Sar pe topi laal
Haath mein resham ka rumaal
Ho tera kya kehana
মশহুর এই হিন্দী গান ৫০-৬০এর দশকে মুহম্মদ রাফি আর আশা ভোঁশলের কন্ঠে অনেকেই হয়তো শুনেছেন। এখানে রুমালের কথা বিশেষ ভাবে বলা হয়েছে।
হ্যাঁ আজকাল “রুমাল”কে দেখাই যায় না!
পুরোনো অ্যালবামের পাতা ওলটাতে ওলটাতে একটা ছবিতে চোখ আটকে গেল। বরের বেশে বাবা, মুখে রুমাল। এ দেশের বহু পারিবারিক অ্যালবামেই এ রকম ছবি পাওয়া যাবে। এ দেশের বিয়েতে কনেসাজের যেমন একটা নির্দিষ্ট ধারা চালু ছিল বহুদিন, তেমনি বরের সাজেরও অপরিহার্য এক অনুষঙ্গ ছিল রুমাল। আজকালকার বরেদের মুখে এখন আর অবশ্য রুমাল দেখা যায় না। টিস্যু পেপার আর ওয়েট ওয়াইপসের কল্যাণে আমাদের রোজকার জীবন থেকেও হারিয়ে যাচ্ছে নিত্যব্যবহার্য এই অনুষঙ্গ।
এই লেখা পড়তে গিয়ে খানিকটা স্মৃতিকাতর হয়ে পড়তে পারেন আপনি, বেড়ে ওঠার দিনগুলোতে যদি আপনারও সঙ্গী হয়ে থাকে রুমাল। লিখতে গিয়ে এই প্রতিবেদকের চোখে যেমন ভাসছে স্কুলের দিনগুলোর ঝাপসা একটা ছবি, যেখানে সঙ্গে থাকত রঙিন কোনো রুমাল। কত মানুষের হাতে কত রকম রুমালই না দেখা যেত সেই সব দিনে। একরঙা রুমাল, ডোরাকাটা রুমাল, ফুলতোলা রুমাল, এক কোণে নামের আদ্যক্ষর–সংবলিত রুমাল। সুই-সুতার ফোঁড়ে আবেগজড়ানো কোনো পঙ্ক্তিতে ছোট্ট এক রুমালে প্রকাশ পেত গভীর কোনো অনুভূতি। প্রিয় মানুষের অনুপস্থিতিতে তাঁরই উপহার দেওয়া রুমালে তাঁর ছোঁয়াও যেন অনুভব করতেন কেউ কেউ।
রোজকার রুমাল
শৈশব থেকেই রুমাল ব্যবহার করতেন কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন ইউনিটের অডিট শাখার সংযুক্ত কর্মকর্তা সাদিকুর রহমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ও তাঁর নিত্যসঙ্গী ছিল রুমাল। এখনো রুমাল ব্যবহার করেন। অবশ্য আগের থেকে কম। নিয়মিত যখন রুমাল ব্যবহার করতেন, তখনকার কোনো ঘটনার কথা মনে পড়ে কি না, জানতে চাইলাম। পোশাক ধুয়ে ফেলার পর পকেটে রয়ে যাওয়া ভাঁজ করা রুমাল খুঁজে পাওয়ার গল্প বললেন। নৈমিত্তিক অন্যান্য সুবিধার পাশাপাশি প্রয়োজনে টুপির বিকল্প হিসেবে রুমাল ব্যবহারের কথাও বলছিলেন এই কর্মকর্তা।
কেন রুমাল ভালো
গরমে ঘেমে গেলে চট করে মুখটা মোছার জন্য অধিকাংশের কাছে টিস্যু পেপারই এখন ভরসা। তবে টিস্যু পেপারে মুখ মুছতে গিয়ে কিন্তু মুখে লেপ্টে যেতে পারে ছিন্ন অংশ। আবার পকেটে রাখা টিস্যু ভিজে গিয়ে ব্যবহারের অনুপযোগীও হয়ে পড়তে পারে। সব সময়, সব জায়গায় হাতের কাছে টিস্যু পেপার পাওয়াও যায় না। সবচেয়ে বড় কথা, পৃথিবীর বিশাল জনসংখ্যার ব্যবহৃত অজস্র টিস্যু পেপার রোজ বাড়াচ্ছে পৃথিবীর বর্জ্য। নানা ধরনের টিস্যু পেপারের প্লাস্টিক-জাতীয় মোড়কের কারণেও পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। তাই রুমালই পরিবেশবান্ধব বিকল্প।
রুমাল দিয়ে কত কাজ!
ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার কাজে রুমাল ব্যবহার নিয়ে তো আর নতুন করে কিছু বলার নেই। রোদ-বৃষ্টিতে মাথা বাঁচাতেও কাজে লাগে রুমাল। প্রচণ্ড গরমের সময় রুমাল ভিজিয়ে ঘাড়ের ওপর রেখে দিন খানিকক্ষণ। আরাম পাবেন। ভেজা রুমাল দিয়ে মুখ বা হাত-পা মুছেও নিতে পারেন। দিনদুপুরে ছোট্ট একটা ‘পাওয়ার ন্যাপ’ অর্থাৎ ক্লান্তি দূর করতে ক্ষণিকের ঘুম দিতে চাইলে রুমালখানা দিয়ে চোখ ঢেকে রাখতে পারবেন। টেবিলে ঠান্ডা পানি বা পানীয়ের পাত্র রাখার আগে বিছিয়ে নিতে পারেন একটা রুমাল। টেবিল ভিজবে না, দাগও হবে না। হাঁচি-কাশির আদবকেতা বজায় রাখতেও কাজে লাগাতে পারবেন রুমাল। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ক্ষতিকর জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিও কমবে। তবে রুমালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাও নিশ্চিত করতে হবে। সেটি অবশ্য একেবারেই কঠিন কোনো কাজ নয়। আবার রোজকার জীবনে নানা প্রয়োজনে ব্যবহার করার জন্য সঙ্গে রাখতে পারেন একাধিক রুমাল।
রুমাল কেনাবেচা
কয়েক বছর আগেও ঢাকার গণপরিবহনে সুর করে রুমাল বিক্রি করতে দেখেছি, ‘রুমাল মাত্র দশ টাকা, সুতি রুমাল দশ টাকা।’ সুরটা কানে বাজছে। কোনো কোনো দোকানে এখনো বিক্রি হয় এই অনুষঙ্গ। কেনাকাটার অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও এখনো ফরমাশ দিতে পারবেন পছন্দের কোনো রুমাল।
সূত্র: রাফিয়া আলম
No comments:
Post a Comment