আমরা দিনের পর দিন রোদ থেকে বাঁচার উপায় খুঁজে চলেছি সানস্ক্রিন লোশনে,
ছাতায়, এয়ার কন্ডিশনার সমৃদ্ধ ঘরে! অথচ প্রতিদিন আধঘণ্টা রোদে বেরোলে হাজারো উপকার মেলে।
বাংলায় “অসূর্যস্পশ্যা”
নামে একটা কথা চালু আছে। শব্দটির বাংলা অর্থ— সূর্যের মুখ দেখেনি এমন
অন্তঃপুরবাসিনী! এই বিশেষণটি নারীবিশেষে ব্যবহার হলেও এখন পুরুষ-স্ত্রী সকলেই
সূর্যের স্পর্শ থেকে দূরেই থাকেন।
রোজই সূর্য ওঠে। অথচ তার মুখ আমরা
ক’জনই বা দেখি! মুখ দেখা দূরে থাক, গায়ে রোদ লাগাতেই প্রবল অনীহা আমাদের!
অথচ কী আশ্চর্য ব্যাপার দেখুন, বাজারে একটা তেলের সঙ্গে পাউডার ফ্রি থাকলে
আমরা দেড়গুণ দাম দিয়ে তেলের বোতল কিনে ফেলি! অথচ প্রকৃতির রোদ, বিনামূল্যে
স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী অজস্র উপাদান বিলিয়ে দিলেও আমরা নিতে চাইছি না! বরং
উল্টে গায়ে যাতে রোদ না লাগে, সেইজন্য গায়ে লেপ্টে মেখে নিচ্ছি সানস্ক্রিন লোশন!
অবশ্য রোদের ভয়টা একেবারে অমূলক নয়। কারো কারো ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ত্বকে রোদ পড়লে
কিছু সমস্যা হয়। উদাহরণ হিসেবে—
ফটো পিগমেনটেশন বা ত্বকে
গাঢ় কালো দাগ, ঘামাচি, ফোস্কা পড়ে যাওয়া, ট্যান, ফটো অ্যালার্জির কথা বলা যায়। তবে
এই ধরনের রোগীর সংখ্যা অনেক নয়। বরং কিছু নিয়ম মেনে গায়ে রোদ লাগালে লাভবান হবেন
সিংহভাগ মানুষ। অথচ আমরা বুঝতেই চাইছি না যে রোদের প্রতি ভবিষ্যতে এই উন্নাসিকতার
ফলাফল বড় ভয়াবহ হতে চলেছে! কারণ রোদ গায়ে লাগালে পাওয়া যায় অসংখ্য সুফল।
আর রোদ ত্যাগ করলে কুফল।
আর রোদ ত্যাগ করলে কুফল।
আপাতত সুফলের দিকে তাকাই —
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: কিছু সমীক্ষার রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, গায়ে রোদ লাগলে ‘টি সেল’গুলি প্রবলভাবে সক্রিয় হয়ে পড়ে। মনে রাখতে হবে, এই ‘টি সেল’ আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা নেয়। সংক্রমণের জায়গায় পৌঁছে সেখানকার সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে বা সরাসরি জীবাণুর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয় টি সেল। তাই টি সেলের সক্রিয়তা বজায় থাকা দরকার।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: কিছু সমীক্ষার রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, গায়ে রোদ লাগলে ‘টি সেল’গুলি প্রবলভাবে সক্রিয় হয়ে পড়ে। মনে রাখতে হবে, এই ‘টি সেল’ আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা নেয়। সংক্রমণের জায়গায় পৌঁছে সেখানকার সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে বা সরাসরি জীবাণুর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয় টি সেল। তাই টি সেলের সক্রিয়তা বজায় থাকা দরকার।
ভিটামিন ডি: একমাত্র ভিটামিন ডি ত্বকে তৈরি হয় হয় রোদ পাওয়ার
পরেই! ভিটামিন ডি-এর অভাবে অকালে হাড় ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। এছাড়া সাম্প্রতিক কিছু
গবেষণায় জানা যাচ্ছে, শরীরে ভিটামিন –ডি এর অভাবে মিসক্যারেজ হওয়ার আশঙ্কাও থেকে
যায়।
অথচ সামান্য গায়ে রোদ লাগালে এই ধরনের সমস্যা এড়ানো সম্ভব!
বিদেশের বেশ কিছু গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, গ্রীষ্মে গায়ে ভালোভবে রোদ লাগালে রক্তে
ভিটামিন ডি ৩-এর মাত্রা ভালো থাকে। শীতকালে এই ভিটামিন ডি ৩ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে
ভিটামিন ডি পাওয়া যায়!
