Sunday, October 25, 2020

ওভারিতে সিস্ট

 

HIGHLIGHTS...
নারীর ডিম্বাশয়ে সিস্ট পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম(পিসিওিএস)নামে পরিচিত...
এই রোগের কয়েকটি উপসর্গ রয়েছে...
প্রথম দিকে বোঝা যায় না কখন এই রোগ জাঁকিয়ে বসেছে...
জেনে নিয়ে সতর্ক থাকুন ...
PCOS-
এর কিছু প্রাথমিক লক্ষণই কিন্তু আপনার জন্য রেড অ্যালার্ট।

লিসিস্টিক ওভারি ডিজিজ (PCOD) হল এমন একটি সাধারণ হরমোনের অসামঞ্জস্য যা ভারতে প্রতি দশ জন মহিলার মধ্যে একজনের হয়ে থাকে। একজন মহিলা যখন জননক্ষম হন তখন এটি দেখা যায় এবং এটি হলে ওভারি বা ডিম্বাশয়ে একাধিক ছোট ছোট সিস্ট দেখা যায়। এর ফলে ডিম্বাশয় ফুলে যায় এবং এক ধরনের তরলের থলি বা ফলিকলস ডিম্বাণুকে ঘিরে থাকে।

ভারতের বিড়লা হাসপাতালের ডাঃ অঞ্জলি কুমার, MBBS, MD (Obstetrics & Gynecology), FICMCH, FMAS) জানান, পিসিওএস হলে অনিয়মিত ঋতু, হাইপারটেনশন, শরীর বা মুখে বাড়তি রোম, অ্যাকনে এবং চুল পড়া- এই লক্ষণগুলি দেখা যায়। সাধারণত অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের ফলে এই রোগ দেখা যায়। সুতরাং একে একটি লাইফস্টাইল ডিজিজ বা জীবনযাত্রাজনিত রোগ বলা যেতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম না করলে, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা হলে, ধূমপান করলে, মানসিক চাপ বা পর্যাপ্ত ঘুম না হলে এটি দেখা যায়।

পিসিওএস (Polycystic Ovary Syndrome)-এর কিছু প্রাথমিক লক্ষণই কিন্তু আপনার জন্য রেড অ্যালার্ট। অর্থাৎ আপনাকে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। সেগুলো কী?

১. অনিয়মিত ঋতুস্রাব, ঋতুচক্র দেরিতে শুরু হওয়া, খুব পরিমিত স্রাব হওয়া ইত্যাদি। যদি ঋতুস্রাব প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ২১ দিনের আগে বা ৩৫ দিন পরে শুরু হয় এবং কিশোরীদের মধ্যে যদি তা ৪৫ দিনে গিয়ে দাঁড়ায় তা হলে অবশ্যই সেটা দুশ্চিন্তার বিষয়।

২. দেখা গিয়েছে ৪০ থেকে ৮০ শতাংশ মহিলারা পিসিওএস-এ ভোগেন অতিরিক্ত ওজনের জন্য। স্থূলতা এর একটি অন্যতম কারণ। ওজন এ ক্ষেত্রে কিছুতেই কমতে চায় না।

৩. গর্ভধারণে অসুবিধা।

৪. অতিরিক্ত মাত্রায় পুরুষ হরমোন নিঃসরণের ফলে অ্যাকনে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশ বিশেষ করে মুখ রোমশ হয়ে যাওয়া।

৫. চুল পড়া ও স্কাল্পে চুল পাতলা হয়ে যাওয়া।

৬. টাইপ ২ ডায়াবেটিস, স্বাভাবিকের চেয়ে শরীরে বেশি মাত্রায় চিনির প্রকোপ।

৭. উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের আধিক্য।

৮. ঘন ঘন মুড পরিবর্তন, মানসিক অবসাদ, আত্মবিশ্বাসের অভাব, অস্থিরতা

পিসিওএস নির্ণয়:

কোন পরীক্ষার মাধ্যমে আলাদা করে পিসিওএস নির্ণয় করা যায় না। স্ত্রীরোগ-বিশেষজ্ঞরা এই রোগ নির্ণয় করতে কয়েকটি পন্থা অবলম্বন করে থাকেন। সেগুলি হল:

১.ক্লিনিকাল ইতিহাস ও পরীক্ষা ২. রক্ত পরীক্ষা ৩. আলট্রা সাউন্ড

পিসিওএস নিয়ন্ত্রণের উপায়:

১. পিসিওএস নিয়ন্ত্রণের সেরা উপায় হল স্বাস্থ্যকর ও সুষম জীবনযাপন। আপনি যদি স্বাস্থ্যকর খাবার খান, নিয়মিত ব্যায়াম করেন, প্রসেসড খাবার এড়িয়ে চলেন, নিজের খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণে রাখেন, তা হলে অবশ্যই এটি কমে যাবে।

২. প্রতিদিন নিয়ম করে ব্যায়াম করার চেয়ে ভাল পন্থা আর হয় না। ব্যায়াম করলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। শারীরিক কসরত করলে আপনাকে আর ইনসুলিন নিতে হবে না এবং ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

৩. অন্ততপক্ষে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুম। পর্যাপ্ত ঘুম অনেক ক্ষেত্রেই পিসিওএস নিয়ন্ত্রণে রাখে।

৪. বর্তমান পরিস্থিতিতে মানসিক চাপ আমাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে গেছে। কিন্তু আপনাকে পিসিওএস নিয়ন্ত্রণে রাখতে গেলে মানসিক চাপ কমাতে হবে। কিছু ভাল লাগার বা ভালবাসার জিনিসের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখুন। দেখবেন চাপ অনেক কমে গিয়েছে।

news18

তুলে ফেলো স্বভাব থেকে সকল বদ-অভ্যাস

 Defeating Bad Habits

বাস্তবদীরা বলেন, “অভ্যাস ভয়ানক জিনিস। এক হঠাত স্বভাব থেকে তুলে ফেলা খুবই কঠিন।”

কিছু বদ-অভ্যাস আছে যেগুলোকে সন্ত্রাসী বললে কম বলা হয়। এরা মানুষের মন, মগজ ভরে রাখে সব সময় যেকোন অবস্থার পেক্ষিতে। এরা মানুষকে করতে সচল করতে প্রয়াস পায় এবং মানুষও সচল হয়েও যায়। বদ-অভ্যাসগুলো তখন হয়ে যায় স্বর্গরাজ্যের অধিকারী। বদ-অভ্যাস অর্বাচীন মানুষকে নাচায় সব সময় যেমন দক্ষ বাজীকর পুতুল নাচায়।

বদ-অভ্যাসকে স্বভাব থেকে তুলতে হলে অন্ত-দর্শনের নীরবতা silence of introspection খুবই দরকারী এক জিনিস। নিজের ভেতরে ডুব দিয়ে নীরবতার অন্ত-দর্শন একবার জানতে পারলে তা মানুষকে দয়ার্দ্র শক্তির অফুরন্ত উতসের দিকে নিয়ে যাবে। আর এতেই বদ-অভ্যাস নির্মূল হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ১০০ ভাগ।

মানুষ অভ্যাসের দাস’। একথা আমরা প্রায়ই বলি। কিন্তু অভ্যাস কি মানুষের দাস হতে পারে না? এ প্রশ্নে তর্কে জড়িয়ে পড়লেও সবকিছুর পরও আমরা এটা মানি আমাদের মধ্যে বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে, আমরা চাইলে অনেক অসাধ্যকে আয়ত্তে আনতে পারি, তাহলে কেন অভ্যাসকে আমাদের দাসে পরিণত করতে পারব না? কোনটা ভালো আর কোনোটা খারাপ সেটা বুঝে উঠতে পারলে ভালোর চর্চা এবং খারাপের বর্জন এমন কোনো কঠিন কাজ হতে পারে না যাকে অসম্ভব শব্দটি দিয়ে আখ্যায়িত করতে হবে।

