Tuesday, September 24, 2019

কলমী শাক[ Ipomoea aquatica] ও কোলন ক্যান্সার


“এলমেলো বায়ে দোলে নিরবধি কলমি লতা
তারি বুকে কাঁপে বিলের বুকের গোপন কথা
বিহানের রোদে টলমল করে বিলের পানি
বুক জুড়ে ভাসে রূপে ডগমগ কলমি রানী”-বন্দে আলী মিয়া

কলমি রানী শুধু রূপেই নয়, গুণেও অতুলণীয়। পড়ুন কলমি রানীকে নিয়ে কথাগুলোঃ
কলমি শাক এশিয়ার প্রায় সব দেশেই জনপ্রিয়। সবুজ এ শাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ পাওয়া যায়।
নিয়মিত খাদ্য তালিকায় এ শাকটি রাখলে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়। যেমন-
১. কলমি শাকে খুব সামান্য পরিমাণে ক্যালরি থাকে। এটি ফাইবারের দারুণ উস। নিয়মিত এ শাক খেলে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানো যায়।
২. কলমি শাক উপস্থিত ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে দারুণ কার্যকরী। এটি হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। নিয়মিত এ শাক খেলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমে।  
৩. নিয়মিত কলমি শাক খেলে হৃদরোগজনিত জটিলতা ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে। এতে থাকা ফাইবার অতিরিক্ত কোলেস্টেরল কমায়। 
৪. শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে কলমি শাক। এতে থাকা আয়রন থাইরয়েডের কার্যকারিতা ঠিক রাখে। এছাড়া মেটাবোলিজম বা বিপাকক্রিয়া বাড়ানো, তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখা এবং লোহিত রক্তকণিকা উতপন্ন করতেও কলমি শাকের জুড়ি নেই।
৫. কলমি শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে। নিয়মিত এ শাক খেলে দৃষ্টিশক্তি উন্নত হয়।
Ipomoea aquatica use as carminative(পেট ফাঁপা রোধক), lessens inflammation; useful in fever, Jaundice, biliousness, bronchitis, liver complaints in Yunani system of medicine; also use in nervous and general debility of females in South East Asian countries 
সূত্র: https://en.wikipedia.org/
হেলদিবিল্ডার্জড

একটি করুন মৃত্যু ও স্মৃতি বিভ্রমঃ বাস্তব একটি ঘটনা

ছোটবেলা থেকেই তাকে আমরা জসীম পাগলা বলেই জানি। খাওয়া নেই, নাওয়া নেই, কাপড় চোপড়ের ঠিক নেই, ঘুম নেই, রাত বিরাতে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানো, ভাঙা কবরের ভেতর মাটি ফেলে সেটাকে পুরে দেয়া, ইত্যাকার অবস্থা নিয়ে জসীম পাগলার নিশিদিন কাটে। প্রা্ইমারী স্কুল থেকে হাই স্কুল এমনকি কলেজ পর্যন্ত পড়লাম- জসীম পাগলার পাগলামী বাড়ে বৈ কমে না। অনেক সময় মিনিট ২/১এর জন্য প্রকৃতিস্থ হলে ভাল ভাল কথা বলে আর অল্প সময়েই তা বিলীন হয়ে যায়। ছেলে মেয়ে আছে অনেকগুলো। জসীম পাগলা বগুড়ার বিখ্যাত ভান্ডারী পরিবারের বড় জামাই। আমাদের গ্রাম শিকারপুরেই তার বাস মন্ডল পাড়ায়। সেই পাড়ায় আমাদের মত কিশোরদের আড্ডা চলতো নিয়মিত। জসীম পাগলার এক ছেলে বাবলু আমার সমবয়সী। জসীম পাগলার কবরের জায়গাও নির্দিষ্ট করা আছে। ইটে সেই বাঁধানো জায়গার মাথার দিকে একটা এপিট্যাফ বা সমাধি-লিপি আছে সেখানে মৃত্যু সম্পর্কে অনেক ভারী ভারী কথা লেখা রয়েছে। আমি আমার ২ বছরের বড় ভাই নোমান- ২জনে মৃত্যু সম্পর্কে সেই ভারী ভারী কথাগুলো পড়তাম। কথাগুলোর ২/১টি ছন্দ এখনো মনে আছে। “ভাইগো, উড়িয়া যাইবে প্রাণ পাখী পড়িয়া রইবে দুনিয়া, জানিবে নিশ্চয়-গোর গোর আজাব, ছের ছের মউত-জানিবে নিশ্চয়-”
কিন্তু আমার Inquisitiveness কাটেনা। জসীম পাগলা কেন পাগলা নামে পরিচিত? সেকি ভাল ছিল না? অতো বড় ভান্ডারী পরিবারের মানুষেরা তো এক পাগলার সাথে মেয়ের বিয়ে দিতে পারে না? এসব প্রশ্ন আমার মনে ঘুরতেই থাকে। একবার বড় ভাইয়ের ইংরেজী “অ্যা ক্লাস বুক অব বোটানী” বই জসীম পাগলাকে পড়তে দিলে খেয়াল করলাম জসীম পাগলা অবলীলায় শুদ্ধ উচ্চারণে সেটি পড়ছে এভং দারুন ফ্লুয়েন্সী নিয়ে। আমার Inquisitiveness বেড়েই চলেছে। না? প্রশ্নটার উত্তর খুঁজতে হবে। কেন তাকে পাগলা বল হয়। তা’ কাকে জিজ্ঞেস করবো? খুঁজে পেলাম না। ইতোমধ্যেই আমি ইন্টারমিডিয়েটের ১ম বর্ষের ছাত্র। দেশে মুক্তিযুদ্ধও শুরু হয়েছে। ডিসিশন নিলাম আব্বাকে জিজ্ঞেস করবো। আব্বা জসীম পাগলার চেয়ে বছর চারেকের বড়। আব্বার সাথে আমার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হতো। আব্বা ডাক্তার হওয়ার সুবাদে আমাকে উনি মানব শরীর বিষয়ে প্রত্যক্ষ জ্ঞান দিয়েছিলেন যেটা আমি এখনো মনে রেখেছি। আমার স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও মানব শরীর বিষয়ে প্রত্যক্ষ জ্ঞান বিশেষ কাজে দিয়েছে, এখনো হেমিওপ্যাথি প্রাকটিসে কাজে দিচ্ছে। এই মহান শিক্ষককে আমি মনের মণিকোঠায় তুলে রেখেছি। জসীম পাগলাকে ঘিরে আমার প্রশ্ন একদিন আব্বাকে করলাম। আব্বা বল্লেন, তাহলে শোনঃ
“জসীম মেধাবী ছাত্র ছিল। এন্ট্রান্স পোশের পর ও জলপাইগুড়ি বৃটিশ মেডিক্যাল স্কুলে পড়তে যায়। পড়া শেষ হলে ও বগুড়ায় বাড়ীতে চলে আসে ও প্রাকটিস শুরু করে। অল্প দিনেই ওর প্রাকটিস প্রসার পায়। আশপাশের গ্রামের লোকেরা তার সেবা পেয়ে ধন্য হতে থাকে। তখন আমাদের অঞ্চলে সিসি ফ্লাই (setse Fly) বাহিত কালাজ্বরের প্রাদুর্ভাব ছিল। অনেকে জ্বরে ভুগে মারা গিয়েছে আবার অনেকে চিকিতসায় ভালোও হয়েছে। কিন্তু তখন কালাজ্বরের একমাত্র চিকিতসা ছিল ব্রক্ষ্মচারী ইঞ্জেকশান দেয়া আর সেটা ছিল খুবই ইফেক্টিভ। আমি অব্বার কথাগুলো দারুন মনযোগে শুনছিলাম।
জসীমের আদরের ভাগ্নের একবার কালাজ্বর হলো। চিকিতসক তারই বড় মামা ডাক্তার জসীম উদ্দিন মন্ডল। ভাগ্নের চিন্তা কিসের আরো রয়েছে মামার কাছে ব্রক্ষ্মচারী ইঞ্জেকশান। আল্লাহ নিশ্চয়ই ভাল করবেন। ভাগ্নেকে মামার কাছে আসা হলো। মামা চিকিতসা দেবেন। মামা ভাগ্নেকে অনেকগুলো কথা জিজ্ঞেস করবার পর সিদ্ধান্ত নিলেন ব্রক্ষ্মচারী ইঞ্জেকশান তাকে পুশ করবেন। নিয়মমাফিক ডাক্তার জসীম উদ্দিন মন্ডল সিরিঞ্জ রেডী করলেন এবং আদরের ভাগ্নের শরীরে পুশ করলেন। পুরো ওষুধ ভাগ্নের শরীরে যাওয়ার পর ভাগ্নে অল্প নড়লো, আর একেবারে নিশ্চুপ হয়ে পড়ে রইলো। ভাগ্নের সাড়া নেই। বড় মামা ডাকছে, “বাবা ওঠ।” আমার কাজ শেষ। “ওঠ বাবা!” কিন্তু ভাগ্নে ততক্ষণে মৃত্যুর হীমশীতল স্পর্শে চলে গেছে পরপারে। কেন? ডাক্তার মামা বিলাপ করছে। আদরের ভাগ্নেকে কী আমি মেরে ফেললাম। ভাগ্নে মারা গেছে অ্যানাফাইল্যাক্টিক শকে (Anaphylactic shock) । মামার ব্রেনে শর্ট সার্কিট দেখা দিয়েছে। একটু প্রকৃতিস্থ হলে মামা ভালো করে দেখলেন ভাগ্নেকে তিনি ব্রক্ষ্মচারী ইঞ্জেকশান না দিয়ে পাশে আরেকটি অ্যাম্পুল থেকে ভুল ইঞ্জেকশান পুশ করেছেন। ফলটি হয়েছে মারাত্মক। ভাগ্নের করুন মৃত্যু, মামার হাতে। ডাক্তার জসীম উদ্দিন মন্ডল বিলাপ করতে লাগলেন, “আমি এ কী করলাম। আদরের সোনাকে নিজেই মেরে ফেল্লাম?” “আমি এ কী করলাম। আদরের সোনাকে নিজেই মেরে ফেল্লাম?” ব্যস! জসীম ওই যে অপ্রকৃতিস্থ হলো, আর স্বাভাবিকতায় ফেরেনি। গাঁয়ের মানুষের কাছে জসীম “পাগল” খ্যাতি পেল।”
আব্বার বলা শেষ হলে আমি খেয়াল করলাম আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। ভয় পেলে যেমনটা হয়, গা ঘামছে।
এর পর জসীম পাগলা আরো অনেক দিন বেঁচে ছিলেন। কিন্তু উনি আমার কাছে আর পাগলা বিশেষন পান নি। তিনি আমার কাছে ছিলেন শ্রদ্ধাভাজন চাচা। যদিও তিনি অনেকের কাছে পাগলা নামেই পরিচিত ছিলেন। কারণ, তারা চাচার করুন কাহিনীটা জানতো না।
আরো পরে একদিন বড় ভাই ফোন করে জানালেন জসীম চাচা ইন্তেকাল কছেন। তার কবরের নির্দিষ্ট জায়গাতেই তাকে রাখা হয়েছে। তার কবরের এপিট্যাফটির অনেক কিছুই পড়া না গেলেও এখনো সেটি আছে, সেই লেখাগুলো, “ভাইগো, উড়িয়া যাইবে প্রাণ পাখী পড়িয়া রইবে দুনিয়া, জানিবে নিশ্চয়-গোর গোর আজাব, ছের ছের মউত জানিবে নিশ্চয়-” আমার কাছে নিঃশব্দে ভেসে আসে। মৃত্যুকে মনে হয় আমার শিয়রে। আরো মনে হয় অনেক আগে পড়া সেই কথাগুলো-“Wafting fragrance can’t be prevented with a fence!” বাতাসে ভেসে আসা সুগন্ধ কেউ বেড়া দিয়ে আটকাতে পারেনা। আমি যেন মৃত্যুর ওয়াফটিং ফ্র্যাগর্যানন্স টের পাচ্ছি যদিও মৃত্যুটা এক “ভয়াবহ” ব্যাপার!

