Wednesday, June 12, 2019

গীবত ও পরনিন্দা থেকে বাঁচো -ইসলাম এটা চায়। তা না হলে জান্নাতের সুগন্ধ কোন ভাবেই পাবে না

পরনিন্দা বা Libel বিষয়ে অভিধান যা বলে: Libel is a method of defamation expressed by print, writing, pictures, signs, effigies, or any communication embodied in physical form that is injurious to a person's reputation, exposes a person to public hatred, contempt or ridicule, or injures a person in his/her business or profession.
পরনিন্দার অন্য অর্থ হতে পারেঃ
১. পরনিন্দা Slander-is an untrue defamatory statement that is spoken orally. মুখে মুখে অপমানকর কথা বলা যা অসত্য।
২. পরনিন্দা Defamation- is a false statement presented as a fact that causes injury or damage to the character of the person it is about. হীন কথা বলা যা কোন মানুষের চরিত্রের ওপর আঘাত হানে।
পরনিন্দা অর্থ হচ্ছে কারো অগোচরে বা আড়ালে তার দোষ অপরের কাছে বলে বেড়ানো যা পরবর্তীতে সে শুনলে অসন্তুষ্ট হয় বা কষ্ট পায়। এক শ্রেণীর লোক আছে যাদের স্বভাবই হচ্ছে পরের নিন্দা করা। আবার এমনও লোক সমাজে আছে যারা পরনিন্দা করে খুব মজা বা আনন্দ পায় এবং পাশাপাশি নিজেকে লোক সমাজে একজন ভাল মানুষ হিসেবে জাহির করেন। এটা তাদের মজ্জাগত স্বভাব বললে ভুল হবে না। আসলে পরনিন্দা করা বা পরের দোষ-ত্রুটি অন্যের নিকট প্রকাশ করা আমাদের কারোরই উচিত নয়। কারণ পরনিন্দা করা পাপ। আর পরনিন্দা না করা সুন্দর চরিত্রের অন্যতম বিশেষ গুণ। এই পরনিন্দা একটি সুস্থ ও সুন্দর সমাজ জীবনের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বা হানিকর। ইসলাম ধর্মে পরনিন্দাকে ব্যভিচার অপেক্ষা মারাত্মক অপরাধ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। হাদীসে বর্ণিত আছে “পরনিন্দুক বেহেশতে যেতে পারে না”। একমাত্র আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ব্যতীত সকল মানুষেরই কম-বেশি দোষ-গুণ রয়েছে। প্রকৃত পক্ষে যারা ভাল অর্থাত ইহকাল ও পরকালের চিন্তা করে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) কে বিশ্বাস করে তাঁরা অন্যের দোষ খুঁজে না বা পরনিন্দা করে না। পক্ষান্তরে যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (সা.) কে বিশ্বাস করে না এবং ইহকাল ও পরকাল সম্পর্কে চিন্তা করে না তারাই অন্যের দোষ খোঁজে এবং পরনিন্দায় লিপ্ত থাকে। বাস্তবিক ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে, যে ব্যক্তি পরনিন্দা করে সমাজে তাকে ভাল চোখেও দেখে থাকে। কিন্তু কেন? বুঝতে হবে, যে ব্যক্তি একজনের নিন্দা অন্যের কাছে বলে বেড়ায় সে ব্যক্তি সকলের নিন্দা সকলের কাছে বলে বেড়ায় কাউকে বাদ দিয়ে নয়। কেননা পরনিন্দা করা তার স্বভাব। “যে ব্যক্তি তোমার নিকট পরনিন্দা করে সে নিশ্চয়ই অন্যের সাক্ষাতে আপনার নিন্দা করবেই করবে।” প্রকৃত পক্ষে পরনিন্দুক গুজবে কান দিয়ে থাকে এবং সেই গুজবকে আরো ছড়িয়ে দেয়। সে প্রতি মুহূর্তে কথা-বার্তায় অন্যদের কঠিন সমালোচনা করে থাকে যা হীনমন্যতারই বহিঃপ্রকাশ।
গীবত,পরনিন্দা বা অন্যের দোষ চর্চা এমন একটি গুনাহ যার ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসে অনেক সতর্ক বাণী এসেছে। গীবত ও পরনিন্দা কঠিন বড় একটি গুনাহ। নীচের উপদেশগুলা দেখুনঃ
১) হযরত থানবী (রহ.) বলেন, কারো গীবত করে ফেললে যার গীবত করা হয়েছে তার কাছে গিয়ে জানাবে যে, আমি আপনার গীবত করে ফেলেছি। আমাকে মাফ করে দিন।
২) মুখ খোলার পূর্বে চিন্তা করা যে, যা বলতে যাচ্ছি তাতে গুনাহ হবে না তো?
