মানুষের জীবনের বহু দিনের অভিজ্ঞতা, ভুয়ো-দর্শন এসবের মাধ্যমে প্রবাদ ও প্রবচনের প্রসার ঘটে। বিশাল বিস্তৃত পৃথিবী, নানা বর্ন, নানা ধর্ম, নানা জাতি, নানা সামাজিক এবং সাংসারিক আবহাওয়ার মধ্যেই মানুষ বেড়ে ওঠে। সেই কারণেই তাদের অভিজ্ঞতা ও প্রবাদও বিচিত্র। তবে প্রবাদে দেশকে চেনা যায়, জানা যায়। জার্মান প্রবাদ বলে, “অ্যাজ দ্য কান্ট্রি, সো দ্য প্রোভার্ব”বা যেমন দেশ তেমন প্রবাদ প্রবচন । আবার স্কটিশরা বলেন, “অ্যাজ দ্য পিপল্, সো দ্য প্রোভার্ব, যেমন মানুষ, তেমন প্রবাদ প্রবচন।” তবে এটা ঠিক যে প্রবাদের মাধ্যমে একটি জাতির মন-মানস, চিন্তা ভাবনা, সভ্যতা ও সংস্কৃতির ইতিহাসও ফুটে ওঠে। একারণেই পাশ্চাত্য মনীষী বেকন বলেছিলেন, “একটি দেশের জ্ঞান, মেধা তার প্রবাদেই ফুটে ওঠে।
“এমন দিন ছিল যখন আমাদের দেশের মেয়েরা কথায় কথায় ছড়া কটিত এবং কথায় কথায় প্রবাদের অবতারণা পুরুষের রসিকতার অঙ্গ ছিল। তাহার এগুলি বাস্তব জীবনে অনুভব করিয়াছিলেন, তাহারা একালের নন, সর্বকালের বাঙালী। কিন্তু বাঙালী জীবনের এই সনাতন সংস্কার ও সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্ক হারাইয়া, বর্তমানের শিল্পীতমনা বাঙালি তাহাদের বাঙালিত্বটুকুও হারাইয়াছ্, সস্তায় পরের ধনে বড় মানুষি করিতে গিয়া নিজের ঘরের পুঁজির কথা ভুলিয়া গিয়াছে। ইহা ভাবের সৃষ্টি নয়, আদর্শের কথা নয়, একান্ত ঘরের কথা- সাংসারিক ঘটনা, প্রত্যক্ষ অনুভূতির অকৃত্রিম প্রয়াস। প্রায় প্রত্যেক ছড়ার টুকরায়, প্রায় প্রত্যেক তুচ্ছ কথায় বাঙালি ঘরের বহু বিচিত্র বিস্তৃত সুখ-দুখঃ হাস্য কৌতুকের কথা শতধা বিক্ষিপ্ত রহিয়াছে। কিন্তু ইহাতে বাংলাদেশের প্রাত্যহিক গৃহস্থালীর দ্বন্দ্ব-কলহ, দ্বেষ-হিংসা, উত্তেজনা-অবসাদ. দৈন্য, সংকীর্ণতা, অক্ষমতা, অসহিঞ্চুতা, পানা-পুকুরের ঘাট হইতে পিছনের আঁস্তাকুড় পর্যন্ত কিছুই বাদ পড়ে নাই। এখানে মানুষ দেবতা নয়- তাহরা ভাল-মন্দ লইয়া রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ”-[ড. এস.কে দে, বাংলা প্রবাদ, ১ম সংস্করণ, ভূমিকা, পৃষ্ঠা ১৯-২৭]।
আমরা এখন পঞ্চদশ শতকে উপনীত হয়েছি। স্ব^ভাবতই সালতামামীর মতই এখন শতাব্দী তামামীর ইতিহাসও আমাদের জানা প্রয়োজন। এই ইতিহাস ধারা আছে সাহিত্য, লোকসাহিথ্য, প্রবাদে, প্রবচনে, ছড়ায়, সংগীতে, গাঁথায়, গীতিতে, কিংবদন্তীতে, ইতিহাসে এবং ঐতিহ্যে।
