Friday, December 31, 2021

ধৈর্য

 মানবজীবন পরীক্ষাস্বরূপ। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত কোরআন মাজিদে বলেন, ‘মহামহিমান্বিত তিনি সর্বময় কর্তৃত্ব যাঁর করায়ত্ত; তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদিগকে পরীক্ষা করার জন্য—কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল। (সুরা-৬৭ মুলক, আয়াত: ১-২)। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি তোমাদিগকে অবশ্যই পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধনসম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা। তুমি শুভ সংবাদ দাও ধৈর্যশীলগণকে—যারা তাদের ওপর বিপদ আপতিত হলে বলে, “আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী”।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৫৫-১৫৭)।

বিপদাপদ ও বালা-মুসিবত থেকে পরিত্রাণের পথ সবর ও সালাত তথা নামাজ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সহিত আছেন।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৫৩)। তাই আমরা বিপদ-আপদে পড়ি, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ (নিশ্চয় আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে আমরা তাঁর নিকটেই প্রত্যাবর্তনকারী)।
ধৈর্যের মূর্ত প্রতীক হজরত আইয়ুব (আ.) আঠারো বছর পর্যন্ত সহিষ্ণুতার চরম পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে পরম সাফল্য লাভ করেছিলেন। নবী হজরত ইউনুস (আ.)-কে সামান্য অধৈর্য হওয়ার কারণে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ রাতের আঁধারে উত্তাল সমুদ্রবক্ষে হিংস্র মতস্যের উদরে যেতে হয়েছিল। এ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে উদ্দেশ করে কোরআন কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতএব, তুমি ধৈর্য ধারণ করো তোমার প্রতিপালকের নির্দেশের অপেক্ষায়, তুমি মতস্য-সহচর (ইউনুস আ.)-এর ন্যায় অধৈর্য হয়ো না, সে বিষাদাচ্ছন্ন অবস্থায় কাতর প্রার্থনা করেছিল—আপনি ব্যতীত কোনো মাবুদ নাই, আপনি পবিত্র; নিশ্চয় আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত। তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম এবং তাকে দুশ্চিন্তা হতে মুক্ত করলাম। এভাবেই আমি সতকর্মশীলদের মুক্তি দিয়ে থাকি।’ (সুরা-৬৮ কলম, আয়াত: ৪৮-৫০)।
পবিত্র কোরআনে স্থানে স্থানে মহান আল্লাহ নিজেকে ধৈর্যশীল ও পরম সহিষ্ণু হিসেবে পরিচয় প্রদান করেছেন। ধৈর্যের আরবি হলো সবর। সহিষ্ণুতার আরবি হলো হিলম। সবর ও হিলম শব্দদ্বয়ের মধ্যে কিঞ্চিত তাত্ত্বিক পার্থক্য রয়েছে। সবর তথা ধৈর্য হলো অপারগতার কারণে বা অসমর্থ ও অসহায় হয়ে প্রতিকারের চেষ্টা বা প্রতিরোধ না করা। হিলম, অর্থাত সহিষ্ণুতা মানে হলো শক্তি-সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও প্রতিশোধ গ্রহণ না করা। এ অর্থে সবর বা ধৈর্য অপেক্ষা হিলম তথা সহিষ্ণুতা উন্নততর অবস্থা। তবে এ উভয় শব্দ কখনো কখনো অভিন্ন অর্থে তথা উভয় অর্থে ও একে অন্যের স্থানে ব্যবহৃত হয়। হিলম তথা সহিষ্ণুতা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ তো সম্যক প্রজ্ঞাময়, পরম সহনশীল।’ (সুরা-২২ হজ, আয়াত; ৫৯)। সবর, অর্থাত ধৈর্যের ব্যাপারে হজরত আইয়ুব (আ.) সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি তো তাকে পেলাম ধৈর্যশীল। সে কত উত্তম বান্দা! সে ছিল আমার অভিমুখী।’ (সুরা-৩৮ ছদ, আয়াত: ৪৪)।
আল্লাহ তাআলা আরও বলেছেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ধারণ করো, ধৈর্যের প্রতিযোগিতা করো এবং সুসম্পর্ক স্থাপনে আত্মনিয়ন্ত্রণের সংগ্রামে অবিচল থাকো, আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।’ (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ২০০)। আল্লাহ তাআলা ধৈর্যধারণকারীর সঙ্গে থাকেন; আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যার সঙ্গে থাকবেন, তার সফলতা অবধারিত ও সুনিশ্চিত।
সবর তিন প্রকার। যথাঃ
১. ‘সবর আনিল মাসিয়াত’, অর্থাত অন্যায়-অপরাধ হতে বিরত থাকা।
২. ‘সবর আলাত তআত’, অর্থাত ইবাদত আল্লাহর আনুগত্য ও সতকর্মে কষ্ট স্বীকার করা।
৩. ‘সবর আলাল মুসিবাত’, অর্থাত বিপদে অধীর না হওয়া। (তাফসিরে বায়জাবি)। কোনো ব্যক্তি যদি উক্ত অর্থে ধৈর্য অবলম্বন করেন; তাঁর জীবনে পূর্ণতা ও সফলতা অবশ্যম্ভাবী।
প্রথমত, অন্যায়-অপরাধ তথা পাপকার্য থেকে বিরত থাকা সব ধরনের অকল্যাণ ও গ্লানি থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায়।
দ্বিতীয়ত, ইবাদত ও সতকর্ম সম্পাদন করা সফলতার একমাত্র সোপান।
তৃতীয়ত, প্রতিকূলতায় দৃঢ়পদ থাকা লক্ষ্যে পৌঁছার একমাত্র মাধ্যম। সুতরাং ‘সবর কামিল’ বা পরিপূর্ণ ধৈর্যই মানবজীবনকে পূর্ণতা দিতে পারে।
আমাদের উচিত সব অনভিপ্রেত অবস্থায়, যেকোনো অযাচিত পরিবেশ ও অনাহুত পরিস্থিতিতে নিজেকে সংযত রেখে দৃঢ়তার সঙ্গে লক্ষ্যপানে এগিয়ে যাওয়া। তবেই আল্লাহর সাহায্য আমাদের সাথি হবে, আল্লাহ আমাদের সঙ্গী হবেন।
মানুষ সামাজিক জীব, কখনো বিচ্ছিন্নভাবে একা বসবাস করতে পারে না। সমাজবদ্ধভাবে থাকতে গেলে ক্ষমা, দয়ামায়া ও ভালোবাসা থাকতে হবে। শান্তির সমাজ, স্থিতিশীলতা ও সহাবস্থানের জন্য সহনশীলতা অপরিহার্য।
Patience teaches us to sow the seed in the form of right actions and to allow the fruits of those actions to ripen in their own time.
I don’t need to think about the future benefits of what I do now, because I know I will receive what I need when the time is right.
If I let go of expectations and allow things to develop in their own time, I will be able to enjoy what I am doing in the present, and the future will automatically become good.
রেফারেন্সগুলোঃ
১. থ্যট ফর টুডে
২. প্রথম আলো

No comments:

Post a Comment