Tuesday, December 22, 2020

অনুপ্রেরণা

 মুসলিম মনীষীদের মায়েরা

মানব সভ্যতা বিনির্মাণে নারীর অবদান অনস্বীকার্য। সভ্যতার উন্নয়নে মানবজাতির পদচারণে পুরুষের পাশাপাশি আছে নারীরও শাশ্বত অবদান। তাই আদর্শ সমাজ ও জাতি গঠনে পুরুষের পাশাপাশি নারীরও অগ্রণী ভূমিকা থাকা জরুরি। একজন সভ্য নারী একটি শিক্ষিত প্রজন্ম উপহার দিতে পারে। তাই মুসলিম ইতিহাসের মহামনীষীদের বেড়ে ওঠার পেছনে মায়েদের সর্বাধিক ভূমিকা ছিল। যুগে যুগে মুসলিম মনীষীদের মায়ের ভূমিকা নিম্নে তুলে ধরা হলো।
সুফিয়ান সাওরি (রহ.)-এর মা : সুফিয়ান সাওরি একজন জগদ্বিখ্যাত হাদিসবিশারদ ও ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞ। ব্যক্তিত্ব গঠনের পেছনে তাঁর মায়ের অবদান ছিল। মা তাঁর লেখাপড়া ও ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন। সুফিয়ান সাওরি (রহ.) বলেন, ‘আমি ইলম অর্জন করতে গিয়ে তীব্র অর্থ সংকটে পড়ি। সমস্যা সমাধানের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি। এরপর মা আমাকে বলল, হে আমার বতস! তুমি ইলম অর্জন করো, আমি তোমার খরচের দায়িত্ব নিলাম। কাপড় সেলাই করে আমি তোমার খরচ সরবরাহ করব।’
মালেক ইবনে আনাস (রহ.)-এর মা : মালেক ইবনে আনাস (রহ.)-এর মায়ের ব্যাপারে ইবনে আবু উওয়াইস বলেন, ‘আমার মামা মালেক ইবনে আনাস বলেন, ছোটবেলায় মা আমাকে সাজিয়ে দিতেন। সুন্দর কাপড় পরাতেন। মাথায় পাগড়ি বেঁধে দিতেন। ইলম শেখার জন্য আমাকে মা রাবিয়া ইবনে আবু আবদুর রহমানের দরবারে পাঠাতেন। আর বলতেন, হে বতস! রাবিয়ার দরবারে যাও। তাঁর থেকে হাদিস ও ফিকহ শেখার আগে তাঁর কাছে শিষ্টাচার শেখো।’
ইমাম শাফেয়ি (রহ.)-এর মা : জন্মের দুই বছর পর ইমাম শাফেয়ি (রহ.)-এর বাবা মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর মা তাঁকে নিয়ে গাজা থেকে মক্কায় চলে আসেন। সাত বছর বয়সে তাঁকে কোরআন শিক্ষা দেন। বিশুদ্ধ আরবি ভাষা শিখতে মা তাঁকে আরবের বেদুইন গ্রামে পাঠান। এরপর মা তাঁকে তীর নিক্ষেপ ও অশ্ববিদ্যা শিক্ষা দেন। ইমাম শাফেয়ি (রহ.) নিজ মা সম্পর্কে বলেন, ‘আমার মা আমার বেড়ে ওঠার তত্ত্বাবধান করেন। শিক্ষকের বেতন দেওয়ার সামর্থ্যও মায়ের ছিল না। মক্তবে পড়তাম আর শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে ছাত্রদের পড়াতাম। সাত বছরে কোরআন হিফজ করি। ১০ বছর বয়সে ‘মুওয়াত্তা’ হাদিস গ্রন্থ মুখস্থ করি। অতঃপর মসজিদে বড় আলেমদের মজলিসে যাতায়াত শুরু করি। কিন্তু তখন লেখার জন্য কাগজ কেনার সামর্থ্যও আমাদের ছিল না। হাড্ডি বা সরকারি পরিত্যক্ত কাগজে লিখতাম। একদিন মাকে আমি বললাম, ‘মা! আমি এখন ইলমের জন্য বিনয় ও শিক্ষকের কাছে শিষ্টাচারী হওয়া শিখেছি।’ মায়ের নিবিড় পরিচর্যা ও পরিশ্রমের ফলে মাত্র ১৫ বছর বয়সে ফতোয়া প্রদানের অনুমতি পান।
ইমাম বুখারি (রহ.)-এর মা : ইমাম বুখারি শৈশবেই বাবাকে হারান। তাঁর মা ছিলেন অত্যন্ত খোদাভীরু ও দ্বিনদার। মায়ের তত্ত্বাবধানে তিনি পড়াশোনা শুরু করেন। ঐতিহাসিকরা বলেন, শৈশবে ইমাম বুখারি (রহ.) দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। তাঁর মা আল্লাহর কাছে অনবরত দোয়ার ফলে আল্লাহ তাআলা তাঁর দৃষ্টি ফিরিয়ে দেন। ১৬ বছর বয়সে মায়ের সঙ্গে হজ করেন।
ইবনে তায়মিয়া (রহ.)-এর মা : শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) ইসলামী ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মনীষীদের অন্যতম। মায়ের নিবিড় পরিচর্যা ও নির্দেশনায় ইতিহাসের পাতায় তিনি চিরস্মরণীয়। ইতিহাসে তিনি শায়খুল ইসলাম নামে পরিচিত। সিত্তুন নাইম বিনতে আবদুর রহমান ছিলেন তাঁর মা। মা তাঁকে এক চিঠিতে লেখেন, ‘ইসলাম ও মুসলিমদের সেবার জন্য আমি তোমাকে তিলে তিলে গড়েছি। তোমাকে দ্বিন শিক্ষা দিয়েছি। আমার কাছে থাকার চেয়ে তুমি দেশ-বিদেশে সফর করে ইসলাম ও মুসলিমের সেবা করো। এটাই আমার কামনা। তুমি দ্বিনের সেবা করলে তোমার প্রতি আমি পুরোপুরি সন্তুষ্ট। কিন্তু তুমি ইসলাম ও মুসলিমদের সেবা না করলে আল্লাহর কাছে আমি তোমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করব।’
মুহাম্মদ আল ফাতিহ (রহ.)-এর মা : মুহাম্মদ আল ফাতিহ (রহ.) কনস্টান্টিনোপলের বিজেতা। রাসুল (সা.)-এর সুসংবাদপ্রাপ্ত সেনাপতি। শৈশবে ফজরের সময় মা তাঁকে ঘুম থেকে তুলে কনস্টান্টিনোপলের দেয়াল দেখিয়ে বলতেন, হে মুহাম্মদ! একদিন তুমি এই অঞ্চল জয় করবে। রাসুল (সা.) তোমার সম্পর্কে সুসংবাদ দিয়েছেন। তুমিই হবে রাসুল (সা.)-এর সুসংবাদপ্রাপ্ত আমির। তখন তিনি প্রশ্ন করেন, এত বড় অঞ্চল কিভাবে আমি জয় করব? তার মা উত্তরে বলেন, কোরআন, ক্ষমতা, অস্ত্র এবং মানুষের ভালোবাসা দিয়ে তা জয় করবে। মা তাঁকে শুধু আশা দেখিয়ে থেমে যাননি, বরং তাঁকে যোগ্যতর করে গড়ে তুলেছেন। অন্তরে রোপণ করেছেন কোরআন ও মানবতার ভালোবাসা। তাকে শিক্ষা দিয়েছেন ধৈর্য ও অবিচলতা।
বদিউজ্জমান সাইদ নুরসি (রহ.)-এর মা : বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সংস্কারক বদিউজ্জমান সাইদ নুরসি। তাঁর জীবন ও ব্যক্তিত্ব গঠনে তাঁর মায়ের অবদান ছিল। মায়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘তাঁর মা কখনো সন্তানকে অজু ছাড়া দুধ পান করাতেন না।’ নুরসি বলেন, ‘আল্লাহর শপথ! আমি মায়ের কাছে জীবনের মৌলিক শিক্ষা গ্রহণ করি। তা আমার হৃদয়জুড়ে গেঁথে আছে। চিন্তার প্রতিটি শাখায় মিশে আছে আমার মায়ের দেওয়া শিক্ষা। ৮০ বছর বয়সে জীবনের পড়ন্ত বেলায়ও মায়ের শিক্ষা আমাকে পথ দেখায়।’
আহমদ শাহ আবদালির মা : আহমদ শাহ আবদালির মা ছিলেন জরগুনা খাতুন। আহমদ শাহ আবদালিকে আধুনিক আফগানিস্তানের জনক বলা হয়। পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে মায়ের কাছে তাঁর কনিষ্ঠ ভাইয়ের পরাজয় ও বন্দি হওয়ার খবর আসে। তখন আবদালিকে মা বলেন, ‘অসম্ভব, আমার ছেলে পরাজিত ও বন্দি হতে পারে না। হয় সে গাজি হবে, না হয় শহীদ হবে। কেননা আমি তোমাদের দুই ভাইকে কখনো অজু ছাড়া বুকের দুধ পান করাইনি।’ অবশেষে জরগুনা খাতুনের ধারণা সত্য হয়। দুই ভাই বিজয়ী হয়ে ফেরেন।
(ইসলামিক স্টোরি ডটকম অবলম্বনে)