Sunday, September 15, 2019

প্রবাদের দেশ, বাংলাদেশ

মানুষের জীবনের বহু দিনের অভিজ্ঞতা, ভুয়ো-দর্শন এসবের মাধ্যমে প্রবাদ ও প্রবচনের প্রসার ঘটে। বিশাল বিস্তৃত পৃথিবী, নানা বর্ন, নানা ধর্ম, নানা জাতি, নানা সামাজিক এবং সাংসারিক আবহাওয়ার মধ্যেই মানুষ বেড়ে ওঠে। সেই কারণেই তাদের অভিজ্ঞতা ও প্রবাদও বিচিত্র। তবে প্রবাদে দেশকে চেনা যায়, জানা যায়। জার্মান প্রবাদ বলে, “অ্যাজ দ্য কান্ট্রি, সো দ্য প্রোভার্ব”বা যেমন দেশ তেমন প্রবাদ প্রবচন । আবার স্কটিশরা বলেন, “অ্যাজ দ্য পিপল্, সো দ্য প্রোভার্ব, যেমন মানুষ, তেমন প্রবাদ প্রবচন।” তবে এটা ঠিক যে প্রবাদের মাধ্যমে একটি জাতির মন-মানস, চিন্তা ভাবনা, সভ্যতা ও সংস্কৃতির ইতিহাসও ফুটে ওঠে। একারণেই পাশ্চাত্য মনীষী বেকন বলেছিলেন, “একটি দেশের জ্ঞান, মেধা তার প্রবাদেই ফুটে ওঠে।
“এমন দিন ছিল যখন আমাদের দেশের মেয়েরা কথায় কথায় ছড়া কটিত এবং কথায় কথায় প্রবাদের অবতারণা পুরুষের রসিকতার অঙ্গ ছিল। তাহার এগুলি বাস্তব জীবনে অনুভব করিয়াছিলেন, তাহারা একালের নন, সর্বকালের বাঙালী। কিন্তু বাঙালী জীবনের এই সনাতন সংস্কার ও সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্ক হারাইয়া, বর্তমানের শিল্পীতমনা বাঙালি তাহাদের বাঙালিত্বটুকুও হারাইয়াছ্, সস্তায় পরের ধনে বড় মানুষি করিতে গিয়া নিজের ঘরের পুঁজির কথা ভুলিয়া গিয়াছে। ইহা ভাবের সৃষ্টি নয়, আদর্শের কথা নয়, একান্ত ঘরের কথা- সাংসারিক ঘটনা, প্রত্যক্ষ অনুভূতির অকৃত্রিম প্রয়াস। প্রায় প্রত্যেক ছড়ার টুকরায়, প্রায় প্রত্যেক তুচ্ছ কথায় বাঙালি ঘরের বহু বিচিত্র বিস্তৃত সুখ-দুখঃ হাস্য কৌতুকের কথা শতধা বিক্ষিপ্ত রহিয়াছে। কিন্তু ইহাতে বাংলাদেশের প্রাত্যহিক গৃহস্থালীর দ্বন্দ্ব-কলহ, দ্বেষ-হিংসা, উত্তেজনা-অবসাদ. দৈন্য, সংকীর্ণতা, অক্ষমতা, অসহিঞ্চুতা, পানা-পুকুরের ঘাট হইতে পিছনের আঁস্তাকুড় পর্যন্ত কিছুই বাদ পড়ে নাই। এখানে মানুষ দেবতা নয়- তাহরা ভাল-মন্দ লইয়া রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ”-[ড. এস.কে দে, বাংলা প্রবাদ, ১ম সংস্করণ, ভূমিকা, পৃষ্ঠা ১৯-২৭]।
আমরা এখন পঞ্চদশ শতকে উপনীত হয়েছি। স্ব^ভাবতই সালতামামীর মতই এখন শতাব্দী তামামীর ইতিহাসও আমাদের জানা প্রয়োজন। এই ইতিহাস ধারা আছে সাহিত্য, লোকসাহিথ্য, প্রবাদে, প্রবচনে, ছড়ায়, সংগীতে, গাঁথায়, গীতিতে, কিংবদন্তীতে, ইতিহাসে এবং ঐতিহ্যে।
“গত যুগের বাঙালির দেহ ও মনের স্বাস্থ্য অটুট ছিল, তাহাদের বলিষ্ঠ উপলব্ধিতে সহজ জীবনের স্বাভাবিক গ্রাম্যতার আবিষ্কার ভয় বা লজ্জার কারণ ছিল না। প্রাণ ছিল বলিয়াই তাহারা প্রাণ খুলিয়া হাসিতে পারিতেন, প্রাণ খুলিয়া কথা কহিতে পারিতেন এবং স্বতঃস্ফর্ত প্রাণের আনন্দ সুদক্ষ বা ক্রত্রিম রুচির অপেক্ষা রাখিত না। -[ড. এস.কে দে, বাংলা প্রবাদ, ১ম সংস্করণ]
বিগত শতাব্দির বাংলা প্রবাদে গর্ভধারিনী মাকে সম্মান দেয়া হয়েছে,
“চিড়া বলো মুড়ি বলো, ভাতের বাড়া নাই;
পিসি বলো মাসি বলো মায়ের বাড়া নাই।”
“কিসের মাসি কিসের পিসি,
কিসের বৃন্দাবন,
মরা গাছে ফুল ফুটেছে মা বড় ধন।”
“অশথের ছায়ায় ছায়া
মায়ের মায়ায় মায়া”
কিন্তু দেখা যাচ্ছে পররবতর্কিালে ছেলের বউয়ের কুমন্ত্রনায় সেই মা-ও পর হয়ে যাচ্ছে। তাই প্রবাদে বলে,
“মায়ের গলায় দিয়ে দড়ি
বউকে পরাই ঢাকাই শাড়ী।”
“মায়ের পেটে ভাত নাই
বউয়ের গলায় চন্দ্রহার।”
“বাছার কি দিব তুলনা,
মায়ের হাতে দড়ি
মাগের কানে সোনা।
“কি করবে পুতে,
নিত্যি সে-তো কান ভাঙানীর কাছে যায় শুতে।”
“যতক্ষণ দুধ
ততক্ষণ পুত।”
দুঃখিনী মাযের কষ্ট ধরা আছে সর্বকালের জণ্য সর্বজয়ী প্রবাদে।
“ব্যাটা বিয়ালাম, বউকে দিলাম
ঝি বিয়ালাম জামাইকে দিলাম;
আপনি হলেম বাঁদী,
এখন পা ছড়িয়ে বসে কাঁদি।”
কাজেই প্রবাদ বলে সুন্দরী বউয়ের এতই যখন দেমাক তখন অতি সুন্দরী বউ না অনাই তো ভাল। তাইতো প্রবাদ আছে,
“ঘর বাঁধো খাটো
গরু কেনো ছোট
বিয়ে করো কালো
তাই গেরস্থের ভাল।”
কিন্তু বউয়েরও তো কিছু বলার আছে। কথায় কথায় বউয়ের দোষ ধরা, হেনস্থা করা এটাও তো শ্বাশুড়ীর উচিত নয়।
“পদ্মমূখী ঝি আমার পরের ঘরে যায়,
খেদানাকি বউ এসে বাটার পান খায়।”
সেই জন্যই সম্ভবতঃ পরবর্তী যুগের বউরা শ্বাশুড়ী মারা গেলে হাঁফ ছেড়েই বাঁচে।
“শ্বাশুড়ী মরলো সকালে
খেয়ে দেয়ে যদি বেলা থাকে
তো কাঁদবো আমি বিকালে।”
আর ননদিনী?
“ননদিনী রায় বাঘিনী পাড়ায় পাড়ায় কুচ্ছ গায়,
ননদিনী যদি মরে যায়, সুখের বাতাস বইবে গায়।”
দজ্জাল শ্বাশুড়ী মৃত্যু শয্যায়। মেয়ের মা বলছে,
“একলা ঘরের গিন্নী হবি এবার মা”,
মেয়ে উত্তর দিচ্ছে, “নিঃশ্বাসকে বিশ্বাস নাই, এখনো নড়ছে দুটি পা।”
সুতরাং বিবাদ-বিসংবাদের সংসারে একেশ্বরী হয়ে থাকাই বউয়ের কাম্য।
“একলা ঘরে গিন্নী হবো, চাবিকাঠি ঝুলিয়ে নাইতে যাবো।”
কিন্তু প্রাণ ভরা ভালবাসা দিয়েও প্রবাদের স্ত্রী স্বামীকে পায়না।
“পুরুষের ভালবাসা
মোল্লার মুরগী পোষা
এত করি ঘর, তবু মিনসে পর
ভাত দেবার ভাতার নয়
কিল মারার গোসাই
দরবারে মুখ না পায়
ঘরে এসে মাগ ঠেঙায়।”
এমন যে অকর্মা স্বামী-প্রবাদে তিনি মরে গেলেও দুঃখ নাই।
“ঈশ্বর যদি করেন, মিনসে যদি মরেন
তবে ঘরে বসেই কেত্তন শুনবো।”
অতীতে বউ ভাশুরের সাক্ষাত কথা-বার্তা ছিল না। কিন্তু মাঝখানে দেওয়াল আড়াল করে কথা বলবার রীতি ছিল।
দেওয়াল দেওয়াল বট ঠাকুর কি পাকাল মাছ খান?
ভাশুরের জবাব-
খান খান খান-পাঁচ ছয় খান
এখন একটু তেল পেলে নাইতে যান।
এত সুখ বা দুঃখের মধ্যেও বিগত শতকে সম্ভবত: এই শতকেও নারীর সবচেয়ে দুঃখ হলো সতীনের ঘর করা।
একচির পান দু’চির হলো
সোনার পাটে ভাগ বসালো
সুয়ো হলো রাজরাণী
দুয়ো হলো ঘুটে কুড়ানী
একা ছিলাম ঘরের মাঝে
মাথার মাঝে ঠাকুর
সতীন এল এখন হলাম
আঁস্তাকুড়ের কুকুর।
সবচেয়ে বেদনদায়ক হলো বোন সতীন যা বিগত শতকেও অসম্ভব ছিল না।
আন সতীনে নাড়ে চাড়ে
বোন সতীনে পুড়ে মারে।
নিম তেতো নিশিন্দা তেতো
আর তেতো পানের খর
তার চেয়ে অধিক তেতো
বোন সতীনের ঘর।
প্রবাদ তাই সাবধান করে দেয়-
এক বরে ভাতারের মাগ চিংড়ি মাছের খোসা
দোজ বরে ভাতারের মাগ নিত্য করে গোষা ।
তেজ বরে ভাতারের মাগ সঙ্গে বসে খায়
চার বরে ভাতারের মাগ কান্ধে চড়ে যায়।
বুড়ো বয়েসের বিয়েও আবহমান বাংলার প্রর্থিত নয় কারণ-
বুড়ো বয়েসে নবীন নারী
এই বুড়ো তোর মাথায় বাড়ী।
ঠিক তেমনিভাবে ঘরজামাইও প্রবাদে গর্হিত-
দূর জামাইয়ের কাঁধে ছাতি
ঘর জামাইয়ের মুখে লাথি
শ্বশুর বাড়ী মধুর হাঁড়ি
তিনদিন পর ঝাঁটার বাড়ী।
শুধু কি বাড়ী? শুধু কি সংসার? শতসহ¯্র প্রবাদে বাঙালীর আটপৌরে সে যুগের সংসারকে তুলে ধরা হয়েছে। কোন কোন প্রবাদে মুসলমান (নেড়ে) সমাজকে ভিন্ন সমাজে তুচ্ছ নজরে দেখতো-
নেড়ে নয় ইষ্টি
তেঁতুল নয় মিষ্টি।
আবার অন্যত্র দেখা যায়-
ধানের মধ্যে আগুন ধান (অগ্রহায়ন মাসের ধান)
মানুষের মধ্যে মুসলমান
গরুর মধ্যে এঁড়ে
মানুষের মধ্যে নেড়ে।
বহু গ্রবাদে বিগত শতাব্দির অনেক ঐতিহাসিক চিত্রও পাওয়া যায়। হুসেন শাহের আমলে পাওয়া যায় ধান ভানতে মহীপালের গীত।
যারে দেয়না খোদা তায়ালা
তারে দেয় আসফদৌলা (নওয়াব আসফদৌলা) ।
মগের মুলুক অনাচারের যুগ।
মোষের শিং ভেড়ার শিং
তারে বলি কি শিং
শিংয়ের মধ্যে শিং ছিল গোবিন্দ শিং।
অথবা লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন। এই গৌরী সেনের বাড়ী ছিল পূর্ববঙ্গে। তিনি ছিলেন ব্যবসায়ী।
কোন কোন জায়গা নিয়েও প্রবাদ আছে। যেমনঃ
চোর চোট্টা হারামজাদ
এই তিনে মুর্শদাবাদ।
মনে হয় নবাব সিরাজউদদৌলার পতনের পর এই প্রবাদ রচিত।
ধান ডাকাত খাল
এই তিনে বরিশাল।
মশলা মোলা শাঁখা
এই তিনে ঢাকা।
সারেঙ শুটকী দরগা
এই তিনে চাটগাঁ।
জমিদার জঙ্গল মোষের শিং
এই তিনে মৈমোনসিং।
চমচম টমটম শাড়ী
এই তিনে টাঙ্গাইলের বাড়ী।
কোন কোন প্রবাদে বিগত শতাব্দীর সতীদাহ প্রথার একটি নির্মম চিত্র ধরা পড়েছেঃ
কোন এক ব্রাহ্মণ কন্যাকে সতীদাহ প্রথায় দড়াদড়ি বেঁধে গঙ্গার ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু কোনক্রমে মেয়েটি গঙ্গায় ঝাঁপিয়ে পড়ে জীবন বাঁচায়। সেখান দিয়ে নদীর পানি ভরতে যাচ্ছিল এক মুসলমান কলুর বউ। সমাজপতিরা অগত্যা তাকে ধরে এনেই চিতায় তুলে দিলঃ
কার আগুনে কে বা মরে আমি জাতে কলু,
মা আমার কি পূণ্যবতী, বলছে “দে উলু দে উলু।”
কলু শব্দটিকে “উলু দেওয়ার আহ্বান” ব্যাখ্যা করে তাকে পুড়িয়ে মারা হলো।
বিগত শতাব্দীর অজস্র প্রবাদ পরীক্ষা করে দেখা যাবে-
১. সমাজ এখন কৃষি নির্ভর।
২. ব্যবসায়ী বা সওদাগর সম্প্রদায়ের সমাজে মূল্য আছে।
৩. ইংরেজরা ষড়যন্ত্রকারী আর মীরজাফর ও উমিচাঁদ গং তাদের দোসর।
৪. সমাজে মৌলভী ও ব্রাহ্মনদের কদর কমে আসছে।
৫. নারী শিক্ষাকে সমাজ তখনো গ্রহন করছে না।
৬. জমিদাররা প্রায়ই অত্যাচারী।
৭. মহাজনরা রক্তচোষা।
৮. বহু বিধাবা প্রথা তখনো চালু ছিল।
৯. নারী সমাজে নিগৃহীতা।
১০. দেশে বান-বন্যা-দুর্ভিক্ষ আছে।
১১. মানুষ অনেকা অদৃষ্টবাদী।
কিন্তু এই শতকে-
১. শিক্ষার দিকে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে।
২. নারী তেমন অবলা নয়।
৩. বহু বিধাবা প্রথা কমেছে।
৪. রাজনীতিতে তোষণ ও দলাদলি আছেই।
৫. যান্ত্রিক সভ্যতার অগ্রগতি হচ্ছে।
বিগত শতকের তুলনায় এই শতকে প্রবাদ ও ছড়ার সৃষ্টি অপেক্ষাকৃত কম। কারণ, সমাজ যে গ্রামীণ পরিবেশে দাঁড়িয়ে ছিল, এখন আজ সেখানে নেই। তবু এ যুগের এশতাব্দীর এক ঋষি কবি অনকূল চন্দ্র (১২৯৫-১৩৭৫)তাঁর বিভিন্ন বাণীতে প্রবাদের ব্যবহার করেছেনঃ
বুদ্ধ ঈশায় বিভেদ করিস
শ্রী চৈতন্য রসুল কৃষ্ণে
জীবোদ্ধারে হন আবির্ভাব
একই এঁরা তা ও জানিসনে।
এক আদেশে চলেন যারা
তাদের নিয়েই সমাজ গড়া
অন্যে বাঁচায় নিজে বাঁচে
ধর্ম বলে জানিস তাকে।
শিল্পী মাথা শিল্প গড়ে
তবেই দেশে লক্ষ্ণী বাড়ে।
বলায় পটু কাজে কম
নিজেই হয় নিজের যম।
মুখে জানে ব্যবহারে নাই
সেই শিক্ষার মুখে ছাই।
শিক্ষকের নাই ইষ্ট প্রাণ
কে বাঁচাবে ছাত্র প্রাণ।
রাজশক্তি হাতে পেয়ে
শতের পীড়ক সবাই হয়
নিজে মরে দেশকে মারে
দেশে আনে বিপর্যয়।
সন্ধানী চোখ খুললে কিছু কিছু প্রবাদ ও ছড়া অবশ্যই পাওয়া যাবে যাতে ফুটে উঠেছে বর্তমান সমাজব্যবস্থা, রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি, সন্ত্রাস, জুয়াচুরি, পুকুর চুরি ইত্যাদি।
এজন্য বর্তমান যুগের মানুষকে অবশ্যই সাবধান হতে হবে। কারণ, প্রবাদ হচ্ছে “পিপলস্ ভয়েস”এবং পিপলস্ ভয়েস ইজ দ্য গডস্ ভয়েস্”বা জনগণের কন্ঠই হচ্ছে আল্লাহ তা’য়ালার কন্ঠ। জনগণই শক্তির উতস। এই জনগণই কাউকে সিংহাসনে বসায় কাউকে নামায় আঁস্তাকুড়ে।
কিন্তু ইতিহাস ও প্রবাদের শিক্ষা হলো, “আমরা ইতিহাস ও প্রবাদ থেকে শিক্ষা নেই না।”
“খালি পেটে জল
ভরা পেটে ফল।”
“কচি পাঁঠা বৃদ্ধ মেষ,
দৈ-এর আগা ঘোলের শেষ।”
“দিনে বালিশ, রাতে চালিশ”
মধ্যাহ্ন ভোজনের পর ক্ষণিক বিশ্রাম আর রাতের ভোজনের পর পায়চারী করা ¯^াস্থ্যের জন্য ভালো।
“প্রাতে খেলে নুন-আদা,
অরুচি আর থাকে না দাদা।”
“ভোজনান্তে চোখে জল,
দৃষ্টিশক্তি হয় প্রবল।”
লটেরে বলো না লটো,
উলটে ধরবে চুলরে মুঠো।
ব্যাখ্যা: যার মান-সম্মানরে বালাই নইে, তাকে অপমানসূচক কোনো কথা বললে নজিইে অপমানতি হতে হব।
বিষ্ঠায় ঢিল মারে,
নিজেরে গায়ইে ছিটকে পড়ে।
ব্যাখ্যা: মন্দ কাজ ও মন্দের সংস্রব মাত্রই র্বজনীয়।
(ঈষত পরিবর্তিত)।
মূলঃ ড. আশরাফ সিদ্দিকী

