Friday, November 4, 2016

রবীন্দ্রনাথের ‘কণিকা’

কুটুম্বিতা
কেরোসিন শিখা বলে মাটির প্রদীপে
ভাই বলে ডাকো যদি দেবো গলা টিপে
হেনকালে গগনেতে উঠিলেন চাঁদা
কেরোসিন বলি উঠে, এসো মোর দাদা


অকর্মার বিভ্রাট
লাঙল কাঁদিয়া বলে ছাড়ি †˜†i গলা
তুই কোথা হতে এলি ওরে ভাই ফলা?
যেদিন আমার সাথে তোর দিলো ড়ি
সেই দিন হতে মোর মাথা খোঁড়া খুড়ি
ফলা কহে, ভালো ভাই আমি যাই খসে
দেখি তুমি কী আরামে থাকো ঘরে বসে
ফলাখানা টুটে গেল, vলখানা তাই
খুশি হয়ে পড়ে থাকে কোনো কর্ম নাই
চাষা বলে, আপদ আর কেন রাখা,
এরে আজ চালা করে ধরাইব আখা
v বলে, ওরে ফলা, আয় ভাই ধেয়ে-
খাটুনি যে ভালো ছিল জ্বvলুনির চেয়ে


অধিকার
অধিকার বেশি কার বনের উপর
সেই তর্কে বেলা হলো, বাজিল দুপুর
বকুল কহিল, শুন বান্ধব-সকল,
গন্ধে আমি সর্ববন করেছি দখল
পলাশ কহিল, শুনি মস্তক নাড়িয়া,
বর্ণে আমি দিক-বিদিক রেখেছি কাড়িয়া
গোলাপ রাঙিয়া উঠি করিল জবাব,
গন্ধে শোভায় বনে আমারি প্রভাব
কচু কহে, গন্ধশোভা নিয়ে খাও ধুয়ে,
হেথা আমি অধিকার গাড়িয়াছি ভুঁয়ে
মাটির ভিতরে তার দখল প্রচুর
প্রত্যক্ষ প্রমাণে জিত হইল কচুর


ভিক্ষা উপার্জন
বসুমতি, কেন তুমি এতই কৃপণা
কত খোঁড়াখুঁড়ি করে পাই শস্যকণা,
দিতে যদি হয় দেমা, প্রসন্ন সহাস-
কেন মাথার ঘাম পায়েতে বহাস
বিনাচাষে শস্য দিলে কী তাহাতে ক্ষতি?
শুনিয়া ঈষৎ হাসি কন বসুমতি,
আমার গৌরব তাহে সামান্যই বাড়ে
তোমার গৌরব তাহে নিতান্তই ছাড়ে
প্রকারভেদ 
বাবলা শাখারে বলে আম্রশাখা ভাই,
উনানে পুড়িয়া তুমি কেন হও ছাই?
হায় হায়, সখী তব ভাগ্য কী কঠোর
বাবলার শাখা বলে, দুঃখ নাহি মোর
বাঁচিয়া সফল তুমি গো চূতলতা,
নিজেকে করিয়া ভগ্ম মোর সফলতা


মোহ
নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস
পারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস
নদীর ওপার বসি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে-
কহে, যাহা কিছু সুখ সকলই ওপারে


গরজের আত্মীয়তা
কহিল ভিক্ষার ঝুলি টাকার থলিরে,
আমরা কুটুম্ব দোঁহে ভুলে গেলি কি করে?
থলি বলে, কুটুম্বিতা তুমিও ভুলিতে
আমার যা আছে গেলে তোমার ঝুলিতে


উদারচরিতানাম
প্রাচীরের ছিদ্রে এক নাম গোত্রহীন
ফুটিয়াছে ছোটোফুল অতিশয় দীন
ধিক ধিক করে তারে কাননের সবাই
সূর্য উঠি বলে তারে, ভালো আছ ভাই


ক্ষুদ্রের দম্ভ
শৈবাল দীঘিরে বলে উচ্চ করে শির,
লিখে রেখো, এক ফোঁটা দিলেম শিশির


সন্দেহের কারণ
কত বড়ো আমি, কহে নকল হীরাটি
তাইতো সন্দেহ করি নহ ঠিক খাঁটি


একই পথ
দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটারে রুখি
সত্য বলে, আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি?

মাঝারির সতর্কতা
উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে
তিনিই মধ্যম যিনি চলেন তফাতে


শত্রুতা গৌরব
পেঁচা রাষ্ট্র করি দেয় পেলে কোনো ছুতা
জাননা আমার সাথে সূর্যের শত্রুতা


রবীন্দ্রনাথের দার্শনিকতাপূর্ণ অণুকবিতাগুলো একদিকে যেমন গভীর তাৎপর্যময় অপরদিকে তা সমাজ ব্যক্তি জীবনেও অত্যন্ত গুরুত্ববহ রবীন্দ্রনাথের সবগুলো অণুকবিতাকে নীতিমূলক কবিতা বলা যায়। নীতিকথা গুলো প্রকাশ পেয়েছে উপমা আর রূপকের আড়ালে। অণুকবিতাগুলো রবীন্দ্র সাহিত্যের এক ব্যতিক্রমধর্মী সৃষ্টি


No comments:

Post a Comment