Friday, August 30, 2024

ঘুম থেকে জাগার পর সুন্নাহ আমল

 আমরা প্রতিদিন রাতে ঘুমুতে যাই। ঘুমকে আল্লাহ তায়ালা আরামের জন্য সৃষ্টি করেছেন। এই ঘুম থেকে আমরা জেগে উঠি। নতুন উদ্যমে দিন শুরু করি। ঘুম থেকে উঠা দিয়ে আমাদের দিন শুরু হয়। ঘুমে আমি মৃত্যুর মতো ছিলাম। মহান আল্লাহ চিরনিদ্রায় না নিয়ে আমাকে জাগিয়ে দিয়েছেন। কুরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ তায়ালা ৯ বার ঘুমের কথা উল্লেখ করেছেন। সূরা নাবার নবম আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আর তোমাদের ঘুমকে আমি বিশ্রাম বানিয়েছি।’ সূরা ফুরকানের ৪৭তম আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন-‘আর তিনিই সেই সত্তা যিনি তোমাদের জন্য রাতকে করেছেন আবরণী, আর ঘুমকে বিশ্রামস্বরূপ, আর দিনকে করেছেন জেগে ওঠার জন্য।’ সূরা রুমের ২৩তম আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন- ‘আর তাঁর নিদর্শনগুলোর মধ্যে হচ্ছে রাতে ও দিনে তোমাদের ঘুম, আর তাঁর করুণাভাণ্ডার থেকে তোমাদের অন্বেষণ। নিঃসন্দেহ এতে তো নিদর্শনাবলি রয়েছে সেই লোকদের জন্য যারা শোনে।’

