Thursday, September 29, 2022

Seeds of Peace

 Ignorance makes you believe that life functions haphazardly.

অজ্ঞতা তোমাকে বিশ্বাস করাতে চাইবে যে তোমার জীবনটা চলছে এলোমেলোভাবে।
Wisdom teaches you that everything that happens in this theatre of life has profound significance.
প্রজ্ঞা তোমাকে জানিয়ে দেবে যে এই জীবনের রঙ্গমঞ্চে সব কিছুই চলছে এক গভীর তাতপর্য নিয়ে।
What you see today is not the fruit of chance but a fruit from seeds planted in the past.
আজ তুমি যা দেখছো তা কিন্তু কোন ঘটনাচক্রের ফসল নয় বরং তুমি যে চারা অতীতে রোপন করেছিলে তারই ফসল। এটা শান্তির ফসল।

সন্তানের সুন্দর ও অর্থবোধক নাম রাখুন

 সুন্দর অর্থপূর্ণ ও রুচিসম্পন্ন নামকরণের বিষয়ে ইসলামের রয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা।

আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা সন্তানদের তার পিতার নামেই ডাকো, সেটাই আল্লাহর কাছে ন্যায়সঙ্গত।’ (সূরা আল আহজাব : ৫)
হজরত ইবনে আব্বাস রা: বলেন, একদা সাহাবারা হজরত রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে জিজ্ঞাসা করলেন, হুজুর! পিতার হক সম্পর্কে তো আমরা আপনার কাছ থেকে জানলাম। পিতার ওপর সন্তানের হক কী এ ব্যাপারে আমাদের জানান। উত্তরে রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করলেন, পিতা সন্তানের অর্থপূর্ণ ভালো নাম রাখবে এবং তাকে সুশিক্ষা দিবে। (সুনানে বায়হাকি)
হজরত আবু ওহাব জুশানি রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমরা নবীদের নামে নিজেদের নাম রাখবে। তবে আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম নাম হলো- আবদুল্লাহ ও আবদুর রহমান।’ (সুনানে আবু দাউদ)
হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘যার সন্তান জন্মগ্রহণ করে সে যেন সন্তানের সুন্দর নাম রাখে ও সুশিক্ষা দেয় এবং প্রাপ্তবয়স্ক হলে তাকে বিয়ে দেয়।’ (সুনানে বায়হাকি)
হজরত আবু দারদা রা: হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে তোমাদের পিতার নামে ডাকা হবে। অতএব তোমাদের নামগুলো অর্থবোধক রাখো। ’ (সুনানে আবু দাউদ)
বিখ্যাত দার্শনিক ও ইসলামী স্কলার ইবনে কাইয়্যুম জাওচি রহ: তার কিতাব ‘তুহফাতুল মাওদুদ বি আহকামিল মাওলুদ’ এ লিখেছেন, ‘নামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবেই মানুষের ভালো-মন্দ আচরণ, চরিত্র ও কর্মধারা প্রভাবিত হয়। মন্দ নামেরও মন্দ প্রভাব রয়েছে।’
ব্যক্তির নাম তার স্বভাব চরিত্রের ওপর ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ বিষয়ে হাদিসে চমৎকার নির্দেশনা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে শায়েখ আবু বকর আবু যায়েদ রহ: বলেন, ঘটনাক্রমে দেখা যায়, ব্যক্তির নামের সাথে তার স্বভাব ও বৈশিষ্ট্যের মিল থাকে। এটাই আল্লাহ তায়ালার হেকমতের দাবি। যার নামের মধ্যে গাম্ভীর্যতা আছে তার চরিত্রে গাম্ভীর্য পাওয়া যায়। খারাপ নামের অধিকারী লোকের চরিত্রও খারাপ হয়ে থাকে। ভালো নামের অধিকারী ব্যক্তির চরিত্রও ভালো হয়ে থাকে।
ইমাম মালেক রহ:-এর প্রসিদ্ধ হাদিসের কিতাব ‘মুয়াত্তায়’ বর্ণিত আছে। হজরত ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ রা: হতে বর্ণিত, হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব রা:-এর কাছে জুহারনা গোত্রের এক ব্যক্তি এলো। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন তোমার নাম কী? সে বলল, জামরা (অগ্নিস্ফুলিঙ্গ)। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কার পুত্র? সে বলল, ইবনে শিহাব (অগ্নিশিখার পুত্র)। তিনি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, কোন গোত্রের? সে বলল, হারাকা (প্রজ্বলন)। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার বাড়ি কোথায়? সে বলল, হারাকা (অগ্নিগর্ভে)। সর্বশেষে ওমর রা: জিজ্ঞাসা করলেন, কোন অংশে? সে বলল, বিজাতিল লাজা (শিখাময় অংশে)। হজরত ওমর রা: তাকে বললেন যাও, তোমার গোত্রের লোকদের কাছে গিয়ে দেখ, তারা ভস্মীভূত হয়েছে! লোকটি বলল, তাদের কাছে এসে দেখলাম সত্যিই তারা সবাই ভস্মীভূত হয়েছে।
-নয়া দিগন্ত সূত্র

মহানবী (সা.)-এর অপছন্দনীয় শব্দ ও বাক্য

 মহানবী (সা.) যেসব শব্দ ও বাক্য পছন্দ করতেন না তার অন্যতম হচ্ছে, ‘খাবুসাত নাফসি’ অর্থাতআমার চরিত্র নোংরা হয়ে গেছে। এর পরিবর্তে তিনি ‘লাকিসাত নাফসি’ বলার উপদেশ দিয়েছেন। উভয় বাক্যের অর্থ কাছাকাছি। আর তা হচ্ছে অভ্যাস ও চরিত্র নষ্ট হয়ে গেছে।

