Friday, December 31, 2021

যেকোনো পরিস্থিতিতে যেভাবে স্থির থাকা যায়?

 -মন স্থির রাখার একটা ভালো উপায় কিছু ভাল বই পড়তে থাকা

-ভুল হলে, দুঃখ প্রকাশেও মন স্থির হতে পারে
-অভিযোগ না করে যুক্তি দিয়ে কথা বললে মন স্থির হতে পারে
হুট করে রেগে যাওয়া কিংবা কোনো ঘটনার কথা শুনে অল্পতেই প্রতিক্রিয়া দেখাই আমরা। প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্য আমরা কখনো বেছে নিই ফেসবুকের নীল দেয়াল, আবার কখনো অন্যের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়ি। যেকোনো পরিস্থিতিতে সব সময় আমাদের স্থির মনোভাব প্রদর্শন করা উচিত। হুট করে রেগে গিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া কখনোই ইতিবাচক আচরণ নয়। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো স্কুল অব প্রফেশনাল সাইকোলজির পিএইচডি গবেষক ও মনোবিদ জেসমিন আক্তার বলেন, ‘প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন আমাদের স্বাভাবিক আচরণগুলোর একটি। ব্যক্তিত্ব ও মন কতটা প্রাণবন্ত তার ওপর নির্ভর করে আমরা কীভাবে কোন পরিস্থিতিতে কী আচরণ করব। স্থিরভাবে প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন সব সময় বুদ্ধিমানের কাজ।
ধীর গতিতে এগোন
যদি সম্ভব হয় কোনো ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া এড়িয়ে চলুন। ধৈর্য ধরে যতটা সম্ভব সঠিক তথ্য ও ঘটনার কারণ জানার চেষ্টা করুন। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত ও পেছনের কারণ নিয়ে নিজেকে বারবার প্রশ্ন করুন। প্রশ্ন করুন—প্রতিক্রিয়া বা মতামতের, ভবিষ্যতে প্রভাব থাকবে কতটুকু। আপনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার হয়তো আগামীকালই কোনো মূল্য থাকবে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, প্রতিক্রিয়া না দেখালে ভবিষ্যতে তেমন ক্ষতি হয় না। প্রতিক্রিয়া দেখানোর আগে ভাবুন, স্থির থাকুন।
ইতিবাচক থাকুন
যেকোনো ঘটনার সময়ই আমরা চাপ অনুভব করি। চাপের কারণে দুশ্চিন্তায় পড়ি, বিক্ষিপ্ত হয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি। এমন পরিস্থিতিতে যতই আমরা ঘটনা নিয়ে ভাবব, কারণ অনুসন্ধানে মনকে ব্যস্ত রাখব, ততই আমাদের শান্ত থাকার সম্ভাবনা কমে যায়। পরিস্থিতি নিয়ে ‘এটা হলে কেমন হতো’, ‘ওটা না হলে কেমন হতো’-এমন দ্বিধায় জড়াবেন না। সব সময়ই নেতিবাচক কথা মন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন। যেকোনো পরিস্থিতিতে ইতিবাচকভাবে মনকে স্থির রাখুন।
‘যদি’ এড়িয়ে চলুন
‘ইশ্‌, যদি ব্যাপারটা এমন হতো’—এমন আক্ষেপে আমরা হতবিহ্বল হয়ে পড়ি। যেকোনো ঘটনা বা পরিস্থিতিতে যদি-সংক্রান্ত সব প্রশ্ন এড়িয়ে চলুন। যা হয়নি, যা হবে না তা নিয়ে ভেবে ভেবে মনকে বিক্ষিপ্ত করে নিজেকে অশান্ত করবেন না। এমন প্রশ্নে আসলে নিজের ভয় আর সংশয় প্রকাশ পায়।
শরীরের যত্ন নিন
যেকোনো পরিস্থিতিতে শান্ত থাকা এক দিনের অভ্যাসে তৈরি হবে না। শরীরের যত্ন নিতে হবে নিয়মিত। টুকটাক ও হালকা ব্যায়াম করুন প্রতিদিন। পরিমাণমতো ঘুমাতে হবে। যোগব্যায়াম করে মনে প্রশান্তি আনুন।
ক্যাফেইনকে ‘না’ বলুন
উত্তেজনাকর যেকোনো মুহূর্তে পারতপক্ষে চা-কফির মাত্রা কমিয়ে দিন। চা-কফির ক্যাফেইন আমাদের উদ্দীপ্ত করে, অ্যাড্রেনালিন হরমোনের প্রবাহ বাড়িয়ে উত্তেজিত করে দেয়। উত্তেজনাকর যেকোনো মুহূর্তে পরিমিত পরিমাণে পানি পান করতে পারেন।
বন্ধুর সঙ্গে কথা বলুন
যেকোনো উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে নিজের মতামত প্রকাশের আগে বন্ধু বা বিশেষজ্ঞ কারও পরামর্শ নিতে পারেন। আপনি হয়তো যেভাবে ভাবছেন, আপনার বন্ধুর ভাবনা অন্যরকম হতে পারে। অন্যের ভাবনা জানলে আপনার প্রতিক্রিয়ায় পরিবর্তন আসতে পারে। আবার বিশেষজ্ঞ কারও পরামর্শ নিলে পরিস্থিতির কারণগুলো আপনি বেশ পরিষ্কার জানতে পারেন।
নিজেকে মুক্ত করুন
খুব চাঞ্চল্যকর কোনো ঘটনায় আমরা প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে বাহবা নিতে চেষ্টা করি। এমনটা কখনোই করবেন না। চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সময় কয়েক ঘণ্টার জন্য নিজেকে সরিয়ে নিন অন্য কোনো কাজে। পার্কে ঘুরে আসতে পারেন কিংবা নিজের কোনো প্রিয় বইয়ের পাতায় নিজেকে সরিয়ে নিন।
রাগ-প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে আনতে শিখুন, পরিস্থিতি সামলান ঠাণ্ডা মাথায়
অন্যের ওপর রাগ প্রদর্শন আমাদের অনেকেরই বাজে অভ্যাস। রাগ নিয়ন্ত্রণ করা শিখতে হবে। রাগ সহজাত একটি আবেগ, যা নিয়ন্ত্রণ করতে কৌশলী হতে হবে। অন্যের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করে অন্যদের মতামত জানতে হবে। অন্যের কথাকে সম্মান জানিয়ে সামগ্রিক পরিস্থিতি বুঝতে হবে।
অনেকেই আছেন অন্য কারও সঙ্গে মতের অমিল হলেই বা পরিস্থিতি তাঁর প্রতিকূলে থাকলে মাথা ঠিক রাখতে পারেন না, উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এগুলি থেকে দূরে থাকুন। যে কোনও পরিস্থিতিতে শান্ত থাকুন।
সূত্র: বিভিন্ন

সুস্থ থাকতে আখের রস ভাল কাজ করে

sugarcane juice is reported to have a glycemic index score of 43, which classifies it as a low glycemic food. People with diabetes should not refrain from having sugarcane as it has low glycemic index. Diabetics can both chew sugarcane or drink a fresh and chilled glass of sugarcane juice.

গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে গলদঘর্ম অবস্থায় এক গ্লাস মিষ্টি আখের রস মন প্রাণ জুড়িয়ে দেয়। তবে শুধু গ্রীষ্মকাল কেন, শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা স্বাদের খেয়াল রাখার পাশাপাশি শরীরের যত্নেও ভরসা হোক আখের রস।
১) আখের রসে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট যা শরীর থেকে ক্ষতিকারক টক্সিন নির্মুল করে শরীরকে ভিতর থেকে ঝরঝরে করে তোলে।
২) পটাশিয়াম সমৃদ্ধ আখের রস শীতকালে হাড়ের ক্ষয় রোধ করে।
৩) পিত্তাশয় ও যকৃত সুস্থ রাখতে আখের রস কাজ করে ম্যাজিকের মতো। মূত্রনালীর সংক্রমণ প্রতিরোধ করে আখের রস। জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য আখের বেশ উপকারী।
৪)ত্বকের অকাল-বার্ধক্য রোধ করতে অনেকেই বিভিন্ন প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকেন। তবে জানেন কি, আখের রসে থাকা আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড ত্বকের কুঁচকে যাওয়া রোধ করে। শীতকালে মাথায় খুশকির পরিমাণ খুব বেশি হয়। মাথার খুশকি ও ত্বকের অবাঞ্ছিত ব্রোণ তাড়াতেও আখের রসের জুড়ি মেলা ভার।
৫)আখের রসে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও মাইক্র মিনারেলস। যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। আখের রস শারীরি দুর্বলতা কাটিয়ে শরীরকে করে তোলে ঝরঝরে।
৬) শীতকালে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের সুস্থতায় আখের রস খুবই উপকারী। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় শরীর ঠাণ্ডা রাখতে আখের রস বেশ কার্যকর।
সূত্র-
আনন্দবাজার
অন্যান্য

শরীরকে সুস্থ রাখতে খাবারের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ

 কোন কোন খাবার খেলে আপনার শরীরে তাড়াতাড়ি বার্ধক্য ধরা দেবে?

