Friday, April 26, 2024

প্রতিপত্তি আর নিশ্চিত নিদ্রা

 এক কোটিপতি ব্যবসায়ী ভদ্রলোক দামী গাড়ি চেপে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন। হঠাৎ দেখেন ফুটপাতের এক কোণে ইটের ওপর মাথা রেখে একটা লোক অঘোরে ঘুমোচ্ছে। তিনি অবাক, এই চৈত্রের চড়া গরম, গাড়ির আওয়াজ, ধুলো বালির মধ্যে লোকটার ঘুম আসে কিভাবে?

তিনি গাড়ি দাঁড় করিয়ে লোকটির কাছে গিয়ে ডাকলেনঃ
—এই যে শুনছেন?
লোকটি ধড়ফড় করে উঠে বলে বললো,
— অ্যাঁ, কি হলো?
—কিছু হয়নি। জিজ্ঞেস করছি আপনি এখানে ঘুমোচ্ছেন কেন? ঘর বাড়ি নেই আপনার?
— অ্যা! ঘুম পেয়েছিলো স্যার। বাড়ি আছে, গ্রামে। ভোরে উঠে কলম বিক্রি করতে শহরে আসি। বিকেলে আবার চলে যাই।
ব্যবসায়ী ভদ্রলোক কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলেন
— তা আজ কতো টাকার কলম বিক্রি হলো?
— দেড়শো টাকার।
— এতে সংসার চলে?
— হ্যাঁ, সংসার চালালেই চলে। সন্ধ্যেতে পাড়ার কানাইদার গ্যারাজে সাইকেল মেরামতের কাম করি তো। কিছু টাকা হাতে আসে। তবে কি জানেন, আমার মেয়েটার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। কদিন থেকে জ্বরে ভুগছে।
ব্যবসায়ী ভদ্রলোক পাঁচশো টাকা বের করে বললেনঃ
—এই নাও। মেয়ের জন্য ফল কিনে নিয়ে যেও।
লোকটি অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো
— আমার কাছে টাকা আছে স্যার। এমনি এমনি নেবো কেন? আপনি আমার থেকে বিশ টাকার কলম কিনুন। দেখুন কলমের কালিতে কেমন সুন্দর গন্ধ ছাড়ে।
ব্যবসায়ী ভদ্রলোক কিছুক্ষন চিন্তা করে বললেনঃ
—না। শোনো তুমি সৎ। তাই আমি তোমাকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিতে চাই। তবে এমনি এমনি নয়। আমার একটা কাপড়ের হোলসেল দোকান আছে। সেখান থেকে তুমি কাপড় কিনে বিক্রি করবে। যদি দেখি তুমি সত্যি সত্যি পরিশ্রম করছো তাহলে তিন মাস পর আরও পঞ্চাশ হাজার দেবো। তা দিয়ে তুমি দোকান ভাড়া করবে।
লোকটি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো
— কিন্তু আমাকে বিশ্বাস করে এতো টাকা দেবেন কেন স্যার? আপনি তো আমাকে চেনেনও না!
ভদ্রলোক মৃদু হেসে বললেনঃ
— আমি এই শহরের সব থেকে বড়ো ব্যবসায়ী। এই টাকা আমার কাছে সামান্য। আমার সামান্য টাকা দিয়ে তোমার যদি অনেকটা উপকার হয় তাহলে আমি দেবো না কেন?
এরপর কয়েক বছর কেটে গেছে। সেই কলমওয়ালার এখন শহরে তিনটে কাপড়ের দোকান। আরও অন্যান্য ব্যবসা। দুটো, চার চাকার গাড়ি। তিন চারটে ফ্ল্যাট, বাড়ি।
একদিন সেই উপকারী ভদ্রলোক ডাক্তারের চেম্বারে গেছেন ডাক্তার দেখাতে, দেখেন সেই কলমওয়ালা লোকটিও বসে। তিনি ডাকলেন
— এই যে ভাই। ব্যাপার কি? তুমি এখানে?
কলমওয়ালা লোকটি ভদ্রলোকের পায়ের ধুলো নিয়ে বললোঃ
— স্যার, চেক আপের জন্য এসেছি। প্রতি মাসেই আসি। সুগার,প্রেসার সবই ধরেছে। ইদানিং ঘুম একদম হয়না।
উপকারী ভদ্রলোক মুচকি হেসে বললেনঃ
— সেকি! সেদিন তো দেড়শো টাকা নিয়েও নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছিলে রাস্তায়। আর আজ ACর নিচে নরম বিছানাতেও তোমার ঘুম আসছে না?
— আসলে স্যার তখন আমার হারানোর ভয় ছিলো দেড়শো টাকা। এখন সেটা কোটিতে দাঁড়িয়েছে। এখন আছে স্ট্যাটাস হারানোর ভয়। আগে নিজের বলতে ছিলো বউ আর মেয়ে। এখন অনেক আত্মীয় বন্ধু বান্ধব জুটেছে। তাদের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে চলতে হয়। আগে ডাল ভাত হলেই চলতো, এখন বাসমতি চাল লাগে, মাছ লাগে, মাংস লাগে। যে বউ সুতির শাড়ি পেলেই খুশি হতো সে এখন হীরের গয়না পেলেও খুশি হয়না। মেয়েটা সুস্থ হয়েছে ঠিকই কিন্তু এখন তার চাহিদা অনেক। না পেলে ডিপ্রেশনে চলে যায়। এ কেমন অসুখ বলুন দেখি? এতো চিন্তা নিয়ে ঘুম হয়?
উপকারী ভদ্রলোক বললেনঃ
— তোমার সমস্যায় আমিও ভুগতাম। তখন আমার গুরুদেব বললেন, "কোনো গরিব সৎ নিশ্চিন্ত মনের লোককে অনেক টাকা দিয়ে উপকার কর, তাহলেই দেখবি তোর মনে শান্তি আসবে। ভালো ঘুম হবে। শরীর সুস্থ হবে।"
কলমওয়ালা অবাক হয়ে বললেনঃ
— সেই জন্যই কি আপনি!
ব্যবসায়ী ভদ্রলোক মৃদু হাসলেন কেবল।
"কলমওয়ালা" ঝটপট করে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো রাস্তায়।
তার চোখ এখন শুধু ফুটপাতের দিকে.
নিশ্চিন্তের দিকে!
-Adapted
May be an image of flower
All reactions:

No comments:

Post a Comment