Monday, September 25, 2023

বদ স্বভাবে মানুষের চরম অধপতন ঘটে

 মানুষের এমন কিছু চারিত্রিক স্বভাব রয়েছে, যেগুলো খুবই নিকৃষ্ট ও অপছন্দনীয়। মানুষের এ স্বভাবগুলো ‘আখলাকে সায়্যিআ’ নামে পরিচিত। এ স্বভাবগুলোর কারণে মানুষের অধপতন সুনিশ্চিত।

আখলাকে সায়্যিআ বলতে যেসব স্বভাব রয়েছে তাহলো- মিথ্যা, অজ্ঞতা, মূর্খতা, অহংকার, কৃপণতা, গিবত, প্রতারণা, হিংসা, রাগ, পদমর্যাদা ও সম্পদের লোভ। এসবই মানুষের বদ স্বভাব। কুরআন-সুন্নাহর বর্ণনায় এসব স্বভাবে ক্ষতিও ভয়াবহ।
এ স্বভাবগুলো মানুষের দুনিয়ার সফলতার পাশাপাশি পরকালকে বরবাদ করে দেয়। হাদিসে এসেছে-
হজরত হারিসাহ ইবনু ওয়াহ্‌ব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘(জাওয়ায ও জাযারি) বদ চরিত্র ও বিরক্তিকর স্বভাবের মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (আবু দাউদ)
কুরআন সুন্নায় ঘোষিত আখলাকে সায়্যিআ তথা বদ স্বভাবগুলো থেকে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি তুলে ধরা হলো-
আল্লাহর স্মরণে উদাসিনতা
আল্লাহকে ভুলে দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকা মানুষের বদ স্বভাবের মধ্যে অন্যতম একটি। এ স্বভাব মানুষকে মৃত আত্মায় পরিণত করে দেয়। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উঠাবো।’ (সুরা ত্বাহা: আয়াত ১২৪)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন-
‘যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ হয় আমি তার জন্যে এক শয়তান নিয়োজিত করি। অতপর সে তার সঙ্গী হয়।’ (সুরা যুখরুফ: আয়াত ৩৬)
হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেন-
‘যারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং যারা আল্লাহকে স্মরণ করে না তাদের দৃষ্টান্ত হলো জীবিত ও মৃতের ন্যায়।’ (বুখারি)
এ থেকে উত্তরণের উপায় আল্লাহকে বেশি স্মরণ করা এবং আল্লাহর জিকিরে মশগুলো থাকা। হাদিসে পাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
- ‘শয়তান মানুষের হৃদয়ে লেগে থাকে। যখন বান্দা আল্লাহকে স্মরণ কর তখন সে পিছু হটে আর যখন সে আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসিন থাকে তখন শয়তান তাকে কুমন্ত্রণা দেয়।’ (বুখারি, মিশকাত)
- প্রত্যেক জিনিসেরই পরিচ্ছন্ন করার উপায় আছে। আর অন্তর পরিচ্ছন্ন করার উপায় হলো- আল্লাহর জিকির।’ (বায়হাকি, মিশকাত)
অহংকার
মানুষের বদ স্বভাবের মধ্যে অহংকার অন্যতম একটি। যে কোনো বিষয়ে নিজেকে অন্যের তুলনায় বড় মনে করাই হলো অহংকার। অর্থাৎ অন্যকে হেয় বা তুচ্ছ মনে করে নিজেকে বড় মনে করা। যা শয়তানের প্রধান কাজ। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘আল্লাহ কোনো উদ্ধত-অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা : লোকমান, আয়াত : ১৮)
আর পরকালে অহংকারী ব্যক্তির পরিণতি হবে ভয়াবহ। হাদিসে কুদসিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা দেন-
- ‘বড়ত্ব আমার চাদর এবং মহানত্ব আমার লুঙ্গি। যে কেউ এ দু’টির কোনোটি নিয়ে টানাটানি করে আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো।’ (মুসলিম, মিশকাত)
- ‘যার অন্তরে এক অণু পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (মুসলিম, মিশকাত)
সুতরাং অহংকারমুক্ত জীবন গড়তে মানুষের জন্য বিনয়ী ও নম্র হওয়ার বিকল্প নেই।
মিথ্যাচার
মানুষের বদ স্বভাবের মধ্যে অন্যতম হলো মিথ্যাচার করা। কেননা মিথ্যাকে সব পাপের জননী বলা হয়ে থাকে। সে কারণে মিথ্যা থেকে দূরে থাকতে কুরআনের নির্দেশনা হলো-
‘সুতরাং তোমরা মূর্তিদের অপবিত্রতা থেকে বেঁচে থাক এবং মিথ্যা কথন থেকে দূরে সরে থাক।’ (সুরা হজ: আয়াত ৩০)
যেহেতু মিথ্যা সব পাপের মূল এবং তা মানুষকে জাহান্নামে পৌঁছে দেয়। সে কারণে বাচ্চাদের সঙ্গেও অসত্য কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। মিথ্যা থেকে দূরে থাকতে হাদিসের নির্দেশনা হলো-
‘নিশ্চয়ই মিথ্যা পাপাচার পর্যন্ত পৌঁছে দেয় এবং পাপাচার জাহান্নাম পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। ব্যক্তি যখন অনবরত মিথ্যা বলতে থাকে তখন আল্লাহর কাছে তাকে মিথ্যাবাদীরূপে লিপিবদ্ধ করা হয়।’ (বুখারি)
পদ ও সম্পদের লোভ
পদ মর্যাদা ও সম্পদের লোভ মারাত্মক বদ স্বভাব। এ স্বভাব মানুষের দুনিয়া ও পরকালকে ধ্বংস করে দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘যার দ্বারা আল্লাহ তোমাদের কাউকে অপর কারো ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন, তোমরা তার লোভ করো না।’ (সুরা নিসা: আয়াত ৩২)
সে কারণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পদ মর্যাদা ও সম্পদের লোভকে মারাত্মক ক্ষতিকর স্বভাব হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। হাদিসে এসেছে-
‘ছাগলের পালে দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘ ছেড়ে দিলে যেমন ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, পদ মর্যাদার লোভ ও সম্পদের লোভ মানুষের দ্বীনের জন্য তার চেয়ে বেশি ক্ষতিকর।’ (তিরমিজি)
দুনিয়ার ভালোবাসা
হাদিসের পরিভাষায় দুনিয়া হচ্ছে পরকালের শস্যক্ষেত্র। প্রয়োজনের অতিরিক্ত দুনিয়ার ভালোবাসাই মানুষকে পাপাচারের দিকে ধাবিত করে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘তোমরা জেনে রাখ! পার্থিব জীবন ক্রীড়া-কৌতুক, সাজ-সজ্জা, পারস্পরিক অহমিকা এবং ধন ও জনের প্রাচুর্য ব্যতিত আর কিছুই নয়; যেমন- এক বৃষ্টির অবস্থা, যার সবুজ ফসল কৃষকদেরকে চমৎকৃত করে, এরপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি তাকে পীতবর্ণ দেখতে পাও, এরপর তা খড়কুটা হয়ে যায়। আর পরকালে আছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। দুনিয়ার জীবন প্রতারণার উপকরণ বৈ কিছুই নয়।’ (সুরা হাদিদ : আয়াত ২০)
দুনিয়ার জীবন মানুষকে পাপ কাজের দিকে ধাবিত করে। আল্লাহর স্মরণ ও পরকালীন চিন্তা থেকে বিমুখ করে দেয়। হাদিসে এসেছে-
- ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াকে ভালোবাসলো, সে তার পরকালকে ক্ষতিগ্রস্ত করলো। আর যে ব্যক্তি আখিরাতকে ভালোবাসলো, সে তার দুনিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করলো। সুতরাং তোমরা অস্থায়ী বস্তুর ওপর স্থায়ী বস্তুকে প্রাধান্য দাও।’ (মুসনাদে আহমদ)
- দীনার ও দিরহামের গোলামরা ধ্বংস হোক। তাদেরকে এ সব কিছু দেয়া হলে তারা সন্তুষ্ট থোকে আর না দেয়া হলে তারা অসন্তুষ্ট হয়।’ (বুখারি)
কৃপণতা
