Thursday, December 26, 2019

আত্মসমালোচনা কি?

মানুষ কেন দুঃখিত হয়? আর মানুষ কেনই-বা
নিজের থেকে এই দুঃখ বোধ করে?
নিজের এই জিজ্ঞাসাসূচক কোনো প্রশ্ন কিংবা তার উত্তরটার ভিতরে
আমরা কেউ কি কখনো নিজেকে প্রশ্ন করে দেখেছি?
আর ‘আমি-তুমি’ এমনকি অন্যায়, অপরাধ বোধ করেছি?
যার যন্ত্রণাদায়ক কাতরতায় নিজেদের মাঝে এমন করে যে ধুঁকছি!
হয়তোবা নিজেরই রক্ত-মাংসময় সহজ অনুভূতিটাকে
নিজেরই ঐ-প্রভাবিত সে মনুষ্যত্বের লাঞ্ছনা বোধ থেকে
এই পৃথিবীর কোনো চরিতার্থ ক্ষমতা আর ঐশ্বর্য দিয়ে
যেন মনের সুখটাকে কোনো মতে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
সৃষ্টিলগ্ন থেকে তাই তো বুঝি মানুষ নিজেরই বিবেক পীড়িত আত্মশুদ্ধি থেকে
করে আসছে তার এক আত্ম-সমালোচনা!
Ref: Daily Sangram
প্রতিটি দিনের শেষে নিজের মূল্যায়ন এবং নিজের কাজকর্মের হিসাব নেয়ার লক্ষ্যে একটু সময় দেয়া ব্যক্তি হিসেবে মানুষের জন্য প্রয়োজন। তখন তার ভেবে দেখা দরকার সারা দিনে তিনি কী করেছেন, যা করেছেন এর কারণ কী, করণীয় কোন কোন কাজ বাদ পড়েছে, আর বাদ পড়ে গেলই বা কেন।
রাতে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়ার আগে এই আত্মসমালোচনা করা হলে তা কত চমতকার ব্যাপারই না হবে। নিজের মূল্যায়ন ও সমালোচনার এই সময়টুকুকে আত্মোন্নতির মধ্যেই ধরতে হবে। এটা এমন একটা সময় যখন একজন মানুষ নিরপেক্ষভাবে নিজের বিচার করে এবং পর্যালোচনা করে দেখে নিজেরই আকাক্সক্ষা ও সেই সাথে কার্যকলাপের কারণ বা উদ্দেশ্য। এটা এমন এক মুহূর্ত যখন ঈমানদার ব্যক্তি (তিনি পুরুষ বা নারী যিনিই হোন না কেন) নিজের কার্যকলাপ সম্পর্কে তদন্তের জন্য বিবেকের ডাকে একজন তদন্তকারী নিয়োগ করেন। তদুপরি নিয়োগ করেন একজন বিচারক যিনি তাকে শাস্তি দেবেন অথবা বেকসুর খালাস বলে ঘোষণা করবেন। এভাবে মানুষ আত্মার এক অবস্থা থেকে আরেক অবস্থায় উন্নীত হয়ে থাকে। প্রথম অবস্থা হলো ‘মন্দ কাজের উসকানিদাতা’। পরেরটি হচ্ছে ‘নিজেকে তিরস্কারকারী।’
যখনি মানুষ পাপে লিপ্ত হয় কিংবা বঞ্চিত প্রত্যাশা পূরণে হয় ব্যর্থ, উন্নতমানের এই আত্মা তখনি তাকে তিরস্কার করে।
হাদিস শরিফে আছে, যেকোনো জ্ঞানী ব্যক্তির জীবনে চার ধরনের সময় থাকা সমীচীন এবং এর একটি হলো সে সময়, যখন তিনি আত্মসমালোচনায় নিয়োজিত থাকেন।
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা: বলেছেন, ‘শেষ বিচারের দিনে সমালোচনা ও মূল্যায়নের সম্মুখীন হওয়ার আগেই নিজের সমালোচনা ও মূল্যায়ন করো। তোমার কাজের হিসাব নেয়ার আগেই সেগুলো খতিয়ে দেখো।’ তিনি রাতের বেলায় নিজের পায়ে বেত দিয়ে আঘাত করতেন; আর নিজেকে বলতেন, ‘বলো, আজ তুমি কী করেছ?’
রাসূলুল্লাহ সা:-এর বিখ্যাত সাহাবী মাইমুন ইবনে মাহরান বলতেন, ‘একজন পরহেজগার ব্যক্তি কোনো অত্যাচারী শাসক এবং কৃপণ সঙ্গীর কাজের চেয়ে নিজের কাজকর্মের মূল্যায়ন করবেন বেশি সতর্কতার সাথে।’
আল হাসান বলেছেন, ‘একজন ঈমানদার ব্যক্তি নিজের প্রহরী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তিনি আল্লাহর স্বার্থে নিজের সমালোচনা ও মূল্যায়ন করেন। প্রকৃতপক্ষে, (শেষ বিচারের দিনে) কিছু লোকের চূড়ান্ত হিসাব দেয়ার কাজ সহজ হয়ে যেতে পারে কেবল এ কারণে যে, তারা ইহজীবনে ছিলেন নিজের হিসাব নেয়ায় অভ্যস্ত। অপর দিকে যারা এই জীবন হেলায় ফেলায় কাটিয়ে দিয়েছে, তাদের জন্য নিজের হিসাব দেয়া কষ্টকর হয়ে দাঁড়াতে পারে। এরা মনে করত, তাদের কার্যকলাপের কোনো হিসাব নেয়া হবে না।’