নবী (সা.) ‘খাবুসা’ শব্দটি প্রয়োগ করা অপছন্দ করেছেন। কারণ তা কদর্যতা ও নোংরামির মাত্রাতিরিক্ত অর্থ প্রকাশ করে।
মহানবী (সা.) আঙুর ফলকে ‘কারাম’ বলতেও নিষেধ করেছেন। কারণ কারাম হচ্ছে মুমিনের গুণ।
মহানবী (সা.) কাউকে এমন কথা বলতে নিষেধ করেছেন যে ‘মানুষ ধ্বংস হয়ে গেছে’। নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি এরূপ বলল, মূলত সে যেন লোকদের ধ্বংস করে দিল। এমনি ‘লোকেরা নষ্ট হয়ে গেছে, জামানা খারাপ হয়ে গেছে’ বলাও অপছন্দনীয়।
রাসুল (সা.) ‘তারকার প্রভাবে বৃষ্টিপ্রাপ্ত হয়েছে’ বলতেও নিষেধ করেছেন।
মহানবী (সা.) ‘আল্লাহ যা চান’ এবং ‘তুমি যা চাও’ বলতেও নিষেধ করেছেন।
কেননা এতে (এবং) শব্দের মাধ্যমে বান্দা ও আল্লাহর ইচ্ছাকে সমান করে দেওয়া হয়। তাই (এবং) শব্দ পরিহার করে অতঃপর শব্দটি প্রয়োগ করতে হবে। অর্থাত এভাবে বলতে হবে যে আল্লাহ যা চান অতঃপর সে যা চায়।
রাসুল (সা.) আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করল সে শিরক করল। ’ (মুসনাদে আহমাদ)
এমনি শপথের মধ্যে এ কথাও বলা নিষিদ্ধ যে সে যদি এমন করে তাহলে ইহুদি হয়ে যাবে।
মহানবী (সা.) রাজা-বাদশাহকে মালিকুল মুলক তথা শাহানশাহ বা রাজাধিরাজ বলতে নিষেধ করেছেন। চাকর ও খাদেমকে আমার বান্দা বা আমার বান্দি বলাও নিষিদ্ধ। বাতাসকে গালি দেওয়া, জ্বরকে দোষারোপ করা, মোরগকে গালি দেওয়ার ব্যাপারেও নিষিদ্ধতা বর্ণিত হয়েছে।
আইয়্যামে জাহেলিয়াত তথা অন্ধকার যুগের সব আহ্বান ও স্লোগানকে তিনি বর্জন করার আদেশ দিয়েছেন। মুসলিমদের গোত্র, বংশ ও জাতীয়তাবাদের দিকে আহ্বান করতে এবং এর ভিত্তিতে বিভক্ত হতে নিষেধ করেছেন।
তিনি বেশির ভাগ মুসলমানের কাছে পরিচিত ‘এশা’ সালাতের নাম বর্জন করে ‘আতামাহ’ রাখাকে অপছন্দ করেছেন। গ্রাম্য লোকেরা সে সময় এশার সালাতকে আতামার সালাত বলত। কিন্তু বেশির ভাগ মুসলমান তখন এশার সলাত বলত। তাই রাসুল (সা.) গ্রাম্য লোকদের অভ্যাস মোতাবেক এশার সালাতের নাম বর্জন করে ‘আতামার সালাত’ বলা অপছন্দ করেছেন।
এমনি কোনো মুসলমানকে গালি দেওয়া, তিনজন একসঙ্গে থাকলে একজনকে বাদ দিয়ে দুজন মিলে গোপনে আলাপ করা এবং নারীকে তার স্বামীর কাছে অন্য নারীর সৌন্দর্য বর্ণনা করতে নিষেধ করেছেন।
মহানবী (সা.) ‘হে আল্লাহ, তুমি ইচ্ছা করলে আমাকে ক্ষমা করো’—এভাবে দোয়া করতে নিষেধ করেছেন এবং আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে দৃঢ়তার সঙ্গে চাওয়ার আদেশ করেছেন। তিনি বেশি বেশি শপথ করা, আল্লাহর চেহারার উসিলায় কিছু চাওয়া থেকে নিষেধ করেছেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনাকে ইয়াসরিক বলতে নিষেধ করেছেন। রাসুল (সা.) বিনা প্রয়োজনে কোনো লোককে এ কথা জিজ্ঞেস করতে নিষেধ করেছেন যে কেন সে তাঁর স্ত্রীকে প্রহার করেছে। তবে প্রয়োজনবশত জিজ্ঞেস করা যেতে পারে।
রাসুল (সা.) ‘আমি পূর্ণ রমজান মাস সিয়াম রেখেছি এবং পূর্ণরাত তাহাজ্জুদ সালাত পড়েছি’—এমন কথা বলতে নিষেধ করেছেন।
যেসব বিষয় ইঙ্গিতের মাধ্যমে বলা উচিত, তা সুস্পষ্ট করে এবং খোলাখুলিভাবে বলা নবীজি (সা.)-এর অপছন্দনীয় কথা-বার্তার অন্তর্ভুক্ত।
রাসুল (সা.) এমন কথা বলতে নিষেধ করেছেন যে ‘ওই আল্লাহর শপথ! যার সিলমোহর আমার মুখের ওপর আছে। ’ কেননা কাফিরের মুখের ওপরও আছে আল্লাহর সিলমোহর।
জোরপূর্বক আদায়কৃত সম্পদকে হক বা অধিকার বলা অন্যায়। আল্লাহর রাস্তায় ও আল্লাহর আনুগত্যে খরচ করার পর এ কথা বলা নিষিদ্ধ যে আমি এত এত সম্পদ নষ্ট করেছি, দুনিয়াতে আমি অনেক সম্পদ খরচ করেছি ইত্যাদি।
ইজতেহাদি মাসআলায় (গবেষণালব্ধ ইসলামী বিধানের ক্ষেত্রে) মুফতির জন্য এ কথা বলা নিষিদ্ধ যে আল্লাহ এটাকে হালাল করেছেন অথবা আল্লাহ এটাকে হারাম করেছেন।
কোরআন ও সুন্নাহর কোনো দলিলকে মাজাজ (রূপকার্থবোধক) বলা ঠিক নয়। এভাবে দার্শনিকদের সন্দেহযুক্ত কথাকে অকাট্য যুক্তি বলা অযৌক্তিক।
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যেসব কাজ (সহবাস বা অন্য বিষয়) হয় তা মানুষের মধ্যে বলে বেড়ানো নিষিদ্ধ। যেমনটি করে থাকে নির্বোধ ও নিম্ন শ্রেণির লোকেরা।
‘আমি, আমার, আমার কাছে’ ইত্যাদি শব্দ উচ্চারণ করা থেকে সতর্ক থাকা উচিত। কেননা এই তিনটি শব্দ বলার কারণেই ইবলিস, ফেরাউন ও কারুন ধ্বংস হয়েছে। ইবলিস বলেছিল, ‘আমি তার (আদম) থেকে শ্রেষ্ঠ। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ আগুন থেকে। আর তাঁকে সৃষ্টি করেছ মাটি থেকে। ’ (সুরা আরাফ, আয়াত : : ১২)
ফেরাউন বলেছিল, ‘মিসরের রাজত্ব কি একমাত্র আমার নয়?’ (সুরা জুখরুফ, আয়াত : ৫১)
কারুন বলেছিল, ‘এই ধন আমার নিজস্ব জ্ঞান-গরিমা দ্বারা প্রাপ্ত হয়েছি। ’ (সুরা কাসাস, আয়াত : ৭৮)
জাদুল মাআদ অবলম্বনে

ওজন কমাতে সকালে বেশি খান

 একটা প্রবাদ আছে, সকালে খাও রাজার মতো, দুপুরে প্রজার মতো আর রাতে ভিখারির মতো। এটাই স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে ভালো। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব অ্যাবারডিনের সাম্প্রতিকতম গবেষণার ফলাফলে আবারও প্রমাণিত হলো প্রবাদটির সঠিকতা। গবেষণায় বলা হচ্ছে, সকালে যত বেশি আর স্বাস্থ্যকর খাবার খাবেন, সারাদিনে আপনার খিদে লাগার প্রবণতা ততই কম থাকবে। শরীরের মেটাবলিজম সিস্টেমও ঠিক থাকবে। এর সঙ্গে রাতে অল্প খেলে সেটা হতে পারে আপনার ওজন কমানোর সবচেয়ে সহায়ক শক্তি।

সকালের ভারি নাশতায় সম্ভাব্য কী কী থাকতে পারে, পুষ্টিবিদদের পরামর্শে তারও একটা তালিকা দেওয়া হয়েছে। ওটমিল, প্যানকেক, স্যান্ডউইচ, আটার রুটি, খিচুড়ি, পাউরুটি, স্মুদি, দই, ডিম, সসেজ, মাশরুম, ফল, গ্রিন টি। এই গবেষণায় অন্যতম গবেষক অধ্যাপক জসস্টোন বলেন, ব্যস্ততম জীবনে মানুষ সর্বোচ্চ সময় ঘুমাতে চান। আর এ কারণে তাঁরা প্রায়ই সকালের নাশতা না খেয়েই বেরিয়ে পড়েন। রাতে ভারি খাবার খান। এটা একদম ভুল।
সকালের নাশতা না খেয়েই বেরিয়ে পড়া দিনের সবচেয়ে বড় ভুল
-প্রথম আলো

১০(দশ) প্রকার লোকের দেহ পচবে না!

 জানি ও জানাই

ভালো করে পড়ি।
হাদিসে আছে ৩ প্রকার লোকের দেহ পচবে না। সেখানে কুরআনে হাফেজ এবং আলেম-এর কথা উল্লেখ করা আছে। তাদের দেহ না পচার ব্যাখ্যা কী?
সম্মানিত দ্বীনি ভাই, আপনি যে হাদিসটির থেকে উল্লেখিত তিন প্রকার লোকের দেহ না পচার উদ্ধৃতি দিলেন, সে হাদিসটি লিপিবদ্ধ আছে লেখক মৌলভী শামসুল হুদা রচিত "নেয়ামুল কোরআন" নামক গ্রন্থের ২৪৫ নং পৃষ্ঠায়। সেখানে উল্লেখ আছেঃ
১০(দশ) প্রকার লোকের দেহ পচবে না!
“হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে, নিম্নলিখিত দশ প্রকার লোকের দেহ কবরে পঁচবে না:
১) পয়গম্বর,
২) শহীদ,
৩) আলেম,
৪) গাজী,
৫) কুরআনের হাফেয,
৬) মোয়াযযিন,
৭) সুবিচারক বাদশাহ বা সরদার,
৮) সূতিকা রোগে মৃত রমণী,
৯) বিনা অপরাধে নিহত ব্যাক্তি,
১০) শুক্রবারে যার মৃত্যু হয়"।
মূলত "নেয়ামুল কোরআন" নামক গ্রন্থে উল্লেখিত এ হাদিসটিকে বিশিষ্ট ইসলামি ব্যক্তিত্ব জনাব ড.খোন্দকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রঃ) তার রচিত "হাদিসের নামে জালিয়াতি" নামক গ্রন্থে জাল হাদিস বলে চিহ্নিত করে তিনি লিখেছেন।
"উল্লেখিত ব্যক্তিদের অনেককেই হাদীসে শহীদ বলা হয়েছে। তবে একমাত্র নবীগণ বা পয়গম্বরগণের দেহ মাটিতে পচবে না বলে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। অন্য নয় প্রকারের মৃতগণের মৃতদেহ না পচার বিষয়ে কোনো হাদীস আছে বলে আমি সাধ্যমত চেষ্টা করেও তা জানতে পারি নি । আল্লাহই ভাল জানেন"।
(সুত্রঃ হাদিসের নামে জালিয়াতি, পৃষ্ঠা নং ৬০৫)
সুতরাং আমরা বিজ্ঞ আলেমের (ইসলাম ধর্ম নিয়ে পি,এইচ,ডি) [1] উপরোক্ত আলোচনার আলোকে জানতে পারলাম "নেয়ামুল কোরআন" নামক গ্রন্থে উল্লেখিত হাদিসটি জাল বা ভিত্তিহীন।
এখানে আরো একটা বিষয় উল্লেখ না করলেই নয় যে, পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন শহীদদের মর্যাদা নিয়ে কথা বলেছেন। তাদের মর্যাদা বর্ণনা করে আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেনঃ-
"যারা আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণ করে, তাদেরকে মৃত বলো না, বরং তারা জীবিত; কিন্তু তা তোমরা উপলব্ধি করতে পার না"।
(সূরা বাকারাহ, আয়াতঃ- ১৫৪)