এনার্জি ড্রিঙ্কস
এনার্জি ড্রিঙ্ক পান করলে সাময়িক শক্তি পাওয়া গেলেও বয়সের ছাপ তাড়াতাড়ি চলে আসে।
চিনি
মিষ্টি খেতে অনেকেই ভালোবাসেন। এমনকি চায়ের মধ্যে বেশ কয়েক চামচ চিনি দিয়ে খাওয়ার অভ্যাসও অনেকের আছে। কিন্তু এই চিনি আখেরে ত্বক এবং স্বাস্থ্য উভয়েরই খুব ক্ষতি করে।
নুন
খাবারে অত্যাধিক নুন যেমন স্বাস্থ্যের পক্ষে খারাপ তেমনই ত্বকের পক্ষে। অতিরিক্ত নুনও ত্বককে শুষ্ক করে তোলে। রক্ত চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি করে। যার প্রভাব পড়ে মুখের ত্বকে।
ফাস্ট ফুড
সুস্বাদু ফাস্ট ফুড খেতে সকলেরই ভালো লাগে। বিনা পরিশ্রমে ঝটপট দোকান থেকে খাবার তো খেয়ে নিলেন, কিন্তু তাতে যে ত্বক এবং চুলের ক্ষতি করলেন সেই হিসেব কেউ রাখেন না। ফাস্ট ফুডে প্রচুর পরিমাণে নুন এবং তেল থাকে যেগুলি স্বাস্থ্য এবং ত্বক উভয়ের পক্ষে ক্ষতিকর।
ফ্রোজেন এবং প্রসেসড্ ফুড
প্যাকেট থেকে খাবার বের করে শুধু একবার কড়ািয়ে নাড়া চাড়া করে নিন। ব্যস, খাবার রেডি। কিন্তু এই সব খাবার অভ্যাসে পরিণত করলে পেশির ভয়ানক ক্ষতি হয়।
কাবাব, বারবিকিউ, স্টেক
পোড়া মাংস খেলে শরীরে হাইড্রোকার্বনের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে শরীরে প্রদাহ বা ইনফ্লামেশন বেড়ে যায় এবং ত্বকের কোলাজেন (কোলাজেন হলো মানবশরীরের সৃষ্ট প্রাকৃতিক প্রোটিন। আমাদের শরীরের হাড়, পেশি, অস্থিসন্ধি, চুল, নখ ও ত্বকের গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।) ভেঙে ফেলে।
ক্যাফেইন
কফিতে থাকা ক্যাফেইন ত্বককে শুষ্ক করে দেয়।
তাই সচেতন হই। অকাল বার্ধক্য রুখে দিই

হাত, পা ঠান্ডা থাকার ৫ বড় কারণ

 হাইপোথাইরয়েডিজম- থাইরয়েড (Thyroid) হল শরীরে শক্তির ভারসাম্য রক্ষাকারী গ্রন্থি। হাইপোথাইরয়েডিজমের (Hypothyroidism) ক্ষেত্রে এই গ্ল্যান্ডে দেখা যায় সমস্যা। তখন থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে সঠিক পরিমাণে থাইরয়েড হর্মোন বেরয় না। দেখা দেয় সমস্যা। এই রোগে আক্রান্ত রোগীরও শরীর গরম রাখতে সমস্যা হয়। তাই হাত, পা প্রায়ই ঠান্ডা হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো করুন থাইরয়েড পরীক্ষা।

রেনৌডস ডিজিজ- আপনার যদি হাইপোথাইরয়েডিজমের সমস্যা না হয় সেক্ষেত্রে হতে পারে রনৌডস ডিজিজ (Raynaud’s Disease)। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির হাত,পায়ের ছোটছোট রক্তনালী বন্ধ হয়ে যায়। ফলে গরম রক্ত সেই হাত, পায়ে পৌঁছাতে পারে না। ফলে হাত, পা ঠান্ডা থাকে।
ডায়াবিটিস- আপনার সুগার (Diabetes) নিয়ন্ত্রণে না থাকলেও দেখা দিতে পারে এই সমস্যা। এক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত সুগার থেকে মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথিতে। এরফলে পায়ের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং আপনাকে সমস্যায় ফেলতে পারে। এছাড়া ডায়াবিটিস থেকে দেখা দিতে পারে পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ। এই রোগে আক্রান্ত হলে রক্তনালীর অন্দরে রক্তপ্রবাহে দেখা দেয় সমস্যা।
দুশ্চিন্তা- জানলে অবাক হবেন, আপনার হাত, পা ঠান্ডার থাকার নেপথ্যে থাকতে পারে মানসিক দিকও। এক্ষেত্রে দুশ্চিন্তা (Stress), উৎকণ্ঠা শরীরে এপিনেফ্রিন হর্মোনের পরিমাণ বাডি়য়ে দেয়। এই হর্মোন বাড়ার কারণে শরীরে দেখা দেয় সমস্যা। তখন হাত-পায়ে রক্তপ্রবাহ কমে।
হাই কোলেস্টেরল- কোলেস্টেরল (Cholesterol) শরীরে বাড়লে তা রক্তনালীর অন্দের জমে। এবার রক্তনালীর ভিতরে কোলেস্টেরল জমলে দেখা দিতে পারে মারাত্মক সমস্যা। তখন হাত, পায়ে ঠান্ডা লাগতে পারে। তাই আজ থেকেই হয়ে যান সাবধান।
-এইসময়
Like
Comment
Share

স্ট্র ব্যবহার করছেন? সাবধান!

রাস্তায় ডাবের জল থেকে কোল্ড কফি, জুস, শেক, কোল্ড ড্রিঙ্ক, প্রত্যেকটির সঙ্গেই থাকে স্ট্র। কিন্তু এই স্ট্র কি আদৌ স্বাস্থ্যকর?

বেভারেজ বা যে কোনও ড্রিঙ্কের সঙ্গে স্ট্র দেওয়া হয়। রাস্তায় ডাবের জল থেকে কোল্ড কফি, জুস, শেক, কোল্ড ড্রিঙ্ক, প্রত্যেকটির সঙ্গেই থাকে স্ট্র। বেশ কিছু রেস্তোঁরায় সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন রকমের স্ট্র দেওয়া হয়। এতে ধীরে ধীরে কোল্ড কফি বা জুসের স্বাদ উপভোগ করতে করতেও পান করা যায়। তা ছাড়া তো সেলফি জমানায় স্ট্র দিয়ে জুস বা ড্রিঙ্ক পান করতে করতে নানা কায়দায় ছবি তোলারও চল রয়েছে।
১) স্ট্র ব্যবহার করলে মুখে তাড়াতাড়ি বলিরেখা তৈরি হয়। স্ট্র দিয়ে পানীয় পান করার সময়ে পেশীতে চাপ পড়ে। নিয়মিত তাই এই অভ্যেস রাখলে মুখেও তার ছাপ পড়ে। এমনকী বলিরেখা পর্যন্ত দেখা দিতে পারে।
২) স্ট্রয়ের মধ্যে পেট্রোলিয়াম জাতীয় পলিথিন থাকে। এই উপাদান শরীরে মেদ জমতে দেয়। ফলে মোটা হওয়ার প্রবণতা থাকে।
৩) সবোর্পরি স্ট্র তৈরি হয় প্লাস্টিক দিয়ে। এতে পলিথিন থাকার ফলে শরীরে ব্যাপক ক্ষতি হয়। প্লাস্টিকের পরিবর্তে কাগজের স্ট্র ব্যবহার করতে পারেন।
৪) স্ট্র দিয়ে পান করার সময়ে শুধু পানীয়ই নয়। পেটে অতিরিক্ত হাওয়া যায়। যার ফলে গ্যাসের সমস্যা হতে থাকে। আর একবার গ্যাসের সমস্যায় পড়লে, শরীরে অন্যান্য রোগও বাসা বাঁধতে থাকে। এমনকী হৃদযন্ত্রেও এর প্রভাব পড়়ে।
৫) চুমুক দিয়ে জল খাওয়ার সময়ে খেলে দাঁত ও মুখের মধ্যের ব্যাকটেরিয়া পরিষ্কার হয়ে যায়। স্ট্র দিয়ে জল বা পানীয় খেলে তা হয় না। বরং নিয়মিত স্ট্র দিয়ে নরম পানীয় পান করলে মুখের কোনও নির্দিষ্ট একটা জায়গায় চিনি জমতে থাকে। যার ফলে ক্যাভিটি পর্যন্ত হতে পারে।
ওপরের কথাগুলোর নিরিখে স্ট্র ব্যবহার বাদ দিন। শরীরটা আপনার। তাই সচেতন হোন।
-এইসময়

