Friday, August 9, 2024

৫ আগষ্ট ২০২৪, সোমবার। বাঙালি জাতির স্মরণীয় একটি দিন

    “দেখাইয়া দাও – মৃত্যু যেথায় রাঙা দুলহিন -সাজে

করে প্রতীক্ষা আমাদের তরে রাঙা রণ-ভূমি মাঝে!”

মুক্তির পথে কত বাধা কত রক্ত!
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা চেয়েছিল কোটা পদ্ধতির বিলোপ। তাদের গালিগালাজ করা হয়েছে। তারা সয়েছে। তারা আবারও মাঠে নেমেছে। তাদের ওপর লেলিয়ে দেয়া হয়েছে দুর্বৃত্তদের। ওরা দমে যায় নি; বরং দ্বিগুণ-ত্রিগুণ বিপুল বিশাল শক্তি নিয়ে মাঠে সোচ্চার আবারও। এবার পুলিশ-আর্মি লেলিয়ে দেয়া হলো। ওরা গুলি খেলো। মরলো। এমনকি ওদের সাথে সাধারন মানুষের ওপরও আকাশ থেকে গুলি বর্ষন করা হলো। কোলের শিশুও পায়নি রেহায়। কি লাভ হলো? সরকার বিচলিত নয়। তারা যে কোনো মূল্যে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতেই বদ্ধপরিকর। শিক্ষার্থীরাও কম যায় না। তারাও বদ্ধপরিকর। মরবে, তবুও ছাড় নেই। কল্যাণজি আনন্দজীর কবিতার কথা মনে হয়ঃ
“জ্বালনে কিয়া মজা হ্যায়,
পারওয়ানে জানতে হ্যায়।”
জ্বলতে যে কি মজা
কেবল পতঙ্গই তা জানে।
শিক্ষার্থীরা নেমে এলো রাজপথে। পতঙ্গের মতো। শ’য়ে শ’য়ে, হাজারে হাজারে, লাখে লাখে। ওরা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে চায়। ছিলাম ওদের সাথে। নিজেকে মনে হচ্ছিল শিক্ষার্থী। সে এক অপার অনুভূতি। ওরা ক’জনকে গুলি করবে? ৭ম ক্লাশে ১৯৬৭ সালে পড়া কবিতা আবারও মনে হলোঃ
“আয় অন্ধকারের বদ্ধ দুয়ার খুলে
বুনো হাওয়ার মত আয়রে দুলে দুলে
গেয়ে নতুন গান
যত আবর্জনা উড়িয়ে দে রে দূরে,
আজ মরা গাঙের বুকে নূতন সুরে
ছড়িয়ে দে রে প্রাণ।
যাক্ বান ডেকে যাক্ বাইরে এবং ঘরে
আর নাচুক আকাশ শূন্য মাথার পরে,
আসুক ঝড়ো হাওয়া;
এই আকাশ মাটি উঠুক কেঁপে কেঁপে,
শুধু ঝড় বয়ে যাক্ মরা জীবন ছেপে,
বিজলী দিয়ে ছাওয়া
আয় ভাইবোনেরা ভয় ভাবনাহীন
সেই বিজলী নিয়ে গড়ি নতুন দিন।”
মনে হলো এই আমি, ’৭১এ পাকিস্তানী বাহিনীর কাছে ৩ বার ধরা পড়ার পরে নোতুন করে ফিরে আসা মানুষটি আবারও নোতুন প্রাণ পেয়েছে যেমন করে বর্ষার আগমনে নোতুন জল পেলে মীনকূল জলকেলি করে, দরিয়ায় ভাসে, প্রত্যাশার জাল বোনে- সে উপলব্ধির কথা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না!
“আমার বুকের ছবি,
আঁকেনি শিল্পী তূলির রেখায়
লেখে নাই কোনো কবি।”
আঁধার মিনারে পূর্ণিমা হাসছে, সুখ সায়াহ্নে লেখা হচ্ছে নির্মোহ মহাকাল। পেছনে ফেরার সব পথ বন্ধ আর সামনে মৃত্যু!
আবারও মনে আসে ৯ম ক্লাশে দ্রুতপঠনে পড়া মুসলিম সেনাপতি তারিক বিন জিয়াদের কথা। জিয়াদের সৈন্যরা সেনাপতির কাছে আকুতি জানিয়েছিল জিব্রাল্টার(Jabal Tariq) দখলে যাবার সময়, “আমরা কি আবারও আমাদের মাটিতে ফিরে যাবোনা? Shall we ever see our home again?” সেনাপতি জিয়াদ তার বাহিনীর সব নৌকা পুড়িয়ে সব সৈনিকের বাড়ী ফেরার বাসনা স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন কোনও কাপুরুষতা রোধ করতে। এটাই অদম্য সাহস।
এ সাহস আমাদের শিক্ষার্থীরা দেখিয়েছে, দেখিয়েছি ওদের সাথে আমরাও।
আমরা আহ্বান স্পষ্ট করে শুনতে পাচ্ছি-
“ফিরদৌস ছাড়ি নেমে এসো তুমি (সেই) শমশের ধরি,
আর একবার লোহিত-সাগরে লালে লাল হয়ে মরি!”
যারা আল্লাহকে ভয় করে সুন্দর প্রাপ্তির জন্য সামনে এগিয়ে যায় আল্লাহ তাদের নিরাশ করেছেন -এমন ঘটনা কখনোই ঘটেনি। আল্লাহর ভান্ডার কোনদিন নিঃশেষ হয়না। তিনি দেন, দিতেই থাকেন।
৫ আগষ্ট ২০২৪ গোটা বাংলাদেশ ছিল কারাগার। আমরা মুক্তি চাই শোষন আর বঞ্চনা থেকে। বিদ্রোহী কবি অনেক আগেই বোধ করি মুক্তিকামী মানুষের জন্য লিখে গেছেনঃ
“জেগে আছি একা জেগে আছি কারাগারে।
কুয়াশায় ঘেরা নবমীর চাঁদ জাগিছে আকাশ পারে।
বাতাসে ভাসিছে বাতাবী ফুলের গন্ধ
বনে বনে জাগে ঝিল্লী নূপুর ছন্দ
জোনাকিরা গাঁথে আলোকের মালা বাহিরে অন্ধকারে।
তুমিওকি প্রিয়া রয়েছো জাগিয়া শূন্য শয়ন তলে!
সারা পৃথিবীর বেদনা ঝরিছে তোমার নয়ন জলে।
পরাধীন দেশে প্রেম চির অভিশপ্ত
মুক্তির পথে কত বাধা কত রক্ত!
মহা মিলনের স্বপ্ন আমার ভেঙে যায় বারে বারে।
জেগে আছি একা জেগে আছি কারাগারে।”
কল্যাণের পথে যাত্রায় পদে পদে নানা বাধা আসে। এই বাধাকে ভয় পেলে চলে না না। ভয়কে শক্তিকে রূপান্তরিত করে সবাই মিলে পৌঁছতে হয় সেই গন্তব্যে যেখানে আছে কল্যাণ, সমৃদ্ধি, মুক্তি।
বাংলাদেশকে দুনিয়ার মানুষ নোতুন করে জেনেছে, জানছে। বাংলাদেশের ইতিহাসকে নোতুন করে লেখা হচ্ছে।
এ আন্দেলনে যারা শহীদ হয়েছেন, কোটি সালাম তাদের আত্মার ’পরে।
সূত্র: নিজ উপলব্দি
May be an image of one or more people, crowd and text
l reactions:

No comments:

Post a Comment