৩) মেয়েদের গীবত রোগের বড় চিকিতসা হলো, এক স্থানে জমা না হওয়া। কেননা, তারা বাড়ী একাকী থাকলে গীবত হয় না। কিন্তু যেই বাইরে যায় বা বাড়ীতে অন্য মেয়েরা আসে তখনই গীবত-শেকায়েত শুরু হয়।
৪) ভাল কথাও বেশি না বলা। কেননা, ভাল কথা দীর্ঘ হলে মাঝে মাধ্যে অসতর্কবশত দোষ বের হয়ে যায়।
৫) অপরকে সব সময় নিজের থেকে ভালো মনে করা। ফলে তার দোষ চোখে না পড়ায় পরে তার গীবত হবে না।
৬) যেসব মহিলা গীবতে অভ্যস্ত, তাদের কাছে না যাওয়া। গেলেও গীবত করার সুযোগ না দেয়া।
৭) গীবত করতে মনে চাইলে গীবতের দুনিয়াবী ও পরকালীন পরিণতি সম্পর্কে চিন্তা করা।
গীবতের পরিণাম সম্পর্কে নবি করিম (সা.) আরো বলেছেন, ‘আগুন যেমন শুকনো কাঠ জ্বালিয়ে ভস্মীভূত করে ফেলে, গীবতও তদ্রূপ মানুষের সওয়াবসমূহ ধ্বংস করে ফেলে।’
ইমাম গাযযালী (রা.) তার ‘কিমিয়ায়ে সা’দাত’ গ্রন্থে গীবতের সংজ্ঞা দিয়ে বলেছেন, অন্যের দেহ, বংশ, বসন-ভূষণ, ভাবভঙ্গি, ক্রিয়াকলাপ, কথোপকথন ও গৃহের কোনো দোষ বের করে কিছু বললেই তাকে গীবত বলে।
দীর্ঘ দেহবিশিষ্ট লোককে লম্বু, খর্ব লোককে বামুন, কালো লোককে নিগ্রো, উজ্জ্বল লোককে সাদা, টেরা ইত্যাদি বললে দেহ সম্পর্কে গীবত হয়ে যায়। কোনো ব্যক্তিকে কোনো হীন পেশাদারের সন্তান বললে তার বংশ সম্বন্ধে গীবত হয়ে যায়। কাউকে নিন্দুক, মিথ্যাবাদী, গর্বিত, কাপুরুষ, অলস ইত্যাদি বললে তার প্রকৃতি সম্পর্কে গীবত করা হয়। কাউকে বিশ্বাসঘাতক, আমানত খেয়ানতকারী, অসংযমী, অতিরিক্ত আহারকারী, হারামখোর, অধিক নিদ্রা যায়, পোশাক পরিচ্ছদ পরিষ্কার রাখে না, আয় অনুযায়ী ব্যয় করে না ইত্যাদি তার ক্রিয়াকলাপ সম্বন্ধে গীবত। কারো সম্পর্কে যদি বলা হয়, তার পোশাক বেসামাল, আস্তিন ঢিলা, আচল দীর্ঘ তা হলে তার বসন-ভূষণ সম্পর্কে গীবত করা হলো। গীবত কেবল মুখ দ্বারাই হয় না। চোখ, হাত এবং ইঙ্গিত দ্বারাও গীবত হয়ে থাকে। সব ধরনের গীবতই হারাম। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি একদিন মহানবির নিকট ইশারায় প্রকাশ করেছিলাম যে, অমুক মহিলা বেটে। নবী করিম (সা.) বললেন, হে আয়েশা তুমি গীবত করলে।’
গীবত করা যেমন নিষেধ তেমনি গীবত শোনাও নিষেধ। যে গীবত শুনে, সেও গীবতের পাপের অংশীদার হয়ে যায়। গীবত শোনাও যে পাপ তার সমর্থনে হাদিস হচ্ছে- ‘একদিন হযরত আবু বকর (রা.) ও হযরত উমর (রা.) একসাথে সফর করছিলেন। এমন সময় একজন অপরজনকে বললেন, ‘অমুক ব্যক্তি অতিরিক্ত নিদ্রা যায়।’ তারপর তারা রুটি খাবার জন্য তরকারি চাইলে, নবী করিম (সা.) বললেন, ‘তোমরা উভয়েই তো তরকারি খেয়েছো।’ তারা বললেন, কি খেয়েছি আমরা জানি না। নবী করীম (সা.) বললেন, ‘তোমরা নিজের ভাইয়ের মাংস খেয়েছো’। এ হাদিস থেকে জানা যায়, ‘অমুক ব্যক্তি অতিরিক্ত নিদ্রা যায়’ কথাটি একজন বলেছেন অন্যজন শুনেছেন। অথচ নবী করীম (সা.) উভয়কে গীবতের অপরাধী করলেন।
গীবত বা পরনিন্দাকে নবী করিম (সা.) অত্যন্ত কঠোর ভাষায় নিন্দা করেছেন এবং এর পরিণাম সম্পর্কে তার উম্মাহকে অবহিত করেছেন। হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে তিনি বলেন, ‘ঈসা ইবনে মালিকিনা আসলামী নবি করিম (সা.)-এর নিকট এসে চতুর্থবারের মতো ব্যভিচারের স্বীকারোক্তি দেয়ায়, তিনি তাকে প্রস্তরাঘাতে হত্যার আদেশ দেন। অতঃপর নবি করিম (সা.) ও কতিপয় সাহাবা (রা.) তার পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তখন তাদের মধ্য থেকে একজন বলে উঠলেন, এই বিশ্বাসঘাতকটা কয়েকবারই নবী করিম (সা.)- এর নিকট আসে এবং প্রত্যেকবারই রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে ফিরে যেতে বলেন, অতঃপর যেভাবে কুকুর হত্যা করা হয়, তেমনি তাকে হত্যা করা হয়। নবী করীম (সা.) এ কথা শুনে মৌনতা অবলম্বন করেন। এরপর তারা যখন একটি মৃত গাধার পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন এবং গাধাটি ফুলে যাওয়ায় এর পাগুলো উপরের দিকে উঠেছিলো, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তোমরা দুজনে এটা খাও। তারা বললেন, গাধার মৃত দেহ খেতে বলেছেন হে রাসুল! তিনি বললেন, কেনো তোমাদের ভাইয়ের সম্মানহানীর মাধ্যমে ইতিপূর্বে তোমরা যা অর্জন করেছো, তা এর তুলনায় অধিক বেশি গর্হিত!’