রসুন

 যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, ফুসফুসের কনজেশন, হাপানি, হুপিং কাশি ইত্যাদি প্রতিরোধ করে।

অন্ত্রের জন্য ভাল : খালি পেটে রসুন খাওয়ার ফলে যকৃত এবং মূত্রাশয় সঠিকভাবে নিজ নিজ কার্য সম্পাদন করে।
যক্ষ্মা প্রতিরোধক : আপনার যদি যক্ষ্মা বা টিবি জাতীয় কোন সমস্যা ধরা পড়ে, তাহলে সারাদিনে একটি সম্পূর্ণ রসুন কয়েক অংশে ভাগ করে বার বার খেতে পারেন।
প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক : গবেষণায় দেখা গেছে, খালি পেটে রসুন খাওয়া হলে এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক এর মতো কাজ করে।
শরীরকে ডি-টক্সিফাই করে : অন্যান্য ঔষধের তুলনায় শরীরকে ডি-টক্সিফাই করতে রসুন কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে : অসংখ্য মানুষ যারা উচ্চ রক্তচাপের শিকার তারা দেখেছেন, রসুন খাওয়ার ফলে তাদের উচ্চ রক্তচাপের কিছু উপসর্গ উপশম হয়।
হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে : রসুনে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট প্রপাটিজ রয়েছে। এই উপাদানটি একদিকে যেমন শরীরে উপস্থিত খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, তেমনি উচ্চ রক্তচাপকেও নিয়ন্ত্রণে রাখে।
হাড় শক্তপোক্ত হয়ে ওঠে : নিয়মিত রসুন খাওয়া শুরু করলে দেহের অ্যান্টি-ইনফ্লামেটারি প্রপাটিজের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। ফলে একদিকে যেমন নানাবিধ যন্ত্রণা কমে, তেমনি হাড়ের ক্ষয় হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
ক্যান্সারের মতো মারণ রোগ দূরে থাকে : প্রতিদিন রসুন খেলে পাকস্থলী এবং কলোরেক্টাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।
ক্ষতের চিকিৎসায় কাজে আসে : কেটে গেলে এবার থেকে ক্ষতস্থানে এক টুকরো রসুন রেখে ব্যান্ডেজ দিয়ে বেঁধে দিন। জ্বালা-যন্ত্রণা কমে যাবে।
ইমিউনিটি বাড়ে : রসুনে থাকা ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস দেহের আনাচে-কানাচে জমতে থাকা ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে দ্রুত।
রক্ত বিষমুক্ত হয় : প্রতিদিন এক গ্লাস গরম পানির সঙ্গে দুটি রসুনের কোয়া খেলে রক্তে থাকা নানা বিষাক্ত উপাদান শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে শুরু করে। ফলে ধীরে ধীরে ত্বক এবং শরীর উভয়ই চাঙ্গা হয়ে ওঠে।
ত্বক সুন্দর হয়ে ওঠে : শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদান বা টক্সিনের কারণে ত্বকের যাতে কোনও ধরনের ক্ষতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখে রসুন।
ব্লাড প্রসার নিয়ন্ত্রণে থাকে : রসুনের মধ্যে থাকা বায়োঅ্যাকটিভ সালফার, রক্তচাপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শরীরের সালফারের ঘাটতি দেখা দিলে তবেই রক্তচাপ বাড়তে শুরু করে।
সংক্রমণ সব দূরে থাকে : রসুনে থাকা একাধিক কার্যকরি উপাদান ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাসসহ একাধিক জীবাণুর সংক্রমণ আটকাতে যে কোনও আধুনিক মেডিসিনের থেকে তাড়াতাড়ি কাজে আসে।
জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে : আবহাওয়া বদলের সময় যারা সর্দি-কাশিতে খুব ভুগে থাকেন তারা দু কোয়া রসুন অথবা গার্লিক টি খাওয়া শুরু করুন।
হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে : রসুনে থাকা একাধিক উপকারি উপাদান স্টমাকের ক্ষমতা বাড়ায়।
ব্রেনের অসুখ দূরে থাকে : রসুনে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান শরীরে প্রবেশ করা মাত্র এমন খেল দেখাতে শুরু করে যে নানাবিধ নিউরোডিজেনারেটিভ অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।
খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ শতকে চীন ও ভারতে রক্ত পাতলা রাখার জন্য এর প্রচলন ছিল৷
চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক হিপোক্রেটিস একে ব্যবহার করেছিলেন সারভাইকাল ক্যান্সারের চিকিৎসায়৷
লুই পাস্তুর রসুনের অ্যান্টিফাংগাল ও অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল গুণের খবর জানান৷
ইউনিভার্সিটি অব কানেক্টিকাট স্কুল অব মেডিসিন–এর কার্ডিওভাসকুলার রিসার্চ টিমের মতে, কাঁচা রসুন খেলে হার্ট অনেক বেশি সুস্থ থাকে৷
সতর্কতা
বমির ভাব হলে রসুন খাবেন না
অ্যালার্জি থাকলে রসুন খাবেন না।
মাথা ব্যথা হলে রসুন বাদ থাকবে।
যাদের শরীর থেকে রক্তপাত সহজে বন্ধ হয় না, তারা রসুন খাবেন না।
শিশুকে দুগ্ধদানকারী মায়েদের রসুন না খাওয়াই ভালো।
-https://agami24.com/

ঘাটতি হচ্ছে ভিটামিন ডি-র? বুঝবেন কোন কোন লক্ষণে

শরীরের জন্য অপরিহার্য ভিটামিন ডি শরীরের অভ্যন্তরেই উৎপন্ন হয়। এর পর্যাপ্ত মাত্রা শরীরে ক্যালশিয়াম এবং ফসফরাস শোষণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তা ছাড়াও এটি শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে, বিভিন্ন সংক্রমণ এবং রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এমনকি, হাড় ও দাঁতের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশকেও সহজ করে তোলে ভিটামিন ডি।

বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন মহামারি সংক্রান্ত গবেষণাতেও বলা হয়েছে— ভিটামিন ডি হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে, ত্বকের ব্যাধিতে, এমনকি, ক্যানসারের মতো রোগ প্রতিরোধে উপকারী। এটি শরীরের পেশিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। শরীরের দুর্বল পেশিকে সবল করতে প্রাচীন যুগেও শরীরে সূর্যালোক লাগানোর প্রথা ছিল যা আসলে দেহে ভিটামিন ডি-ই সরবরাহ করে।
শীতকালে দেহে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এই সময় দেহে ক্যালশিয়ামের বিপাক যথাযথ বজায় রাখার জন্য প্রতি দিন ১০-১৫ মিনিটের সরাসরি সূর্যালোক প্রয়োজন।
১। ভিটামিন-ডি-এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাগুলির মধ্যে একটি হল দেহের প্রতিরোধক্ষমতাকে শক্তিশালী রাখা যাতে ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়াগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম হয় দেহ।
২। দেখা যায় ভিটামিন-ডি-এর অভাব রয়েছে এমন মহিলাদের সন্তানধারণের সম্ভাবনা কম।
৩। হঠাৎ করে চুল পড়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিলে খেয়াল করতে হবে শরীরে ভিটামিন ডি কমে গিয়েছে কি না।
৪। হাড় এবং পেশিতে দুর্বলতা এবং ব্যথা, অস্থিসন্ধিগুলির বিকৃতি এবং দীর্ঘস্থায়ী পিঠে ব্যথা ভিটামিন ডি এর ঘাটতির সাধারণ লক্ষণ হতে পারে।
৫। শরীরে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা কম হলে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ দেখা দিতে পারে, যা ঘন ঘন মেজাজের পরিবর্তন করতে পারে। স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে, ভাল ভাবে বিশ্রাম নিয়েও যদি আপনি অলস এবং ক্লান্ত বোধ করেন তবে এটি ভিটামিন ডি এর অভাবের সূচক হতেই পারে।
৬। স্থূল ব্যক্তিদের ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে কারণ মেদবহুল কোষগুলি শরীরে ভিটামিন ডি নিঃসরণে বাধা দেয়।

ওভারিয়ান সিস্ট

 ওভারিয়ান সিস্ট কী?