বাস্তবে কিভাবে আত্মসমালোচনা বাস্তবায়িত হয়ে থাকে, সে প্রসঙ্গে আল-হাসান বলেন, মুমিন ব্যক্তিকে এমন চিন্তা বা ধারণা প্রলুব্ধ করতে পারে, ‘আল্লাহর কসম, এই কাজটা তো চমতকার। আমি করতে চাই। কিন্তু না, কক্ষনো না। মন্দ কাজ, দূর হও! মন্দ কিছু করা যে আমার জন্য হারাম।’ এটা আত্মসমালোচনা এবং কাজ করে ফেলার আগের দরকারি ভাবনা।
কোনো ঈমানদার অসাবধানতাবশত কিছু একটা করে ফেলতে পারেন। তখন তিনি নিজেকে বলেন, ‘তুমি এটা কী করলে? আল্লাহর কসম, এ কাজের কোনো কারণই খুঁজে পাচ্ছি না। আমি ইনশাআল্লাহ আর কখনো এটা করব না।’ এটাও আত্মসমালোচনা এবং এটা কাজ করার পরের মূল্যায়ন।
যদি কোনো ঈমানদার লোক আত্ম অনুসন্ধানের জন্য প্রতিদিন সামান্য সময় না পান, তিনি অন্তত কয়েক দিন পরপর কিংবা সপ্তাহে একবার হলেও এ কাজ করার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত। এই পন্থায়, মানুষ তার আধ্যাত্মিক সম্পদ ও দায় তুলে ধরে নিজ জীবনের ব্যালেন্স শিট তৈরি করতে পারে।
প্রতি মাসের শেষে নিজের হিসাব নেয়ার জন্য একজন মুমিনের আরো দীর্ঘ সময় থাকা উচিত। এর চেয়েও বেশি সময় তার দেয়া দরকার বর্ষশেষে আত্মসমালোচনার জন্য। তখন একটি বছরকে বিদায় জানিয়ে আরেকটির প্রস্তুতি নিতে হয়। পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে অতীতের মূল্যায়ন এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করার সময় এটাই। একজনের ‘চূড়ান্ত বার্ষিক আধ্যাত্মিক হিসাব’ বলা যায় এটাকে।
পাশ্চাত্য একটি নিন্দনীয় প্রথা চালু করেছে, যা দুর্ভাগ্যজনকভাবে কিছু মুসলমানও পালন করে থাকে। তা হচ্ছে জন্মবার্ষিকী উদযাপন। এ উপলক্ষে লোকজনকে দাওয়াত করে উপাদেয় খাদ্য-পানীয় পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠানে কয়েকটি মোমবাতি জ্বালানো হয়। যার জন্মদিবস, তার যত বছর বয়স হলো, ততটা মোমবাতি জ্বালানো হয়। তদুপরি, উপহার দেয়া হয় তাকে। এর সাথে চলে হাসি-তামাশা। পাশ্চাত্যের এমন অন্ধ ও অপ্রয়োজনীয় অনুকরণের চেয়ে বেশি প্রয়োজন হলো, জ্ঞানী ব্যক্তিরা উপলক্ষটির সদ্ব্যবহার করবেন। জন্মবার্ষিকী মানে আয়ু থেকে একটি বছর ফুরিয়ে যাওয়া। তাই জন্মদিবসে নিজ জীবন নিয়ে চিন্তাভাবনা এবং নিজের কর্মকাণ্ড পুনর্বিবেচনা করে দেখাই আবশ্যক।
প্রতি বছরের শেষে একজন সাবধানী ব্যবসায়ী একটু বিরতি দেন। বিগত বছরের ততপরতার হিসাব-নিকাশ করে নিজের সর্বশেষ আর্থিক অবস্থান নির্ণয় করাই এর উদ্দেশ্য। তিনি জানতে চান, তার লাভক্ষতি, দায় ও সম্পদের বিষয়ে। একইভাবে, ঈমানদারদের উচিত নিজ নিজ জীবনের গত এক বছরের হিসাব নেয়া। আর এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা তাদের জিজ্ঞেস করবেন।
একটি বছর কম সময় নয়। বারো মাসে এক বছর। সাধারণত ত্রিশ দিনে এক মাস। প্রতিটি দিনে থাকে চব্বিশ ঘণ্টা। ষাট মিনিট নিয়ে একেকটি ঘণ্টা এবং ষাট সেকেন্ডে একেক মিনিট গঠিত হয়। আর প্রত্যেক সেকেন্ডকে গণ্য করা উচিত আল্লাহর পক্ষ থেকে আশীর্বাদ ও অনুগ্রহ হিসেবে। একেক সেকেন্ড একেকটি আমানত।
আল্লাহ হাসান আল বসরির প্রতি করুণা বর্ষণ করুন, যখন তিনি বলেন, ‘হে আদম সন্তান! তুমি হলে কিছু দিনের সমষ্টি। একেকটি দিন চলে যাওয়া মানে তোমার একেক অংশ হারিয়ে যাওয়া।’
আবু আলী আদ দাককাক এই দু’টি পঙ্ক্তি আবৃত্তি করতেন:
একেক দিবস হয় বিগত,
একাংশ মোর যায় নিয়ে;
উড়ে যায় সে,
হৃদয় মাঝে তিক্ত বিস্বাদ যায় দিয়ে।
মূল: ড. ইউসুফ আল কারাযাভী
“Self-criticism and negative thoughts about yourself will attract people who reflect this back to you, showing critical behavior and can abuse you physically.”
― Hina Hashmi, Your Life, a Practical Guide to Happiness Peace and Fulfillment
“যে সত হয় নিন্দা তার কোন অনিষ্ট করতে পারে না!”-শেখ সা’দী

