Sunday, March 29, 2020

আল্লাহর গজব আসে ৩০ কারণে

৩০টি কারন ৭ ক্যাটাগরিতে
প্রথম ক্যাটাগরী:
পাপের সীমা ছাড়িয়ে গেলে
মানুষ পাপ করতে করতে যখন পাপের সীমা ছাড়িয়ে যায়তখনই আল্লাহর শাস্তি নাজিল হয়।পাপিষ্ঠ ফেরাউনকে আল্লাহ তাআলা তখনই ধরেছেনযখন সে নিজেকে আল্লাহ বলে দাবি করেছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : ‘হে মুসাতুমি ফেরাউনের কাছে যাওসে অত্যন্ত উদ্ধত হয়ে গেছে।’ (সুরা ত্বাহা : ২৪)
নমরুদকে আল্লাহ তাআলা তখনই শাস্তি দিয়েছেনযখন সে নিজেকে প্রভু বলে দাবি করেছে। অনুরূপভাবে আদসামুদ প্রভৃতি জাতিকে তাদের সীমাহীন পাপাচারের কারণে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। বনি ইসরাইলরা আল্লাহর কিতাব তাওরাতকে অস্বীকারউত্তম জিনিস তথা মান্না  সালওয়ার পরিবর্তে খারাপ জিনিস তথা ভূমির উতপন্ন জিনিস চাওয়াআমালেকা সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুদ্ধ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আল্লাহর অগণিত নিয়ামত ভোগ করেও অকৃতজ্ঞ হওয়ার কারণেচির লাঞ্ছনা  আল্লাহর ক্রোধে পতিত হয়েছে।আগের নবীদের এসব কাহিনী পবিত্র কোরআনে আলোচনা করে আল্লাহ তাআলা এটিই বোঝাতে চেয়েছেন যে যদি উম্মতে মুহাম্মদী (সা.) তাদের মতো পাপাচারে লিপ্ত হয়তবে তাদের পরিণতিও অনুরূপ হবে এবং একই ভাগ্য বরণ করতে হবে। 

২) বিধর্মী কার্যকলাপের ফলে
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেনযখন (১)সরকারি মালকে নিজের মাল মনে করা হয়, (২)আমানতের মালকে নিজের মালের মতো ব্যবহার করা হয়, (৩)জাকাতকে জরিমানা মনে করা হয়, (৪)ইসলামী আকিদাবর্জিত বিদ্যা শিক্ষা করা হয়,
(৫)পুরুষ স্ত্রীর অনুগত হয়,
(৬)মায়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়,
(৭)বন্ধুদের আপন মনে করা হয়,
(৮)বাবাকে পর ভাবা হয়,
(৯)মসজিদে শোরগোল করা হয়,
(১০)পাপী লোক গোত্রের নেতা হয়,
(১১)অসত  নিকৃষ্ট লোক জাতির চালক হয়, (১২)ক্ষতির ভয়ে কোনো লোককে সম্মান করা হয়, (১৩)গায়িকা  বাদ্যযন্ত্রের প্রচলন অধিক হয়,
(১৪)মদ্য পানের আধিক্য ঘটে
(১৫)পরবর্তী সময় লোকেরা পূর্ববর্তী লোকদের বদনাম করেতখন যেন তারা অপেক্ষা করে লু হাওয়া (গরম বাতাস), ভূমিকম্পভূমিধসমানব আকৃতি বিকৃতিশিলাবৃষ্টিরক্তবৃষ্টি ইত্যাদি কঠিন আজাবেরযা একটার পর আরেকটা আসতে থাকবেযেমন হারের সুতা ছিঁড়ে গেলে মুক্তার দানাগুলো একটার পর একটা পড়তে থাকে। (তিরমিজি)

