সুন্নাত’ শব্দের আভিধানিক অর্থ: প্রকৃতি, জীবনপদ্ধতি, রীতি, আদর্শ ইত্যাদি। পরিভাষায় সুন্নত হলো, রাসুল (সা.)-এর সার্বিক জীবনাদর্শ। ইসলামের আকিদা-বিশ্বাস থেকে নিয়ে ইবাদত, লেনদেন ও শিষ্টাচারসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনাদর্শই হলো সুন্নত। যদিও পরবর্তী সময়ে মানুষের সহজতার জন্য বিধানাবলির প্রামাণিকতা ও নির্দেশের মাত্রা ইত্যাদির বিবেচনায় ইসলামী বিধানসমূহে ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নতসহ নানা শব্দে স্তর বিন্যাস করা হয়েছে। কিন্তু এসবই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনাদর্শ ও যাবতীয় কল্যাণের বিবেচনায় সমান গুরুত্বের দাবি রাখে।
রাসুলের জীবনাদর্শ অনুসরণের গুরুত্ব
আল্লাহ তাআলা বলেন : ‘প্রকৃতপক্ষে, তোমাদের মধ্যে যারা পরকালের আশা রাখে এবং আল্লাহকে খুব বেশি করে স্মরণ করে তাদের জন্য রাসুলুল্লাহর জীবনে এক সর্বোত্তম আদর্শ রয়েছে।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ২১)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন: ‘বলো, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমার অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (আলে ইমরান, আয়াত : ৩১)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন : ‘আমার সব উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করবে; কিন্তু যে অস্বীকার করবে। সাহাবিরা বললেন, কে অস্বীকার করবে? তিনি বলেন, যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৭২৮০)
ইরবাদ ইবনে সারিয়া (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের এ মর্মে অন্তিম উপদেশ দিয়েছেন, ‘তোমরা অবশ্যই আমার সুন্নত এবং আমার হিদায়াতপ্রাপ্ত খলিফাদের সুন্নত কঠোরভাবে অনুসরণ করবে। সাবধান! (দ্বিনি বিষয়ে) নব আবিষ্কার সম্পর্কে! কারণ প্রতিটি নব আবিষ্কার হলো বিদআত এবং প্রতিটি বিদআত হলো ভ্রষ্টতা।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬০৭)
অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আমার সুন্নত অপছন্দ করল তার সঙ্গে আমার সুন্নত অপছন্দ করল তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৭৭৬)
সুন্নত অপছন্দ করল তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৭৭৬)
সুন্নতই মুক্তির পথ
বায়েজিদ বোস্তামি (রহ.)-এর কাছে জনৈক ব্যক্তির কারামতের কথা বলা হলো যে অমুক এক রাতে মক্কা শরিফে পৌঁছে গেছে। তিনি বললেন, এটি কোনো বড় অর্জন নয়। কেননা শয়তানও মুহূর্তেই পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছে যেতে পারে। তাই কেউ যতই বাতাসে উড়ে দেখাক, আগে পরীক্ষা করে নেবে যে সে রাসুল (সা.)-এর সুন্নতের রাজপথে অবিচল কি না? (বাসায়েরুল আশায়ের পৃষ্ঠা ৬১২)
মুজাদ্দিদে আলফে সানি (রহ.) জনৈক মুরিদকে বলেন যে ‘কারামতের ঠেলায় জমিন কেঁপে ওঠা বা মৃত ব্যক্তি জীবিত হয়ে যাওয়ার চেয়েও অজুর সময় মিসওয়াকের সুন্নত পালন করা হাজারো গুণ উত্তম।’ (ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়া : ২/১৯৫)
ইমাম আবু দাউদ (রহ.) একদা নৌসফরকালীন একটি জাহাজে ছিলেন। তখন জাহাজ থেকে নদীর পার দিয়ে গমনকারী জনৈক পথিককে হাঁচি দিয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলতে শুনলেন। তিনি জাহাজ থেকে নেমে এক দিরহামের বিনিময়ে একটি নৌকা ভাড়া করে পারে এসে হাঁচিদাতার উত্তরে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলে এলেন। এ ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, আমি তার জবাবে গিয়ে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলায় সে প্রতি-উত্তরে ‘ইয়াহদিকুমুল্লাহ’ (আল্লাহ তোমাকে হিদায়াত দিন) এ দোয়া করেছে, আর লোকটি হতে পারে এমন কেউ, যার দোয়া অবশ্যই কবুল করা হয়। তাহলে তো এটিই আমার সফলতার জন্য যথেষ্ট। অতঃপর ওই রাতে জাহাজের যাত্রীগণ স্বপ্নে দেখল, জনৈক ব্যক্তি ঘোষণা করছে, ‘নিশ্চয়ই আবু দাউদ এক দিরহামের বিনিময়ে জান্নাত ক্রয় করে নিয়েছে।’ (ফাতহুল বারি : ১০/৬১০-৬১১)
আলেমগণ বলেন, আল্লাহর দরবারে আমল কবুল হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত : এক হলো—আকিদা বিশুদ্ধ হওয়া, দ্বিতীয়ত, সুন্নতের অনুসরণে হওয়া, তৃতীয়ত, নিয়ত সঠিক হওয়া।
আল্লাহ তাআলা সব মুসলমানকে সুন্নতের ওপর অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন
-কালের কন্ঠ সূত্র
No comments:
Post a Comment