ক্যান্সার প্রতিরোধে : বেশ কিছু সমীক্ষায় দাবি করা হচ্ছে
ব্রেস্ট, কোলোন এবং প্রস্টেট ক্যান্সার রোধে সাহায্য করে সূর্যের আলো।
ঘুমের হর্মোন: আমাদের শরীরের মেলাটোনিন নামে একটি হর্মোন
ক্ষরিত হয়, যার কারণে আমাদের ঘুম আসে।
দিনের বেলায় প্রকৃতির উজ্জ্বল আলোয় কাজ করলে রাতে মেলাটোনিন
ক্ষরণ ভালো হয়। খুব ভালো হয় ভোরের আলোয় জেগে উঠে দিন শুরু করলে। মেলাটোনিন আমাদের
শারীরবৃত্তীয় ঘড়িটিকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
মন ভালো রাখতে: সঠিকভাবে সূর্যের আলো গায়ে পড়লে আমাদের শরীরে
এন্ডোর্ফিন নামের হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হর্মোনের কারণে আমাদের মেজাজ ভালো থাকে।
জানার বিষয় হল, এন্ডোর্ফিন হর্মোন ব্যথা-যন্ত্রণা কমাতে সাহায্য করে। ডিপ্রেশন বা
অবসাদ কাটাতেও রোদ খুব উপকারী।
রক্তচাপ কমাতে: রোদে থাকে
অতিবেগুনি রশ্মি। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, এই রশ্মির সংস্পর্শে আসলে ত্বক
থেকে নাইট্রিক অক্সাইড নিঃসৃত হয়। এই রাসায়নিকটি রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
পুরুষ হর্মোন: বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, পুরুষের রক্তে টেস্টোস্টেরন হর্মোনের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে যখন ভিটামিন ডি-এর মাত্রা অনুকূলে থাকে। আর ভিটামিন ডি’র প্রধান উতস হলো সূর্যালোক!
পুরুষ হর্মোন: বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, পুরুষের রক্তে টেস্টোস্টেরন হর্মোনের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে যখন ভিটামিন ডি-এর মাত্রা অনুকূলে থাকে। আর ভিটামিন ডি’র প্রধান উতস হলো সূর্যালোক!
শ্বেতি সারাতে রোদ:
আমাদের ত্বকে আছে মেলানোসাইট নামে কোষ। এই কোষ মেলানিন তৈরি করে। মেলানিন হল
একধরনের রঞ্জক পদার্থ। এই রঞ্জক পদার্থের কারণে আমাদের দেহের রং কালো হবে না ফর্সা
হবে তা নির্ভর করে। মেলানিন আসলে আমাদের ত্বক রক্ষা করে। আমরা যখন রোদে বের হই,
তখন অতিবেগুনি রশ্মি আমাদের ত্বকে পড়ে। এই রশ্মির কিছু কিছু খারাপ প্রভাবও আছে।
সেই খারাপ প্রভাব থেকে আমাদের ত্বককে বাঁচাতে মেলানোসাইট কোষগুলি উদ্দীপিত হয়ে যায়
ও বেশি করে মেলানিন তৈরি করে। এই কারণে রোদে বেরনোর পর কারও কারও ত্বক লাল লাল বা
কালচে হয়ে যায়। শ্বেতি রোগে মেলানিন উতপাদনে সমস্যা হয়। তাই ত্বকে এই ধরনের সমস্যা
হলে চিকিতসক রোগীকে রোদে থাকতে বলেন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য।
ছোটদের জন্য রোদ্দুর
উচ্চতা বৃদ্ধিতে: কিছু ক্ষেত্রে বাচ্চাদের গ্রোথ হর্মোনের ঘাটতি থাকে। এদের উচ্চতা বৃদ্ধিতে সমস্যা হয়। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, তাঁদের চিকিতসার সময় দৈহিক বৃদ্ধির হার গ্রীষ্মকালে বেড়েছে! তাছাড়া ভিটামিন ডি ত্বকে তৈরি হয় আলট্রা ভায়োলেট-রে পড়ার পরই। ভিটামিন ডি হাড়ের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ফলে উচ্চতাও বাড়ে।
ছোটদের জন্য রোদ্দুর
উচ্চতা বৃদ্ধিতে: কিছু ক্ষেত্রে বাচ্চাদের গ্রোথ হর্মোনের ঘাটতি থাকে। এদের উচ্চতা বৃদ্ধিতে সমস্যা হয়। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, তাঁদের চিকিতসার সময় দৈহিক বৃদ্ধির হার গ্রীষ্মকালে বেড়েছে! তাছাড়া ভিটামিন ডি ত্বকে তৈরি হয় আলট্রা ভায়োলেট-রে পড়ার পরই। ভিটামিন ডি হাড়ের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ফলে উচ্চতাও বাড়ে।
ছোটদের জন্ডিস : বাচ্চারা জন্মের পরই অনেক সময় জন্ডিসে
আক্রান্ত হয়। এই জন্ডিস সারাতেও রোদ ভালো কাজে দেয়। তবে সরাসরি শিশুকে রোদে রাখলে
চলবে না। বরং কাচের পাল্লা দেওয়া জানলার তলায় শিশুকে রাখুন মিনিট দশেক। বাচ্চা
ভালো থাকবে।
কখন রোদে বেরোবেন: সকাল ১১টার পর অতিবেগুনি রশ্মির তলায় না
যাওয়ায় ভালো। তাই সকাল ৮টার পর আধ ঘণ্টা রোদে কাটান। ওই সময়ে অতিবেগুনি রশ্মির
প্রভাব কম থাকে। ছোটরা মিনিট ১৫ রোদে কাটালেই চলবে। তবে একটু বড় বয়সের বাচ্চাকে
রোদে খেলতে দিন। সমস্যা নেই।
সূত্র: dailynayadiganta
No comments:
Post a Comment