গীবত পরিহার করে চলা কঠিন কোনো কাজ নয়। নবি করিম (সা.) এটাকে কোনো কঠিন কাজ বলে মনে করেননি। হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, ‘একদিন আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)- এর সাথে ছিলাম। তিনি এমন দুটি কবরের পাশে উপনীত হলেন যেগুলোর অধিবাসিরা আজাবে লিপ্ত ছিল। তিনি বললেন, ‘এরা কোনো কঠিন বা গুরুতর ব্যাপারে শাস্তি পাচ্ছে না। তাদের মধ্যে একজন লোক গীবত করে বেড়াতো, আর অপরজন পেশাব হতে সতর্ক থাকতো না। অতঃপর তিনি একটি কিংবা দু’টি তাজা খেজুরে ডাল এনে তা ভেঙে কবরের উপর গেড়ে দিতে নির্দেশ দিয়ে বললেন, যতক্ষণ পর্যন্ত এ ডাল দুটি তাজা থাকবে কিংবা শুকিয়ে যাবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের শাস্তি হালকা করে দেয়া হবে।’
ইমাম গাযযালী (রা) তার রচিত কিমিয়ায়ে সাদাত নামক গ্রন্থে গীবত থেকে বাঁচার কিছু উপায় ও প্রতিষেধক বর্ণনা করেছেন। তিনি গীবতকে একটি রোগ বা অসুখ বলে আখ্যায়িত করে এ রোগের জ্ঞানমূলক ও অনুষ্ঠানমূলক দুটি ওষুধের কথা বলেছেন-
এক. জ্ঞানমূলক ওষুধ হচ্ছে- পবিত্র কুরআন ও হাদিসে গীবতের ক্ষতি ও অনিষ্ট সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তার মর্ম উপলব্ধি করে তার ওপর দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস স্থাপন করা। দ্বিতীয়ত নিজের দোষ অনুসন্ধান করা। নিজের দোষ বের হওয়ার পর মনে করতে হবে, আমার ন্যায় অন্যেরও দোষ থাকা অসম্ভব নয়। নিজে যেহেতু দোষ থেকে বাঁচতে পারিনি, সেহেতু অন্যের দোষ দেখে এতো বিস্মিত হওয়ার কি আছ।
দুই. মানুষ যেসব কারণে গীবত করে তার প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
মানুষ যেসব কারণে গীবত করে ইমাম গাযযালী (রা.) এর সংখ্যা আটটি উল্লেখ করেছেন-
১. ক্রোধ, কেউ কারো প্রতি ক্রোধাম্বিত হলে সে তার গীবতে লিপ্ত হয়। সুতরাং ক্রোধ দমন করলেই এসব গীবত থেকে বাঁচা যায়।
২. কারো সন্তুষ্টি লাভের জন্য ওই ব্যক্তির শত্রুদের গীবত করা হয়। এ অবস্থায় মনে করতে হবে কোনো মানুষের সন্তুষ্টি লাভের জন্য আল্লাহতালার অসন্তুষ্টি অর্জন করা নির্বুদ্ধিতা ও মূর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়।
৩. নিজের দোষ হতে বাঁচার জন্য অপরের দোষ উদঘাটন, নিজের দোষ ঢাকার জন্য অপরের দোষ প্রকাশ করে আল্লাহতালার অসন্তুষ্টি অর্জন করা কখনো সঙ্গত হতে পারে না। এটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
৪. নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশের জন্য অন্যের নিন্দা করা। অনেকে নিজেকে জ্ঞানী হিসেবে উপস্থাপনের জন্য বলে থাকে, অমুকে এ ব্যাপারে কিছুই বোঝে না। এসব উক্তিতে মূর্খ ও দুর্বলেরা তার ভক্ত হলেও জ্ঞানী ও বুদ্ধিমানেরা তার ভক্ত হয় না। মূর্খ ও দুর্বলদের কাছে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করার জন্য পরম পরাক্রমশালী আল্লাহতা’আলার বিরাগভাজন হওয়া কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
৫. নিজের যোগ্যতা দিয়ে যারা মান-সম্মান অর্জন করেছে, ঈর্ষাপরায়ণ ব্যক্তির কাছে তা সহ্য হয় না। কারণে-অকারণে সে ওই সম্মানিত ব্যক্তির দোষ অম্বেষণ করতে থাকে এবং ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হয়। এসব ব্যক্তি দুনিয়াতে ঈর্ষার অনলে দগ্ধ হয়, আর আখিরাতে জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হয়। হিংসুকের হিংসায় সম্মানিত ব্যক্তির সম্মান এতোটুকুও লাঘব হয় না। ক্ষতি হিংসুকেরই হয়।
(৬) অনেক সময় মানুষ মজা করা কিংবা অন্যকে অপদস্থ করার উদ্দেশ্যে তার ক্রিয়াকলাপ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ ও উপহাসে মত্ত হয়। উপহাসকারী যদি বুঝত যে তার এই উপহাস তাকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাচ্ছে তা হলে সে উপহাসকারী না হয়ে হাস্যাস্পদ হওয়ার প্রত্যাশা করতো, কেনো না হাশরের দিন হাস্যাস্পদের পাপের বোঝা উপহাসকারীর কাঁধে চড়িয়ে দেয়া হবে।
(৭) অনেক সময় পরহেজগার ব্যক্তিরাও পাপের আলোচনা করতে গিয়ে পাপীর নামও উল্লেখ করে ফেলেন। লক্ষ্য করেন না যে, এটা গীবতের মধ্যে গণ্য হয়ে যায়। সুতরাং পাপাচার নিয়ে আলোচনা করার সময় সতর্ক থাকতে হবে, যাতে কখনো কারো নাম উচ্চারিত না হয় এবং কারো প্রতি ইঙ্গিত করা না হয়।
(৮) মূর্খতা মানুষের জন্য বড় অভিশাপ। অনেকে জানেই না যে, কোন্ কথা গীবতের মধ্যে পড়ে, আর কোন্ কথা গীবতের মধ্যে পড়ে না। তবে অনিষ্টকর ব্যক্তির ক্ষতি হতে জনসাধারণকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে অনিষ্টকারীর নাম নেয়া বৈধ। এটা গীবতের মধ্যে পড়ে না। অনুরূপভাবে বিচারকের সামনে সাক্ষী হিসেবে পাপীর নাম নেয়া গীবত নয়। যারা প্রকাশ্যভাবে পাপ করে এবং পাপকে দোষের মনে করে না তাদের নাম নেয়া গীবত নয়।