“গত যুগের বাঙালির দেহ ও মনের স্বাস্থ্য অটুট ছিল, তাহাদের বলিষ্ঠ উপলব্ধিতে সহজ জীবনের স্বাভাবিক গ্রাম্যতার আবিষ্কার ভয় বা লজ্জার কারণ ছিল না। প্রাণ ছিল বলিয়াই তাহারা প্রাণ খুলিয়া হাসিতে পারিতেন, প্রাণ খুলিয়া কথা কহিতে পারিতেন এবং স্বতঃস্ফর্ত প্রাণের আনন্দ সুদক্ষ বা ক্রত্রিম রুচির অপেক্ষা রাখিত না। -[ড. এস.কে দে, বাংলা প্রবাদ, ১ম সংস্করণ]
বিগত শতাব্দির বাংলা প্রবাদে গর্ভধারিনী মাকে সম্মান দেয়া হয়েছে,
“চিড়া বলো মুড়ি বলো, ভাতের বাড়া নাই;
পিসি বলো মাসি বলো মায়ের বাড়া নাই।”
“কিসের মাসি কিসের পিসি,
কিসের বৃন্দাবন,
মরা গাছে ফুল ফুটেছে মা বড় ধন।”
“অশথের ছায়ায় ছায়া
মায়ের মায়ায় মায়া”
কিন্তু দেখা যাচ্ছে পররবতর্কিালে ছেলের বউয়ের কুমন্ত্রনায় সেই মা-ও পর হয়ে যাচ্ছে। তাই প্রবাদে বলে,
“মায়ের গলায় দিয়ে দড়ি
বউকে পরাই ঢাকাই শাড়ী।”
“মায়ের পেটে ভাত নাই
বউয়ের গলায় চন্দ্রহার।”
“বাছার কি দিব তুলনা,
মায়ের হাতে দড়ি
মাগের কানে সোনা।
“কি করবে পুতে,
নিত্যি সে-তো কান ভাঙানীর কাছে যায় শুতে।”
“এমন দিন ছিল যখন আমাদের দেশের মেয়েরা কথায় কথায় ছড়া কটিত এবং কথায় কথায় প্রবাদের অবতারণা পুরুষের রসিকতার অঙ্গ ছিল। তাহার এগুলি বাস্তব জীবনে অনুভব করিয়াছিলেন, তাহারা একালের নন, সর্বকালের বাঙালী। কিন্তু বাঙালী জীবনের এই সনাতন সংস্কার ও সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্ক হারাইয়া, বর্তমানের শিল্পীতমনা বাঙালি তাহাদের বাঙালিত্বটুকুও হারাইয়াছ্, সস্তায় পরের ধনে বড় মানুষি করিতে গিয়া নিজের ঘরের পুঁজির কথা ভুলিয়া গিয়াছে। ইহা ভাবের সৃষ্টি নয়, আদর্শের কথা নয়, একান্ত ঘরের কথা- সাংসারিক ঘটনা, প্রত্যক্ষ অনুভূতির অকৃত্রিম প্রয়াস। প্রায় প্রত্যেক ছড়ার টুকরায়, প্রায় প্রত্যেক তুচ্ছ কথায় বাঙালি ঘরের বহু বিচিত্র বিস্তৃত সুখ-দুখঃ হাস্য কৌতুকের কথা শতধা বিক্ষিপ্ত রহিয়াছে। কিন্তু ইহাতে বাংলাদেশের প্রাত্যহিক গৃহস্থালীর দ্বন্দ্ব-কলহ, দ্বেষ-হিংসা, উত্তেজনা-অবসাদ. দৈন্য, সংকীর্ণতা, অক্ষমতা, অসহিঞ্চুতা, পানা-পুকুরের ঘাট হইতে পিছনের আঁস্তাকুড় পর্যন্ত কিছুই বাদ পড়ে নাই। এখানে মানুষ দেবতা নয়- তাহরা ভাল-মন্দ লইয়া রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ”-[ড. এস.কে দে, বাংলা প্রবাদ, ১ম সংস্করণ, ভূমিকা, পৃষ্ঠা ১৯-২৭]।
