চুপ থাকা নিয়ে চমৎকার একটি মিশরীয় প্রবাদ আছে- *‘কোলাহল যদি রূপার তৈরি হয়, নীরবতা তবে সোনার তৈরি* !’ আরবী প্রবাদটাও অসাধারণ- ‘তুমি তখনি কথা বলো, যখন তা চুপ থাকার চেয়েও সুন্দর!’
চুপ থাকাকে কেন এতো গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে? কারণ জিহ্বা দ্বারা সংশ্লিষ্ট গুনাহগুলো আমাদের ভালো আমলগুলোকেও নষ্ট করে দিচ্ছে। আমরা সারাদিনে যত কথা বলি, তার বেশিরভাগই অপ্রয়োজনীয়, মিথ্যাচার ও গিবতে পরিপূর্ণ। অথচ মুখ নিঃসৃত প্রতিটি শব্দই লিপিবদ্ধ হচ্ছে।
মহান আল্লাহ বলেন : ‘মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করুক না কেন, তা লিপিবদ্ধ করার জন্য তৎপর প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে।’ (সূরা কাফ : ১৮)
হাশরের ময়দানে দেখা গেল- আমাদের পূণ্যের চেয়ে পাপের পাল্লা ভারি। অবাক কান্ড! কখনো কারো ক্ষতি করিনি, কারো প্রতি অন্যায় করিনি, তারপরো এ অবস্থা কেন? তখন উত্তর আসবে, এগুলো তোমার মুখ নিঃসৃত পাপের ফল! এজন্যই আল্লাহর রাসূল (সা.) বলে গেছেন : ‘অধিকাংশ মানুষ জিহ্বা দ্বারা সংঘটিত পাপের কারণে জাহান্নামে যাবে।’ (তিরমিযি : ১৬১৮)
তাহলে করণীয়? এর সমাধানও রাসূলুল্লাহ (সা.) দিয়ে গেছেন- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন উত্তম কথা বলে নতুবা চুপ থাকে।’ (মিশকাত, ৪২৪৩)
জেনে নেওয়া যাক জিহ্বা দ্বারা সৃষ্ট কবিরা গুনাহসমূহ : ১. মিথ্যা কথা বলা,
২. মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া,
৩. মিথ্যা শপথ করা,
৪. গিবত করা,
৫. পরনিন্দা করা,
৬. অভিশাপ দেওয়া,
৭. খোঁটা দেওয়া,
৮. চোগলখোরি করা।
যেমন হওয়া উচিত আমাদের কথা বলার নীতি-
১. কথা বলার আগে সালাম দেওয়া। (সূরা নূর : ৬১)
২. সতর্কতার সঙ্গে কথা বলা (কেননা প্রতিটি কথা রেকর্ড হয়) (সূরা ক্বফ : ১৮)
৩. সুন্দরভাবে ও উত্তমরূপে কথা বলা। (সূরা বাক্বারাহ : ৮৩; বুখারী, ১৪১৩)
৪. অনর্থক ও বাজে কথা পরিহার করা। (সূরা নূর : ৩; বুখারী, ৩৫৫৯)
৫. কন্ঠস্বর নিচু করে কথা বলা। (সূরা লুকমান : ১৯ সূরা হুজুরাত : ২-৩)
৬. বুদ্ধি খাটিয়ে কথা বলা। (সূরা নামল : ১২৫)
৭. সঠিক কথা বলা ও পাপ মোচনের দুয়ার উন্মুক্ত করা। (সূরা আহযাব : ৭১-৭২)
৮. গাধার মতো কর্কশ স্বরে কথা না বলা। (সূরা লুকমান : ১৯; তিরমিযী, ৪৮৫৯)
৯. উত্তম কথা বলে শত্রুকেও বন্ধুতে পরিণত করা ( সূরা হা-মীম সাজদাহ : ৩৪)
১০. উত্তম কথায় দাওয়াত দেওয়া। (সূরা হা- মীম সাজদাহ : ৩৪)
১১. ঈমানদারদের কথা ও কাজ এক হওয়া। (সূরা ছফ:২)
১২. পরিবারের সদস্যদের প্রতি ক্ষমার নীতি অবলম্বন করা । (সূরা আরাফ : ১৯৯)
১৩. মেয়েরা পর-পুরুষের সঙ্গে আকর্ষণীয় ও কোমল ভাষায় কথা না বলা। (সূরা আহযাব : ৩২)
১৪. ছেলেরা পর-নারীর সঙ্গে আকর্ষণীয় ও কোমল ভাষায় কথা না বলা
১৫. মূর্খ ও অজ্ঞদের সাধ্যমত এড়িয়ে চলা। (সূরা ফুরকান : ৬৩)
১৬. হাসি মুখে কথা বলা
আমরা আমাদের জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি তো? নাকি জিহ্বাই আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছে?
No comments:
Post a Comment