ঘুম থেকে জেগে রাসূল সা:-এর সুন্নাহ আমল
১. প্রিয় নবী সা: ঘুম থেকে জেগে সর্বপ্রথম মহান আল্লাহর প্রশংসা করতেন : তিনি পাঠ করতেন, (আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আহইয়ানা বা’দা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর) সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমাদের মৃত্যুর (ঘুমের) পর জাগ্রত করেছেন। তাঁর দিকেই সবাইকে একত্রিত হতে হবে।’ (বুখারি)
২. ঘুমের জড়তা দূর করতে হাত দিয়ে চোখ মুছতেন : আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত- তিনি একবার নবী সা:-এর স্ত্রী মায়মুনা রা:-এর ঘরে রাত কাটান। তিনি ছিলেন ইবনে আব্বাস রা:-এর খালা। ইবনে আব্বাস রা: বলেন, এরপর আমি বিছানার চওড়া দিকে শয়ন করলাম এবং রাসূলুল্লাহ সা: ও তাঁর স্ত্রী বিছানার লম্বা দিকে শয়ন করলেন; এরপর রাসূলুল্লাহ সা: ঘুমিয়ে পড়লেন। এমনিভাবে রাত যখন অর্ধেক হয়ে গেল তার কিছু আগে কিংবা কিছু পরে রাসূলুল্লাহ সা: জেগে উঠলেন। তিনি বসে হাত দিয়ে তাঁর মুখমণ্ডল থেকে ঘুমের আবেশ মুছতে লাগলেন। তারপর সূরা আলে ইমরানের শেষ ১০ আয়াত পাঠ করলেন। (বুখারি)
৩. ভোরের বরকত লাভের জন্য দোয়া করতেন : সাখর আল-গামিদি রা: সূত্রে বর্ণিত- নবী সা: বলেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার উম্মতকে ভোরের বরকত দান করুন। তিনি কোনো ক্ষুদ্র বা বিশাল বাহিনীকে কোথাও প্রেরণ করলে দিনের প্রথমভাগেই পাঠাতেন। বর্ণনাকারী সাখর রা: একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি তার পণ্যদ্রব্য দিনের প্রথমভাগে (ভোরে) পাঠাতেন, ফলে তিনি সম্পদশালী হয়েছিলেন এবং এভাবে তিনি অনেক সম্পদের অধিকারী হয়েছিলেন। (আবু দাউদ)
৪. দোয়া পড়তেন : এটি পড়লে দোয়া কবুল হয়, সালাত কবুল হয়। উবাদা ইবনে সামিত রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, নবী সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে জেগে ওঠে এ দোয়া পড়ে- এক আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই। তিনি এক তাঁর কোনো শরিক নেই। রাজ্য তাঁরই। যাবতীয় প্রশংসা তাঁরই। তিনিই সব কিছুর উপর শক্তিমান। যাবতীয় হামদ আল্লাহরই জন্য, আল্লাহ তায়ালা পবিত্র, আল্লাহ ছাড়া সত্য ইলাহ নেই। আল্লাহ মহান, গুনাহ থেকে বাঁচার এবং নেককাজ করার কোনো শক্তি নেই আল্লাহর তাওফিকবিহীন।’ তারপর বলেন, ‘ইয়া আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন। বা (অন্য কোনো) দোয়া করে, তাঁর দোয়া কবুল করা হয়। এরপর অজু করে (সালাত আদায় করলে) তার সালাত কবুল করা হয়।’ (বুখারি)
৫. মিসওয়াক করতেন : হজরত হুজাইফা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, নবী সা: যখন রাতে নামাজের জন্য উঠতেন তখন মিসওয়াক দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতেন।’ (বুখারি)
৬. তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য উঠে সূরা আলে ইমরানের শেষ ১০ আয়াত পাঠ করতেন : হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, একবার নবী সা: স্ত্রী মায়মুনা রা:-এর ঘরে রাত কাটান। তিনি ছিলেন ইবনে আব্বাস রা:-এর খালা। ইবনে আব্বাস রা: বলেন, এরপর আমি বিছানার চওড়া দিকে শয়ন করলাম এবং রাসূলুল্লাহ সা: ও তাঁর স্ত্রী বিছানার লম্বা দিকে শয়ন করলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ সা: ঘুমিয়ে পড়লেন। এমনিভাবে রাত যখন অর্ধেক হয়ে গেল তার কিছু আগে কিংবা কিছু পরে রাসূলুল্লাহ সা: জেগে উঠলেন। তিনি বসে হাত দিয়ে তাঁর মুখমণ্ডল থেকে ঘুমের আবেশ মুছতে লাগলেন। তারপর সূরা আলে ইমরানের শেষ ১০ আয়াত পাঠ করলেন।’ (বুখারি)
৭. অজুতে তিনবার পানি দিয়ে নাক ঝাড়তেন : হজরত আবু হুরায়রা রা: সূত্রে বর্ণিত- নবী সা: বলেন, তোমাদের কেউ যখন ঘুম থেকে উঠল এবং অজুু করল তখন তার নাক তিনবার ঝেড়ে ফেলা উচিত, কেননা, শয়তান তার নাকের ছিদ্রে রাত যাপন করেছে।’ (বুখারি)
৮. পানির পাত্রে হাত প্রবেশ করানোর আগে তিনবার হাত ধুয়ে নিতেন : হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- নবী সা: বলেন, ‘তোমাদের কেউ রাতের ঘুম থেকে জেগে তার হাত দুই অথবা তিনবার না ধোয়া পর্যন্ত যেন তা পানির পাত্রে প্রবেশ না করায়। কেননা, তার জানা নেই, রাতে তার হাত কোথায় ছিল।’ (তিরমিজি)
৯. সালাতুত তাহাজ্জুদ আদায় : ‘আর রাতের মধ্য থেকে তাহাজ্জুদ সালাতে কাটাও...তোমার জন্য এক অতিরিক্ত, হতে পারে তোমার প্রভু তোমাকে উন্নত করবেন এক সুপ্রশংসিত অবস্থায়।’ (সূরা বনি ইসরাইল-৭) রাসূল সা: নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন।
সূত্র: নয়া দিগন্ত

No comments:

Post a Comment