আমরা এখন পঞ্চদশ শতকে উপনীত হয়েছি। স্ব^ভাবতই সালতামামীর মতই এখন শতাব্দী তামামীর ইতিহাসও আমাদের জানা প্রয়োজন। এই ইতিহাস ধারা আছে সাহিত্য, লোকসাহিথ্য, প্রবাদে, প্রবচনে, ছড়ায়, সংগীতে, গাঁথায়, গীতিতে, কিংবদন্তীতে, ইতিহাসে এবং ঐতিহ্যে।
“গত যুগের বাঙালির দেহ ও মনের স্বাস্থ্য অটুট ছিল, তাহাদের বলিষ্ঠ উপলব্ধিতে সহজ জীবনের স্বাভাবিক গ্রাম্যতার আবিষ্কার ভয় বা লজ্জার কারণ ছিল না। প্রাণ ছিল বলিয়াই তাহারা প্রাণ খুলিয়া হাসিতে পারিতেন, প্রাণ খুলিয়া কথা কহিতে পারিতেন এবং স্বতঃস্ফর্ত প্রাণের আনন্দ সুদক্ষ বা ক্রত্রিম রুচির অপেক্ষা রাখিত না। -[ড. এস.কে দে, বাংলা প্রবাদ, ১ম সংস্করণ]
বিগত শতাব্দির বাংলা প্রবাদে গর্ভধারিনী মাকে সম্মান দেয়া হয়েছে,
“চিড়া বলো মুড়ি বলো, ভাতের বাড়া নাই;
পিসি বলো মাসি বলো মায়ের বাড়া নাই।”
“কিসের মাসি কিসের পিসি,
কিসের বৃন্দাবন,
মরা গাছে ফুল ফুটেছে মা বড় ধন।”
“অশথের ছায়ায় ছায়া
মায়ের মায়ায় মায়া”
কিন্তু দেখা যাচ্ছে পররবতর্কিালে ছেলের বউয়ের কুমন্ত্রনায় সেই মা-ও পর হয়ে যাচ্ছে। তাই প্রবাদে বলে,
“মায়ের গলায় দিয়ে দড়ি
বউকে পরাই ঢাকাই শাড়ী।”
“মায়ের পেটে ভাত নাই
বউয়ের গলায় চন্দ্রহার।”
“বাছার কি দিব তুলনা,
মায়ের হাতে দড়ি
মাগের কানে সোনা।
“কি করবে পুতে,
নিত্যি সে-তো কান ভাঙানীর কাছে যায় শুতে।”
“যতক্ষণ দুধ
ততক্ষণ পুত।”
দুঃখিনী মাযের কষ্ট ধরা আছে সর্বকালের জণ্য সর্বজয়ী প্রবাদে।
“ব্যাটা বিয়ালাম, বউকে দিলাম
ঝি বিয়ালাম জামাইকে দিলাম;
আপনি হলেম বাঁদী,
এখন পা ছড়িয়ে বসে কাঁদি।”
কাজেই প্রবাদ বলে সুন্দরী বউয়ের এতই যখন দেমাক তখন অতি সুন্দরী বউ না অনাই তো ভাল। তাইতো প্রবাদ আছে,
“ঘর বাঁধো খাটো
গরু কেনো ছোট
বিয়ে করো কালো
তাই গেরস্থের ভাল।”
কিন্তু বউয়েরও তো কিছু বলার আছে। কথায় কথায় বউয়ের দোষ ধরা, হেনস্থা করা এটাও তো শ্বাশুড়ীর উচিত নয়।
“পদ্মমূখী ঝি আমার পরের ঘরে যায়,
খেদানাকি বউ এসে বাটার পান খায়।”
সেই জন্যই সম্ভবতঃ পরবর্তী যুগের বউরা শ্বাশুড়ী মারা গেলে হাঁফ ছেড়েই বাঁচে।
“শ্বাশুড়ী মরলো সকালে
খেয়ে দেয়ে যদি বেলা থাকে
তো কাঁদবো আমি বিকালে।”
আর ননদিনী?
“ননদিনী রায় বাঘিনী পাড়ায় পাড়ায় কুচ্ছ গায়,
ননদিনী যদি মরে যায়, সুখের বাতাস বইবে গায়।”
দজ্জাল শ্বাশুড়ী মৃত্যু শয্যায়। মেয়ের মা বলছে,
“একলা ঘরের গিন্নী হবি এবার মা”,
মেয়ে উত্তর দিচ্ছে, “নিঃশ্বাসকে বিশ্বাস নাই, এখনো নড়ছে দুটি পা।”