Monday, September 9, 2019

ছেলের জানাযা ও একজন সার্জনের কর্তব্য নিষ্ঠা:গল্পটি হয়তো তোমাদের পছন্দ হবে

একটি কল পেয়েই ডাক্তার সার্জন খুব দ্রুত হাসপাতালে এলেন। উনি কলটি যতদূর সম্ভব দ্রুত অ্যাটেন্ড করেছেন। এর পর তিনি কাপড় বদলে অপারেশন থিয়েটারে চলে গেলেন।
ডাক্তার লক্ষ্য করলেন অসুস্থ ছেলেটির বাবা অস্বস্তি নিয়ে পায়চারী করছেন আর ডাক্তারের দিকে চোখ পড়তেই একবারে রেগে গেলেন। বল্লেন, “আপনি এতটা সময় পরে কেন এলেন? আপনি কি জানেন না যে আমার ছেলের অবস্থা আশংকাজনক? আপনার কি দায়িত্বজ্ঞান বলতে কিছু নেই?
ডাক্তার কিছুই না বলে শুধু একটু হাসলেন। এর পর বল্লেন, “আমি হাসপাতালে ছিলাম না। একটু দূরেই ছিলাম। আর আমার অফিস থেকে খবর পেয়েই যত দ্রুত সম্ভব চলে এলাম। আমি চাই আপনি এবার শান্ত হবেন আর আমাকে কাজ করতে দেবেন”
কিন্তু ছেলেটির বাবা শান্ত তো হলেনই না বরং তার মেজাজ আরো বিগড়ে গেল। এবার তিনি বেশ চড়া গলায় বল্লেন, “কি করে বুঝবেন যে আমার জায়গায় যদি আপনার ছেলের ছেলে অসুস্থ থাকতো আর তার অবস্থা যদি আশংকাজনক হতো? আপানার ছেলে যদি মরতে বসতো তাহ’লে কি হতো আপনার মনে?”
ডাক্তার আবারো ছেলেটির বাবাকে শান্ত হতে বল্লেন। বল্লেন, পড়েনি কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, “তোমাকে এই মাটি থেকে তৈরী করা হয়েছে, আবার মাটিতেই ফিরে যেতে হবে আবার মাটি খেকেই তোমাকে তোলা হবে।”
ডাক্তারতো আপনার ছেলের আয়ূ বাড়াতে পারবে না। দয়া করে ছেলের কাছে যান আর সেখানে গিয়ে তাকে শান্তনা দিন। আমার পক্ষে যতদূর করা সম্ভব তা অবশ্যই করবো।
হ্যাঁ, হ্যাঁ- জানি, উপদেশ দেয়া খুবই সোজা, ছেলেটির বাবা বিড় বিড় করতে লাগলো।
সার্জারীতে বেশ ভালই সময় লাগলো। আর দেখা গেল সার্জন সাহেব খুব খুশী মনে অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরিয়ে আসছেন। ছেলেটির বাবাকে বল্লেন, আলহামদুলিল্লাহ, আপনার ছেলের অপারেশন ভালো হয়েছে। ও আশংকামূক্ত। আশা করি ও দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।
ছেলের বাবার কোন প্রতি উত্তর না শুনেই বেরিয়ে সার্জন বেরিয়ে গেলেন। তিনি বল্লেন, কোন কিছু শোনার বা জানার থাকলে কর্তব্যরত নার্সকে জিজ্ঞাসা করুন।
তাকে এতটা উদ্বিগ্ন কেন মনে হলো? আমাকে তো আর কিছুই কেন বল্লেন না?। ছেলেটির বাবা জিজ্ঞাসা করলো নার্সকে।
নার্স এবার বল্লেন। বলবার সময় তার দু’ গাল বেয়ে চোখের পানি পড়ছিল। ভাই সাহেব, গতকাল এক সড়ক দুর্ঘটনায় সার্জন সাহেবের ছেলে মারা গেছেন। উনি তার ছেলের জানাযার নামাযের প্রস্তুতিতে ছিলেন আর এসময় আমি তাকে আপনার ছেলের আশংকাজনক অবস্থার কথা জানাই। আর উনি খুবই দ্রুত এসে সার্জারিতে অংশ নিয়ে আল্লাহর ইচ্ছায় আপনার ছেলেকে সুস্থ করিয়ে তোলার দায়িত্ব নেন। কাজ শেষে তিনি তার ছেলের জানাযায় অংশ নেয়ার জন্য চলে গেছেন।
উপদেশ:
কখনো কোন কিছু দিয়ে, কোন কাজ দিয়ে আর এক জনকে বিচার করতে যাবে না। কারণ, আপনি জানেন না যে কার মনের অবস্থা কি, তার জীবনের অবস্থাই বা কি!

আল্লাহর অস্তিত্ব: তিনটি প্রশ্ন

একবার এক ব্যক্তি বিদেশে লেখাপড়ার জন্য গেলেন। লেখাপড়া শেষে দেশে ফিরে এসে তার মা- বাবাকে বল্লেন যে তিনি একজন ধর্মীয় নেতা বা একজন জ্ঞানী ব্যক্তির সাথে সাক্ষাত করতে চান যাঁরা তার তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন!।
এক সময় ওই ব্যক্তি তার মা-বাবার সহায়তায় একজন মুসলমান জ্ঞানী ব্যক্তির সন্ধান পেয়ে যান।
প্রশ্নগুলোঃ
প্রশ্নকারী ব্যক্তি: আপনি কে? আপনি কি আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে সক্ষম?
জ্ঞানী ব্যক্তি: আমি মহান আল্লাহর একজন বান্দাহ। ইন শা আল্লাহ, আমি আপনার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারবো।
প্রশ্নকারী ব্যক্তি: আপনি কি নিশ্চিত যে আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে সক্ষম? কারণ, আমি বিদেশে অনেক প্রফেসর, বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর পাইনি!
জ্ঞানী ব্যক্তি: আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো। আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে অবশ্যই আল্লাহতায়ালার সাহায্য চাইবো।
প্রশ্নকারী ব্যক্তি: আমার প্রশ্ন তিনটি
১. আল্লাহ কি আছেন? আপনি তার আকার আমাকে দেখাতে পারেন?
২. তাকদীর বা ভাগ্য বলতে আপনি কি বোঝেন?
৩. যদি শয়তান আগুন থেকেই সৃষ্টি হয়ে থাকে, তাকে শেষ বিচারের দিনে কেন দোজখে পাঠানো হবে? শয়তান তো আগুন থেকেই সৃষ্ট! আর আগুনো তার তো কোনই ক্ষতি হবে না! আল্লাহ কী এ নিয়ে কোনই চিন্তা করেন নি?
জ্ঞানী ব্যক্তি হঠাত প্রশ্নকারী ব্যক্তির গালে কষে একট চড় মারলেন।
প্রশ্নকারী ব্যক্তি বেশ ব্যথা পেলেন । জ্ঞানী ব্যক্তিকে বল্লেন, “আপনি হঠাৎ কেন রেগে গেলেন?
জ্ঞানী ব্যক্তি আমি রাগ করিনি। আমার এই চড়টি ছিল আপনার সব প্রশ্নের উত্তর!
প্রশ্নকারী ব্যক্তি: হতভম্ব হয়ে বল্লেন, “আমি ঠিক বুঝলাম না! ”
জ্ঞানী ব্যক্তি চড় খাবার পর আপনি কেমন বুঝলেন?
প্রশ্নকারী ব্যক্তি: অবশ্যই আমি ব্যথা পেয়েছি।
জ্ঞানী ব্যক্তি তাহলে বুঝলেন যে, ব্যাথার অস্তিত্ব আছে?
প্রশ্নকারী ব্যক্তি: হ্যাঁ, জনাব, আছে।
জ্ঞানী ব্যক্তি: ব্যথার অস্তিত আমাকে দেখাতে পারবেন?
প্রশ্নকারী ব্যক্তি: আমার পক্ষে অসম্ভব!
জ্ঞানী ব্যক্তি: এটা ছিল আমার প্রথম উত্তর। আমরা সবাই আল্লাহ আছেন এটা অনুভব করি। কিন্তু তাঁকে দেখতে পাই না। গতরাতে আপনি কী এমন স্বপ্ন দেখেছিলেন যে আমি আপনার গালে চড় মারবো?
প্রশ্নকারী ব্যক্তি: নাহ্! কল্পনাও করিনি।
জ্ঞানী ব্যক্তি: আজকে আপনি একটা চড় খাবেন এমনটাও কি ভেবেছিলেন।
প্রশ্নকারী ব্যক্তি: নাহ্!
জ্ঞানী ব্যক্তি এটাই তাকদীর। ভাগ্যের ভাল বা মন্দ।
এটি ছিল আমার দ্বিতীয় উত্তর। আমার যে হাতটি আপনাকে চড় মেরেছে সেটি কিসের তৈরী?
প্রশ্নকারী ব্যক্তি: সেটি মাংসের তৈরী।
জ্ঞানী ব্যক্তি: যেখানে চড়টি বসেছে সেটি কিসের তৈরী?
প্রশ্নকারী ব্যক্তি: সেটাও মাংসের তৈরী।
জ্ঞানী ব্যক্তি: চড় খাবার পর আপনি কী অনুভব করেছেন?
প্রশ্নকারী ব্যক্তি: ব্যথা অনুভব করেছি।
জ্ঞানী ব্যক্তি: এই তো! এটাই আমার তৃতীয় উত্তর।
শয়তান তো আগুন থেকেই তৈরী আর দোজখের মূল জিনিস তো আগুনই।
সুতরাং আগুনই হবে শয়তানের জন্য ব্যথার একমাত্র উপকরণ। এতে বিন্দু মাত্র সন্দেহ নাই।
আল্লাহ বলেন “তুমি যদি আমাতে লজ্জিত হও, আমিও তোমাতে লজ্জিত হবো।”
আসুন আমরা আল্লাহকে ভালবাসি। আল্লাহই আমাদের জীবনের ঝর্নাধারা। আমাদের উদ্ধারকারী। আল্লাহ আমাকে দিনে ও রাতে চলার শক্তি জোগান। আল্লাহ ছাড়া আমার অস্তিত্ব নাই। আল্লাহ আছেন বলেই আমি আছি। সুতরাং আল্লাহ আমার শক্তি।
যে গল্পটি বলা হলো সেটা আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ। আল্লাহই আমাকে/আমাদেরকে ব্যথা দেন। আমাকে/আমাদেরকে দুর্দশায় ফেলেন আবার উদ্ধারও করেন। এর বহু বহু উদাহরণ রয়েছে।

কেন হাসবো?