Wednesday, December 25, 2019

নৈতিকতার অবক্ষয় ও জাপানের শিক্ষাব্যবস্থার অভিজ্ঞতা

অষ্টাদশ শতকে ফরাসিদের মধ্যে যে দুটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যেত, তা হলো- মূল্যবোধ ও ন্যায্যতায় আপসহীনতা।
মূল্যবোধের অনুপস্থিতিই অবক্ষয়ের সূচনা করে। অবক্ষয় বলতে আমরা সাধারণতঃ সামাজিক কিছু স্খলন বা চ্যুতি-বিচ্যুতিকেই বুঝি।
মূল্যবোধ স্বয়ংক্রিয়ভাবে জাগ্রত হয় না বরং রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও পারিবারিক পরিসরে এ জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে নৈতিক শিক্ষার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শিক্ষা হচ্ছে নৈতিকতা গঠনের জন্যে সর্বাধিক কার্যকর উপায়। তাই ইসলাম শিক্ষার উপর অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করেছে। একটি পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষাকে অবশ্য করণীয় কর্তব্য বলে আখ্যায়িত করেছে। তাই একটি জাতিকে যথার্থরূপে শিক্ষার আলোকে আলোকিত করতে পারলে তাদের নৈতিকমান উন্নত করা সম্ভব। তবে প্রসঙ্গত একটি কথা মনে রাখতে হবে যে, শুধু প্রযুক্তিগত শিক্ষার দ্বারা নৈতিকতার উন্নয়ন সম্ভব নয়। প্রযুক্তিগত শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ মানুষ গড়ে তোলা সম্ভব কিন্তু সত্যিকার সত মানুষ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। বরং এর জন্যে নৈতিকশিক্ষা ও মানবিক শিক্ষা প্রয়োজন। আর সত্যিকার নৈতিক ও মানবিক শিক্ষার যোগান ইসলামের আদর্শিক শিক্ষার মাধ্যমেই সম্ভব। মানুষকে ইসলামী মনোভাব সম্পন্ন রূপে গড়ে তুলতে পারলেই যথার্থ নৈতিক মান উন্নয়ন সম্ভব। তাই বলা যায় যে ধর্ম বাদ দিয়ে শুধু পেশাগত শিক্ষার মাধ্যমে আজকের দুনিয়ার নৈতিক সংকট দূর করা সম্ভব নয়।
নৈতিকতার অবক্ষয় ঠেকাতে জাপানের শিক্ষাব্যবস্থার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো যেতে পারে।
জাপানিরা পৃথিবীতে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন সুশৃঙ্খল অমায়িক চরিত্রের অধিকারী একটি জাতি হিসেবে পরিচিত।
কিন্তু যে জাতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত অন্যতম খারাপ একটি জাতি হিসেবে পরিচিত ছিল তারা আজ এত ভদ্র, নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন এবং সুশৃঙ্খল জাতি কেন? এ পরিবর্তন জাপানিরা হাজার বছর ধরে লালন করে আসেনি; মূলত এ পরিবর্তন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হঠাত করেই শুরু হয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নির্মমতা আর মানবতা জাপানিদের চেয়ে আর বেশি কেউ উপলব্ধি করতে পারেনি। কেননা মানবজাতির ইতিহাসে প্রথম ও দ্বিতীয় পারমাণবিক বোমার আঘাত যে শুধু তাদেরই সইতে হয়েছে! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে ১৯৪৫ সালে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম ও দ্বিতীয় পারমাণবিক হামলার শিকার হয় জাপান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এ ভয়াবহতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ‘যুদ্ধ নয় শান্তি’ এ আদর্শ সামনে রেখে তারা দেশ গড়ায় মনোযোগ দেয়।
প্রশ্ন জাগতে পারে যে জাপানিরা কেন এত ভদ্র, শান্তিপ্রিয়, নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন সুশৃঙ্খল জাতি। এক কথায় এ প্রশ্নের উত্তর হল- জাপানের আছে অবিশ্বাস্য একটি সুন্দর শিক্ষাব্যবস্থা যা তাদের ভদ্র, শান্তিপ্রিয়, নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন সুশৃঙ্খল একটি জাতিতে পরিণত করেছে।
জাপানের শিক্ষাব্যবস্থার একটি বড় অংশজুড়ে রয়েছে নৈতিক শিক্ষা। তাদের বিশ্বাস, আগে নীতি-নৈতিকতা, পরে পাঠ্য শিক্ষা। জাপানে ১০ বছর বয়স পর্যন্ত অর্থাত চতুর্থ গ্রেড পর্যন্ত কোনো ধরনের পুঁথিগত বিষয়ে পরীক্ষা না নিয়ে শিশুদের শারীরিক, মানসিক এবং নৈতিক বিকাশের দিকেই বিশেষভাবে নজরদারি করা হয়।
স্কুল জীবনের প্রথম তিন বছর মেধা যাচাইয়ের জন্য নয় বরং ভদ্রতা, নম্রতা, শিষ্টাচার, দেশপ্রেম ও ন্যায়পরায়ণতা শেখানো হয়। জাপানিরা নম্রতা, ভদ্রতা বা নীতি-নৈতিকতায় পৃথিবী খ্যাত। শুধু বয়সে বড় হওয়া নয়, বরং মনুষ্যত্বের বৈশিষ্ট্য তাদের চরিত্রে যেন প্রতিফলিত হয় এবং আদর্শ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে; এ সময় শুধু এ প্রয়াসই চালানো হয়।
স্কুলকে জীবনযুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার স্থান হিসেবে না দেখিয়ে জীবনকে সুন্দর করার একটি মিলনস্থান হিসেবে প্রদর্শন করার চেষ্টা করছে জাপান সরকার। ধারণাটি নিতান্তই সহজ-সরল হলেও এ বিষয়টির কারণেই জাপানের শিক্ষাব্যবস্থা সব থেকে আলাদা এবং ভালোও বটে।
জাপানে শিশুদের স্কুলে পড়ালেখার পাশাপাশি আদব-কায়দা শেখানোর বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়ে থাকে। গুরুজনদের সম্মান করা, মানুষের সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দেয়া, সবাই মিলে কাজ করা ইত্যাদি শিক্ষা একদম ছেলেবেলায় জাপানিদের মনে গেঁথে দেয়া হয়।
স্কুলে ভর্তির পর থেকে প্রথম চার বছর পর্যন্ত শিশুদের তাদের দোষ-গুণের মানদণ্ডে বিচার করা হয় না। তাদের মধ্যে কে ভালো বা কে খারাপ সে বিচার না করে বরং কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ, কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল সে শিক্ষা দেয়া হয়।
এর পাশাপাশি মানুষের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করা উচিত বা কার সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয় ইত্যাদি নীতিগত শিক্ষা প্রদানের ওপর জোর দেয়া হয়। শুধু তাই নয়, পাশাপাশি প্রকৃতির মধ্যে পশুপাখির সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হয়- সেই শিক্ষাও ছাত্রছাত্রীরা স্কুল থেকেই পায়। তাছাড়া শিশুরা যাতে খুব অল্প বয়স থেকে স্বনির্ভর হয়ে উঠতে পারে, তার জন্য জামাকাপড় পরা, নিজে হাতে খাবার খাওয়া, নিজের জিনিস নিজেই গুছিয়ে রাখার মতো ছোট ছোট কাজ হাতে ধরে শিখিয়ে দেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
ধর্মবোধের প্রকৃত ভিত্তিই হ’ল নৈতিকতা। এ জন্য ইসলামে নৈতিকতার গুরুত্ব ও
প্রাধান্য সবচেয়ে বেশী। নৈতিকতা কোন ব্যক্তির মধ্যে এমন আচরণ, যা অপরের প্রতি ক্ষমা ও মার্জনা, উদারতা ও দানশীলতা, ধৈর্য, বিনয় ও নম্রতা ইত্যাদি গুণে
গুণান্বিত হওয়াকে বুঝায়। এক কথায় পূণ্যাবলী সঠিক বিকাশ ও উতকর্ষতা সাধনই নৈতিকতা।
নৈতিকতা বর্জিত সমাজে দেখা দেয় ব্যক্তিগত, দলগত বা জাতীয় জীবনে সংঘাত, হিংসা- বিদ্বেষ, হানা-হানি, গীবত ও পরশ্রীকাতরতা। সৃষ্টি হয় একে অপরকে
পর্যুদস্ত করার বাসনা। ফলে সৃষ্টি হয় নৈতিকতার অবক্ষয়।
আল্লাহ তাআলা বলেন: “নিশ্চয় তোমাদের যে ব্যক্তি বেশি তাকওয়াবান সে আল্লাহর নিকট বেশি সম্মানিত।” [সূরা হুজুরাত, আয়াত: ১৩]
“দেহ তোমায় মহান করে না, করে যা আত্মায়,
হৃদয় রাঙানো পোশাকে তোমার সৌন্দর্য নয়,
নয় তাতে মনুষ্য পরিচয়।
চক্ষু, কণ্ঠ, জিহ্বা আর নাসিকা যদি হয় মনুষ্য পরিচয়,
কি তফাত বল দেয়ালের ঐ ছবি আর মানবসত্তায়?”
-শেখ সা’দী
রেফা: আখতার হামিদ খান et al