মানুষের মন্দ স্বভাবের মধ্যে অন্যতম একটি হলো কৃপণতা। ইসলাম সমাজ থেকে কৃপণতাকে সমূলে উঠিয়ে দিতে গুরুত্বারোপ করেছেন। কেননা কৃপণতা এমন এক মারাত্মক বদ স্বভাব। যার ফলে- ক্ষুধার্তকে খাবার দিতে, বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দিতে, অভাবগ্রস্তকে সাহায্য করতে, ইয়াতিমকে লালন-পালন করতে এবং ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে সাহায্য করতে বাধা দেয় এ কৃপণতা।
কৃপণতা মানুষের জন্য কোনোভাবেই কল্যাণকর নয়। বরং এর অনিষ্টতা অনেক বেশি। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘আল্লাহ তাদেরকে নিজের অনুগ্রহে যা দান করেছেন তাতে যারা কৃপণতা করে এই কার্পন্য তাদের জন্য মঙ্গলকর হবে বলে তারা যেন ধারণা না করে। বরং এটা তাদের পক্ষে একান্তই ক্ষতিকর প্রতিপন্ন হবে। যাতে তারা কার্পন্য করে সে সমস্ত ধন-সম্পদকে কেয়ামতের দিন তাদের গলায় বেড়ী বানিয়ে পরানো হবে। আর আল্লাহ হচ্ছেন আসমান ও যমীনের পরম সত্ত্বাধিকারী। আর যা কিছু তোমরা কর; আল্লাহ সে সম্পর্কে জানেন।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৮০)
কৃপণ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। জাহান্নাম হবে তাদের প্রতিবেশি। হাদিসে এসেছে-
- ‘কৃপণ ব্যক্তি আল্লাহ থেকে দূরে, জান্নাত থেকে দূরে এবং মানুষের থেকে দূরে থাকে। কিন্তু জাহান্নামের নিকটবর্তী থাকবে।’ (তিরমিজি, মিশকাত)
- ‘প্রতারক, কৃপণ এবং যে ব্যক্তি নিজ অনুগ্রহের কথা বলে বেড়ায়, তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (তিরমিজি, মিশকাত)
অপচয়-অপব্যয়
আল্লাহর রাস্তায় কৃপণতা যেমন মারাত্মক গোনাহ আবার ব্যয়ের ক্ষেত্রে অপব্যয়ও মারাত্মক গোনাহ। প্রয়োজনীয় কাজে যেমন অতিরক্তি ব্যয় করা যাবে না আবার কৃপণতাও করা যাবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন-
- ‘তোমরা খাও এবং পান করো; কিন্তু অপব্যয় করবে না। নিশ্চয়ই তিনি (আল্লাহ) অপব্যয়কারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা আরাফ: আয়াত ৩১)
- ‘আর কিছুতেই অপব্যয় করবে না। যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই এবং শয়তান তার প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।’ (সুরা বনি ইসরাইল: আয়াত ২৬-২৭)
যারা অপব্যয় বা অপচয় না করে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে তারা কখনো অভাবগ্রস্ত হয় না। হাদিসে এসেছে-
যে ব্যক্তি ব্যয় করার সময় মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে, সে কখনো অভাবগ্রস্ত বা নিঃস্ব হয় না।’ (তাফসিরে মারেফুল কুরআন)
রাগ
রাগ বা ক্রোধ মানুষের সঠিক জ্ঞানের পরিপন্থী। রাগের কারণে মানুষ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। যারা আল্লাহকে ভয় করে তারা রাগ নিয়ন্ত্রণ করেন। আল্লাহ বলেন-
‘যখন তারা ক্রোধান্বিত হয় তখন তারা ক্ষমা করে দেয়।’ (সুরা আশ-শুরা: আয়াত ৩৭)
রাগ বো ক্রোধ হজমকারী ব্যক্তিই বীরপুরুষ। হাদিসে এসেছে-
‘ওই ব্যক্তি বীরপুরুষ নয়, যে অন্যকে ধরাশায়ী করে। বরং সেই প্রকৃত বীর, যে রাগের সময় নিজেকে সংযত রাখতে পারে।’ (বুখারি)
হিংসা
মানুষের বদ স্বভাবের মধ্যে মারাত্মক হলো হিংসা-বিদ্বেষ। অন্যের সুখ যে সহ্য করতে পারে না সে ব্যক্তিই হিংসুক। অথচ অন্যের প্রতি হিংসা করা ইসলামে হারাম। অথচ কুরআনে পাকে হিংসা থেকে বেঁচে থাকতে বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন-
‘আর হিংসুকের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাই, যখন সে হিংসা করে।’ (সুরা ফালাক : আয়াত ৫)
হিংসার কারণে মানসিক ব্যাধি ও অস্বস্থি তৈরি হয়। সামাজিক সুসম্পর্ক ও শৃঙ্খলা নষ্ট হয়ে যায়। হাদিসে এসেছে-
‘তোমরা হিংসা থেকে বিরত থাকো। কেননা হিংসা নেক আমলকে খেয়ে ফেলে। যেভাবে আগুন কাঠকে জ্বালিয়ে নিঃশেষ করে দেয়।’ (আবু দাউদ)
আত্মগৌরব
অহংকারের একটি শাখা হলো আত্মগৌরব। এ থেকে বেঁচে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন মহান আল্লাহ। কুরআনে এসেছে-
‘তোমরা আত্মপ্রশংসা কোরো না, কে আল্লাহভীরু এ সম্পর্কে তিনিই সম্যক অবগত।’ (সুরা নজম: আয়াত ৩২)
এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
‘প্রবৃত্তির অনুগামী হওয়া, কৃপণতার অনুগত হওয়া এবং আত্মপ্রশংসায় লিপ্ত হওয়া—এগুলো হচ্ছে ধ্বংসাত্মক বদ-স্বভাবের অন্তর্ভুক্ত। তবে এসবের মধ্যে শেষোক্তটি (আত্মগৌরব হচ্ছে সবচেয়ে জঘন্য।’ (বায়হাকি)
গালমন্দ
গালাগাল বা ফাহেশা কথা ইসলামে নিষিদ্ধ ও মারাত্মক পাপ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একাধিক হাদিসে এ ব্যাপারে মানুষকে সতর্ক করেছেন। আর তাহলো-
- ‘মুমিনের সঙ্গে লড়াই করা কুফরি এবং তাকে গালি দেয়া ফিসক (প্রকাশ্য পাপ)।’ (নাসাঈ)
- ‘প্রকৃত ঈমানদার ব্যক্তি কারো প্রতি গালাগাল ও অভিশাপ করে না এবং সে কোনো অশালীন ও অশ্লীল কথাও বলে না।’ (তিরমিজি)
- প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি, যার মুখ ও হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ।’ (বুখারি)
প্রতারণা
দুনিয়ার প্রতিটি কাজে ধোঁকা দেয়া বা প্রতারণা করা মারাত্মক বদ স্বভাব। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি প্রতারকে তার উম্মত হিসেবে স্বীকৃতি দেবেন না। হাদিসে এসেছে-
‘যে ধোঁকা দেয় সে আমার উম্মত হিসেবে গণ্য হবে না।’ (তিরমিজি)
তোষামোদি
কারো অতিরিক্ত তোষামোদি বা প্রশংসা করাও ইসলামে নিষিদ্ধ। এতে মিথ্যার প্রচার ও প্রসার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। মানুষের অহংকারবোধ তৈরি করে। সে কারণে তোষামোদি করা ইসলামে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘তুমি মনে করো না, যারা নিজেদের কৃতকর্মের উপর আনন্দিত হয় এবং না করা বিষয়ের জন্য প্রশংসা কামনা করে, তারা আমার কাছ থেকে অব্যাহতি লাভ করেছে। বস্তুতঃ তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা আল-ইমরান: আয়াত ১৮৮)
মাত্রারিক্তি প্রশংসা তথা তোষামোদি সম্পর্কে হাদিসে এসেছে-
- তোমরা যদি কাউকে মাত্রাতিরিক্ত প্রশংসা করতে দেখ তাহলে তাদের মুখে মাটি ছুঁড়ে মারবে।’ (মুসলিম, মিশকাত)
- কোনো ফাসিক ব্যক্তির প্রশংসা করা হলে আল্লাহ তাআলা রাগান্বিত হন এবং এতে তার আরশ কেঁপে ওঠে।’ (বায়হাকি, মিশকাত)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তার অধপতন তথা ভয়াবহ আজাব থেকে রক্ষা পেতে উল্লেখিত বদ স্বভাবগুলো থেকে হেফাজত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সূত্র: jagonews24