পরনিন্দা ও পরনিন্দুক সম্পর্কে যা করা প্রয়োজন তা হচ্ছে :
(১) ধৈর্য্য ধরতে হবে।
(২) নিজের মনকে স্থির করতে হবে।
(৩) বাস্তবতা ও অনুমানের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করতে হবে।
(৪) অন্যদের সম্পর্কে আরো উদারতা প্রদর্শন করতে হবে।
(৫) শোনা কথা যাচাই-বাছাই না করে বিশ্বাস করা যাবেনা। অর্থাৎ গুজবে কান দেয়া যাবে না।
(৬) আলোচনায় পরনিন্দার চেয়ে নিজের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।
(৭) অযৌক্তিকতার আশ্রয় নেয়া যাবে না।
(৮) নিজেকে অন্যের কাছে সুন্দর গ্রহণযোগ্য ভাবে তুলে ধরতে হবে।
Source: Many

Monday, June 10, 2019

Tips for a longer life

জীবনকে দীর্ঘায়ু করতে
খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রায় বিভিন্ন অনিয়মের ফলে আমারা আরও তাড়াতাড়ি মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। ভেজালজাত খাবার আমাদের আয়ু কমিয়ে নিয়ে আসছে। বর্তমানে একজন পুরুষের গড় আয়ু ৬৮.৫ বছর এবং একজন মহিলার গড় আয়ু ৭৩.৫বছর৷ সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন পাওয়ার জন্য কতগুলো নিয়ম অবলম্বন করা প্রয়োজন৷ আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই নিয়ম গুলো৷
১। নেতিবাচকতা আপনার ভিতরের শক্তিকে নষ্ট করে দেয়৷ ফলে এতে আপনার স্ট্রেস লেভেল বেড়ে যায়৷ আপনার মধ্যে রাগ, হতাশা, বিষণ্ণতা ও উদ্বিগ্নতা বৃদ্ধি পায় এবং অধিক খাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়৷ তাই নেতিবাচকতা পরিহার করে ইতিবাচক চিন্তা করুন৷ আপনার জীবনের লক্ষ্য ঠিক করুন এবং সেই অনুযায়ী কাজ করুন এতে আপনার স্ট্রেস কমবে ফলে আপনি দীর্ঘজীবী হবেন৷
২। ঘুমের ব্যাপারে কার্পণ্য করবেন না৷ স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন এর জন্য প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন৷ ঘুমের হ্রাস বৃদ্ধি মানুষের মৃত্যু হারের উপর প্রভাব বিস্তার করে৷ নিয়মিত কম ঘুমালে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও স্থূলতার মতো মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে৷ আর নিয়মিত ভালো ঘুম হলে স্ট্রেস, ডিপ্রেশন ও হার্ট ডিজিজ দ্রুত ভালো হয়৷ তাই আর চিন্তা না করে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ুন৷
৩। প্রক্রিয়াজাত খাবারে অনেক বেশি চিনি, নুন ও ফ্যাট থাকে৷ এইসব খাবারে ফাইবার কম থাকে৷ প্রক্রিয়াজাত খাবার খেলে হার্ট অ্যাটাক, হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস হওয়ার সম্বভবনা খুব বেশি থাকে৷ তাই আপনার খাদ্য তালিকা থেকে এই জাতীয় খাবার বাদ দিয়ে শাকসবজি ও ফলমূল খাবার অভ্যাস করুন৷
৪। বর্তমানের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ব্যায়ামের মাধমে দীর্ঘমেয়াদি অসুখ যেমন- ক্যান্সার ও স্থূলতার সম্ভাবনা কমে৷ দিনে ৩০ মিনিটের ব্যায়াম আপনার আয়ু বাড়িয়ে দেবে৷ তাইওয়ানের ৪১৬০০০ নারী ও পুরুষকে নিয়ে এই গবেষণাটি করা হয়৷ তাই দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা লাভের জন্য সারাদিনের কিছুটা সময় বেছে নিন ব্যায়ামের জন্য৷
বড় কোন পরিবর্তন নয় ছোট ছোট পরিবর্তনের মাধ্যমে নিজের জীবনযাপনের ধরণের পরিবর্তন করুন এবং জীবনে সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু লাভ করে জীবনকে পরিপূর্ণ ভাবে উপভোগ করুন।
Tips for a longer life
No matter what your age, you have the power to change many of the variables that influence how long you live, and how active and vital you feel in your later years. Actions you can take to increase your odds of a longer and more satisfying life span are really quite simple:
1. Don't smoke.
2. Enjoy physical and mental activities every day.
3. Eat a healthy diet rich in whole grains, vegetables, and fruits, and substitute healthier monounsaturated and polyunsaturated fats for unhealthy saturated fats and trans-fats.
4. Take a daily multivitamin, and be sure to get enough calcium and vitamin D.
5. Maintain a healthy weight and body shape.
6. Challenge your mind. Keep learning and trying new activities.
7. Build a strong social network.
8. Follow preventive care and screening guidelines.
9. Floss, brush, and see a dentist regularly.
10. Ask your doctor if medication can help you control the potential long-term side effects of chronic conditions such as high blood pressure, osteoporosis, or high cholesterol.