Wednesday, December 18, 2019

সিজদার মূল্য

আল্লাহর সৃস্টি বান্দার উপর প্রথম আনুগত্যের মহড়া হলো সিজদা। কুরআন বলছে- আদম আঃ কে সৃস্টি করেই আল্লাহ ফেরেশতাদের উদ্দেশ্যে তাকে সিজদা করতে নির্দেশ দেন।
“আমি ফেরেশতাদের বললাম-আদমে সিজদা করো” (২:৩৪)
সকল ফেরেশতা সিজদা করলো,ইবলিশ করেনি।ফলে সে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত অভিশপ্ত হলো।সমস্ত ভালো কাজের দুয়ার তার জন্য বন্ধ হলো এবং দুনিয়ায় সংঘটিত সকল মন্দ কাজের দায়ভার নিয়ে সে জাহান্নামের উপযুক্ত বিবেচিত হলো।
মানুষের জন্য কেবলমাত্র আল্লাহকেই সিজদা করার নির্দেশ। গাছ,পাথর, সূর্য, দেবদেবী, প্রকৃতিক অতি প্রাকৃতিক কাউকেই সিজদা করা যাবেনা।
“তোমরা সূর্যকে সিজদা করোনা, চন্দ্রকেও না। সিজদা করো আল্লাহকে” (৪১:৩৭)
সিজদার বাধ্যবাধকতা ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে রাসুল সাঃ বলেন-
“আল্লাহ ছাড়া যদি অন্য কাউকে সিজদা করার অনুমতি আমি দিতাম, তাহলে দুনিয়ার স্ত্রীদের আদেশ করতাম তারা যেনো তাদের স্বামীদের সিজদা করে” (তিরমিযী)
সকল নামাজে সিজদা ফরয,সে নফল হোক বা শুকরিয়ার নামাজ হোক। এটাও ভাবনার যে ক্কিয়াম, রুকু, বৈঠক এক রাকা’তে একবারই হয়, কিন্ত সিজদা হয় দু’টা। সুবহান আল্লাহ। ভুলে একটা সিজদা দিলে নামাজই বাতিল হবে। প্রত্যেকটা সিজদা আবার আগে ও পরে ‘আল্লাহু আকবার’ তাকবির দিয়ে সুরক্ষিত। নামাজে কোন ভুল হলে সংশোধনের জন্য পুনরায় সহু সিজদাই প্রযোজ্য হবে।
শুধু সিজদা একটা পৃথক ইবাদত। নামাজ না পড়েও সিজদা করা যায়, সিজদাতে দোয়া করা যায়। কুরআনে হাকীমে এমন চৌদ্দটা স্থান আছে তেলাওয়াতকারী সে স্থান অতিক্রমকালে সিজদা দিতেই হবে। এগুলো ‘তিলাওয়াতে সিজদা’। এসব আয়াত যিনি তিলাওয়াত করবেন আর যিনি শুনবেন উভয়ের উপরই তিলাওয়াত সিজদা করা ওয়াজিব। নামাজের হালতে এরকম আয়াত আসলে বাকী কার্যক্রম স্থগিত রেখে সাথে সাথে তিলাওয়াতে সিজদা দিতে হবে।
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর তাবত কিছু স্বেচছায় বা অনিচ্ছায় কেবলমাত্র আল্লাহকেই সিজদা করছে। নিয়মিত এই সিজদা চলছে বিরতিহীনভাবে।
“আল্লাহর প্রতি সিজদাবনত হয় আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর তাবত কিছু ইচছায় বা অনিচ্ছায় এবং তাদের ছায়াগুলিও সকাল ও সন্ধ্যায়” (১৩:১৫)
এটা বুঝা আবশ্যক যে এখানে শুধু জমীনে মাথা অবনত করার নামই সিজদা বুঝায়নি। গাছপালা-তরুলতা, চন্দ্র-সূর্য, সাগর-নদী, পাহাড়-পর্বত মাথা নোয়াবার জন্য জমীনে নেমে আসেনা। বরং এখানে সিজদা মানে হলো আল্লাহর আদেশ নিষেধ ও নিয়ম কানুনের কাছে পূর্ণ সমর্পন। আল্লাহর আইনের কাছে অনুগত থেকে তারা প্রত্যেকেই যার যার পরিভ্রমণ, সন্তরন ও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। কেউ মানছে স্বেচ্ছায় বিশ্বাসী হয়ে আর বিশ্বাস না করেও কেউ মেনে চলছে প্রাকৃতিক নিয়ম মনে করে কারণ এই বিধানের বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা কারো নেই। নভোমন্ডলের নেই, নেই ভুমন্ডলেরও ।এমনকি গাছের ডালের এক টুকরো ছায়ারও স্বস্থানে অটল থাকা সম্ভব নয়-নিয়মের সামনে নত হয়ে তাকেও প্রকৃত বস্তুর সাথে সাথে পরিবর্তিত হতে হয়।মানুষ ছাড়া বাকীসব জন্ত জানোয়ার,বস্ত নিশ্চয় ও পদার্থের ক্ষেত্রেরই আনুগত্যই সিজদা। মানুষ আল্লাহর আইন বিধান মানবে এবং একই সাথে সিজদার মাধ্যমে তার এই আনুগত্যের জানান দিবে।
একই বিষয়ে কুরআনের আরো বহুস্থানে আল্লাহ বলেছেন-
“তুমি কি দেখোনা-আল্লাহকে সিজদা করে যাকিছু আছে আকাশমনডলী ও পৃথিবীতে,সূর্য -চন্দ্র, নভোমন্ডলী, পর্বতরাজি, বৃক্ষলতা, জীবজন্তুও  সিজদা করে মানুষের মধ্য অনেকে।” (২২:১৮)
“আল্লাহকেই সিজদা করে যা কিছু আছে আকাশমন্ডলীতে, পৃথিবীতে যত জীবজন্ত আছে তারা এবং ফেরেশতাগণ-তারা কোন অহংকার করেনা বরং ভয় করে তাদের প্রতিপালককে এবং তদেরকে যা আদেশ করা হয় তা তারা পরিপালন করে।” (১৬:৪৮-৪৯)
সিজদা করে বিনীত ও নিরহংকার ভাবে,সিজদা হয় আল্লাহর ভয়ে এবং আদেশ পালনার্থে। প্রকৃতির সিজদা এমন হলে আশরাফুল মাখলুকাত মানুষ বান্দা হিসেবে কেমন অনুভুতির সাথে তার রবকে সিজদা করবে? কেনো মানুষ সিজদায় পড়ে ইমোশনাল হতে পারেনা, কেনো জীবনের দুঃখ কষ্টের কথা বলতে পারেনা, কেনো চোখের পানি ছাড়তে পারেনা?
আহারে মানুষ! তুমিই মাথাটা মাটির জমীনে নোয়াতে পারোনা তোমার সেই মালিকের জন্য যিনি তোমাকে সৃস্টি করেছেন, সুসমভাবে ভারসাম্যপূর্ণ করেছেন, সুন্দর ও সুস্থ আকৃতিতে সাজিয়েছেন, দুনিয়ায় সন্মানজনক একটা অবস্থানও দিয়েছেন-
“হে মানুষ! কিসে তোমাকে তোমার মহান প্রতিপালক সম্পর্কে বিভ্রান্ত করলো?
যিনি তোমাকে সৃস্টি করলেন, অতঃপর তোমাকে সুঠাম করলেন এবং সুসাঞ্জস্য করলেন। তিনি যে আকৃতিতে চেয়েছেন,তিনি তোমাকে গঠন করেছেন”(ইনফিতার: ৬-৮)

অথচ ঘাস লতাপাতাও তার কাছে আনত হয়, সিজদায় পড়ে থাকে।
দয়াময়ের নামে ‘সূরা রাহমানের’ প্রথম কয়টি আয়াত তেলাওয়াত করে দেখুন আপনার কেমন অনুভব হয়-