চাপ, কষ্ট, আঁধার কি ইতিবাচক হতে পারে?

 আমি বলবো ইতিবাচক হতে পারে।

কিভাবে?
মনে রাখিঃ
প্রবল চাপে না থাকলে কয়লা থেকে হীরা তৈরী হয় না
জলপাই বা অলিভকে প্রচন্ড চাপ দিলে অলিভ অয়েল পাওয়া যায়
বীজ আঁধারে না রইলে চারা গজায় না
দ্রাক্ষা বা আঙ্গুরকে না পিষলে সুরা তৈরী হয় না
এ সবই বিশেষ ধরনের উদাহরণ।
তাই তুমি যখন প্রবল কষ্টে চূর্ণ বিচূর্ণ হতে থাকো, প্রবল চাপে থাকো, আঁধারে হাবুডুবু খাও-
বুঝে নিও যে তুমি ভালোর দিকে পরিবর্তিত হওয়ার জন্য এক শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছো।

ইসলামে স্ত্রীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের তাগিদ

 পবিত্র হাদিস শরিফে স্ত্রীকে স্বামীর চারিত্রিক সনদদাতা আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে ঈমানে পরিপূর্ণ মুসলমান হচ্ছে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি। যেসব লোক নিজেদের স্ত্রীদের কাছে উত্তম তারাই তোমাদের মধ্যে অতি উত্তম। (তিরমিজি, হাদিস : ১১৬২)
স্ত্রীর কাছে চারিত্রিক সনদ পেতে হলে তার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা জরুরি। নিম্নে কোরআন-হাদিসের আলোকে স্ত্রীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার কিছু পদ্ধতি তুলে ধরা হলো—
স্ত্রীর মোহর আদায়ে যত্নবান হওয়া : নারীদের তাদের মোহর স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে দেবে, অতঃপর তারা যদি সন্তোষের সঙ্গে তা থেকে তোমাদের জন্য কিছু ছেড়ে দেয়, তবে তা তৃপ্তির সঙ্গে ভোগ করো। (সুরা : নিসা, আয়াত : ৪)
স্ত্রীকে সদুপদেশ দেওয়া : স্ত্রী কখনো কোনো ভুল করে ফেলে তাকে শারীরিক বা মানসিক অত্যাচার না করে সুন্দর নসিহতের মাধ্যমে বোঝানো। রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা নারীদের উত্তম নসিহত প্রদান করবে। কেননা নারী জাতিকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে ওপরের হাড়টি বেশি বাঁকা। তুমি যদি তা সোজা করতে যাও, তাহলে তা ভেঙে যাবে আর যদি ছেড়ে দাও, তাহলে সব সময় তা বাঁকাই থাকবে। কাজেই নারীদের নসিহত করতে থাকো। (বুখারি, হাদিস : ৩৩৩১)
সামর্থ্য অনুযায়ী ভরণ-পোষণ দেওয়া : মুআবিয়াহ আল-কুশাইরি (রা.) বলেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বললাম, আমাদের স্ত্রীদের (হক) সম্পর্কে আপনি কী বলেন? তিনি বলেন, তোমরা যা খাবে তাদেরকেও তা-ই খাওয়াবে এবং তোমরা যা পরবে, তাদেরকেও তা পরিধান করাবে। তাদেরকে প্রহার করবে না এবং গালিগালাজ করবে না। (আবু দাউদ, হাদিস : ২১৪৪)
স্ত্রীর সাজসজ্জার ব্যবস্থা করা : রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা নারীদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহারের উপদেশ শুনে নাও... সাবধান! তোমাদের ওপর তাদের অধিকার এই যে, তাদের ভরণ-পোষণ, পোশাক-পরিচ্ছদ ও সজ্জার ব্যাপারে তোমরা তাদের প্রতি শোভনীয় আচরণ করবে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৮৫১)
স্ত্রীর কোনো জায়েজ কাজকে ঘৃণা না করা : একেক মানুষের চিন্তা-চেতনা একেক রকম, তাই জায়েজ কোনো বিষয়ে স্ত্রীর কোনো অভ্যাস পছন্দ না হলেও তাকে ঘৃণা না করা। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, কোনো মুমিন পুরুষ কোনো মুমিন নারীর প্রতি বিদ্বেষ-ঘৃণা পোষণ করবে না; (কেননা) তার কোনো (জায়েজ) অভ্যাসকে অপছন্দ করলে তার অন্য কোনো অভ্যাস সে পছন্দ করবে। (মুসলিম, হাদিস : ৩৫৪০)
স্ত্রীর সুবিধা-অসুবিধা লক্ষ করা : আনাস ইবনু মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উম্মু সুলায়ম (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর স্ত্রীদের সঙ্গে ছিলেন এবং একজন উটচালক তাঁদের উট হাঁকাচ্ছিল। রাসুল (সা.) বলেন, হে আনজাশাহ! কাচপাত্র নিয়ে আস্তে চলো। (মুসলিম, হাদিস : ৫৯৩৩)
স্ত্রীদের প্রতি যত্নশীল হওয়া : মহানবী (সা.) তাঁর স্ত্রীদের প্রতি অত্যন্ত যত্নশীল ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সব স্ত্রীর খোঁজ নিতেন এবং সবার সঙ্গে কিছুক্ষণ সময় কাটাতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ফজরের নামাজের পর নবী (সা.) নামাজের স্থানে বসে থাকতেন। সূর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত লোকেরাও তাঁর চারপাশে বসে থাকত। অতঃপর তিনি তাঁর প্রত্যেক স্ত্রীর কাছে যেতেন, তাদের সালাম দিতেন, তাদের জন্য দোয়া করতেন আর যার দিন থাকত তার কাছে গিয়ে বসতেন। (তিবরানি, হাদিস : ৮৭৬৪)
এ ছাড়া রাসুল (সা.) প্রতি রাতে সব স্ত্রীদের একত্র করে তাঁদের খোঁজ নিতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, খুব কম দিনই হতো যে রাসুল (সা.) তাঁর সব স্ত্রীর কাছে যেতেন না এবং তাদের সঙ্গে সহবাস ছাড়া ঘনিষ্ঠ (আলিঙ্গন ও চুম্বন) হতেন না। (আবু দাউদ, হাদিস : ২১৩৭)
চিত্তবিনোদন ও মানসিক প্রশান্তির ব্যবস্থা করা : স্ত্রীদের মানসিক প্রশান্তির জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁদের সঙ্গে ক্রীড়া-কৌতুকও করতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক সফরে তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলেন, তখন তিনি কিশোরী। রাসুল (সা.) সঙ্গীদের বললেন, তোমরা এগিয়ে যাও। অতঃপর আয়েশা (রা.)-কে বলেন, এসো দৌড় প্রতিযোগিতা করি। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি তাঁর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করলাম এবং দৌড়ে এগিয়ে গেলাম। (আস-সুনানুল কুবরা লিন-নাসায়ি, হাদিস : ৮৯৪৫)
সাংসারিক কাজে সহযোগিতা করা : মহানবী (সা.) সাংসারিক কাজে স্ত্রীদের সহযোগিতা করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, নবী (সা.) জুতা ঠিক করতেন, কাপড় সেলাই করতেন এবং তোমরা যেমন ঘরে কাজ করো তেমনি কাজ করতেন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৫৩৮০)
মান-অভিমানে সহানুভূতিশীল হওয়া : স্ত্রীরা কখনো অভিমান করলে বা মন খারাপ করলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করতেন। এক সফরে রাসুলুল্লাহ (সা.) এগিয়ে যান এবং সাফিয়া (রা.) পিছিয়ে পড়েন। এতে তিনি কেঁদে ফেলেন। মহানবী (সা.) তখন নিজ হাতে তাঁর চোখ মুছে দেন এবং কাঁদতে নিষেধ করেন। (সুনানে কুবরা লিন-নাসায়ি, হাদিস : ৯১৬২)
স্ত্রীদের সঙ্গে খুনসুটি করা : মহানবী (সা.) তাঁর আচার-আচরণে স্ত্রীদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতেন এবং নানা খুনসুটি করতেন তাঁদের সঙ্গে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি ও রাসুলুল্লাহ (সা.) একই পাত্র থেকে গোসল করতাম, যা আমাদের মধ্যে থাকত। তিনি আমার চেয়ে অগ্রগামী হলে আমি বলতাম, আমার জন্য রাখুন! আমার জন্য রাখুন!! (মুসলিম, হাদিস : ৩২১)
স্ত্রীদের অবদান স্বীকার করা : খাদিজা (রা.) সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মানুষ যখন আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে তখন সে আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে, মানুষ যখন আমাকে বঞ্চিত করেছে তখন সে তার সম্পদ দ্বারা আমাকে সমৃদ্ধ করেছে, আল্লাহ আমাকে তার গর্ভ থেকে সন্তান দিয়েছেন যখন তিনি অন্য স্ত্রীদের সন্তান থেকে আমাকে বঞ্চিত করেছেন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৪৮৬৪)
-কালের কন্ঠ

