খেজুরের ইতিকথা
উৎপাদনে শীর্ষে মিসর, রফতানিতে সৌদি আরব
বাংলাদেশ ২০২১ সালে ৬ কোটি ১৬ লাখ ডলারের খেজুর আমদানি করেছিল। ২০২০ সালে আমদানির পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ১০ লাখ ডলার। এক বছরের ব্যবধানে দেশটির খেজুর আমদানির পরিমাণ বেড়েছে ২২ দশমিক ৯ শতাংশ। এ রমজানে বাংলাদেশ মোট ২০টি দেশ থেকে খেজুর আমদানি করেছে। সবচেয়ে বেশি আমদানি করেছে যথাক্রমে ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, আলজেরিয়া ও পাকিস্তান থেকে।
ভূমধ্যসাগর ও জর্ডান উপত্যকার মাঝামাঝি অবস্থিত একটি উপকূলীয় অঞ্চল। বর্তমান লেবাননের সম্পূর্ণ এবং সিরিয়া, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের অংশবিশেষ নিয়ে এটি গঠিত। প্রাচীনকালে তা ফিনিশিয়া নামে পরিচিত ছিল। শব্দটি গ্রিক। এর অর্থ বেগুনি ভূমি। এখানকার অধিবাসীরা মুরেক্স নামক এক প্রকার সামুদ্রিক শামুক থেকে বেগুনি রঙ বের করে আনত। এ রঙের জন্য অঞ্চলটি বিখ্যাত ছিল। তাই অঞ্চলটির এমন নামকরণ করেছিল গ্রিকরা। সেখানে প্রচুর পরিমাণে জন্মাত এক ধরনের গাছ। গ্রিকরা ভেবেছিল ফিনিশিয়া সে গাছের আদিভূমি। তাই তারা এর নাম দিল ফিনিক্স (ফিনিশিয়ার গাছ)। কালক্রমে সে অঞ্চলের প্রতীকে পরিণত হলো এ গাছ। ফিনিশীয় মুদ্রায় হয়েছে তার উপস্থাপন। গ্রিকদের ফিনিক্স আমাদের দেশে খেজুর গাছ নামে পরিচিত। এ গাছকে সংস্কৃত ভাষায় খর্জুর বলা হয়। সেখান থেকেই বাংলায় খেজুর শব্দটি এসেছে।
ফিনিক্স বলতে সাধারণত আমাদের মনে পৌরাণিক একটি পাখির চিত্রই ভেসে ওঠে। খেজুর গাছও ফিনিক্স হিসেবে পরিচিত। এমন তথ্য আমাদের কিছুটা আশ্চর্যান্বিত করে বৈকি। মজার ব্যাপার হলো, গ্রিক মিথগুলোতে ফিনিক্স পাখির সঙ্গে খেজুর গাছের সাদৃশ্য হাজির করা হয়েছে। রোমান লেখক প্লিনি দ্য এলডার তার ‘ন্যাচারাল হিস্ট্রি’ বইতে ফিনিক্স পাখির গল্প বলেছেন। কিংবদন্তি অনুসারে, আরবের মরুভূমিতে বাস করে এ পাখি। ৫০০ বছর তার আয়ু। তবে একই সময়ে দুনিয়ায় কেবল একটিই ফিনিক্স থাকে। খেজুর গাছের মাথায় তার বাসা। দারুচিনির ডাল ও এক ধরনের সুগন্ধি আঠা দিয়ে তৈরি। ৫০০ বছর পরে সূর্যের তাপে নিজেকে পুড়িয়ে ফেলে এ পাখি। আর সে ছাই থেকেই পাখিটির পুনর্জন্ম ঘটে। ফিনিক্স পাখির মতোই ক্রমাগত জন্ম, মৃত্যু ও পুনর্জন্মের মধ্য দিয়ে খেজুর গাছ পরিপূর্ণতা লাভ করে। প্রতি বছর এ গাছের নতুন শাখা গজায়। পুরনো শাখাগুলো মরে যায়। মরা শাখা গাছের বাকলে পরিণত হয়। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি দেখে মনে হয় যেন মরা শাখাগুলো গাছের ভেতরে প্রবেশ করছে। সেগুলোই আবার নতুন শাখা হিসেবে বেরিয়ে আসছে। তাছাড়া ফিনিক্স পাখির মতো খেজুর গাছও সাধারণত দীর্ঘজীবী হয়। খেজুরের বীজ তার গুণাগুণ বজায় রেখে অনেক বছর মাটির নিচে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। উপযুক্ত পরিবেশ পেলে তাতে অঙ্কুরোদগম ঘটে। কয়েক বছর আগে ডেড সির কাছে খেজুরের কিছু বীজ আবিষ্কৃত হয়েছিল। সেগুলো ছিল দুই হাজার বছরের পুরনো। এ ধরনের খেজুর গাছ জুডিয়াতে (বর্তমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের অংশবিশেষ) জন্মাত। বর্তমানে তা বিলুপ্তপ্রায়। সে বীজগুলোতে অঙ্কুরোদগম ঘটানোর প্রচেষ্টা চালানো হয়। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে একটি বীজ অঙ্কুরিত হয়। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন মেথুসেলাহ। খেজুর গাছের এসব বৈশিষ্ট্যের কারণে গ্রিকরা এর নাম দেয় ফিনিক্স।
খেজুর গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ফিনিক্স ড্যাকটাইলিফেরা phoenix dactylifera. এটি গ্রিক নাম। এর ‘ফিনিক্স’ নামকরণের কারণ তো জানা গেল। এবার ‘ড্যাকটাইলিফেরা’র ওপর আলোকপাত করা যাক। গ্রিক শব্দ ‘ড্যাকটাইলাস’ ও ‘ফেরো’র সমন্বয়ে ড্যাকটাইলিফেরা গঠিত। ড্যাকটাইলাস অর্থ খেজুর। আর ফেরো মানে বহন করা। তবে প্রকৃতপক্ষে, ড্যাকটাইলাস শব্দের অর্থ আঙুল। আঙুলের খেজুরে পরিণত হওয়া নিয়ে চমৎকার একটি গল্প আছে। দ্বিতীয় শতাব্দীর গ্রিক স্বপ্নবিশারদ আর্তেমিদোরাস রচিত বুক অব ড্রিমসে এ গল্পের উল্লেখ আছে। গল্পের নায়ক এক অসুস্থ ব্যক্তি। পেটের পীড়ায় ভুগছিল লোকটি। কাতর হয়ে সে চিকিৎসা-দেবতার কাছে আরোগ্য কামনা করে। স্বপ্নে সে নিজেকে চিকিৎসা-দেবতার মন্দিরে আবিষ্কার করে। দেবতা লোকটির ডান হাতের আঙুলগুলো ধরেন। তিনি তাকে সেগুলো খেতে বলেন। লোকটি সে আদেশ পালন করে। স্বপ্নের অন্তর্নিহিত তাত্পর্য ধরতে পারে লোকটি। ঘুম ভাঙার সঙ্গে সঙ্গেই সে পাঁচটি খেজুর খেয়ে নিল। আর কী আশ্চর্য! সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করল অসুস্থ লোকটি। এভাবেই স্বপ্নের ব্যাখ্যায় হাতের আঙুল ও খেজুর সমার্থক হয়ে যায়। এ কারণে খেজুর গাছের বৈজ্ঞানিক নামের দ্বিতীয় অংশ হয় ড্যাকটাইলিফেরা। এ গ্রিক শব্দটিই ইউরোপের বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন রূপ ধারণ করেছে। ইতালীয় ডেটেটরো, ফরাসি ডেটেট, স্প্যানিশ ডেটিল ও ইংরেজি ডেট ড্যাকটাইলিফেরার রূপভেদ। তবে পর্তুগিজ ভাষায় খেজুরকে বলা হয় তামার। হিব্রু ও আরবি ভাষা থেকে তারা শব্দটি গ্রহণ করেছে। সেমেটীয় ভাষায় তামার দ্বারা খেজুর গাছ ও খেজুর দুটোকেই বোঝায়। তামার শব্দটি এসেছে তামুর থেকে। এর অর্থ হৃৎপিণ্ড। হৃৎপিণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত যেকোনো কিছু বোঝাতেও শব্দটি ব্যবহূত হয়। যেমন রক্ত, লাল রঙ ইত্যাদি। যাবতীয় শুভ ও ঋজু বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করতেও শব্দটির ব্যবহার আছে। পাকা খেজুরের রঙ লালচে হয়। খেজুর গাছ একহারা ও ঋজু। এসব বৈশিষ্ট্যের কারণে সেমেটীয় ধারায় খেজুরকে তামার বলা হয়। ভাষাতাত্ত্বিকরা এমন অভিমতই ব্যক্ত