বেশি হতাশাগ্রস্ত

 যে লক্ষণগুলো প্রকাশ করে আপনি অনেক বেশি হতাশাগ্রস্ত

হতাশাগ্রস্ত মানুষের মনস্তাত্ত্বিক লক্ষণগুলো
উচ্চমাত্রার হতাশায় ভুগলেঃ
১. সামাজিকতাকে এড়িয়ে চলবে
২. শারীরিকভাবে নানা রকমের অসুস্থতা দেখা দেবে
৩. ঘুমে পরিবর্তন ঘটবে
৪. দ্রুত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়বে
৫. একই কাজ বারবার করবে (নিষ্কৃতি কবিতা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
৬. কাজ হতে পারে হতাশার সোপান
৭. মন মেজাজ খারাপ থাকবে
৮. পরিবারে হতাশাগ্রস্ত কেউ থাকবে
হতাশা কেন?
• দীর্ঘদিন ধরে নেতিবাচক অবস্থার মধ্য দিয়ে গেলে হতাশা কাজ করতে পারে।
• কারো কারো ব্যক্তিত্বের ধরনই নেতিবাচক থাকে। তারা হতাশবোধ করে।
• সমস্যা মোকাবিলা করার দক্ষতা কম থাকলে ভয় পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ে।
• সমস্যা সমাধানের দক্ষতা কম থাকলেও সমস্যার মধ্যে আটকে যায়, ঘুরপাক খেতে থাকে হতাশার ভেতর।
• কারো কারো চিন্তার মধ্যে ত্রুটি থাকে। কোনো কোনো ঘটনায় সে ব্যর্থ হলে, সে ভাবে সারা জীবন সে ব্যর্থ হবে। একবার একটি কাজ না পারলে দ্রুত উপসংহারে পৌঁছে যায়, ভাবে কিছু হবে না। এসব ভেবে হতাশ হয়।
• অনেকে তুচ্ছ ঘটনাকে বড় করে দেখে। আর এগুলো ভাবতে ভাবতে হতাশার মধ্যে ডুবে যায়।
• কখনো কখনো একাকীত্বের কারণে মানুষ হতাশবোধ করে।
• অনুভূতি শেয়ার করার মতো কাউকে পায় না, পারিবারিক সাহায্য থাকে না, তখন হতাশ হয়ে যায়।
• পরিবার থেকে যদি সারাক্ষণ দোষারোপ করতে থাকে, বিপদে পড়লে ব্যক্তিকে সাহায্য না করে, তখন ব্যক্তির মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব হয়, তখন উদ্যোগ নেওয়া ছেড়ে দেয় এবং হতাশ হয়।
• অনেক সময় বেকারত্বের কারণে মানুষ হতাশবোধ করে।
• অর্থনৈতিক অসুবিধার কারণে মানুষ হতাশ হয়।
• সম্পর্কের টানাপড়েনের কারণেও অনেক সময় মানুষ হতাশ হয়ে পড়ে।
• লেখাপড়ায় অকার্যকারিতার জন্য মানুষ হতাশ হয়।
হতাশ হলে ব্যক্তির মানসিক সমস্যাঃ
• ব্যক্তি মনমরা হয়ে থাকে।
• কোনো বিষয়ে আনন্দ খুঁজে পায় না।
• মনোযোগের অভাব ঘটে।
• ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
• খাওয়ার সমস্যা হতে পারে।
• আবেগের তারতম্য হতে পারে।
• অনেক সময় দুর্বল লাগে।
• মাথা ঘোরে।
• পেট গুলায়।
• কাজের গতি কমে যায়।
• ব্যক্তি অন্যমনষ্ক থাকে।
• কাজের গতি কমে যায়।
• নিজেকে অন্যদের কাছ থেকে গুটিয়ে নেওয়ার ইচ্ছে হয়।
আমেরিকান সাইক্রিয়াটিক সেন্টারের মতে, ডিপ্রেশনের কিছু লক্ষণঃ
১। সবসময় বিরক্ত, অশান্তি বা অস্বস্তি কিংবা ক্লান্তিবোধ করা
২। চিন্তা চেন্তনা বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দূর্বল হয়ে পড়া
৩। ইনসমনিয়া বা নিদ্রাহীনতা অথবা অতিরিক্ত ঘুম
৪। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন। খুব বেশি খাওয়া কিংবা খাওয়া একেবারে কমিয়ে দেওয়া
৫। নিজের ভেতর দূর্বলতা অনুভব করা
৬। কারণ ছাড়াই প্রচন্ড কান্না পাওয়া
৭। কারণ ছাড়াই প্রচন্ড মাথাব্যাথা বা শারীরিক অসুস্থতা
৮। প্রচন্ড নিরাশায় থাকা
৯। নিজেকে সামাজিক এবং নিজস্ব ব্যক্তিগত জীবন থেকে গুটিয়ে নেওয়া
১০। সবশেষে মৃত্যু কিংবা আত্মহত্যা নিয়ে চিন্তা শুরু করা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নিষ্কৃতি‘ কবিতায় হতাশার এক বিশাল চিত্র পাবেন পড়লে।
পারিবারিক জীবনে হতাশার এক সুবিশাল চিত্র এই কবিতায় রয়েছে। সমাধানও আছে সেখানে।
কবি আলফ্রেড টেনিসন তার Tears, Idle Tears কবিতার প্রথম দিকে হতাশার কথা বলেছেনঃ
Tears, idle tears, I know not what they mean,
Tears from the depth of some divine despair
Rise in the heart, and gather to the eyes,
In looking on the happy Autumn-fields,
And thinking of the days that are no more.
ইসলাম মানুষকে হতাশ হতে বারন করেছে।
আল কুরআন বলেঃ
আর নিশ্চয়ই আমরা ভীতি, অনাহার, প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে এবং উপার্জন ও আমদানী হ্রাস করে তোমাদের পরীক্ষা করবো ৷ এ অবস্থায় যারা সবর করে। - সূরা আল বাকারাহ আয়াত ১৫৫
এবং যখনই কোন বিপদ আসে বলেঃ “আমরা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর দিকে আমাদের ফিরে যেতে হবে। সূরা আল বাকারাহ আয়াত ১৫৬
“A great novel could be written about each one of us. We all have wondrous tales written across our faces. Some are epic, some are tragic, some are hilarious, some elegiac and of course some are spare, but none could be uninteresting”.
মানুষের জন্য প্রযোজ্য এ সংজ্ঞাটি মনে রাখলে হতাশা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভবঃ
A MAN IS A PHYSICO-CHEMICAL SYSTEM WITH A SPECIFIC AND VARYING LEVEL OF ORGANISAION PATTERN, SELF REGULATIVE, SELF PERPETUATING IN CONTINUOUS ADJUSTMENT WITH THE ENVIRONMENT. - C.P. HICKMANN
সূত্রগুলোঃ
পিন্টারেস্ট
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আলফ্রেড টেনিসন
বিভিন্ন পত্রিকা
মনোবিজ্ঞান বিভাগ, ঢা.বি
নিজ মাথা
আল কুরআন