সুতরাং বিবাদ-বিসংবাদের সংসারে একেশ্বরী হয়ে থাকাই বউয়ের কাম্য।
“একলা ঘরে গিন্নী হবো, চাবিকাঠি ঝুলিয়ে নাইতে যাবো।”
কিন্তু প্রাণ ভরা ভালবাসা দিয়েও প্রবাদের স্ত্রী স্বামীকে পায়না।
“পুরুষের ভালবাসা
মোল্লার মুরগী পোষা
এত করি ঘর, তবু মিনসে পর
ভাত দেবার ভাতার নয়
কিল মারার গোসাই
দরবারে মুখ না পায়
ঘরে এসে মাগ ঠেঙায়।”
এমন যে অকর্মা স্বামী-প্রবাদে তিনি মরে গেলেও দুঃখ নাই।
“ঈশ্বর যদি করেন, মিনসে যদি মরেন
তবে ঘরে বসেই কেত্তন শুনবো।”
ততক্ষণ পুত।”
দুঃখিনী মাযের কষ্ট ধরা আছে সর্বকালের জণ্য সর্বজয়ী প্রবাদে।
“ব্যাটা বিয়ালাম, বউকে দিলাম
ঝি বিয়ালাম জামাইকে দিলাম;
আপনি হলেম বাঁদী,
এখন পা ছড়িয়ে বসে কাঁদি।”
কাজেই প্রবাদ বলে সুন্দরী বউয়ের এতই যখন দেমাক তখন অতি সুন্দরী বউ না অনাই তো ভাল। তাইতো প্রবাদ আছে,
“ঘর বাঁধো খাটো
গরু কেনো ছোট
বিয়ে করো কালো
তাই গেরস্থের ভাল।”
কিন্তু বউয়েরও তো কিছু বলার আছে। কথায় কথায় বউয়ের দোষ ধরা, হেনস্থা করা এটাও তো শ্বাশুড়ীর উচিত নয়।
“পদ্মমূখী ঝি আমার পরের ঘরে যায়,
খেদানাকি বউ এসে বাটার পান খায়।”
সেই জন্যই সম্ভবতঃ পরবর্তী যুগের বউরা শ্বাশুড়ী মারা গেলে হাঁফ ছেড়েই বাঁচে।
“শ্বাশুড়ী মরলো সকালে
খেয়ে দেয়ে যদি বেলা থাকে
তো কাঁদবো আমি বিকালে।”
আর ননদিনী?
“ননদিনী রায় বাঘিনী পাড়ায় পাড়ায় কুচ্ছ গায়,
ননদিনী যদি মরে যায়, সুখের বাতাস বইবে গায়।”
দজ্জাল শ্বাশুড়ী মৃত্যু শয্যায়। মেয়ের মা বলছে,
“একলা ঘরের গিন্নী হবি এবার মা”,
মেয়ে উত্তর দিচ্ছে, “নিঃশ্বাসকে বিশ্বাস নাই, এখনো নড়ছে দুটি পা।”
সুতরাং বিবাদ-বিসংবাদের সংসারে একেশ্বরী হয়ে থাকাই বউয়ের কাম্য।
“একলা ঘরে গিন্নী হবো, চাবিকাঠি ঝুলিয়ে নাইতে যাবো।”
কিন্তু প্রাণ ভরা ভালবাসা দিয়েও প্রবাদের স্ত্রী স্বামীকে পায়না।
“পুরুষের ভালবাসা
মোল্লার মুরগী পোষা
এত করি ঘর, তবু মিনসে পর
ভাত দেবার ভাতার নয়
কিল মারার গোসাই
দরবারে মুখ না পায়
ঘরে এসে মাগ ঠেঙায়।”
এমন যে অকর্মা স্বামী-প্রবাদে তিনি মরে গেলেও দুঃখ নাই।
“ঈশ্বর যদি করেন, মিনসে যদি মরেন
তবে ঘরে বসেই কেত্তন শুনবো।”
অতীতে বউ ভাশুরের সাক্ষাত কথা-বার্তা ছিল না। কিন্তু মাঝখানে দেওয়াল আড়াল করে কথা বলবার রীতি ছিল।
দেওয়াল দেওয়াল বট ঠাকুর কি পাকাল মাছ খান?
ভাশুরের জবাব-
খান খান খান-পাঁচ ছয় খান
এখন একটু তেল পেলে নাইতে যান।
দেওয়াল দেওয়াল বট ঠাকুর কি পাকাল মাছ খান?