যে অভ্যাসগুলো এখনই বাদ দেবেন

১. ঘুমানোর আগে ফোন, কম্পিউটার বা ট্যাব ব্যবহার -ঘুমের সঙ্গে সৃজনশীলতা,স্মৃতিশক্তি এবং কর্মশক্তির সম্পর্ক আছে।

২. একটানা ইন্টারনেট ব্যবহার- একটানা ইন্টারনেট ব্যবহারে আমাদের মনোযোগ কমে আসে।

৩. কথা বলার সময় মুঠোফোনে চোখ রাখা-এমন বদভ্যাস আসলে যার সঙ্গে কথা বলছেন তাকে বিব্রত করে।

৪. যখন না বলার কথা তখন হ্যাঁ বলা -না বলতে পারাটা কিন্তু আসলে ইতিবাচক মানসিক দক্ষতা। যখন আপনি কোনো কাজ করার সময় অন্য কারও অনুরোধ বা আবদার রক্ষার্থে অনিচ্ছায় হ্যাঁ বলেন তখন আসলে আপনি নিজের ক্ষতি করেন।

৫. নেতিবাচক মানুষদের নিয়ে ভাবনা-নেতিবাচক মানুষ আপনার মধ্যকার ইতিবাচক শক্তিকে শুষে নেবে!

৬. নিজেকে অন্যদের সঙ্গে তুলনা করা- এ অভ্যাস আসলে আপনার মনকে ছোট করে ফেলে।

৭. পরচর্চা করা, সমালোচনা করা- গালগল্পে সাময়িক আনন্দ পাওয়া যায়, কিন্তু হিতে বিপরীতে কখন নিজের ক্ষতি করে ফেলছেন তা আপনি কখনোই জানবেন না।

৮. অহেতুক ভয় পাওয়ার প্রবনতা -ভয় সত্যিই এক শক্তিশালী ক্ষমতা , মানুষ জীবনে যা পেতে চায় ভয় তা পাওয়ার পথে নানা ভাবে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায় । ভয় থেকে আসে নিরাপত্তার অভাব । ভয় আমাদের সম্ভাবনা ও ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয় ।

৯. দোষারোপ করা- অন্যের প্রতি দোষারোপের মাধ্যমে আমরা আসলে আমাদের জীবনের দায়িত্ব কর্তব্যের প্রতি অবহেলা প্রকাশ করি ।

১০. হীনমন্যতা- নেতিবাচক আবেগকে প্রশ্রয় দিতে দিতে এই হীনমন্যতা বোধ করার অভ্যাস দিনদিন বাড়তেই থাকে ।

১১. অতীত বা ভবিষ্যতে বাস করা -আপনার যদি বর্তমান সময়টা দারুণ হয় তাহলে আপনার অতীতটাও রঙিন হবে আর ভবিষ্যৎ হবে আশাবাদী।

১২. অজুহাত -বাঙালীর তিন হাতঃ ডানহাত বামহাত আর অজুহাত।

১৩. অভিযোগ করা-অভিযোগকারীর সঙ্গে বেশিক্ষণ থাকতে কেউই পছন্দ করে না।

১৪. নিজেকে জাহির করা- কারণে অকারণে সুযোগ পেলেই আমরা নিজের কৃতিত্ব অন্যের সামনে তুলে ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি।

বদ-অভ্যাস নিয়ে কিছু ভাল ভাল কথাঃ

আমরা আমাদের চিন্তা করি এবং কাজ অনুযায়ী আমাদের অভ্যাস তৈরি হয়ে যায় । অভ্যাস আমাদের চরিত্র গঠন করে আর চরিত্র আমাদের ভাগ্য গঠন করে

“You are a masterpiece unrepeatable, in comparable utterly unique, respect your uniqueness and drop compression relax into your being.”-– Osho