শেখার আছে। যদি নিতে পারি।

 নতুন প্রেসিডেন্ট ও মান হানিকর কথার জবাব

প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ১ম দিন অফিস করছেন তিনি। আজ তার উদ্বোধনী ভাষন দেয়ার কথা রয়েছে। অল্প পরেই সঠিক সময়েই ভাষন শুরু হলো। তার ১ম ভাষনের মাঝেই আধুনিক পোশাক পরা কেতাদুরস্ত এক সিনেটর দাঁড়ালেন। নোতুন প্রেসিডেন্টকে প্রশ্ন করলেন। মি. প্রেসিডেন্ট, বোধ করি আপনি ভুলে যাননি যে আপনার বাবা একজন মুচি ছিল আর সে আমাদের পরিবারের পুরুষ নারী সবারই জুতো বানাতো। পুরো সিনেট অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। হাসি যেন আর থামেনা। সিনেটররা ধরেই নিলো যে এক নিরেট বোকাকে তাদের প্রেসিডেন্ট বানিয়েছে।
কিন্তু কিছু কিছু মানুষ্ এই দুনিয়াতেই রয়েছে যারা অসম্ভব দৃঢ় প্রত্যয়ী হন। প্রেসিডেন্ট প্রশ্নকর্তার চোখের দিকে সরাসরি তাকালেন। তাকে বল্লেন, “জনাব, আমি জানি আমার বাবা আপনাদের পরিবারের পুরুষ নারী সবারই জুতো বানাতেন। এ রকম অরো মুচি এই শহরের ভেতরেই আছে। কিন্তু আমার বাবা অসম্ভব রকমের ভালো জুতো বানাতে পারতেন যা আর কারো পক্ষে সম্ভব ছিল না, বুঝেছেন।”
প্রেসিডেন্ট থামলেন না। বলেই চললেন। আমার বাবা ছিলেন একজন সৃষ্টিশীল মানুষ, একজন জিনিয়াস। তিনি শুধু জুতোই বানাতেন না। তিনি যা বানাতেন তাতে তার হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা থাকতো। আমি এটাই আপনাকে বলছি যে আমার বাবার তৈরী জুতো নিয়ে আপনার কি কোন অভিযোগ রয়েছে? থাকলে আমাকে বলুন। আর আমিও বাবার কাছ থেকে জুতো বানানো শিখেছি। আপনি চাইলো আরো কয়েক জোড়া জুতো আপনার জন্য তৈরী করে দেবো আমি নিজেই। আর আমি এখন অব্দি জানি যে এই তল্লাটের কেউই আমার বাবার তৈরী জুতো নিয়ে অভিযোগ তো দূরের কথা-একটা টু শব্দও করেনি। আমি আমার বাবাকে নিয়ে গর্বিত। আরো গর্বিত যে এমন এক বাবার সন্তান আমি।
হঠাত করেই যেনো গোটা সিনেটে পিনপতন নীরবতা নেমে এলো। সিনেটররা কেউই আঁচ করতে পারেনি প্রেসিডেন্টের জ্ঞানের গভীরতা আর ব্যাপকতা বিষয়ে। কারণ, তার বাবার কাজের খুঁত কেউই ধরতে পারেনি। তার বাবা ছিলেন একজন ধারালো মানুষ। কাজও ছিল সুচিন্তিত ও ধারালো। ছেলেটাও হয়েছে তেমনিই।
ফোকাসঃ আপনার অনুমতি ছাড়া কেউই আপনাকে মান হানিকর কোন কথা বলার ক্ষমতা রাখেনা। যা ঘটে যায় আমরা তা থেকে মানসিক আঘাত পাইনা। মানসিক আঘাতটা পাই মানুষের অভিব্যক্তি বা রেসপন্স থেকে।

দোয়া কবুল হয় আজানের সময়

 নামাজের জন্য সবাইকে আহ্বান করতে আজান দেওয়া হয়। প্রতি ওয়াক্ত ও জুমার নামাজে যোগ দেওয়ার জন্য আজান দেওয়া হয়। আজান শোনার পর দোয়া পড়তে হয়।

আজানের দূ‘আ:
‘আল্লাহুম্মা রব্বা হাজিহিদ দাওয়াতিত তাম্মাতি ওয়াস সালাতিল কায়িমাতি আতি মুহাম্মাদানিল ওয়াসিলাতা ওয়াল ফাদিলাতা ওয়াদ দারজাতার রফিআতা ওয়াবআসহু মাকামাম মাহমুদানিল্লাজি ওয়াআত্তাহু; ওয়ারজুকনা শাফাআতাহু ইয়াওমাল কিয়ামাতি, ইন্নাকা লা তুখলিফুল মিআদ।’
দূ‘আর অর্থ:
হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহ্বানের ও স্থায়ী প্রতিষ্ঠিত নামাজের আপনিই প্রভু। হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে ওয়াসিলা ও সুমহান মর্যাদা দান করুন এবং তাঁকে ওই প্রশংসিত স্থানে অধিষ্ঠিত করুন, যার প্রতিশ্রুতি আপনি তাঁকে দিয়েছেন আর কিয়ামতের দিন তাঁর সুপারিশ আমাদের নসিব করুন; নিশ্চয়ই আপনি প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করেন না।
আজানের পর দরুদ শরিফ পড়ে এ দূ‘আ পড়া সুন্নত।
আজানের ফজিলত সম্পর্কে বুখারি শরিফে বলা হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন নামাজের জন্য আজান দেওয়া হয়, তখন শয়তান হাওয়া ছেড়ে পালায়, যাতে সে আজানের শব্দ না শোনে। যখন আজান শেষ হয়ে যায়, তখন সে আবার ফিরে আসে। আবার যখন নামাজের জন্য ইকামত বলা হয়, তখন আবার সে দূরে সরে যায়। ইকামত শেষ হলে সে পুনরায় ফিরে এসে লোকের মনে কুমন্ত্রণা দিয়ে বলে, এটা স্মরণ করো, ওটা স্মরণ করো। এভাবে বিস্মৃত বিষয়গুলো সে স্মরণ করিয়ে দেয়। তাতে লোকটি এমন অবস্থায় গিয়ে পৌঁছায় যে, সে কয় রাকাত নামাজ আদায় করেছে তা আর মনে করতে পারে না।
আজান ও ইকামাতের বাক্যগুলো
প্রথমে আল্লাহু আকবার, ‘আল্লাহ মহান’ (চারবার), অতঃপর আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নাই’ (দুবার), তারপর আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল’ (দুবার), তারপর হাইয়া আলাস সালাহ, ‘নামাজের জন্য আসো’ (দুবার) ও হাইয়া আলাল ফালাহ, ‘কল্যাণের জন্য আসো’ (দুবার) ; পরিশেষে আল্লাহু আকবার, ‘আল্লাহ মহান’ (দুবার) ও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নাই’ (একবার)।
ফজরের নামাজের আজানে পঞ্চম বাক্যের (হাইয়া আলাল ফালাহ) পর বলতে হয়, আস সালাতু খায়রুম মিনান নাওম, ‘ঘুম অপেক্ষা নামাজ উত্তম’ (দুবার) এবং ইকামতে এই স্থানে বলতে হয় কদ কমাতিস সালাহ, ‘জামাত প্রস্তুত’ (দুবার)।
Source: ফেরদৌস ফয়সাল
May be an illustration
All reactions:

আজানের সূচনা যেভাবে

 ইসলামের সমস্ত বিষয়গুলোকে নির্দিষ্ট কিছু শিরোনামে বলতে চাইলে ইবাদত, লেনদেন, আচার ব্যবহার, আখলাক ও আকীদার আলোচনা আসবে। ইসলামের মূল হচ্ছে আকীদা বিশ্বাস। আর বাকিগুলো হচ্ছে শাখাগত বিষয়।