ভাশুরের জবাব-
খান খান খান-পাঁচ ছয় খান
এখন একটু তেল পেলে নাইতে যান।
এত সুখ বা দুঃখের মধ্যেও বিগত শতকে সম্ভবত: এই শতকেও নারীর সবচেয়ে দুঃখ হলো সতীনের ঘর করা।
একচির পান দু’চির হলো
সোনার পাটে ভাগ বসালো
সুয়ো হলো রাজরাণী
দুয়ো হলো ঘুটে কুড়ানী
একা ছিলাম ঘরের মাঝে
মাথার মাঝে ঠাকুর
সতীন এল এখন হলাম
আঁস্তাকুড়ের কুকুর।
সবচেয়ে বেদনদায়ক হলো বোন সতীন যা বিগত শতকেও অসম্ভব ছিল না।
আন সতীনে নাড়ে চাড়ে
বোন সতীনে পুড়ে মারে।
নিম তেতো নিশিন্দা তেতো
আর তেতো পানের খর
তার চেয়ে অধিক তেতো
বোন সতীনের ঘর।
প্রবাদ তাই সাবধান করে দেয়-
এক বরে ভাতারের মাগ চিংড়ি মাছের খোসা
দোজ বরে ভাতারের মাগ নিত্য করে গোষা ।
তেজ বরে ভাতারের মাগ সঙ্গে বসে খায়
চার বরে ভাতারের মাগ কান্ধে চড়ে যায়।
বুড়ো বয়েসের বিয়েও আবহমান বাংলার প্রর্থিত নয় কারণ-
বুড়ো বয়েসে নবীন নারী
এই বুড়ো তোর মাথায় বাড়ী।
ঠিক তেমনিভাবে ঘরজামাইও প্রবাদে গর্হিত-
দূর জামাইয়ের কাঁধে ছাতি
ঘর জামাইয়ের মুখে লাথি
শ্বশুর বাড়ী মধুর হাঁড়ি
তিনদিন পর ঝাঁটার বাড়ী।
শুধু কি বাড়ী? শুধু কি সংসার? শতসহ¯্র প্রবাদে বাঙালীর আটপৌরে সে যুগের সংসারকে তুলে ধরা হয়েছে। কোন কোন প্রবাদে মুসলমান (নেড়ে) সমাজকে ভিন্ন সমাজে তুচ্ছ নজরে দেখতো-
নেড়ে নয় ইষ্টি
তেঁতুল নয় মিষ্টি।
আবার অন্যত্র দেখা যায়-
ধানের মধ্যে আগুন ধান (অগ্রহায়ন মাসের ধান)
মানুষের মধ্যে মুসলমান
গরুর মধ্যে এঁড়ে
মানুষের মধ্যে নেড়ে।
বহু গ্রবাদে বিগত শতাব্দির অনেক ঐতিহাসিক চিত্রও পাওয়া যায়। হুসেন শাহের আমলে পাওয়া যায় ধান ভানতে মহীপালের গীত।
যারে দেয়না খোদা তায়ালা
তারে দেয় আসফদৌলা (নওয়াব আসফদৌলা) ।
মগের মুলুক অনাচারের যুগ।
মোষের শিং ভেড়ার শিং
তারে বলি কি শিং
শিংয়ের মধ্যে শিং ছিল গোবিন্দ শিং।
অথবা লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন। এই গৌরী সেনের বাড়ী ছিল পূর্ববঙ্গে। তিনি ছিলেন ব্যবসায়ী।
কোন কোন জায়গা নিয়েও প্রবাদ আছে। যেমনঃ
চোর চোট্টা হারামজাদ
এই তিনে মুর্শদাবাদ।
মনে হয় নবাব সিরাজউদদৌলার পতনের পর এই প্রবাদ রচিত।
একচির পান দু’চির হলো
সোনার পাটে ভাগ বসালো
সুয়ো হলো রাজরাণী
দুয়ো হলো ঘুটে কুড়ানী
একা ছিলাম ঘরের মাঝে
মাথার মাঝে ঠাকুর
সতীন এল এখন হলাম
আঁস্তাকুড়ের কুকুর।
সবচেয়ে বেদনদায়ক হলো বোন সতীন যা বিগত শতকেও অসম্ভব ছিল না।
আন সতীনে নাড়ে চাড়ে
বোন সতীনে পুড়ে মারে।
নিম তেতো নিশিন্দা তেতো
আর তেতো পানের খর
তার চেয়ে অধিক তেতো
বোন সতীনের ঘর।
প্রবাদ তাই সাবধান করে দেয়-
এক বরে ভাতারের মাগ চিংড়ি মাছের খোসা
দোজ বরে ভাতারের মাগ নিত্য করে গোষা ।
তেজ বরে ভাতারের মাগ সঙ্গে বসে খায়
চার বরে ভাতারের মাগ কান্ধে চড়ে যায়।