Laughter reduces pain, increases job performance, connects people emotionally, and improves the flow of oxygen to the heart and brain.
Laughter, it's said, is the best medicine. And there's lots of evidence that laughter does lots of good things for us.
It reduces pain and allows us to tolerate discomfort.
It reduces blood sugar levels, increasing glucose tolerance in diabetics and nondiabetics alike.
It improves your job performance, especially if your work depends on creativity and solving complex problems. Its role in intimate relationships is vastly underestimated and it really is the glue of good marriages. It synchronizes the brains of speaker and listener so that they are emotionally attuned.
Laughter establishes -- or restores -- a positive emotional climate and a sense of connection between two people, In fact, some researchers believe that the major function of laughter is to bring people together. And all the health benefits of laughter may simply result from the social support that laughter stimulates.
হাসিই আপনার সৌন্দর্য, হাসিই আপনার আধুনিকতা, হাসিই আপনার স্মার্টনেস। হাসি কোনো হালকা বিষয় নয়, এটি একটি ‘সিরিয়াস’ বিষয়। তাই হাসুন—অট্টহাসি, মুচকি হাসি, যা–ই হোক, একটু হাসুন।
‘এই রে, হাসলেই বুঝি আমি খেলো হয়ে গেলাম। গেল গেল, আমার ব্যক্তিত্ব গেল’—এই ভেবে নিজের মধ্যে একটা নকল ভাব ধরে রাখতে অনেকেই রামগরুড়ের ছানা হয়ে থাকে। হাসির ঘটনায়ও হাসে না। যেন সব সময় কপাল কুঁচকে থাকা বিরক্ত এক ‘বড় কর্তা’। কিন্তু এই না হেসে থাকার চেষ্টা মোটেও ঠিক নয়। শরীরে আর মনের দিক থেকে ভালো থাকার জন্য হাসতেই হবে। যৌক্তিক কারণে অবশ্যই হাসতে হবে। হাসির এই ‘হা হা’, ‘হো হো’, ‘হি হি’ উচ্চারণগুলো হচ্ছে বিশ্বজনীন ভাষা! প্রায় সব ভাষাতেই হাসির বহিঃপ্রকাশ একধরনের। পৃথিবীতে মানুষ একমাত্র প্রাণী যে পরিপূর্ণভাবে হাসতে পারে। তবে শিম্পাঞ্জি, ইঁদুর, ডলফিন, কুকুরসহ বেশ কিছু প্রাণী তাদের বিভিন্ন আচরণে বা শব্দে আনন্দের ভাব প্রকাশ করতে পারে বলে গবেষকেরা প্রমাণ পেয়েছেন, কিন্তু সেটা হাসি নয়। আর হায়েনার হাসি বলে যেটা রয়েছে, সেটা আসলে হায়েনার ডাক।
হাসি কী?
হাসি হচ্ছে মানুষের আবেগের বহিঃপ্রকাশ। ভালো লাগা, খুশি, আনন্দ আর কোনো অর্জনের পর আমাদের মনে যে আবেগের সঞ্চার হয়, সেটা ফুটে ওঠে হাসির মধ্য দিয়ে। আমরা কিন্তু খুব সচেতনভাবে ‘এখন হাসতে হবে, সবাই হাসুন’ এমনভাবে হাসি না। স্বতঃস্ফূর্ত আবেগের উৎসারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হাসির প্রকাশ ঘটে। আর সচেতনভাবে ‘হাসতে হবে’, তাই মনে রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে রাখাটা হচ্ছে কৃত্রিম হাসি।
আবেগের কারণে মস্তিষ্কের ভেন্ট্রোমিডিয়াল প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স উদ্দীপ্ত হয়, এর ফলে ‘এন্ডোরফিন’ নামক রাসায়নিক বস্তুর নিঃসরণ ঘটে, তাই আমরা হাসি। আবার অন্যভাবে ব্যাখ্যা দিলে আবেগের কারণে আমাদের মাংসপেশির সঞ্চালনায় হাসির উদ্রেক ঘটে, তখন মস্তিষ্কে এন্ডোরফিন নিঃসরণ হয়। অনেকটা ‘ডিম আগে না মুরগি আগে’র মতো অবস্থা। মস্তিষ্কের লিম্বিক সিস্টেম আর এমিগডালা নামক অংশের সক্রিয়তাও হাসি সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মতে, হাসি আমাদের মনের উদ্বিগ্নতা দূর করে, রাগ আর দুঃখ দূর করে; তাই হাসির গুরুত্ব রয়েছে।
হাসি আমাদের অপরের সঙ্গে যোগাযোগের একটি মাধ্যম। কারণ, মানসিকভাবে সুস্থ মানুষ সাধারণত একা একা হাসে না, অন্যদের সামনেই হাসে। হাসি কিন্তু সংক্রামক, অর্থাৎ আড্ডায় একজন হাসা শুরু করলে তা সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। হাসির সময় আমাদের মুখ, গলা, ঘাড়, বুক, হাতের মাংসপেশির সঞ্চালন ঘটে, নিশ্বাস–প্রশ্বাসের পরিবর্তন হয়। স্বাভাবিক বিকাশ হচ্ছে এমন একটি শিশু কথা শেখার আগেই হাসতে শেখে। সাধারণত জন্মের তিন থেকে চার মাসের মধ্যে সে স্বতঃস্ফূর্তভাবে হাসতে পারে, তবে জন্মের ছয় মাসের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে হাসতে না পারলে ধরে নিতে হবে তার বিকাশ ধীরে হচ্ছে। শিশু দিনে প্রায় ১০০ বার হাসে আর পূর্ণবয়স্ক মানুষ প্রতিদিন প্রায় ১০ বার হাসেন। হাসি নিয়ে গবেষণা অনেক। তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে না গিয়ে সাধারণভাবে আমরা বেশ কয়েক ধরনের হাসি দেখতে পাই—অট্টহাসি (জোরে শব্দ করে হাসা), মুচকি হাসি (শব্দহীন হাসা), কাষ্ঠ হাসি (কষ্ট চেপে হাসা), বাঁকা হাসি (ব্যঙ্গাত্মক হাসি), চাপা হাসি (যতটা খুশি ততটা প্রকাশ না করে মনে মনে হাসা), ক্রূর হাসি (প্রতিশোধের হাসি), মেকি হাসি (নকল, সাজানো হাসি) ইত্যাদি।
কেন হাসব?
আমাদের হাসতেই হবে, কারণ হাসি একটি মানবিক আচরণ। সুস্থ মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করতে হলে হাসতে হবে। দেহ আর মনে সুস্থ থাকতে হলে হাসির প্রয়োজন রয়েছে। ‘হাসি থেরাপি’ একধরনের ভালো থাকার পদ্ধতি। দেশ–বিদেশে হাসির ক্লাব রয়েছে, যে ক্লাবে শরীরচর্চার মতো দৈনিক দল বেঁধে হাসির চর্চা হয়! হাসির শারীরিক আর মানসিক উপকারিতা অনেক। হাসির কতগুলো প্রধান উপকারিতা হচ্ছে:
মানসিক চাপ দূর করে
হাসলে শরীরে স্ট্রেস হরমোনের (কর্টিসল) নিঃসরণ কমতে থাকে, ফলে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কম হয়। হাসিতে উতকন্ঠাও উদ্বিগ্নতা কমে।
ব্যথা কমায়
হাসি, বিশেষ করে অট্টহাসি এন্ডোরফিন নামক রাসায়নিক পদার্থের নিঃসরণ ঘটায়, যা আমাদের ব্যথার অনুভূতিকে হ্রাস করে।
রাগ নিয়ন্ত্রণ করে
রাগ নিয়ন্ত্রণের অন্যতম উপায় হচ্ছে হাসার অভ্যাস করা। যত বেশি হাসবেন, তত বেশি রাগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা তৈরি হবে।
রোগ প্রতিরোধ করে
হাসি রোগ প্রতিরোধক শ্বেতরক্তকণিকার উৎপাদন বাড়ায়, যা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
অকালে বুড়োবেন না
হাসলে মুখের মাংসপেশির ব্যায়াম হয়ে যায়। ফলে যাঁরা নিয়মিত হাসেন, তাঁদের মুখে বার্ধক্যের ছাপ পড়ে না।
চিন্তাভাবনাকে শাণিত করে
হাসলে ফুসফুসে আর মস্তিষ্কে অক্সিজেনের প্রবাহ বাড়ে, ফলে চিন্তাভাবনাগুলো অনেক শাণিত হয়। বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চাগুলো সুসংহত হয়।
সম্পর্কের উন্নতি ঘটে
একাধিক মানুষ যখন একসঙ্গে হাসে, তখন তাদের মধ্যে একটা কার্যকরী যোগাযোগ তৈরি হয়, পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটে।
আত্মবিশ্বাস বাড়ায়
হাসলে যোগাযোগদক্ষতা বাড়ে, তাতে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়।
ইতিবাচকভাবে ভাবায়
হাসি নেতিবাচক চিন্তা আর আচরণ থেকে দূরে রাখে, মানুষকে ইতিবাচক করে তোলে।
মনে আনে নতুন শক্তি
হাসির মধ্য দিয়ে ক্লান্তি, অবসাদ দূর হয়।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
হাসি উচ্চ রক্তচাপ কমায়; যা হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
ওজন কমায়
প্রতিদিন ১৫ মিনিট হাসলে প্রায় ৪০ ক্যালরি শক্তি পোড়ে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
কাজের মান বাড়ায়
হাসলে টিমওয়ার্ক ভালো হয়, তাতে কর্মক্ষেত্রে কাজের মান বেড়ে যায়। টিমের বা দলের সদস্যদের সঙ্গে দূরত্ব কম হয়।
আয়ু বাড়ায়
নরওয়েতে এক গবেষণায় দেখা গেছে, হাসি মানুষকে দীর্ঘায়ু করে!
হাসির ব্যাকরণ যত
হাসি উপকারী, হাসি জরুরি; কিন্তু হাসিরও কিছু আদবকেতা রয়েছে। একা একা হাসবেন না, বিনা কারণে হাসবেন না। কারণ, বিনা কারণে হাসা বা একা একা হাসা কখনো মানসিক রোগের লক্ষণ হতে পারে। জোরে অট্টহাসি দেওয়ার সময় সতর্ক থাকুন আপনার হাসি কাউকে বিরক্ত করছে কি না। কোনো ছোট হাসির ঘটনায় এমনভাবে হাসবেন না, যাতে মনে হয় আপনি অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন। পরিস্থিতি বুঝে হাসুন। যতটুকু সম্ভব মেকি, ক্রূর আর বক্র হাসি পরিহার করুন। কখনো কারও বিপদ দেখে হাসবেন না।
`এত বুড়ো কোনোকালে হব নাকো আমি
হাসি-তামাশারে যবে কব ছ্যাব্‌লামি।
এ নিয়ে প্রবীণ যদি করে রাগারাগি
বিধাতার সাথে তারে করি ভাগাভাগি
হাসিতে হাসিতে লব মানি।‘
’—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ভাবার কোনো কারণ নেই যে হাসি আপনার ব্যক্তিত্বকে খেলো করবে; বরং যৌক্তিক হাসি প্রমাণ করে আপনি একজন মানুষ, সুস্থ মানুষ। হাসিই আপনার সৌন্দর্য, হাসিই আপনার আধুনিকতা, হাসিই আপনার স্মার্টনেস। হাসি কোনো হালকা বিষয় নয়, এটি একটি ‘সিরিয়াস’ বিষয়। তাই হাসুন, অট্টহাসি, মুচকি হাসি, যা হোক একটু হাসুন। যেভাবে খুশি সেভাবে হাসুন। হাসতে আপনাকে হবেই!
কৃতজ্ঞতা: জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা
https://www.psychologytoday.com