ইবাদতই এগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ। ইবাদতের প্রধান হচ্ছে নামাজ। নামাজের বিধান পূর্ববতী নবীগণের মধ্যেও ছিল। ইসলামে নামাজ ফরজ হয়েছে মেরাজের রজনীতে। সে ঘটনা আমরা জানি। প্রথম দেয়া হয় পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ। তা কমিয়ে আসতে আসতে সর্ব শেষ চূড়ান্ত হয় পাঁচ ওয়াক্ত।
নামাজ মেরাজের রজনীতে ফরজ হলেও, নামাজের জন্য আজান দেয়ার প্রচলন কিন্তু তখনো হয়নি। তা হয়েছে আরো পরে। মদিনায় হিজরতের পর। প্রচলন পরে হলেও রাসূল (সা.) মেরাজের রজনীতেই আজান শুনেছিলেন। কারো কারো মতে হজরত জিবরাইল (আ.) সে রাতে নবী করিম (সা.)-কে আজান শিক্ষা দিয়েছিলেন। তবে এই মতের পক্ষের হাদিসগুলো সনদগতভাবে দুর্বল হওয়ায় কেউ কেউ এই মতটিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। মদিনায় আজানের প্রচলন হওয়ার ঘটনাটি ছিল এ রকম। মদিনায় হিজরতে পর মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকল। মক্কায় এতদিন স্বাধীনভাবে দ্বীনি কাজ আঞ্জাম দেয়া সম্ভব হয়নি। মদিনায় স্বাধীনভাবে দ্বীনি কাজ করা ও মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষিতে নামাজের জন্য লোকদেরকে ডাকার প্রয়োজন দেখা দিল। একদিন রাসূল (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে পরামর্শ করলেন যে, নামাজের জন্য লোকদেরকে একত্রিত করার কী পদ্ধতি হতে পারে। কেউ কেউ পরামর্শ দিল, খৃষ্টানদের ন্যায় নামাজের সময় হলে ঘণ্টা বাজানো হোক। কয়েকজন পরামর্শ দিল, ইহুদিদের ন্যায় নামাজের সময় হলে সিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হোক। হজরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বলেন, একজন লোক ঠিক করলেই তো হচ্ছে। সে নামাজের সময় হলে লোকদেরকে ডেকে ডেকে জমা করবে। কিন্তু নবী করিম (সা.) এর নিকট কোনোটিই পছন্দ হচ্ছিল না। তাই বিষয়টি অমীমাংসিত অবস্থায় ওই দিনের বৈঠক শেষ হলো।
ওই দিনেরই রাতের ঘটনা। আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদ (রা.) স্বপ্নে দেখেন এক লোক দুটি ঘণ্টা নিয়ে যাচ্ছে। তিনি ওই লোককে বলেন, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি কি ওগুলো আমার কাছে বিক্রি করবে? ওই লোক প্রশ্ন করেন তুমি এর দ্বারা কী করবে? সাহাবি বলেন, এগুলো বাজিয়ে লোকদেরকে নামাজের দিকে ডাকব। তখন ওই লোক বলেন, নামাজে ডাকার জন্য আমি তোমাকে এর চেয়ে সুন্দর পদ্ধতি শিখিয়ে দিচ্ছি। এর পর ওই লোক আজানের শব্দগুলো শিখিয়ে দেন। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদ ফজরের সময় নবী করিম (সা.)-কে আজানের শব্দগুলো শুনালেন। রাসূল (সা.) শুনে বলেন এটা সত্য স্বপ্ন। রাসূল (সা.) তাকে নির্দেশ দিলেন, হজরত বেলালকে আজান শেখাও। হজরত বেলাল আজান শিখে আজান দেয়া শুরু করেন। আর এভাবেই আজানের সূচনা হয়েছে।
কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, হজরত উমর (রা.) বেলালের আজান শুনে ঘুম থেকে ওঠে দৌঁড়ে গেলেন যে, আমিও তো স্বপ্নে এগুলো দেখেছি। রাসূল (সা.) তার কথা শুনে বলেন, সমস্ত তারিফ আল্লাহ তায়ালার জন্য। ঘটনাটি এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে ইতিহাসের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ বিদায়া ওয়ান নিহায়াতে। কোনো কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায়, হজরত উমর (রা.) এ ঘটনা ঘটারও বিশ দিন আগে আজানের শব্দগুলো স্বপ্নে দেখেছিলেন। আবু দাউদ, তিরমিজীসহ আরো বহু হাদিসের কিতাবে ইকামতের আলোচনাও এসেছে। অর্থাৎ আজানের সঙ্গে স্বপ্নে ইকামতও শিখিয়ে দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে হজরত বেলাল (রা.) ফজরের নামাজে ‘আস সালাতু খাইরুম মিনান নাওম’ বাক্যটি যুক্ত করেন। হজরত নবী করিম (সা.) এটাকে পছন্দ করেছেন। বিধায় এখন এটাও আজানের অংশ।
অনেকে বিভ্রান্তি ছড়ান যে, আজান এসেছে একজন সাহাবির স্বপ্নের মাধ্যমে, যিনি নবী ছিলেন না। তারপরও তার স্বপ্নকে মেনে নিয়ে আজানের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে বৈধতা দেয়া হয়েছে। অতএব ওলি আউলিয়াদের স্বপ্ন শরীয়তের দলীল, যেমন ওই সাহাবির স্বপ্ন দলিল হয়েছে। মূল বিষয় হচ্ছে, আজান শুধু স্বপ্নের মাধ্যমেই বৈধতা পেয়েছে বিষয়টি এমন নয়। বরং পরবর্তীতে এ ব্যাপারে সরাসরি ওহি নাজিল হয়েছিল। যেমন এক হাদিসে এসেছে, হজরত উমর (রা.) ঘণ্টা বানানোর জন্য দুটি কাঠ কিনেন। কিন্তু ওই রাতেই তিনি স্বপ্নে আজানের শব্দগুলো শিখেন। দৌঁড়ে রাসূল (সা.)-কে সংবাদ দিতে গেলে, তিনি বলেন, তোমার সংবাদ দেয়ার আগেই এ ব্যাপারে ওহি নাজিল হয়েছে। (বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-৪৭১) আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আকিদা হচ্ছে, নবীগণের স্বপ্ন শরীয়তের দলিল হতে পারে। কিন্তু ওলি আউলিয়াদের স্বপ্ন দলিল হতে পারে না। তাই এ ব্যাপারে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