৩) ব্যভিচারমাপে কম দেওয়া ইত্যাদি অপকর্মের ফলে
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মুহাজিরদের উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘পাঁচটি মন্দ কাজ এমন আছেযদি তোমরা তাতে জড়িয়ে  পড়ো বা তা তোমাদের মধ্যে বাসা বাঁধেতবে খুবই খারাপ পরিণতির সম্মুখীন হবে। আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি যেন  পাঁচটি মন্দ কাজ তোমাদের মধ্যে জন্ম না নেয়।
ব্যভিচার যদি কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েতাহলে তাদের মধ্যে এমন এমন রোগ দেখা দেবেযা আগে ছিল না
. ‘মাপে কম দেওয়া।’  মন্দ কাজ যদি কোনো জাতির মধ্যে জন্ম নেয়তবে তাদের মধ্যে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় এবং তারা অত্যাচারী শাসকের শিকারে পরিণত হয়
. ‘জাকাত’ না দেওয়া।  মন্দ কাজ যাদের মধ্যে দেখা দেয়তাদের ওপর আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ হয়ে যায়। যদি সে অঞ্চলে পশু বা পাখি না থাকততবে আদৌ বৃষ্টি হতো না
আল্লাহ  রাসুলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা  প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা।  মন্দ কাজ যখন সমাজে দেখা দেয়তখন আল্লাহ তাআলা তাদের ওপর অমুসলিমদের আধিপত্য চাপিয়ে দেন। আধিপত্যবাদীরা তখন মুসলমানদের সহায়-সম্পদ কেড়ে নেয়
. ‘কিতাব অনুযায়ী শাসনকার্য না চালানো।’ যদি মুসলমান শাসকরা আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী শাসনকার্য না চালায়তবে আল্লাহ তাআলা মুসলিম সমাজে ভাঙন সৃষ্টি করে দেন। তারা নিজেদের মধ্যে পরস্পর লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে এবং সমাজে সন্ত্রাস  খুন-খারাবি শুরু হয়ে যায়।’ (বায়হাকিইবনে মাজাহহাদিস : ১০১৯)
হজরত ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিততিনি বলেনকোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে দ্বীনের কার্যকলাপে শৈথিল্য প্রদর্শন করা হলে সেই সম্প্রদায়ের লোকদের অন্তরে ভয়-ভীতি ঢেলে দেওয়া হয়কোনো সম্প্রদায়ে জিনা-ব্যভিচার বৃদ্ধি পেলে তাদের মধ্যে মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পায়কোনো সম্প্রদায়ের লোক মাপে কম দিলে তাদের রিজিক সংকুচিত করে দেওয়া হয়কোনো সম্প্রদায়ে অন্যায়ভাবে বিচার-ফয়সালা করা হলে সে গোত্রে রক্তপাত বৃদ্ধি পায়কোনো সম্প্রদায়ের লোক অঙ্গীকার ভঙ্গ করলে তাদের মধ্যে শত্রুতা প্রবল করে দেওয়া হয়। (মুয়াত্তা মালেকমিশকাত : পৃ৪৫৯

৪) অন্যায় কাজে বাধা না দেওয়ার ফলে
সতকাজের আদেশ এবং অসত কাজে বাধা দেওয়া ফরজ। মুমিন  কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে না। হজরত হুজায়ফা (রা.) থেকে বর্ণিতমহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যার হাতে আমার প্রাণ নিবদ্ধ তাঁর শপথতোমরা অবশ্যই ন্যায় কাজের আদেশ করবে এবং অন্যায় কাজ থেকে (মানুষকেবিরত রাখবে। অন্যথায় আল্লাহ তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের ওপর আজাব পাঠাবেন। অতঃপর তোমাদের পরিত্যাগ করা হবে এবং তোমাদের দোয়াও কবুল করা হবে না।’ (তিরমিজি

