আল্লাহ তাআলা পবিত্র অবস্থায় নামাজ আদায় করার কথা বলেছেন। সে জন্য নামাজ আদায়ের পূর্বশর্ত পবিত্রতা অর্জন করা। প্রশ্ন হচ্ছে, নামাজের জন্য পবিত্রতা অর্জন কেন শর্ত করা হয়েছে? নিম্নে আমরা তার কয়েকটি কারণ আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ।
এক. নামাজ হচ্ছে আল্লাহর নৈকট্য লাভের সর্বোচ্চ সেতুবন্ধ। রবের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যম। আর এই বন্ধন তৈরির জন্য আল্লাহর বান্দাকে পবিত্র হয়ে তার সামনে সমর্পণ হওয়ার কথা বলেছেন। আর এটা স্বতঃসিদ্ধ কথা যে একজন মানুষের সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শিত হয়, তাকে তার সামনে সুন্দর কাপড় পবিত্র শরীর পরিপাটি জিনিস নিয়ে উপস্থিত হওয়া। সে জন্য আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর জন্য আল্লাহ তাআলা নাজাসাতে খফিফা ও গলিজা হতে পবিত্র হওয়ার আদেশ করেছেন। এগুলোর কারণে যদিও বাহ্যত কোনো নাপাকি লেগে থাকে না; কিন্তু এগুলো নাজাসাতে মানবি (অর্থগত) বটে। আর রাসুলুল্লাহ (সা.) অজুবিহীন অবস্থায় সাহাবির সঙ্গে মুসাফা করতেও নিজেকে সংযত রেখেছেন। আবু জুহায়ম (রা.) বলেন, নবী (সা.) মদিনার কাছে অবস্থিত ‘বিরে জামাল’ থেকে আসছিলেন। পথিমধ্যে তাঁর সঙ্গে এক ব্যক্তির সাক্ষাৎ হলো। লোকটি তাঁকে সালাম করল। নবী (সা.) জবাব না দিয়ে দেয়ালের কাছে অগ্রসর হয়ে তাতে (হাত মেরে) নিজের চেহারা ও হস্তদ্বয় মাসাহ করে নিলেন, (অর্থাৎ তায়াম্মুম করলেন) তারপর সালামের জবাব দিলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৩৭)
দুই. যদি মেনেও নেওয়া হয় এর শরীরে কোনো নাপাকি নেই, তবু বিভিন্ন ধরনের ময়লা-আবর্জনায় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ভরে থাকে। বিবেকের দাবি মহান রবের সামনে দাঁড়ানোর আগে নিজের এসব ময়লা-আবর্জনাকে পরিষ্কার করে নেওয়া। এ জন্যই সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করে মাথা ঢেকে নামাজ পড়া উত্তম।
তিন. নাপাক থেকে পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যমে মূল উদ্দেশ্য অভ্যন্তরীণ জিনিসকে পাক-পবিত্র করা। নিজের অন্তরকে হিংসা-বিদ্বেষ, অহংকার, মুসলমানদের ব্যাপারে খারাপ ধারণা ইত্যাদি যেসব পাপাচার রয়েছে তা থেকে নিজেকে বিরত রাখা। ইসলামের মূল ইবাদতের অনেকগুলো আছে, যেগুলোর জন্য কোনো ধরনের পবিত্রতা শর্ত নয়। যেমন রোজা-জাকাত ইত্যাদি। আর এটা এ জন্য যে অজু ভেঙে যাওয়া, গোসল ফরজ হওয়া, এগুলো কোনো গুনাহ নয়। কিন্তু হিংসা-বিদ্বেষসহ যত আত্মিক ব্যাধি আছে সেসব পাপ। সে জন্য অজু-গোসলের পবিত্রতার মাধ্যমে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে এই পবিত্রতা সঙ্গে সঙ্গে অভ্যন্তরীণ পবিত্রতা অর্জন করা জরুরি।
চার. এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করার আরেকটি মূল উদ্দেশ্য, এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে মানুষ বিভিন্ন অপরাধ করে থাকে। মাথা দ্বারা চিন্তা করে। দৃষ্টি দ্বারা দেখে। হাত-পা দ্বারা বাস্তবায়ন করে। সে জন্য আল্লাহ তাআলা এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করার আদেশ করেছেন গুনাহ মার্জনার জন্য। হাদিসে এসেছে, অজুর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে গুনাহকে ঝরিয়ে দেন ঝরিয়ে দেন। আমর বিন আবাসা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, বান্দা যখন অজু করে এবং তার উভয় হাত ধৌত করে, তখন তার দুহাত থেকে গুনাহ নির্গত হয়ে যায়। যখন সে তার মুখমণ্ডল ধৌত করে, তখন তার মুখমণ্ডল থেকে তার গুনাহ নির্গত হয়ে যায়। যখন সে তার উভয় হাত ধৌত করে এবং তার মাথা মাসেহ করে, তখন তার দুহাত ও মাথা থেকে তার গুনাহ নির্গত হয়ে যায়। এরপর যখন সে তার পদদ্বয় ধৌত করে, তখন তার পদদ্বয় থেকে তার গুনাহ নির্গত হয়ে যায়। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৮৩)
(বাদায়েউস সানায়ে অবলম্বনে, ১/১১৪)
-জাওয়াদ তাহের
No comments:
Post a Comment