“The cave you fear to enter holds the treasure you seek."-– Joseph Campbell

“Any fool can criticize complain and condemn most fools do. But it takes character and self-control to be understanding and forgiving.”-– Dale Carnegie

চিন্তা করাটা কঠিন আর তাই বেশিরভাগ মানুষই নিজের ধারণা দিয়ে অন্যেকে বিচার করে বসে।”-সুইস মনোবিদ কার্ল ইয়ুং

অন্যের সমালোচনার মাধ্যমে আসলে আমরা আমাদের স্বভাকেই তুলে ধরি ।”

“Inferiority complex is a gold – plated highway to the throne of depression.”--Ikechukwo Izuokor

“We have more ability than will power, and it is often an excuse to ourselves that we imagine that things are impossible” -François De La Rochefoucauld

এই পৃথিবীতে যারা সফলকাম হয়েছেন তাঁরা কোন একদিন উঠে দাঁড়িয়ে তাঁদেরই দাবী মতো তাঁদেরই প্রতি অনুসন্ধান করেছিলেন এবং যখনই না পেয়েছেন তখনই সেটি তৈরি করে নিয়েছিলেন।”-জে.বি শ’

“When you complain, you make yourself a victim. Leave the situation, change the situation or accept it. All else is madness. “

-Eckhart Tolle

সূত্রঃ আজকের বিচিন্তা  ও ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স


Friday, October 23, 2020

জীবনের জন্য বিশেষ ভাবনা: জাঙ্কফুড খাওয়া

 হাই লাইটস

১. জাঙ্কফুড খাওয়া নিয়ে হেলাফেলা আর কতদিন?

২. মানুষের শিক্ষা যে কত জরুরী জিনিস তা এ লেখা থেকেই বোঝা যাবে!

৩. জাঙ্ক ফুড বনাম জৈবিক বার্ধক্য

৪. বার্ধক্যের সঙ্গে জাঙ্ক ফুডের জোরালো সম্পর্ক রয়েছে

. আল্লাহ খুবই কৌশলী মানুষের জন্য

যে সব লোক প্রচুর শিল্প প্রক্রিয়াজাত জাঙ্ক ফুড খান তাদের বয়স বাড়ার সাথে জড়িত ক্রোমোজোমে পরিবর্তনের সম্ভাবনা বেশি থাকে। সম্প্রতি এক অনলাইন সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা এ কথা বলেন।

ওবেসিটি বা স্থুলতা বিষয়ে ইউরোপীয় এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, “অতি প্রক্রিয়াজাত খাবার” যারা দিনে তিনবার অথবা অধিকার গ্রহণ করেন, তাদের ডিএনএ এবং ক্রোমোজোমের শেষে পাওয়া টেলোমিয়ার-telomere নামের প্রোটিনের তারতম্য দ্বিগুণ হবে, যারা এই জাতীয় খাবার কম গ্রহণ করেন তাদের ক্ষেত্রে এই তারতম্য সংক্ষিপ্ত হবে।

সংক্ষিপ্ত টেলোমিয়ার কোষ স্তরে বার্ধক্যের গতি নির্ধারণকারী এবং সমীক্ষায় বলা হয়, কোষগুলো বার্ধক্যের দিকে ধাবিত হওয়ার একটি কারণ এই জাঙ্ক ফুড।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বার্ধক্যের সঙ্গে জাঙ্ক ফুডের জোরালো সম্পর্ক রয়েছে তবে জাঙ্কফুড ও সীমিত টেলোমিয়ারের মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক এখনো অনুমানের মধ্যেই রয়েছে।

প্রতিটি মানুষের কোষে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম রয়েছে, এতে আমাদের জেনেটিক কোড ধারণ করা আছে। টেলোমিয়ার জিনগত তথ্য বহন করে না। তবে ক্রোমোজোমগুলোর স্থায়িত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ এবং বর্ধিতভাবে ডিএনএ আমাদের দেহের সকল কোষের কার্যক্রম পরিচালনা করে।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের টেলোমিয়ারগুলো সংক্ষিপ্ত হতে থাকে কারণ প্রতিটি কোষ বিভাজনকালে টেলোমিয়ারের কিছু অংশ হারিয়ে যায়। টেলোমিয়ারের দৈর্ঘ্য হ্রাস পাওয়া জৈবিক বার্ধক্যের একটি মার্কার বা মানদণ্ড।