জান্নাতের বিভিন্ন নাম যা আছে আল কুরআনে

জান্নাত হলো কিয়ামতের দিন আল্লাহর নেক বান্দাদের প্রাপ্ত পুরস্কারের নাম, যা অসংখ্য নিয়ামতে ভরপুর থাকবে। সেখানে কোনো অভাব থাকবে না, কোনো হতাশা থাকবে না। কারো বার্ধক্য আসবে না, কারো রোগব্যাধি হবে না। যারা সেখানে যাবে তাদের কোনো কিছুরই অপূর্ণতা থাকবে না। জান্নাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ বলেছেন, আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্য এমন জিনিস তৈরি করে রেখেছি, যা কোনো চক্ষু দেখেনি, কোনো কান শোনেনি এবং যার সম্পর্কে কোনো মানুষের মনে ধারণাও জন্মেনি। তোমরা চাইলে এ আয়াতটি পাঠ করতে পারো, ‘কেউ জানে না, তাদের জন্য তাদের চোখ শীতলকারী কী জিনিস লুকানো আছে।’ (সুরা : আস সাজদাহ, আয়াত : ১৩)। (বুখারি, হাদিস : ৩২৪৪)

পবিত্র কোরআনের বহু আয়াতে মহান আল্লাহ জান্নাতের কথা উল্লেখ করেছেন। সেখানে জান্নাতকে অবহিত করা হয়েছে বিভিন্ন নামে। আজ আমরা সেই নামগুলো জানার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
দারুস সালাম (শান্তির আবাস) : পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, তাদের রবের কাছে তাদের জন্য রয়েছে শান্তির আবাস এবং তারা যা করত তার জন্য তিনিই তাদের অভিভাবক। (সুরা : আনআম, আয়াত : ১২৭)
এই আয়াতে মহান আল্লাহ ‘দারুস সালাম’ নামে জান্নাতের কথা উল্লেখ করেছেন, যার অর্থ শান্তির আবাস।
দারুল মুত্তাকিন (মুত্তাকিদের আবাসস্থল) : মহান আল্লাহ তাঁর মুত্তাকি বান্দাদের ভীষণ ভালোবাসেন, তাই তিনি পবিত্র কোরআনে জান্নাতকে ‘দারুল মুত্তাকিন’ বা মুত্তাকিদের ঘর বলে অবহিত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, আর যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছিল তাদেরকে বলা হলো, তোমাদের রব কী নাজিল করেছেন? তারা বলল, মহাকল্যাণ। যারা সৎ কাজ করে তাদের জন্য আছে এ দুনিয়ায় মঙ্গল এবং আখিরাতের আবাস আরো উৎকৃষ্ট। আর মুত্তাকিদের আবাসস্থল কত উত্তম! (সুরা : নাহল, আয়াত : ৩০)
আল হুসনা (শুভ পরিণাম) : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ভালো কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম (জান্নাত) এবং আরো বেশি। আর ধুলোমলিনতা ও লাঞ্ছনা তাদের চেহারাগুলোকে আচ্ছন্ন করবে না। তারাই জান্নাতবাসী। তারা তাতে স্থায়ী হবে। (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ২৬)
দারুল মুকামাহ (স্থায়ী আবাস) : মহান আল্লাহ বলেন, যিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদেরকে স্থায়ী আবাসে প্রবেশ করিয়েছেন, যেখানে কোনো ক্লেশ আমাদেরকে স্পর্শ করে না এবং কোনো ক্লান্তিও স্পর্শ করে না। (সুরা : ফাতির, আয়াত : ৩৫)
এই আয়াত মহান জান্নাতকে ‘দারুল মুকামাহ’ বা স্থায়ী আবাস বলে অভিহিত করেছেন, যেহেতু জান্নাতে প্রবেশকারীরা সেখানে স্থায়ী হবে।
আল গুরফাহ (সুউচ্চ কক্ষ) : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, তারাই, যাদের প্রতিদান হিসেবে দেওয়া হবে জান্নাতের সুউচ্চ কক্ষ, যেহেতু তারা ছিল ধৈর্যশীল। আর তারা প্রাপ্ত হবে সেখানে অভিবাদন ও সালাম। (সুরা : আল-ফুরকান, আয়াত : ৭৫)
এই আয়াতে মহান আল্লাহ ধৈর্যশীলদের পুরস্কার হিসেবে ঠিক করা জান্নাতকে ‘জান্নাতুল খুলদ’ নামে অভিহিত করেছেন।
জান্নাতুল খুলদ (স্থায়ী জান্নাত) : মহান আল্লাহ বলেন, বলুন, এটাই শ্রেয়, না স্থায়ী জান্নাত, যার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে মুত্তাকিদেরকে? তা হবে তাদের প্রতিদান ও প্রত্যাবর্তনস্থল। (সুরা : আল-ফুরকান, আয়াত : ১৫)
জান্নাতুল ফিরদাউস : এই জান্নাতের নাম আমরা সবাই জানি। হাদিসের ভাষ্যমতে এটি এমন জান্নাত যা আরশের কাছাকাছি অবস্থিত। ঈমান ও সৎকর্মশীলদের জন্য মহান আল্লাহ যে জান্নাত সাজিয়ে রেখেছেন। পবিত্র কোরআনের ভাষায় সেই জান্নাতকে জান্নাতুল ফিরদাস নামে অভিহিত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎ কাজ করেছে তাদের আতিথেয়তার জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফিরদাউস। (সুরা : কাহফ, আয়াত : ১০৭)
জান্নাতু আদন : আল্লাহ মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জান্নাতের, যার নিচে নদীসমূহ প্রবাহিত, সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আরো (ওয়াদা দিচ্ছেন) স্থায়ী জান্নাতসমূহে উত্তম বাসস্থানের। আর আল্লাহর সন্তুষ্টিই সর্বশ্রেষ্ঠ এবং এটাই মহা সাফল্য। (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৭২)
এই আয়াতে মহান আল্লাহ ‘জান্নাতু আদন’ নামে একটি জান্নাতের কথা উল্লেখ করেছেন।
জান্নাতুন নাঈম (নিয়ামতে ভরপুর জান্নাত) : পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎ কাজ করেছে তাদের রব তাদের ঈমান আনার কারণে তাদেরকে পথনির্দেশ করবেন; নিয়ামতে ভরপুর জান্নাতে যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত হবে। (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৯)
দারুর কারার : মহান আল্লাহ বলেন, হে আমার সম্প্র্রদায়! এ দুনিয়ার জীবন কেবল অস্থায়ী ভোগের বস্তু, আর নিশ্চয় আখিরাত, তা হচ্ছে স্থায়ী আবাস। (সুরা : গাফির, আয়াত : ৩৯)
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রকৃত ঈমানদার হওয়ার তাওফিক দান করুন। এবং যেসব কাজ করলে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়, জান্নাতিদের তালিকায় নাম লেখানো যায়, সেই কাজগুলো করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সূত্রঃ মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

বিয়ের শুভ মাস

বিয়ের শুভ মাস সত্যি কি আছে?