আজানের শব্দ সংখ্যা কম। তবে এর মাধ্যমে দ্বীনের মৌলিক শিক্ষা পেশ করা হয়েছে। ইমাম কুরতুবী (রাহ.) এ ব্যাপারে খুবই চমৎকার আলোচনা করেছেন। তিনি লেখেন, ‘আজানের শব্দ সংখ্যা কম হওয়া সত্তেও দ্বীনের মৌলিক বিষয় তথা আকীদার বিষয়গুলো সেখানে আলোচনা হয়েছে। আজানের সূচনা হয়েছে, আল্লাহু আকবার শব্দ দিয়ে। এর মধ্যে আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্ব ও বড়ত্বে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় শব্দ হচ্ছে ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। এখানে আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদ ও তার সঙ্গে শরিক না থাকার বিষয় আলোচনা হয়েছে। এরপর নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নবুওয়াতকে সাব্যস্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ’ অর্থাৎ আমি সাক্ষ দিচ্ছি মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসূল। এর পর দ্বীনের খুটি নামাজের আলোচনা হয়েছে। কারণ নামাজ ইবাদত হওয়া, নবী ছাড়া কারো মাধ্যমে জানা সম্ভব নয়। তারপর মানুষকে চির সফলতার দিকে ডাকা হয়েছে। এর দ্বারা মূলত আখেরাতের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। কারণ প্রকৃত সফলতা হচ্ছে, যা আখেরাতে লাভ হবে। শব্দগুলো দুইবার বলার কারণ হচ্ছে, বিষয়ের ওপর তাকিদ দেয়া। আজানের দ্বারা নামাজের ওয়াক্ত আসা, জামাতের দিকে আহ্বান জানানো হয়। এর দ্বারা দ্বীনের একটি প্রতীকেরও বহিঃপ্রকাশ ঘটে। আজানের জন্য কিছু শব্দকে নির্বাচন করা হলো, যা মুখে ঘোষণা করতে হয়; কোনো কাজকে নয়। কারণ, মুখে বলা সহজ, কাজ করে দেখানোর চেয়ে। যেন যে কোনো জায়গার, যে কেউ আজানের মাধ্যমে ইসলামের সুমহান বার্তা মানুষের কাছে পৌছে দিতে পারে। (মাআরেফুস সুনান, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-১৬৮)
আজান সম্পর্কে প্রচলিত ভুল:
আজান ও আজানের উত্তর নিয়ে আমাদের সমাজে কিছু প্রচলিত ভুল আছে। যেমন হাদিসে এসেছে, আজানের উত্তরে শ্রোতা ওই শব্দগুলোই বলবে যা মুয়াজ্জিন আজানে বলে। তবে হাইয়ালাস সালাহ ও হাইয়ালাল ফালাহ বলার সময় শ্রোতা বলবে ‘লা হাওলা ওলা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’। কিন্তু আমাদের সমাজের কাউকে কাউকে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ বলার সময় দরূদ পড়তে শুনা যায়। এটা মূলত ভুল। নিয়ম হলো আজান শেষে যে কোনো দরূদ পাঠ করে দোয়া পড়া। দ্বিতীয় যে ভুল সমাজে প্রচলিত, নবী করিম (সা.) এর নাম শুনার সময় আঙ্গুলে চুমু খেয়ে তা চোখে লাগানো। আজান ও ইকামত উভয় ক্ষেত্রেই এটা করা হয়। এর সূত্র হচ্ছে মুসনাদে দাইলামি নামক কিতাব। ওই কিতাবে প্রচুর হাদিসের নামে বানোয়াট কথা রয়েছে। তো এমন একটি বানোয়াট হাদিস হচ্ছে ‘হজরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) যখন মুয়াজ্জিনকে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ বলতে শুনলেন তখন তিনিও তা বলেন এবং তর্জনী আঙ্গুল দুটিতে চুমু খেয়ে তা চোখে বুলিয়ে দিলেন। (তা দেখে) রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার দোস্তের মতো আমল করবে তার জন্য আমার সুপারিশ অবধারিত।’ এই হাদিস সম্পর্কে হাদিস ও রিজাল শাস্ত্রের পণ্ডিত ব্যক্তিদের মতামত হচ্ছে বানোয়াট হাদিস। আমাদের দেশের মানুষের ধর্মীয় আবেগের প্রবলতার কারণে অনেকে বিশ্বাসই করতে পারেন না যে, হাদিস বানোয়াট বা মিথ্যা হতে পারে।
রাসূল (সা.) এর যুগের পর যখন আস্তে আস্তে ফেতনা ছড়াতে থাকে তখন বিভিন্ন গোমরা দল নিজেদের মতের স্বপক্ষে হাদিস বানাতে থাকে। আল্লাহ তায়ালাও তখন এমন ব্যক্তিদের দুনিয়াতে পাঠান, যারা দ্বীনের শিক্ষাকে হেফাজতের জন্য নিজেদের জীবন যৌবনকে ব্যয় করেছেন। যাদের মেধা ও সততা অতুলনীয়। উল্লিখিত হাদিসের ব্যাপারে ওই সকল হাদিসবেত্তাদের মত তুলে ধরছি। আল্লামা সাখাবী বলেন, এ হাদিস প্রমাণীত নয়। আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতি বলেন, মুয়াজ্জিনের শাহাদাতে নবী করিম (সা.) এর নাম শুনে আঙ্গুলে চুমু খাওয়া ও তা চোখে মুছে দেয়ার ব্যাপারে যতগুলো হাদিস আছে সবগুলোই জাল ও বানোয়াট। আল্লামা লাখনোভী (রা.) লেখেন ‘ইকামত বা অন্য কোথাও নবী করিম (সা.) এর নাম শুনে নখে চুমু খাওয়া (এবং তা চোখে বুলিয়ে দেয়া) সম্পর্কে কনো হাদিস বা সাহাবির কোনো আসর বা আমল বর্ণিত হয়নি।’ (বিস্তারিত জানতে এসব হাদিস নয় বইয়ের প্রথম খন্ডের ১০৭ পৃষ্ঠা দেখুন) আজান দেয়ার সময় কথা বললে ঈমান চলে যাওয়া বা চল্লিশ বছরের নেকি নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথাও শুনা যায়। এখানেও যে হাদিসগুলো পেশ করা হয় সব ভিত্তিহীন।
তবে আজানের জবাব দিতে হলে অন্য কোনো কথা বা কাজ বন্ধ রাখা দরকার এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই বলে আমলে আনার জন্য হাদিস বানিয়ে বলা কখনো সমর্থনযোগ্য নয়। বহু হাদিসের কিতাবে হাদিস বানানোর গোনাহ সম্পর্কে হুশিয়ারি এসেছে। রাসূল (সা.) বলেন, যে আমার ব্যাপারে কোনো মিথ্যা বলবে সে যেন নিজের ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নেয়। (সহীহ মুসলিম) হাদীসের মান না জেনে মানুষের সামনে বর্ণনা করাও এক ধরনের অন্যায়। তাই যে কোনো বিষয়ের হাদিস বলার আগে তা জেনে নেয়া।
আজান সম্পর্কে আরেকটি ভুল হচ্ছে ঝড় তুফানে আজান দেয়া। ওই অবস্থার দোয়া আছে তা পড়তে হবে। বা আল্লাহর বড়ত্বসূচক কোনো বাক্য স্মরণ করা যায়। কিন্তু আজান দেয়া যাবে না। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিক আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
Source: আলোকিত লক্ষ্মীপুর
May be an illustration of 1 person, dancing and text