Saturday, September 7, 2019

ইসলাম ও বিয়ে

Oxford Dictionary তে বলা হয়েছে
“Marriage is the formal union of a man and a woman. Typically as recognized by law which they become husband and wife.”
তাহলে বিবাহকে এক ধরনের সামাজিক চুক্তি যার দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বৈধ হয়।
বিয়ে মানবজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। পৃথিবীর প্রায় সব ধর্মই বিয়েকে উতসাহিত করেছে। বিয়ের মাধ্যমে জীবনসঙ্গী হিসেবে নারী-পুরুষ পরস্পরকে বেছে নেওয়ার অধিকার লাভ করে। ইসলাম বিয়েকে ঈমানি দাবি হিসেবে উল্লেখ করেছে। ইসলামের দৃষ্টিতে সুস্থ, সবল ও সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য বিয়ে করা আবশ্যক। যেহেতু বিয়ের মাধ্যমে মানুষ জীবনসঙ্গী নির্বাচন করে, ইসলামী শরিয়ত বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর সাক্ষাতকে বৈধ করেছে। বরং তাতে উতসাহিত করেছে। যেন দাম্পত্যজীবনে অতৃপ্তি থেকে না যায়। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা বিয়ে করো সেই স্ত্রীলোককে, যাদের তোমাদের ভালো লাগে।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৩)
হজরত মুগিরা ইবনে শুবা (রা.) বলেন, আমি জনৈক নারীকে বিয়ের প্রস্তাব করলাম। রাসুল (সা.) আমাকে বললেন, ‘তুমি কি তাকে দেখেছ? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তাকে দেখে নাও। কেননা এতে তোমাদের উভয়ের মধ্যে ভালোবাসা জন্মাবে।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস: ৩১০৭)
অন্য হাদিসে এসেছে, এক লোক নবী কারিম (সা.)-এর নিকট এসে বলল যে, সে আনসারি এক মেয়েকে বিয়ে করতে চায়। রাসুল (সা.) বললেন, ‘তাকে দেখেছ কি? কেননা আনসারদের চোখে দোষ থাকে।’ (সহিহ মুসলিম)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, শুধু দেখাই যথেষ্ট নয়; বরং পাত্র বা পাত্রীর কোনো ত্রুটি আছে কি না, তাও জেনে নেওয়ার অধিকার অন্য পক্ষের রয়েছে। তবে আমাদের সমাজে পাত্রী দেখার যে রীতি রয়েছে, তার পুরোটা ইসলাম অনুমোদিত নয়। যেমন, পাত্রের বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজন মিলে ১০-১২ জনের একটি দল পাত্রীর বাড়ি যাওয়া এবং সবার সামনে বসিয়ে মাথার কাপড় সরিয়ে, দাঁত বের করে, হাঁটিয়ে দেখা ইত্যাদি। পাত্র ব্যতীত তার পরিবারের অন্য পুরুষদের জন্য পাত্রী দেখার অনুমতি শরিয়ত দেয় না। আর চুল বের করা ও হাঁটানোর মতো বিব্রতকর কাজ অবশ্যই পরিহারযোগ্য।
অনেকেই বিয়ের সময় পাত্রীর সৌন্দর্য ও সম্পদকে বিবেচ্য বিষয় হিসেবে দেখে। এ ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি চোখে পড়লে মেয়ে ও তার পরিবারের সামনেই মন্তব্য করতে থাকে। যাতে মেয়ের পরিবার কষ্ট পায়, মনঃক্ষুণ্ন হয়। যেমন, মেয়ে কালো, চোখ সুন্দর না, ঠোঁট মোটা ইত্যাদি। ইসলাম এভাবে মন্তব্য করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বাহ্যিক সৌন্দর্যের চেয়ে আত্মিক ও ঈমানের সৌন্দর্যকে প্রাধান্য দিতে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘নারীদের চারটি গুণ দেখে বিয়ে করো: তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার রূপ-সৌন্দর্য ও তার দ্বিনদারি। তবে তুমি দ্বিনদারিকে প্রাধান্য দেবে। নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫০৯০)
অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের নিকট কোনো পাত্র বিয়ের প্রস্তাব দেয়, যার দ্বিনদারি ও চরিত্র তোমাদের যদি পছন্দ হয়, তাহলে তার সঙ্গে বিয়ে সম্পন্ন করো। অন্যথা জমিনে বড় বিপদ দেখা দেবে এবং সুদূরপ্রসারী বিপর্যয়ের সৃষ্টি হবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১০৮৪-৮৫)
বিয়ের আগে আংটিবদলের পর বা আগে বিয়ের পাত্র-পাত্রীদের একান্তে সময় কাটানোর প্রবণতা সমাজের কোনো কোনো শ্রেণিতে দেখা যায়। ইসলাম আকদের আগে পাত্র-পাত্রীর এভাবে একান্তে সময় কাটানো, ঘুরতে যাওয়া, শপিংয়ে বের হওয়ার অনুমতি দেয় না। কেননা বিয়ের আকদের আগের পাত্র-পাত্রীর পারস্পরিক বা পারিবারিক সিদ্ধান্তের দালিলিক কোনো মূল্য ইসলামী শরিয়তে নেই। দেশীয় আইনেও এমন সিদ্ধান্তের কোনো মূল্য নেই। তা ছাড়া বিয়েপূর্ব অবাধ মেলামেশা অনেক সময় বিয়ের সম্ভবনা নষ্ট করে। কোনো কারণে বিয়ে না হলে এই মেলামেশা ও সাক্ষাৎ পরস্পরের চরিত্র হননের হাতিয়ার হয়। পাপ ও পাপাচারের আশঙ্কা তো আছেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন কোনো নারী-পুরুষ নির্জনে একত্র হয়, তখন সেখানে তৃতীয়জন হয় শয়তান।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২১৬৫)
বিয়ের আগে পাত্রীর ছবি হস্তান্তরকেও শরিয়ত নিরুতসাহ করে। কেননা এতে পাত্রীর ছবি পাত্র ছাড়াও অন্য পুরুষদের সামনে পড়ার আশঙ্কা থাকে। তা ছাড়া বিয়ে না হলে সাধারণত এসব ছবি ফেরত দেওয়া হয় না। যা পরবর্তী সময়ে অসত উদ্দেশ্যে ব্যবহারের ভয় থাকে।
কৃতজ্ঞতা:
bd-pratidin.com
jannater-pathey
https://bn.wikipedia.org/

Monday, September 2, 2019

Depth of some divine despair, tears arise

সে দিনটির কথা আমি কখনোই ভুলবো না, যেদিন কোর্টে বাবা মায়ের সেপারেশনের সময় মা'কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, "আপনি কাকে চান, ছেলেকে না মেয়েকে?"
মা তখন ছেলেকে চেয়েছিল, আমাকে চায়নি। বাবাও তখন আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। কারণ তিনি আবার বিয়ে করে নতুন সংসার করার স্বপ্ন দেখেছিলেন, অযথা আমাকে নিয়ে নতুন সংসারে বোঝা বাড়াতে চাননি।
কাঠের বেঞ্চে বসে যখন অঝোরে কাঁদছিলাম তখন বুকে আগলে ধরেছিলেন এক লেডি কনস্টেবল। আশ্রয় দিয়েছিলেন তার বাড়িতে। কিন্তু তার মাতাল স্বামীর লোলুপ দৃষ্টি পড়েছিল আমার উপর। শিশু বয়সে অত কিছু না বুঝলে ও কেমন যেন খারাপ লাগতো। রাতে যখন আন্টি বাসায় ফিরতেন, আমি তাকে সব বলে দিতাম। মহিলা দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। অতঃপর আমার নিরাপত্তার কথা ভেবে তিনি আমাকে একটা এতিমখানায় রেখে আসলেন। যাবার সময় আমাকে দু হাতে জড়িয়ে ধরে যেমন করে কাঁদলেন, আমার মাও আমাকে রেখে যাওয়ার সময় ওভাবে কাঁদেনি।
দিন যায়-মাস যায়, এতিমখানাতেই জীবন কাটতে থাকে আমার। খুব অসহায় লাগতো নিজেকে। বাবা মা বেঁচে থাকতে ও যে শিশুকে এতিমখানায় থাকতে হয় তার থেকে অসহায় বুঝি আর কেউ নেই!!
বছর দু'য়েক পরের কথা। এক নিঃসন্তান ডাক্তার দম্পতি আমাকে দত্তক নেন। জীবনটাই পাল্টে গেল আমার। হেসে খেলে রাজকীয় ভাবে বড় হতে লাগলাম আমি। আমার নতুন বাবা মা আমাকে তাঁদের মতই ডাক্তার বানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমার একগুঁয়ে ইচ্ছে ছিল একটাই, আমি ল'ইয়ার হবো। আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমতে আজ আমি একজন ডিভোর্স ল' ইয়ার। যারাই আমার কাছে তালাকের জন্য আসে, আগেই আমি বাচ্চার কাস্টোডির জন্য তাদের রাজি করাই। কারণ বাবা মা ছাড়া একটা শিশু যে কতটা অসহায়, তা আমি ছাড়া কেউ জানে না!!
চেম্বারে বসে খবরের কাগজ পড়ছিলাম। হঠাত একটা নিউজে চোখ আটকে গেল। এক বৃদ্ধা মহিলাকে তার ছেলে আর বউ মিলে বস্তায় ভরে রেলস্টেশনে ফেলে রেখে গেছে। পুলিশ উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। নিচে বৃদ্ধা মহিলার ছবি দেয়া। মুখটা খুব চেনা চেনা লাগছিল। কাছে এনে ভালো করে ছবিটা দেখলাম। বুকের মাঝে ধক করে উঠলো। এ তো সেই মহিলা যে আমাকে অনেক বছর আগে আদালতে ছেড়ে গিয়েছিল, আমার মা। নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে ছুটে গেলাম হাসপাতালে।
সেই মুখটা কিন্তু চেনার উপায় নেই। চামড়াটা কুঁচকে আছে, শরীরটা রোগে শোকে জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে খুব মায়া লাগছে, ভেতরটা ভেঙে ভেঙে যাচ্ছে। আচ্ছা, সেদিন কি তার একটু ও কষ্ট লাগেনি, যেদিন তার ১০ বছরের শিশু কন্যাটি মা-মা করে পিছু পিছু কাঁদতে কাঁদতে দৌড়াচ্ছিল?? হয়তো লাগেনি। নয়তো এভাবে ফেলে যেতে পারতো না।
একবার ভেবেছিলাম চলে যাবো। হঠাত দেখি তিনি ঘুম ভেঙে চোখ পিটপিট করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। বুঝলাম চিনতে পারেন নি, চেনার কথা ও নয়!! আমি আমার পরিচয় দিলাম। কয়েক সেকেন্ড নিষ্পলক তাকিয়ে থেকে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। নিজের কৃতকর্মের জন্য বারবার ক্ষমা চাইতে থাকে। নিজের বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরি মাকে।
মাকে পাওয়ার পর বাবার জন্য ও মনটা উতলা হয়ে উঠে। মায়ের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে বাবার অফিসে যোগাযোগ করি। জানতে পারি, কয়েক বছর আগেই রিটায়ার্ড করেছেন তিনি। বাসার ঠিকানায় গিয়ে দেখি উনি নেই। উনার দ্বিতীয় পক্ষের ছেলেমেয়েদের জিজ্ঞেস করে জানলাম, রিটায়ার্ড করার কিছু দিনের মধ্যেই তিনি প্যারালাইজড হয়ে বিছানায় পড়েন। অযথা একটা রুম দখল করে নোংরা করত, তাই বিরক্ত হয়ে ছেলেমেয়েরা তাকে একটা সরকারি বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে, অযথা ঘরে বোঝা বাড়িয়ে কি লাভ!!!
ওদের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে বৃদ্ধাশ্রম গেলাম। চিনতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো, মনে হলো একটা জীবিত লাশ পড়ে আছে বিছানায়। পাশে বসে হাতটা ধরলাম, পরিচয় দিতেই মুখ ফিরিয়ে কাঁদতে লাগলেন।
বাবা মা এখন আমার সাথে একই বাড়িতে আছেন। একসময় তারা আমাকে ছেড়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু আমি পারিনি ছাড়তে। হাজার হোক আমার বাবা মা তো।
জড়ায়ে মায়ের গলা শিশু কহে আসি,-
“মা, তোমারে কত ভালোবাসি!”
“কত ভালবাস ধন?” জননী শুধায়।
“এ-ত।” বলি দুই হাত প্রসারি’ দেখায়।
“তুমি মা আমারে ভালবাস কতখানি?”
মা বলেন “মাপ তার আমি নাহি জানি।”
“তবু কতখানি, বল।”
“যতখানি ধরে
তোমার মায়ের বুকে।”
“নহে তার পরে?”
“তার বাড়া ভালবাসা পারি না বাসিতে।”
“আমি পারি।” বলে শিশু হাসিতে হাসিতে!
কৃতজ্ঞতা: বন্ধুর পোষ্ট থেকে মোডিফাই করা।

5 People - Whom to Follow

A person who knows not,
And knows not that he knows not,
Is foolish…
Leave Him

A person who knows not,
And knows that he knows not.
Is simple… Teach him.
A person who knows not,
but believes that he knows
Is dangerous… Avoid him
A person who knows,
But does not know that he knows,
Is asleep… Awake him.
A person who knows,
And knows that he knows'
Is wise… Follow him
ডেইলীটেনমিনিটস.কম