“আর রাহমান
তিনিই কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন
তিনিই সৃস্টি করেছেন মানুষ
তিনিই তাকে ভাব প্রকাশের জন্য ভাষা শিখিয়েছেন
চন্দ্র ও সূর্য ঘুরে নিজ কক্ষপথে
তরুলতা ও গাছপালা তাঁরই সিজদায় রত”

ওহে আল্লাহর বান্দা !আজ তাঁর কোটি কোটি নিয়ামত অনুগ্রহ স্বাচ্ছন্দে, স্বাধীনভাবে বিনা অর্থে ভোগ করছো, তাঁর হুকুম প্রতিনিয়ত লংঘন স্বত্তেও তিনি তোমার পানাহার কেড়ে নেননি। জীবন সম্পদ দিয়ে সমাজে সুন্দর মর্যাদাপূর্ণ সম্মান দিয়ে রেখেছেন। তোমাকে যেটুকু সামান্য ক্ষমতা প্রভাব দিয়েছেন তার উত্তাপে তুমি গর্ব অহংকারে মেতে উঠো, মাঝে মধ্যে জোর দেখাও,জুলুমও করো
এক সেকেন্ড একটু ভাবো।এই পৃথিবীতে আজ কারো পূর্বপুরুষই বেঁচে নেই। হামান,নমরুদ, ফেরাউন, শাদ্দাদরা অনেক বলশালী অহংকারী ছিলো। গোটা সাম্রাজ্য পাহারা লাগিয়েও মৃত্যুর ফেরেশতার আগমন রুখতে পারেনি। ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্ট অত্যাচারী হিসেবেই পৃথিবীবাসী তাদের চিনে আর তারই সাক্ষী হয়ে তাদের কংকাল যাদুঘরে রক্ষিত হয়েছে। তোমার আমার পরিণতি এর চেয়ে ব্যতিক্রম হবেনা-এটাই সত্য
তোমার ভোগ করা লক্ষ কোটি নিয়ামতরাজির মূল্য তিনি শ্রম বা অর্থে চান না। আর সে মূল্য পরিশোধের সক্ষমতা পৃথিবীর কারো নেই। তিনি কেবল একটি সিজদা তোমার কাছে চান।আজ তোমার কত ব্যস্ততা।অফিসের বড় বস,ব্যবসাতে কনগ্লুমেরেট,রাজনীতিতে ভি আই পি। সিজদার সময় কোথায়? সারাদিনে চব্বিশ ঘন্টায় পাঁচ ওক্ত নামাজে বড়জোর আধঘন্টা, সতেরো রাকাত ফরয, চৌত্রিশটা সিজদা। মিটিং, কনফারেন্স, হাঁট-বাজার, ট্রাফিক জ্যাম,বিমান অপেক্ষা, ক্রিকেট ম্যাচ, টিভি সিরিয়াল, সোস্যাল প্রোগ্রাম কোনটিই বন্ধ নেই-শুধু মহান রবের সিজদার বেলায় বদ্ধমুষ্টি
দুনিয়ায় উপরের দায়িত্বশীল কেউ একবার একটা আদেশ করলে খেয়ে না খেয়ে সেটা পালন করতে বাধ্য ছিলাম।কারণ তা লংঘনের পরিনতি জানতাম ভালো করে। সব মনিবের মনিব আল্লাহতালা কুরআনে প্রায় শতবার নামাজের কথা বলেছেন, সেটা কানেই তুললাম না, সেখানে ছিলাম প্রচন্ড রকমের অনিয়মিত অথবা নানা অযুহাতে সেটা স্থগিত রেখেছি
দুনিয়ায় আল্লাহকে সিজদা না করলে আখিরাতের ট্রায়ালে আহকামুলহাকেমীন যখন সিজদা করতে বলবেন তখন কোনভাবেই মাথা নত হবেনা
স্মরণ করো সেদিনের কথা যেদিন পায়ের গোছা উন্মোচন করা হবে, যেদিন তাদের বলা হবে সিজদা করার জন্য। তারা তা করতে পারবেনা। তাদের দৃষ্টি অবনত হবে, হীনতা তাদের আচ্ছন্ন করবে। অথচ যখন তারা নিরাপদ ছিলো তাদেরকে সিজদা করতে দাওয়াত দেয়া হয়েছিলো।” (৬৮:৪২-৪৩)
হে আল্লাহর প্রিয় বান্দা !এই দিনতো দিন নয়, সামনে আরো দিন আছে। অনুতাপ অনুশোচনা করো। বলো-ভুল হয়েছে। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। বুদ্ধিমানের মতো শুধরে নাও।আল্লাহকে প্রতিশ্রুতি দাও, প্রতিজ্ঞা করো, জীবনে আর একটা দিনও সিজদাবিহীন যাবেনা।তোমাকে উদ্দেশ্য করেই আল্লাহ বলছেন-
আল্লাহকে সিজদা দাও এবং তাঁর ইবাদাত করো” (৫৩:৬২)
তোমরা সিজদা দাও আর আমার কাছাকাছি চলে এসো” (৯৬:১৯)
সুতরাং তুমি তোমার পরতিপালকের প্রসংশা মহিমা ঘোষনা করো এবং সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হও। তোমার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার প্রতিপালকের ইবাদাত করো” (১৫:৯৮-৯৯)
প্রখ্যাত সাহাবী ও হাদীস বর্ণনাকারী আবু হুরায়রা রাঃ বলেন,রাসুল সাঃ বলেছেন-
আদম সন্তান যখন সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করে,অতঃপর সে সিজদা করে শয়তান তখন দূরে সরে গিয়ে কাঁদতে থাকে আর বলে-হায় আমাকে সিজদা করতে বলা হয়েছিলো, আমি প্রত্যাখ্যান করেছি। ফলে আমার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত হলো আর আদম সন্তান সিজদা করলো তার জন্য জান্নাত নির্ধারিত হলো।
(মুসলিম,মিশকাত)

মাদআন বিন আবি তালহা রাঃ বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার রাসুল সাঃ এর আজাদ করা গোলাম সাওবান রাঃ এর সাথে দেখা করতে গেলাম।তাকে বললাম,আমাকে এমন একটা আমলের কথা বলে দিন যাতে আমি জান্নাত যেতে পারি। তিনি উত্তর না দিয়ে চুপ থাকলেন। পুনরায় আমি একই আবেদন করলাম, তিনি এবারও নিরব থাকলেন। আমি তৃতীয়বার পুনরাবৃত্তি করলে তিনি বললেন, তুমি আল্লাহর জন্য অধিক অধিক সিজদা করাকে অভ্যাস বানিয়ে নাও।তাহলে এক এক সিজদার বদলে এক এক ধাপ মর্যাদা বাডিয়ে দিবেন এবং সমপরিমান গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।
(মুসলিম,তিরমিযী,ইবনে মাযাহ,নাসায়ী)

আবু হুরায়রা রাঃবর্ণিত। তিনি বলেন,রাসুল সাঃ বলেছেন-
বান্দা যখন সিজদায় থাকে তখন সে তার প্রতিপালকের অধিক কাছাকাছি থাকে। সুতরাং ঐ সময় তোমরা বেশী বেশী প্রার্থনা করো।
(মুসলিম)