ঢাকায় জ্বললো বাতি

 কথা কও, কথা কও।

অনাদি অতীত, অনন্ত রাতে
কেন বসে চেয়ে রও?
কথা কও, কথা কও।

অবশেষে বহুপ্রতীক্ষিত সেই ৭ই ডিসেম্বর এল। সাজসাজ সাড়া পড়ে গেল সারা শহরে। বিকাল ৫টা বাজতে না বাজতেই লোকে লোকারণ্য হয়ে গেল আহসানমঞ্জিলের আশপাশের এলাকা। নবাব আহসানউল্লার আমন্ত্রণে গণ্যমান্য অতিথিরাও এসে গেলেন আহসানমঞ্জিলে। ঐতিহাসিক এই ঘটনা উদ্বোধনের জন্য বাংলার ছোট লাট স্যার জন উডবার্নকে আগেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়াতে তার পক্ষ থেকে কলকাতা থেকে সি. ডাব্লিউ বোল্টন এসে পৌঁছালেন। ঢাকায় জ্বলে উঠল বিদ্যুত বাতি! বিজলী বাতি আবিষ্কারের তিন বছর পর ১৮৮২ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর এডিসন সাহেব সুইচ টিপে নিউ ইয়র্ক শহরের পার্ল স্ট্রিটে ৫৯ জন গ্রাহকের বাসায় বিজলী বাতি জ্বেলে দিলেন। এর উনিশ বছরের মাথায় ১৯০১ সালের ৭ই ডিসেম্বর বিজলী বাতির আলোয় ঝলমল করে উঠল আমাদের ঢাকা শহর। অবশ্য গোটা শহরকে তখন এর আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। তবে যেটুকু হয়েছিল, তাতেই ঢাকাবাসীর আনন্দের সীমা ছিল না। কারণ বিজলী বাতির কথা তারা শুনেছে মাত্র। সেই বাতির আলো পাওয়া তখনো তাদের জন্য ছিল অকল্পনীয়।এর আগে ঢাকার রাস্তায় জ্বলত কেরোসিনের বাতি, তাও সব রাস্তায় নয়। ব্রিটেনের রাণী ভিক্টোরিয়াকে ভারত সম্রাজ্ঞী হিসাবে ঘোষণা উদযাপনের জন্য ১৮৭৭ সালে ঢাকা শহরে বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি নানা উতসব আয়োজনের অংশ হিসাবে ওয়াইজঘাটে অবস্থিত তত্কালীন ঢাকা মিউনিসিপ্যাল অফিস থেকে চকবাজার পর্যন্ত রাস্তা আলোকিত করতে একশ’টি ল্যাম্পপোস্ট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। এর এক বছর পর কমিটির সদস্যদের চাঁদায় (চাঁদার মোট পরিমাণ সাড়ে ছয় হাজার টাকা) এসব ল্যাম্পপোস্ট বসানো হয়েছিল এবং এগুলোতে লাগানো হয়েছিল ৬০টি কেরোসিনের বাতি। প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা মিউনিসিপ্যালিটির লোক লম্বা লম্বা মই নিয়ে এসে জ্বেলে দিত এসব কেরোসিনের বাতি। বিদ্যুতের লোডশেডিং বলে কোন শব্দের সঙ্গে পরিচিত ছিল না ঢাকাবাসী। তবে একটু জোর হাওয়া দিলে বা ঝড়-বৃষ্টি হলেই এসব বাতি নিভে গিয়ে ঘুটঘুটে অন্ধকারে তলিয়ে যেত ঢাকার সব রাস্তা-ঘাট।
১৮৮৬ সালে শোনা গেল, ঢাকার নবাব খাজা আবদুল গনিকে স্যার উপাধি দেবে ব্রিটিশ সরকার। একথা শুনে নবাব খাজা আহসানউল্লাহ যারপরনাই খুশি হলেন। তিনি বললেন, "সদাশয় সরকার বাহাদুর যদি সত্যিই আমার পিতাকে এই ‘ইজ্জত’ প্রদান করে তবে কথা দিচ্ছি, ঢাকাবাসীদের আমি খুশি করে দেব।" সেই বছরই খাজা আবদুল গনিকে ব্রিটিশ সরকার ‘নাইট কমান্ডার অব স্টার অব ইন্ডিয়া’ উপাধি প্রদান করে। ভারতের বড় লাট লর্ড ডাফরিন ১৮৮৮ সালে ঢাকা পরিদর্শনে এসে নবাব আহসানউল্লাহর এই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কেরোসিনের সড়ক-বাতির পরিবর্তে গ্যাসের সড়ক-বাতি লাগানো কর্মসূচির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৮৯১ সালে নবাবের পক্ষ থেকে ঢাকা মিউনিসিপ্যাল কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্যাসের বাতি লাগানোর প্রস্তাব দেয়া হয়। তবে নবাবের সেই প্রস্তাবের বাস্তবায়ন হয়নি। ১৮৯৭ সালে সে আমলে নগরীতে সর্বাধিক প্রচারিত বাংলা পত্রিকা ‘ঢাকা প্রকাশে’ লেখা হয়, "আজ হইতে বারো বত্সর পূর্বে নবাব খাজা আহসানউল্লাহ ঢাকা শহরের সড়কে কেরোসিনের বাতির পরিবর্তে গ্যাসের বাতি লাগাইবার প্রতিশ্রুতি প্রদান করিয়াছিলেন। মিউনিসিপ্যাল কর্তৃপক্ষের ওপর তিনি আস্থা রাখিতে না পারায় সম্ভবত তাহার সে প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয় নাই। তবে এইবার নবাব সাহেবের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় নবাব খাজা ইউসুফ জান মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় আমরা আশা করিতেছি, তাহার সেই অবিশ্বাস দূরীভূত হইবে এবং নবাব সাহেবের সেই প্রতিশ্রুতির পূর্ণ বাস্তবায়ন ঘটিবে।"
রাস্তা আলোকিত করার যে প্রতিশ্রুতি নবাব আহসানউল্লাহ ঢাকাবাসীকে দিয়েছিলেন, তা তিনি কখনো ভোলেননি। তাই ঢাকার রাস্তায় বিজলী বাতি জ্বালবার জন্য ১৯০১ সালেই তিনি ঢাকা ইলেকট্রিক লাইট ফান্ড গঠন করে তাতে সাড়ে চার লক্ষ টাকা প্রদান করেন। সেই বছরই ৫ই জুলাই ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটির তত্ত্বাবধানে ‘দ্য ঢাকা ইলেকট্রিক লাইট ট্রাস্ট’ গঠন করা হয়। ট্রাস্টের পক্ষ থেকে পত্রিকায় প্রচারিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঢাকা শহরের রহমতগঞ্জ সড়ক, চকবাজার সার্কুলার রোড, মোগলটুলি রোড, নালগোলা রোড, বাবুবাজার রোড, কমিটিগঞ্জ রোড, আরমেনিয়ান স্ট্রিট, ইসলামপুর রোড, আহসানমঞ্জিল রোড, পাটুয়াটুলি রোড, বাংলাবাজার রোড, ডাল বাজার রোড. ফরাশগঞ্জ, লোহারপুল রোড, দিগবাজার রোড. ভিক্টোরিয়া পার্ক, লক্ষ্মীবাজার রোড, সদরঘাট রোড. শাঁখারিবাজার রোড. জনসন রোড. নবাবপুর রোড. রেলওয়ে স্টাফ কোয়ার্টার রোড. জামদানি নগর রোড ও রাজার দেউড়ি লেনে বিদ্যুত বাতি লাগানো হবে। ৭ ডিসেম্বর, ১৯০১। আহসানমঞ্জিল চত্বরে বানানো বিশাল মঞ্চের সবার মাঝখানে বসলেন স্যার বোল্টন, তার ডানদিকে বসলেন নবাব আহসানউল্লাহ, বামদিকে মিউনিসিপ্যালিটির কমিশনারবৃন্দ। বোল্টন সাহেব ঢাকার রাস্তায় বিদ্যুত বাতির ব্যবস্থা করার জন্য নবাব আহসানউল্লাহকে ধন্যবাদ জানিয়ে বললেন, "আজ থেকে ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটিরও দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেল। ঢাকার সরু সরু রাস্তাঘাট, অপর্যাপ্ত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার সঙ্গে এই বিদ্যুত বাতি বড়ই বেমানান। আমরা আশা করি, মিউনিসিপ্যালিটি এ বিষয়টির দিকে নজর দেবে।" এর পরই তিনি সুইচ টিপে বিজলী বাতি জ্বেলে দিলেন। প্রথম বিজলী বাতি জ্বলল ঢাকা শহরে। বহু নগরবাসী পরম বিস্ময়ে দেখল, বিনা তেলে, বিনা গ্যাসে জ্বলছে বাতি—আরো উজ্জ্বল, আরো স্থির।
প্রাপ্তি স্বীকার: Bengali Umbrella
দিব্যেন্দু শেখর কুমার
May be an image of 2 people, temple and text that says "EMU BENGALI UMBRELLA ৭ ডিসেম্বর, ১৯০১ প্রথম বিজলী বাতি জ্বলল ঢাকা শহরে"
All reaction

জীবন বদলে দেয় যেসব উপদেশ

 আল্লাহ তাআলা আমাদের দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন খেয়েদেয়ে ফুর্তি করার জন্য নয়, বরং কষ্ট করে কিছু কামাই করার জন্য। মনে রাখবেন, দুনিয়া কামাই করার জায়গা। আর জান্নাত হলো ফুর্তি করার জায়গা। দুনিয়া কষ্টক্লেশের নাম।

