বর্তমান
পৃথিবীর সর্বত্রই যেন ফেতনা-ফ্যাসাদ, নৈরাজ্য আর বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। কেউ আজ নিরাপদ
নয়, ঘরে-বাইরে কেউ বলতে পারবে না যে, আমি নিরাপদে আছি। সবাই যেন এক মহা-আতংকের মধ্যে
দিন কাটাচ্ছে। এই মুহূর্তে আমাদের সবাইকে মহান আল্লাহতায়ালার কাছে অনেক বেশি প্রার্থনা
করতে হবে। একমাত্র তিনিই যদি করুণা করেন তাহলে এই বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে আমরা মুক্ত
হতে পারি, আর না হয় অন্য কোনও মাধ্যম আজ অবশিষ্ট নেই।
যে
ব্যক্তি প্রকৃত প্রেরণা নিয়ে মহান খোদার কাছে প্রার্থনা করে তাকে আল্লাহতায়ালা কখনও
ব্যর্থ হতে দেন না। যেভাবে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি
তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। কিন্তু যারা আমার ইবাদত সম্বন্ধে অহংকার করে, তারা নিশ্চয়ই
লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’ Rabbukumud 'ooneee astajib lakum; innal
lazeena yastakbiroona an 'ibaadatee sa yadkhuloona jahannama daakhireen
(সুরা মু’মিন: ৬০)। ‘আর যা কিছু তোমরা তাঁর কাছে চেয়েছ তিনি তোমাদের সব দিয়েছেন এবং
যদি তোমরা আল্লাহর নেয়ামতগুলো গণনা করতে চাও তাহলে তোমরা সেগুলোর সংখ্যা নিরূপণ করতে
পারবে না’ Wa aataakum min kulli maa sa altumooh; wa in ta'uddoo ni'matal laahi laa
tuhsoohaa; innal insaana lazaloo mun kaffaar(সুরা
ইব্রাহিম: ৩৪)। ‘অথবা কে উদ্বিগ্নচিত্ত ব্যক্তির দোয়া শুনেন যখন সে তার নিকট দোয়া করে
এবং তার কষ্ট দূর করে দেন এবং তোমাদের পৃথিবীর উত্তরাধিকারী করে দেন আল্লাহর সঙ্গে
কি অন্য কোনও উপাস্য আছে তোমরা খুব কমই উপদেশ গ্রহণ কর’ Ammany-yujeebul
mud tarra izaa da'aahu wa yakshifussooo'a wa yaj'alukum khula faaa'al ardi
'a-ilaahum ma'al laahi qaleelam maa tazak karoon
(সুরা নামল: ৬২)। মহান খোদাতায়ালা তার বান্দার দোয়া গ্রহণ করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা
করেন, কখন তার বান্দা তাকে ডাকবে আর তিনি তা গ্রহণ করবেন এবং তার দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন।
তিনি সবার খুবই নিকটে রয়েছেন, যেভাবে কোরআনে উল্লেখ রয়েছে ‘আর যখন আমার বান্দাগণ আমার
সম্বন্ধে তোমাকে জিজ্ঞেস করে, তখন বল, আমি নিকটে আছি। আমি প্রার্থনাকারীর প্রার্থনার
উত্তর দেই যখন সে আমার নিকট প্রর্থনা করে। সুতরাং তারা যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং
আমার ওপর ঈমান আনে যাতে তারা সঠিক পথপ্রাপ্ত হয়’ Wa izaa sa alaka 'ibaadee 'annnee
fa innee qareebun ujeebu da'wataddaa'i izaa da'aani falyastajeeboo lee walyu
minoo beela 'allahum yarshudoon (সুরা বাকারা: ১৮৬)।
এ আয়াত থেকে স্পষ্ট যে, তিনি প্রার্থনাকারীর প্রার্থনার উত্তর দিয়ে থাকেন। আমরা যদি
প্রকৃতভাবে তাকে ডাকি তাহলে অবশ্যই তিনি আমাদের ডাকে সাড়া দেবেন। তিনি তো সেই জীবিত
খোদা যে খোদা পূর্বে কথা বলতেন আর এখনও বলেন, তার সঙ্গে কথা বলার জন্য শুধু প্রয়োজন
পবিত্রাত্মার।
দোয়ার
মধ্যে অনেক শক্তি নিহিত রয়েছে। দোয়া এমন একটি জিনিস যা অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলে। দোয়ার
মাধ্যমে ও এর কবুলিয়তের মাধ্যমে বান্দার সঙ্গে আল্লাহর সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে থাকে। আমরা
জানি, নবী করিম (সা.)-এর দিনের আরম্ভ থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত— প্রতিটি ক্ষেত্রে