কিসে শুভ
কিসে অশুভ
কিছুই বুঝিনা প্রভু
প্রার্থনা করি তবু
যাহা দিতে চাও
তাই শুধু দাও
তাতেই আমার শুভ
একথা জেনেছি ধ্রুব----
ইসলামের দৃষ্টিতে সব মাস পবিত্র ও শুভ। কোনো মাসই অশুভ নয়। কোনো মাস, দিন বা রাতকে অশুভ মনে করা, বিশেষ কোনো সময়কে বিশেষ কাজের জন্য অশুভ ও অলক্ষুনে মনে করা কুসংস্কার। এর সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। যেমন—ইসলামপূর্ব যুগের কোনো কোনো লোকের এই ধারণা ছিল যে, শাওয়াল মাসে বিয়েশাদির অনুষ্ঠান অশুভ ও অকল্যাণকর। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) এই ভিত্তিহীন ধারণা এই বলে খণ্ডন করেছেন, ‘রাসুল (সা.) আমাকে শাওয়াল মাসেই বিবাহ করেছেন এবং শাওয়াল মাসেই আমার রুখসতি (স্বামীর ঘরে আসা) হয়েছে। অথচ তাঁর অনুগ্রহ লাভে আমার চেয়ে বেশি সৌভাগ্যবতী স্ত্রী আর কে আছে?’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৪২৩)
আমাদের সমাজে সময়সংক্রান্ত শুভ ও অশুভ হওয়ার ধারণাগুলো প্রধানত ভিন্ন ধর্মের প্রভাবে সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া সামাজিক জীবনাচার ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য থেকেও কিছু বিষয়ের জন্ম হয়েছে। যে সময়ে কৃষকের ঘরে খাবার থাকে না, অতিবর্ষণের কারণে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়, ফসল ফলানো ও ওঠানো হয়—এমন সময়ে বিয়ে না করার রীতি রয়েছে সমাজে এবং এ সময় বিয়ে থেকে নিরুতসাহ করতে নানা কথার সৃষ্টি হয়েছে। এটি নিতান্তই আঞ্চলিক ধারণা ও কুসংস্কার। এর সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। আল্লাহ তাআলা সবাইকে সব ধরনের কুসংস্কার থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
দোহাই: মুফতি আবদুল্লাহ নুর

সম্পর্ক: উপহার সম্পর্ক মজবুত করে

 জীবন চলার ক্ষেত্রে অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়। কোনো সম্পর্ক রক্তের, কোনো সম্পর্ক আত্মার। এই সম্পর্কগুলো কখনো ভাঙে, কখনো বা মজবুত হয়। দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয়। সম্পর্ক ভাঙা যাবে না। যত সম্পর্ক হয় তা আরো মজবুত করতে হবে। সম্পর্কগুলো টিকিয়ে রাখতে বা আরো মজবুত করতে নিজেদের মধ্যে কিছুর আদান-প্রদান হওয়া জরুরি। দেওয়া-নেওয়ার মাধ্যমে সম্পর্ক সুন্দর হয়, মহব্বত বাড়ে। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা পরস্পর হাদিয়ার আদান-প্রদান করো, তাহলে মহব্বত বৃদ্ধি পাবে। (ইমাম বুখারি রচিত আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৫৯৪)

নিস্বার্থভাবে, বিনিময় ছাড়া, চাওয়া ছাড়া ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজেদের মধ্যে যে আদান-প্রদান হয় তা-ই হাদিয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা যদি খুশি হয়ে তোমাদের দিয়ে দেয়, তাহলে তোমরা তা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ করো।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৪)
আল্লাহ তাআলা এখানে খুশি হয়ে দিলে তা ভোগ করার জন্য বলেছেন। এটিই হাদিয়া। হাদিয়া অল্প হলেও রাসুল (সা.) গ্রহণ করার জন্য বলেছেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, হে মুসলিম রমণীরা! তোমাদের প্রতিবেশীর জন্য সামান্য উপহার বা হাদিয়াও তুচ্ছ জ্ঞান কোরো না। যদিও তা বকরির পায়ের খুর হয়। (বুখারি, হাদিস : ২৪২৭)
কারণ আগেই বলা হয়েছে, হাদিয়ার দ্বারা নিজেদের মধ্যে মহব্বত বাড়ে। হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়। যেমন—রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা পরস্পরে হাদিয়া বিনিয়ম করো, এর দ্বারা অন্তরের সংকীর্ণতা ও হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়ে যায়। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৯২৫০)
ওপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায়, ইসলামে হাদিয়া জায়েজ, বৈধ। শুধু বৈধ নয়, বরং তাতে রয়েছে সওয়াব বা পুণ্য। হাদিয়া দেওয়া-নেওয়া উভয়টি মুস্তাহাব বা সুন্নত। রাসুল (সা.) হাদিয়া দিয়েছেন এবং নিয়েছেন। রাসুল (সা.)-এর জন্য হাদিয়া হালাল ছিল আর সদকা হারাম ছিল।
পরস্পর মহব্বত সৃষ্টি হয়, হাসাদ দূর হয় হাদিয়ার মাধ্যমে। তাই আমাদের মাঝে হাদিয়ার প্রসার ঘটানো উচিত। এ হাদিয়া বৈধ হওয়ার ক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত রয়েছে—(ক) যা হাদিয়া দেবে তা হালাল হতে হবে। হারাম জিনিস হাদিয়া দেওয়া যাবে না। (খ) হাদিয়া সম্পূর্ণ নিজের সম্মতিতে দিতে হবে। কেননা কোনো মুসলিমের সম্মতি ছাড়া সম্পদ ব্যবহার করা হালাল হবে না। (সুনানে বায়হাকি, হাদিস : ১১৩২৫)
(গ) পার্থিব উদ্দেশ্য সামনে রেখে হাদিয়া দেওয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে এটি ঘুষ হিসেবে বিবেচিত হবে। এই শর্তগুলোর প্রতি লক্ষ রেখে হাদিয়া দিলে এর দ্বারা সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন আরো সৌহার্দপূর্ণ হবে।
সত্র: কালের কন্ঠ