ওভারির মধ্যে যে মাংসল বৃদ্ধি ঘটে, তাকেই সিস্ট বলে। কখনও সেই সিস্ট হয় মাংসল, আবার কখনও সেখানে থাকে তরল পদার্থ। প্রাথমিকভাবে সিস্টের কারণে তেমন কোনও শারীরিক সমস্যা না হলেও পরবর্তীকালে তা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। শুধু সন্তান ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় ডিম্বাণু উৎপাদন করাই নয়, একজন মহিলার মানসিক-শারীরিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করে যে সমস্ত হর্মোন, সেগুলিও তৈরি হয় ওভারিতে। তাই সিস্টের কারণে ওভারি তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারায়।
ওভারিতে কত ধরনের সিস্ট হয়?
এক ধরনের সিস্ট তৈরি হয়, যারা নিরীহ। সিস্টের কারণে কোনও ক্ষতি হয় না। দ্বিতীয়ত, কিছু সিস্ট তৈরি হতে পারে, যেগুলি ম্যালিগন্যান্ট। আর কিছু সিস্টকে ‘বর্ডার লাইন’ বলা হয়। এগুলি এখনই ততটা বিপজ্জনক না হলেও ভবিষ্যতে তা থেকে ক্যান্সার ছড়াতে পারে। আরও একভাবে সিস্টকে ভাগ করা যায়। একটি, দু’টি বা তিনটি প্রমিনেন্ট সিস্ট থাকলে তাকে ওভারিয়ান সিস্ট বলে। যদি দেখা যায়, পুঁতির মালার মতো ছোট ছোট বহু সিস্ট ডিম্বাশয় ঘিরে রেখেছে, বলা হয় পলিসিস্টিক ওভারি। এক্ষেত্রে প্রতিটি সিস্ট এক সেমির কম হতে হবে এবং একসঙ্গে ১০ -১২টি থাকবে।
কারণ?
ওভারি যে এগ তৈরি করে, তার মধ্যে কিছুটা জল থাকে। কোনওভাবে সেই জল বেশি হয়ে গেলে সিস্টের আকার নিতে পারে। এ ধরনের সিস্টকে বলা হয় ফাংশনাল সিস্ট। এই সিস্ট নিজেই ঠিক হয়ে যায়। আর এক ধরনের সিস্ট হয়, যাদের অস্বাভাবিক সিস্ট বলা হয়ে থাকে। এরা মূলত টিউমার। এর নির্দিষ্ট করে কারণ জানা নেই। তবে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যাঁদের ওভুলেশন বেশি হয়, সিস্ট হওয়ার আশঙ্কাও তাঁদের বেশি। অর্থাৎ যেসব মহিলা অবিবাহিত, কিংবা বিয়ের পর সন্তান হয়নি বা যাঁরা ওভারিকে সক্রিয় রাখতে ওষুধপত্র খেয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এ ধরনের সিস্টের ঝুঁকি বেশি থাকে। এর সঙ্গে পারিবারিক ইতিহাসও সম্পর্কযুক্ত। মা কিংবা বোন-দিদির ওভারিয়ান সিস্টের ইতিহাস থাকলেও সেই মহিলার সিস্টের ঝুঁকি থেকে যায়।
লক্ষণ কী?
৯০ শতাংশ সিস্টে লক্ষণ থাকে না। সোনোগ্রাফি করে দেখা যায়। বড় হলে বোঝা যায়। পেট ফুলতে থাকে। সিস্ট অনেক সময় লাট্টুর মতো ঘুরে যায়। বা ভিতরের তরল পদার্থ ফেটে যেতে পারে। তরল অংশে রক্তও জমে থাকতে পারে। এইসব কারণে অসম্ভব ব্যথা হতে পারে পেটে। ম্যালিগন্যান্ট সিস্ট হলে দ্রুত বাড়বে। ওজন উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে থাকবে। পেটও দ্রুত ফুলতে থাকবে।
চিকিৎসা কী?
ওভারিয়ান সিস্টের চিকিৎসাকে তিনভাগে ভাগ করা যেতে পারে। ফাংশনাল সিস্ট হলে অপেক্ষা করতে হবে। তিনমাস পর্যন্ত অপেক্ষা করা যেতে পারে।
অনেক সময় সিস্ট গলাতে ওষুধ দেওয়া হয়। দ্বিতীয়ত, অ্যাবনর্মাল সিস্ট ম্যালিগন্যান্ট না হওয়া সত্ত্বেও ৫ সেমির বড় হলে (বিদেশে এখন অবশ্য বলছে, যদি ৮ সেমির বড় হয়) অপারেশন করতে হবে। আর যদি পেটব্যথা হতে থাকে, সিস্টের আকার ৮ সেমির কম হলেও অপারেশন করা দরকার। তৃতীয়ত, ম্যালিগন্যান্ট সিস্ট হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেশন করাতে হবে। কারণ, এই ম্যালিগন্যান্ট সিস্ট অতি দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। আরও একটি বিষয়, কোনও মহিলার মেনোপজ হওয়ার পর যদি ওভারিয়ান সিস্ট হয়, তা হলে কিন্তু সেই সিস্ট থেকে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই বেশি থাকে। সুতরাং সেই সিস্ট যত ছোটই হোক না কেন, সঙ্গে সঙ্গে তা কেটে ফেলতে হবে। এখন অবশ্য ওভারিয়ান সিস্ট অপারেশনের জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পেট কাটার দরকার হয় না। ল্যাপারোস্কোপিক অপারেশনে রোগিণী সকালে ভর্তি হয়ে দুপুরে অপারেশন করিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতে পারেন। অনেকটাই কম যন্ত্রণাদায়ক এই অপারেশন।
ওভারিয়ান সিস্ট বন্ধ্যাত্বের কারণ?
নানা কারণে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে। তবে যদি কোনও মহিলার পলিসিস্টিক ওভারি হয়, তা হলে তাঁর ওভারিতে ঠিকভাবে এগ তৈরি হতে পারে না। সেক্ষেত্রে প্রেগন্যান্সি আসতে সমস্যা হয় কিংবা বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে। কিন্তু ওভারিতে এক বা দু’টি সিস্ট থাকলে তেমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে প্রেগন্যান্সি এসে গিয়েছে, অথচ ওভারিতে সিস্ট রয়েছে, তখন দেখতে হবে যে সিস্ট রয়েছে, সেটি প্রেগন্যান্সি চলাকালীন লাট্টুর মতো ঘুরে যেতে পারে কি না কিংবা ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা আছে কি না। তা হলে কিন্তু পেটে অসম্ভব যন্ত্রণা হতে পারে। তখন প্রেগন্যান্সি থাকা অবস্থাতেই অপারেশন করে ওই সিস্ট রিমুভ করার ব্যবস্থা করতে হবে।
সূত্র: ডাঃ প্রসেনজিৎ সরকার, কোলকাতা

দুপুরের বিশ্রাম, ইসলামের আলোকে

 ঘুম মহান আল্লাহর অমূল্য নিয়ামত। পবিত্র কোরআনে রাতের ও দিনের ঘুমকে মহান আল্লাহর নিদর্শনাবলির অংশ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির একটি হলো রাতে ও দিনের ঘুম এবং তাঁর কৃপা অন্বেষণ। নিশ্চয়ই এতে মনোযোগী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনাবলি রয়েছে।’ (সুরা : রোম, আয়াত : ২৩)