দেখি দোয়ায় পরিপূর্ণ। আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারে আমাদের প্রতি মহানবী
(সা.)-এর অনুগ্রহ ও রহমতের একটি উজ্জ্বল দিক হল তাঁর দোয়া। জীবন্ত খোদার সঙ্গে সম্পর্ক
ও সদা জীবন্ত রাসূল (সা.)-এর দোয়ার মাঝেই যে জীবন ও জীবনের আনন্দ নিহিত এ বিষয়ে কোনও
সন্দেহ নেই। যেভাবে পবিত্র কোরআনে তার ইবাদত সম্পর্কে উল্লেখ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমার
নামাজ এবং আমার কোরবানি এবং আমার জীবন এবং আমার মরণ সব আল্লাহর জন্য, যিনি বিশ্বজগতের
প্রভু-প্রতিপালক’ inna Salaatee wa nusukee wa mahyaaya wa mamaatee lillaahi
Rabbil 'aalameen(সুরা আনআম: ১৬২) । মহানবী (সা.)-এর সবকিছুই
ছিল আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির জন্য। তাই তো তিনি (সা.) সব সময় আল্লাহর মুখাপেক্ষী হয়ে
থাকতেন। তাঁর (সা.) দোয়ার বরকতে লাখ লাখ আধ্যাত্মিকভাবে মৃত জীবন ফিরে পেয়েছে, আধ্যাত্মিক
অন্ধরা দৃষ্টি ফিরে পেয়েছে, বোবাদের মুখে ঐশী তত্ত্ব-জ্ঞান ফুটেছে এবং বংশ পরম্পরায়
পথভ্রষ্টরা ঐশী রঙ ধারণ করার যোগ্য হয়েছে। যেই আল্লাহ মহানবী (সা.)-এর সময় ছিলেন সেই
আল্লাহই তো আজও আছেন। আমরা যদি প্রকৃতভাবে আল্লাহর বান্দা হই তাহলে তিনি অবশ্যই আমাদর
ডাকে সাড়া দেবেন।
বর্তমান
পরিস্থিতিতে আমাদের সবাইকে পবিত্র কোরআনের এই দুটি দোয়া বেশি বেশি পাঠ করা উচিত, ‘রাব্বি
নাজ্জেনি মিনাল কাউমিজ জালেমিন’ Rabbi najjinee minal qawmiz zaalimeen অর্থাত
হে আমার প্রভু-প্রতিপালক! তুমি আমাকে অত্যাচারী জাতি থেকে উদ্ধার কর।-(সুরা কাসাস:
২১) ‘রাব্বিন ছুরনি আলাল কাউমিল মুফসেদিন’ Rabbin surnee 'alal qawmil mufsideen
অর্থাত হে আমার প্রভু-প্রতিপালক! তুমি আমাকে এ বিপর্যয় সৃষ্টিকারী জাতির বিরুদ্ধে সাহায্য
কর।-(সুরা আনকাবুত: ৩০)
আল্লাহতায়ালা
পবিত্র, তিনি পবিত্রতা পছন্দ করেন। আজকে আমাদের হৃদয় যদি পবিত্র হতো তাহলে আমাদের দোয়া
তিনি গ্রহণ করে সব বিপদাপদ থেকে আমাদের রক্ষা করতেন কিন্তু আমরা যেহেতু তার আদেশ অনুযায়ী
নিজেদের জীবন পরিচালনা করি না, তাই তিনিও আমাদের কোনও পরওয়া করেন না। তাই খোদার কাছে
দোয়া কবুল হওয়ার জন্য প্রথমে নিজেকে পবিত্র করতে হবে। আর দোয়া কেবল নিজের জন্য নয়,
সবার জন্য করতে হবে। শুধু বিপদে পড়লেই যে দোয়া করতে হবে তা নয়, বরং সব সময় খোদার সন্তুষ্টির
জন্য দোয়া করতে হবে, যেভাবে মহানবী (সা.) সব সময় দোয়ায় রত থাকতেন। ইসলামের বিজয়ের জন্য
প্রয়োজন শান্তিময় পরিবেশ তৈরি করা, সব মানুষকে সে যে ধর্মেরই অনুসারী হোক না কেন, তার
সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং মহান আল্লাহর দরবারে বিনত হয়ে সবার কল্যাণের
জন্য দোয়া করা। এখন সবার আন্দোলন একটাই হওয়া উচিত, আর তা হলো দোয়ার আন্দোলন। তাই আসুন,
আমরা সবাই সবার নিরাপত্তা ও মঙ্গলের জন্য সেই আল্লাহর দরবারে মাথা নোয়াই, যিনি আমাদের
সবাইকে সৃষ্টি করেছেন।
নামাযী
তোর নামায হলো যে ভুল
নামাজী,
তোর নামাজ হলো রে ভুল।
মসজিদে
তুই রাখিরি সিজ্দা, ছাড়ি ইমানের মূল॥
নামাজে
সামিল হয়ে জামাতের,
আউড়ালি
মুখে সুরা কোরানের,
ভাব্লি
কি তুই পার হয়ে গেলি, পুলসেরাতের পুল॥
আজ
মিলন তীর্থে বাঁধ রে কাতার মনের জায়নামাজে,
সেই
আরফাতে তোর নুইয়ে দে দিল না ফরমানি লাজে,
ওজু
করে ফের তৌবার নীরে,
তহরিমা
বাঁধ ভীতু নত শিরে,
বন্দেগী
তোর কবুল হবে রে, কিয়ামতে পাবি কূল॥
No comments:
Post a Comment