আবু বাকরা রাঃ বলেন,নবী কারীম সাঃ এর কাছে যখনই কোন খুশির খবর আসতো,আল্লাহ তা’লার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরুপ তিনি সিজদা করতেন।
(আবু দাউদ)

কিয়ামতের দিন সিজদাকারীর চেহারায় নুর চমকাবে, তার সিজদার স্থানসমুহ জ্বলজ্বল করতে থাকবে,পূর্ণিমার চাঁদের মতো আলো ঠিকরে বেরুবে। আল্লাহ পাক কুরআনে রাসুলের সাঃ সাথীদের প্রসংগে বলেন-
“রাসুলের সংগীগণ কাফিরদের প্রতি কঠোর ও নিজেদের পরষ্পরের প্রতি সহনশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তষ্টি কামনায় তুমি তাদেরকে রুকু ও সিজদায় অবনত দেখবে।তাদের লক্ষন তাদের মুখমন্ডলে সিজদার চিহ্ন প্রস্ফুটিত থাকবে” (৪৮:২৯)
নুর উদ্ভাসিত হয় সেইসব ব্যক্তিত্বের চেহারায় যারা রাত গভীরে তাদের রবের সামনে মাথা জমীনে লুটায়। রাত যত গভীর হয় জগত সংসার নীরব নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে। আল্লাহর সাথে তাঁর প্রিয় বান্দার অভিসার চলে। আল্লাহ বলেন-
“কেবল তাঁরাই আমার নিদর্শনাবলী বিশ্বাস করে যাদেরকে তার দ্বারা উপদেশ দেয়া হলে সিজদায় লুকিয়ে পড়ে। তারা তাদের প্রতিপালকের প্রশংসাসহ পবিত্রতা ঘোষণা করে এবং অহংকারে মেতে উঠেনা। তাদের বিছানা থেকে তারা পৃথক হলে তাকে ডাকে (জান্নাতের) আশা ও (জাহান্নামের) আশংকায় এবং তাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে তারা ব্যয় করে।কেউ জানেনা, তাদের কৃতকর্মের বদলায় কি নয়ন প্রীতিকর পুরষ্কার তাদের প্রতিপালক তাদের জন্য লুকিয়ে রেখেছেন।” (৩২:১৫-১৭)
“যে ব্যক্তি রাতের বিভিন্ন অংশে সিজদায় অথবা দাঁড়ানো অবস্থায় অনুগত থাকে, আখিরাতকে ভয় করে এবং তার প্রতিপালকের রাহমাত প্রত্যাশা করে সে কি তার সমান যে তা করেনা।যারা জানে আর যারা জানেনা তারা কি উভয়ে সমান?” (৩৯:৯)
ফেরেশতা কর্তৃক আদম আঃকে সিজদা করার তাতপর্য এটা নয় যে এক আদম সন্তান অপেক্ষাকৃত শ্রেয় অপর আদম সন্তানকে অনুরুপ সিজদা করবে। এই মহড়ায় আল্লাহ এমন শিক্ষা দেননি। পূর্বেই বলেছি মানুষের জন্য একমাত্র এবং কেবলমাত্র আল্লাহকেই সিজদা করতে হবে। মানুষ কখনোই মানুষকে, সে ভক্তি সহকারে, সন্মানের আতিশয্যে বা জগত শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী ভেবে অথবা অতি প্রাকৃতিক কিছু মোযেজা দেখাতে পারে সে কারনে কিংবা হাশর মাঠে ত্রানের গুরু, পীর-মুর্শিদ মনে করে সিজদা করতে পারেনা। এটা সুস্পস্টভাবে শিরক ও আল্লাহর সাথে বিদ্রোহের শামিল।
আমাদের দেশে কতিপয় নামধারী সূফী ও স্বঘোষিত বুজুর্গ এই যুক্তি দেখান যে,
যেহেতু জ্ঞানের দিক থেকে আদম আঃ ফেরেশতাদের চেয়ে উচ্চ মর্যাদায় ছিলেন, আল্লাহ সে কারনে তাঁকে সিজদার হুকুমত করেছেন তাই এটা প্রতিষ্ঠিত যে মানুষের মধ্যেও যারা বাতেনি জ্ঞানে অগ্রসর তাদের সিজদা করা যাবে।এই অর্থে তারা “সন্মানের সিজদা” বা “শানের সিজদা” নামে পীর বুজুর্গকে সিজদা করা বৈধ বলেন। এটা চরম গোমরাহী ও ধৃষ্টতাসুলভ কাজ।আল্লাহর সিজদা বান্দাকে উপহার দিয়ে এই কোন ‘তাজিম’? আমাদের বোধগম্য নয়।
যুক্তি ও আবেগ নির্ভরতা বহু সময় বিশ্বাসের মূলে আঘাত হানে ও বিশ্বাসকে টলিয়ে দেয়।এটাও এমন।আদম আঃ এর ঘটনায় শয়তানের যুক্তিও শানিত ছিলো কিন্ত তা কি সফল হয়েছিলো? মনে রাখতে হবে, ইসলাম সর্বদা কুরআন ও হাদিস নির্ভর,যুক্তি ও পান্ডিত্ব নির্ভর নয়।যুক্তি অনেকাংশেই বিপথগামী করে।যদি তাই সত্যহতো তাহলে আদম আঃ কে কেন মা হাওয়া আঃ সিজদা করলেন না?কেনইবা পুত্র হাবিল ও কাবিল প্রথম নবী ও তাদের বাবা কে সিজদা করলেন না ? কোন বুজুর্গের কবর অবশ্যই কোন সিজদার স্থান নয়, সিজদার স্থান আল্লাহর ঘর মসজিদ। যেখানে মুসলমানেরা ব্যক্তিগত ও দলগতভাব পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে।
“নিশ্চয়ই মসজিদের স্থানসমুহের মালিক আল্লাহ । তোমরা তাঁর সাথে আর কারো বন্দেগী করোনা” (৭২:১৮)
হযরত যুনদুব রাঃ বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসুল সাঃ কে তাঁর ইন্তেকালের তিনদিন পূর্বে বলতে শুনেছি-সাবধান !