Tuesday, November 24, 2020

কষ্টের সাথে সুখ

 আমার বন্ধুকে লেখা

No pain No gain
"কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা আর সাহস নিয়ে মানুষকে জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতময় পথ অতিক্রম করতে হয়। কষ্ট -বিপদের সাথে লড়াই না করে এবং বিপদকে মোকাবেলা না করে কখনই জীবনে সাফল্য অর্জিত হয় না।"
অন্যের কষ্টের কথা চিন্তা করলে সহনশীলতা পাবেন। সহনশীলতা অর্জন করতে হয়। আর এ পথ অতিক্রম করা দুঃসাধ্য। নীচের লেখা মশহুর কবিতগুলো পড়ুন। সহনশীলতা বা এনডিউরেন্সকে সামনে রেখেই কবিতাগুলো লেখা।
১. “একদা ছিল না জুতা চরণ যুগলে
দহিল হৃদয় মম সেই ক্ষোভানলে।
ধীরে ধীরে চুপি চুপি দুঃখাকুল মনে
গেলাম ভজনালয়ে ভজন কারণে।
দেখি সেথা এক জন পদ নাহি তার
অমনি জুতার খেদ ঘুচিল আমার।
পরের দুঃখের কথা করিলে চিন্তন
আপনার মনে দুঃখ থাকে কতক্ষণ।”
পাবিহীন দুঃখিজনের কথা চিন্তা করলে কারো পায়ে জুতা না থাকার দৈন্য মনে স্থান পায় না। আসলে পরের দুঃখ কষ্টকে উপলব্ধি করার মাঝেই জীবনের প্রকৃত সার্থকতা আর সহনশীলতা নিহিত।
২. দণ্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে
সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার। যার তরে প্রাণ
ব্যথা নাহি পায় কোন, তারে দণ্ড দান
প্রবলের অত্যাচার। যে দণ্ড বেদনা
পুত্রেরে পার না দিতে, সে কারেও দিও না।
যে তোমার পুত্র নহে, তারও পিতা আছে,
মহাঅপরাধী হবে তুমি তার কাছে।
বিচারের সময় অপরাধীর প্রতি সহানুভূতিশীর হলে সে বিচার হয় আদর্শ বিচার। কারণ অপরাধ নিন্দনীয়, অপরাধী নয়। তাই একমাত্র সহানুভূতিশীল বিচারই পারে অপরাধীর মনের পরিবর্তন করাতে ও চরিত্রের সংশোধন ঘটাতে।
৩. দৈন্য যদি আসে, আসুক, লজ্জা কিবা তাহে,
মাথা উঁচু রাখিস।
সুখের সাথী মুখের পানে যদি নাহি চাহে,
ধৈর্য ধরে থাকিস।
রুদ্র রূপে তীব্র দুঃখ যদি আসে নেমে
বুক ফুলিয়ে দাঁড়াস,
আকাশ যদি বজ্র নিয়ে মাথায় পড়ে ভেঙে
ঊর্ধ্বে দু'হাত বাড়াস।
জীবনের দুঃখ-দারিদ্রের মধ্যে কোনো লজ্জা নেই, বরং কারও মুখাপেক্ষী হওয়ার মধ্যেই লজ্জা। বিপদে ধৈর্য ধারণ করে দুঃখ-দারিদ্র্যকে সাহস ও মনোবল দিয় প্রতিহত করতে পারলে জীবনে সফল হওয়া যায়।
৪. পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি
এ জীবন মনে সকলি দাও,
তার মত সুখ কোথাও কি আছে?
আপনার কথা ভুলিয়া যাও।
পরের কারনে মরণেও সুখ,
'সুখ-সুখ' করি কেঁদো না আর;
যতই কাঁদিবে যতই ভাবিবে,
ততই বাড়িবে হূদয়-ভার।
আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেউ অবনী পরে
সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।
ব্যক্তিগত দুঃখ সন্তাপে হা-হুতাশ না করে বরং নিজের স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে পরের উপকার করার মধ্যেই প্রকৃত সুখ নিহিত। মানব জীবন ব্যক্তিস্বার্থকেন্দ্রিক নয়, একে অন্যের কল্যাণে ব্রতী হওয়াই মনুষ্যত্বের পরিচয়।
৫. কি কারণ, দীন! তব মলিন বদন?
যতন করহ লাভ হইবে রতন ৷
কেন পান্থ! ক্ষান্ত হও হেরে দীর্ঘ পথ?
উদ্যম বিহনে কার পূরে মনোরথ?
কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে,
দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে?
মনে ভেবে বিষম-ইন্দ্রিয়-রিপু-ভয়,
হাফেজ! বিমুখ কেন করিতে প্রণয়?
কি কারণে হে অভাবী/দরিদ্র! তোমার মলিন মুখ? যদি যত্ন কর তবেই পাবে রত্ন। ভ্রমণকারী কেন তুমি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে হও বিরত? জান না উৎসাহ ছাড়া কারও ইচ্ছা হয় না পূরণ? কাঁটা দেখে পদ্ম তুলতে কেন বিরত? দুঃখ ছাড়া সুখ কি আসে এ পৃথিবীতে? মনে ভাব সাংঘাতিক-ইন্দ্রিয়ের শত্রু আর ত্রাস? হাফেজ! কেন স্পৃহাহীন তুমি করতে ভালবাসা বা প্রেম?
৬. খোঁজো নতুন পথ! দেখো নতুন কিছু। বসে বসে সময় ক্ষয় করে কি লাভ?
If you walk the same path every day, how will you ever see anything new?
৭. বর্ষায় বাড়িযা বনলতা
উচ্চে উঠে দেবদারু বাহি
“কত হলো বয়ঃক্রম তব”
জিজ্ঞাসে তরুর মুখ চাহি।
তরু কহে, “বর্ষ ২ শত
মাস ৬ এ দিক সে দিক।”
লতা বলে এতে বৃদ্ধি এই!
সপ্তাহে যা ছিল মোর ঠিক!
তরু বলে, “আগে বাঁচো শীতের তুষারে,
আয়ু ও বৃদ্ধির কথা হবে তার পরে।”
আমার জ্ঞানে এটা সহনীয়তার ওপর সেরা একটি লেখা।
তুমি আল্লাহকে বাদ দিয়ে কিছুতেই সহনশীল হতে পারবে না। কারণ আল্লাহ অবশ্যই আপনাকে সব কিছু এমনিতেই দেবেন না। তাই সহনশীল হতে হলে আল্লাহর ওপর আপনার স্থির বিশ্বাস অবশ্যই থাকতে হবে। নীচের কবিতাটি যখন আমি প্রথম পাঠ করি তখন বিষয়টি পুরোপুরি বুঝতে পেরে আমি অনেকক্ষণ অশ্রুসজল ছিলাম। আমি জানিনা, আপনারও এমন হবে কি না!
৮. “কিসে শুভ কিসে অশুভ কিছুই বুঝিনে প্রভু!
প্রার্থনা করি তবু!
তুমি সব জানো, এইটুকু জেনে আমি আছি আশা ধরি,
তাই প্রার্থনা করি;
যাহা দিতে চাও তাই শুধু দাও,-তাতেই আমার শুভ,
একথা জেনেছি ধ্রুব,
তোমার অর্থে সার্থক করো মোর প্রার্থনাচয়,
প্রভু! মঙ্গলময়!”
আল কুরআনের সূরা ‘আদ দুহা’তে আল্লাহ অসম্ভব সহনশীলতা আর মোটিভেশন দিয়েছেন প্রিয় নবী(সা.)কে। সূরাটির কবিতারূপ নীচে-
৯. “মধ্য-দিনের আলোর দোহাই, নিশির দোহাই, ওরে!
প্রভু তোরে ছেড়ে যাননি কখনো, ঘৃণা না করেন তোরে।
অতীতের চেয়ে নিশ্চয় ভাল হবেরে ভবিষ্যৎ,
একদিন খুশী হবি তুই লভি’ তাঁর কৃপা সুমহৎ।
অসহায় যবে আসিলি জগতে তিনি দিয়েছেন ঠাই,
তৃষ্ণা ও ক্ষুধা দুঃখ যা ছিল ঘুচায়ে দেছেন তাই,
পথ ভুলে ছিলি, তিনিই সুপথ দেখায়ে দেছেন তোরে,
সে কৃপার কথা স্মরনে রাখিস,- অসহায় জনে ওরে !
দলিসনে কভু; ভিখারী আতুর বিমুখ না যেন হয়,
তাঁর করুণার বার্তা ঘোষণা কর রে জগতময়।”
১০. আল কুরআন কী বলে সহনীয়তা নিয়ে?
আল্লাহ ﷻ সূরা ইনশিরাহ-তে বলেছেন:
“ফা ইন্না মা’আল ‘উসরি ইউসরান, ইন্না মা’আল ‘উসরি ইউসরা”
অর্থ: অবশ্যই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে, অবশ্যই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে।
(আল-কুরআন ৯৪:৫-৬)
এখানে কয়েকটা ব্যাপার লক্ষণীয়:
১। আল্লাহ ﷻ কিন্তু বলেননি কষ্টের পরে স্বস্তি আছে, আল্লাহ ﷻ বলেছেন কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে। প্রতিটা কষ্টই আসলে আমাদের জন্য স্বস্তি, কষ্টের মূহুর্তটা itself আমাদের জন্য স্বস্তি। কারণ, কষ্টের ঐ মুহুর্তগুলিতে যদি ধৈর্য্য ধরতে পারি, তাহলে সেই কষ্টের বিনিময়ে আল্লাহ ﷻ আমাদের গুনাহ মাফ করে দিবেন, সহজ পতটাও বের করে দেবেন।
২। কষ্টটাই স্বস্তি, কারণ আমাদের জীবনের সবচেয়ে ভালো পরিবর্তনগুলো, সবচেয়ে বড় পরিবর্তনগুলো, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগুলি আমরা শিখি কষ্টকর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে। তাই, কষ্ট আর স্বস্তি যেন একে অপরের সমার্থক।
৩। কষ্টটা স্বস্তি হওয়া মানে এই না যে কষ্টের মূহুর্ত কখনো শেষ হবে না, বরং তা শেষ হবে এবং তখন আমরা relieved (স্বস্তি) feel করব। ৫ নং আয়াতের স্বস্তি যদি হয় কষ্টের সময়কার স্বস্তি, ৬ নং আয়াতের স্বস্তি হলো কষ্ট মুক্তির পরের স্বস্তি।
৪। ৬ নং আয়াতে আল্লাহ কষ্টের পরে (after) স্বস্তি আছে না বলে কষ্টের সাথে (with) স্বস্তি আছে বললেন কেন? কারণ, পরকালের অনন্ত-অসীম জীবনের কাছে ইহকালের কষ্টের দিনগুলি এতটাই ক্ষণিকের যে, তখন চিন্তা করলে মনে হবে – পৃথিবীতে যতদিন ছিলাম, কষ্টের সাথে সাথেই তো স্বস্তি ছিল!
এ সূরা থেকে বোঝা যায় স্পষ্ট করে যে আল্লাহ কেন কন্ট্রা বা বিপরীতধর্মী জিনিস তৈরী করে রেখেছেন। এ থেকে কষ্ট অবশ্যই আঁচ করা যায় আরো আঁচ করা যায় সহনশীলতাকে।
একটি কোটেশন তোমাকে লক্ষ্য করতে বলিঃ
১১. “তপনের ছটা না ফুরাতো যদি পুরালে দিনের নাট,
তবে কি প্রদোষে ফুটিয়া উঠিত ফুল্ল তারার হাট?”
মানে দিনের আলোটা যদি নিভে না যেতো তবে রাতের তারাগুলোকে আমরা দেখতে পেতাম না।
তাই সহনীয়তাকে পেতে হলে কষ্টের ভেতর দিয়ে পার হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই।
উপসংহারে আরো একটি বিখ্যাত লেখা দিয়ে রাখি তোমার জন্যঃ এটাও সইবার ক্ষমতাকে বিপুলভাবে উষ্কে দেয়-
১২. Lord!
Keep me from the habit of thinking I must say something
on every occasion on every subject.
Release me from craving to straighten out everybody’s affair.
Keep my mind free from the recital of endless detail – give me wings to get the points.
I ask for grace enough to listen to the tales of other’s pains. Help me to endure them with patients. But seal my lips on my own aches and pains- they are increasing and my love of rehearsing them is becoming sweeter as the years go by.
Teach me the glorious lesson that occasionally it is possible that I may be mistaken.
Keep me reasonably sweet. I don’t want to be a saint. Some of them are so hard to live with- but a sour old person is one of the crowning works of the Devil.
Give me the ability to see good things in unexpected places and talents in unexpected people. And give me O Lord! The grace to tell them so.
Make me thoughtful but not moody, helpful, but not bossy.
With my vast store of wisdom, it seems a pity not to use it all but thou
Knowest, Lord! That I want a few friends at the end.
এটি কে কবে কোথায় আর কি জন্য লিখেছিলেন আমি জানি না। ১৯৭৬এ এটি প্রথম পড়ার পর আমি বিমোহিত হয়েছিলাম। তাই লেখাটি হাত ছাড়া করিনি। আমি সত্যিই সহনশীল হয়েছি প্রথমে আল কুরআন পাঠের পর আর দ্বিতীয়টি হলো এই ইংরেজী লেখাটি। আর অন্যান্যগুলো তো আছেই। আমার সহনশীলতা আমার লেখাপড়ার ওপর অসম্ভব বিপুল প্রভাব ফেলেছিল আর আমৃত্যু এটা রইবে।
সূত্রগুলোঃ
১. কবিতাসমূহ
২. আল কুরআন
৩. বিবিধ
৪.ওয়র্ডপ্রেসডটকম

