Monday, September 28, 2020

তৃপ্তি (পরম)

 তৃপ্তি (পরম)

Contentment
তৃপ্তিকে বুঝতে হলে পয়লা অতৃপ্তিকে জানতে হবে। কারণ, এরা পরস্পরের কন্ট্রা।
এই কন্ট্রা বা বিপরীত নিয়ে কবি বলেন,
‘তপনের ছটা না ফুরাতো যদি ফুরালে দিনের নাট,
তবে কি প্রদোষে ফুটিয়া উঠিত ফুল্ল তারার হাট?’ আমার মতে এটি অসম্ভব সুন্দর বর্ণনা।
অতৃপ্তি হলো যখন আগ্রহ বা ব্যগ্রতা Desire- নিয়তই বেড়ে চলে। আগ্রহ বা ব্যগ্রতা মাল্টিপ্লায় হতেই থাকে। এক ব্যগ্রতা যখন মিটে যায় অন্য ব্যগ্রতা তখন সৃষ্টি হয়। এভাবে এমন এক অবস্থা চলে আসে যখন ব্যগ্রতাকে আর রোখা য়ায় না।
আসলে ব্যগ্রতাটা হলো একটি ফাঁদের (Trap) মত। যখন অসীম ব্যগ্রতার সৃষ্টি হয় তখন সম্পর্ক বা রিলেশনশীপ ভঙ্গুরতা (Fragile) প্রাপ্ত হয়। জন্ম হয় অস্থিরতার আর রাগের মত অনন্য এক বিষের। এর ফলে জন্মে স্বার্থপরতা আর পার্থিব সম্পদ গ্রহণের মত বিশেষ লোভ। আরো জন্ম হয় অহংকারের।
এই ব্যগ্রতা যখন আরো বাড়তে থাকে মনটা আর সুস্থির(tranquil) থাকতে পারে না। কারণ এসময় প্রাচুর্য আর নেগেটিভ চিন্তাগুলো মনের শান্তি পুরোপুরি বিনষ্ট করে ফেলে।
অতৃপ্তি বা ব্যগ্রতা তথা Desire আছে বলেই- মানুষ ছটফট করে, একখানে থাকে না, দাঁড়ায়- হাঁটে ও দৌড়ায়!
অতৃপ্তি বা ব্যগ্রতা মানুষকে কুচুটে, কলহপ্রিয়, পরশ্রীকাতর এবং বিভেদকামী বানায়। অতৃপ্তি মানুষকে স্বপ্ন দেখায় কোন বিরাট প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হবার, মার্সিডিস বেঞ্জের মালিক হওয়ার, প্রাসাদোপম বাসগৃহের মালিক হওয়ার, জগৎজোড়া নাম যশ অর্জন করার।
অতৃপ্তি বা ব্যগ্রতা নিয়ে বিখ্যাত শিখ কলামিষ্ট খুশওয়ান্ত সিং-এর একটি প্রাজ্ঞ উপদেশ: “এই দুনিয়াতে তোমার থেকে অনেক ধনী, পেশায় সফল বহু মানুষ আছে এবং থাকবে। অনেকের স্ত্রী তোমার স্ত্রীর থেকে সুন্দরী। এদেরকে হিংসে করে কোন লাভ হবে না – নিজের জীবনটা অনর্থক তিক্ত হয়ে উঠবে কেবল। ঈর্ষা, অতৃপ্তি বা আগ্রহের ব্যাপারটাকে মন থেকে ছেঁটে ফেল।”
এই ‘অতৃপ্তি’ বা আগ্রহের ব্যাপারটাকে সামনে রেখে কালজয়ী লিরিসিষ্ট সলিল চৌধুরী তাঁর লেখা একটি গানের ৪টি লাইনে বলেছেন:
“নিজের ছায়ার পিছে, খুঁজে খুঁজে মরি মিছে,
একদিন চেয়ে দেখি আমি তুমি-হারা, আমি তুমি-হারা (ব্রকেন রিলেশনশীপ)
আর কত কাল আমি রব দিশাহারা।
আমায় প্রশ্ন করে নীল ধ্রুব তারা-”
আগ্রহ যাদের আছে তারা “নিজের ছায়ার” পিছনে ছুটে বেড়াচ্ছেন দিশাহীন ভাবে, সব সময় যেন এই বেড়ানোটা কোনদিনই শেষ হবার নয় -অ্যান এন্ডলেস জার্নি!
তাহলে আগ্রহের বা ব্যগ্রতার ফাঁদ থেকে কি বের হওয়া যাবে না? তৃপ্তিকে খুঁজে পাওয়া যাবে না? তৃপ্তি ব্যাপারটাই কি ধোঁয়াশাময়?
হ্যাঁ যাবে। মানুষকে তখন ধর্মের দিকে বা মননশীল আধ্যাত্মিকতার দিকে দ্রুত চলে যেতে হবে। খেয়ালে রাখুন ‘মননশীল’(চিন্তাশক্তি জাগায় এমন বুদ্ধিগত, চিন্তাশক্তি সম্পন্ন) কথাটার দিকে। এর ফলে মানুষ নেগেটিভ দিককে সনাক্ত করতে শিখবে খুবই সহজে। মননশীল আধ্যাত্মিকতা মানুষের চিন্তার ভাবধারা বা প্যাটার্ন পুরোপুরি বদলে দিতে সক্ষম। মননশীল আধ্যাত্মিকতার ভেতর দিয়ে যখন কোন মানুষ তার মনের গভীরে ঢুকে পড়ে, তখন তার ভেতরের অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলতে শুরু করে। আর তখনই মিটে যেতে শুরু করে পার্থিব সকল চাওয়া পাওয়া আর আগ্রহ। ‘তৃপ্তি’ নির্ধারণের জন্য একটি হায়ারার্কি বা শ্রেণীবিন্যাস আছে। ঐ Hierarchyটির দিকে দৃষ্টপাত করা যায়। একেবারে উপরে হল Self-Actualization –বা আত্মোপলব্ধি (Abraham Maslowর hierarchy of needs), যা দেহ মনের সমস্ত চাহিদার পরিতৃপ্তির পর চলে আসে। সর্বোচ্চ এই স্তরে খুব অল্প মানুষই ওঠেন। তাই পূর্ণ তৃপ্তি অধরাই থেকে যায় সিংহভাগ মানুষের। তবে, পূর্ণ তৃপ্তি পেলে চলে আসে অবারিত শান্তি। আর মননশীল আধ্যাত্মিকতা সেই তৃপ্তি বা শান্তি দিতে পুরোপুরি সক্ষম।
আল কুরআন(আধ্যাত্মিকতা)পুরোপুরি ধারন করলে মননশীল আধ্যাত্মিকতার মাধ্যমে মানুষ অবশ্যই Self-Actualization – বা আত্মোপলব্ধি ঘটাতে পারে যেমন ঘটিয়েছিলেন আমাদের প্রিয় নবী(সা.)।
এটাই পরম তৃপ্তি বা Contentment.
সূত্রঃ নিজের মাথা

No comments:

Post a Comment