বুড়ো বয়েসের বিয়েও আবহমান বাংলার প্রর্থিত নয় কারণ-
বুড়ো বয়েসে নবীন নারী
এই বুড়ো তোর মাথায় বাড়ী।
ঠিক তেমনিভাবে ঘরজামাইও প্রবাদে গর্হিত-
দূর জামাইয়ের কাঁধে ছাতি
ঘর জামাইয়ের মুখে লাথি
শ্বশুর বাড়ী মধুর হাঁড়ি
তিনদিন পর ঝাঁটার বাড়ী।
শুধু কি বাড়ী? শুধু কি সংসার? শতসহ¯্র প্রবাদে বাঙালীর আটপৌরে সে যুগের সংসারকে তুলে ধরা হয়েছে। কোন কোন প্রবাদে মুসলমান (নেড়ে) সমাজকে ভিন্ন সমাজে তুচ্ছ নজরে দেখতো-
নেড়ে নয় ইষ্টি
তেঁতুল নয় মিষ্টি।
আবার অন্যত্র দেখা যায়-
ধানের মধ্যে আগুন ধান (অগ্রহায়ন মাসের ধান)
মানুষের মধ্যে মুসলমান
গরুর মধ্যে এঁড়ে
মানুষের মধ্যে নেড়ে।
বহু গ্রবাদে বিগত শতাব্দির অনেক ঐতিহাসিক চিত্রও পাওয়া যায়। হুসেন শাহের আমলে পাওয়া যায় ধান ভানতে মহীপালের গীত।
যারে দেয়না খোদা তায়ালা
তারে দেয় আসফদৌলা (নওয়াব আসফদৌলা) ।
মগের মুলুক অনাচারের যুগ।
মোষের শিং ভেড়ার শিং
তারে বলি কি শিং
শিংয়ের মধ্যে শিং ছিল গোবিন্দ শিং।
অথবা লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন। এই গৌরী সেনের বাড়ী ছিল পূর্ববঙ্গে। তিনি ছিলেন ব্যবসায়ী।
কোন কোন জায়গা নিয়েও প্রবাদ আছে। যেমনঃ
চোর চোট্টা হারামজাদ
এই তিনে মুর্শদাবাদ।
মনে হয় নবাব সিরাজউদদৌলার পতনের পর এই প্রবাদ রচিত।
ধান ডাকাত খাল
এই তিনে বরিশাল।
এই তিনে বরিশাল।
মশলা মোলা শাঁখা
এই তিনে ঢাকা।
এই তিনে ঢাকা।
সারেঙ শুটকী দরগা
এই তিনে চাটগাঁ।
এই তিনে চাটগাঁ।
জমিদার জঙ্গল মোষের শিং
এই তিনে মৈমোনসিং।
এই তিনে মৈমোনসিং।
চমচম টমটম শাড়ী
এই তিনে টাঙ্গাইলের বাড়ী।
এই তিনে টাঙ্গাইলের বাড়ী।
কোন কোন প্রবাদে বিগত শতাব্দীর সতীদাহ প্রথার একটি নির্মম চিত্র ধরা পড়েছেঃ
কোন এক ব্রাহ্মণ কন্যাকে সতীদাহ প্রথায় দড়াদড়ি বেঁধে গঙ্গার ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু কোনক্রমে মেয়েটি গঙ্গায় ঝাঁপিয়ে পড়ে জীবন বাঁচায়। সেখান দিয়ে নদীর পানি ভরতে যাচ্ছিল এক মুসলমান কলুর বউ। সমাজপতিরা অগত্যা তাকে ধরে এনেই চিতায় তুলে দিলঃ
কার আগুনে কে বা মরে আমি জাতে কলু,
মা আমার কি পূণ্যবতী, বলছে “দে উলু দে উলু।”
কলু শব্দটিকে “উলু দেওয়ার আহ্বান” ব্যাখ্যা করে তাকে পুড়িয়ে মারা হলো।
বিগত শতাব্দীর অজস্র প্রবাদ পরীক্ষা করে দেখা যাবে-
১. সমাজ এখন কৃষি নির্ভর।
২. ব্যবসায়ী বা সওদাগর সম্প্রদায়ের সমাজে মূল্য আছে।
৩. ইংরেজরা ষড়যন্ত্রকারী আর মীরজাফর ও উমিচাঁদ গং তাদের দোসর।
৪. সমাজে মৌলভী ও ব্রাহ্মনদের কদর কমে আসছে।
৫. নারী শিক্ষাকে সমাজ তখনো গ্রহন করছে না।
৬. জমিদাররা প্রায়ই অত্যাচারী।
৭. মহাজনরা রক্তচোষা।
৮. বহু বিধাবা প্রথা তখনো চালু ছিল।
৯. নারী সমাজে নিগৃহীতা।
১০. দেশে বান-বন্যা-দুর্ভিক্ষ আছে।
