কথা কও হে অতীত!
যুগে যুগে নিকটজনেরাই ভালো মানুষেরাই বিরোধিতা করেছে। কিন্তু শেষ অব্দি তার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
নুহ (আ.) ও তাঁর পুত্র
সে [নুহ (আ.)-এর পুত্র] বলল, ‘আমি এমন এক পর্বতে আশ্রয় নেব, যা আমাকে প্লাবন হতে রক্ষা করবে।’ তিনি [নুহ (আ.)] বললেন, ‘আজ আল্লাহর (আজাবের) নির্দেশ থেকে রক্ষা করার কেউ নেই।
তবে ওই ব্যক্তি রক্ষা পাবে, যার প্রতি আল্লাহ দয়া করবেন।’ এরপর (পিতা-পুত্রের কথোপকথনের পর) তরঙ্গ তাদের বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং সে [নুহ (আ.)-এর পুত্র] নিমজ্জিতদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। (সুরা : হুদ, আয়াত : ৪২-৪৩)
তাফসির : আগের আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছিল, হজরত নুহ (আ.) তাঁর পরিবার ও ইমানদারদের ‘বিসমিল্লাহ’ বলে নৌকায় আরোহণ করতে বলেছেন। নৌকা আল্লাহর হুকুমে চলতে থাকে।
চারদিকে মহা প্লাবন শুরু হয়ে যায়। এখানে সে প্লাবনের ভয়াবহতা এবং নুহ (আ.) ও তাঁর পুত্র কিনআনের ঐতিহাসিক কথোপকথন বর্ণনা করা হয়েছে।
প্লাবনের পরিধি ও ভয়াবহতা বাড়তে থাকে। প্লাবনের সঙ্গে ছিল প্রচণ্ড তুফান।
তুফান এতই শক্তিশালী ছিল যে পানি পাহাড়ের মতো বড় বড় ঢেউ দিয়ে যাচ্ছিল অনবরত। প্লাবনের পানি সে সময়ের সর্বোচ্চ পাহাড়ের চূড়া থেকে ১৫ হাত অতিক্রম করে। কেউ কেউ বলেছেন, সে পানি পৃথিবী থেকে ৮০ মাইল ওপরে উঠে যায়। (ইবনে কাসির, তাফসিরে মুনির)
পাহাড়ের মতো তরঙ্গ পৃথিবীকে গ্রাস করে চলছে, মহা প্লাবনে সব কিছু তছনছ হতে শুরু করেছে—এমন বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে নুহ (আ.)-এর মনে প্রচণ্ডভাবে পিতৃস্নেহ জেগে ওঠে। তাঁর তিন পুত্র ইমান আনলেও চতুর্থ পুত্র ইমান আনেনি।
তার নাম কিনআন হিসেবে প্রসিদ্ধ। তবে আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) তার নাম ‘ইয়াম’ উল্লেখ করেছেন। নুহ (আ.) সস্নেহে পুত্র কিনআনকে দূর থেকে ডাক দিলেন। সে কাফিরদের কাছে ছিল। তিনি তাকে কাফিরদের দল ত্যাগ করে মুমিনদের কাতারে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান।
সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার যে দরদ, তাদের ভবিষ্যতের ব্যাপারে পিতা-মাতার যে দায়িত্ব আছে, কিনআনের প্রতি নুহ (আ.)-এর আহ্বানে তা চমত্কারভাবে ফুটে ওঠে। এ ছাড়া অসৎ সঙ্গীর কারণে যে কারো সন্তান, এমনকি নবীর সন্তানও পথভ্রষ্ট হতে পারে, এ আয়াত তারই উদাহরণ।
নুহ (আ.)-এর অবাধ্য পুত্র পিতার শেষ আহ্বান বিবেচনায় না এনে গোঁয়ার্তুমির আশ্রয় নেয়। সে পিতার আহ্বান উপেক্ষা করে বলে, ‘আমি পাহাড় চূড়ায় উঠে যাব। সেখানে গেলেই প্লাবনের হাত থেকে রক্ষা পাব।’ তার এই বোধ ছিল না যে আল্লাহ সর্বশক্তিমান। পাহাড়-পর্বত সব কিছু তাঁর নির্দেশের অধীন।
মুহূর্তের মধ্যে দৃশ্য পাল্টে যায়। হঠাৎ উত্তাল তরঙ্গ নুহ (আ.)-এর পুত্রকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। স্নেহপরায়ণ পিতা তাঁর পুত্রকে বাঁচার জন্য ডাকছেন, আর দাম্ভিক পুত্র মরার জন্য তর্ক করছে—এমন সময় পাহাড়ের মতো বড় বড় ঢেউ তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দেয়।
লুত আ. এঁর স্ত্রী
হযরত লুত (আঃ)-এর স্ত্রী জাহান্নামে যাবে। কেননা, তাঁর স্ত্রী ওয়াহিলা পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম নারী, যে বনু তমীমের সরদারদের সমলিঙ্গের অপকর্ম করার আহ্বান করেছিল।
লুত (আঃ)-এর স্ত্রী সমলিঙ্গ অপকর্ম প্রতিষ্ঠা করার জন্য অনেক চেষ্টা চালিয়েছিল। এর বিরুদ্ধে হযরত লুত (আঃ) তাঁর সম্প্রদায়কে পুরুষ-সমকামিতার বিরুদ্ধে প্রচারণা এবং সাথে সাথে আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস স্থাপনের জন্য আহ্বান করেন। যা তাঁকে ঐ স্থানের লোকদের দ্বারা উপেক্ষা ও তামাসার পাত্রে পরিণত হন। বনু তমীমের লোকেরা যখন পুরুষে পুরুষে যেনায় লিপ্ত ঠিক তখনই আল্লাহ তায়ালা গজব দেয়ার লক্ষ্যে প্রথম আসমানের ফেরেশতাদের সর্দার হযরত ঈসমাইল (আঃ)-এর নেতৃত্বে ১২জন ফেরেশতা হযরত লুত (আঃ)-এর ঘরে মেহমান স্বরূপ প্রেরণ করেন।
এ মেহমানদের দেখে ওয়াহিলা বনু তমীমে গিয়ে খবর দেয়, আমাদের বাড়িতে সুদর্শন ১২জন পুরুষ এসেছে। তোমরা যেতে পার। রাত শেষ হওয়ার পূর্বে লুত (আঃ) তাঁর অনুসারী সহ, তার স্ত্রী ছাড়া, সে স্থান ত্যাগ করেন। অবশেষে ফেরেস্তারা ঐ ভূমি উল্টিয়ে দিয়ে এবং প্রস্থর বৃষ্টি বর্ষণ করে সম্প্রদায়কে বিনাশ করেন। ইতিহাসে সেই স্থানটি এখন ডেড সি বা মৃত সাগর নামে পরিচিত।
No comments:
Post a Comment