মানুষকে সুস্থ থাকার জন্য যেমন রাতের বেলা ঘুমাতে হয়, তেমনি দিনের বেলায়ও সামান্য সময় ঘুমানো সুন্নত। দিনের এই ঘুমকে আমাদের দেশে বলা হয় ভাত-ঘুম, আরবিতে একে বলা হয় ‘কাইলুলা’, ইউরোপের অনেক ভাষায় একে বলা হয় ‘সিয়েস্তা’। আর ইংরেজিতে বলা হয় ‘পাওয়ার ন্যাপ’।
ইউরোপের যে দেশগুলোতে খানিকটা গরম আবহাওয়া আছে, যেমন—গ্রিস ও স্পেনে সিয়েস্তা নামে পরিচিত ভাত-ঘুম সেখানকার মানুষের জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বলা হয় দুপুর ২টার পরে এই দেশগুলো নাকি ঝিমিয়ে পড়ে। ইউরোপের কিছু শহরে, এমনকি সেখানকার মানুষের সিয়েস্তার আইনি অধিকার আছে।
দুপুর বেলায় সামান্য ঘুমানোর রীতি আরবেও আছে। মহানবী (সা.)-এর যুগেও এই ঘুমের প্রচলন ছিল। সাহাল ইবনে সাদ (রা.) বলেন, ‘আমরা জুমার নামাজের পর দুপুরের বিশ্রাম গ্রহণ ও খাবার খেতাম।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৮৬)
সাহাল ইবনে সাদ (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) ফাতিমা (রা.)-এর গৃহে এলেন, কিন্তু আলী (রা.)-কে ঘরে পেলেন না। তিনি ফাতিমা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, আমার চাচাতো ভাই কোথায়? তিনি বলেন, আমার ও তাঁর মধ্যে বাদানুবাদ হওয়ায় তিনি আমার সঙ্গে রাগ করে বাইরে চলে গেছেন। আমার কাছে দুপুরের বিশ্রামও করেননি। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সা.) এক ব্যক্তিকে বলেন, দেখো তো সে কোথায়? সেই ব্যক্তি খুঁজে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, তিনি মসজিদে শুয়ে আছেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) এলেন, তখন আলী (রা.) কাত হয়ে শুয়ে ছিলেন। তাঁর শরীরের এক পাশে চাদর পড়ে গেছে এবং তাঁর শরীরে মাটি লেগেছে। আল্লাহর রাসুল মাটি ঝেড়ে দিতে দিতে বলেন, ওঠো, হে আবু তুরাব! ওঠো, হে আবু তুরাব! (বুখারি, হাদিস : ৪৪১)
এমনকি মহানবী (সা.) নিজেও দুপুর বেলা কাইলুলা করতেন, এ ব্যাপারে উম্মু সুলায়ম (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) তাঁর কাছে আসতেন এবং বিশ্রাম নিতেন, উম্মু সুলায়ম তাঁর জন্য একটা চামড়ার বিছানা বিছিয়ে দিলে তিনি তার ওপর কাইলুলা করতেন। তিনি প্রচণ্ড ঘামতেন আর উম্মু সুলাইম তা একত্র করতেন এবং সুগন্ধির বোতলে তা মিশিয়ে রাখতেন। নবী (সা.) বলেন, হে উম্মু সুলায়ম! এ কী করছ? তিনি বলেন, আপনার ঘাম, আমি সেটা সুগন্ধির সঙ্গে মিশিয়ে রাখি। (মুসলিম, হাদিস : ৫৯৫১)
দুপুর বেলায় সুন্নতের নিয়তে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলে একদিকে যেমন নবীজির সুন্নত পালনের সওয়াব পাওয়া যাবে, তেমনি শারীরিক ও মানসিক প্রফুল্লতা অর্জন হবে।
দিনভর নানা কাজের চাপের পর দুপুরের এই ঘুম দিনের বাকি সময়টুকু সতেজ বোধ করতে এবং মন-মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে।
কারণ যে ধরনের কর্মশক্তি নিয়ে আমাদের দিন শুরু হয়, সেটি দিন গড়ানোর সঙ্গে কমে আসতে শুরু করে। কাইলুলা বা ভাত-ঘুম শরীরের কর্মশক্তি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে।
এ ব্যাপারে লন্ডনের ঘুমবিষয়ক একটি প্রতিষ্ঠান দ্য স্লিপ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন, ঘুম বিশেষজ্ঞ গাই মেডোজ বলেন, ‘আমরা যখন ঘুম থেকে উঠি, আমাদের মস্তিষ্কে এডেনোসিন নামে একটি রাসায়নিকের ক্ষরণ বাড়তে থাকে। আমরা যত বেশি সময় ধরে জেগে থাকি, আমাদের মস্তিষ্কে এর উপস্থিতি ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং শরীরে ঘুমভাব তৈরি হতে থাকে।’
গাই মেডোজ বলেন, ‘যখন আমরা ন্যাপ (ভাত-ঘুম) নিই, তখন এডেনোসিনের ব্যবহার কমে আসে, এটি সংরক্ষিত হয়; যার ফলে কর্মশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং আমরা সতেজ অনুভব করি, মেজাজ ভালো বোধ করি।’ এর ফলে বিকেলের দিকে কাজে মনোযোগ বেশি দেওয়া সম্ভব হয়। কাজে ভুল করার আশঙ্কা কমে।
তাঁর মতে ভাত-ঘুমের সময়কাল হওয়া উচিত ১০ থেকে ২০ মিনিট। ভাত-ঘুম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তার মানে হৃিপণ্ড ও কিডনির স্বাস্থ্য ভালো থাকে। আর শরীরের এই যন্ত্রগুলো ভালো থাকলে আরো অনেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সুস্থ থাকবে।
সুবহানাল্লাহ, আমাদের সবার উচিত রাসুল (সা.)-এর প্রতিটি সুন্নত পুঙ্খানুপুঙ্খ পালন করার চেষ্টা করা। এতে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির পাশাপাশি পার্থিব অনেক উপকারিতাও পাওয়া যায়।

মানুষকে কষ্ট দেওয়া

দুনিয়াতে মানুষ আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। আমাদের আদি পিতা-মাতা আদম ও হাওয়া (আঃ)। তাঁদের থেকেই দুনিয়াতে মানুষ বিস্তার লাভ করেছে (নিসা ৪/১)। সে হিসাবে পৃথিবীর সকল মানুষ ভাই ভাই। আদর্শিক দিক দিয়ে বিবেচনা করলে মুসলমানরা ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধর (হজ্জ ২২/৭৮)। সুতরাং যেদিক দিয়েই বিবেচনা করা হোক না কেন পৃথিবীর সকল মানুষ পরস্পর ভাই ভাই। তাই মানুষ একে অপরকে কিংবা এক মুসলমান অপর মুসলমানকে কষ্ট দিতে পারে না। কারণ পরস্পরকে কষ্ট দেওয়ার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ।