করেছেন। হিব্রুতে তামার নামে এক নারীর নাম পাওয়া যায়। ওল্ড টেস্টামেন্টে তার বর্ণনা আছে। বর্ণনানুসারে, কিং ডেভিডের এক মেয়ের নাম ছিল তামার। অপূর্ব সৌন্দর্যের অধিকারী। সেখান থেকেও হিব্রু ও আরবিতে খেজুরের এমন নামকরণ হতে পারে। এমন নাম দ্বারা খেজুরের সৌন্দর্যের দিকেই যেন ইঙ্গিত করা হয়েছে। প্রাচীন গ্রিক ও লাতিন ভাষায় খেজুর গাছকে পালমা নামেও অভিহিত করা হয়েছে। পালমা তামারের একটি অপভ্রংশ হতে পারে বলে অনেক ভাষাতাত্ত্বিক মনে করেন।
খেজুর সাধারণত মরু অঞ্চলে জন্মায়। শুষ্ক আবহাওয়া ও ঊষর ভূমিতে বেড়ে ওঠে খেজুর গাছ। তথাপি এ ফল তার অঙ্গে এত রস কীভাবে ধারণ করে, তা এক বিস্ময়ই বটে। মরুভূমির মানুষের কাছে তাই এ ফল অতি আদরের। খেজুর তাদের অন্যতম প্রধান খাদ্য। খাবার-পরবর্তী মিষ্টান্ন হিসেবেও খেজুরের ব্যবহার আছে। আবার দুই খাবারের মাঝে হালকা নাশতা হিসেবেও তারা খেজুর খেয়ে থাকে। তাই খেজুরকে বলা হয় ‘মরুভূমির রুটি’। এর আরেকটি নাম আছে। আমাদের দেশে বসে সে নাম শুনলে অবাকই লাগবে। মরুবাসীর কাছে খেজুর ‘গরিবের পিঠা’ নামে পরিচিত। সেখানে খেজুরের প্রাচুর্য ও সহজপ্রাপ্যতার কারণে এমন নামকরণ।
খেজুর গাছ খুবই প্রাচীন। পাঁচ কোটি বছর আগের খেজুর গাছের ফসিল আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। তবে খেজুর চাষাবাদের ইতিহাস ততটা প্রাচীন নয়। হযরত ঈসা (আ.)-র জন্মের প্রায় চার হাজার বছর আগে থেকে মানুষ খেজুরের আবাদ শুরু করেছে বলে জানা যায়।
ইংরেজ উদ্ভিদবিজ্ঞানী ই. কর্নার খেজুর গাছকে আদর্শ উদ্ভিদ বলে আখ্যা দিয়েছেন। ‘ন্যাচারাল হিস্ট্রি অব পামস’ বইয়ে তিনি এমন দাবি করেছেন। পরিপূর্ণ একটি খেজুর গাছ দৈর্ঘ্যে প্রায় ৫০ ফুট (১৫ মিটার) বা তার বেশি হয়ে থাকে। এটি খুব ধীরগতিতে বাড়ে। পরিপূর্ণ রূপ পেতে এর ১০০ বছর লাগে। এর কোনো প্রধান মূল নেই। এর মূলগুলো আঁশযুক্ত। খেজুর গাছের কাণ্ড থেকে অসংখ্য গৌণ মূল বের হয়ে আসে। সেগুলো আবার অধিকতর ছোট মূলের জন্ম দেয়। গৌণ মূলগুলোতে অসংখ্য বায়ুকুঠুরি আছে। এগুলোর মাধ্যমে খেজুর গাছ প্রচুর পরিমাণে পানি শোষণ করে। এ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদটি নিজেকে সতেজ রাখে।
খেজুর গাছের কাণ্ডের একেবারে ওপরের দিকে একটি প্রান্তিক কুঁড়ি থাকে। সেখান থেকে নতুন পাতা গজায়। এ কুঁড়িকে গাছটির হৃৎপিণ্ড বা মাথা বলা হয়। এটি কেটে দিলে গাছটি মরে যায়। প্রতিটি পাতার একটি মেরুদণ্ড থাকে। এটি লম্বা ও শক্ত। একে মধ্যশিরা বলা হয়। এর উভয় পাশে পালকের মতো অনেকগুলো গৌণ পাতা গজায়। এগুলো লম্বা ও অগ্রভাগ সুচালো। তারা খেজুর গাছকে বাতাসে দোল খাওয়া কিংবা ভেঙে পড়ার হাত থেকে বাঁচায়। মধ্যশিরার নিচের অংশ জুড়ে কিছু কাঁটা জন্মায়। এগুলো খুবই ধারালো। এ কাঁটাগুলো প্রান্তিক কুঁড়িটিকে প্রাণিকুলের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। গৌণ পাতাগুলোর বহিরাবরণ বেশ শক্ত হয়। মরুভূমিতে বালিঝড়ের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে তারা খেজুর গাছকে নিরাপদ রাখে। তাছাড়া মরু অঞ্চলের গরম বাতাস থেকে কোষগুলোকে রক্ষায় গৌণ পাতাগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখে। পানি এগুলোর কোনো ক্ষতি করতে পারে না। তাই মাছ ধরার উপকরণ তৈরিতে তাদের ব্যবহার আছে। প্রান্তিক কুঁড়ির কাছাকাছি কচি পাতাগুলো আঁশযুক্ত আবরণে ঢাকা থাকে। পাতাগুলো বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আঁশগুলোও বড় হয়। বড় পাতাগুলো ছোট পাতাগুলোকে সূর্যের তাপ থেকে ছায়া দেয়।
বসন্তকালে খেজুর গাছে ফুল আসে। ফুলগুলো লম্বা ও শক্ত খোলের ভেতর থাকে। এসব খোল প্রথমে সবুজ থাকে। ধীরে ধীরে বাদামি হয়। ক্রমে তা পরিপূর্ণ হয়। তখন সূর্যের তাপে সেগুলো শুকিয়ে যায় এবং সংকুচিত হয়ে আসে। একপর্যায়ে খোলগুলো ফেটে ফুলের গোছা বেরিয়ে আসে। প্রতিটি গোছায় একটি কাণ্ড থাকে। সেখান থেকে ৫০ থেকে ১৫০টি বা তারও বেশি শাখা বের হয়। প্রতিটি শাখায় অসংখ্য ফুল থাকে। পুরুষ ফুল দেখতে তারার মতো। এর রঙ সাদা। শরীর মোমের মতো মসৃণ। নারী ফুল ডিম্বাকৃতির মুক্তার মতো দেখায়। রঙ হলুদাভ। পুরুষ ফুলের গোছা ছোট শাখার রূপ নেয়। এতে অনেকগুলো ফুল থাকে। প্রতিটি গোছা ছয় ইঞ্চি লম্বা হয়। নারী ফুলের গোছা লম্বায় এর দ্বিগুণ। তবে তাতে ফুলের সংখ্যা কম থাকে।
খেজুর বেরি জাতীয় ফল। একটি ডিম্বাশয় থেকে একটি খেজুরই জন্মায়। প্রতিটি ফুলে তিনটি গর্ভপত্র আছে। পরাগায়নের পর কেবল একটি গর্ভপত্র থেকে ফল হয়। অন্য দুটির গর্ভপাত হয়ে যায়। খেজুর থোকায় থোকায় জন্মায়। প্রতিটি থোকার একটি কাণ্ড থাকে। এ কাণ্ড থেকে অনেকগুলো শাখা বের হয়। বৃতির মাধ্যমে খেজুর শাখার সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। উপযুক্ত পরিবেশ পেলে একটি খেজুর গাছ বছরে প্রায় ৭০ কেজি খেজুর উত্পন্ন করতে পারে।
খেজুর স্বতন্ত্র একটি ফল। এটি তিনটি স্তরে পাকে। প্রথম পর্যায়ে পাকা খেজুর শক্ত থাকে। তখন রঙ থাকে উজ্জ্বল হলুদ কিংবা লাল। এ সময় খেজুর খানিকটা মুচমুচে, রসালো ও মিষ্টি হয়। আরেকটু পাকলে তা আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে নরম হতে থাকে। তখন খেজুরের কিছু অংশ শক্ত থাকে। শক্ত অংশের রঙ হয় হলুদ কিংবা লাল। আর কিছু অংশ থাকে নরম। সে অংশের রঙ হয় স্বচ্ছ বাদামি। একসময় সম্পূর্ণ খেজুর পেকে নরম হয়ে যায়। মুচমুচে ভাবটি চলে যায়। তখন তা অধিকতর মিষ্টি ও রসালো হয়। গাছের পাকা খেজুর রোদে শুকিয়ে যায়। তখন তার চামড়া কুঁচকে যায়। কালচে বর্ণ ধারণ করে। অপূর্ব লাগে দেখতে। অনেকটা ক্যান্ডির মতো দেখতে খেজুরগুলো তখন গাছ থেকে পাড়া হয়। মোড়কজাত হয়ে এসব খেজুর চলে যায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে।