More:
1. Avoid overeating
2. Eat more nuts
3. Try out turmeric
4. Eat plenty of healthy plant foods
5. Stay physically active
6. Don't smoke
7. Moderate your alcohol intake
8. Prioritize your happiness
9. Avoid chronic stress and anxiety
10. Nurture your social circle
11. Be more careful
12. Drink coffee or tea
13. Develop a good sleeping pattern.

পোশাক মানব সভ্যতায় কেন গুরুত্বপূর্ণ? আল কুরআনের ব্যাখ্যা


সুরা আল আরাফ আয়াত ২৬ ও ২৭
২৬) হে বনী আদম! তোমাদের শরীরের লজ্জাস্থানগুলো ঢাকার এবং তোমাদের দেহের সংরক্ষণ ও সৌন্দর্য বিধানের উদ্দেশ্যে আমি তোমাদের জন্য পোশাক নাযিল করেছি৷ আর তাকওয়ার পোশাকই সর্বোত্তম৷ এই আল্লাহর নিদর্শনগুলোর অন্যতম, সম্ভবতঃ লোকেরা এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে৷
Yaa Baneee Aadama qad anzalnaa 'alaikum libaasany yuwaaree saw aatikum wa reeshanw wa libaasut taqwaa zaalika khair; zaalika min Aayaatil laahi la'allahum yaz zakkaroon. 
ইয়া বানী আদামা কা’দ আনঝালনা ‘আলাইকুম লিবাছাইঁ ইউওয়া-রী ছাওাআতিকুম ওয়া রীশাওঁ ওয়া লিবাছুততাকওয়া ওয়া যালিকা খাইর, যালিকা মিন আয়াতিল্লাহি লা আ‘ল্লাহুম ইয়াযযাক্কারূন।
ব্যাখ্যাঃ এই আয়াতে আদম ও হাওয়ার ঘটনার একটি বিশেষ দিকের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে, আরববাসীদের সামনে তাদের নিজেদের জীবনে শয়তানী ভ্রষ্টতা -প্রতারণার একই অত্যন্ত সুষ্পষ্ট প্রভাবের প্রতি অংগলী নির্দেশ করা হয়েছে৷ তারা কেবলমাত্র সৌন্দর্য সামগ্রী হিসেবে ও বিভিন্ন ঋতুর প্রভাব থেকে শারীরিকভাবে আত্মরক্ষা করার জন্যে পোশাক ব্যবহার করতো৷ কিন্তু এর যে প্রাথমিক ও মৌলিক উদ্দেশ্য শরীরের লজ্জাস্থানগুলোকে আবৃত করা, সেটি তাদের কাছে কোন গুরুত্ব লাভ করেনি৷ নিজেদের লজ্জাস্থানগুলোকে অন্যের সামনে উন্মুক্ত করে দিতে তারা মোটেই ইতস্ততঃ করতো না৷ প্রকাশ্য স্থানে উলংগ হয়ে গোসল করা, পথে ঘাটে যেখানে সেখানে প্রকাশ্য জায়গায় প্রকৃতির ডাকে উদোম হয়ে বসে পড়া, পরণের কাপড় খুলে পড়ে যেতে এবং লজ্জাস্থান উন্মুক্ত হয়ে যেতে থাকলেও তার পরোয়া না করা ইত্যাদি ছিল তাদের প্রতিদিনের অভ্যাস৷ সবচেয়ে মারাত্মক ছিল হজ্জের সময় তাদের অসংখ্য লোকের কাবার চারদিকে উলংগ হয়ে তাওয়াফ করা ৷ এ ব্যাপারে তাদের পুরুষদের চেয়ে মেয়েরাই ছিল কিছু বেশী নির্লজ্জ৷ তাদের দৃষ্টিতে এটি ছিল একটি ধর্মীয় কাজ এবং সতকাজ মনে করেই তারা এটি করতো৷ আর যেহেতু এটি কেবল আরবদের বৈশিষ্ট্য ছিল না রবং দুনিয়ার অধিকাংশ জাতি ও নির্লজ্জ বেহায়াপনায় লিপ্ত ছিল এবং আজো আছে তাই এখানে কেবলমাত্র আরববাসীদেরকে সম্বোধন করা হয়নি বরং ব্যাপকভাবে সারা দুনিয়ার মানুষকে সম্বোধন করা হয়েছে৷ এখানে সমগ্র মানব জাতিকে এই বলে সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে যে, দেখো শয়তানী প্রতারণার একটি সুষ্পষ্ট আলামত তোমাদের নিজেদের জীবনেই রয়েছে৷ তোমরা নিজেদের রবের পথনির্দশনার তোয়াক্কা না করে এবং নিজেদের নবী -রসূলের দাওয়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নিজেরাই নিজেদেরকে শয়তানের হাতে তুলে দিয়েছো৷ আর সে তোমাদেরকে মানবিক প্রকৃতির পথ থেকে বিচ্যুত করে সেই একই নির্লজ্জতার মধ্যে নিক্ষেপ করেছে যার মধ্যে ইতিপূর্বে সে তোমাদের প্রথম পিতা-মাতাকে নিক্ষেপ করতে চেয়েছিল৷ এ ব্যাপারে চিন্তা করলে প্রকৃত সত্য তোমাদের সামনে সুষ্পষ্ট হয়ে ধরা দেবে৷ অর্থাত রসূলদের নেতৃত্ব ও পথনির্দেশনা ছাড়া তোমরা নিজেদের প্রকৃতির প্রাথমিক দাবীগুলো পর্যন্ত ও বুঝতে এবং তা পূর্ণ করতে অক্ষম৷
২৭) হে বনী আদম! শয়তান যেন তোমাদের আবার ঠিক তেমনিভাবে বিভ্রান্তির মধ্যে নিক্ষেপ না করে যেমনভাবে সে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত থেকে বের করেছিল এবং তাদের লজ্জাস্থান পরস্পরের কাছে উন্মুক্ত করে দেবার জন্যে তাদেরকে বিবস্ত্র করেছিল৷ সে ও তার সাথীরা তোমাদেরকে এমন জায়গা থেকে দেখে যেখান থেকে তোমরা তাদেরকে দেখতে পাও না৷ এ শয়তানদেরকে আমি যারা ঈমান আনে না তাদের অভিভাবক করে দিয়েছি৷
Yaa Banee Aadama laa yaftinannnakumush Shaitaanu kamaaa akhraja abawaikum minal Jannati yanzi'u 'anhumaa libaasahumaa liyuriyahumaa saw aatihimaaa; innahoo yaraakum huwa wa qabeeluhoo min haisu laa tarawnahum; innaa ja'alnash Shayaateena awliyaaa'a lillazeena laa yu'minoon.