সময়টাই এমন, এটা শুধুই অযুহাতঃ ইসলাম এটা মানেনা।

মানুষ সাধারণত নিজেদের অধঃপতনের জন্য যুগকে গালি দেয়। যে যুগের প্রভাবে মানুষ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অথচ এমনটি করা উচিত নয়। এটি অবিশ্বাসীদের ধ্যান-ধারণা। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আর তারা বলে, দুনিয়ার জীবনই আমাদের একমাত্র জীবন। আমরা মরি ও বাঁচি এখানেই। আর (দাহার) কালই কেবল আমাদেরকে ধ্বংস করে। বস্তুত: এ বিষয়ে তাদের কোনো জ্ঞান নেই। তারা শুধু ধারণাই করে।’ (সুরা: জাসিয়া, আয়াত: ২৪)
মূলত কাফির ও মুশরিকরা মহাকালের চক্রকেই সৃষ্টিজগত ও তার সমস্ত অবস্থার কারণ সাব্যস্ত করত এবং সব কিছুকে তারই কর্ম বলে অভিহিত করত। অথচ এগুলো সব প্রকৃতপক্ষে সর্বশক্তিমান আল্লাহর কুদরত ও ইচ্ছায় সম্পন্ন হয়ে থাকে। পবিত্র কোরআনের উপরোক্ত আয়াতের ‘দাহার’ শব্দ দ্বারা মহাকালকে বোঝানো হয়েছে। তাই বিভিন্ন হাদিসে ‘দাহার’ তথা মহাকালকে মন্দ বলতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা কাফিররা যে শক্তিকে ‘দাহার’ শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করে, প্রকৃতপক্ষে সেই কুদরত ও শক্তি আল্লাহ তাআলারই। তাই ‘দাহার’কে মন্দ বলার ফল প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, বনি আদম ‘দাহার’ তথা মহাকালকে গালি দেয়, অথচ আল্লাহ বলেন, আমিই প্রকৃতপক্ষে মহাকাল, আমিই রাত-দিনের পরিবর্তন ঘটাই। (বুখারি, হাদিস: ৫৭১৩)
আমরা সাধারণত সামান্য কিছুতেই সময়কে গালি দিয়ে বসি। এটি অত্যন্ত জঘন্য অপরাধ। যা হয়তো আমরা জানিই না। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে আমি বলতে শুনেছি, মহান আল্লাহ বলেন, আদমসন্তান সময় ও কালকে গালিগালাজ করে, অথচ আমিই সময়, আমার হাতেই রাত্রি ও দিবস (এর পরিবর্তন সাধিত হয়)। (মুসলিম, হাদিস: ৫৭৫৫)
তাই আমাদের উচিত, আমাদের সামাজিক স্খলনগুলোকে যুগের প্রভাব বলে চালিয়ে না দিয়ে নিজেদের পাপের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে তওবা করা। মানুষের জীবনে সময়ের দুর্ভাগ্য বলতে কিছু নেই। তাই এ ধরনের উক্তি করে আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করা থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, পবিত্র ও মহান আল্লাহ বলেন, আদমসন্তান আমাকে দুঃখ দেয়, সে বলে, ‘হায় সময়ের দুর্ভাগ্য! (আমার সময় মন্দ)! তোমাদের কেউ যেন ‘হায় সময়ের দুর্ভাগ্য’ না বলে। কারণ আমিই তো সময়, আর রাত্রি ও দিবস পরিবর্তিত করে থাকি; আমি যখন ইচ্ছা করি তখন তাদের দুটিকে সংকুচিত করে দিই। (মুসলিম, হাদিস: ৫৭৫৭)
মানুষের চারিত্রিক স্খলনেই সমাজে অশান্তি নেমে আসে। সময় কিংবা যুগের প্রভাবে নয়। তাই সমাজকে সুশৃঙ্খল ও শান্তিময় করতে আমাদের নিজেদের বদলাতে হবে, যুগ কিংবা সময়কে নয়। আল্লাহকে ভয় করতে হবে। কারণ মানুষের মাঝে যত দিন প্রকৃত আল্লাহভীতি আসবে না, তত দিন মানুষ অপরাধ থেকে ফিরে আসবে না। আর তা না হলে সমাজেও শান্তি ফিরবে না।
সময়ের প্রতিশোধ অত্যন্ত নির্মম। কারণ, আল্লাহই এর একক নিয়ন্ত্রক। সূরা আল ‘আসর এর প্রকৃ্ষ্ট প্রমাণ। তাই যারা সময়কে গালি দেয় তারা অত্যন্ত বোকা। সময় সবার জন্য একই ভাবে বরাদ্দ করা। কারো ২৪ ঘন্টা, কারো ২৫ ঘন্টা আবার কারো ২০ ঘন্টা এমন নয়। ২৪ ঘন্ট নিয়ম মেনে কাজ করেই বহু মানুষ সাফল্যের চূড়ায় গিয়েছেন। আবার ২৪ ঘন্টাকে কাজে না লাগিয়ে অনেকেই সারা জীবন নষ্ট করেছে।
Time Management means self management.
-ইসলামিক লাইফ/কালেরকন্ঠ

১০ ধরনের বন্ধু

১. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধু
ফেসবুক ও টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে বহু বন্ধুকে একত্রিত করে তেমন কোনো বন্ধু আপনার নিশ্চয়ই আছে। সে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করে, সবাইকে এসএমএস বা মেইল করে এবং সবার খবর নেয়। এমন বন্ধু সব ধরনের একাকিত্ব ও একঘেয়েমি থেকে আপনাকে রক্ষা করে।
২. মজার বন্ধু
এ ধরনের বন্ধদের রসবোধ অতি তীব্র। তাদের মুখে সব সময়েই মজার মজার কথা শোনা যায়। তাদের মজা করার প্রতিভা দেখে অনেক সময় অবাক হতে হয়। তারা আপনাকে শেখায় কিভাবে মজা করতে হয়। কখনো আপনার জীবনে হাসির ঘাটতি পড়লে এ ধরনের বন্ধুকে ফোন করলেই হবে। বাকি দায়িত্ব তিনিই পালন করবেন।
৩. অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়
বন্ধুমহলে এমন কেউ রয়েছে যে কিনা সব সময় অ্যাডভেঞ্চারের জন্য প্রস্তুত থাকে। পাহাড়-পর্বত, সমুদ্র, মরুভূমি ইত্যাদি সব স্থানের কঠিন পরিস্থিতিতে তারা ঘোরাঘুরি করতে পছন্দ করে। তাদের ধ্যান জ্ঞান হলো কিভাবে নতুন কোনো স্থানে অ্যাডভেঞ্চারে যাওয়া যায়। আর তাদের আশপাশে থাকলেও শরীরে একটা টগবগে উত্তেজনা অনুভব করা যায়।
৪. গুরু
বন্ধুমহলে এমন একজনকে পাওয়া যায়, যার কাজ হলো গুরুর ভূমিকা নেওয়া। এ ধরনের বন্ধুর কাজ হলো অন্যকে পরামর্শ দেওয়া। নানা কাজের সমালোচনার মাধ্যমে এরা আপনাকে পথনির্দেশ করতে পারে।
৫. ক্রেজি
গুরুগম্ভীর কোনো বিষয় এ ধরনের বন্ধুদের অভিধানে নেই। পাগলপ্রায় এ ধরনের বন্ধুরা যা ভালো লাগে তাই করে। আর নিজেদের মতো করে থাকার জন্য এদের জুড়ি নেই। এরা ভালো লাগার বিষয়ের জন্য নিজের জীবন দিতেও দ্বীধা করে না।
৬. নরম মনের বন্ধু
এ ধরনের বন্ধুর মন খুবই নরম হয়। অতিরিক্ত আনন্দের বিষয়ে এ ধরনের বন্ধুরা নিজের কান্না আটকে রাখতে পারে না। আর যদি দুঃখের বিষয় হয়, তাহলে তো কথাই নেই। আবেগের আধিক্য থাকার জন্য কারও সামান্য কটুবাক্যতেও এরা অত্যন্ত দুঃখ পায়।
৭. মাতৃসুলভ বন্ধু
আপনার বাড়ি থেকে দূরে যাওয়া উচিত না। সাবধানে পথ চলতে হবে। গাড়িতে ওঠার সময় সাবধান। টাকা পয়সা সাবধানে রাখতে হবে। পড়াশোনা ভালোভাবে করতে হবে। খাওয়া-দাওয়া ছাড়া একবেলাও থাকা যাবে না -এমন নানা কথাই ক্রমাগত স্মরণ করিয়ে দেবে মাতৃসুলভ বন্ধু। এরা সব সময় আপনার খেয়াল রাখবে। অনেকটা আপনার মায়ের মতোই।
৮. সব সময় অনিশ্চিত
এ ধরনের বন্ধু পরমুহূর্তে কি করবে সে বিষয়ে কোনো অনুমান করা সম্ভব নয়। তাকে কখনো দেখা যাবে হাসাহাসি করতে, পরমুহূর্তেই আবার কান্নাকাটি করতে। তার কার্যক্রম দেখে আপনার কোনোভাবেই বোঝা সম্ভব হবে না যে, এরপর সে কী করবে। তার কথাবার্তাও একইভাবে অনিশ্চিত হবে। সে কাকে কোন প্রসঙ্গে সমর্থন করবে আর কোনটি পছন্দ করবে, তার কোনো সূত্র খুঁজে পাবেনা কেউ।
৯. ধার্মিক বন্ধু
বন্ধুমহলে একজন থাকে যে সব বিষয়ে ধর্মকে টেনে আনে। কোনো বিষয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করলেই সে অত্যন্ত সিরিয়াস হয়ে যায় এবং সব আলোচনারই গন্তব্য একদিকে গিয়ে পৌঁছায়।
১০. সততার চূড়ান্ত সমর্থক
কোন জিনিসটি করা উচিত আর কোন জিনিসটি করা উচিত নয়, এ ধরনের কথা সব সময় এমন বন্ধুদের কাছে জানা যায়। আপনি জিজ্ঞাসা না করলেও তারা এমন বিষয় অবতারণা করবে যা থেকে তাদের সততা নিয়ে চিন্তাভাবনা ফুটে উঠবে। আর অন্যের অসততা নিয়েও এরা সব সময় আলোচনা করবে। আশপাশে যা যা ঘটবে তা অনেকটা আয়নার মতোই এদের কাছে প্রতিফলিত হবে।
সূত্রঃ আই.ই

মানুষ কখনই তার প্রিয় জিনিসের পরাজয় দেখতে চায় না! যেমন আমরা চাইনা সন্তানদের পরাজয় দেখতে।

আরব দেশে কায়েস নামক এক বেদুঈনের মুলকি ও দুলকি নামে দুটি তেজী ও সুন্দর ঘোড়া ছিল। ঐ অঞ্চলের কোন ঘোড়াই তাদের সাথে দৌড়ে পারতো না। মুলকি এক নম্বরে এবং দুলকি ছিল দুই নম্বরে।
অত্র অঞ্চলের বড় বড় শাসক ও ব্যবসায়ীরা এই বেদুঈনের কাছ থেকে ঘোড়া দুটি কেনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। অর্থের প্রতি যাদের কোনো মোহ বা লোভ নেই তাদের কাছে বহু বহু টাকা অর্থহীন হয়ে পড়ে।
কোনো অবস্থাতেই ঘোড়া দুটির একটিও বিক্রি করতে রাজি ছিল না কায়েস।
এই ঘোড়া দুটি পেতে মরিয়া একজন এক দুর্ধর্ষ চোরকে পাঠায় সেই ঘোড়া দুটির একটি চুরি করতে। চোর যখন মুলকির পিঠে চড়ে রওনা হয়ে গেছে তখন ঘোড়ার খুঁরের শব্দে মালিকের ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘুম ভেঙ্গে বিষয়টা বুঝতে পেরে কায়েস দুলকির পিঠে চড়ে চোরকে পিছু ধাওয়া করে।
কিন্তু মুলকিকে দ্রুত চালানোর কায়দা কায়েস ভিন্ন অন্য কারো জানা ছিলো না। তাই দুলকি মুলকিকে প্রায় ধরে ফেলার অবস্থা। কারণ মুলকি জানে তার পিঠে মালিক নয় সে অন্য কেউ।
এমন সময়ে হঠাত কায়াসের মনে চিন্তার উদ্রেক হল, আমার মুলকি আজ পর্যন্ত কোনো দৌড়ে হারে নাই। আজ দুলকি মুলকিকে ধরে ফেললে সেটা মুলকির পরাজয়। মুলকির এমন পরাজয় তার কাছে তাকে চিরতরে হারানোর চেয়েও বেদনাদায়ক।
তখন কায়েস পিছন থেকে চিতকার করে বলতে থাকে, ওহে হতভাগা! তুই মুলকির বাম কান ধরে মোচড় দে। চোর কথামত তাই করল। এতে মুলকির গতি বহুগুণ বেড়ে যায় এবং দেখতে দেখতে কায়েসের সামনে থেকে মুলকি অদৃশ্য হয়ে যায়। দুলকির তখন সাধ্য ছিলনা মুলকিকে ধরা।
মুলকিকে হারালেও কায়েসকে সেই প্রিয় ঘোড়ার পরাজয়টি দেখতে হল না। এটাই কায়েসের সান্ত্বনা। মনের গভীর দুঃখে বলতে লাগলো কায়েস, “না, আমার মুলকি হারেনি, মুলকি হারতে পারেনা, ওকে আমি হারতে শিখাইনি।”
-১৯৬৭র স্মৃতির পাতা থেকে লেখা

ভালবাসা, ঘৃনা, উপকার আর উপেক্ষা

কোন দেশে এক যুবতী মেয়ে বাস করতো। সে নিজেকে খুবই ঘৃনা করতো কারণ, সে ছিল অন্ধ। কিন্ত মেয়েটি তার ছেলে বন্ধুকে অসম্ভব ভালবাসতো। সে প্রায়ই বলতো আমি আমার দৃষ্টিশক্তিটা ফিরে পেলে আমার ছেলে বন্ধুটিকেই বিয়ে করবো।
একবার মজার এক ঘটনা ঘটে গেল তার জীবনে। কেউ একজন তাকে চোখ দান করলে সে তার দৃষ্টিশক্তি পুরোপুরি ফিরে পায়। সে এখন চক্ষুষ্মান আর সে সবকিছুই দেখতে পাচ্ছে। দেখতে পাচ্ছে তার ছেলে বন্ধুটিকেও। তার ভালবাসার মেয়েটিকে ছেলে বন্ধুটি বল্লো, শোন, তুমিতো এখন সবকিছুই দেখো, এখন আমাকে বিয়ে করবে কি?
মেয়েটি ভালো করে দেখলো যে তার ছেলে বন্ধুটি পুরোপুরি অন্ধ। তাই সে তার প্রিয় ছেলে বন্ধুটিকে বিয়ে করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করলো।
ছেলে বন্ধুটি মেয়েটির এই সিদ্ধান্তে শোকে পাথর হয়ে গেল। কান্না জড়িত কন্ঠে ফিরে চলে যাবার সময় সে তার ভালবাসার মেয়েটিকে বলে গেলো, “প্রিয় বান্ধবী আমার, তুমি আমার চোখ দু’টির যত্ন নিও।”
উপদেশঃ অবস্থা বদলে যায়, সাথে মনটাও। আগে কোন অবস্থায় ছিল সেটা মানুষ জেনেও না জানার ভান করে। নোতুন অবস্থায় সে কি করে এলো সেটাও সে বোঝার চেষ্টা করে না। আর এধরনের মানুষেরা পরে একেবারে নিঃসঙ্গ হয়ে যায়।