স্পেনের ইউনিভার্সিটি অব নাভাররার প্রফেসর মারিয়া বেস-রাসতোল্লো এবং এমেলিয়া মার্তির নেতৃত্বাধীন বিজ্ঞানীরা জাঙ্কফুড গ্রহণ এবং টেলোমারের দৈর্ঘ্য সংক্ষিপ্ত হওয়ার মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে বলে তাদের ধারণা প্রকাশ করেন।

দীঘর্জীবী হওয়ার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও উপায়

ঘুম আপনাকে অনেক রোগ থেকে বাঁচিয়ে রাখে। আপনি কোনো অবস্থাতেই যদি সাত ঘণ্টার কম ঘুমান তাহলে টেলোমিয়ার খাটো হওয়া বন্ধ করতে পারবেন না। আপনি নিজেই আপনার পাশে যে ব্যক্তিরা ধর্মের মনোযোগী তারা দীঘার্য়ু তা যে ধর্মের লোকই হোক। কারণ তাদের কোনো মানসিক চাপ নেই। জীবনের যে অবস্থাতেই তারা আছেন সেটাকে সব থেকে ভালো মনে করেন স্রষ্টার দান মনে করে। ফলে তাদের হারানোর কিছু নেই।

দীঘির্দন ধরে মনে প্রশ্ন ছিল একটি বিষয় নিয়ে। আপনার বাবা একজন গ্রামের কৃষক। তিনি সকালে ওঠেন। নামাজ-কালাম করেন। তারপর পান্তা খান। এরপর মাঠে কাজ করতে চলে যান। দুপুরে আসেন। গোসল করেন এবং আবার খাওয়া-দাওয়া করে বিকালে মাঠে যান। সন্ধ্যায় বাড়ি এসে খাওয়া-দাওয়া করে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েন। বতর্মানে তার বয়স ৬৫-এর ওপরে। পক্ষান্তরে ধরুন আপনার এক চাচা যিনি আপনার আব্বার প্রায় দশ বছরের ছোট। তিনি শহরে বড় চাকরি করেন। সকালে একটু দেরিতে ওঠেন, নাশতা খান, অফিসে যান এবং বিকালে আসেন। রাত্রে টিভি দেখেন। ঘুমাতে অনেক রাত হয়। যিনি চাকরির কারণে অনেক মানসিক দুশ্চিন্তায় ভোগেন। আর একটি বিষয় হলো- আপনার বাবা এখনো জ্বর, ঠান্ডা ছাড়া কোনো ওষুধ খান না কিন্তু চাচাকে হাই প্রেসার, চর্বি বেশি এ রকম অনেক ওষুধ খেয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। এটিই মনে হয় শহর ও গ্রামের বাস্তবতা। কিন্তু কেন এই পাথর্ক্য? প্রতিদিনের জীবনযাপনই বলে দেবে আপনি কতটা সুস্থভাবে বাঁচবেন।

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা?

প্রকৃতি মানুষের প্রতিটি কোষের মধ্যে এমন একটি উপাদান দিয়েছে যেটি আপনার দীঘর্জীবী হওয়ার সঙ্গে যুক্ত। ২০০৯ সালে তিনজন বিজ্ঞানীকে এক সঙ্গে নোবেল দেয়া হয় সেই বিখ্যাত আবিষ্কারের জন্য। টেলোমিয়ার নামক ডিএনএ-এর শেষ অংশ এবং টেলোমারেজ নামক এনজাইমের কাজ আবিষ্কারের জন্য Elizabeth H. Blackburn, Carol Greider, Jack Szostak এক সঙ্গে চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়।