মুসলমানকে কষ্ট দেওয়া নিষেধ :
মুসলমানকে কষ্ট দিতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। আল্লাহ বলেন,وَالَّذِيْنَ يُؤْذُوْنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ بِغَيْرِ مَا اكْتَسَبُوْا فَقَدِ احْتَمَلُوْا بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُبِيْنًا، ‘অপরাধ না করা সত্ত্বেও যারা মুমিন পুরুষ ও নারীদের কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে’ (আহযাব ৩৩/৫৮)। মুমিনকে কষ্ট দিতে নিষেধ করে রাসূল (ছাঃ) বলেন,
يَا مَعْشَرَ مَنْ قَدْ أَسْلَمَ بِلِسَانِهِ وَلَمْ يُفْضِ الإِيْمَانُ إِلَى قَلْبِهِ لاَ تُؤْذُوْا الْمُسْلِمِينَ وَلاَ تُعَيِّرُوهُمْ وَلاَ تَتَّبِعُوْا عَوْرَاتِهِمْ فَإِنَّهُ مَنْ تَتَبَّعَ عَوْرَةَ أَخِيهِ الْمُسْلِمِ تَتَبَّعَ اللهُ عَوْرَتَهُ وَمَنْ تَتَبَّعَ اللهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ وَلَوْ فِى جَوْفِ رَحْلِهِ،
‘হে ঐ জামা‘আত! যারা মুখে ইসলাম কবুল করেছ, কিন্তু অন্তরে এখনো ঈমান মযবূত হয়নি। তোমরা মুসলমানদের কষ্ট দিবে না, তাদের লজ্জা দিবে না এবং তাদের গোপন দোষ অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হবে না। কেননা যে লোক তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন দোষ অনুসন্ধানে নিয়োজিত হবে আল্লাহ তার গোপন দোষ প্রকাশ করে দিবেন। আর যে ব্যক্তির দোষ আল্লাহ প্রকাশ করে দিবেন তাকে অপমান করে ছাড়বেন, সে তার উটের হাওদার ভিতরে অবস্থান করে থাকলেও’।[1]
মানুষকে কষ্ট দেওয়ার মাধ্যম :
মানুষকে প্রধানত কথা ও কাজের মাধ্যমে কষ্ট দেওয়া হয়ে থাকে। কথার মাধ্যমে কষ্ট দেওয়া বলতে গালি দেওয়া, গীবত-তোহমত, চোগলখুরী করা, খোঁটা দেওয়া, তুচ্ছ জ্ঞান করা ইত্যাদি বোঝায়। আর কাজের মাধ্যমে কষ্ট দেওয়া বলতে যুলুম করা, ধোঁকা-প্রতারণা, রাস্তা বন্ধ করা, সম্পদ জবর দখল করা ও হত্যা করা ইত্যাদি বুঝায়।
ক. কথার মাধ্যমে কষ্ট দেওয়া :
আঘাতের ক্ষত ও ব্যথা দ্রুত সেরে যায়। কিন্তু কথার মাধ্যমে দেওয়া আঘাত ও ক্ষতের নিরাময় সহজে হয় না। সেজন্য কবি বলেন,
جِرَاحَاتُ السِّنَانِ لَهَا الْتِئَامُ * وَلاَ يَلْتَامُ مَا جَرَحَ اللِّسَانُ
‘তরবারির আঘাতের ক্ষতের প্রতিষেধক আছে, কিন্তু জিহবার ক্ষতের কোন প্রতিষেধক নেই’।[2] তাই কথার মাধ্যমে দেওয়া আঘাত মানুষ সবচেয়ে বেশী স্মরণে রাখে এবং এ আঘাত সর্বাধিক ব্যথাতুর হয়। কথার দ্বারা মানুষকে কষ্ট দেওয়ার মাধ্যমগুলি নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল।-
১. গালি দেওয়া :
মানুষকে গালি দেওয়া হ’লে সে কষ্ট পায়। আর এটা কবীরা গোনাহ। পরকালে এর প্রতিকার হবে নেকী প্রদান বা গোনাহ বহনের মাধ্যমে। তাছাড়া কাউকে গালি দেওয়া গোনাহ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوقٌ، وَقِتَالُهُ كُفْرٌ ‘মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসিকী এবং তার সাথে লড়াই করা কুফরী’।[3] মুসলমানকে গালি দেওয়া নিজেকে ধ্বংসে নিপতিত করার শামিল। রাসূল (ছাঃ) বলেন,سَابُّ الْمُؤْمِنِ كَالْمُشْرِفِ عَلَى الْهَلَكَةِ، ‘মুসলমানকে গালি দেওয়া নিজেকে ধ্বংসের দিকে নিপতিত করার ন্যায়’।[4] উভয় গালিদাতাকে রাসূল (ছাঃ) শয়তান বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, الْمُسْتَبَّانِ شَيْطَانَانِ يَتَكَاذَبَانِ وَيَتَهَاتَرَانِ، ‘উভয় গালমন্দকারী দুই শয়তান। এরা পরস্পরের উপর মিথ্যা দোষারোপ করে এবং অসত্য বলে’।[5]
কোন মুসলিমকে গালি দিলে শয়তানকে সহযোগিতা করা হয়। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, মদ পানকারী জনৈক ব্যক্তিকে নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট হাযির করা হ’ল। তিনি আদেশ দিলেন, ওকে তোমরা মার। আবূ হুরায়রা বলেন, (তাঁর আদেশ অনুযায়ী আমরা তাকে মারতে আরম্ভ করলাম।) আমাদের কেউ তাকে হাত দ্বারা মারতে লাগল, কেউ তার জুতা দ্বারা, কেউ নিজ কাপড় দ্বারা। অতঃপর যখন সে ফিরে যেতে লাগল, তখন কিছু লোক বলে উঠল, আল্লাহ তোমাকে লাঞ্ছিত করুক। একথা শুনে নবী করীম (ছাঃ) বললেন, لاَ تَقُولُوْا هَكَذَا لاَ تُعِينُوْا عَلَيْهِ الشَّيْطَانَ ‘এরূপ বলো না এবং ওর বিরুদ্ধে শয়তানকে সহযোগিতা করো না’।[6]
গালিদাতাদের মধ্যে যে প্রথমে শুরু করবে সব গোনাহ তার উপরে বর্তাবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,الْمُسْتَبَّانِ مَا قَالاَ فَعَلَى الْبَادِئِ مَا لَمْ يَعْتَدِ الْمَظْلُومُ، ‘পরস্পর গালিগালাজকারীর মধ্যে যে প্রথমে আরম্ভ করে উভয়ের দোষ তার উপর বর্তাবে, যতক্ষণ না অপরজন সীমালঙ্ঘন করে’।[7] এমনকি গালিদাতা পরকালে নিঃস্ব হবে এবং নেকী দিয়ে তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা কি জান, নিঃস্ব কে? তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে নিঃস্ব হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যার দিরহামও (নগদ অর্থ) নেই, কোন সম্পদও নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আমার উম্মাতের মধ্যে সেই ব্যক্তি হচ্ছে নিঃস্ব, যে ক্বিয়ামত দিবসে ছালাত, ছিয়াম, যাকাতসহ বহু আমল নিয়ে উপস্থিত হবে এবং এর সাথে সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ আত্মসাত করেছে, কারো রক্ত প্রবাহিত (হত্যা) করেছে, কাউকে মারধর করেছে ইত্যাদি অপরাধও নিয়ে আসবে। সে তখন বসবে এবং তার নেক আমল হ’তে এ ব্যক্তি কিছু নিয়ে যাবে ও ব্যক্তি কিছু নিয়ে যাবে। এভাবে সম্পূর্ণ বদলা (বিনিময়) নেয়ার আগেই তার সত আমল নিঃশেষ হয়ে গেলে তাদের গুনাহসমূহ তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে, তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে’।[8] সুতরাং মুসলমানকে গালি দিয়ে তাকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, যাতে পরকালে ভয়াবহ পরিণতির সম্মুখীন হ’তে না হয়।
২. গীবত-তোহমত :
গীবত-তোহমতের মাধ্যমেও মানুষকে কষ্ট দেওয়া হয়। গীবত অর্থ দোষচর্চা, পরনিন্দা। আর তোহমত অর্থ মিথ্যা অপবাদ আরোপ করা। এ দু’টিই পরিবারে ও সমাজে নানা বিশৃঙ্ক্ষলা সৃষ্টির জন্য দায়ী। মানুষের মধ্যকার সুসম্পর্কে চিড় ধরাতে এদু’টি বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে থাকে। এ দু’টি গোনাহ সমাজের মানুষ হেসে-খেলে করে থাকে। এমনকি অনেকে একে দোষের মনে করে না। অথচ উভয়টিই কবীরা গোনাহ ও বান্দার সাথে সংশ্লিষ্ট। বান্দা ক্ষমা না করলে আল্লাহ এ গোনাহ মাফ করবেন না। কারণ এর মাধ্যমে মানুষের ইয্যত-সম্মান নষ্ট হয়, তার হক বিনষ্ট হয়। তাই এ থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। অনেকে দোষচর্চা করে মনে করেন যে, তিনি সঠিক কথাইতো বলছেন। সুতরাং সেটা দোষের হবে কেন? কিন্তু কারো মধ্যে থাকা দোষ-ত্রুটি তার অবর্তমানে আলোচনা করাই গীবত। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
أَتَدْرُونَ مَا الْغِيبَةُ قَالُوا اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ قَالَ ذِكْرُكَ أَخَاكَ بِمَا يَكْرَهُ قِيلَ أَفَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ فِى أَخِى مَا أَقُولُ قَالَ إِنْ كَانَ فِيهِ مَا تَقُولُ فَقَدِ اغْتَبْتَهُ وَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِيهِ فَقَدْ بَهَتَّهُ.
‘তোমরা কি জান গীবত কাকে বলে? তারা বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বললেন, তোমার মুসলিম ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপসন্দ করে। জিজ্ঞেস করা হ’ল, যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে সে ত্রুটি বিদ্যমান থাকে, যা আমি বলি? তিনি বললেন, তুমি যে দোষ-ত্রুটির কথা বললে, তার মধ্যে সে দোষ-ত্রুটি থাকলেই তুমি তার গীবত করলে। আর যদি দোষ-ত্রুটি বিদ্যমান না থাকে, তবে তুমি মিথ্যারোপ করলে’।[9]