কুরআন যাদেরকে ‘পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট’ বলেছে

 মানুষ ‘সৃষ্টির সেরা জীব’ হলেও কিছু মানুষকে আল্লাহ তাআলা চতুষ্পদ প্রাণীর চেয়েও নিকৃষ্ট বলেছেন। ‘..তারা (মানুষ হয়েও) পশুর মতো, বরং পশুর চেয়েও বেশি নিকৃষ্ট’ ulaaa'ika kal an'aami bal hum adall (সুরা আরাফ: ১৭৯)। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, ব্যাপকভাবে মানুষ বলতেই সৃষ্টির সেরা নয়; বরং কোনো ক্ষেত্রে মানুষ পশু থেকেও নিকৃষ্ট হয়ে থাকে।

এছাড়াও সুষ্ঠু বিবেক ও সঠিক জ্ঞান দেওয়া হয়েছে মানুষকে। দেওয়া হয়েছে অন্তর, স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের অন্তর রয়েছে অথচ তারা তা দ্বারা উপলব্ধি করে না’ lahum quloobul laa yafqahoona bihaa wa lahum a'yunul laa yubisiroona bihaa wa lahum aazaanul laa yasma'oona bihaa (সুরা আরাফ: ১৭৯)। মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘তারা কি কোরআন সম্পর্কে মনোযোগসহ চিন্তাভাবনা করে না, নাকি তাদের অন্তর তালাবদ্ধ!’ Afalaa yatadabbaroonal Qur-aana am 'alaa quloobin aqfaaluhaa (সুরা মুহাম্মদ: ২৪)
আল্লাহকে চিনতে না পারাদের প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করেনি? তবে তারা জ্ঞানবুদ্ধিসম্পন্ন হৃদয় ও শ্রুতিশক্তিসম্পন্ন শ্রবণের অধিকারী হতো’ Afalam yaseeroo fil ardi fatakoona lahum quloobuny ya'qiloona bihaaa aw aazaanuny yasma'oona bihaa fa innahaa laa ta'mal absaaru wa laakin ta'mal quloobul latee fissudoor(সুরা হজ: ৪৬)।
সৃষ্টিকুলের সবকিছুকে তিনি মানুষের অনুগত করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মহান আল্লাহ সেই সত্তা, যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীর সব কিছু সৃষ্টি করেছেন’ Huwal lazee khalaqa lakum maa fil ardi jamee'an (সুরা বাকারা: ২৯)। সুতরাং আল্লাহ প্রদত্ত এই অধিকার যথাযথভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে পৃথিবীর সুন্দর পরিবেশ গড়ে তোলা, একইসঙ্গে নিজের স্রষ্টার আদেশ-নিষেধকে মেনে নিয়ে তাঁরই বিধান গ্রহণ করা মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের বৈশিষ্ট্য।
কিন্তু যারা মহান স্রষ্টার অবাধ্যতা করে, তাদের বিবেক, জ্ঞান ও চিন্তাশক্তি অর্থহীন হয়ে গেল। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে যারা পৃথিবীর সুন্দর পরিবেশ কলুষিত করে, তারা মানবতার শত্রু। তাই মানুষ হয়েও তারা চতুষ্পদ প্রাণী বা তার চেয়েও নিকৃষ্ট।
আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘আমি অবশ্যই বহু মানুষ ও জিনকে দোজখের জন্যে নির্ধারিত করেছি; কারণ তাদের অন্তর আছে, কিন্তু তারা সত্যকে উপলব্ধি করে না, তাদের চোখ থাকলেও তা দিয়ে তারা সত্যকে দেখে না, তাদের কান আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা সত্যবাণী শোনে না। ওরা পশুর মতো; বরং তার চেয়েও বেশি পথভ্রষ্ট; নিশ্চয়ই তারা উদাসীন।’ (সুরা আরাফ: ১৭৯)
আয়াতের অর্থ এই নয় যে, আমি বিনা কারণে তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার জন্যই সৃষ্টি করেছিলাম, বরং এর সঠিক অর্থ হচ্ছে, আমি তো তাদেরকে হৃদয়, মস্তিষ্ক, কান, চোখ সবকিছুসহ সৃষ্টি করেছিলাম। কিন্তু এরা এগুলোকে যথাযথভাবে ব্যবহার করেনি এবং নিজেদের অসৎ কাজের বদৌলতে শেষ পর্যন্ত তারা জাহান্নামের ইন্ধনে পরিণত হয়েছে। সুতরাং তাদের আমলই তাদেরকে জাহান্নামের উপযুক্ত করেছে। তাদের জাহান্নাম দেওয়া আল্লাহর ইনসাফের চাহিদা। সে হিসেবে তিনি যেহেতু আগে থেকেই জানেন যে, তারা জাহান্নামে যাবে, সুতরাং তাদেরকে যেন তিনি জাহান্নামের আগুনে শাস্তি দেয়ার জন্যই সৃষ্টি করেছেন। (ফাতহুল কাদির)
আয়াতের পরের অংশে বলা হয়েছে, এরা কিছুই বোঝে না, কোনো কিছু দেখেও না এবং শুনেও না। অথচ বাস্তবে এরা পাগল বা উম্মাদ নয় যে, কিছুই বুঝতে পারে না। অন্ধও নয় যে, কোন কিছু দেখবে না, কিংবা বধিরও নয় যে, কোন কিছু শুনবে না; বরং প্রকৃতপক্ষে এরা পার্থিব বিষয়ে অধিকাংশ লোকের তুলনায় অধিক সতর্ক ও চতুর। উদ্দেশ্য এই যে, তাদের যা উপলব্ধি করা উচিত ছিল তারা তা করেনি, যা দেখা উচিত ছিল তা তারা দেখেনি, যা কিছু তাদের শোনা উচিত ছিল তা তারা শোনেনি। আর যা কিছু বুঝেছে, দেখেছে এবং শুনেছে, তা সবই ছিল সাধারণ জীবজন্তুর পর্যায়ের, যাতে গাধা-ঘোড়া, গরু-ছাগল সবই সমান।
তাছাড়া, জীব-জন্তু নিজের প্রভু ও মালিকের সেবা যথার্থই সম্পাদন করে। পক্ষান্তরে অকৃতজ্ঞ মানুষ স্বীয় মালিক, পালনকর্তার আনুগত্যে ত্রুটি করতে থাকে। সেকারণে তারা চতুস্পদ জন্তু অপেক্ষা বেশি নির্বোধ ও গাফেল। কাজেই বলা হয়েছে “এরাই হলো প্রকৃত গাফেল।” (তাবারি; ইবনে কাসির)
এ আয়াতের দুটি শিক্ষা
১) সবাই ঈমান আনবে বা সব মানুষই সংশোধিত হবে এমন আশা করা উচিত নয়। কারণ, মহান আল্লাহ মানুষকে পথ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দেওয়ায় অনেক মানুষ ভুল পথ নির্বাচন করবে এবং দোজখে যাবে এটাই স্বাভাবিক।
২) মানুষের মনুষ্যত্বের মানদণ্ড হলো- তারা সত্যকে উপলব্ধি করবে। এ মানদণ্ড না থাকলে তাকে পশুর সমান, বরং পশুর চেয়েও অধম বলা যায়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির মর্যাদা রক্ষার তাওফিক দান করুন। তাঁর রাগ ও শাস্তি থেকে হেফাজত করুন। প্রকৃত বান্দা হিসেবে ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
-ঢাকামেইল.কম
-নিজ পাঠ
-ইসলাম.নেট

দীর্ঘায়ু ডায়েটের খোঁজ খবরঃ

 

জেনে রাখলে উপকার মিলবে
বিজ্ঞানীরা স্বল্পায়ু প্রজাতির পুষ্টি ও বিলম্বিত বার্ধক্য, পুষ্টি-প্রতিক্রিয়া পথ, ক্যালোরির চোখ রাঙানি, উপবাস এবং কিটো ডায়েট-সহ বিভিন্ন ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট ও নানা গঠনমাত্রার ডায়েট বিশ্লেষণ করেছেন। এমনকী শতবর্ষজীবী মানুষদের জীবনধারা সামনে রেখে কোষীয় স্তর ও প্রাণী অধ্যয়ন থেকে শুরু করে ক্লিনিকাল ও মহামারী সংক্রান্ত বহু গবেষণার পর চূড়ান্ত পর্যায়ে বিজ্ঞানীরা যে দীর্ঘায়ু ডায়েটের খোঁজ পেয়েছেন, তা হলো-
শুঁটি ও গোটা দানাশস্য জাতীয় নিরামিষ
• বাদাম ও অলিভ অয়েলের মতো উদ্ভিজ্জ ফ্যাট থেকে ৩০% ক্যালোরি
• ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত কম কিন্তু পর্যাপ্ত প্রোটিন ডায়েট ও তার পরে মাঝারি মাত্রার প্রোটিন
• কম পরিমাণ চিনি ও পরিশোধিত শর্করা
• লাল (রেড) বা প্রক্রিয়াজাত মাংস নৈব নৈব চ/কিছুতেই নয়
• সীমিত মাত্রার সাদা মাংস
• প্রতিদিন ১২ ঘন্টা খাওয়া ও ১২ ঘন্টা উপবাস
-কৌশিক রায়/কোরা.কম

ক্যান্সার কী? ক্যান্সার কীভাবে হয়?

 ক্যান্সার-The Outlaw Cells শারীরিক নিয়ম না মানা কোষগুলো

মানুষের শরীর বিভিন্ন কোষ বা সেল দিয়ে তৈরি। এ-সব সেল একটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে বাড়ে। তবে সেই বৃদ্ধি কোনও কারণে অনিয়ন্ত্রিত হয়ে বাঁধনছেড়া হলে শরীরে নানারকম পরিবর্তন ঘটে। অস্বাভাবিক আকৃতির এই বৃদ্ধি টিউমার নামে পরিচিত। টিউমার দু’ধরনের। এক ধরনের টিউমার যেখানে সৃষ্টি হয় সেখানেই অবস্থান করে, স্থান পরিবর্তন না করে আজীবন একই জায়গায় থেকে যায়। যেমন, আব বা আঁচিল। অন্য দিকে কিছু টিউমার, যারা শরীরের অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে তারাই ক্যান্সার। সুতরাং, সেল-এর অনিয়ন্ত্রিত বিভাজন, সেখান থেকে টিউমার/আলসার হওয়া এবং তার দূরদূরান্তে ছড়িয়ে পড়াকেই ক্যান্সার বলে।
ক্যান্সার কীভাবে হয় তার সঠিক কারণ এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। তবে কয়েকটি কারণ আছে যেগুলিকে হাই রিস্ক ফ্যাক্টর বলে। এই রিস্ক ফ্যাক্টরগুলি দু’ভাবে বিভক্ত। বংশগত বা জেনেটিক ফ্যাক্টর এবং পরিবেশগত বা এনভায়রনমেন্টাল ফ্যাক্টর। প্রথম ফ্যাক্টর নিয়ে কিছু করার না থাকলেও দ্বিতীয় ফ্যাক্টরগুলি একজন মানুষের লাইফস্টাইল বা জীবনধারার সঙ্গে যুক্ত।
জেনেটিক ফ্যাক্টর: পরিবারে কারও ক্যান্সার হলে অন্য সদস্যদের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এটাই জেনেটিক ফ্যাক্টর। তার মানে এই নয় যে, বাবার ক্যান্সার হলে ছেলেরও ক্যান্সার হবে। বরং এভাবে বলা যায়, যে পরিবারে ক্যান্সারের ইতিহাস নেই, সে পরিবারের তুলনায় ক্যান্সার আক্রান্ত পরিবারের রক্ত সম্পর্কিত সদস্যদের এ রোগের ঝুঁকি কিছুটা বেশি। সুতরাং, বিষয়টি নিয়ে তাঁদের সচেতন থাকা দরকার। তবে এটা এখন প্রায় স্বীকৃত যে, ক্যান্সার একটি বংশগত রোগ।
পরিবেশগত ফ্যাক্টর: জিন ছাড়াও ক্যান্সার হওয়ার পেছনে পরিবেশগত ফ্যাক্টরের বড় ভূমিকা আছে। সেরকম কিছু কারণ জানানো হল-
তামাক বা টোব্যাকো- পরিবেশগত কারণের মধ্যে সবচেয়ে বড় হল তামাক। সিগারেট, খৈনি বা গুটখা, নস্যি ইত্যাদি নানা ধরনের তামাক জাতীয় নেশা থেকে ক্যান্সার হতে পারে।
অ্যালকোহল বা মদ্যপান- ক্যান্সারের দ্বিতীয় বৃহত্তর পরিবেশগত কারণ মদ্যপান। অনেকের লিভার ক্যান্সার বা প্যানক্রিয়াস ক্যান্সারের পেছনে থাকে দীর্ঘদিনের মদ্যাভ্যাস। তবে তামাক ও মদ একসঙ্গে সেবন করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি ২ গুণ না হয়ে ১০ গুণ বেশি হয়ে যায়।
স্থুলতা বা ওবেসিটি- স্থুলতা বা ওবেসিটি ক্যান্সারের ক্ষেত্রে একটি বড় রিস্ক ফ্যাক্টর। মেয়েদের ব্রেস্ট, ইউটেরাইন এবং ছেলেদের প্রস্টেট ক্যান্সারের সঙ্গে ওবেসিটির যোগাযোগ খুঁজে পাওয়া গেছে।
খাদ্য- খাদ্যের সঙ্গে ক্যান্সারের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। যাঁরা নিয়মিত ফাস্ট ফুড বা ফ্যাট জাতীয় খাদ্য বেশি খান, তাঁদের ওজন বেড়ে গিয়ে স্থুল হয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ে।
পরিশ্রমবিমুখতা- পরিশ্রমবিমুখতা ক্যান্সারের অন্যতম বড় কারণ। এক্ষেত্রেও ওজন বেড়ে গিয়ে ওবেসিটি ফ্যাক্টর প্রাধান্য পায়।
সংক্রমণ- ক্যান্সার সংক্রামক নয় কিন্তু কিছু কিছু ভাইরাল ও ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ থেকে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। যেমন, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচ পি ভি) থেকে মেয়েদের সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার এবং ছেলে ও মেয়েদের ওরাল বা ওরোফ্যারেঞ্জিয়াল ক্যান্সার হওয়ার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়াও হেপাটাইটিস ‘বি’ ও হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাস লিভার ক্যান্সার ঘটাতে পারে। হার্পিস গ্রুপের কয়েকটি বিরল ভাইরাসও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। কিছু ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকেও ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে। যেমন, এইচ পাইলোরি সংক্রমণ থেকে স্টমাক ক্যান্সার হতে পারে। তা ছাড়া ব্লাডার ক্যান্সারের সঙ্গেও ব্যাকটেরিয়া ব্যাকটেরিয়ার যোগাযোগ আবিষ্কৃত হয়েছে।
রোদ- নিয়মিত রোদের সংস্পর্শে স্কিন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। তবে পাশ্চাত্যের তুলনায় এদেশে স্কিন ক্যান্সার ততটা প্রবল নয়।
শিল্প- কিছু কিছু শিল্প বা ইন্ডাস্ট্রিতে ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে। যেমন, অ্যাসবেস্টস শিল্পে সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের বেশি লাঙ ক্যান্সার হয়। অ্যানিলিন ডাই-এর সঙ্গেও ব্লাডার ক্যান্সারের সম্পর্ক রয়েছে।
দূষণ বা পলিউশন- দূষণ থেকেও এ রোগ হতে পারে। যাঁরা নিয়মিত দূষিত এলাকায় থাকেন, তাঁদের লাঙ ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি।
-Own study
-International Review on Cytology, Japan
-NASA Excerpts