তোমরা আমার কবরকে সিজদার স্থান বানিওনা। আমি তোমাদেরকে কঠোরভাবে তা নিষেধ করছি।  (মুসলিম)
হাশরের ময়দানে উম্মতের জন্য সিজদায় পড়ে কাঁদবেন নবীজি।সেই কঠিন মুহূর্তে, যখন সব নবী পর্যন্ত ‘ইয়া রব্বি নাফসি’ বলতে থাকবেন, তখন উম্মতের চিন্তায় শুধু রাসুল (সা.) বলবেন ‘ইয়া রব্বি উম্মাতি, উম্মাতি!’
আনাস (রা.) বর্ণিত।তিনি বলেন,আমাদের কাছে মুহাম্মদ (সা.) বর্ণনা করেছেন যে, কেয়ামতের দিন মানুষ সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে। তাই তারা আদাম (আ.) এর কাছে এসে বলবে, আমাদের জন্য আপনার রবের কাছে সুপারিশ করুন। তিনি বলবেন: এ কাজের জন্য আমি নই। বরং তোমরা ইবরাহিম (আ.) এর কাছে যাও। কারণ, তিনি হলেন আল্লাহর খলিল। তখন তারা ইবরাহিম (আ.) এর কাছে যাবে। তিনি বলবেন: আমি এ কাজের জন্য নই। তবে তোমরা মুসা (আ.) এর কাছে যাও, কারণ তিনি আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছেন। তখন তারা মুসা (আ.) এর কাছে আসবে। তিনি বলবেন: আমি তো এ কাজের জন্য নই। তোমরা ঈসা (আ.) এর কাছে যাও। কারণ তিনিই আল্লাহর রুহ ও বাণী। তারা তখন ঈসা (আ.) এর কাছে যাবে। তিনি বলবেন: আমি তো এ কাজের জন্য নই। তোমরা বরং মুহাম্মদ (সা.) এর কাছে যাও। এরপর তারা আমার কাছে আসবে। আমি বলব, আমিই এ কাজের জন্য। আমি তখন আমার রবের কাছে অনুমতি চাইবো। আমাকে অনুমতি দেওয়া হবে। আমাকে প্রশংসাসূচক বাক্য ইলহাম করা হবে, যা দিয়ে আমি আল্লাহর প্রশংসা করবো, যেগুলো এখন আমার জানা নেই। আমি সেসব প্রশংসা বাক্য দিয়ে প্রশংসা করবো এবং সিজদায় পড়ে যাবো। তখন আমাকে বলা হবে, ইয়া মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও। তুমি বলো, তোমার কথা শোনা হবে। তুমি চাও, তোমাকে দেওয়া হবে। সুপারিশ করো, তোমার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। তখন আমি বলবো, হে আমার প্রতিপালক! আমার উম্মত! আমার উম্মত! বলা হবে, যাও, যাদের অন্তরে যবের দানা পরিমাণ ঈমান আছে, তাদের জাহান্নাম থেকে বের করে দাও। আমি গিয়ে এমনই করবো। তারপর আমি ফিরে আসবো এবং ফের সেসব প্রশংসা বাক্য দ্বারা আল্লাহর প্রশংসা করবো এবং সিজদায় পড়ে যাবো। তখন বলা হবে, হে মুহাম্মদ! মাথা উঠাও। তোমার কথা শোনা হবে। চাও, দেওয়া হবে। সুপারিশ কর, গ্রহণ করা হবে। তখনও আমি বলবো, হে আমার রব! আমার উম্মত! আমার উম্মত! তখন বলা হবে, যাও, যাদের এক অণু কিংবা সরিষা পরিমাণ ঈমান আছে তাদের জাহান্নাম থেকে বের করে আনো ।আমি গিয়ে তাই করবো। আমি আবার ফিরে আসবো এবং সেসব প্রশংসা বাক্য দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করবো। আর সিজদায় পড়ে যাবো। আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মদ! মাথা উঠাও। বলো, তোমার কথা শোনা হবে। চাও, তোমাকে দেওয়া হবে। সুপারিশ করো, তোমার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। আমি তখন বলবো, হে আমার রব, আমার উম্মত! আমার উম্মত! এরপর আল্লাহ বলবেন, যাও, যাদের অন্তরে সরিষার দানার চেয়েও অতি ক্ষুদ্র পরিমাণও ঈমান আছে, তাদেরও জাহান্নাম থেকে বের করে আনো। আমি যাবো এবং তাই করবো...
(সহীহ বুখারি)
ওগো নবীর উম্মত! এমন ভালোবাসা ও কান্নার ঋণ পরিশোধ করতে পারবে কি কোনদিন? যদি না আমরা আল্লাহর হুকুম মতো প্রতিদিনের বাধ্যতামূলেক সিজদাগুলো না দিই।আল্লাহর হুকুম লংঘনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলে তো নবীর সুপারিশ আমাদের ভাগ্যে হবেনা।
জমিনের জীবিত লোকগুলো ‘হাইয়্যা আলাস সালাহ’ নামাজের দিকে আসো, ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ কল্যাণের পথে আসো- মসজিদের মিনার থেকে এই আহ্বান শুনেও এড়িয়ে যায় আর কবরবাসীরা আল্লাহর কাছে মিনতি করছে- আমাদের আর একটা সুযোগ দাও, জমীনে তোমাকে সিজদা দিয়ে ফিরে আসি। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দিক।
কবি নজরুলের ভাষায় -
ঘুমাইয়া কাজা করেছি ফজর,
তখনো জাগিনি যখন যোহর,
হেলা ও খেলায় কেটেছে আসর
মাগরিবের আজ শুনি আজান।
জামাত শামিল হওরে এশাতে
এখনো জমাতে আছে স্থান।।
রেফারেন্স: From the Post of Zaman Shams