ইয়া বানী আদামা লা-ইয়াফতিনান্নাকুমুশ শাইত্বোয়ানু কামা আখরাজা আবাওয়াইকুম মিনাল জান্নাতি ইয়াংঝি‘উ ‘আনহুমা-লিবা-ছাহুমা-লিইউরিয়াহুমা ছাওাআতিহিমা ইন্নাহু ইয়ারাকুম হওয়া ওয়াকাবীলুহু মিন হাইছু লা তারাওনাহুম ইন্না জা‘আলনাশ শায়াতীনা আউলিয়াআ লিল্লাজীনা লা-ইউমিনুন।
এখানে যে কথাগুলো বলা হয়েছে তা থেকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সত্য সুষ্পষ্ট হয়ে সামনে ভেসে উঠেছেঃ
একঃ পোশাক মানুষের জন্যে কোন কৃত্রিম জিনিস নয়৷ বরং এটি মানব প্রকৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবী৷ আল্লাহ মানুষের দেহের বহির্ভাগে পশুদের মত কোন লোমশ আচ্ছাদন জন্মগতভাবে তৈরী করে দেননি৷ বরং লজ্জার অনুভূতি তার প্রকৃতির মধ্যে গচ্ছিত রেখে দিয়েছেন৷ তিনি মানুষের যৌন অংগগুলোকে কেবলমাত্র যৌনাংগ হিসেবেই তৈরী করেন না বরং এগুলোকে "সাওআত" ও বানিয়েছেন৷ আরবী ভাষায় "সাওআত" এমন জিনিসকে বলা হয় যার প্রকাশকে মানুষ খারাপ মনে করে৷ আবার এ প্রকৃতিগত লজ্জার দাবী পূরণ করার জন্যে তিনি মানুষকে কোন তৈরি করা পোষাক দেননি৷ বরং তার প্রকৃতিকে পোশাক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করেছেন, যাতে নিজের বুদ্ধি ব্যবহার করে সে প্রকৃতির এ দাবীটি উপলব্ধি করতে পারে এবং আল্লাহর সৃষ্ট উপাদান ও উপকারণ সমূহ কাজে লাগিয়ে নিজের জন্যে পোশাক তৈরী করতে সক্ষম হয়৷
দুইঃ এ প্রাকৃতিক ও জন্মগত উপলব্ধির প্রেক্ষিতে মানুষের জন্যে পোশাকের নৈতিক প্রয়োজন অগ্রগণ্য৷ অর্থাত প্রথমে সে "সাওআত" তথা নিজের লজ্জাস্থান আবৃত করবে৷ আর তার স্বভাবগত চাহিদা ও প্রয়োজন দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত৷ অর্থাত তারপর তার পোশাক তার জন্যে "রীশ", অর্থাত দৈহিক সৌন্দর্য বিধান করবে এবং আবহাওয়ার প্রভাব থেকে তার দেহ সৌষ্ঠবকে রক্ষা করবে৷এ পর্যায়েও মানুষ ও পশুর ব্যাপার স্বভাবতই সম্পূর্ণ ভিন্ন৷পশুর শরীরের লোমশ আচ্ছাদন মূলত তার জন্যে "রীশ" অর্থাত তার শরীরের শোভা বর্ধন ও ঋতুর প্রভাব থেকে তাকে রক্ষা করে৷ তার লোমশ আচ্ছাদন তার লজ্জাস্থান ঢাকার কাজ করে না৷ কারণ, তার যৌনাংগ আদতে তার সাওআত বা লজ্জাস্থান নয়৷ কাজেই তাকে আবৃত করার জন্যে পশুর স্বভাবও প্রকৃতিতে কোন অনুভূতি ও চাহিদা থাকে না এবং তার চাহিদা পূরণ করার উদ্দেশ্যে তার জন্যে কোন পোশাকও সৃষ্টি করা হয় না৷ কিন্তু মানুষ যখন শয়তানের নেতৃত্ব গ্রহণ করলো তখন ব্যাপারটি আর উল্টে গেলো৷ শয়তান তার এ শিষ্যদেরকে এভাবে বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হলো যে, তোমাদের জন্যে পোশাকের প্রয়োজন পশুদের জন্য পোশাকের প্রয়োজনের সমপর্যায়ভুক্ত, আর পোশাক দিয়ে লজ্জাস্থান ঢেকে রাখার ব্যাপারটি মোটেই কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়৷ বরং পশুদের অংগ -প্রত্যংগ যেমন তাদের লজ্জাস্থান হিসেবে বিবেচিত হয় না, ঠিক তেমনি তোমাদের এ অংগ -প্রত্যংগগুলোও লজ্জাস্থান নয় বরং এগুলো নিছক যৌনাংগ৷
তিনঃ মানুষের পোশাক কেবলমাত্র তার লজ্জাস্থান আবৃত করার এবং তার শারীরিক শোভাবর্ধন ও দেহ সংরক্ষণের উপায় হবে, এতটুকুই যথেষ্ঠ নয়৷ বরং আসলে এ ব্যাপারে তাকে অন্ততঃ এতটুকু মহত্তর মানে পৌছতে হবে, যার ফলে তার পোশাক তাকওয়ার পোশাকে পরিণত হয়৷ অর্থাত তার পোশাক দিয়ে সে পুরোপুরি "সতর" তথা লজ্জাস্থান ঢেকে ফেলবে৷ সৌন্দর্য চর্চা ও সাজসজ্জার মাধ্যমে শরীরের শোভা বর্ধন করার ক্ষেত্রে তা সীমা অতিক্রম করে যাবে না বা ব্যক্তির মর্যাদার চেয়ে নিম্ন মানেরও হবে না৷ তার মধ্যে গর্ব, অহংকার ও আত্মম্ভরিতার কোন প্রদর্শনী থাকবে না৷ আবার এমন কোন মানসিক রোগের প্রতিফলনও তাতে থাকবে না৷ যার