আমরা প্রত্যেকে জন্মের সময়ই বাবা-মায়ের কাছ থেকে টেলোমিয়ার পাই। যত বড় হই তত কোষ ভাগ হতে থাকে তত টেলোমিয়ার খাটো হতে থাকে এবং একটি পযাের্য় আর কোষ ভাগ হতে পারে না। এই বিষয়টি সবচেয়ে বেশি ঘটে চামড়া, চুল ও রোগ প্রতিরোধক কোষে কারণ এই জায়গাগুলোই দ্রুত বাড়ে। এ কারণে বয়স বাড়লে, এই তিনটি জায়গায় সবার আগে সমস্যা হয় কারণ নতুন কোষ তৈরি না হলে আপনি বয়স্ক হয়ে যাবেন। জামা-কাপড় বা সবকিছু যেমন নতুন থেকে পুরাতন হয়, এ রকম যখন নতুন কোষ আর তৈরি হবে না তখন আপনাকে পুরনো দেখাবে। বাকি একটু ধারণা দিলেই বুঝতে পারবেন কীভাবে ঘটনা ঘটছে। রক্তের সাদা কণিকায় টেলোমিয়ার ৮০০০ বেজপেয়ার থাকে একজন সদ্য জন্মগ্রহণকারী বাচ্চার, যা একজন পূণর্বয়স্ক মানুষের থাকে ৩০০০ এবং বৃদ্ধের যা থাকে ১৫০০। আপনার বয়সের সঙ্গে টেলোমিয়ারের বেজ সংখ্যা ৮০০০ রাখা যেত তবে আপনি অমরত্ব লাভ করতেন কিনা? টেলোমিয়ারকে খাটো হতে বাধা দেয় টেলোমারেজ এনজাইম। আপনি এনজাইমটিকে যত ভালো রাখবেন ততই আপনাকে যৌবনময় দেখাবে। কিন্তু এই এনজাইমকে ভালো রাখার পরিবতের্ আপনি পালাের্র যান, চুল কালো করেন বা চামড়ায় অন্য কিছু মাখান। কিন্তু কোনো কিছুই আপনাকে যৌবনময় রাখতে পারবে না। পারবে টেলোমারেজ এনজাইম। কিন্তু কেন সেটি তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়? তখন যতই পালাের্র যান বা চুল কালো করেন বয়সের ছাপ পড়বেই।

টেলোমারেজ-Telomerase নষ্ট হওয়ার কারণগুলো- যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক তিনি প্রমাণ করেছেন, ‘যারা ধূমপান করেন তাদের টেলোমিয়ার যারা ধূমপান করেন না তাদের তুলনায় লম্বা’। তিনি এই তথ্য ইনভারমেন্টাল রিসার্চ নামক সাময়িকীতে ২০১৭ সালে প্রকাশ করেছেন। কিন্তু আশার বাণী হলো, এই গবেষণায় আরও প্রমাণিত হয়েছে, যারা আগে ধূমপান করতেন কিন্তু এখন করেন না তাদের টেলোমিয়ার লম্বা।

মিসিসিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, ‘যারা বেশি সময় ধরে কম্পিউটারে বসে থাকে তাদের টেলোমিয়ার খাটো হওয়ার প্রবণতা ৭ ভাগ বেশি’।

লান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়াং ওয়াং-এর নেতৃত্বে গবেষণায় দেখা গেছে, ‘মানসিক দুশ্চিন্তা, অশান্তি ও মোটা মানুষের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত নয় ও সাধারণ ওজনের মানুষের তুলনায় খাটো’। বেশি মিষ্টিযুক্ত কোমল পানীয়, লবণযুক্ত খাবার এবং বেশি মিষ্টিযুক্ত খাবার মানুষের ওজন বাড়ায় এবং টেলোমিয়ার খাটো করে কারণ মোটা মানুষের শরীরের কোষবৃদ্ধি শুকনো মানুষের কম। ফলে টেলোমিয়ার খাটো হয়। সোজা কথা, যেটি ওজন বাড়ায় এবং যা জারন প্রক্রিয়া বাড়ায় তাই দেহের জন্য ক্ষতিকর।

লাভের উপায়?