Saturday, November 21, 2020

মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধির কিস্সা

 

প্রথমে ভাল করে পড়ে নিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া স্বাস্থ্যের সংজ্ঞা। এর পর সেটাকে ভাল করে বুঝুন। আপনি নিজেই অনুমান অথবা বাস্তবে প্রমাণ করতে পারবেন কিসে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি সম্ভব।  

WHO definition of health

Health is a state of complete physical, mental and social well-being and not merely the absence of disease or infirmity.

ইসলাম ধর্মে একটি মশহুর হাদীস রয়েছে সেটা হলো, হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে লোক তার রিজিক প্রশস্ত ও আয়ু বাড়াতে চায় সে যেন তার আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে।’ (বুখারি)

বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যা রয়েছে। তারপরও  বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধির গুরুত্ব অপরিসীম। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রনালয়ের মতে বাংলাদেশের জনগণের গড় আয়ু একদশক আগেও ৬০ বছর ছিল। বর্তমানে গড় আয়ু বেড়ে দাঁড়িয়াছে ৭৩ বছর। লক্ষণীয় বিষয় হলো যে, পুরুষের চাইতে নারীর গড় আয়ু বৃদ্ধির হার বেশি। ২০১৬ সালে নারীর গড় আয়ু ছিল ৭২ বছর ১০ মাস ২০ দিন। ২০১৭ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৩ বছর ০৬ মাস। অর্থাৎ বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পাচ্ছে। আশাবাদ অনুযায়ী ২০৪০ সালে বৈশ্বিকভাবে মানুষের গড় আয়ু ৮৫ বছর ছেড়ে যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে জ্ঞানী-গুণী গবেষক, ডাক্তার ও বিজ্ঞানীদের তথা বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশু ও মাতৃমৃত্যু, বাল্যবিবাহ হ্রা, শিক্ষা, টিকা দেয়া, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্য সচেতনতা, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার, রোগজীবাণু সম্পর্কে সজাগ ও জ্ঞাত হওয়া ইত্যাদি আমাদের গড় আয়ু বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়াও নিম্নলিখিত উপায়ে গড় আয়ু বৃদ্ধি করা সম্ভব:

১। বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। তবে তা নিশ্চয় পুষ্টিকর, সুষম, ভেজালমুক্ত ও নিরাপদ হওয়া প্রয়োজন। শুধু স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ খাদ্যই জীবনকে দীর্ঘক্ষণ বাঁচাতে ও রোগমুক্ত রাখতে পারে। খাবার খেতে হবে পরিমাণমতো ও নিয়ম মতো।

২। দেশে প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে দু'জন দাঁতের রোগে আক্রান্ত। অথচ নিয়মিত দাঁত ব্রাশের মাধ্যমে ৮০ শতাংশ দাঁতের রোগ দূর করা সম্ভব। খুব ভালো হয়, রাতে ঘুমের আগে ব্রাশ করা।

৩। শরীর সুস্থ রাখতে দৌড় ও যোগব্যায়াম অনস্বীকার্য। কথায় বলে, করো ব্যায়াম ও যোগ, থাকো নিরোগ। প্রতিদিন সামান্য সামান্য হলেও নিজের স্বাস্থ্যকে ফিট রাখার জন্য যোগব্যায়াম করা প্রয়োজন। এর ফলে শরীর ও মন ভালো থাকে। দেহে রক্ত সঞ্চালনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। দেহ ও মস্তিষ্ককে কর্মক্ষম করে তোলে। হাঁটা, দৌড়ানো, জগিং করা, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো ইত্যাদি শারীরিক ব্যায়ামের উদাহরণ।