আর আখিরাত সুখ-শান্তির নাম। মহানবী (সা.) ওই সত্তা, যাকে কেন্দ্র করে আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিজগতের অস্তিত্ব দান করেন। তিনি খন্দক যুদ্ধে নিজে কোদাল হাতে পরিখা খননে ব্যস্ত অথচ জবান মোবারকে উচ্চারিত হচ্ছিল, ‘হে আল্লাহ! আপনি আনসার ও মুহাজির সাহাবাদের ক্ষমা করুন।’
আর পরিখা খননে তাদের কষ্টক্লেশ দেখে শুরুতেই সান্ত্বনার বাণী শোনালেন যে আমোদ-ফুর্তির জায়গা হলো আখিরাত, দুনিয়া নয়।
ফুর্তির জায়গা কোনটি আর আয়-রুজির জায়গা কোনটি তা নির্ণয় করতে পারলে ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক জীবন পরিচালনা করাও অতি সহজ হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।
দেখুন, একজন দুষ্ট ছাত্রও কিন্তু একসময় রাত জেগে লেখাপড়া করে। কারণ পরের দিন তার পরীক্ষা। সে এ ব্যাপারে অবগত যে এখন মেহনত করলে পরীক্ষায় পাস করবে।
পাস হলে চাকরি পাবে। বোঝা গেল, রাতের ঘুম হারাম করার পেছনে চাকরির চিন্তাই মূল কারণ। একজন দুষ্ট ছাত্রও যদি বুঝতে পারে রাত জেগে মেহনত করলে সে কী পাবে, তাহলে আমাদের কেন আখিরাতের বুঝ আসে না। লোকেরা যদি বুঝতে পারে, মেহনত করলে কিছু পাওয়া যাবে, আমাদের কেন এই বুঝ আসে না যে মেহনত করলে আখিরাত পাব। আমাদের আয়ুর পরিধি অনেক কম।
জীবন একবারই লাভ হয়, বারবার নয়। অতএব, যত পারা যায় আখিরাতের জন্য মেহনত করতে হবে। কারণ আমাদের সম্পর্ক রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে। মনে রাখবেন, রাসুল (সা.)-এর আগমন কোনো বিশেষ অঞ্চলের জন্য নয়, বরং পুরো দুনিয়ার জন্য। অজুহাত নয়, সচেতন হোন : আমাদের জজবা (ধর্মীয় আবেগ) ও মেহনত অনুপাতেই আল্লাহ তাআলা আমাদের সাহায্য করবেন। দুনিয়ায় আমাদের আগমন নেক কাজ করার জন্য। সুতরাং নেক কাজ করাই স্বভাবে পরিণত করতে হবে। এই শ্রমবাজারে বিভিন্ন অজুহাতে শ্রম থেকে বিরত থাকলে পারিশ্রমিক পকেটে আসবে না। দেখুন, একজন শ্রমিক কিন্তু জ্বর, সর্দি ও কাশির অজুহাত দিয়ে কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকেন না। কারণ তাঁর জানা আছে, শ্রম দিলেই কিছু আসবে, নয়তো রিক্তহস্তে কালাতিপাত করতে হবে। ফলে তিনি কাজের ব্যাপারে সচেতন থাকেন। খোঁড়া কোনো অজুহাত খোঁজেন না, অবহেলাও করেন না। মনে রাখবেন, অজুহাত দুনিয়ার বেলায় চলতে পারে, আখিরাতের বেলায় নয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যা করেছ, তা-ই পাবে। গন্তব্যে গেলে তা-ই উশুল হবে।’ (সুরা আন নাজম, আয়াত : ৩৯)
পাপমুক্ত থাকা সহজ : আমরা মনে করি, গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা অনেক কঠিন। অথচ এটা অনেক সহজ। আল্লাহ তাআলা বান্দাকে কোনো কঠিন বিধান দান করেননি, যা তার সামর্থ্যের মধ্যে, তা-ই দান করেন। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ সামর্থ্যের বাইরে কাউকে বাধ্য করেন না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৮৬)
যখন অন্তরে আল্লাহর ভয় জমে যাবে তখনই গুনাহ থেকে বাঁচার পথ সুগম হবে। বান্দা হিসেবে চেষ্টা আপনাকেই করতে হবে। তবেই আল্লাহ বাঁচাবেন। চেষ্টা করে দেখুন, আল্লাহ এমনভাবে বাঁচাবেন, যা কল্পনাও করতে পারবেন না। গুনাহ থেকে বাঁচার সত্যিকারের ইচ্ছা থাকলে আল্লাহ উপকরণ তৈরি করে দেবেন। আল্লাহ বান্দাকে মাহরুম করতে পারেন না। তিনি তো অতিশয় দয়ালু। মেহনতের পথ ও পন্থা ভুল হলে ভিন্ন কথা।
আয় অনুপাতে ব্যয় : অনেকে বলে, ‘চাকরি করি, পরিবার চলে না।’ কিন্তু কেন? আয় অনুপাতে ব্যয় করুন। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন। মনে রাখবেন, দুনিয়া কামানোর জায়গা, খাওয়ার জায়গা নয়। হারাম ছেড়ে হালাল অবলম্বন করুন। হারাম পোলাও-বিরিয়ানি ছেড়ে হালাল জাউ খান। হারাম কোরমা ছেড়ে হালাল ডাল খান। দেখবেন, খুব চলবে। আবার শান্তিও পাবেন। এটাও না পারলে রোজা রাখুন। তবু দৃঢ়প্রতিজ্ঞা করুন, হারাম খাব না, গুনাহ আমাকে ছাড়তেই হবে। শুরুতে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতেও পারেন। কিন্তু অতিশিগগির কেটে যাবে। এমনভাবে রিজিকের দুয়ার খুলে যাবে, যা কল্পনাতীত। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার জন্য সব কিছু সহজ করে দেন।’ (সুরা তালাক, আয়াত : ৩)
টুকটাক সমস্যা আসতে পারে, তবে পেরেশান হতে নেই। বরং আফিয়াতের দোয়া করুন। ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই কষ্টের সঙ্গে স্বস্তি আছে। নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই কষ্টের সঙ্গে স্বস্তি আছে।’ (সুরা ইনশিরাহ, আয়াত : ৫-৬)
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘দুনিয়ায় সর্বাধিক পরীক্ষার সম্মুখীন হলেন নবীরা, এরপর যারা তাঁদের যত বেশি অনুসরণকারী।’ (মুসনাদে বাজ্জার, হাদিস : ১১৫০)
দুনিয়া সমস্যার জায়গা : গুনাহ থেকে বাঁচতে চাইলে কিছু ঝড়ঝাপটা ও সমস্যা আসতে পারে। তবু হিম্মত হারানো যাবে না। কারণ সমস্যাপূর্ণ জায়গার নামই হলো দুনিয়া। শেষ কথা হলো, অন্তর ও স্বভাব অপবিত্র হলে গুনাহর সুযোগ ও স্থান তালাশ করে। আর পবিত্র হলে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করে।
অতএব, আসুন দৃঢ়প্রতিজ্ঞা করি, যতই ক্ষতি বা কষ্ট হোক না কেন, অবশ্যই গুনাহ থেকে বিরত থাকব। আল্লাহ তাআলা আমাদের এবং আপনাদের সব ধরনের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সূত্র : আল আবরার

মানুষ যে ছয় শাস্তির মুখোমুখি হয় গুনাহের কারণে

 আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ অমান্য করাই গুনাহ বা পাপ। ছোট হোক বা বড়, গুনাহকে হালকা ভাবা উচিত নয়। কারণ ছোট গুনাহ ধীরে ধীরে বড় গুনাহের দিকে নিয়ে যায় এবং গুনাহ করতে করতে একটা সময় গুনাহকারী ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়। গুনাহের বহুবিধ ক্ষতি আছে।

১. রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়
রিজিক আল্লাহপ্রদত্ত অনেক বড় নিয়ামত। আর মানুষ নিয়ামত থেকে তখনই বঞ্চিত হয়, যখন অকৃতজ্ঞ হয়ে সৃষ্টিকর্তার নাফরমানিতে লিপ্ত হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের (নিয়ামত) বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয়ই আমার আজাব বড় কঠিন।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ৭)
নবী কারিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই মানুষ তার গুনাহের কারণে রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০২২)
২. ইলম থেকে বঞ্চিত হওয়া
ইলম আল্লাহপ্রদত্ত নূর। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি তার জন্য এক আলোর ব্যবস্থা করেছি, যা নিয়ে সে মানুষের মধ্যে চলে।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১২২)
আর গুনাহ ওই নূর বা আলোকে নিভিয়ে দেয়, এ জন্য গুনাহের কারণে মানুষের জ্ঞানবুদ্ধি লোপ পায়। অনেক কিছু শিখেও ভুলে যায়। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, অবশ্যই আমি মনে করি, মানুষ তার শিক্ষা করা ইলম ভুলে যায় তার কৃত গুনাহর কারণে। (জামিউ বয়ানিল ইলম : ১/১৯৬)
৩. অন্তরে কালো দাগ পড়ে যায়
গুনাহের দরুন মানুষের অন্তরে মরিচা ধরে যায়। হৃদয়ে কালো দাগ পড়ে যায়। ফলে তা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। তখন ভালো কথা আর ভালো লাগে না, চাইলেই ভালো কাজে মন বসানো যায় না। রাসুল (সা.) বলেন, “যখন কোনো মুমিন গুনাহ করে তখন তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে, তারপর সে যখন তাওবা করে এবং গুনাহ থেকে বিরত থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, তখন তার অন্তর পরিষ্কার হয়ে যায়। আর যখন মুমিন আবারও গুনাহ করে তখন অন্তরের কালো দাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে অন্তরে আল্লাহর কোরআনে বর্ণিত ‘রাইন’ তথা মরিচা প্রভাব বিস্তার করে।” ( মিশকাত, হাদিস : ২২৮১)
৪. কর্ম সম্পাদন কঠিন হয়ে যায়
যারা আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর অনুগত হয়ে চলে, আল্লাহ তাআলা তাদের সময়ে বরকত দান করেন। ফলে খুব সহজেই, খুব কম সময়েই তারা নিজ নিজ কাজ সম্পন্ন করতে পারে। আর যারা সৃষ্টিকর্তার নাফরমানিতে লিপ্ত থাকে তাদের মধ্যে অলসতা জেঁকে বসে আর তাদের জন্য কর্ম সম্পাদন কঠিন হয়ে পড়ে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার যাবতীয় কাজ সহজ করে দেন।’ (সুরা তালাক, আয়াত : ৪)
৫. গুনাহ ছাড়া কঠিন হয়ে যায়
গুনাহের প্রথম পর্যায়ে আমরা ভাবি, আজ না হয় গুনাহটা করেই ফেলি। তারপর তা ছেড়ে দিয়ে তাওবা করে ফেলব। কিন্তু বাস্তবতা পুরোপুরি উল্টো। কারণ একটি গুনাহ অন্য গুনাহের জন্ম দেয়। একটি গুনাহের কারণে আরেকটি গুনাহ সংঘটিত হয়। ফলে গুনাহ ছেড়ে রবের দিকে ফিরে আসা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। এ জন্য যথাসম্ভব নিজেকে গুনাহ থেকে বিরত রাখা। গুনাহ সংঘটিত হয়ে গেলে কালক্ষেপণ না করে তাওবা করে নেওয়া উচিত। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য গুনাহ পরিত্যাগ করো।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১২০)
৬. পরকালে শাস্তির মুখোমুখি হওয়া
গুনাহের কারণে দুনিয়াতে যেভাবে নানা রকম সংকট আর সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে, তেমনি পরকালেও আল্লাহ তাআলার শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা প্রকাশ্য ও গোপন পাপ বর্জন করো, যারা পাপ করে, অচিরেই তাদের পাপের সমুচিত শাস্তি দেওয়া হবে।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১২০)
তাই সময় থাকতেই গুনাহ ছেড়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসি। মহান আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।
সূত্র: ইসমাঈল সিদ্দিকী

