, ইজ নাদা ওয়া হুওয়া মাকজুম।’ অর্থ: অতএব, তুমি ধৈর্য ধারণ করো তোমার প্রতিপালকের নির্দেশের অপেক্ষায়, তুমি মৎস্য-সহচরের (ইউনুস আলাইহিস সালাম) ন্যায় অধৈর্য হয়ো না, সে বিষাদ আচ্ছন্ন অবস্থায় কাতর প্রার্থনা করেছিল। (পারা: ২৯, সূরা-৬৮ কলম, আয়াত: ৪৮)।
আমাদের উচিত সকল অনভিপ্রেত অবস্থায়, যেকোনো অযাচিত পরিবেশে ও অনাহূত পরিস্থিতিতে নিজেকে সংযত রেখে দৃঢ়তার সঙ্গে লক্ষ্যপানে এগিয়ে যাওয়া। তবেই আল্লাহর সাহায্য আমাদের সাথি হবে, আল্লাহ আমাদের সঙ্গী হবেন।
যেমন, হজরত মুসা (আ.) নদীপাড়ে এসে নদী পারাপারের উপায় না দেখে সমূহ বিপদ দর্শনে উম্মতকে সান্ত্বনা দিয়ে দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে দৃপ্তকণ্ঠে বলেছিলেন, ‘কালা কাল্লা! ইন্না মায়িয়া রব্বি ছাইয়াহদিন।’ অর্থ: (মুসা আলাইহিস সালাম) বলল, ‘কখনোই নয়! (আমরা ধরা পড়ব না, পরাজিতও হব না, কারণ) আমার সঙ্গে আছেন আমার প্রতিপালক; সত্বর তিনি আমাকে পথনির্দেশ করবেন।’ (পারা: ১৯, সূরা-২৬ শোআরা, আয়াত: ৬২)।
যেমন, হজরত মুসা (আ.) নদীপাড়ে এসে নদী পারাপারের উপায় না দেখে সমূহ বিপদ দর্শনে উম্মতকে সান্ত্বনা দিয়ে দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে দৃপ্তকণ্ঠে বলেছিলেন, ‘কালা কাল্লা! ইন্না মায়িয়া রব্বি ছাইয়াহদিন।’ অর্থ: (মুসা আলাইহিস সালাম) বলল, ‘কখনোই নয়! (আমরা ধরা পড়ব না, পরাজিতও হব না, কারণ) আমার সঙ্গে আছেন আমার প্রতিপালক; সত্বর তিনি আমাকে পথনির্দেশ করবেন।’ (পারা: ১৯, সূরা-২৬ শোআরা, আয়াত: ৬২)।
ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা হচ্ছে তিন ভাগে বিভক্ত।
এক. বিপদের সময় ধৈর্য।
দুই. আল্লাহর নির্দেশ পালনের ক্ষেত্রে ধৈর্য।
তিন. পাপকার্য থেকে বিরত থাকার ক্ষেত্রে ধৈর্য।
একবার রাসুলে করিম (সা.) এক মহিলার পাশ দিয়ে অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন। তিনি একটি কবরের পাশে বসে কাঁদছিলেন। তিনি তাকে বলেন, ‘আল্লাহকে ভয় কর এবং ধৈর্য ধারণ কর।’ সে বলল, নিজের পথে কেটে পড়। তুমি তো আর আমার মতো বিপদে পড়নি। সে নবী করিম (সা.) কে চিনতে পারেনি। তাকে বলা হলো, তিনি নবী রাসুলুল্লাহ (সা.)। ফলে সে (ভীত-শঙ্কিত হয়ে) নবী করিম (সা.) এর বাড়ির দরজায় হাজির হলো। সেখানে সে কোনো দ্বাররক্ষী দেখতে পেল না। সে বলল, আমি আপনাকে চিনতে পারিনি। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘বিপদের প্রথম আঘাতে ধৈর্য ধারণই হচ্ছে প্রকৃত ধৈর্য।’ (বুখারি: ৬৭৩৫)।
আবূ মালিক হারিস ইবনু ‘আসেম আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘পবিত্রতা অর্ধেক ঈমান। আর ‘আলহামদু লিল্লাহ’ (কিয়ামতে নেকীর) দাঁড়িপাল্লাকে ভরে দেবে এবং ‘সুবহানাল্লাহ’ ও ‘আলহামদু লিল্লাহ’ আসমান ও যমীনের মধ্যস্থিত শূন্যতা পূর্ণ করে দেয়। নামায হচ্ছে জ্যোতি। সাদকাহ হচ্ছে প্রমাণ। ধৈর্য হল আলো। আর কুরআন তোমার স্বপক্ষে অথবা বিপক্ষে দলীল। প্রত্যেক ব্যক্তি সকাল সকাল সবকর্মে বের হয় এবং তার আত্মার ব্যবসা করে। অতঃপর সে তাকে (শাস্তি থেকে) মুক্ত করে অথবা তাকে (আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত ক’রে) বিনাশ করে।’’
সহীহুল বুখারী ২২৩, মুসলিম ৩৫১৭, ইবনু মাজাহ ২৮০, আহমাদ ২২৩৯৫, ২২৪০১, দারেমী ৬৫৩
ধৈর্য ধারণের মতো কঠিক কাজের পুরস্কারও অপরিসীম। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদের অগণিত পুরস্কার দেওয়া হবে।’ (সূরা জুমার: ১০)। ধৈর্য ধারণের মাধ্যমে বিপদ-আপদ মোকাবিলার মাঝে রয়েছে আল্লাহর অপার সন্তুষ্টি ও পুরস্কার। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘পূর্ব ও পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফেরানোতে কোনো পুণ্য নেই; কিন্তু পুণ্য আছে অর্থ সংকটে, দুঃখ-ক্লেশে ও সংগ্রামে-সংকটে ধৈর্য ধারণ করলে।’ (সূরা বাকারা: ১৭৭)।
রেফারেন্স:
আল কুরআন
আল হাদীস
No comments:
Post a Comment