৪। গত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (২০১৯)-এর রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। ২০টি দূষিত শহরের মধ্যে ভারতের ১৫টি ও ঢাকা অষ্টম অবস্থানে রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী দূষণ কমাতে পারলে বাংলাদেশের গড় আয়ু বাড়বে ১ দশমিক ৩ বছর, ভারতীয়দের বাড়বে ১ বছর করে।

৫। বিয়ে নিয়ে মার্কিন একদল গবেষক এক চমকপ্রদ তথ্যের অবতারণা করেছেন সম্প্রতি। তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে বৈবাহিক সম্পর্ক দীর্ঘদিন লাভের অন্যতম পূর্বশর্ত। মাঝ বয়সটিকে দুশ্চিন্তামূলকভাবে পার করতে একজন সঙ্গী বা সঙ্গিনী অপরিহার্য। আর সেটা মৃত্যুঝুঁকিতেও অনায়াসে কমিয়ে দিতে পারে। আলিঙ্গন অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। গবেষকরা বলেছেন, প্রতিদিন ও রাতে অন্তত ৮ বার আপনার প্রিয়তমের সঙ্গে আলিঙ্গন করুন। আলিঙ্গন শরীরের অসুখ সারায়, একাকিত্ব দূর করে হতাশা, দুশ্চিন্তা ও স্ট্রোক কমায়। পরিবারের সঙ্গেই মিল মহব্বত থাকলে দুশ্চিন্তা থাকে না। পরিবারের কোন্দল, অশান্তি ও সন্দেহপ্রবণ হলে আযু বৃদ্ধি রোধ করে দেয়।

৬। বায়ু দূষণের কারণে মানুষের আয়ু প্রায় ৩ বছর কমে যায়। এই দূষণের কারণে বছরে প্রায় ৮৮ লাখ মানুষের অকাল-মৃত্যু হয়। নতুন এক গবেষণার ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা এসব তথ্যে বলেন, যদি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার শূন্যের কোঠায় আনা সম্ভব হয়, তবে হারিয়ে যাওয়া এই ৩ বছর থেকে ১ বছর ফিরে পাওয়া সম্ভব হবে, অর্থাৎ আয়ু বৃদ্ধি হবে।

৭। বর্তমান উন্নত বিশ্বে যে সমস্ত রোগ মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে তার মধ্যে আলঝেইমার, ক্যান্সার, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, ওবেসিটি, ডায়াবেটিস, বিষণ্নতা, উদ্বেগ এবং আত্মহত্যা অন্যতম। এসব কিছুর সঙ্গে রয়েছে ঘুমহীনতার গভীর সম্পর্ক। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, কম ঘুমের কারণে কমছে মানুষের আয়ু। এ কারণে সুস্থ থাকা এবং দীর্ঘজীবনের জন্য ভালো ঘুমের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

৮। বিজ্ঞানীরা মানুষকে ভালো রাখতে 'হাসি' হাসতে পরামর্শ দেন, তা যে করেই হোক। কেউ বলেছেন, দুই ঘণ্টা ঘুমালে শরীরে যে সুস্থতা আসে, পনেরো মিনিট হাসলে তার চেয়ে বেশি সুস্থতা আসবে। হৃদকম্পন ১০ থেকে ২০ শতাংশ বেড়ে হার্টে রক্ত সঞ্চালনের নালি পরিষ্কার হবে। আর্টারিতে বিশুদ্ধ রক্তবাহী নাল ব্লকের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়। দশ থেকে ১৫ ক্যালরি খরচ হয়ে শরীর হালকা করে দেবে।

৯। যদি শীর্ষ ধনীদের আয়ের ১ শতাংশ সম্পদ করারোপ করা হয় তাহলে বছরে ৪১ বিলিয়ন ডলার আসতো। এই অর্থ দিয়ে স্কুলে যাচ্ছে না এমন শিশুদের শিক্ষা দেয়া এবং স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে ৩০ লাখ মৃত্যু এড়ানো যেতো।

১০। রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা মানুষের বুড়িয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া টেনে ধরার পদ্ধতির সন্ধান পাওয়ার দাবি করেছেন। তারা এমন এক ট্যাবলেট আবিষ্কার করেছেন, যা মানুষের বয়স বাড়ার প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করবে। এটি প্রয়োগ করে মানুষের আয়ু ১২০ বছর পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। ১৩ জুলাই, ২০২০ ইং তারিখের 'দৈনিক যুগান্তর' পত্রিকা শিরোনাম ছিল- 'মানুষের আয়ু বাড়ানোর ওষুধ আবিষ্কারের পথে বিজ্ঞানীরা।'

১১। গ্রীসের ছোট্ট দ্বীপ ইকারিয়া যেখানে মানুষ মরতে ভুলে যায়। এই দ্বীপের আয়তন মাত্র ২৫৪ বর্গকিলোমিটার। বাস করেন হাজার দশেক মানুষ। এই দ্বীপের মানুষ অমরত্বের স্বাদ নিয়ে বাস করছে পৃথিবীতে। কারণ সেখানকার মানুষের গড় আয়ু ১০০ বছর। রোগ-ব্যাধি বলতে তাদের কিছুই নেই। এখানকার বাসিন্দারা ১০০ বছরেও লাঠিনির্ভর নন বা কারো মাথা তিনটে নয়। তাই এ দ্বীপের বাসিন্দারা ভুলতে বসেছেন 'মৃত্যুকে।' ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ইং দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা থেকে জানা যায় যে, উন্নত দেশের যে ২০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করেছে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। এতে ২০১৪ সালে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। এছাড়া মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ুষ্কাল বেড়ে দাঁড়াবে ৮০ বছরে।

১২। মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনকরণের ফলে আয়ু বৃদ্ধি করা যায়। যেমন- কিডনি, লিভার, চোখ ইত্যাদি। এছাড়া অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মতো মানুষের মাথাও প্রতিস্থাপন সম্ভব! বিশেষজ্ঞদের বড় অংশ মনে করেন, কখনই জীবিত মানুষের মাথা প্রতিস্থাপন সম্ভব নয়। তবে যুক্তরাজ্যের নিউরোসার্জন ক্লস ম্যাথুর দাবি- এটা সম্ভব এবং তা হতে পারে আগামী ১০ বছরের মধ্যে। আইসিডিডিআরবি পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়- শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষ শারীরিক অসুস্থতার কারণে চিকিৎসাসেবা নিতে হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে যান এবং মাত্র শতকরা ১৫% ভাগ মানুষ শারীরিক অসুস্থতার কারণে চিকিৎসাসেবা নিতে এমবিবিএস ডাক্তারের কাছে যান।

১৩. মানুষকে দান করুন। স্বাস্থ্যের ওপর এর ইতিবাচক ফল রয়েছে।

১৪. রাগ থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন। স্বাস্থ্যের ওপর এর ইতিবাচক ফল রয়েছে।

১৫. সব সময় ইতিবাচক থাকুন। স্বাস্থ্যের ওপর এর ইতিবাচক ফল রয়েছে।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একটি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঠিকভাবে কাজ করার জন্য ছয়টি বিষয় নিশ্চিত করা জরুরি। এটা হলো- প্রয়োজনীয় অর্থায়ন, চিকিৎসাসহ পর্যাপ্ত জনবল, চিকিৎসা সরঞ্জাম, তথ্য-উপাত্ত, সেবাদানের সঠিক নির্দেশিকা ও যথাযথ ব্যবস্থাপনা।

দেশের সিংহভাগ মানুষ গ্রামে ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস করেন। ধাবমান শ্রেণি শহরের মানুষগুলোর মতো তারা কাঙ্ক্ষিত সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্ত হয় না। তারা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরিবর্তনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এমনকি অভিজ্ঞ ডাক্তারের সানি্নধ্যেই যেতে পারে না। মানুষেরা ভালো চিকিৎসা ও নিয়ম-কানুন সঠিকভাবে পালন করলে, দলিত ও বঞ্চিতদের এবং প্রান্তিক জনগণ প্রাপ্ত হলে বেশিদিন বেঁচে রাখা সম্ভব হবে বলে অনেকে মনে করেন।