কলার ছোবড়া কি খাওয়া যায়?

     Is it safe to eat the banana peel?

Bananas are one of the most widely consumed fruits in the world. They are known for their sweet and soft flesh, but what about the peel? Have you ever considered eating the banana peel? While it may seem strange at first, many people have started to consume banana peels as a way to reduce food waste and increase the nutritional value of their meals. But the question remains: is it safe to eat the banana peel?
The short answer is yes, banana peels are safe to eat. In fact, they are a great source of fiber, vitamins, and minerals. However, there are a few things you should know before biting into a banana peel.
First, it's important to wash the banana peel thoroughly before eating it. Like any fruit or vegetable, the peel can be contaminated with pesticides, dirt, or bacteria. By washing it, you can reduce your risk of ingesting any harmful substances.
Secondly, banana peels are not as tasty as the fruit itself. They have a bitter taste and a tough texture that can be difficult to chew. Therefore, it's best to consume them in a way that makes them more palatable. One popular method is to blend them into a smoothie. You can also cook them in various ways, such as boiling or frying, to make them softer and more flavorful.
One of the main benefits of eating banana peels is their high fiber content. A medium-sized banana peel contains around 3 grams of fiber, which can help regulate digestion and keep you feeling full for longer. Additionally, banana peels are a good source of vitamins B6 and B12, as well as potassium and magnesium.
Eating banana peels may also have some health benefits. For example, some studies have shown that they can help lower cholesterol levels, improve insulin sensitivity, and reduce inflammation. However, more research is needed to confirm these findings.
While banana peels are generally safe to eat, there are some people who should avoid them. If you have an allergy to latex, you may also be allergic to bananas, including the peel. Additionally, people with digestive issues, such as irritable bowel syndrome (IBS), may find that eating banana peels exacerbates their symptoms.
Eating banana peels is safe and can provide some health benefits. However, they are not as tasty as the fruit itself and may not be suitable for everyone. If you do decide to eat them, make sure to wash them thoroughly and find a way to prepare them that makes them more palatable. As with any new food, it's always a good idea to start with small amounts and monitor your body's response.
May be an image of 1 person and fruit

All reaction

সারা দিন ঘুম পায়, এসব সমস্যায় ভুগছেন না তো?

 বিশ্রামের ঘাটতি হলে ক্লান্তিবোধ থেকে ঘুম ঘুম ভাব বাড়ে

শরীরের জন্য পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন আছে। তবে দিনে চোখে-মুখে ঘুম ঘুম ভাব লেগে থাকাটা বেশ অস্বস্তিকর। প্রাত্যহিক কাজকর্মেও তা বেশ অসুবিধার সৃষ্টি করে। কিন্তু কেন এমন হয়?
জীবনযাত্রার ধরন বা নানা ওষুধের কারণে যেমন সারা দিন ঘুম ঘুম পেতে পারে, তেমনি কিছু জটিল রোগের লক্ষণও অতিরিক্ত ঘুম ভাব।
সাধারণত অতিরিক্ত পরিশ্রম, রাতে পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব বা বিশ্রামের ঘাটতি হলে ক্লান্তিবোধ থেকে ঘুম ঘুম ভাব বাড়ে। শরীরে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা থাকলেও এমনটা হতে পারে। অতিরিক্ত স্থূলতা ঘুম ভাবের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। খাবারের কিছু উপাদান যেমন আয়রন, ভিটামিন ডি ইত্যাদির ঘাটতি হলে কিংবা খাবারদাবার অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ করলে অবসাদ বা ঘুম ভাব হতে পারে। অনেকেই অতিমাত্রায় ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করেন, তারাও কিন্তু এমন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।
মানসিক চাপ বা বিষণ্নতার মতো কিছু মানসিক সমস্যা দিনের বেলায় ঘুম ঘুম ভাবের কারণ হতে পারে। আবার মানসিক সমস্যার জন্য যেসব ওষুধ দেওয়া হয়, সেগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও এ রকমটা হতে পারে। এ ছাড়া অ্যালার্জি বা স্নায়ুর সমস্যার জন্য ব্যবহৃত কিছু ওষুধের কারণেও রোগী অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাবের শিকার হতে পারেন। মদ্যপান দিনের বেলায় ঘুমভাবের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
কিছু রোগের উপসর্গ হতে পারে দিনের বেলায় অতিরিক্ত ঘুম ভাব। যেমন হাইপোথায়রইডিজম বা থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি হলে রোগী ক্লান্তি বোধ করেন, সঙ্গে অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব থাকে। কিডনি বা লিভারজনিত সমস্যা হলেও দিনের বেলায় মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের ভাব হতে পারে। মস্তিষ্কের কিছু রোগের কারণেও হতে পারে এই সমস্যা। হার্টের কিছু রোগ, এমনকি ক্যানসার থেকেও হতে পারে অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব।
আরেকটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে স্লিপ অ্যাপনিয়া সিনড্রোম। অতিরিক্ত স্থূলতার সঙ্গে সম্পর্কিত এই রোগে আক্রান্তরা সারা রাত প্রচণ্ড শব্দে নাক ডাকে, তাদের ঘুমও নির্বিঘ্ন হয় না। অসম্পূর্ণ ঘুমের কারণে সারা দিনই ঘুম ঘুম ভাব বা অল্পতেই ঘুমে ঢলে পড়ার সমস্যা হতে পারে। আরও কিছু বিরল সমস্যা, যেমন ক্যাটাপ্লেক্সি, নারকোলেপসি ইত্যাদি কারণেও হঠাৎই ঘুমে ঢলে পড়ার সমস্যা দেখা যায়।
তাই দিনের বেলায় অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব হলে পেছনের কারণটি জানা দরকার। কারণ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে অনেক ক্ষেত্রেই এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। পুষ্টিকর খাবার, পর্যাপ্ত তরল, নিয়ন্ত্রিত জীবনপদ্ধতি, অতিরিক্ত স্থূলতা পরিহার, দীর্ঘমেয়াদি রোগের সঠিক চিকিৎসা ইত্যাদি বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়াও জরুরি। প্রয়োজনবোধে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
Source: ডা. শাহনূর শারমিন
May be an image of cat

All r