খেজুরের পুষ্টিগুণ অতুলনীয়। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। ফ্ল্যাভোনয়েডস ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। অ্যালঝেইমার প্রতিরোধে এটি কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ক্যান্সার থেকে মানব শরীরকে রক্ষা করে। খেজুরে ফ্ল্যাভোনয়েডস থাকে। এটি এক প্রকার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এছাড়া ক্যারোটিনয়েডস ও ফেনোলিক অ্যাসিড নামে আরো দুই ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে খেজুরে। ক্যারোটিনয়েড হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখে। চোখের বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করে। ফেনোলিক অ্যাসিড ক্যান্সার ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়। খেজুরে বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ আছে। এর মধ্যে ফসফরাস, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম অন্যতম। এসব উপাদান হাড়কে মজবুত করে। হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা থেকে শরীরকে বাঁচিয়ে রাখে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে খেজুর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। এসব পুষ্টি উপাদান খেজুরকে একটি আদর্শ খাবারে পরিণত করেছে। মধ্যযুগে আরব বণিক ও অভিযাত্রীরা উত্তাল সাগরে দিনের পর দিন খেজুর খেয়েই টিকে থাকত। তখন স্কার্ভির প্রকোপ ছিল বেশি। ইউরোপীয় নাবিকেরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হতো। কিন্তু খেজুর খাওয়ার কারণে আরবরা এ রোগ ঠেকিয়ে দিতে পেরেছিল।
খেজুর গাছের ব্যবহারিক উপযোগিতাও দারুণ। এর কোনো অংশই ফেলনা নয়। খেজুর শুকিয়ে বহু বছর রেখে দেয়া যায়। সাগর ও মরু অভিযাত্রীদের কাছে তা অমূল্য। খেজুর সিদ্ধ করে ও ছেঁকে মধু তৈরি করা যায়। গাঁজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খেজুর থেকে উত্কৃষ্ট পানীয় প্রস্তুত হয়। খেজুর গাছের আঁশ থেকে দড়ি ও ঝুড়ি তৈরি করা যায়। একসময় বাড়ি বানাতে খেজুর গাছের পাতার ছাউনি ব্যবহূত হতো। খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হতো খেজুর গাছের শাখা।
সেমেটিক ধারার ধর্মগুলোতে খেজুরের আলাদা গুরুত্ব আছে। এটি পবিত্র ফল হিসেবে বিবেচিত। ইসলাম ধর্মে খেজুরকে কেন্দ্র করে অনেক আয়াত ও হাদিস আছে। ইহুদি ধর্মেও আছে নানা প্রবাদ ও কিংবদন্তি। বারো শতকের এক ইহুদি ধর্মযাজকের কণ্ঠে তারই প্রতিধ্বনি। নেতানিয়েল আল ফাইয়ুমি নামের সেই রেবাইয়ের উক্তি দিয়েই লেখাটি শেষ করব। আজ থেকে ৮০০ বছর আগে তিনি লিখেছেন, ‘প্রাণিকুলের মধ্যে মানুষ শ্রেষ্ঠ। আর উদ্ভিদকুলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো খেজুর গাছ।’
Source: নিজাম আশ শামস
মোহাম্মদ রবিউল হোসাইন
No comments:
Post a Comment