আল্লাহ অপেক্ষায় থাকেন বান্দা কখন তাঁর কাছে কিছু চাইবে

বর্তমান পৃথিবীর সর্বত্রই যেন ফেতনা-ফ্যাসাদ, নৈরাজ্য আর বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। কেউ আজ নিরাপদ নয়, ঘরে-বাইরে কেউ বলতে পারবে না যে, আমি নিরাপদে আছি। সবাই যেন এক মহা-আতংকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। এই মুহূর্তে আমাদের সবাইকে মহান আল্লাহতায়ালার কাছে অনেক বেশি প্রার্থনা করতে হবে। একমাত্র তিনিই যদি করুণা করেন তাহলে এই বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে আমরা মুক্ত হতে পারি, আর না হয় অন্য কোনও মাধ্যম আজ অবশিষ্ট নেই।
যে ব্যক্তি প্রকৃত প্রেরণা নিয়ে মহান খোদার কাছে প্রার্থনা করে তাকে আল্লাহতায়ালা কখনও ব্যর্থ হতে দেন না। যেভাবে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। কিন্তু যারা আমার ইবাদত সম্বন্ধে অহংকার করে, তারা নিশ্চয়ই লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’ Rabbukumud 'ooneee astajib lakum; innal lazeena yastakbiroona an 'ibaadatee sa yadkhuloona jahannama daakhireen (সুরা মু’মিন: ৬০)। ‘আর যা কিছু তোমরা তাঁর কাছে চেয়েছ তিনি তোমাদের সব দিয়েছেন এবং যদি তোমরা আল্লাহর নেয়ামতগুলো গণনা করতে চাও তাহলে তোমরা সেগুলোর সংখ্যা নিরূপণ করতে পারবে না’ Wa aataakum min kulli maa sa altumooh; wa in ta'uddoo ni'matal laahi laa tuhsoohaa; innal insaana lazaloo mun kaffaar(সুরা ইব্রাহিম: ৩৪)। ‘অথবা কে উদ্বিগ্নচিত্ত ব্যক্তির দোয়া শুনেন যখন সে তার নিকট দোয়া করে এবং তার কষ্ট দূর করে দেন এবং তোমাদের পৃথিবীর উত্তরাধিকারী করে দেন আল্লাহর সঙ্গে কি অন্য কোনও উপাস্য আছে তোমরা খুব কমই উপদেশ গ্রহণ কর’ Ammany-yujeebul mud tarra izaa da'aahu wa yakshifussooo'a wa yaj'alukum khula faaa'al ardi 'a-ilaahum ma'al laahi qaleelam maa tazak karoon (সুরা নামল: ৬২)। মহান খোদাতায়ালা তার বান্দার দোয়া গ্রহণ করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন, কখন তার বান্দা তাকে ডাকবে আর তিনি তা গ্রহণ করবেন এবং তার দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন। তিনি সবার খুবই নিকটে রয়েছেন, যেভাবে কোরআনে উল্লেখ রয়েছে ‘আর যখন আমার বান্দাগণ আমার সম্বন্ধে তোমাকে জিজ্ঞেস করে, তখন বল, আমি নিকটে আছি। আমি প্রার্থনাকারীর প্রার্থনার উত্তর দেই যখন সে আমার নিকট প্রর্থনা করে। সুতরাং তারা যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার ওপর ঈমান আনে যাতে তারা সঠিক পথপ্রাপ্ত হয়’ Wa izaa sa alaka 'ibaadee 'annnee fa innee qareebun ujeebu da'wataddaa'i izaa da'aani falyastajeeboo lee walyu minoo beela 'allahum yarshudoon (সুরা বাকারা: ১৮৬)। এ আয়াত থেকে স্পষ্ট যে, তিনি প্রার্থনাকারীর প্রার্থনার উত্তর দিয়ে থাকেন। আমরা যদি প্রকৃতভাবে তাকে ডাকি তাহলে অবশ্যই তিনি আমাদের ডাকে সাড়া দেবেন। তিনি তো সেই জীবিত খোদা যে খোদা পূর্বে কথা বলতেন আর এখনও বলেন, তার সঙ্গে কথা বলার জন্য শুধু প্রয়োজন পবিত্রাত্মার।
দোয়ার মধ্যে অনেক শক্তি নিহিত রয়েছে। দোয়া এমন একটি জিনিস যা অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলে। দোয়ার মাধ্যমে ও এর কবুলিয়তের মাধ্যমে বান্দার সঙ্গে আল্লাহর সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে থাকে। আমরা জানি, নবী করিম (সা.)-এর দিনের আরম্ভ থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত— প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখি দোয়ায় পরিপূর্ণ। আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারে আমাদের প্রতি মহানবী (সা.)-এর অনুগ্রহ ও রহমতের একটি উজ্জ্বল দিক হল তাঁর দোয়া। জীবন্ত খোদার সঙ্গে সম্পর্ক ও সদা জীবন্ত রাসূল (সা.)-এর দোয়ার মাঝেই যে জীবন ও জীবনের আনন্দ নিহিত এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। যেভাবে পবিত্র কোরআনে তার ইবাদত সম্পর্কে উল্লেখ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমার নামাজ এবং আমার কোরবানি এবং আমার জীবন এবং আমার মরণ সব আল্লাহর জন্য, যিনি বিশ্বজগতের প্রভু-প্রতিপালক’ inna Salaatee wa nusukee wa mahyaaya wa mamaatee lillaahi Rabbil 'aalameen(সুরা আনআম: ১৬২) । মহানবী (সা.)-এর সবকিছুই ছিল আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির জন্য। তাই তো তিনি (সা.) সব সময় আল্লাহর মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতেন। তাঁর (সা.) দোয়ার বরকতে লাখ লাখ আধ্যাত্মিকভাবে মৃত জীবন ফিরে পেয়েছে, আধ্যাত্মিক অন্ধরা দৃষ্টি ফিরে পেয়েছে, বোবাদের মুখে ঐশী তত্ত্ব-জ্ঞান ফুটেছে এবং বংশ পরম্পরায় পথভ্রষ্টরা ঐশী রঙ ধারণ করার যোগ্য হয়েছে। যেই আল্লাহ মহানবী (সা.)-এর সময় ছিলেন সেই আল্লাহই তো আজও আছেন। আমরা যদি প্রকৃতভাবে আল্লাহর বান্দা হই তাহলে তিনি অবশ্যই আমাদর ডাকে সাড়া দেবেন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের সবাইকে পবিত্র কোরআনের এই দুটি দোয়া বেশি বেশি পাঠ করা উচিত, ‘রাব্বি নাজ্জেনি মিনাল কাউমিজ জালেমিন’ Rabbi najjinee minal qawmiz zaalimeen অর্থাত হে আমার প্রভু-প্রতিপালক! তুমি আমাকে অত্যাচারী জাতি থেকে উদ্ধার কর।-(সুরা কাসাস: ২১) ‘রাব্বিন ছুরনি আলাল কাউমিল মুফসেদিন’ Rabbin surnee 'alal qawmil mufsideen অর্থাত হে আমার প্রভু-প্রতিপালক! তুমি আমাকে এ বিপর্যয় সৃষ্টিকারী জাতির বিরুদ্ধে সাহায্য কর।-(সুরা আনকাবুত: ৩০)
আল্লাহতায়ালা পবিত্র, তিনি পবিত্রতা পছন্দ করেন। আজকে আমাদের হৃদয় যদি পবিত্র হতো তাহলে আমাদের দোয়া তিনি গ্রহণ করে সব বিপদাপদ থেকে আমাদের রক্ষা করতেন কিন্তু আমরা যেহেতু তার আদেশ অনুযায়ী নিজেদের জীবন পরিচালনা করি না, তাই তিনিও আমাদের কোনও পরওয়া করেন না। তাই খোদার কাছে দোয়া কবুল হওয়ার জন্য প্রথমে নিজেকে পবিত্র করতে হবে। আর দোয়া কেবল নিজের জন্য নয়, সবার জন্য করতে হবে। শুধু বিপদে পড়লেই যে দোয়া করতে হবে তা নয়, বরং সব সময় খোদার সন্তুষ্টির জন্য দোয়া করতে হবে, যেভাবে মহানবী (সা.) সব সময় দোয়ায় রত থাকতেন। ইসলামের বিজয়ের জন্য প্রয়োজন শান্তিময় পরিবেশ তৈরি করা, সব মানুষকে সে যে ধর্মেরই অনুসারী হোক না কেন, তার সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং মহান আল্লাহর দরবারে বিনত হয়ে সবার কল্যাণের জন্য দোয়া করা। এখন সবার আন্দোলন একটাই হওয়া উচিত, আর তা হলো দোয়ার আন্দোলন। তাই আসুন, আমরা সবাই সবার নিরাপত্তা ও মঙ্গলের জন্য সেই আল্লাহর দরবারে মাথা নোয়াই, যিনি আমাদের সবাইকে সৃষ্টি করেছেন।
নামাযী তোর নামায হলো যে ভুল
নামাজী, তোর নামাজ হলো রে ভুল।
মসজিদে তুই রাখিরি সিজ্দা, ছাড়ি ইমানের মূল॥
নামাজে সামিল হয়ে জামাতের,
আউড়ালি মুখে সুরা কোরানের,
ভাব্লি কি তুই পার হয়ে গেলি, পুলসেরাতের পুল॥
আজ মিলন তীর্থে বাঁধ রে কাতার মনের জায়নামাজে,
সেই আরফাতে তোর নুইয়ে দে দিল না ফরমানি লাজে,
ওজু করে ফের তৌবার নীরে,
তহরিমা বাঁধ ভীতু নত শিরে,
বন্দেগী তোর কবুল হবে রে, কিয়ামতে পাবি কূল॥

মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভূবনে

বয়স কম ভেবে মৃতুচিন্তা না করা বোকামি
অবশেষে প্রত্যেক ব্যক্তিকে মরতে হবে এবং তোমরা সবাই কিয়ামতের দিন নিজেদের পূর্ণ প্রতিদান লাভ করবে৷ একমাত্র সেই ব্যক্তিই সফলকাম হবে, যে সেখানে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাবে এবং যাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে ৷ আর এ দুনিয়াটা তো নিছক একটা বাহ্যিক প্রতারণার বস্তু ছাড়া আর কিছুই নয়৷
সৃষ্টি থেকেই মানুষ দুর্বল, আল্লাহতায়ালা সীমিত বা নির্ধারিত হায়াত দিয়ে তাকে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। জীবনের একটি ধারাবাহিক পঞ্জিকাও রয়েছে। শৈশব, কৈশোর, যৌবন, প্রৌঢ়ত্ব ও বার্ধক্য। জীবনের বর্ণিত ধাপগুলোর চলন, বলন ও আচরণের ভিন্ন ভিন্ন রীতিনীতি আছে। যা ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ পরিবর্তন করতে পারবে না। কোনো ব্যক্তি যদি বুড়ো বয়সে যুবকসুলভ আচরণ দেখায় তবে সেটা আল্লাহতায়ালার বিধানে অবজ্ঞার শামিল, সত্য গোপনের চেষ্টা।
জীবন ও মরণ দুটি পৃথক সত্ত্বা হলেও মৃত্যুর বিপরীতই হল জীবন। জীবনের জন্য মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী এবং প্রত্যেক আত্মার জন্যই মৃত্যু অবধারিত। মৃত্যুর জন্যই প্রভু মানুষকে জীবন দান করেছেন।
রোগবালাই থেকে মানুষের কোনো না কোনো উপায়ে মুক্তি পাওয়ার পথ আছে। কিন্তু মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনো উপায় কারও নেই। মৃত্যু সবারই অবধারিত। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে। পৃথিবীর সবকিছুই ধ্বংসশীল মহিমাময় মহানুভব পালন কর্তার সত্ত্বা ছাড়া Kullu man 'alaihaa faan. Wa yabqaa wajhu rabbika zul jalaali wal ikraam (সূরা আর রহমান, আয়াত-২৬-২৭) । সুতরাং একমাত্র আল্লাহতায়ালার সত্তাই চিরন্তন ও চিরঞ্জীব আর সবই ক্ষণস্থায়ী।
জীবনের প্রতিটি ঘাটের সঙ্গে বয়সের সামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পর্ক আছে। ছোট বড় সবারই উচিত বয়সের সঙ্গে ভারসাম্য রেখে নিয়মকানুন রীতিনীতি ও আচার-আচরণ প্রকাশ করা, কেননা আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদিগকে পরীক্ষা করার জন্য Allazee khalaqal mawta walhayaata liyabluwakum ayyukum ahsanu 'amalaa; wa huwal 'azeezul ghafoor (সূরা মুলক, আয়াত-২)। বর্ণিত আয়াতে, মানুষের জীবনের আগেই মরণ সৃষ্টি করার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। বুঝা যাচ্ছে মৃত্যুর জন্যই জীবনের সৃষ্টি।
মৃত্যুর ভয় সামনে রেখে জীবন পরিচালনার জন্যই আল্লাহতায়ালা আগে মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন। যেহেতু মৃত্যু আগে সৃষ্টি করা হয়েছে তাই জীবনের সবচেয়ে সত্য হচ্ছে মৃত্যু। জীবন তো নশ্বর আর মৃত্যু হল অবিনশ্বর, জীবন নকল মুসাফির আর মৃত্যু সত্য যাত্রী। জীবনকে কেউ পরিবর্তন করার যেমন এখতিয়ার রাখে না তেমনি যার যখন যেভাবে মৃত্যু রয়েছে তা থেকে এক চুলও এদিক সেদিক করতে হবে না।
নির্ধারিত সময়েই (যা একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন) প্রত্যেক মানুষকে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে বাধ্যতামূলকভাবে মৃত্যুর সঙ্গে আলিঙ্গন করতে হবে। পবিত্র কোরআনের অন্য আয়াতে এসেছে, যখন তাদের সময় আসবে তখন তারা মুহূর্তকাল দেরি করতে পারবে না এবং তাড়াতাড়ি করতে পারবে না Wa likulli ummatin ajalun fa izaa jaaa'a ajaluhum laa yastaakhiroona saa'atanw wa laa yastaqdimoon (সূরা আরাফ-৩৪) ।
অতএব, বয়স কম ভেবে মৃতুচিন্তা না করা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। যেহেতু মৃত্যুর জন্যই জীবন তাই দরাজ হায়াতের জন্য পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা যেতেই পারে।
https://www.quran411.com-
যুগান্তরডটকম

