Monday, April 5, 2021

মানব শরীরের মৌসুমী হালচাল, রোগ বালাই এবং ব্যবস্থাপত্রঃ আয়ুর্বেদের নিরিখে

 কি করবেন ইম্যুনিটি বাড়াতে?

বায়ু-পিত্ত-কফ। আয়ুর্বেদ মতে এই তিন দোষ সাম্যাবস্থায় মানেই শরীর নীরোগ রয়েছে। আর বৈষম্য হলেই হয় রোগের উদ্ভব। বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য ছয় ঋতুর বিভিন্ন সময়ে ওই তিন দোষের মধ্যে বৈষম্য ডেকে আনে। ফলে বিশেষ ঋতুতে বিশেষ সমস্যা এবং ঋতু পরিবর্তনকালীন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। তবে আল্লাহর অশেষ করুণায় প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মেই মানবদেহের তিন দোষকে সাম্যাবস্থায় রাখতে প্রতিটি ঋতুতে বিশেষ শাকসব্জি ও ফলমূল দান করে। সব মরশুমি শাকসব্জি এবং ফলে প্রচুর পরিমাণে ‘ভিটামিন সি’, ‘ভিটামিন ই’ এবং ‘ভিটামিন এ’-র পূর্বসূরি ‘বিটা ক্যারোটিন’ থাকে। সঙ্গে থাকে অন্যান্য ভিটামিন, খনিজ এবং ‘অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট’। এই উপাদানগুলি শরীরের মধ্যে উৎপন্ন হওয়া ক্ষতিকর কিছু রাসায়নিক দ্রব্য থেকে বিভিন্ন অঙ্গকে রক্ষা করে। গড়ে তোলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।
১. গরমেঃ দিনের পর দিন বাড়ছে তাপমাত্রা। তবে খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে এই মরশুমেও আপনি পেতে পারেন স্বস্তি। গ্রীষ্মে মানবদেহ বায়ু দোষ সঞ্চয়প্রাপ্ত হয়। অন্যদিকে প্রশমিত হয় কফ দোষ। আসে জলহানি জাতীয় দৌর্বল্য। প্রচণ্ড আর্দ্রতার কারণে এখন আমাদের প্রচুর ঘাম হচ্ছে। ফলে শরীর থেকে জল বেরিয়ে যাচ্ছে। দেহে জলের ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। তাই গ্রীষ্মে শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য জামরুল, শসা, ফুটি(বাঙ্গি), আম, তরমুজ, আঙুর এবং লিচুর মতো ফল খুবই উপকারী। সব্জির মধ্যে উচ্ছে, ঝিঙে, পটল, করলা, ঢ্যাঁড়স, কুমড়ো, কলমি শাক, পুঁই শাক, সজনে শাক পিত্ত দোষ উপশম করে জলহানি কমায় এবং তিন দোষের মধ্যে সাম্য আনে।
২. বর্ষায় বায়ুর প্রকোপ বাড়ে। তাই অস্থিরতা, নিদ্রাহীনতা, অতিসার বা ডায়ারিয়ার মতো রোগে মানুষ প্রায়ই ভোগেন। এই সময় মরশুমি ফল পেয়ারা, কলা এবং সব্জির মধ্যে ঝিঙে, পটল, চালকুমড়ো, ক্যাপসিকাম, বেগুন, আমড়া, হিঞ্চে ও গিমে শাক শরীরের পক্ষে হিতকর। সঙ্গে রান্নায় শুকনো আদা, জিরে, ধনে, গোলমরিচ ইত্যাদি মশলা পরিমিত মাত্রায় খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত। এগুলি পিত্তবল বাড়ায়।
৩. শরতে পিত্তের প্রকোপ দেখা যায়। এই সময় ওল, কচু, মানকচু, লাল শাক, পটল ইত্যাদি সব্জি এবং ফল হিসেবে সবেদা, বাতাবিলেবু, আনারস, পানিফল, তাল, আপেল খাওয়া স্বাস্থ্যকর। এই সব ফল ও শাকসব্জি পিত্তকে প্রশমন করে এবং ত্রিদোষকে সাম্যাবস্থায় আনে।
৪. হেমন্তে পিত্ত দোষ প্রশমিত করতে খান মুসম্বি, শরতের মরশুমি ফল এবং শাকসব্জি।
৫. শীতকালে কফ দোষ সঞ্চিত হয়। এটি সব্জির সময়। বিট, গাজর, বিনস, মটরশুঁটি, টম্যাটো, সিম, পেঁপে, মেথি শাক শরীরের পক্ষে হিতকর। তবে বেশি পরিমাণে ফুলকপি ও বাঁধাকপি খাওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। ফলের মধ্যে কমলালেবু এবং বেদানা স্বাস্থ্যকর।
৬. বসন্তে কফের প্রকোপ হয়। কচি নিমপাতা, সজনে ডাঁটা, করলা, উচ্ছে, পটল, বেগুন, লাউ, কুমড়োর মতো সব্জি এবং ফলের মধ্যে আমলকী, পাকা বেল, বেদানা, কুল স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
তুলনায় দুর্বল এবং রুগ্নদের জন্য সারাবছর পরিমিত কলা, খেজুর, কাজু, চিনাবাদাম, আখরোট, আমন্ড ইত্যাদি স্বাস্থ্যকর উপাদান খাওয়া যেতে পারে।
প্রকৃতির নিয়মে উৎপন্ন হওয়া শাকসব্জি, ফলমূল খাওয়াই ওই তিন দোষ বৈষম্যকে নিয়ন্ত্রণে রাখার সর্বোত্তম উপায়।
আয়ুর্বেদবেত্তারা সেই বিধানই দিয়েছেন।
-বর্তমান পত্রিকা

No comments:

Post a Comment