গীবত বা দোষচর্চা থেকে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,وَلَا يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوْهُ، ‘আর একে অপরের পিছনে গীবত করো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পসন্দ করে? বস্ত্ততঃ তোমরা সেটি অপসন্দ করে থাক’ (হুজুরাত ৪৯/১২)।
অনুরূপভাবে রাসূল (ছাঃ) গীবত থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আবু বারযাহ আসলামী (রাঃ) বলেন,يَا مَعْشَرَ مَنْ آمَنَ بِلِسَانِهِ وَلَمْ يَدْخُلِ الإِيْمَانُ قَلْبَهُ لاَ تَغْتَابُوا الْمُسْلِمِيْنَ- ‘হে ঐসব লোক! যারা কেবল মুখে ঈমান এনেছ। কিন্তু তাদের হৃদয়ে ঈমান প্রবেশ করেনি, তোমরা মুসলমানদের গীবত করো না’।[10]
পার্থিব শাস্তি : রাসূল (ছাঃ) পার্থিব শাস্তির বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন। আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বলেন, আরবরা সফরে গেলে একে অপরের খিদমত করত। আবুবকর ও ওমর (রাঃ)-এর সাথে একজন লোক ছিল যে তাদের খিদমত করত। তারা ঘুমিয়ে পড়লেন। অতঃপর জাগ্রত হ’লে লক্ষ্য করলেন যে, সে তাদের জন্য খাবার প্রস্ত্তত করেনি (বরং ঘুমিয়ে আছে)। ফলে একজন তার অপর সাথীকে বললেন, এতো তোমাদের নবী করীম (ছাঃ)-এর ন্যায় ঘুমায়। অন্য বর্ণনায় আছে, তোমাদের বাড়িতে ঘুমানোর ন্যায় ঘুমায় (অর্থাৎ অধিক ঘুমায়)। অতঃপর তারা তাকে জাগিয়ে বললেন, তুমি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট গমন করে তাঁকে বল যে, আবুবকর ও ওমর (রাঃ) আপনাকে সালাম প্রদান করেছেন এবং আপনার নিকট তরকারী চেয়েছেন। রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, যাও, তাদেরকে আমার সালাম প্রদান করে বলবে যে, তারা তরকারী খেয়ে নিয়েছে। (একথা শুনে) তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট গমন করে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমরা আপনার নিকট তরকারী চাইতে ওকে পাঠালাম। অথচ আপনি তাকে বলেছেন, তারা তরকারী খেয়েছে। আমরা কি তরকারী খেয়েছি? তিনি বললেন, তোমাদের ভাইয়ের গোশত দিয়ে। যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম করে বলছি, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের উভয়ের দাঁতের মধ্যে তার গোশত দেখতে পাচ্ছি। তারা বললেন, আমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তিনি বললেন, না বরং সেই তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে’।[11]
আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে বললাম, আপনার জন্য ছাফিয়ার এই এই হওয়া যথেষ্ট। কোন কোন বর্ণনাকারী বলেন, তাঁর উদ্দেশ্য ছিল ছাফিয়া বেঁটে। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তুমি এমন কথা বললে, যদি তা সমুদ্রের পানিতে মিশানো হয়, তাহ’লে তার স্বাদ পরিবর্তন করে দেবে’।[12]
ক্বায়েস বলেন, আমর ইবনুল আছ (রাঃ) তার কতিপয় সঙ্গী-সাথীসহ ভ্রমণ করছিলেন। তিনি একটি মৃত খচ্চরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, যা ফুলে উঠেছিল। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! কোন ব্যক্তি যদি পেট পুরেও এটা খায়, তবুও তা কোন মুসলমানের গোশত খাওয়ার চেয়ে উত্তম’।[13]
পরকালীন শাস্তি : রাসূল (ছাঃ) উম্মতকে গীবতের পরকালীন শাস্তি সম্বন্ধেও অবহিত করেছেন। আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,لَمَّا عُرِجَ بِى مَرَرْتُ بِقَوْمٍ لَهُمْ أَظْفَارٌ مِنْ نُحَاسٍ يَخْمِشُونَ وُجُوهَهُمْ وَصُدُورَهُمْ فَقُلْتُ مَنْ هَؤُلاَءِ يَا جِبْرِيلُ قَالَ هَؤُلاَءِ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ لُحُومَ النَّاسِ وَيَقَعُونَ فِى أَعْرَاضِهِمْ- ‘মি‘রাজে গিয়ে আমাকে এমন কিছু লোকের পাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হ’ল যাদের নখগুলি সব ছিল পিতলের। যা দিয়ে তারা তাদের মুখ ও বুক খামচাচ্ছিল। আমি জিব্রীলকে বললাম, এরা কারা? তিনি বললেন, যারা মানুষের গোশত খেত অর্থাৎ গীবত করত এবং তাদের সম্মান নষ্ট করত’।[14]
অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ أَكَلَ بِرَجُلٍ مُسْلِمٍ أَكْلَةً فَإِنَّ اللهَ يُطْعِمُهُ مِثْلَهَا مِنْ جَهَنَّمَ وَمَنْ كُسِىَ ثَوْبًا بِرَجُلٍ مُسْلِمٍ فَإِنَّ اللهَ يَكْسُوهُ مِثْلَهُ مِنْ جَهَنَّمَ وَمَنْ قَامَ بِرَجُلٍ مَقَامَ سُمْعَةٍ وَرِيَاءٍ فَإِنَّ اللهَ يَقُومُ بِهِ مَقَامَ سُمْعَةٍ وَرِيَاءٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ- ‘যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের গীবতের বিনিময়ে এক গ্রাসও খাদ্য ভক্ষণ করবে, আল্লাহ তাকে সমপরিমাণ জাহান্নামের আগুন ভক্ষণ করাবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে অপমান করার বিনিময়ে কোন কাপড় পরিধান করবে, আল্লাহ তাকে সমপরিমাণ জাহান্নামের আগুন পরিধান করাবেন। আর যে ব্যক্তি কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করে লোকদের নিকট নিজের বড়ত্ব যাহির করে এবং শ্রেষ্ঠত্ব দেখায়, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ স্বয়ং ঐ ব্যক্তির শ্রুতি ও রিয়া প্রকাশ করে দেবার জন্য দন্ডায়মান হবেন’।[15]
তোহমত বা অপবাদ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,وَمَنْ يَكْسِبْ خَطِيئَةً أَوْ إِثْمًا ثُمَّ يَرْمِ بِهِ بَرِيئًا فَقَدِ احْتَمَلَ بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُبِينًا، ‘যে ব্যক্তি কোন অপরাধ কিংবা পাপ করে, অতঃপর তা কোন নির্দোষ ব্যক্তির উপর চাপায়, সে নিজেই উক্ত অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপভার বহন করবে’ (নিসা ৪/১১২)। তিনি আরো বলেন,إِنَّمَا يَفْتَرِي الْكَذِبَ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِآيَاتِ اللهِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْكَاذِبُونَ، ‘মিথ্যা তো কেবল তারাই রচনা করে যারা আল্লাহর আয়াত সমূহে বিশ্বাস করে না এবং তারাই মিথ্যাবাদী’ (নাহল ১৬/১০৫)।
৩. চোগলখুরী করা :
মানুষকে কষ্ট দেওয়ার আরেকটি মাধ্যম হচ্ছে চোগলখুরী করা। আর তা হচ্ছে দুই ভাই বা বন্ধুর মাঝে সম্পর্ক বিনষ্টের উদ্দেশ্যে একে অপরের কাছে পরস্পরের দোষ উল্লেখ করা। ইবনে মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,
أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ مَا الْعَضْهُ هِىَ النَّمِيْمَةُ الْقَالَةُ بَيْنَ النَّاسِ.
‘মিথ্যা অপবাদ কি জিনিস আমি কি তোমাদেরকে বলে দেব না? তা হচ্ছে চোগলখুরী করা। জনসমক্ষে কারো সমালোচনা করা’।[16] আরেকটি হাদীছে এসেছে, আব্দুর রহমান ইবনু গানম ও আসমা বিনতু ইয়াযীদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,
خِيَارُ عِبَادِ اللهِ الَّذِيْنَ إِذَا رُءُوْا ذُكِرَ اللهُ وَشِرَارُ عِبَادِ اللهِ الْمَشَّاءُوْنَ بِالنَّمِيْمَةِ الْمُفَرِّقُوْنَ بَيْنَ الْأَحِبَّةِ الْبَاغُونَ الْبُرَآءَ الْعَنَتَ-
‘আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যাদেরকে দেখলে আল্লাহকে স্মরণ হয়। আর আল্লাহ তা‘আলার নিকৃষ্ট বান্দা তারা, যারা মানুষের পরোক্ষভাবে নিন্দা করে বেড়ায়, বন্ধুদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে এবং পূত-পবিত্র লোকেদের পদস্খলন প্রত্যাশা করে’।[17] অন্য একটি হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, আসমা বিনতে ইয়াযীদ (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেন,
أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِخِيَارِكُمْ. قَالُوْا بَلَى. قَالَ فَخِيَارُكُمُ الَّذِيْنَ إِذَا رُؤُوْا ذُكِرَ اللهُ تَعَالَى، أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِشِرَارِكُمْ. قَالُوا بَلَى. قَالَ فَشِرَارُكُمُ الْمُفْسِدُوْنَ بَيْنَ الأَحِبَّةِ الْمَشَّاءُونَ بِالنَّمِيْمَةِ الْبَاغُوْنَ البُرَآءَ الْعَنَتَ.
‘আমি কি তোমাদেরকে তোমাদের মধ্যকার উৎকৃষ্ট লোকদের সম্পর্কে অবহিত করবো না? ছাহাবীগণ বলেন, হ্যঁা। তিনি বলেন, যাদের দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়। তিনি আরো বলেন, আমি কি তোমাদেরকে তোমাদের মধ্যকার নিকৃষ্ট লোকদের সম্পর্কে অবহিত করবো না? তারা বলেন, হ্যাঁ। তিনি বলেন, যারা চোগলখুরী করে বেড়ায়, বন্ধুদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করে এবং পুণ্যবান লোকদের দোষ-ত্রুটি খুঁজে বেড়ায়’।[18]
চোগলখুরীর পরকালীন শাস্তি সম্পর্কে হাদীছে এসেছে,مَرَّ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِحَائِطٍ مِنْ حِيْطَانِ الْمَدِينَةِ أَوْ مَكَّةَ فَسَمِعَ صَوْتَ إِنْسَانَيْنِ يُعَذَّبَانِ فِى قُبُوْرِهِمَا، فَقَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعَذَّبَانِ وَمَا يُعَذَّبَانِ فِى كَبِيْرٍ، ثُمَّ قَالَ : بَلَى، كَانَ أَحَدُهُمَا لاَ يَسْتَتِرُ مِنْ بَوْلِهِ، وَكَانَ الآخَرُ يَمْشِى بِالنَّمِيْمَةِ- ‘একদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মদীনা বা মক্কার একটি বাগানের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি দু’টি কবর থেকে দু’জন মানুষের শব্দ শোনেন, যাদেরকে কবরে আযাব দেওয়া হচ্ছিল। তখন তিনি বললেন, এ দু’টি কবরে আযাব হচ্ছে। তবে সেটি তেমন বড় কোন কারণে নয়। অতঃপর তিনি বললেন, এদের এক ব্যক্তি পেশাব থেকে আড়াল (সতর্কতা অবলম্বন) পর্দা করত না এবং অন্য ব্যক্তি চোগলখুরী করত’।[19]
৪. মন্দ নামে ডাকা :
মানুষকে মন্দ নামে ডাকা তাকে কষ্ট দেওয়ার একটি অন্যতম মাধ্যম। যেটা আল্লাহ নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,وَلَا تَنَابَزُوْا بِالْأَلْقَابِ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوْقُ بَعْدَ الْإِيْمَانِ وَمَنْ لَمْ يَتُبْ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ، ‘আর তোমরা একে অপরকে মন্দ লকবে ডেকো না। বস্ত্ততঃ ঈমান আনার পর তাকে মন্দ নামে ডাকা হ’ল ফাসেকী কাজ। যারা এ থেকে তওবা করে না, তারা সীমালংঘনকারী’ (হুজুরাত ৪৯/১১)।
জুরাইরা ইবনুয যাহহাক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের বনী সালিমাহ সম্পর্কে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়, ‘তোমরা একে অপরকে মন্দ লকবে ডেকো না। বস্ত্ততঃ ঈমান আনার পর তাকে মন্দ নামে ডাকা হ’ল ফাসেকী কাজ’ (হুজুরাত ৪৯/১১)। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন আমাদের মাঝে আগমন করেন তখন আমাদের প্রত্যেকেরই দু’-তিনটা করে নাম ছিল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, হে অমুক! এভাবে ডাকলে তারা বলতেন, হে আল্লাহর রাসূল! থামুন, সে ব্যক্তি এ নামে ডাকলে অসন্তুষ্ট হবে। অতঃপর এ আয়াত নাযিল হ’ল ‘তোমরা একে অপরকে মন্দ উপাধিতে ডেকো না’।[20]
৫. উপহাস করা :
কোন মানুষ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। সবারই কোন না কোন দিক দিয়ে দুর্বলতা থাকে। তাই কোন মানুষকে উপহাস করা উচিত নয়। এতে মানুষ মনে অত্যন্ত কষ্ট পায়। এটা আল্লাহ নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِنْ قَوْمٍ عَسَى أَنْ يَكُوْنُوْا خَيْرًا مِنْهُمْ وَلَا نِسَاءٌ مِنْ نِسَاءٍ عَسَى أَنْ يَكُنَّ خَيْرًا مِنْهُنَّ، ‘হে বিশ্বাসীগণ! কোন সম্প্রদায় যেন কোন সম্প্রদায়কে উপহাস না করে। হ’তে পারে তারা তাদের চাইতে উত্তম। আর নারীরা যেন নারীদের উপহাস না করে। হ’তে পারে তারা তাদের চাইতে উত্তম’ (হুজুরাত ৪৯/১১)।
৬. তুচ্ছজ্ঞান করা :
কোন মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করলে বা হেয় ভাবলে সে যারপর নাই কষ্ট পায়। এ কাজ থেকে রাসূল (ছাঃ) নিষেধ করেছেন এবং এর অশুভ পরিণতি বর্ণনা করেছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
لاَ تَحَاسَدُوْا وَلاَ تَنَاجَشُوْا وَلاَ تَبَاغَضُوْا وَلاَ تَدَابَرُوْا وَلاَ يَبِعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَيْعِ بَعْضٍ وَكُوْنُوْا عِبَادَ اللهِ إِخْوَانًا. الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لاَ يَظْلِمُهُ وَلاَ يَخْذُلُهُ وَلاَ يَحْقِرُهُ. التَّقْوَى هَا هُنَا. وَيُشِيْرُ إِلَى صَدْرِهِ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ بِحَسْبِ امْرِئٍ مِنَ الشَّرِّ أَنْ يَحْقِرَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ دَمُهُ وَمَالُهُ وَعِرْضُهُ.
‘তোমরা পরস্পর হিংসা করো না, পরস্পর ধোঁকাবাজি করো না, পরস্পর বিদ্বেষ পোষণ করো না, একে অপরের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে অগোচরে শত্রুতা করো না এবং একে অন্যের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয়ের চেষ্টা করবে না। তোমরা আল্লাহর বান্দা হিসাবে ভাই ভাই হয়ে থাকো। এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার উপর অত্যাচার করবে না, তাকে অপদস্ত করবে না এবং হেয় প্রতিপন্ন করবে না। তাক্বওয়া এখানে, এ কথা বলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তিনবার স্বীয় বক্ষের প্রতি ইঙ্গিত করলেন। একজন মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে তার ভাইকে হেয় জ্ঞান করে। কোন মুসলিমের উপর প্রত্যেক মুসলিমের জান-মাল ও ইয্যত-আব্রু হারাম’।[21]
তিনি আরো বলেন, إِنَّ مِنْ أَرْبَى الرِّبَا اسْتِطَالَةَ الْمَرْءِ فِي عِرْضِ أَخِيهِ. ‘সবচেয়ে বড় সূদ হ’ল অন্যায়ভাবে কোন মুসলিমের মানহানি করা’।[22]
রেফারেন্সগুলো
[1]. তিরমিযী হা/২০৩২; মিশকাত হা/৫০৪৪; ছহীহুত তারগীব হা/২৩৩৯।
[2]. তুহফাতুল আহওয়াযী ৭/১৭৩; মিরক্বাত ৩/৫৯ পৃঃ।
[3]. বুখারী হা/৪৮, ৬০৪৪, ৭০৭৬; মুসলিম হা/৬৪; মিশকাত হা/৪৮১৪।
[4]. বায্যার, ছহীহুল জামে‘ হা/৩৫৮৬; ছহীহুত তারগীব হা/২৭৮০।
[5]. আহমাদ হা/১৭৫২২; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৪২৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৬৯৬।
[6]. বুখারী হা/৬৭৭৭; আবূদাঊদ হা/৪৪৭৭; মিশকাত হা/৩৬২৬।
[7]. মুসলিম হা/২৫৮৭; আবূদাঊদ হা/৪৮৯৪; মিশকাত হা/৪৮১৮।
[8]. মুসলিম হা/২৫৮১; তিরমিযী হা/২৪১৮; মিশকাত হা/৫১২৭।
[9]. মুসলিম হা/২৫৮৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৮৬; ছহীহাহ হা/১৪১৯।
[10]. আবূদাঊদ হা/৪৮৮০; তিরমিযী হা/২০৩২; মিশকাত হা/৫০৪৪।
[11]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৬০৮।
[12]. আবূদাঊদ হা/৪৮৭৫; মিশকাত হা/৪৮৫৭; ছহীহুত তারগীব হা/২৮৩৪।
[13]. আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৭৩২, সনদ ছহীহ।
[14]. আবূদাঊদ হা/৪৮৭৮-৭৯; মিশকাত হা/৫০৪৬; ছহীহাহ হা/৫৩৩।
[15]. আবূদাঊদ হা/৪৮৮১; মিশকাত হা/৫০৪৭ ‘শিষ্টাচার সমূহ’ অধ্যায়; ছহীহাহ হা/৯৩৪।
[16]. মুসলিম হা/৬৮০২।
[17]. আহমাদ হা/১৭৯৯৮; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৬৭০৮; ছহীহাহ হা/২৮৮৯; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/২৪৬; ছহীহুত তারগীব হা/২৮১৪; মিশকাত হা/৪৮৭১-৭২।
[18]. আহমাদ হা/২৭৬৪২; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৩২৩, সনদ হাসান।
[19]. বুখারী হা/২১৬; মুসলিম হা/২৯২; মিশকাত হা/৩৩৮।
[20]. আবূ দাঊদ হা/৪৯৬২; ইবনু মাজাহ হা/৩৭২১।
[21]. মুসলিম হা/২৫৬৪; মিশকাত হা/৪৯৫৯; ছহীহুত তারগীব হা/২৮৮৫।
[22]. আবূদাঊদ হা/৪৮৭৬; ছহীহাহ হা/১৪৩৩, ৩৯৫০; ছহীহুল জামে‘ হা/২২০৩, ২৫৩১; ছহীহুত তারগীব হা/২৮৩৩।