চলমান সময়ে-
১। ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখুন। ঘরের মধ্যে প্রচুর আলো-বাতাস প্রবেশ করতে দিন। বাড়ির আশপাশে বদ্ধ ড্রেন, ছোট ডোবা না রাখাই উত্তম। যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না যাতে অস্বাস্থ্যকর দুর্গন্ধ ছড়াতে পারে।

২। নিয়মিত গোসল/স্নান করুন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জামা-কাপড় পরুন। অন্যের ব্যবহৃত জিনিসপত্র যেমন- চিরুনি, টুথব্রাশ, টুপি, রুমাল, গামছা বা তোয়ালে, জামা-কাপড় প্রভৃতি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

৩। মাছি বসা খাবার, পচা ও বাসি খাবার, অনেকক্ষণ বাইরে রেখে দেয়া খোলা খাবার, অপরিষ্কার হাতে পরিবেশন করা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। হাত সাবান পানি দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধৌত করে খাবার গ্রহণ করলে বহু রোগ-জীবাণু থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। টয়লেট ব্যবহারের পর যেকোনো খাবার বা নাক-মুখ ও ঠোট স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকলে এবং হাত ও পায়ের নখ যথাযথভাবে কেটে ফেলতে হবে।

৪। মানুষের শরীরকে ভালো রাখার আরো একটি পন্থা হলো- সময়মতো প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়া। মল-মূত্র চাপ পড়লেই স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিনে যাওয়া। শরীরের মধ্যে আটকিয়ে রাখা মানেই রোগ-বালাইকে আমন্ত্রণ জানানো।

স্বাস্থ্যই সম্পদ ও স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। স্বাস্থ্যকে যদি ভালো রাখতে পারি, তাহলে শরীরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে ও দীর্ঘায়ু লাভ করা সম্ভব। রোগ হয়ে গেলে তার চিকিৎসা করার চেয়ে, রোগ যেন না হয়, সে চেষ্টা করাই ভালো। অর্থাৎ রোগ নিরাময়ের চেয়ে রোগ প্রতিরোধই শ্রেয়। কিছু উপরোক্ত উদাহরণ সাধারণ স্বাস্থ্যকর অভ্যাস অনেক রোগ প্রতিরোধ করতে পারে এবং মানুষ দীর্ঘসময় আয়ু নিজেই তৈরি করতে এবং বেশদিন বাঁচতে পারে।

দেখি কী করলে আরও কিছু বছর বেশি বাঁচা যায়?

১.গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইংল্যান্ডের বিজ্ঞানীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে, নিয়মিত ব্যায়ামে বার্ধক্য-প্রক্রিয়ার গতি কমানো যায়। ব্যাপক পরিসরে পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী, দিনে মাত্র পাঁচ মিনিট (১০ মিনিটে প্রতি মাইল গতিতে) দৌড়ালে অস্বাভাবিক মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা যায়। তাঁদের অকাল মৃত্যুঝুঁকি অন্তত এক-তৃতীয়াংশ কমে। তাঁদের আয়ু যাঁরা মোটেও ব্যায়াম করেন না, তাঁদের চেয়ে গড়ে অন্তত তিন বছর বেশি বলে নিরীক্ষায় জানা গেছে (নিউইয়র্ক টাইমস, জুলাই ৩০, ২০১৪)।
২.ওজন বাড়তে দেবেন না। সহজ হিসাব হলো, সেন্টিমিটারে উচ্চতা বের করে ১০০ বিয়োগ করলে প্রাপ্ত সংখ্যাটিই হবে আপনার আদর্শ ওজন। আর দেখতে হবে আপনার পেটের পরিসীমা (ভুঁড়ির বেড়) যেন উচ্চতার অর্ধেকের বেশি না হয়।
৩.পরিমিত খাবার খাবেন। শাকসবজি থাকবে বেশি। দিনে অন্তত পাঁচ রঙের পাঁচ রকমের ফল খাবেন পরিমিত মাত্রায়। রান্নার জন্য সূর্যমুখী বা সয়াবিন তেলের সঙ্গে জলপাই তেল (অলিভ অয়েল) সমান অনুপাতে মিশিয়ে ব্যবহার করুন। এটা অসম্পৃক্ত চর্বির আদর্শ সংমিশ্রণ। ভাজা-পোড়া খাবারে ক্ষতিকর চর্বি (ট্রান্সফ্যাট) থাকে, যা স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে (হার্ভার্ড মেডিকেল পাবলিকেশন্স)। সম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত প্রাণিজ গোশতের চেয়ে মাছ ভালো। চিনির চেয়ে গুড় ভালো।
৪.প্রতিদিন অন্তত সাত ঘণ্টার ঘুম দরকার। দুপুরে অন্তত ১৫-২০ মিনিটের হালকা ঘুম খুব উপকারী। এতে আয়ু বাড়ে। কয়েক বছর আগে ইউনিভার্সিটি অব এথেন্স ও হার্ভার্ডের স্কুল অব পাবলিক হেলথের একদল গবেষক দুপুরে সামান্য ঘুমান এমন ২৩ হাজার গ্রিক নাগরিকের ওপর দীর্ঘ ছয় বছর ধরে পর্যবেক্ষণ চালিয়ে দেখেছেন, তাঁদের কারও হৃদরোগ, ক্যানসার বা স্ট্রোক হয়নি। তাঁদের সিদ্ধান্ত দুপুরের সামান্য ঘুম আপনার জীবন রক্ষা করতে পারে, আয়ু বাড়াতে পারে। মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ শত কাজের মধ্যেও প্রতিদিন দুপুরে ১৫ মিনিটের জন্য হলেও ঘুমিয়ে নেন। তাঁর বয়স এখন প্রায় ৯৫।
৫. সিগারেট পান একেবারে নিষেধ। ধূমপানে অভ্যস্ত ব্যক্তিদের ধূমপান ছাড়ার বছর দুয়েকের মধ্যে হৃদরোগের আশঙ্কা প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে, ধূমপানের সঙ্গে যুক্ত ক্যানসারের আশঙ্কা প্রতিবছর কমতে থাকে। ১৫ বছরের মধ্যে ধূমপানের সব ধরনের ক্ষতি দূর হয়ে যায়। সুতরাং আজই ধূমপান বাদ দিন।



শেষে বলি-

পৃথিবীতে কুসংস্কার ও বিজ্ঞানের মধ্যে লড়াই চলতেই থাকবে এটিই বাস্তব সত্য। বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কার তথা তথ্যপ্রযুক্তি, জ্ঞান, ওষুধ, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি প্রকৃতি ও জীবনের কল্যাণে মানুষের আয়ু বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে। বাস্তবাদীরা বলেন, বিজ্ঞানের সুফল বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসী সকলেই পাচ্ছেন। অপরদিকে কুসংস্কার, অবাস্তব, বিজ্ঞানবিরোধী প্রচার ও অন্ধবিশ্বাসীদের প্রথা ভবিষ্যতে ভেঙে পড়বে। বিজ্ঞানের জয়যাত্রা একদিন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাবে এবং বিশ্বের সকল মানুষের অবাস্তব ধ্যান-ধারণা পাল্টে দিবে বলে আমাদের ধারণা। বিজ্ঞান যেহেতু সকলের কল্যাণে নিয়োজিত, তাই বিজ্ঞান পড়া ও বিজ্ঞান মনস্ক হওয়া আবশ্যক। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা সকল মানুষের কল্যাণে ও মঙ্গলে দীর্ঘায়ু প্রাপ্তিতে ভবিষ্যতে ব্যয়িত হবে।

তথ্য সূত্র:

বিভিন্ন পত্রিকা

https://www.bangladiet.com/

ইসলামডটনেট