আপনারা ভাববেন না আমি এমন কোনো পদ্ধতি বাতলে দিব, যা আপনাকে অমরত্বের দিকে নিয়ে যাবে বা টেলোমিয়ার রাতারাতি লম্বা হয়ে যাবে। আমি কিছু উপায় লিখব মাত্র।

ধূমপান বা মদ্যপান করার অভ্যাস থাকলে কমিয়ে দিন বা বন্ধ করুন। ধীরে ধীরে টেলোমিয়ার খাটো হওয়ার পরিমাণ কমবে। মানসিক উদ্বিগ্নতা কমিয়ে ফেলুন পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করুন। ভালো বন্ধুদের হাসি-খুশিতে সময় কাটান। একটানা কাজের মধ্যে কিছুদিন ছুটি কাটান। আপনার শত ব্যস্ততার মধ্যেও প্রিয়জন, প্রিয় মানুষ, সন্তান ও অন্যের মধ্যে সুন্দর সময় কাটান। মানুষকে উদারতা দেখান। সাহায্য করুন। মন ভালো থাকবে। নিয়মিত সহবাস ও একটি মানসিক পরিতৃপ্তির অংশ। ওমেগা-৩ যুক্ত খাবার, অ্যালগিযুক্ত খাবার এবং অঁাশযুক্ত খাবার খান। বেশি মিষ্টিজাতীয় খাবার এবং পানীয় পরিহার করুন। হলুদ, লাল বা অন্যান্য রঙের সবুজ শাক-সবজি বা ফল আপনাকে টেলোমিয়ার খাটো হয়ে যাওয়া থেকে বঁাচাবে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। এ ছাড়া ভিটামিন ই, , ঊ + ঈ সব সময়ই টেলোমিয়ারকে লম্বা রাখে।

ম্যাচাসুয়েট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ইলিসা বলেন, ‘কায়িক পরিশ্রম, খেলাধুলা বা শরীরের ব্যায়াম টেলোমিয়ার লম্বা করে’। কারণ এই কাজগুলো শরীরের কোষীয় খারাপ উপাদানগুলোকে বাইরে বের করে দেয়। ফলে ডায়াবেটিক, দীঘের্ময়াদি ব্যথা ও হৃদরোগ কম হয়। আপনি নিজেই কেন সৌরভ গাঙ্গুলীকে লক্ষ্য করছেন না? কত তার বয়স এবং দাদাগিরিতে তাকে কেমন মনে হয়। শুধু সৌরভ গাঙ্গুলী নয় অন্য যারা নিয়মিত কাজ করেন বা ব্যায়াম করেন তারা অনেক দিন ধরে সুস্থ থাকেন। ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ইলি পিউটারম্যান গবেষণায় পেয়েছেন! ‘নিয়মিত ব্যায়াম টেলোমিয়ারের সংখ্যা বাড়ায় ও ভালো রাখে’।

অফিসে একটানা বসে কাজ করছেন? সামান্য হাঁটুন বা চলাফেরা করুন। ফোনে কথা বলার সময় সমান্য হাঁটুন, প্রতি ঘণ্টায় একটু হাঁটুন, লিফট না ব্যবহার করে সিঁড়ি ব্যবহার করুন, বাসায় ফেরার সময় রিকশার পরিবর্তে হেঁটে বাসায় আসুন।

ঘুম আপনাকে অনেক রোগ থেকে বাঁচিয়ে রাখে। আপনি কোনো অবস্থাতেই যদি সাত ঘণ্টার কম ঘুমান তাহলে টেলোমিয়ার খাটো হওয়া বন্ধ করতে পারবেন না। আপনি নিজেই আপনার পাশে যে ব্যক্তিরা ধমের্ মনোযোগী তারা দীঘার্য়ু তা যে ধমের্র লোকই হোক। কারণ তাদের কোনো মানসিক চাপ নেই। জীবনের যে অবস্থাতেই তারা আছেন সেটাকে সব থেকে ভালো মনে করেন স্রষ্টার দান মনে করে। ফলে তাদের হারানোর কিছু নেই।