ইসলামে অভ্যর্থনা জানানোর রীতি

 অভ্যর্থনা (Welcome) হলো সংবর্ধনা, আপ্যায়ন, সমাদর ও সসম্মানে গ্রহণ ইত্যাদি। পৃথিবীতে ইসলাম এসেছে সভ্য, উন্নত ও চির সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের উদ্দেশ্যে। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও বৈশ্বিক পরিমণ্ডলের ক্ষুদ্র থেকে শুরু করে সব বিষয়ে রয়েছে ইসলামের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা। অতিথিদের সম্মান ও অভ্যর্থনা জানানোর পদ্ধতি নিম্নরূপ—

সালাম : সালামের মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়, হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয় এবং শান্তি-সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ঈমানি পরিবেশ তৈরি হয়।
মহান আল্লাহ প্রথম মানুষ হিসেবে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেন। এরপর ফেরেশতা কর্তৃক তাকে অভ্যর্থনা জানানোর আয়োজন করেন। আদম (আ.) ফেরেশতাদের উদ্দেশ্যে ‘আস-সালামু আলাইকুম’ বললে ফেরেশতারা জবাবে বলেন, ‘আস-সালামু আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ’।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন মহান আল্লাহ আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করলেন, তখন বললেন, যাও, অমুক স্থানে ফেরেশতাদের একটি দল আছে, তাদের সালাম করো এবং তাদের জবাব শোনো। কারণ সেটিই তোমার এবং তোমার সন্তানদের অভিবাদন। আদম (আ.) গিয়ে ফেরেশতাদের উদ্দেশ্যে ‘আস-সালামু আলাইকুম’ বলে সালাম দিলেন। ফেরেশতারা জবাবে বলেন, ‘আস-সালামু আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ’। তারা ‘ওয়া রহমাতুল্লাহ’ বেশি বলেন। তখন থেকেই সালামের সূচনা হয়। (বুখারি, হাদিস : ৫৮৭৩; মুসলিম, হাদিস : ৭৩৪২)
এ ছাড়া আগমনকারী অবস্থানকারীকে সালাম দেওয়াই ইসলামী শিষ্টাচার। হাদিসে বলা হয়েছে, আরোহী হেঁটে চলা ব্যক্তিকে, চলমান থেমে থাকা ব্যক্তিকে, আগমনকারী অবস্থানকারীকে, কমসংখ্যক বেশিসংখ্যক লোককে এবং কম বয়সী বেশি বয়সীকে সালাম প্রদান করবে। (বুখারি, হাদিস : ৫৮৭৭; মুসলিম, হাদিস : ৫৭৭২)
মুসাফাহা বা করমর্দন : মুসাফাহা বা করমর্দন হলো সালামের পরিপূরক। আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সালামের পরিপূর্ণতা হলো মুসাফাহা। ’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৭৩০)
সালাম বিনিময়ের পর উভয়ে উভয়ের দুই হাতের মাধ্যমে মুসাফাহা করাই সুন্নাহসম্মত।
কারণ প্রথমত, এ বিষয়ে ইমাম বুখারি (রহ.) সহিহ বুখারির মুসাফাহা অধ্যায়ে বলেছেন, ‘উভয় হাত দ্বারা মুসাফাহা করার বর্ণনা। হাম্মাদ ইবন জায়েদ (রহ.) আবদুল্লাহ ইবন মুবারক (রহ.)-এর সঙ্গে উভয় হাত দ্বারা মুসাফাহা করেছেন। ’ (বুখারি, অধ্যায়: অনুমতি প্রার্থনা, অনুচ্ছেদ: দুহাত ধরে মুসাফাহা, শিরোনাম।
দ্বিতীয়ত, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে ‘আত-তাহিয়্যাত’ এমনভাবে মুখস্থ করিয়েছেন যে আমার হাত তাঁর উভয় হাতের মধ্যে ছিল। ’ বুখারি, হাদিস : ৫৯১০)
তৃতীয়ত, হাদিসে হাত দ্বারা মুসাফাহা করার কথা বর্ণিত হয়েছে। হাত বললে দুই হাতই বোঝায়। যেমন—আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘প্রকৃত মুসলমান সে ব্যক্তি, যার মুখ ও হাতের অনিষ্ট থেকে মুসলমানরা নিরাপদ থাকে। ’ (বুখারি, হাদিস : ১০; মুসলিম, হাদিস : ১৭১)
এখানে হাত বললেও অবশ্যই দুই হাত উদ্দেশ্য। পক্ষান্তরে কোনো এক হাত বোঝাতে চাইলে নির্দিষ্ট করে ডান বা বাম হাত উল্লেখ করা হয়। যেমন—খাদ্য গ্রহণ করার ক্ষেত্রে ডান হাত দ্বারা খেতে বলা হয়েছে। (দ্র. বুখারি, হাদিস : ৫০৬১; মুসলিম, হাদিস : ৫৩৮৭)
বাম হাতে খেতে নিষেধ করা হয়েছে। (দ্র. মুসলিম, হাদিস : ৫৩৮৩)
ডান হাতে ইসতিনজা করতে নিষেধ করা হয়েছে। (দ্র. বুখারি, হাদিস: ১৫৩; মুসলিম, হাদিস: ৬৩৮)
চতুর্থত, এক হাতে মুসাফাহা করা বর্তমানে একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। যা পরিত্যাজ্য। অথচ মুসাফাহা একটি ইবাদত, যা স্বীয় বৈশিষ্ট্য ও স্বাতন্ত্র্যে সমৃদ্ধ।
মুয়ানাকা বা কোলাকুলি : দীর্ঘদিন পর একে অন্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে পরস্পরে মুয়ানাকা বা কোলাকুলি করা সুন্নত। কেউ সফর থেকে এলে দীর্ঘদিন পর দেখা-সাক্ষাৎ হওয়ায় সাহাবায়ে কেরাম মুয়ানাকা বা কোলাকুলি করতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, জায়েদ ইবন হারিসা (রা.) যখন মদিনায় এলেন তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) আমার ঘরে ছিলেন। জায়েদ (রা.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আমার ঘরে এলেন এবং দরজায় টোকা দিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজের কাপড় সামলাতে সামলাতে উঠে গেলেন এবং জায়েদের সঙ্গে কোলাকুলি করলেন এবং তাকে আদর করলেন। (তিরমিজি, হাদিস : ২৭৩২)
শাবি (রহ.) বলেন, সাহাবায়ে কেরাম পরস্পরে মুসাফাহা করতেন আর কেউ সফর থেকে এলে তার সঙ্গে কোলাকুলি করতেন। (ইবন আবি শায়বা, আল-মুসান্নাফ, হাদিস : ২৬২৩৪)
দাঁড়িয়ে যাওয়া ও এগিয়ে যাওয়া : সফর থেকে আগত ব্যক্তির আগমনে আনন্দ প্রকাশ করে তার জন্য দাঁড়ানো মুস্তাহাব। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ফাতেমা (রা.) যখনই রাসুল (সা.)-এর কাছে আসতেন, রাসুল (সা.) তাঁর দিকে দাঁড়িয়ে অগ্রসর হতেন, চুমু খেতেন। তিনি তাঁকে নিজের জায়গায় বসাতেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৮৭২)
এভাবে কোনো ব্যক্তির সফলতার ওপর আনন্দিত হয়ে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য দাঁড়ানোও মুস্তাহাব। (ফাতহুল মুলহিম : ৩/১২৭)
কাব ইবনে মালেক (রা.) বলেন, আমি মসজিদে প্রবেশ করলে তালহা (রা.) আমার দিকে আনন্দিত হয়ে বসা থেকে উঠে দৌড়ে এগিয়ে এসেছেন এবং
অভিনন্দন
জানিয়েছেন। (বুখারি, হাদিস: ৪৪১৮)
আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, বনু কুরাইজার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) সাদ ইবনে মুয়াজ (রা.)-কে ডেকে পাঠিয়েছেন। সাদ (রা.) একটি গাধায় চড়ে আসেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর ব্যাপারে বলেন, তোমরা তোমাদের নেতা সাদের দিকে দাঁড়িয়ে এগিয়ে যাও। (মুসলিম, হাদিস : ১৭৬৮)
কাজেই ব্যক্তি বিশেষের ক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে যাওয়া ও প্রয়োজনে এগিয়ে গিয়ে তাঁকে অভিবাদন ও অভ্যর্থনা জানানোর অনুমতি আছে।
আপ্যায়ন : অতিথিকে যথাযথ আপ্যায়ন ও কদর করা একজন মুসলমানের ঈমানি কর্তব্য হিসেবে বিবেচিত। নবী (সা.) অতিথি আপ্যায়নের তাকিদ দিয়েছেন। কাজেই আগত অতিথিদের আদর-আপ্যায়ন ও উপহার-সামগ্রী প্রদান অতি সমীচীন বিষয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন অতিথিদের সমাদর করে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬১৩৬)
মৌখিক অভ্যর্থনা ও অভ্যর্থনা সংগীত : আগন্তুক অতিথিকে মৌখিক অভ্যর্থনা ও অতিথির প্রশংসনীয় গুণাবলিসংবলিত অভ্যর্থনা সংগীতও পরিবেশন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে ইসলামের অন্য বিধান যেন লঙ্ঘন না হয়। আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, যখন আবদুল কায়েস গোত্রের প্রতিনিধিরা নবী (সা.)-এর কাছে আগমন করে তখন নবী (সা.) তাদের জিজ্ঞাসা করেন, ‘তোমরা কারা?’ তারা বলল, ‘আমরা (আবদুল কায়েস গোত্রের) রবিআ শাখার লোক। ’ নবী (সা.) বলেন, ‘ওই জাতিকে মারহাবা! ওই প্রতিনিধিদলকে মারহাবা! এটা তোমাদের অপরিচিত কোনো জায়গা নয়। এখানে লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই। ’ (বুখারি, হাদিস : ৫৩; মুসলিম, হাদিস : ১৭)
রাসুলুল্লাহ (সা.) মক্কা থেকে হিজরত করে যখন মদিনায় প্রবেশ করছিলেন, তখন মদিনার মানুষের মধ্যে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের জোয়ার নেমে এসেছিল। তারা প্রিয়নবী (সা.)-কে বরণ করে নিতে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছিল। নারী ও শিশুরা বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে নবী (সা.)-কে বিভিন্ন রকমের কবিতা আবৃত্তি করে হৃদয়োৎসারিত উষ্ণতা দিয়ে অভ্যর্থনা জানিয়েছিল। (ইবনে কাসির, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৮৮)
তারা আবৃত্তি করেছিল—
তলা‘আল বাদরু ‘আলাইনা, মিন ছানিয়্যাতিল বিদা‘আ
ওজাবাশ শুকরু ‘আলাইনা- মাদা‘আ লিল্লাহি দা‘আ
আইয়্যুহাল মাব‘উছু ফি-না—জি’তা বিল আমরিল মুতা‘আ।
অর্থ—‘উদিত হলো নতুন চাঁদ, ওদা পাহাড়ের ঘাঁটি থেকে। দায়িত্ব মোদের শোকর করা, ডাকবেন যত দিন আল্লাহর দিকে। ওহে নবাগত! মোদের মাঝে, অনুগত আমরা সবে তোমার সকল কথায়-কাজে। ’
নবী (সা.) বনু নাজ্জার গোত্রে পৌঁছলে তাদের মেয়েরা অভ্যর্থনা জানিয়ে আবৃত্তি করেছিল—
‘নাহনু জাওয়ারু মিন বানিন-নাজ্জার, ইয়া হাব্বাজা মুহাম্মাদুন মিন জার। ’
অর্থ—‘আমরা নাজ্জার গোত্রের মেয়ে, কী সৌভাগ্য আমাদের, মুহাম্মাদ (সা.) আমাদের প্রতিবেশী। ’ (মুহাম্মাদ ইদ্রিস কান্ধলভি, সিরাতুল মুস্তফা, ১ম খণ্ড, দেওবন্দ : দারুল কিতাব, পৃষ্ঠা ৪০৬)
সূত্র: ড. আবু সালেহ মুহাম্মদ তোহা R.U