৫) অন্যায়ভাবে হত্যা করা হলে
অন্যায়ভাবে হত্যা করা হারাম। কথিত আছেহজরত আদম (.)-এর পুত্র কাবিল যেদিন হাবিলকে হত্যা করেসেদিনই পৃথিবীতে প্রথম ভূমিকম্প হয়। কেননা অন্যায়ভাবে হত্যাকাণ্ড আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন না। তিনি ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোনো মুমিনকে হত্যা করেতার শাস্তি হলো জাহান্নামসে সদা সেখানে অবস্থান করবে।’ (সুরা নিসা : ৯৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেনতোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক বিষয় থেকে দূরে থাকবে। সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেনইয়া রাসুলুল্লাহবিষয়গুলো কী কীরাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন : আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা। . জাদুটোনা করা। যথাযথ কারণ বাদে কাউকে হত্যা করাযা আল্লাহ হারাম করে দিয়েছেন। সুদ খাওয়া। এতিমের সম্পদ গ্রাস করা। রণক্ষেত্র থেকে পলায়ন করা। মুসলিম সরলা নির্দোষ মহিলাদের নামে ব্যভিচারের দুর্নাম রটনা করা। (মিশকাতপ্রথম খণ্ডবাবুল কাবাইর ওয়া আলামাতুন নিফাকসহীহ বুখারিকিতাবুল ওয়াসায়াহাদিস নম্বর : ২৭৬৬
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) মহানবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেনতিনি বলেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি মুসলমানদের সঙ্গে শান্তি চুক্তিতে আবদ্ধ কোনো অমুসলিমকে হত্যা করেতাহলে সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ ৪০ বছরের দূরত্ব থেকেও পাওয়া যায়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহহাদিস : ২৬৮৬সুনানে নাসাঈহাদিস  : ২৫)

৬) দুনিয়াপ্রীতি বৃদ্ধি পেলে
মুমিন দুনিয়ার চেয়ে আখিরাতকে অধিক ভালোবাসে। সাহাবায়ে কিরাম দুনিয়ার চেয়ে আখিরাতকে প্রাধান্য দিতেন এবং দ্বীনের জন্য মরণকে বেশি পছন্দ করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেনআমার উম্মতের ওপর এমন দুঃসময় আসবেযখন অন্যান্য জাতি তোমাদের ওপর এমনভাবে ঝাঁপিয়ে পড়বে যেন ক্ষুুধার্ত মানুষ খাদ্যের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। একজন সাহাবি জিজ্ঞেস করলেনহে আল্লাহর রাসুল (সা.)! তখন কি আমরা সংখ্যায় কম হবরাসুলুল্লাহ (সা.) বলেননাবরং তোমরা সংখ্যায় অনেক হয়েও বন্যার ফেনার মতো ভেসে যাবে। দুশমনদের অন্তর থেকে তোমাদের ভয়ভীতি  প্রভাব-প্রতিপত্তি উঠে যাবে। তোমাদের অন্তরে ওহান (কাপুরুষতাসৃষ্টি হবে। একজন সাহাবি জিজ্ঞেস করলেনহে আল্লাহর রাসুলওহান কীরাসুল (সা.বললেনদুনিয়ার মহব্বত  মৃত্যুর ভয়। (আবু দাউদরাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেনচারটি বিষয় ক্ষতিকর : চোখ নষ্ট হওয়াকলব শক্ত হওয়াদীর্ঘ আশা করা  পার্থিব লোভ

৭) ধনীরা কৃপণ হলে
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের মধ্যে উত্তম লোকরা তোমাদের নেতা (রাষ্ট্রপ্রধানহয়ধনীরা দানশীল হএবং রাষ্ট্রীয় কার্যাবলি পরামর্শের ভিত্তিতে সম্পাদিত হয়তখন তোমাদের জন্য জমিনের নিম্নভাগ থেকে জমিনের উপরিভাগ উত্তম। আর যখন তোমাদের মধ্যে ধনী লোকরা কৃপণ হয়কার্যাবলি মহিলাদের নির্দেশমতো চলেতখন তোমাদের জন্য জমিনের উপরিভাগ থেকে জমিনের নিম্নভাগ উত্তম।’ (তিরমিজিপৃষ্ঠা : ৪৫৯)
https://myjaalhaq.blogspot.com/2019/06/blog-post_28.html 

No comments:

Post a Comment