হাস্যরস, শখ এবং বন্ধুত্ব: সবসময় ইতিবাচক থাকার কয়েকটি উপায়

মানুষের রসবোধের সাথে তার আয়ুর বিষয়টি জড়িত। সপ্রাণ রসবোধে যে মানসিকতা প্রতিফলিত হয়, তা কোন কোন মানুষের আয়ু বাড়িয়ে তোলার জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হতে পারে।- রেমন্ড মুডি
ঘটক: আপনার ছেলের জন্য মিষ্টি একটা মেয়ে দেখেছি।
অভিভাবক: তাহলে তো ওই মেয়েতে আমাদের হবে না।
ঘটক: কেন হবে না?
অভিভাবক: আমাদের ছেলের ডায়াবেটিস আছে তো তাই।
আপনি আসলে কেমন ধরণের মানুষ? একটি গ্লাসে অর্ধেক পানি থাকলে আপনি এটিকে কিভাবে দেখেন? অর্ধেক খালি নাকি অর্ধেক ভর্তি? যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা বলছে, আশাবাদী ব্যক্তিরা হতাশাবাদীদের চেয়ে অনেক বেশি দিন বাঁচেন। এই তত্ত্ব মতে, আশাবাদীরা হয়তো নিজেদের আবেগকে অনেক সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন যা তাদেরকে মানসিক চাপের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে দূরে রাখে।
মার্কিন গবেষকরা বলছেন যে, হতাশাবাদী ব্যক্তিরা যদি নিজেদের এমন ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতে পারেন যেখানে সব ধরণের সমস্যা দূর হয়ে যাবে, এমন দৃষ্টিভঙ্গিও তাদের জন্য উপকারী হতে পারে। মানুষ কিভাবে আশাবাদী হয় এবং হতাশা বাদীরা জীবন সম্পর্কে ইতিবাচক থাকতে কি কি করতে পারেন সে বিষয়ে কিছু উপায় সম্পর্কে জানবো আমরা।
"নেতিবাচকতা নিয়ে পিছিয়ে থাকবেন না"
বলা হয় যে, "নদীর অপর পাশের ঘাস সব সময় একটু বেশি-ই সবুজ দেখায়"। কিন্তু এ ধারণা পর্তুগালের লিসবনে থাকা তানিয়া গুয়ার্দাকে তেমন প্রভাবিত করতে পারেনি।
"সবারই সমস্যা থাক। আমার জীবন যেমন, সেভাবেই একে উপভোগ করার চেষ্টা করি আমি। আমার যা আছে তা নিয়েই সন্তুষ্ট আমি। ভালো স্বাস্থ্য, পরিবার, একজন ভালোবাসার জীবন সাথী আর আমার পছন্দের একটি চাকরী।"
উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা কাটাতে তানিয়া নিজেকে ব্যস্ত রাখেন এর পেছনের সমস্যা খুঁজে বের করা নিয়ে, এবং সেগুলো সমাধান করার পর তিনি কেমন অনুভব করবেন তা নিয়ে ভাবতে পছন্দ করেন তিনি। তিনি অন্যদের নেতিবাচকতাকে তেমন পাত্তা দেন না। তিনি বলেন, "আমি কখনোই নেতিবাচক ব্যক্তিগত মন্তব্য নিয়ে বেশি ক্ষণ ভাবি না। এগুলোকে আমার পর্যন্ত আসতে দেই না।"
"হাস্যরস বোধ"
কলোরাডোর ভিকি সিসকা, বেশ কিছু মানসিক চাপময় খারাপ সময় পার করেছেন তিনি। কিন্তু তারপরও তিনি আশাবাদী।
"গান আমার আত্মাকে তৃপ্ত করে, হাস্যরস বোধ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নতুন ধারণা দেয় এবং আমার অনেক ভালো বন্ধু আছে যারা আমাকে ভালোবাসে এবং খেয়াল রাখে," তিনি বলেন। হাস্যরস বোধ হার্টফোর্ডশায়ারের পিপা কেনেডিকেও ইতিবাচক থাকতে সাহায্য করেছিলো। তিনি নিয়মিত বিবিসির টিভি সিরিজ 'ড্যাডস আর্মি টু হেল্প হার গেট থ্রু এ ব্যাড ব্রেক-আপ' নিয়মিত দেখতেন।
"আমার মনে হয়, আমাদের যা আছে তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকা- এবং অনেক চকলেট- অনেক বেশি সাহায্য করে," তিনি বলেন।
"নিজের প্রশংসা করুন"
লিভারপুলের সুসানা চ্যাপম্যান বিবিসিকে বলেন, ছোট থেকে ছোটতর বিষয়ে নিজের প্রশংসা করেন তিনি।
"আমি নিজের মধ্যে থাকা আবর্জনা বের করে দেই। আমার মনে হয় নিজের জন্য এটা খুবই সঠিক এবং সহায়ক," তিনি নিজেই নিজেকে বলেন। সুসানা নিজের নেতিবাচকতাকে ইতিবাচকতায় রূপান্তরের চেষ্টা করেন।
"খারাপ কিছু নিয়ে চিন্তা করার পরিবর্তে দরকার হলে সারা রাত জেগে ইউটিউব দেখি আমি। আমার মনে হয় যে, অন্তত হাসির কিছু ভিডিও দেখে সময় পার করেছি আমি। আর হাসি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো।"
"কষ্টের সময়ও হাসুন"
ডাচ সংস্কৃতিতে একটি প্রবাদ রয়েছে। আর তা হলো: "গেন গ্রোটার ফারমাক ডান লিডফারমাক" অর্থাত "দুর্ভোগের চেয়ে বড় বিনোদন আর কিছু নেই," এমনটা বলছিলেন নেদারল্যান্ডসের ব্রেডার বাসিন্দা অ্যাড ডি লিউ।
কিন্তু তার মতে তার বাবা তাকে এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টিপস শিখিয়েছেন। আর তা হলো, নিজের দুর্ভাগ্য নিয়ে হাসো। অ্যাড এটি মেনে চলেন এবং বলেন যে, তার জীবন 'একটি বড় ধরণের আনন্দোতসব'।
"অনেকগুলো শখ তৈরি করুন"
স্ট্যাফোর্ডশায়ারের কিডসগ্রোভের বাসিন্দা সু ওকলে ডান বলেন, তিনি সব সময় ইতিবাচক আর সুস্বাস্থ্যবান কারণ তিনি তাই করেন "যা তার আত্মায় সুর তৈরি করে।"
তিনি বলেন যে তার সব ইতিবাচকতা আসে তার অনেক ধরণের শখ আর নির্মল বায়ু থেকে।
"এটা আমার জন্য কাজ করে," সু বলেন। তিনি সব সময়ই "ভয় উদ্রেককারী গল্প এড়িয়ে চলেন যা সূর্য এবং অ্যালকোহল নিয়ে তৈরি হয়।"
"ব্যায়াম করুন এবং সুস্থ থাকুন"
বন্ধুত্ব আর হাসির মতোই উপকারী আরেকটি বিষয় রয়েছে ইতিবাচক থাকার। আর তা হল শারীরিক ব্যায়াম। রবিন ব্ল্যাক নিয়মিত যোগ ব্যায়াম এবং ধ্যান চর্চা করেন। তিনি শারীরিকভাবে সবল ও সুস্থ থাকার পরামর্শ দেন।
"কৃতজ্ঞ হোন, তালিকা তৈরি করুন এবং সেগুলো পালন করুন, যা করতে আপনার ভালো লাগে সেগুলোই করুন," তিনি বলেন।
Dedicated to all women
Woman has the most unique character like salt
Her presence is never remembered but Her absence makes all the things tasteless!!
Pass it to all the lovely ladies…..your Mother. …..your Wife……your daughter …your sister…..your friend.
সূত্র: বিবিসি।
Others

প্রতিকূলতাঃ Adversity

প্রতিকূলতা না থাকলে সাফল্যটাই পানসে পানসে মনে হয়। তাই আল্লাহ মানুষকে পরখ করবার জন্য প্রতিকূলতা সৃষ্টি করেছেন। কোন নবী রাসুল এই প্রতিকূলতা
বাইরে ছিলেন না। আর আমরা একটু প্রতিকূলতা দেখলেই ঘাবড়ে যাই।
দেখুন আর কুরআন কী বলেঃ
“আর নিশ্চয়ই আমরা ভীতি, অনাহার, প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে এবং উপার্জন ও আমদানী হ্রাস করে তোমাদের পরীক্ষা করবো৷ এ অবস্থায় যারা সবর করে এবং যখনই কোন বিপদ আসে বলেঃ “আমরা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর দিকে আমাদের ফিরে যেতে হবে। তাদেরকে সুসংবাদ দিয়ে দাও৷ তাদের রবের পক্ষ থেকে তাদের ওপর বিপুল অনুগ্রহ বর্ষিত হবে, তাঁর রহমত তাদেরকে ছায়াদান করবে এবং এই ধরণের লোকরাই হয় সত্যানুসারী৷”-আল বাক্কারাহ আয়াত ১৫৫-১৫৭
কবিগণও লিখেছেনঃ
‘জীবনের প্রতি অধ্যায়ে চাই দৃঢ় প্রত্যয়
চাই ঘাত-প্রতিঘাত লৌহ-কঠিন সত্য হৃদয়’
‘আসবে পথে আঁধার নেমে,
তাই বলে কি রইব থেমে?’
‘কেন পান্থ ক্ষান্ত হও হেরি দীর্ঘ পথ,
উদ্যম বিহনে কার পুরে মনোরথ?
‘ধৈর্য ধর ধৈর্য ধর বাঁধ বাঁধ বুক,
সংসারে সহস্র দুঃখ আসিবে আসুক।’
‘পারিব না এ কথাটি বলিও না আর
কেন পরিবে না তাহা ভাবো একবার,
পাঁচজনে পারে যাহা,
তুমিও পারিবে তাহা,
পার কি না পার কর যতন আবার
একবার না পারিলে দেখ শতবার।’
দৈন্য যদি আসে আসুক, লজ্জা কিবা তাহে?
মাথা উঁচু রাখিস।
সুখের সাথী মুখের পানে যদি না চাহে
ধৈর্য ধরে থাকিস।
রুদ্ররূপে তীব্র দুঃখ যদি আসে নেমে,
বুক ফুলিয়ে দাঁড়াস।
আকাশ যদি বজ্র নিয়ে মাথায় পড়ে ভেঙে
র্ঊর্ধ্বে দু’হাত বাড়াস।
প্রতিকূলতার মূল্যঃ
To realize the value of ONE YEAR, ask a student who failed a grade.
১ বছরের কী দাম, জানতে চাইলে সেই ছাত্রকে জিজ্ঞাসা করো যে কোন গ্রেড পায়নি।
To realize the value of ONE MONTH, ask a mother who gave birth to a premature baby.
১ মাসের কী দাম, জানতে চাইলে সেই মা’কে জিজ্ঞাসা করো যে একটি প্রি-ম্যাচিউর বেবীর জন্ম দিয়েছে।
To realize the value of ONE WEEK, ask the editor of a weekly newspaper.
১ সপ্তাহের কী দাম, জানতে চাইলে কোন সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদককে জিজ্ঞাসা করো।
To realize the value of ONE HOUR, ask the lovers who are waiting to meet.
১ ঘন্টার কী দাম, জানতে চাইলে কোন প্রেমিককে জিজ্ঞাসা করো যে তার প্রেমিকার জন্য অপেক্ষমান।
To realize the value of ONE MINUTE, ask a person who missed the train.
এক মিনিটের কী দাম জানতে চাইলে জিজ্ঞাসা করো সেই লোকটিকে যে এইমাত্র তার ট্রেন মিস করেছে।
To realize the value of ONE SECOND, ask a person who just avoided an accident.
১ সেকেন্ডের কী দাম, জানতে চাইলে কোন কোন ব্যক্তিকে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছে।
To realize the value of ONE MILLISECOND, ask the person who won a silver medal in the Olympics.
এম মিলি-সেকেন্ডের কী দাম জানতে চাইলে জিজ্ঞাসা করো সেই অ্যাথলেটকে যে অলিম্পিকে রৌপ্য পদক পেয়েছে।
Treasure every moment that you have! And treasure it more because you shared it with someone special, special enough to spend your time.
প্রতিকূলতা কাকে বলে জানতে হলে নবী মুহাম্মদ(সা.)এর জীবনী পড়ো। তাঁর জীবনী সারা দুনিয়ার মানুষের জন্য সব প্রতিকূলতার জ্বলন্ত উদাহরণ।
রেফাঃ আল কুরআন
Time.com