সুন্নাহর অনুসরণেই মু'মিনের মুক্তি

 সুন্নাত’ শব্দের আভিধানিক অর্থ: প্রকৃতি, জীবনপদ্ধতি, রীতি, আদর্শ ইত্যাদি। পরিভাষায় সুন্নত হলো, রাসুল (সা.)-এর সার্বিক জীবনাদর্শ। ইসলামের আকিদা-বিশ্বাস থেকে নিয়ে ইবাদত, লেনদেন ও শিষ্টাচারসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনাদর্শই হলো সুন্নত। যদিও পরবর্তী সময়ে মানুষের সহজতার জন্য বিধানাবলির প্রামাণিকতা ও নির্দেশের মাত্রা ইত্যাদির বিবেচনায় ইসলামী বিধানসমূহে ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নতসহ নানা শব্দে স্তর বিন্যাস করা হয়েছে। কিন্তু এসবই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনাদর্শ ও যাবতীয় কল্যাণের বিবেচনায় সমান গুরুত্বের দাবি রাখে।

রাসুলের জীবনাদর্শ অনুসরণের গুরুত্ব
আল্লাহ তাআলা বলেন : ‘প্রকৃতপক্ষে, তোমাদের মধ্যে যারা পরকালের আশা রাখে এবং আল্লাহকে খুব বেশি করে স্মরণ করে তাদের জন্য রাসুলুল্লাহর জীবনে এক সর্বোত্তম আদর্শ রয়েছে।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ২১)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন: ‘বলো, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমার অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (আলে ইমরান, আয়াত : ৩১)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন : ‘আমার সব উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করবে; কিন্তু যে অস্বীকার করবে। সাহাবিরা বললেন, কে অস্বীকার করবে? তিনি বলেন, যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৭২৮০)
ইরবাদ ইবনে সারিয়া (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের এ মর্মে অন্তিম উপদেশ দিয়েছেন, ‘তোমরা অবশ্যই আমার সুন্নত এবং আমার হিদায়াতপ্রাপ্ত খলিফাদের সুন্নত কঠোরভাবে অনুসরণ করবে। সাবধান! (দ্বিনি বিষয়ে) নব আবিষ্কার সম্পর্কে! কারণ প্রতিটি নব আবিষ্কার হলো বিদআত এবং প্রতিটি বিদআত হলো ভ্রষ্টতা।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬০৭)
অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আমার সুন্নত অপছন্দ করল তার সঙ্গে আমার সুন্নত অপছন্দ করল তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৭৭৬)
সুন্নত অপছন্দ করল তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৭৭৬)
সুন্নতই মুক্তির পথ
বায়েজিদ বোস্তামি (রহ.)-এর কাছে জনৈক ব্যক্তির কারামতের কথা বলা হলো যে অমুক এক রাতে মক্কা শরিফে পৌঁছে গেছে। তিনি বললেন, এটি কোনো বড় অর্জন নয়। কেননা শয়তানও মুহূর্তেই পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছে যেতে পারে। তাই কেউ যতই বাতাসে উড়ে দেখাক, আগে পরীক্ষা করে নেবে যে সে রাসুল (সা.)-এর সুন্নতের রাজপথে অবিচল কি না? (বাসায়েরুল আশায়ের পৃষ্ঠা ৬১২)
মুজাদ্দিদে আলফে সানি (রহ.) জনৈক মুরিদকে বলেন যে ‘কারামতের ঠেলায় জমিন কেঁপে ওঠা বা মৃত ব্যক্তি জীবিত হয়ে যাওয়ার চেয়েও অজুর সময় মিসওয়াকের সুন্নত পালন করা হাজারো গুণ উত্তম।’ (ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়া : ২/১৯৫)
ইমাম আবু দাউদ (রহ.) একদা নৌসফরকালীন একটি জাহাজে ছিলেন। তখন জাহাজ থেকে নদীর পার দিয়ে গমনকারী জনৈক পথিককে হাঁচি দিয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলতে শুনলেন। তিনি জাহাজ থেকে নেমে এক দিরহামের বিনিময়ে একটি নৌকা ভাড়া করে পারে এসে হাঁচিদাতার উত্তরে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলে এলেন। এ ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, আমি তার জবাবে গিয়ে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলায় সে প্রতি-উত্তরে ‘ইয়াহদিকুমুল্লাহ’ (আল্লাহ তোমাকে হিদায়াত দিন) এ দোয়া করেছে, আর লোকটি হতে পারে এমন কেউ, যার দোয়া অবশ্যই কবুল করা হয়। তাহলে তো এটিই আমার সফলতার জন্য যথেষ্ট। অতঃপর ওই রাতে জাহাজের যাত্রীগণ স্বপ্নে দেখল, জনৈক ব্যক্তি ঘোষণা করছে, ‘নিশ্চয়ই আবু দাউদ এক দিরহামের বিনিময়ে জান্নাত ক্রয় করে নিয়েছে।’ (ফাতহুল বারি : ১০/৬১০-৬১১)
আলেমগণ বলেন, আল্লাহর দরবারে আমল কবুল হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত : এক হলো—আকিদা বিশুদ্ধ হওয়া, দ্বিতীয়ত, সুন্নতের অনুসরণে হওয়া, তৃতীয়ত, নিয়ত সঠিক হওয়া।
আল্লাহ তাআলা সব মুসলমানকে সুন্নতের ওপর অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন
-কালের কন্ঠ সূত্র