এ কারণেই ভারতের রিমা দাদা ও তার গবেষক দল যোগ ব্যায়াম ও মেডিটেশনকারী লোকদের টেলোমিয়ার লম্বা পেয়েছেন। তাহলে কি বিজ্ঞানীরা সরাসরি কোনো ওষুধ তৈরি করে ফেলেছেন যার মাধ্যমে অমরত্ব লাভ করা যায় বা টেলোমারেজ ভালো রাখা যায়? আসলে বিষয়টি এত সরাসরি সম্ভব নয়। অনেক জটিলতা আছে ওষুধ তৈরিতে। সব কোষই কিন্তু সমান হারে বাড়ে না। যেমন মস্তিষ্কের কোষ। ফলে ওষুধ প্রয়োগে অনেক ক্ষেত্রে ক্যান্সারও হতে পারে। তবে কিছু ভিটামিন বা এন্টি অক্সিডেন্ট আছে যারা বিকল্পভাবে টেলোমারেজকে ভালো রাখে। টিএ-৬৫ নামক একটি সাপ্লিমেন্ট আছে যেটি চায়নার একটি গাছ থেকে প্রাপ্ত। কিন্তু এটি এফডিএ কতৃর্ক সাটিির্ফকেট প্রাপ্ত নয় কারণ এটি কোনো ওষুধ নয়। অ্যাসট্রোগ্যালস, টেলোমারোন, টেলোমারেজ আপ, টেলোম্যাক্স নামক অসংখ্য ভিটামিন বা এন্টি অক্সিডেন্ট সাপ্লিমেন্ট। ইন্টারনেটে দেখলাম। বাংলাদেশে পাওয়া যায় কিনা ধারণা নেই। কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া আছে কিনা তাও জানিনা। তবে আমি বলব, সুন্দর একটি জীবনযাপন মনে হয় ভালো, ওষুধ না খেয়ে।

আল্লাহ খুবই কৌশলী মানুষের জন্য

আমার  প্রথম বলা গল্প দুটোর উপসংহার না বললেও পাঠকরা বুঝে ফেলেছেন। আপনার বাবা টেলোমিয়ার লম্বা রাখার কৌশল না জেনেও গ্রামে থেকে কায়িক পরিশ্রম করেন, মানসিক শান্তি আছে, ধর্মচর্চা করেন এবং গ্রামের সবুজ ও অন্যান্য ফলমূল খেয়ে দিব্বি টেলোমিয়ার লম্বা রেখেছেন। আপনার শহুরে চাচা কায়িক পরিশ্রম করেন না, ব্যায়াম করেন না, চাকরিজীবনে অশান্তি, শহরের বিভিন্ন বিষয়ের দুশ্চিন্তা, জীবনে বড় হওয়ার সংগ্রাম, অন্যের চেয়ে বড়লোক হওয়ার অশান্তি, বেশি মাছ-মাংস খেয়েছেন, কোমল পানীয় পান করেছেন। ফলে টেলোমিয়ার খাটো হয়ে গিয়েছে। কে কতদিন বাঁচবে তা বড় কথা নয়। কে কতদিন সুস্থ থাকবে তাই মূলমন্ত্র। টেলোমিয়ার কি বড় রাখবেন নাকি খাটো? সিদ্ধান্ত আপনার? আপনিই ভাবুন, আপনার কমর্পরিকল্পনা।

Sources

-ইত্তেফাক/ 

https://www.jaijaidinbd.com/todays-paper/editorial/19329/ দীঘর্জীবী-হওয়ার-বৈজ্ঞানিক-ব্যাখ্যা-ও-উপায়

-https://www.nobelprize.org/.../2009/illustrated-information/