Monday, September 28, 2020

রুই মাছ

 চাই রুই মাছ, ঝালে কিংবা ঝোলে

ঝাল হোক কিংবা ঝোল, রুই মাছের জুড়ি নেই। করোনা আবহে রোগ প্রতিরোধের বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে বলেছেন প্রত্যেকে। রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে প্রোটিনের। রুই মাছেও রয়েছে ভরপুর প্রোটিন।
মেডিসিনের চিকিৎসকরা এই প্রসঙ্গে বলেন, বাড়ির খাবার ভাত-মাছের ঝোল যদি নিয়মিত খেতে পারেন, এর থেকে ভাল কিছু হতে পারে না। প্রোটিনের উৎস হিসেবে মাছ খাওয়া যেতেই পারে।
ডায়েট করছেন যারা, তারাও মাংসের পরির্বতে রুই মাছ খেতে পারেন, মত পুষ্টিবিদদের। এই মাছে ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকায় যাদের অতিরিক্ত মেদ রয়েছে, তাঁরা নিয়মিত এই মাছ খেতে পারেন। মাছের তেলে থাকা ওমেগা থ্রি নামক অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড যা রক্তের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল LDL ও VLDL কমায় এবং উপকারী কোলেস্টেরল এইচডিএলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, ফলে হৃদযন্ত্রে চর্বি জমতে পারে না। আমেরিকার স্কুল অব নিউট্রিশনের জার্নাল অনুযায়ী, এই মাছ উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায় এবং উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা কমাতেও সাহায্য করে।
ভারতের ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল ইনফর্মেশন বলছে, ওমেগা থ্রি রক্তের অণুচক্রিকাকে বা প্লাটিলেটকে জমাট বাঁধতে দেয় না, ফলে রক্তনালিতে জমাট বাঁধার কারণে স্ট্রোক হতে পারে না। স্ট্রোক প্রতিরোধে রুই মাছের ভূমিকার কথা উল্লেখ রয়েছে বেশ কয়েকটি গবেষণাপত্রেও। পুষ্টিবিদগণ এই প্রসঙ্গে বলেন, ভাল মানের প্রোটিনের অন্যতম উৎস এই মাছ।
কী কী থাকে এই মাছে
রুই মাছের পুষ্টিগুণঃ
প্রতি ১০০ গ্রাম রুই মাছে আছে-
• আমিষ–১৬.৪ গ্রাম
• চর্বি–১.৪ গ্রাম
• ক্যালসিয়াম-৬৮০ মিলিগ্রাম
• ফসফরাস – ২২৩ মিলিগ্রাম
আরো আছে
ভিটামিন এ, ডি, ই রয়েছে রুই মাছে।
ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, লোহা-খনিজে ভরপুর এই মাছ।
এই পুষ্টিবিদের মত, ‘‘রুই মাছে কোলিন নামের একটি পদার্থ থাকে। এই এসেনশিয়াল নিউট্রিয়েন্টসটি সম্প্রতি আবিষ্কার হয়েছে, এটি ডিএনএ সংশ্লেষে(সিনথেসিস) সাহায্য করে। স্নায়ুতন্ত্র, ফ্যাটের বিপাক ক্রিয়া এবং পরিবহণে সাহায্য করে।’’
কতটা খেতে হবে এই মাছ?
ব্যালান্সড ডায়েট বা ভারসাম্য রেখে খাওয়ার বিষয়ে জোর দিতে বলছেন এই পুষ্টিবিদ। তাঁর মত, ৫০-৭৫ গ্রাম মাছ প্রতিদিন খাওয়া জরুরি। অর্থাৎ মাছের একটা বড় টুকরোই যথেষ্ট।
রুই মাছ (Labeo rohita)
Hamilton, 1822
রুই বাংলাদেশের বহুল পরিচিত মাছগুলোর মধ্যে একটি। এর বৈজ্ঞানিক নাম Labeo rohita (ল্যাবিও রোহিটা)। মাছের দেহ অনেকটা তাঁতের মাকুর মতো। মাথা ও লেজ ক্রমশ সরু। প্রস্থ থেকে উচ্চতা বেশি। চলনের সময় পানির ভেতর গতি বাধাপ্রাপ্ত হয় না বলে এ ধরনের আকৃতিকে স্ট্রিমলাইনড বলে। শরীরের দুপাশ সমানভাবে চ্যাপ্টা এবং সারা শরীর রূপালী আঁশ দিয়ে আবৃত থাকে। আঁশগুলো মসৃণ ও সারিবদ্ধ ভাবে সাজানো থাকে। ধুসর বর্ণের পাখনার এই মাছের পৃষ্ঠদেশের আঁশের কেন্দ্র লালাভ এবং প্রান্ত কালো বর্ণের হয়ে থাকে। আঁশের কেন্দ্রের এই লালাভ বর্ণ প্রজনন ঋতুতে আরও গাঢ় ও উজ্জ্বল হয়। এছাড়াও অধিক জলজ উদ্ভিদময় পরিবেশে বেড়ে ওঠা মাছের পৃষ্ঠদেশের বর্ণ সবুজ-লালাভ হতে পারে। এদের পিঠ ও পিঠের নিচের দিকটা বাদামী রঙের এবং পেট রুপালী সাদা রঙের হয়৷ মুখ নিচের দিকে নামানো থাকে এবং পুরু ঠোট ভিতরের দিকে ভাঁজ হয়ে থাকে৷ মুখের উপরে ঠোঁটে এক জোড়া গোঁফ থাকে।
রুই মাছ সর্বোচ্চ ২০০ সেমি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।এরা সবোর্চ্চ ১০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে এবং ওজন ৪৫ কেজি পর্যন্ত হতে পারে বলে জানা গেছে। আন্তর্জাতিকভাবে রুই মাছের নাম বলা হয়ে থাকে রোহু। স্থানীয় নাম রুই, রোহিতা, রুহিত, রাউ, নলা, গরমা, নওসি।
সূত্রঃ
-ইকথায়োলজি
-zoologybdall
-আনন্দবাজার

No comments:

Post a Comment