ইসলাম বিরোধীরা ইসলামকে গালাগাল দিতেই মজা পায়

 গল্পটি রূপক কিন্তু শেখার আছে

মুসলমানরা সব আশিক্ষিত আর দরিদ্র হলোঃ
অনেকদিন আগের কথা। একবার বৃষ্টির পানিতে রাজার কয়েক বস্তা টাকা ভিজে গিয়েছিলো। রাজার কর্মচারীরা সেই টাকা শুকানোর জন্য রোদে রেখেছে। পাশের গাছে একটি পাখির বাসা ছিলো। সেই পাখিটি সেখান থেকে একটি টাকা নিয়ে গেছে। এরপর গাছের উপরে বসে সেই পাখিটি গান গাইছে…
রাজার ঘরে যে টাকা আছে, আমার ঘরে সেই টাকা আছে।
সেই গান শুনে রাজার কর্মচারী গাছে উঠে দেখলো, পাখির বাসায় একটি টাকা পড়ে আছে। সেই লোকটি, টাকাটা নিয়ে আসলো। এটা দেখে পাখিটি গান গাইছে…
রাজা এমন গরীব হলো, আমার টাকা নিয়ে গেলো।
এই গান শুনে, মুচকি হেসে, লোকটি আবার টাকাটা ওই পাখির বাসায় রেখে দিলো। এটা দেখে, পাখিটি আবারও গান গাইছে…
রাজা এত ভয় পেলো, আমার টাকা ফিরিয়ে দিলো।
ঘটনা যাই ঘটুক না কেন, ওই পাখিটি গান গাইবে। টাকা নিলে গান, টাকা ফিরিয়ে দিলে গান। সবখানেই গান। তার ভালো খারাপ যেটাই হোক না কেন, সবসময়ই অন্যেকে দোষারোপ করাটা ওই পাখিটির স্বভাব।
ইসলাম বিরোধীদের ঠিক তেমনই গান গাওয়ার স্বভাব। সবখানেই গান গাইবে।
বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার ৭৪.৬৬ শতাংশ। ভারতে শিক্ষার হার ৭৫%। সৌদি আরবে শিক্ষার হার ৯৭% । মুসলমান মোটেও অশিক্ষিত নয়।

স্বামী-স্ত্রী কত দিন আলাদা থাকতে পারবে?

 মুয়াবিয়া ইবনে হায়দা (রা.) বলেন, ‘আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমাদের প্রতি আমাদের স্ত্রীদের কী অধিকার আছে? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা যখন খাবে তাদেরও খাওয়াবে, যখন খাবে তাদেরও খাওয়াবে, যখন তোমরা কাপড় পরবে তাদেরও পরতে দেবে। তাদের চেহারায় মারবে না, গালগন্দ করবে না। তাদের তোমাদের ঘরেই থাকতে দেবে, অন্য কোথাও না। ’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২১৪২)।

উল্লিখিত হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে থাকবে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া তারা পৃথক থাকবে না।
কখন বিছানা আলাদা হবে : এই বিশেষ প্রয়োজনটা কী? আমরা আগেই আলোচনা করেছি, যদি স্ত্রীর মধ্যে অশালীন, আপত্তিকর কোনো কিছু দেখা যায়, তবে প্রথমে তাকে বোঝাতে হবে। যদি তার বোধোদয় না ঘটে, তখন বিছানা আলাদা করার অবকাশ আছে। স্বামী ও স্ত্রী আলাদা বিছানায় শোবে। বিছানা বর্জনের অর্থ তাদের ঘর থেকে বের করে দেওয়া নয় কিংবা নিজে ঘর থেকে চলে যাওয়াও উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য হলো ঘরের ভেতরেই উভয়ে পৃথক বিছানায় ঘুমাবে। আর এটা বলা হয়েছে প্রয়োজনের তাগিদেই। স্ত্রীর মানসিকতায় যেন পরিবর্তন আসে এবং সে মার্জিত জীবনযাপনের গুরুত্ব অনুভব করে।
সর্বাত্মক বয়কট নয় : আলেমরা বলেন, বিশেষ প্রয়োজনে স্বামী পৃথক বিছানা গ্রহণ করলেও তার সঙ্গে পুরোপুরি কথা বন্ধ রাখা বা সর্বাত্মক বয়কট করা যাবে না; বরং তারা পরস্পরের সঙ্গে সালাম বিনিময় করবে এবং প্রয়োজনীয় কথা বলবে। পুরোপুরি কথা বন্ধ করা বৈধ হবে না।
স্বামী কত দিন দূরে থাকতে পারবে : ইসলামী আইনজ্ঞ আলেমরা বলেন, স্বামী যদি চার মাসের বেশি সময়ের জন্য সফরে যেতে চান, তবে স্বামী স্ত্রীর কাছ থেকে অনুমতি গ্রহণ করবে। খুশি মনে অনুমতি দিলে সফর বৈধ হবে, অন্যথায় নয়। ওমর (রা.) তাঁর শাসনামলে এই আইন চালু করেছিলেন যে যেসব যোদ্ধা বাড়ির বাইরে থাকেন, তাঁরা চার মাসের বেশি বাইরে থাকতে পারবেন না।
স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া হজও নয় : আলেমরা আরো বলেন, কেউ যদি চার মাসের কম সময়ের জন্য সফরে বের হয়, তবে তার জন্য স্ত্রীর অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। কিন্তু চার মাসের বেশি সময়ের জন্য সফরে বের হলে অবশ্যই স্ত্রীর অনুমতি লাগবে। সফর যত বরকতপূর্ণই হোক না কেন। এমনকি যদি হজের সফরও হয় আর তা যদি চার মাসের বেশি সময়ের জন্য হয়, তবে স্ত্রীর অনুমতি প্রয়োজন হবে। দাওয়াত, তাবলিগ ও জিহাদের ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য হবে।
প্রবাসীদেরও লাগবে স্ত্রীর অনুমতি : যখন এমন গুরুত্বপূর্ণ বিধানের ক্ষেত্রেও স্ত্রীর অনুমতি প্রয়োজন হয়, তখন চাকরিবাকরি বা নিছক অর্থ উপার্জনের জন্য স্বামী যদি দূরে থাকে বা দেশের বাইরে থাকে, তবে তার বিধান কী হবে? এমনটি করা স্ত্রীর অধিকার নষ্ট করার শামিল, যা ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে অবৈধ ও গুনাহ।
স্ত্রীর অনুমতি গুরুত্বপূর্ণ কেন? : ইসলাম স্ত্রীর ওপর স্বামীর অভিভাবকতুল্য কর্তৃত্ব দিয়েছে। তবে স্বামীর ব্যাপারে স্ত্রীর সন্তুষ্টি ও মূল্যায়নকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন হিসেবে তার ঈমানই সবচেয়ে বেশি পরিপূর্ণ, যার চরিত্র সবচেয়ে ভালো। আর তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই সবচেয়ে চরিত্রবান যে তার স্ত্রীর চোখে চরিত্রবান। ’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১১৬২)। উল্লিখিত হাদিস থেকে বোঝা যায়, স্বামীর চরিত্র বিচারে স্ত্রীর মূল্যায়ন কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন
-ইসলাহি খুতুবাত থেকে
আল্লামা মুফতি তকি উসমানি