১১. মানুষ অনেকা অদৃষ্টবাদী।
কিন্তু এই শতকে-
১. শিক্ষার দিকে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে।
২. নারী তেমন অবলা নয়।
৩. বহু বিধাবা প্রথা কমেছে।
৪. রাজনীতিতে তোষণ ও দলাদলি আছেই।
৫. যান্ত্রিক সভ্যতার অগ্রগতি হচ্ছে।
বিগত শতকের তুলনায় এই শতকে প্রবাদ ও ছড়ার সৃষ্টি অপেক্ষাকৃত কম। কারণ, সমাজ যে গ্রামীণ পরিবেশে দাঁড়িয়ে ছিল, এখন আজ সেখানে নেই। তবু এ যুগের এশতাব্দীর এক ঋষি কবি অনকূল চন্দ্র (১২৯৫-১৩৭৫)তাঁর বিভিন্ন বাণীতে প্রবাদের ব্যবহার করেছেনঃ
কোন এক ব্রাহ্মণ কন্যাকে সতীদাহ প্রথায় দড়াদড়ি বেঁধে গঙ্গার ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু কোনক্রমে মেয়েটি গঙ্গায় ঝাঁপিয়ে পড়ে জীবন বাঁচায়। সেখান দিয়ে নদীর পানি ভরতে যাচ্ছিল এক মুসলমান কলুর বউ। সমাজপতিরা অগত্যা তাকে ধরে এনেই চিতায় তুলে দিলঃ
কার আগুনে কে বা মরে আমি জাতে কলু,
মা আমার কি পূণ্যবতী, বলছে “দে উলু দে উলু।”
কলু শব্দটিকে “উলু দেওয়ার আহ্বান” ব্যাখ্যা করে তাকে পুড়িয়ে মারা হলো।
বিগত শতাব্দীর অজস্র প্রবাদ পরীক্ষা করে দেখা যাবে-
১. সমাজ এখন কৃষি নির্ভর।
২. ব্যবসায়ী বা সওদাগর সম্প্রদায়ের সমাজে মূল্য আছে।
৩. ইংরেজরা ষড়যন্ত্রকারী আর মীরজাফর ও উমিচাঁদ গং তাদের দোসর।
৪. সমাজে মৌলভী ও ব্রাহ্মনদের কদর কমে আসছে।
৫. নারী শিক্ষাকে সমাজ তখনো গ্রহন করছে না।
৬. জমিদাররা প্রায়ই অত্যাচারী।
৭. মহাজনরা রক্তচোষা।
৮. বহু বিধাবা প্রথা তখনো চালু ছিল।
৯. নারী সমাজে নিগৃহীতা।
১০. দেশে বান-বন্যা-দুর্ভিক্ষ আছে।
১১. মানুষ অনেকা অদৃষ্টবাদী।
কিন্তু এই শতকে-
১. শিক্ষার দিকে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে।
২. নারী তেমন অবলা নয়।
৩. বহু বিধাবা প্রথা কমেছে।
৪. রাজনীতিতে তোষণ ও দলাদলি আছেই।
৫. যান্ত্রিক সভ্যতার অগ্রগতি হচ্ছে।
বিগত শতকের তুলনায় এই শতকে প্রবাদ ও ছড়ার সৃষ্টি অপেক্ষাকৃত কম। কারণ, সমাজ যে গ্রামীণ পরিবেশে দাঁড়িয়ে ছিল, এখন আজ সেখানে নেই। তবু এ যুগের এশতাব্দীর এক ঋষি কবি অনকূল চন্দ্র (১২৯৫-১৩৭৫)তাঁর বিভিন্ন বাণীতে প্রবাদের ব্যবহার করেছেনঃ
বুদ্ধ ঈশায় বিভেদ করিস
শ্রী চৈতন্য রসুল কৃষ্ণে
জীবোদ্ধারে হন আবির্ভাব
একই এঁরা তা ও জানিসনে।
শ্রী চৈতন্য রসুল কৃষ্ণে
জীবোদ্ধারে হন আবির্ভাব
একই এঁরা তা ও জানিসনে।
এক আদেশে চলেন যারা
তাদের নিয়েই সমাজ গড়া
অন্যে বাঁচায় নিজে বাঁচে
ধর্ম বলে জানিস তাকে।
তাদের নিয়েই সমাজ গড়া
অন্যে বাঁচায় নিজে বাঁচে
ধর্ম বলে জানিস তাকে।
শিল্পী মাথা শিল্প গড়ে
তবেই দেশে লক্ষ্ণী বাড়ে।
তবেই দেশে লক্ষ্ণী বাড়ে।
বলায় পটু কাজে কম
নিজেই হয় নিজের যম।
নিজেই হয় নিজের যম।
মুখে জানে ব্যবহারে নাই