Thursday, December 5, 2019

ইসলামের সৌন্দর্য হলো ধৈর্য

জীবনের ২টি বড় যোদ্ধার নাম ১. ধৈর্য আর ২. সময়। তাই মনে রাখবে বড় কিছু পেতে গেলেই সময় লাগবে। রাতরাতি কখনোই সফলতা আসেনা।
কুরআনে এমন  কিছু আয়াত রয়েছে যেগুলো আমাদেরকে জীবনের বাস্তবতা মনে করিয়ে দেয় কিছু আয়াত রয়েছে যা আমাদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়: আমরা কীভাবে নিজেরাই নিজেদের জীবনটাকে কষ্টের মধ্যে ফেলে দিই আর কিছু আয়াত রয়েছে যা আমাদেরকে জীবনের সব দুঃখ, কষ্ট, ভয় হাসিমুখে পার করার শক্তি যোগায় 
কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ইয়া আইয়ুহাল্লাজিনা আমানুছতাঈনু বিছছবরি ওয়াছ ছলাতি; ইন্নাল্লাহা মাআছ ছাবিরিনঅর্থ: হে মুমিনগণ! ধৈর্য সালাতের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা করো নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন (পারা: , সূরা- বাকারা, আয়াত: ১৫৩)
ধৈর্যের গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআন মজিদে বলেছেন, ‘মহাকালের শপথ, মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্তু তারা
নয়, যারা ইমান আনে সতকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ধৈর্যের উপদেশ দেয় (পারা: ৩০, সূরা-১০৩
আসর, আয়াত: -)
হিলম তথা সহিষ্ণুতা সম্পর্কে মহাগ্রন্থ আল কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ওয়া ইন্নাল্লাহা লাআলিমুন হালিমঅর্থাত এবং আল্লাহই তো সম্যক প্রজ্ঞাময়, পরম সহনশীল (পারা: ১৭, সূরা-২২ হজ, আয়াত: ৫৯) ছবর, অর্থাত ধৈর্য সম্পর্কে কোরআন মজিদে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ইন্না ওয়াজাদনাহু ছাবিরা; নিমাল আবদু, ইন্নাহু আউওয়াব অর্থ: আমি তো তাকে পেলাম ধৈর্যশীল কত উত্তম বান্দা সে! সে ছিল আমার অভিমুখী (পারা: ২৩, সূরা-৩৮ সাদ, আয়াত: ৪৪)ইন্না ফি জালিকা লাআতিল লিকুল্লি ছব্বারিন শাকুরঅর্থ: নিশ্চয় এতে তো নিদর্শন রয়েছে প্রত্যেক পরম ধৈর্যশীল পরম কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য (পারা: ১৩, সূরা-১৪ ইবরাহিম, আয়াত: )
ধৈর্য মানবজীবনে পরীক্ষাস্বরূপ আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জাত কোরআনুল আজিমে বলেন, ‘তাবারকাল্লাজি বিইয়াদিহিল মুলকু ওয়া হুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কদির আল্লাজি খলাকাল মাওতা ওয়াল হায়াতা, লিইয়াবলুওয়াকুম আইয়ুকুম আহ্ছানু আমালা; ওয়া হুওয়াল আজিজুল গফুরঅর্থ: মহামহিমান্বিত তিনি সর্বময় কর্তৃত্ব যাঁর করায়ত্ত; তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু জীবন, তোমাদিগকে পরীক্ষা করার জন্যকে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল (পারা: ২৯, সূরা-৬৭ মুলক, আয়াত: -)
তাদের ওপর বিপদ আপতিত হলে বলে, (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) ‘আমরা তো আল্লাহর এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী (পারা: , সূরা- বাকারা, আয়াত: ১৫৫-১৫৭)
আজও আমরা বিপদ-আপদে পড়লে পড়ি, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ (নিশ্চয় আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে আমরা তাঁর নিকটেই প্রত্যাবর্তনকারী) কিন্তু এটি আমরা পড়ি অধৈর্য হয়ে পড়লে তখনই মূলত আমরা এর দর্শন ভুলে গিয়ে এটিকে প্রথায় পরিণত করেছি
হজরত মুহাম্মদ (সা.)কে উদ্দেশ করে কোরআন কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ফাছবির লিহুকমি রব্বিকা ওয়া লা তাকুন কাছাহিবিল হুত, ইজ নাদা ওয়া হুওয়া মাকজুমঅর্থ: অতএব, তুমি ধৈর্য ধারণ করো তোমার প্রতিপালকের নির্দেশের অপেক্ষায়, তুমি ৎস্য-সহচরের (ইউনুস আলাইহিস সালাম) ন্যায় অধৈর্য হয়ো না, সে বিষাদ আচ্ছন্ন অবস্থায় কাতর প্রার্থনা করেছিল (পারা: ২৯, সূরা-৬৮ কলম, আয়াত: ৪৮)
আমাদের উচিত সকল অনভিপ্রেত অবস্থায়, যেকোনো অযাচিত পরিবেশে অনাহূত পরিস্থিতিতে নিজেকে সংযত রেখে দৃঢ়তার সঙ্গে লক্ষ্যপানে এগিয়ে যাওয়া তবেই আল্লাহর সাহায্য আমাদের সাথি হবে, আল্লাহ আমাদের সঙ্গী হবেন
যেমন, হজরত মুসা (.) নদীপাড়ে এসে নদী পারাপারের উপায় না দেখে সমূহ বিপদ দর্শনে উম্মতকে সান্ত্বনা দিয়ে দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে দৃপ্তকণ্ঠে বলেছিলেন, ‘কালা কাল্লা! ইন্না মায়িয়া রব্বি ছাইয়াহদিনঅর্থ: (মুসা আলাইহিস সালাম) বলল, ‘কখনোই নয়! (আমরা ধরা পড়ব না, পরাজিতও হব না, কারণ) আমার সঙ্গে আছেন আমার প্রতিপালক; সত্বর তিনি আমাকে পথনির্দেশ করবেন’ (পারা: ১৯, সূরা-২৬ শোআরা, আয়াত: ৬২)
ধৈর্য সহিষ্ণুতা হচ্ছে তিন ভাগে বিভক্ত
এক. বিপদের সময় ধৈর্য
দুই. আল্লাহর নির্দেশ পালনের ক্ষেত্রে ধৈর্য
তিন. পাপকার্য থেকে বিরত থাকার ক্ষেত্রে ধৈর্য
একবার রাসুলে করিম (সা.) এক মহিলার পাশ দিয়ে অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন তিনি একটি কবরের পাশে বসে কাঁদছিলেন তিনি তাকে বলেন, ‘আল্লাহকে ভয় কর এবং ধৈর্য ধারণ করসে বলল, নিজের পথে কেটে পড় তুমি তো আর আমার মতো বিপদে পড়নি সে নবী করিম (সা.) কে চিনতে পারেনি তাকে বলা হলো, তিনি নবী রাসুলুল্লাহ (সা.) ফলে সে (ভীত-শঙ্কিত হয়ে) নবী করিম (সা.) এর বাড়ির দরজায় হাজির হলো সেখানে সে কোনো দ্বাররক্ষী দেখতে পেল না সে বলল, আমি আপনাকে চিনতে পারিনি নবী করিম (সা.) বলেন, ‘বিপদের প্রথম আঘাতে ধৈর্য ধারণই হচ্ছে প্রকৃত ধৈর্য’ (বুখারি: ৬৭৩৫) 
আবূ মালিক হারিস ইবনুআসেম আশআরী রাদিয়াল্লাহুআনহু থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘পবিত্রতা অর্ধেক ঈমান আরআলহামদু লিল্লাহ’ (কিয়ামতে নেকীর) দাঁড়িপাল্লাকে ভরে দেবে এবংসুবহানাল্লাহআলহামদু লিল্লাহআসমান যমীনের মধ্যস্থিত শূন্যতা পূর্ণ করে দেয় নামায হচ্ছে জ্যোতি সাদকাহ হচ্ছে প্রমাণ ধৈর্য হল আলো আর কুরআন তোমার স্বপক্ষে অথবা বিপক্ষে দলীল প্রত্যেক ব্যক্তি সকাল সকাল সবকর্মে বের হয় এবং তার আত্মার ব্যবসা করে অতঃপর সে তাকে (শাস্তি থেকে) মুক্ত করে অথবা তাকে (আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত রে) বিনাশ করে
সহীহুল বুখারী ২২৩, মুসলিম ৩৫১৭, ইবনু মাজাহ ২৮০, আহমাদ ২২৩৯৫, ২২৪০১, দারেমী ৬৫৩
ধৈর্য ধারণের মতো কঠিক কাজের পুরস্কারও অপরিসীম আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদের অগণিত পুরস্কার দেওয়া হবে’ (সূরা জুমার: ১০) ধৈর্য ধারণের মাধ্যমে বিপদ-আপদ মোকাবিলার মাঝে রয়েছে আল্লাহর অপার সন্তুষ্টি পুরস্কার আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘পূর্ব পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফেরানোতে কোনো পুণ্য নেই; কিন্তু পুণ্য আছে অর্থ সংকটে, দুঃখ-ক্লেশে সংগ্রামে-সংকটে ধৈর্য ধারণ করলে’ (সূরা বাকারা: ১৭৭)
রেফারেন্স:
আল কুরআন
আল হাদীস