আক্রমণের ফলে পুরুষ নারীসূলভ আচরণ করতে থাকে, নারী করতে থাকে পুরুষসূলভ আচরণ এবং এ জাতি নিজেকে অন্য এক জাতির সদৃশ বানাবার প্রচেষ্টায় নিজের নিজের হীনতা ও লাঞ্ছনার জীবন্ত প্রতীকে পরিণত হয়৷ যেসব লোক নবীদের প্রতি ঈমান এনে নিজেদেরকে পুরোপুরি আল্লাহর পথনির্দেশনার আওতাধীন করে দেয়নি তাদের পক্ষে পোশাকের ব্যাপারে এ কাংখিত মহত্তর মানে উপনীত হওয়া কোনক্রমেই সম্ভব নয়৷ যখন তারা আল্লাহর পথনির্দশনা গ্রহণে অসম্মতি জানায় তখন শয়তানদেরকে তাদের পৃষ্ঠপোষক ও অভিভাবক বানিয়ে দেয়া হয় এবং এ শয়তান তাদেরকে কোন না কোনভাবে ভূল -ভ্রাণ্তি ও অসতকাজে লিপ্ত করেই ছাড়ে৷
চারঃ দুনিয়ার চারদিকে আল্লাহর যেসব অসংখ্য নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে এবং যেগুলো মহাসত্যের সন্ধানলাভের ব্যাপারে মানুষকে সাহায্য করে, পোশাকের ব্যাপারটিও তার অন্যতম৷ তবে এখানে শর্ত হচ্ছে, মানুষের নিজের তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে৷ ওপরে যেসব সত্যের দিকে ইংগিত করা হয়েছে সেগুলোকে একটু গভীর দৃষ্টিতে বিশ্লেষণ করলে পোশাক কোন দৃষ্টিতে আল্লাহর একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন তা সহজেই অনুধাবন করা যেতে পারে৷
রেফারেন্স:

Monday, June 3, 2019

ইফতার


ইফতার (আরবি: إفطار‎‎ ইফ্‌ত্বার্)
‘ইফতার’ শব্দটি আরবি ‘ফুতুর’ শব্দ থেকে এসেছে। ‘ফুতুর’ অর্থ নাশতা। ‘ইফতার’ অর্থ খোলা, উন্মুক্ত করা, ছেড়ে দেয়া ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায় সূর্যাস্তের পর খেজুর, পানি বা অন্য কোনো খাদ্যদ্রব্য ভক্ষণের মাধ্যমে রোজা ছেড়ে দেয়াকে ইফতার বলা হয়। রোজার অপরিহার্য একটি অংশ ইফতার। এটা সাহরি খাওয়ার মতোই ইবাদত এবং রাসূল সা:-এর সুন্নত। ইফতারির সময় হওয়ার আগে থেকে ইফতার সামগ্রী নিয়ে বসে থাকা ইবাদত। কিন্তু ইফতারের সময় হওয়া মাত্রই কোনোরূপ বিলম্ব না করে ইফতার করে নিতে হবে। একজন রোজাদার ইফতারের সময় দিনের সব ক্লান্তি ভুলে সওয়াবের উদ্দেশ্যে খুশিমনে ইফতার করে থাকেন। ইফতারের আরেকটি বড় ফজিলত হচ্ছে, এ সময় রোজাদারের দোয়া আল্লাহ তায়ালার দরবারে কবুল হয়। তখন একজন রোজাদার খালেস নিয়তে আল্লাহর কাছে যা চাইবেন তা-ই আল্লাহর দরবারে কবুল হবে। রোজার ইফতার আল্লাহর বান্দার জন্য সে সুযোগ করে দিয়েছে।
সাহল রা: হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, যত দিন পর্যন্ত মানুষ তাড়াতাড়ি ইফতার করবে তত দিন পর্যন্ত কল্যাণ লাভ করতে সক্ষম হবে। (বুখারি, মুসলিম)। এখানে তাড়াতাড়ি বলতে সূর্যাস্তের পরপরই বোঝানো হয়েছে। অন্য হাদিসে আবু হুরায়রা রা: হতে বর্ণিত আছে, রাসূল সা: বলেছেন, দ্বীন বিজয়ী থাকবে যত দিন পর্যন্ত মানুষ ইফতার তাড়াতাড়ি করবে। কারণ ইহুদি-নাসারারা ইফতার বিলম্বে করে। (আবু দাউদ, ইবনে মাজা)। আবু হুরায়রা রা: হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আমার সে বান্দা আমার কাছে বেশি প্রিয় যে ইফতার করতে তাড়াতাড়ি করে। অর্থাত সূর্য ডোবার সাথে সাথেই ইফতার করে। (তিরমিজি)। আবু আতিয়া হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ও মাসরুক একদিন আয়েশা রা:-এর কাছে গেলাম এবং বললাম, হে উম্মুল মুমিনীন! রাসূলুল্লাহ সা:-এর দু’জন সাহাবি রয়েছেন, তাদের একজন তাড়াতাড়ি ইফতার করেন, তাড়াতাড়ি সালাত আদায় করেন। আর একজন দেরিতে ইফতার করেন, দেরিতে সালাত আদায় করেন। আয়েশা রা: জিজ্ঞেস করলেন কে তাড়াতাড়ি ইফতার করেন এবং তাড়াতাড়ি সালাত আদায় করেন? আমরা বললাম, আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা:। আয়েশা রা: বললেন, রাসূলুল্লাহ সা: তা-ই করতেন। আর অপর ব্যক্তি যিনি ইফতার ও সালাত আদায়ে বিলম্ব করতেন, তিনি হলেন আবু মূসা রা:। (মুসলিম) । উপরিউক্ত হাদিসগুলো দ্বারা প্রমাণিত হলো যে ইফতার সূর্য ডোবার পর পরই করা উত্তম।