সেই শিক্ষার মুখে ছাই।
সেই শিক্ষার মুখে ছাই।
শিক্ষকের নাই ইষ্ট প্রাণ
কে বাঁচাবে ছাত্র প্রাণ।
কে বাঁচাবে ছাত্র প্রাণ।
রাজশক্তি হাতে পেয়ে
শতের পীড়ক সবাই হয়
নিজে মরে দেশকে মারে
দেশে আনে বিপর্যয়।
সন্ধানী চোখ খুললে কিছু কিছু প্রবাদ ও ছড়া অবশ্যই পাওয়া যাবে যাতে ফুটে উঠেছে বর্তমান সমাজব্যবস্থা, রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি, সন্ত্রাস, জুয়াচুরি, পুকুর চুরি ইত্যাদি।
এজন্য বর্তমান যুগের মানুষকে অবশ্যই সাবধান হতে হবে। কারণ, প্রবাদ হচ্ছে “পিপলস্ ভয়েস”এবং পিপলস্ ভয়েস ইজ দ্য গডস্ ভয়েস্”বা জনগণের কন্ঠই হচ্ছে আল্লাহ তা’য়ালার কন্ঠ। জনগণই শক্তির উতস। এই জনগণই কাউকে সিংহাসনে বসায় কাউকে নামায় আঁস্তাকুড়ে।
কিন্তু ইতিহাস ও প্রবাদের শিক্ষা হলো, “আমরা ইতিহাস ও প্রবাদ থেকে শিক্ষা নেই না।”
“খালি পেটে জল
ভরা পেটে ফল।”
শতের পীড়ক সবাই হয়
নিজে মরে দেশকে মারে
দেশে আনে বিপর্যয়।
সন্ধানী চোখ খুললে কিছু কিছু প্রবাদ ও ছড়া অবশ্যই পাওয়া যাবে যাতে ফুটে উঠেছে বর্তমান সমাজব্যবস্থা, রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি, সন্ত্রাস, জুয়াচুরি, পুকুর চুরি ইত্যাদি।
এজন্য বর্তমান যুগের মানুষকে অবশ্যই সাবধান হতে হবে। কারণ, প্রবাদ হচ্ছে “পিপলস্ ভয়েস”এবং পিপলস্ ভয়েস ইজ দ্য গডস্ ভয়েস্”বা জনগণের কন্ঠই হচ্ছে আল্লাহ তা’য়ালার কন্ঠ। জনগণই শক্তির উতস। এই জনগণই কাউকে সিংহাসনে বসায় কাউকে নামায় আঁস্তাকুড়ে।
কিন্তু ইতিহাস ও প্রবাদের শিক্ষা হলো, “আমরা ইতিহাস ও প্রবাদ থেকে শিক্ষা নেই না।”
“খালি পেটে জল
ভরা পেটে ফল।”
“কচি পাঁঠা বৃদ্ধ মেষ,
দৈ-এর আগা ঘোলের শেষ।”
দৈ-এর আগা ঘোলের শেষ।”
“দিনে বালিশ, রাতে চালিশ”
মধ্যাহ্ন ভোজনের পর ক্ষণিক বিশ্রাম আর রাতের ভোজনের পর পায়চারী করা ¯^াস্থ্যের জন্য ভালো।
মধ্যাহ্ন ভোজনের পর ক্ষণিক বিশ্রাম আর রাতের ভোজনের পর পায়চারী করা ¯^াস্থ্যের জন্য ভালো।
“প্রাতে খেলে নুন-আদা,
অরুচি আর থাকে না দাদা।”
অরুচি আর থাকে না দাদা।”
“ভোজনান্তে চোখে জল,
দৃষ্টিশক্তি হয় প্রবল।”
দৃষ্টিশক্তি হয় প্রবল।”
লটেরে বলো না লটো,
উলটে ধরবে চুলরে মুঠো।
ব্যাখ্যা: যার মান-সম্মানরে বালাই নইে, তাকে অপমানসূচক কোনো কথা বললে নজিইে অপমানতি হতে হব।
উলটে ধরবে চুলরে মুঠো।
ব্যাখ্যা: যার মান-সম্মানরে বালাই নইে, তাকে অপমানসূচক কোনো কথা বললে নজিইে অপমানতি হতে হব।
বিষ্ঠায় ঢিল মারে,
নিজেরে গায়ইে ছিটকে পড়ে।
ব্যাখ্যা: মন্দ কাজ ও মন্দের সংস্রব মাত্রই র্বজনীয়।
(ঈষত পরিবর্তিত)।
মূলঃ ড. আশরাফ সিদ্দিকী
নিজেরে গায়ইে ছিটকে পড়ে।
ব্যাখ্যা: মন্দ কাজ ও মন্দের সংস্রব মাত্রই র্বজনীয়।
(ঈষত পরিবর্তিত)।
মূলঃ ড. আশরাফ সিদ্দিকী
No comments:
Post a Comment