ইফতারের উপকারিতা:
১. আল্লাহর নির্দেশ পালন। কেননা আল্লাহ আদেশ করেছেন- অতঃপর রোজা পালন করো রাত পর্যন্ত। (বাকারা-১৮৭) । সূর্য ডোবার সাথে সাথেই রাত শুরু হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, যখন ওদিক (পূর্ব দিক) থেকে রাত নেমে আসে, আর এদিক (পশ্চিম) থেকে দিন চলে যায় এবং সূর্য ডুবে যায়; তখনই রোজাদার ইফতার করবে। (বুখারি, মুসলিম) । অতএব সূর্য ডোবার সাথে সাথে ইফতার করার মাধ্যমেই আল্লাহর এই নির্দেশকে যথাযথভাবে পালন করা সম্ভব।
২. রাসূলুল্লাহ সা:-এর পূর্ণ আনুগত্য লাভ। কেননা রাসূলুল্লাহ সা: ইফতার তাড়াতাড়ি করতে বলেছেন এবং নিজেও ইফতার তাড়াতাড়ি করেছেন।
৩. ইহুদি-খ্রিষ্টানের বিরোধিতা করা। কেননা তারা অন্ধকার হওয়ার পর ইফতার করে। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, তোমরা ইহুদি-খ্রিষ্টানদের বিরোধিতা করো। তিনি আরো বলেছেন- যে ব্যক্তি যে জাতির সামঞ্জস্যপূর্ণ কাজ করবে, সে জাতি তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে।
৪. আল্লাহর প্রিয় বলে গণ্য হওয়া। কেননা যে ব্যক্তি তাড়াতাড়ি ইফতার করে সে ব্যক্তি আল্লাহর প্রিয় ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তাদের প্রতি রহম করবেন।
৫. আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের সুযোগ লাভ করা। সারা দিন না খেয়ে থাকার পর ইফতারের মাধ্যমে আল্লাহ খাওয়ার সুযোগ করে দিলেন, তাই তাঁর শুকরিয়া আদায় করা।
৬. কল্যাণ লাভ করা সম্ভব। কেননা রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, উম্মত কল্যাণ লাভে সমর্থ হবে যতণ তারা তাড়াতাড়ি ইফতার করবে।
৭. ইফতারের মাধ্যমে দোয়া কবুলের সুযোগ লাভ করা। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ইফতারের আগে রোজাদারের দোয়া কবুল হয়। ইফতারের মাধ্যমে রোজাদার আনন্দ লাভ করার সুযোগ পায়।
৮. দ্বীন সহজ বলে প্রমাণিত হওয়া। আল্লাহ বলেছেন, আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ তা চান, যা কঠিন তা চান না। (সূরা বাকারাহ-১৮৫) । আল্লাহ ইচ্ছা করলে রোজাকে একাধারে রাখা বাধ্যতামূলক করতে পারতেন, যেমন সাওমে বিছাল, কিন্তু আল্লাহ ইফতার করার সুযোগ করে দিয়ে আমাদের প্রতি দয়া করেছেন এবং সহজ করে দিয়েছেন।
৯. বান্দাহ যে আল্লাহর হুকুম পালনে ততপর, তাড়াতাড়ি ইফতার করার মাধ্যমে তা প্রমাণিত হয় এবং বান্দাহর বন্দেগি প্রকাশ পায়।
১০. ইফতার করার পর সালাত আদায় করলে প্রশান্তির সাথে সালাত আদায় করা যায়। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, খাবারমিশ্রিত সালাতের চেয়ে সালাত মিশ্রিত খাবার অনেক উত্তম। (তিরমিজি) ।
১১. খেজুর দ্বারা ইফতার শুরু করলে স্বাস্থ্যের জন্য কল্যাণকর হয়। এতে পাকস্থলী ভালো থাকে এবং শরীরে শক্তি সঞ্চয় হয়।
১২. অন্য রোজাদারকে ইফতার করালে, রোজাদার ব্যক্তি রোজা রেখে যে পরিমাণ সওয়াব পান, যিনি ইফতার করাবেন, তিনি তার সমপরিমাণ সওয়াব পাবেন, এতে কারো সওয়াবে কোনো কমতি হবে না। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে এ মাসে ইফতার করাবে, এ ইফতার তার গুনাহের মাগফিরাত ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ হবে। আর তার সওয়াব হবে রোজাদারের সমপরিমাণ অথচ রোজাদারের সওয়াব একটুও কমিয়ে দেয়া হবে না। (বায়হাকি) । 
রেফারেন্স: ১. চেয়ারম্যান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
২. উইকিপিডিয়া ৩. https://www.123rf.com